দ্বিতীয় ভাগ : ইমাম মাহদী (আ.)-এর জন্ম থেকে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর শাহাদাত পর্যন্ত
ইমাম মাহদী (আ.)-এর জীবনের এ সময়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল
নিম্নে তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হল:
1- শিয়া মাযহাবের মাঝে ইমাম মাহদী (আ.)-এর পরিচয়
ইমামের জন্ম গোপনে হওয়ার কারণে এধারণার অবকাশ ছিল যে
শিয়ারা শেষ ইমামকে চিনতে ভুল করবে এবং পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। ইমাম
হাসান আসকারী (আ.)-এর দায়িত্ব ছিল যে নিজের সন্তানকে বিশিষ্ট শিয়া ও
নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মাঝে পরিচয় করাবেন। তারা আবার এ সংবাদ
আহলে বাইতের অপর অনুসারীদের কাছে পৌঁছে দিবেন আর এভাবেই
ইমামের পরিচয় ঘটবে এবং ইমাম (আ.) সকল বিপদ থেকে মুক্ত থাকবেন।
ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর বিশেষ অনুসারী এবং বিশিষ্ট শিয়া
জনাব আহমাদ বিন ইসহাক বলেন:
ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর কাছে গিয়ে মনে মনে তার পরবর্তী
উত্তরাধিকারী সম্পর্কে জানার ইচ্ছা পোষণ করলাম
,কিন্তু কিছু জানতে
চাওয়ার পূর্বেই তিনি বললেন: হে আহমাদ! আল্লাহপাক হযরত
আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর থেকে কখনোই পৃথিবীকে হুজ্জাত বিহীন রাখেন
নি এবং কিয়ামত পর্যন্ত কখনোই খালি রাখবেন না। আর আল্লাহর
হুজ্জাতের মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষের উপর থেকে বালা-মুছিবত দূর হয়।
তার অস্তিত্বের বরকতেই বৃষ্টি বর্ষণ হয় এবং ফসল ফলে।
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান! আপনার পরবর্তী ইমাম
এবং উত্তরাধিকারী কে
?ইমাম সাথে সাথে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলেন
এবং তিন বছরের একটি অতি সুন্দর ও চাঁদের ন্যায় পবিত্র শিশুকে নিয়ে
বেরিয়ে এসে বললেন: হে আহমাদ বিন ইসহাক! যদি আল্লাহ ও তার
হুজ্জাতের নিকট প্রিয়ভাজন না হতে তাহলে আমার এ পূত্র তোমাকে
দেখাতাম না। তার নাম ও কুনিয়া রাসূল (সা.)-এর নাম ও কুনিয়ার
অনুরূপ। পৃথিবী যেভাবে অন্যায়-অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়েছিল সে
তেমনিভাবে পৃথিবীকে ন্যায়-নীতিতে পরিপূর্ণ করবে।
আমি বললাম: এমন কোন চিহ্ন কি আছে যা দেখে আমি নিশ্চিত হতে
পারি
?এমন সময় পবিত্র শিশুটি বললেন:
انا بقیة الله فی ارضه و المنتقم من اعدائه
আমিই হলাম পৃথিবীতে আল্লাহর শেষ গচ্ছিত সম্পদ এবং আমি আল্লাহর
দুশমনদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব। হে আহমাদ বিন ইসহাক নিজ
চোখে দেখার পর আর কোন চিহ্নের অপেক্ষায় থেক না।
আহমাদ বিন ইসহাক বলেন: এ কথা শোনার পর অতি আনন্দের সাথে
ইমাম (আ.)-এর বাড়ী থেকে চলে আসলাম।
অনুরূপভাবে মুহাম্মদ বিন উসমান ও আরও কয়েক জন বিশিষ্ট শিয়া
ব্যক্তিত্ব বর্ণনা করেছেন:
আমরা শিয়া মাযহাবের চল্লিশজন ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর
কাছে একত্রিত হই। তিনি আমাদেরকে তার পবিত্র সন্তানকে দেখিয়ে
বললেন
,“
আমার পর এই তোমাদের ইমাম ও আমার উত্তরাধিকারী। তার
নির্দেশ মেনে চলবে এবং দ্বীন থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড় না তাহলে ধ্বংস হয়ে
যাবে। আজকের পর থেকে তাকে আর দেখতে পাবে না।
একটি সুন্নত হচ্ছে শিশুদের জন্য আকিকা করা এবং ওলিমা দেয়া।
দুম্বা অথবা গরু জবাই করে মানুষকে খাওয়ানো। এর মাধ্যমে শিশুর বালা-
মুছিবত দূর হয় এবং আয়ূ দীর্ঘ হয়। ইমাম হাসান আসকারী (আ.)
