সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি 0%

সৃষ্টির পরশমনি লেখক:
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক: মুহাম্মদ মাহদী হায়েরীপুর,মাহদী ইউসুফিয়ান ও মুহাম্মদ আমীন বালাদাসতিয়ান
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 21987
ডাউনলোড: 4073

পাঠকের মতামত:

সৃষ্টির পরশমনি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 40 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 21987 / ডাউনলোড: 4073
সাইজ সাইজ সাইজ
সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক:
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বাংলা

তৃতীয় ভাগ :ঐশী ন্যায়পরায়ণ হুকুমতের সাফল্য ও অবদানসমূহ

কোন ব্যক্তি বা দল ক্ষমতায় পৌঁছানোর আগে তার সরকারে কর্মসূচীকে বর্ণনা করে। কিন্তু সাধারণত ক্ষমতায় আসার পর তার কর্মসূচীর কিছুই বাস্তবায়ন করে না এবং মনকি পূর্বের দেওয়া সকল ওয়াদা বেমালুম ভুলে যায়।

কর্মসূচী বাস্তবায়ণ না করতে পারার কারণ হচ্ছে হয়ত কর্মসূচী গঠনমূলক ছিল না অথবা এ কর্মসূচী পরিপূর্ণ ছিল না এবং অধিকংশ ক্ষেত্রে যোগ্যতার অভাবে এমনটি হয়ে থাকে।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের সকল উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী গঠনমূলক ও বাস্তবমুখী যার মূলে রয়েছে মানুষের বিকেব ,সকলেই যার প্রতীক্ষায় ছিল। ইমামের সকল কর্মসূচী কোরআন ও সুন্নত মোতাবেক এবং তা সম্পূর্ণটাই বাস্তবায়ন হওয়ার উপযোগি। সুতরাং এ মহান বিপ্লবের সাফল্য অতি ব্যাপক। এক কথায় ইমাম মাহদী (আ.)-এর হুকুমতের সাফল্য মানুষের সকল পার্থিব ও আধ্যাত্মিক সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট।

রেওয়ায়াতের আলোকে আমরা এখন তার আলোচনা করব:

1 - ব্যাপক ন্যায়বিচার : বিভিন্ন রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মহান বিপ্লবের প্রধান সাফল্য হচ্ছে সর্বজনীন ন্যায়পরায়ণতা। হুকুমতের উদ্দেশ্য নামক অধ্যায়েও আমরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এ অধ্যায়ে আমরা তার সাথে এ বিষয়টিকেও যোগ করতে চায় যে ,কায়েমে আলে মুহাম্মদ (আ.)-এর হুকুমতে সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায়বিচার একটি মূলমন্ত্র হিসাবে বিরাজ করবে এবং ছোট ,বড় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি মানুষের আচরণও ন্যায়ের ভিত্তিতে হবে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

আল্লাহর শপথ! ন্যায়বিচারকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিব যেমনভাবে ঠাণ্ডা ও গরম মানুষের ঘরে প্রবেশ করে। 193

ঘর সমাজের একটি ছোট্ট জায়গা আর সেটাই যখন ন্যায়পরায়ণ হয়ে উঠবে এবং পরিবারের সকলেই সবার সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করবে তা থেকে বোঝা যায় যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন হুকুমত ক্ষমতা বা আইনের বলে চলবে না বরং কোরআনের নির্দেশ অনুসারে ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। 194 জনগণকে সেভাবেই গড়ে তোলা হবে এবং সকলেই তাদের ঐশী দায়িত্ব পালন করবে। সকলের অধিকারকেই সম্মান দেওয়া হবে।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতে ন্যায়বিচার একটি মূল সাংস্কৃতি হিসাবে স্থান পাবে এবং মুষ্টিমেয় কিছু লোক যারা ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে এবং কোরআনের শিক্ষা থেকে দুরে থাকবে তারাই কেবল এর বিরুদ্ধাচারণ করবে। তবে ন্যায়পরায়ণ হুকুমত তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিবে এবং তাদেরকে কোন সুযোগ দেওয়া হবে না ,বিশেষ করে তাদেরকে হুকুমতে প্রভাব ফেলতে বাঁধা দেওয়া হবে।

হ্যাঁ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতে ন্যায়পরায়ণতা এভাবেই প্রভাব বিস্তার করবে আর এভাবেই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিপ্লবের মহান উদ্দেশ্য বাস্তবাইত হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অন্যায়-অত্যাচার চিরতরে বিদায় নিবে।

