সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি 0%

সৃষ্টির পরশমনি লেখক:
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক: মুহাম্মদ মাহদী হায়েরীপুর,মাহদী ইউসুফিয়ান ও মুহাম্মদ আমীন বালাদাসতিয়ান
: মোহাম্মাদ আলী মোর্ত্তজা
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 21989
ডাউনলোড: 4073

পাঠকের মতামত:

সৃষ্টির পরশমনি
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 40 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 21989 / ডাউনলোড: 4073
সাইজ সাইজ সাইজ
সৃষ্টির পরশমনি

সৃষ্টির পরশমনি

লেখক:
প্রকাশক: বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কোম,ইরান।
বাংলা

চতুর্থ ভাগ :কাঙ্ক্ষিতের সাক্ষাৎ

অদৃশ্যকালীন সময়ে শিয়াদের সবচেয়ে বড় কষ্ট হল যে ,তারা তাদের মাওলার থেকে দুরে এবং তার নজির বিহীন নূরানী চেহারাকে দেখতে পায় না। অদৃশ্যের পর থেকে আবির্ভাবের জন্য প্রতিক্ষাকারীরা সর্বদা তাকে দেখার আশায় জ্বলছে এবং তার দুরত্বের কারণে আর্তনাদ করছে। তবে স্বল্পমেয়াদী অদৃশ্যকালীন সময়ে শিয়ারা ইমামের নায়েবদের (প্রতিনিধিদের) মাধ্যমে ইমামের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারত এবং কেউ কেউ আবার সরাসরি ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করতেন। এ সম্পর্কে অনেক হাদীসও রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী অন্তর্ধানের (যাকে পরিপূর্ণ অদৃশ্য বলা যেতে পারে) পর সরাসরি যোগাযোগ সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়ে যায়। এমনকি বিশেষ নায়েবদের মাধ্যমেও ইমামের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

তারপরও অধিকাংশ আলেমগণ বিশ্বাস করেন যে ,এ সময়েও তার সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব এবং তা বহুবার ঘটেছে। আল্লামা বাহরুল উলুম ,মোকাদ্দাস আরদেবেলী ,সাইয়্যেদ ইবনে তাউস এবং আরো অনেক বড় আলেমগণ তার সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। 82

ইমাম মাহ্দীর সাথে সাক্ষাতের আলোচনায় নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর লক্ষ্য করুন:

প্রথম বিষয়টি হচ্ছে: কখনো অসহায় ও অতি জরুরী অবস্থায় ইমামের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে থাকে ,কখনো আবার সাভাবিক অবস্থাতেই এ সাক্ষাৎ হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কখনো মানুষ কোন সমস্যা বা বিপদে পড়ে অসহায় অনুভব করলে ইমাম মাহ্দী (আ.) তাদেরকে সাহায্য করেন। অনেকেই বিভিন্ন স্থানে যেমন হজ্বে যাওয়ার পথে পথ ভুলে গেলে ইমাম মাহদী (আ.) অথবা তার কোন প্রতিনিধি তাদেরকে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। অধিকাংশ মোলাকাতই এ ধরণের। কিন্তু কখনো আবার স্বাভাবিক অবস্থাতেই মোলাকাতকারী তার আধ্যাত্মিক মর্যাদার মাধ্যমে ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করে থাকেন।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে ,ইমামের সাথে মোলাকাতের দাবি সবার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে: দীর্ঘমেয়াদী অদৃশ্যকালে বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যারা ইমামের সাথে সাক্ষাতের দাবি করে থাকে তারা কেবল নিজেদের চারপাশে লোক জড়ো করা এবং রুজি ও খ্যতি অর্জন করার জন্যেই একাজ করে থাকে। এভাবে তারা অনেককেই পথভ্রষ্ট করেছে এবং তাদের আক্বীদা ও আমল নষ্ট করেছে। তারা বিভিন্ন দোয়া এবং বিশেষ কিছু আমলের মাধ্যমে ইমামের সাথে সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব বলে থাকে কিন্তু তার কোন ভিত্তি নেই। তারা দাবি করে এসব করলে অতি সহজেই ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব। যেখানে আল্লাহর নির্দেশে ইমাম দীর্ঘ মেয়াদী অদৃশ্যে রয়েছেন এবং অতি বিশেষ এবং খুবই মুষ্টিমেয় মহান আলেমরা ব্যতীত কেউই তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না।

তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে: তখনই মোলাকাত সম্ভব যখন ইমাম মাহ্দী (আ.) নিজেই তা প্রয়োজন মনে করবেন। সুতরাং যখন কোন সাক্ষাৎ পিপাসু অতি আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করতে না পারে তখন তাকে নিরাশ হলে চলবে না এবং যেন মনে না করে যে ,ইমাম তাকে ভালবাসে না বা তার প্রতি ইমামের কোন দৃষ্টি নেই। অনুরূপভাবে যিনি তার সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে সে যেন মনে না করে যে ,ইমাম তাকে সবার চেয়ে বেশী ভালবাসে এবং সে তাকওয়া ও ফজিলতের শীর্ষে অবস্থান করছে।

মোদ্দা কথা হচ্ছে যদিও ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করা ও কথা বলা অতি সৌভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু আমাদের ইমামগণ বিশেষ করে ইমাম মাহ্দী (আ.) শিয়াদেরকে বলেন নি যে তোমরা আমাকে দেখার জন্য চিল্লায় বস অথবা জঙ্গলে বসবাস কর। বরং তারা বলেছেন যে ,তার আবির্ভাবের জন্য দোয়া কর এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টির জন্য চেষ্টা কর। তার মহান উদ্দেশ্যের পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। এভাবেই তার আবির্ভাবের পথ সুগম হবে এবং সারা বিশ্ব তার থেকে সরাসরি উপকৃত হবে।

ইমাম মাহদী (আ.) নিজেই বলেছেন:

اکثر الدعاء بتعجیل الفرج فان ذالک فرجکم

আমার আবির্ভাব ত্বরান্বিত হওয়ার জন্য বেশী বেশী দোয়া কর কেননা তার মধ্যেই তোমাদের সৌভাগ্য নিহীত রয়েছে 83

এখানে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে মরহুম হাজী আলী বাগদাদীর মোলাকাতের সুন্দর ঘটনাটি বর্ণনা করা উপযুক্ত মনে করছি।

ওই যোগ্য ও পরহেজগার ব্যক্তি সর্বদা বাগদাদ থেকে কাযেমাইনে যেতেন এবং দু মহান ইমাম হযরত ইমাম জাওয়াদ (আ.) এবং হযরত ইমাম কাযেম (আ.)-এর যিয়ারত করতেন। তিনি বলেন: আমার উপর কিছু খুমস ও যাকাত ওয়াজিব ছিল। এ কারণেই নাজাফে আশরাফ গেলাম এবং তা থেকে 20 তুমান মহান আলেম ও ফকীহ শেইখ আনসারীকে দিলাম এবং 20 তুমান আয়াতুল্লাহ শেইখ মুহাম্মদ হাসান কাযেমী (রহ.)-কে দিলাম। 20 তুমান আয়াতুল্লাহ শেইখ মুহাম্মদ হাসান শুরুকী (রহ.)-কে দিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম বাকি দেনাকে ফেরার পথে হযরত আয়াতুল্লাহ আলে ইয়সীনকে দিব। পঞ্চম দিনে বাগদাদে ফিরে এসে প্রথমে দু মাহন ইমামকে যিয়ারত করার জন্য কাযেমাইনে গেলাম। অতঃপর আয়াতুল্লাহ আলে ইয়াসীনের বাড়ী গেলাম এবং আমার শরিয়তী দেনার বাকি অংশ তাকে দিলাম। তার কাছে অনুমতি চাইলাম যে ,বাকিটা ক্রমে ক্রমে তাকে অথবা অন্যদেরকে দিব। তিনি আমাকে তার কাছে থাকতে বললেন কিন্তু জরুরী কাজ থাকাতে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাগদাদের দিকে রওনা হলাম। তিন ভাগের এক ভাগ পথ জাওয়ার পর একজন মহান সাইয়্যেদের সাথে সাক্ষাৎ হল। তার মাথায় সবুজ পাগড়ী এবং চোয়ালে একটি সুন্দর কালো তিল ছিল। তিনি যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কাযেমাইনে যাচ্ছিলেন। তিনি আমার নিকটে এসে আমাকে সালাম এবং হাতে হাত দিলেন ,আমাকে টেনে জড়িয়ে ধরে স্বাগতম জানিয়ে বললেন ,কোথায় যাচ্ছ ?