কয়েকবার তার পবিত্র সন্তানের জন্য আকিকা করেছিলেন। এভাবে তিনি
রাসূল (সা.)-এর সুন্নতকে পালন করেন এবং শিয়া মাযহাবকে দ্বাদশ ইমাম
সম্পর্কে জ্ঞাত করেন।
2
.মো
’
জেযা এবং কেরামত
ইমাম মাহদী (আ.)-এর জীবনীর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তার
জন্মের পর থেকে অদৃশ্যের পূর্ব পর্যন্ত। এসময়ে তার মাধ্যমে অনেক
মো
’
জেযা ও কেরামত সম্পাদিত হয়েছে। তবে ইমাম (আ.)-এর জীবনের এ
দিকটির প্রতি বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয় নি।
আমরা এখানে একটি উদাহরণ বর্ণনার মাধ্যমে তা তুলে ধরতে চেষ্টা
করব:
আহমাদ ইবনে ইব্রাহীম নিশাপুরী বলেন:
যখন আমর বিন আ
’
উফ (অত্যাচারি শাসক যে শিয়া মাযহাব
অনুসারীদের হত্যা করতে খুব পছন্দ করত) আমাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত
নিল। আমার সমস্ত অস্তিত্ব আতঙ্কে শিউরে উঠল। অতঃপর সবার সাথে
বিদায় নিয়ে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর বাড়িতে বিদায় নিতে গেলাম
এবং ভেবে রেখেছিলাম যে তার পর পালাব। ইমাম (আ.)-এর বাড়িতে গিযে
তার পাশে একটি বাচ্চা ছেলে বসা দেখলাম যার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের
মত জ্বল জ্বল করছিল। তার ঐ নুরানী চেহারা দেখে আমি এত বেশী
হতবাক হলাম যে
,আমার সব কিছু প্রায় এলোমেলো হয়ে গেল।
এমন সময় তিনি আমাকে বললেন:
“
হে ইব্রাহীম
,পালাবার কোন
প্রয়োজন নেই
।
খুব শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে তার অনিষ্ট হতে পরিত্রাণ
দিবেন।
”
আমি আরও বেশী হতবাক হয়ে ইমাম আসকারী (আ.)-কে জিজ্ঞাসা
করলাম
,“
আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক এই ছেলে কে যিনি
আমার মনের খবর বলছেন
?”
ইমাম (আ.) বললেন:
“
সে আমার সন্তান এবং
আমার উত্তরাধিকারী।
”
ইব্রাহীম বলেন
,“
আল্লাহর করুনার প্রতি আশা ও দ্বাদশ ইমাম (আ.)-এর
কথার প্রতি বিশ্বাস আমার ছিল। কিছু দিন পর আমার চাচা সংবাদ দিলেন
যে আমর বিন আ
’
উফকে হত্যা করা হয়েছে।
”
3- বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দান
ইমামত নামক আকাশের শেষ উজ্বল নক্ষত্র শিশু বয়সেই শিয়া মাযহাব
অনুসারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতেন এবং
তাদেরকে সন্তুষ্ট করতেন। উদাহরণস্বরূপ সংক্ষেপে একটি রেওয়ায়েত
বর্ণনা করছি:
শিয়া মাযহাবের বিশিষ্ট আলেম সা
’
দ ইবনে আব্দুল্লাহ কুম্মী
,ইমামের
উকিল আহমাদ ইবনে ইসহাক কুম্মীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর
জানতে ইমাম আসকারী (আ.)-এর কাছে গিয়েছিলেন। তিনি ঘটনাটি এভাবে
বর্ণনা করেছেন:
ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর কাছে প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে তিনি
তার সন্তানের দিকে ইশারা করে বললেন: আমার চোখের জ্যোতির কাছে
প্রশ্ন কর। তখন ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন: যা ইচ্ছা প্রশ্ন
করতে পার। বললাম
,“
کهیعص
”
এর উদ্দেশ্য কি
?তিনি বললেন: এই
অক্ষরগুলো গায়েবি সংবাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা
’
আলা তার বান্দা (নবী)
যাকারিয়াকে সে সম্পর্কে অবহিত করেছেন অতঃপর মুহাম্মদ (সা.)-কেও সে
সংবাদ দিয়েছেন। ঘটনা হল যে হযরত যাকারিয়া (আ.) আল্লাহর কাছে পাক
পঞ্জাতনের নাম জানতে চাইলেন। আল্লাহ তা
’
আলা হযরত জীব্রাইল (আ.)-
কে সে নামগুলো শিক্ষা দিলেন। হযরত যাকারিয়া যখন মুহাম্মদ (সা.)