2- চিন্তা , চরিত্র ও ঈমানের বিকাশ : পূর্বেই বলা হয়েছে যে ,সমাজের মানুষের সঠিক প্রশিক্ষণ ,কোরআন ও আহলে বাইতের সাংস্কৃতির প্রসারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতে চিন্তা ,চরিত্র ও ঈমানের ব্যাপক বিকাশ ঘটবে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন নিজের হাতকে মানুষের মাথায় বুলিয়ে দিবেন এবং তার বরকতে তাদের জ্ঞান , বুদ্ধি , বিবেক ও চিন্তাশক্তি পুরিপূর্ণতায় পৌঁছবে। 195

ভাল ও সৌন্দর্যসমূহ বিবেক পরিপূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়। কেননা ,বিবেক হচ্ছে মানুষের অভ্যান্তরীণ নবী। তা যদি মানুষের শরীর ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মানুষের কর্মও সঠিক পথে পরিচালিত হবে ,আল্লাহর বান্দায় পরিণত হবে এবং সৌভাগ্যবাণ হবে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে ,বিবেক কি ?তিনি বললেন: বিবেক হচ্ছে তা যার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত হয় এবং তার (নির্দেশনার) মাধ্যমে বেহেশত অর্জিত হয়। 196

বর্তমান সমাজে আমরা দেখতে পাই যে ,কামনা-বাসনা বিবেকের উপরে স্থান পেয়েছে এবং নফসের তাড়না ব্যক্তি ,দল ও গোত্রের উপর এককভাবে নেতৃত্ব দান করছে । যার ফলে মানুষের অধিকার পয়মল হচ্ছে ও ঐশী মর্যাদাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমাজ আল্লাহর হুজ্জাতের নেতৃত্বে যিনি হচ্ছেন পরিপূর্ণ বিবেক। আর পরিপূর্ণ বিবেক কেবলমাত্র সৎকর্মের দিকেই আহবান করবে।

3 - ঐক্য ও সহমর্মিতা : ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের সকলেই ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিক হবে এবং হুকুমত প্রতিষ্ঠার সময় কারো প্রতি কারো শত্রুতা ও হিংসা থাকবে না।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:

যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন ,সবার মন থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ দূরিভুত হবে।

তখন হিংসা-বিদ্বেষের আর কোন অজুহাত থাকবে না। কেননা ,তখন সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠত হবে এবং কারো অধিকার পয়মল হবে না ,সকলেই বিবেকের সাথে চলবে ,কামনা-বাসনার সাথে নয়। সুতরাং হিংসা-বিদ্বেষের আর কোনো পথই অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে প্রত্যেকেই আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন করবে এবং কোরআনী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। 197

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন: সে সময় আল্লাহ সবার মধ্যে ঐক্য ও আন্তরিকতা দান করবেন। 198

কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ,আল্লাহ যদি চান তাহলে সবই সম্ভব। আল্লাহর ইচ্ছাতেই বর্তমান সমাজের এই অনৈক্য ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে ইঠবে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

আমাদের কায়েম কিয়াম করলে প্রকৃত বন্ধুত্ব ও সঠিক আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন প্রয়োজনে একজন অন্য জনের পকেট থেকে প্রয়োজনীয় টাকা নিতে পারবে এবং সে তাতে কোন বাধা দিবে না। 199

4 - শারীরিক ও আন্তরিক সুস্থতা : বর্তমান যুগের মানুষের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধির বহিঃপ্রকাশ। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে যেমন: পরিবেশ দূষণ ,রাসায়নিক বোমা ,এটোম বোমা ও জীবাণু বোমা। অনুরূপভাবে মানুষের অবৈধ মেলা-মেশা ,জঙ্গল ধ্বংস করা ,পানি দুষণ ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন: ক্যানসার ,এইডস ,মহামারি ,হার্ট এ্যটাক ,পঙ্গুত্ব ইত্যাদি হচ্ছে যার চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব। শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও বহু ধরনের আন্তরিক অসুস্থতা রয়েছে যা মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে এবং এটাও মানুষের বিভিন্ন অন্যায়ের কারণে ঘটছে।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণ হুকুমতে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক ও আন্তরিক ব্যাধি দূর হয়ে যাবে এবং মানুষের শরীর ও মন অত্যান্ত বলিষ্ঠ হয়ে উঠবে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

যখন ইমাম মাহ্দী (আ.) কিয়াম করবেন আল্লাহ তা আলা মু মিনদের সকল অসুস্থতা দূর করে দিবেন এবং সুস্থতা ও (শান্তি ) দান করবেন। 200