আমি বললাম: যিয়ারত করে এখন বাগদাদে ফিরে যাচ্ছি। তিনি বললেন: আজ বৃহস্পতিবারের দিবগত রাত কাযেমাইনে ফিরে যাও এবং এ রাতটা সেখানেই কাটাও। বললাম: সম্ভব হবে না! তিনি বললেন: পারবে ,যাও ফিরে যাও তাহলে সাক্ষি দিব যে তুমি আলী (আ.)-এর প্রতি এবং আমাদের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী এবং শেইখও সাক্ষি দিবে। আল্লাহ তা আলা বলছেন:

و استشهد شهیدین  দু জনকে সাক্ষি রাখ। 84

আলী বাগদাদী আরো বললেন: আমি ইতিপূর্বে আয়াতুল্লাহ আলে ইয়াসিনকে বলেছিলাম যে ,আমার জন্য যেন তিনি একটি সনদ লিখেন এবং তাতে যেন সাক্ষ্য দেন যে ,আমি আহলেবাইতের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী শিয়া এবং আমি সে সনদটাকে আমার কাফনের মধ্যে রাখব। আমি সাইয়্যেদকে প্রশ্ন করলাম: আপনি কোথা থেকে আমাকে চেনেন এবং কিভাবে এ সাক্ষ্য দিবেন ?তিনি বললেন: যদি কেউ কারো আধিকার সম্পূর্ণরূপে দিয়ে দেয় তাহলে তাকে চেনা কি কঠিন ?বললাম: কোন অধিকার ?তিনি বললেন: যে অধিকার তুমি আমার উকিলকে দিয়েছ। বললাম: আপনার উকিল কে ?তিনি বললেন: শেইখ মুহাম্মদ হাসান। আমি বললাম: তিনি কি আপনাপর উকিল ?বললেন: হ্যাঁ।

তার কথা শুনে আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম। মনে হচ্ছিল তিনি আমার পূর্ব পরিচিত কেউ অথচ আমি তাকে ভুলে গেছি। তিনি প্রথম দেখাতেই আমাকে আমার নাম ধরে ডেকেছিলেন। মনে করেছিলাম যে ,তিনি হয়ত রাসূল (সা.)-এর সন্তান হিসাবে ওই খুমসের কিছু অংশ আমার কাছে চাচ্ছেন। সুতরাং বললাম: আপনাদের অধিকারের কিছু পরিমাণ আমার কাছে আছে ,তবে তা খরচ করার অনুমতি নিয়ে নিয়েছি। তিনি মুচকি হেসে বললেন: হ্যা ,আমাদের কিছু হককে নাজাফে আমাদের উকিলের কাছে দিয়েছ। বললাম: আল্লাহ আমার এ কাজ গ্রহণ করবেন ?তিনি বললেন: হ্যাঁ। আমার মনে প্রশ্নের উদ্রেক হল যে ,তিনি কিভাবে আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেমকে তার উকিল হিসাব করছেন। কিন্তু আবার তা ভুলে গেলাম।

আমি বললাম: হে আমার মাওলা এটাকি ঠিক যে ,যদি কেউ বৃহস্পতিবারের দিবগত রাতে ইমাম হুসাইন (আ.)-কে যিয়ারত করে তাহলে সে আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি পাবে ?তিনি বললেন: হ্যাঁ! এবং তখনই তার চোখ অশ্রুতে ভরে গেল ও তিনি কেঁদে ফেললেন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম যে ,কোন প্রকার পথ না হেটেই কাযেমাইনে পৌঁছে গেছি। প্রবেশ দারে দাড়ালাম। তিনি বললেন: যিয়ারত পড়। আমি বললাম: হে আমার মাওলা আমি ভাল পড়তে পারি না। তিনি বললেন: তুমি কি চাও যে ,আমি পড়ব আর তুমি আমার সাথে যিয়ারত করবে ?বললাম: হ্যাঁ।

তিনি শুরু করলেন এবং রাসূল (সা.) ও ইমামদের প্রতি সালাম করলেন এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.) পর্যন্ত পড়ার পর বললেন: তুমি তোমার যামানার ইমামকে চেন ?বললাম: কেন চিনব না ?বললেন: তাহলে তার প্রতি সালাম কর। বললাম ,

السلام علیک یا حجة الله یا صاحب الزمان یا ابن الحسن

তিনি একটু মুচকি হেসে বললেন:

وعلیک السلام و رحمة الله و برکاته

অতঃপর মাযারে প্রবেশ করে যারিহতে চুমু খেলাম। তিনি বললেন: যিয়ারত পড়। বললাম: হে আমার মাওলা আমি ভাল পড়তে পারি না। তিনি বললেন: তুমি কি চাও যে ,আমি পড়ব আর তুমি আমার সাথে যিয়ারত করবে ?বললাম: হ্যাঁ। তিনি যিয়ারতে আমিন আল্লাহ পড়ে বললেন: আমার পিতামহ ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত করতে চাও ?বললাম: হ্যাঁ আজকে বৃহস্পতিবারের দিবগত রাত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত করার রাত। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত পাঠ করলেন। মাগরিবের নামাজের সময় হলে তিনি বললেন , চল জামাতের সাথে নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর দেখলাম তিনি নেই এবং অনেক খোঁজা খুঁজি করেও তাকে আর পেলাম না।