,আলী (আ.)
,ফাতিমা (আ.) ও হাসান (আ.)-এর নাম উচ্চারণ করলেন তার
সকল কষ্ট ও সমস্যার অবসান হয়ে গেল। কিন্তু যখন ইমাম হুসাইন (আ.)-
এর নাম উচ্চারণ করলেন তখন কষ্টে তার গলা আটকে আসতে লাগল।
তিনি আল্লাহর কাছে বললেন: হে আল্লাহ আমি যখন প্রথম চার জনের নাম
উচ্চারণ করি তখন আমার সকল কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং মন আনন্দে ভরে
যায়। কিন্তু যখন হুসাইন (আ.)-এর নাম উচ্চারণ করি তখন আমার দু
’
চোখ
দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। আল্লাহ তাকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ঘটনা
সম্পর্কে অবগত করলেন এবং বললেন:
“
کهیعص
”
হচ্ছে এই ঘটনার
সংকেত।
“
کاف
”
হচ্ছে কারবালার সংকেত।
“
هاء
”
হচ্ছে হালাকাত বা
ধ্বংসের সংকেত।
“
یاء
”
হচ্ছে পাপিষ্ট ইয়াযিদের নামের সংকেত।
“
عین
”
হচ্ছে আতাশ তথা পিপাসার সংকেত।
“
صاد
”
হচ্ছে ইমাম হুসাইন
(আ.)
এর সবর ও ধৈর্যের সংকেত।
বললাম: কেন মানুষ নিজেরাই তাদের ইমামকে নির্বাচন করতে পারবে
না
?
ইমাম বললেন: তুমি মুসলেহ (মুক্তিদাতা) ইমামের কথা বলছ নাকি
মোফসেদ (পথভ্রষ্ট) ইমামের কথা বলছ
?বললাম: মুসলেহ ইমামের কথা
বলছি যিনি সমাজকে সংষ্কার করবেন। ইমাম বললেন: যেহেতু কেউই
কারো মনের খবর রাখে না যে
,সে গঠনমূলক চিন্তা করে নাকি ধ্বংসাত্মক
,সুতরাং মানুষের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ব্যক্তি মোফসেদও তো হতে পারে
?বললাম: হ্যাঁ
,হতে পারে। বললেন: কারণ
,এটাই।
ইমাম এই হাদীসে আরও অনেক শর্ত বা কারণ বর্ণনা করেছেন তবে
সংক্ষিপ্ততার জন্য তা বর্ণনা করা থেকে বিরত হলাম।
4- উপহার গ্রহণ করা
শিয়া মাযহাবের আরও একটি রিতি হচ্ছে যে
,তারা ইমামের জন্য
বিভিন্ন উপঢৌকন এবং খুমস প্রেরণ করে থাকে। ইমাম (আ.) সেগুলোকে
গ্রহণ করে সমাজের নিম্নবিত্তদের প্রয়োজন মেটাতেন।
ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর উকিল ইবনে ইসহাক বলেন: শিয়া
মাযহাবের উপঢৌকন ইমাম আসকারী (আ.)-এর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য
নিয়ে গেলাম। সেখানে তার চাঁদের ন্যায় পুত্র তার পাশে বসে ছিলেন।
ইমাম আসকারী (আ.) তার সন্তানকে বললেন: হে আমার পুত্র তোমার বন্ধু
ও অনুসারীদের আনিত উপঢৌকনগুলো খোল। শিশু পুত্র বললেন: হে
আমার মাওলা এই পবিত্র হাত দিয়ে হালাল ও হারাম মিশ্রিত নাপাক বস্তু
ছোয়া কি ঠিক হবে
?