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে এবং আর কোন দূরারোগ্য ব্যাধির অস্তিত্ব থাকবে না । চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ঘটবে এবং ইমামের বরকেতে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠবে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

যে আমাদের কায়েমকে দেখবে যদি অসুস্থ থাকে সুস্থ হয়ে যাবে আর যদি দূর্বল থাকে তাহলে শক্তিশালী হয়ে যাবে। 201

5 - অধিক কল্যাণ ও বরকত : কায়েমে আলে মুহাম্মদ (আ.)-এর হুকুমতের আরও একটি সাফল্য হচ্ছে অধিক কল্যাণ ও বরকত। তার হুকুমতের বসন্তে সর্বত্র সবুজ-শ্যামল ও সাচ্ছন্দময় হয়ে উঠবে। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং মাটি থেকে ফসল উৎপন্ন হবে ও ঐশী বরকতে ভরপুর হয়ে যাবে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

আল্লাহ তা আলা তার কারণে আকাশে ও মাটিতে বরকতের বন্যা বইয়ে দিবেন। আকাশ থেকে রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং মাটি থেকে ফসল উৎপন্ন হবে 202

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে আর কোন অনুর্বর ভুমি থাকবে না প্রতিটি স্থানই সবুজ-শ্যামল হবে এবং ফসল দান করবে।

এই নজির বিহীন পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবে সকল প্রকার পঙ্কিলতা দূর হয়ে যাবে এবং পবিত্রতার বৃক্ষ জন্ম নিবে ও ঈমানের ফুল ফুটবে। সব শ্রেণীর মানুষেরা ঐশী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং পারস্পারিক সকল সম্পর্ককে ঐশী মর্যাদা অনুসারে আঞ্জাম দিবে । আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে ,এমন পবিত্র পরিবেশকে কল্যাণ ও বরকতে পরিপূর্ণ করবেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হযেছে:

) وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَ‌ىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَ‌كَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْ‌ضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (

যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করতাম ,কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। 203

6 - দারিদ্রতা নির্মূল হবে : পৃথিবীর সকল সম্পদ যখন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে প্রকাশ পাবে এবং তার যামানার মানুষের উপর আকাশ ও মাটির সকল বরকত বর্ষিত হবে ও মুসলমানদের বাইতুল মাল সমভাবে বণ্টিত হবে তখন দারিদ্রতার আর কোন স্থান থাকবে না। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতে সকলেই অভাব ও দারিদ্রতার কালো থাবা থেকে মুক্তি পাবে। 204

তার সময়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের সাথে গড়ে উঠবে। ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা ও অর্থলিপ্সার স্থানে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব স্থান নিবে। তখন সকলেই প্রত্যেককে একই পরিবারের সদস্য মনে করবে। সুতরাং প্রত্যেকেই অন্যকে নিজের মনে করবে এবং তখন সর্বত্র একতা ও অভিন্নতার সুবাস ছড়িয়ে পড়বে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.) বছরে দুই বার জনগণকে দান করবেন এবং মাসে দুই বার তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি সমানভাবে সবার মধ্যে বণ্টন করবেন। এভাবে মানুষ স্বনির্ভর হয়ে উঠবে এবং যাকাতের আর প্রয়োজন হবে না। 205

বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় যে ,মানুষের স্বনির্ভরতার কারণ হচ্ছে তারা স্বল্পে তুষ্ট। অন্য কথায় মানুষের পার্থিব ধন-সম্পদ বেশী হওয়ার পূর্বে যার মাধ্যমে স্বনির্ভর হবে আত্মিক প্রশান্তি তথা আত্মিক স্বনির্ভরতার প্রয়োজন। আল্লাহ তা আলা তাদেরকে যা দিয়েছেন তারা তাতেই সন্তুষ্ট। কাজেই অন্যের সম্পদের দিকে তাদের কোন লোভ বা লালসা থাকবে না।

রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

আল্লাহ তা আলা স্বনির্ভরতাকে মানুষের অন্তরে দান করে থাকেন 206

যদিও ইতিপূর্বে অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে মানুষ ,লালসা ও সম্পদের আধিক্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল এবং গরিবদের প্রতি দান-খয়রাতের কোন ইচ্ছাই তাদের মধ্যে ছিল না। মোটকথা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে মানুষ বাহ্যিক ও আন্তরিক উভয় দিক থেকেই স্বনির্ভর থাকবে। এক দিকে অধিক সম্পদ সমভাবে বণ্টিত হবে অন্য দিকে অল্পে তুষ্টি মানুষকে স্বনির্ভর করবে।

এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন:

আল্লাহ তা আলা উম্মতে মুহাম্মদিকে স্বনির্ভর করবেন এবং সকলেই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়পরায়ণতার অন্তর্ভূক্ত হবে। ইমাম মাহ্দী একজনকে বলবেন যে ঘোষণা কর:

কার সম্পদের প্রয়োজন আছে ?তখন সবার মধ্য থেকে মাত্র একজন বলবে আমার! তখন ইমাম (আ.) তাকে বলবেন: ক্যাশিয়ারের কাছে যেয়ে বল , ইমাম মাহ্দী (আ.) আমাকে পাঠিয়েছেন এবং আমাকে টাকা দিতে বলেছেন। তখন ক্যাশিয়ার তাবে বলবে: তোমার জামা (আরবী লম্বা জামা) নিয়ে এস ,অতঃপর তার জামা অর্ধেক টাকায় ভরে দেওয়া হবে। সে ওই টাকা গুলোকে পিঠে করে নিয়ে যেতে যেতে ভাববে: উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে আমি কেন এত লোভী। অতঃপর সে তা ফিরিয়ে দিতে চাইবে কিন্তু তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং তাকে বলা হবে: আমরা যা দান করি তা আর ফেরত নেই না। 207

7 - ইসলামী হুকুমত এবং কাফেরদের উৎখাত : কোরআন পাকে তিনটি স্থানে ওয়াদা করা হয়েছে যে ,আল্লাহ তা আলা পবিত্র ইসলামকে বিশ্বজনীন করবেন :

) هُوَ الَّذِي أَرْ‌سَلَ رَ‌سُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَ‌هُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِ‌هَ الْمُشْرِ‌كُونَ (

মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তার রাসূল প্রেরণ করেছেন। 208

) إِنَّ اللَّـهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ (

নিশ্চয়ই আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করে না। 209

কিন্তু রাসূল (সা.) ও আল্লাহর ওয়ালীগণের অনেক চেষ্টার পর এখনও তা বাস্তবায়িত হয় নি 210 প্রতিটি মুসলমান সে দিনের প্রতীক্ষায় রয়েছে। এ সত্যটি মাসুম ইমামদের বাণীতেও বর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং ইমাম মাহ্দীর হুকুমতে  اشهد ان لا اله الا الله ধ্বনি যা ইসলামের পতাকা এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ গোটা বিশ্বকে পরিপূর্ণ করবে এবং শিরক ও কুফরের কোন অস্তিত্ব আর থাকবে না।

ইমাম বাকের (আ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.)- এর আবির্ভাবের পর এই আয়াতের বাস্তবায়ন ঘটবে।

) قَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّـهِ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّـهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ‌ (

এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা দূর হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ তো তার সম্যক দ্রষ্টা 211

তবে ইসলামের এ বিশ্বজনীনতা ইসলামের সত্যতার জন্যই এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে তা আরও বেশী স্পষ্ট হবে ও সকলকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করবে। কিন্তু যারা শত্রুতা করবে ও নফসের তাড়নায় অবাধ্য হবে তারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর তলোয়ারের মুখোমুখী হবে।

এ অধ্যায়ের শেষ কথা হচ্ছে যে ,এই আক্বীদাগত ঐক্যবদ্ধতা যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ছত্রছায়ায় অর্জিত হবে তা ঐক্যবদ্ধ পৃথিবী গড়ে তোলার একটি উত্তম প্রেক্ষাপট। এই ঐক্যবদ্ধ পৃথিবী ও ঐক্যবদ্ধ আক্বীদা একটি তৌহিদী হুকুমতকে মেনে নিতে প্রস্তুত। অতপর তার ছত্রছায়ায় নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সর্ম্পকে একই আক্বীদার ভিত্তিতে সুসজ্জিত করবে। এ বর্ণনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে ,আক্বীদাগত ঐক্যবদ্ধতা এবং সকল মানুষের একই দ্বীন ও একই পতাকার তলে একত্রিত হওয়াটা অতিব জুরুরি বিষয় যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতে অর্জিত হবে।

8 - সর্বসাধারণের নিরাপত্তা : ইমাম মাহ্দী ( আ .)- এর হুকুমতে মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে সব ধরনের সৎকর্ম ছড়িয়ে পড়বে তখন নি রাপত্তা যা মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া অর্জিত হবে।