তখন বুঝলাম যে ,তিনি আমাকে নাম ধরে ডেকেছিলেন ,অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সাথে কাযেমাইনে ফিরে গেলাম। তিনি বড় বড় আলেম ও ফকীহদেরকে নিজের উকিল বললেন। শেষে আবার হঠাৎ করে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন । অতঃএব ,তিনিই ইমাম মাহদী (আ.) ছিলেন এবং হায় আফসোস যে ,আমি তাকে অনেক দেরীতে চিনতে পেরেছিলাম। 85

পঞ্চম ভাগ :দীর্ঘায়ূ

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর জীবনী সংক্রান্ত অপর একটি আলোচনা হচ্ছে তার দীর্ঘায়ূ নিয়ে। কারো কারো নিকট এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে কিভাবে সম্ভব যে ,একজন মানুষ এত দীর্ঘ আয়ূর অধিকারী হতে পারে ?86

এই প্রশ্নের উৎপত্তি এবং তা উপস্থাপনের কারণ হল যে ,বর্তমান বিশ্বে মানুষের গড় আয়ূ 70 থেকে 100 বছর। 87 অনেকে এ ধরণের গড় আয়ূ দেখার পর কোন মতেই বিশ্বাস করতে পারেন না যে. একজন মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বেঁচে থাকতে পারেন । কেননা ,বুদ্ধিবৃত্তি ও বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দীর্ঘায়ূ খুবই সাধারণ ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ পরীক্ষা করার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ,মানুষের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জীবিত থাকা অসম্ভব নয়। এমনকি মানুষ বৃদ্ধ ও ক্ষীনকায়ও হবে না।

এ ব্যাপারে বার্নার্ড শ বলেছেন:

জীববিদ্যার সকল বৈজ্ঞানীকদের মতে মানুষের আয়ূ এমন একটি জিনিস যার কোন সীমা নির্নয় করা সম্ভব নয়। এমনকি দীর্ঘকাল জীবন- যাপনেরও কোন সীমানা নেই। 88

এ ব্যাপারে প্রফেসর আতিনগার বলেছেন:

আমার দৃষ্টিতে প্রযুক্তি উন্নয়নে আমরা যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাতে একবিংশ শতাব্দীর মানুষ সহস্র বছর বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে। 89

বৈজ্ঞানীকদের বৃদ্ধ না হওয়া এবং দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার জন্য যে প্রচেষ্টা তা প্রমাণ করে যে বিষয়টি সম্ভবপর এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অনেকেই উপযুক্ত আবহাওয়া ,উপযুক্ত খাদ্য ,নিয়মিত শরীর চর্চা ও সুচিন্তা এবং আরও বিভিন্ন কারণে 150 বছর কখনো আবার আরও বেশী দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন। মজার ব্যপার হল পৃথিবীর ইতিহাসে পূর্বেও মানুষ দীর্ঘকাল বেচে থেকেছে এবং ঐশী গ্রন্থ এবং ইতিহাস গ্রন্থেও অনেক মানুষের নাম ,ঠিকানা ও জীবন বিত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে ,যাদের আয়ূ বর্তমান কালের মানুষের চেয়ে আনেক বেশী ছিল।

এসম্পর্কে বহু গ্রন্থ এবং গবেষণাও রয়েছে নিম্নে তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হল:

1. পবিত্র কোরআনে এমন আয়াত রয়েছে যাতে শুধুমাত্র দীর্ঘায়ূ নয় বরং অনন্ত জীবনের সংবাদ দেওয়া হচ্ছে। আয়াতটি হযরত ইউনুস সম্পর্কে ,তাতে বলা হয়েছে:

যদি সে (ইউনুস) মাছের উদরে তসবীহ না পড়ত (আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করত) তা হলে তাকে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের উদরে থাকতে হত। 90

সুতরাং আয়াতে অতি দীর্ঘ আয়ূ (হযরত ইউনুসের সময় থেকে কিয়ামত পর্যন্ত) প্রাণীবিদরা যাকে অনন্ত আয়ূ বলে থাকেন কোরআনের দৃষ্টিতে মাছ ও মানুষের জন্য তা সম্ভবপর বিবেচিত হয়েছে। 91