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বললেন:
“
হে ইসহাক! থলের মধ্যে যা
আছে তা বের কর। আমার পুত্র তার মধ্য থেকে হারাম এবং
হালালগুলোকে পৃথক করবে। আমি একটি থলে বের করলাম। শিশু পুত্র
বললেন: এই থলেটা কোম শহরের অমুক লোকের এবং তার মধ্যে 62
আশরাফী আছে। তার মধ্যে 45 আশরাফী তার পিতার দেয়া জমি
বিক্রয়ের
,14 আশরাফী তার নয়টি জামা বিক্রয়ের এবং বাকি তিনটি
আশরাফী তার দোকান ভাড়ার।
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বললেন: হে আমার পুত্র! ঠিক বলেছ।
এখন এই ব্যক্তিকে বলে দাও যে
,এর মধ্যে কোনটি হারাম
?শিশু ইমাম
মনযোগ সহকারে হারাম জিনিসগুলোকে পৃথক করলেন এবং তার কারণও
উল্লেখ করলেন।
অতঃপর আর একটি থলে বের করলাম। ওই থলেটি যে ব্যক্তির তিনি
তার নাম ও ঠিকানা বলার পর বললেন:
“
তার মধ্যে 50 আশরাফী আছে
যা আমাদের ছোঁয়া ঠিক নয়। তারপর ওই অর্থ অপবিত্র হওয়ার কারণ
সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন।
অতঃপর ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বললেন: হে আমার পুত্র তুমি
সঠিক বলেছ। তারপর আহমাদ বিন ইসহাককে বললেন:
“
সবগুলোকে
তাদের প্রত্যেককে ফিরিয়ে দাও কেননা আমাদের তার কোন প্রয়োজন
নেই।
”
5- পিতার জানাযার নামায পড়ানো
ইমাম মাহদী (আ.)-এর গুপ্ত অবস্থার সময়ে এবং স্বল্পমেয়াদী অদৃশ্য শুরু
হওয়ার পূর্বে সর্বশেষ যে কার্য সম্পাদন করেছিলেন তা হল পিতার
জানাযার নামায।
একাদশ ইমামের খাদেম আবুল আদইয়ান এ সম্পর্কে বলেন:
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) জীবনের শেষ সময়ের দিকে আমাকে কিছু
চিঠি দিয়ে বললেন:
“
এগুলোকে মাদায়েনে নিয়ে যাও। পনের দিন পর
ফিরে এসে আমার বাড়িতে রোনা-জারি শুনতে পাবে এবং আমার মৃতদেহ
গোসলের স্থানে দেখবে।
”
আমি বললাম: হে আমার মাওলা এমনটি হলে
আপনার উত্তরাধিকারী তথা পরবর্তী ইমাম কে হবেন
?ইমাম বললেন:
“
যে
তোমার কাছে আমার চিঠির উত্তর সম্পর্কে জানতে চাইবে তিনিই পরবর্তী
ইমাম হবেন।
”
বললাম: আরও কিছু বৈশিষ্ট্য বলুন। ইমাম বললেন:
“
যে
আমার জানাযার নামাজ পড়াবেন তিনিই পরবর্তী ইমাম হবেন।
”
বললাম:
অরও কিছু বৈশিষ্ট্য বলুন। ইমাম বললেন:
“
যে এই থলেতে যা আছে সে
সম্পর্কে খবর দিবে সেই পরবর্তী ইমাম হবেন।
”
কিন্তু ইমাম (আ.)-এর
গাম্ভির্য দেখে প্রশ্ন করতে সাহস পেলাম না।
চিঠিসমূহকে মাদায়েনে নিয়ে গেলাম উত্তর নিয়ে ইমামের কথামত
পনের দিনের মাথায় সামেররাতে ফিরে ইমাম (আ.)-এর বাড়িতে কান্নার শব্দ
শুনতে পেলাম এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর মৃতদেহকে গোসলের
স্থানে দেখতে পেলাম। তখন ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর ভাই
জা
’
ফরকে দেখলাম যে ইমাম (আ.)-এর বাড়িতে দাড়িয়ে আছে এবং কেউ