সকল মানুষ যখন একই আক্বীদার অনুসরণ করে ,সামাজিক আচরণেও ইসলামী আখলাক মেনে চলে এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠিত থাকে তখন জীবনের কোথাও আর ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার কোন অজুহাত থাকতে পারে না। যে সমাজে প্রত্যেকেই তার অধিকার প্রাপ্ত হয় এবং সামান্যতম অপরাধেরও উপযুক্ত শাস্তি হয় সেখানে অতি সহজেই সামাজিক নিরাপত্তা অর্জিত হওয়া সম্ভব।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:

আমাদের সময়ে অতি কঠিন সময় অতিবাহিত হবে কিন্তু যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবে তখন সকল হিংসা - বিদ্বেষ দূরীভ ূত হবে এমনকি সব ধরনের পশু - পাখিরাও একত্রে জীবন - যাপন করবে। সে সময়ে পরিবেশ এত বেশী নিরাপদ হবে যে , এক জন নারী তার সকল স্বর্ণ - অলঙ্কার ও টাকা - পয়সাসহ একাকি ইরাক থেকে সিরিয়া পর্যন্ত নির্ভয়ে পরিভ্রমন করবে। 212

আমরা যেহেতু অন্যায় ,হিংসা ,অত্যাচার ও সকল প্রকার অসৎকর্মের যুগে বসবাস করছি তাই এমন সোনালী যুগের ধারণাও আমাদের জন্য অতি কঠিন ব্যাপার। এর কারণের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করি তাহলে বুঝব যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ওই সবের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়িত হবে এবং সমাজ নিরাপত্তায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা আলা পবিত্র কোরআনে বলছেন:

) وَعَدَ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْ‌ضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْ‌تَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِ‌كُونَ بِي شَيْئًا وَمَن كَفَرَ‌ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ (

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে , তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন , যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন . .. 213

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) এই আয়াতের অর্থ সম্পর্কে বলেছেন: এই আয়াত ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তার সাহায্যকারীদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে। 214

9 - জ্ঞানের বিকাশ : ইমাম মাহ্দী ( আ .)- এর হুকুমতে জ্ঞান - বিজ্ঞানের ব্যাপক বিকাশ ঘটবে এবং তাত্বিক জ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে।

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

জ্ঞান-বিজ্ঞানের 27টি অক্ষর রয়েছে নবীগণ যা এনেছেন তা হচ্ছে মাত্র 2টি অক্ষর এবং জনগণও এই দুই অক্ষরের বেশী কিছু জানে না। যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবে বাকি 25টি অক্ষর বের করবেন এবং মানুষের মধ্যে তা প্রচার করবেন। অতঃপর ওই দু অক্ষরকেও তার সাথে যোগ করে মানুষের মাঝে প্রচার করবেন। 215

এটা স্পষ্ট যে ,মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটবে এবং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে ,ঐ সময়ের প্রযুক্তির সাথে বর্তমান প্রযুক্তির বিশাল ব্যবধান থাকবে। 216

বর্তমান প্রযুক্তির সাথে পূর্বের প্রযুক্তির যেমন বিশাল ব্যবধান রয়েছে। এখানে কয়েকটি হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করা হল:

ইমাম জা ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সময়ে মু মিন ব্যক্তি প্রাচ্য থেকে তার ভাইকে যে প্রাশ্চাত্যে রয়েছে দেখতে পাবে। 217

তিনি আরও বলেছেন:

যখন আমাদের কায়েম কিয়াম করবে আল্লাহ তা আলা আমাদের অনুসারীদের শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শীক্তকে এত বেশী বৃদ্ধি করে দিবেন যে , ইমাম মাহ্দী (আ.) 28 কিলোমিটার দূর থেকে তার অনুসারীদের সাথে কথোপকথন করবেন এবং তারাও তার কথা শুনতে পাবে ও তাকে দেখতে পাবে। অথচ ইমাম সেখানেই দাড়িয়ে থাকবেন। 218

একজন নেতা হিসাবে দেশের জনগণ সম্পর্কে ইমামের ধারণা ও জ্ঞান সম্পর্কে বর্ণিত হযেছে:

মানুষ ঘরের মধ্যেও কথা বলতে ভয় করবে যে ,যদি দেওয়ালেরও কান থাকে ?219

আধুনিক যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি দেখে তা উপলব্ধি করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু আমরা জানি না যে ,ইমামের সময়ে এই সকল প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে ব্যবহার করা হবে নাকি তিনি নতুন কোন প্রযুক্তির ব্যবস্থা করবেন।