2. পবিত্র কোরআন পাকে হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে বলা হচ্ছে: আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম । সে তাদের মাঝে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ হাজার বছর। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে ;কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী। 92

পবিত্র কোরআনের আয়াতে হযরত নূহের নবুয়্যতের বয়সকে 950 বছর বোঝানো হয়েছে (তার গড় আয়ু সম্পর্কে বলা হয়নি)। হাদীসের আলোকে তিনি 2450 বছর বেঁচে ছিলেন। 93

বিশেষ ব্যাপার হল ইমাম সাজ্জাদ (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহদী (আ.)-এর মধ্যে হযরত নূহের একটি বৈশিষ্ট্য (সুন্নত) আছে আর তা হল দীর্ঘায়ূ। 94

3. হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে: তাদের এই উক্তির জন্য যে , আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হল) । অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি ,ক্রুশবিদ্ধও করেনি ;কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল ,তারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল। এসম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে ,তারা তাকে হত্যা করে নি। বরং আল্লাহ তাকে তার নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী ,প্রজ্ঞাময়। 95

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেক মুসলমানই বিশ্বাস করেন যে ,হযরত ঈসা (আ.) জীবিত রয়েছেন এবং হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের পরমূহুর্তে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং তাকে সহযোগিতা করবেন।

ষষ্ঠ :ভাগ সবুজ প্রতীক্ষা

যখন কালো মেঘ সূর্যকে আড়াল করে দেয় ,মরু প্রান্তর সূর্যকে চুমা খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় এবং বৃক্ষরাজি ও ফুল সূর্যের ভালবাসার পরশ না পেয়ে নুয়ে পড়ে তখন উপায় কি ?যখন সৃষ্টির নির্যাশ ,ভালর সমষ্টি ,সৌন্দর্যের দর্পন অদৃশ্যে থাকে এবং বিশ্ববাসী তার উপস্থিতি থেকে বঞ্চিত তখন কি করা যেতে পারে ?

ফুলবাগানের ফূলগুলো তাদের সুজন মালির প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে কখন তাকে কাছে পাবে এবং তার ভালবাসাপূর্ণ হাতের পানিতে প্রাণ জুড়াবে। আগ্রহী হৃদয় অধিরভাবে তার দৃষ্টির পানে তাকিয়ে আছে যেন তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনুগ্রহকে উপলব্ধি করতে পারে আর এখানেই প্রতীক্ষা পূর্ণতা পায়। হ্যাঁ সকলেই এ প্রতীক্ষায় আছে যে তিনি সজীবতা এবং প্রশান্তি বয়ে আনবেন।

সত্যিই প্রতীক্ষা কতইনা সুখকর যদি কিনা তার সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা যায় এবং তার সুমিষ্টতাকে অন্তরে অনুভব করা যায়।

প্রতীক্ষার স্বরূপ এবং মর্যাদা

প্রতীক্ষার অনেক অর্থ করা হয়েছে তবে এ শব্দটির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিলে তার প্রকৃত অর্থ হস্তগত হবে। প্রতীক্ষা অর্থাৎ কারো অপেক্ষায় থাকা তবে এই অপেক্ষা স্থান ও পাত্র ভেদে মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে এবং তা ফলপ্রসূ হয়। প্রতীক্ষা কেবলমাত্র এক অভ্যান্তরীণ ও আত্মীক বিষয় নয় বরং তা ভিতর থেকে বাহিরে বিস্তৃত হয় এবং গতি ও পদক্ষেপ সৃষ্টি করে। এ কারণেই প্রতীক্ষা সর্বশ্রেষ্ট ইবাদৎ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। প্রতীক্ষা প্রতীক্ষাকারীকে গঠন করে এবং তার কর্ম ও প্রচেষ্টার জন্য এক বিশেষ দিক সৃষ্টি করে। এটা এমন একটি পথ যা তাকে প্রতীক্ষার বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করে।

সুতরাং হাতের উপর হাত রেখে বসে থাকার সাথে প্রতীক্ষার কোন সামঞ্জস্যতা নেই। দরজার পানে তাকিয়ে থেকে আফসোস করার মধ্যে প্রতীক্ষা শেষ হয় না। রবং প্রকৃত প্রতীক্ষার মধ্যে প্রচেষ্টা ,পদক্ষেপ এবং চঞ্চলতা লুকিয়ে আছে।