কেউ তাকে শোক বার্তা জানাচ্ছে এবং ইমাম হিসাবে তাকে মোবারকবাদ
জানাচ্ছে। আমি মনে মনে বললাম: এই লোক যদি ইমাম হয় তাহলে
ইমামত ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা তাকে আমি চিনতাম সে মদ্য পান করত
এবং গানবাজনা করত। যেহেতু ইমাম (আ.)-এর বলে যাওয়া আলামতের
খোজে ছিলাম তাই আমিও তার কাছে গেলাম এবং অন্যদের মত তাকে
শোকবার্তা জানালাম ও মোবারকবাদ জানালাম। কিন্তু সে আমাকে চিঠির
জবাব সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞাসা করল না। তখন আকিদ [ইমাম হাসান
আসকারী (আ.)]-এর আর এক খাদেম জা
’
ফরকে বলল: হে আমার নেতা
আপনার ভ্রাতাকে কাফন করা হয়েছে এসে জানাযার নামায পড়ান। আমিও
জা
’
ফর এবং শিয়া মাযহাবের অন্যান্যদের সাথে ভিতরে গিয়ে দেখলাম যে
,ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-কে কাফন পরিয়ে তাবুতে রাখা হয়েছে।
জা
’
ফর নামায পড়ানোর জন্য সামনে গিয়ে তকবির দিতে গেল তখন
গৌরবর্ণের একটি শিশু বেরিয়ে এসে জা
’
ফরের জামা টেনে ধরে বললেন:
হে চাচা সরে দাড়ান আমার পিতার জানাযার নামায পড়ানোর দায়িত্ব
আমার উপর ন্যাস্ত হয়েছে। জা
’
ফরের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল এবং সে
পিছনে সরে আসল। ছোট্ট শিশু সামনে গিয়ে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-
এর জানাযার নামায পড়ালেন। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: চিঠির
উত্তরগুলো আমাকে দাও। আমি চিঠিগুলো তাকে দিলাম। আমি মনে মনে
বললাম এ দু
’
টি নিদর্শনই তো এই ছোট্ট বালকের ইমাম হওয়ার নিদর্শন।
থলের ঘটনাটি বাকি রইল। জা
’
ফরের কাছে গিয়ে দেখি সে আর্তনাদ
করছে। একজন শিয়া মাযহাবের অনুসারী তাকে প্রশ্ন করল এই বালকটি
কে
?
জা
’
ফর বলল: আল্লাহর শপথ আমি এ ছেলেটিকে কখনোই দেখিনি
এবং তাকে চিনিও না।
আবুল আদইয়ান আরও বলল: আমরা বসে ছিলাম এমতাবস্থায় কোম
থেকে কিছু লোক এসে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর সম্পর্কে জানতে
চাইল। তারা ইমাম (আ.) শহীদ হওয়ার খবর জানতে পেরে বলল: কাকে
শোকবার্তা জানাব
?জনগণ জা
’
ফরের দিকে ইশারা করল। তারা জা
’
ফরকে
সালাম দিয়ে তাকে শোকবার্তা ও মোবারকবাদ জানাল। অতঃপর তারা
জা
’
ফরকে বলল: আমাদের কাছে কিছু চিঠি ও উপঢৌকন আছে। বলুন
চিঠিগুলো কার
?এবং কি পরিমাণ উপঢৌকন আছে
?
জা
’
ফর রেগে গিয়ে দাড়িয়ে বলল: আমার কাছে গায়েবী সংবাদ জানতে
চাও
?তখন ভিতর থেকে একজন খাদেম বেরিযে এসে বলল: ওমুক
,ওমুকের চিঠি তোমাদের কাছে আছে এবং তাদের নাম ঠিকানা বলল।
থলের মধ্যে এক হাজার দিনার আছে এবং দশটির চিহ্ন মুছে গেছে। তারা
চিঠি এবং দিনারগুলোকে তার কাছে দিয়ে বলল: যিনি তোমাকে এগুলো
নিতে পাঠিয়েছেন তিনিই হলেন প্রকৃত ইমাম।