ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রতীক্ষার বৈশিষ্ট্য
আমরা বলেছি প্রতীক্ষা মানুষের একটি সহজাত স্বভাব এবং তা
প্রত্যেকের মধ্যেই বিদ্যমান। তবে মানুষের জীবন চলার পথে বা সমাজে
যে সাধারণ প্রতীক্ষা তা যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন বিশ্বমানবতার
মুক্তিদাতার প্রতীক্ষার তুলনায় অতি সামান্য তথা নগন্য। কেননা
,তার
প্রতীক্ষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রতীক্ষা সৃষ্টির প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে। অর্থাৎ
আদিকাল থেকে নবীগণ (আ.) তার আবির্ভাবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।
শেষের দিকেও আমাদের ইমামগণ (আ.) তার শাসন ব্যবস্থার অপেক্ষা
করতেন।
ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
আমি যদি তার সময়ে হতাম (তার সাক্ষাৎ পেতাম) তাহলে সারা জীবন
তার খেদমত করতাম।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতীক্ষা মানে বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতার
প্রতীক্ষা। বিশ্বজনীন ন্যায়পরায়ণ শাসনব্যবস্থার প্রতীক্ষা এবং সকল প্রকার
ভাল প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রতীক্ষা। এ প্রতীক্ষায় মানবজাতি অপেক্ষায় আছে যে
,তারা তাদের ঐশী সহজাত স্বভাবের মাধ্যমে যার আশা করছে এবং
কখনোই পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয় নি তাকে দেখবে। মাহ্দী হচ্ছেন তিনি
যিনি মানুষের জন্য ন্যায়পরায়ণতা
,আধ্যাত্মিকতা
,ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য
,ভুমির
উর্বরতা ও সোনালী ফসল
,নিরাপত্তা ও সন্ধি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির
উন্নয়নের বন্যা বয়ে আনবেন। অত্যাচারের মূল উৎপাটন
,মানুষকে দাসত্ব
থেকে মুক্তিদান
,সকল প্রকার অত্যাচার ও স্বৈরাচার নিষিদ্ধকরণ এবং সকল
প্রকার বিশৃঙ্খলা থেকে সমাজকে মুক্তিদান করা তার শাসনব্যবস্থার প্রধান
বৈশিষ্ট্য।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতীক্ষা এমন একটি প্রতীক্ষা যা কেবলমাত্র
ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হবে এবং তা ওই সময়ে সম্ভব যখন
প্রত্যেকেই শেষ যামানায় বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতার প্রতীক্ষায় থাকবে।
তিনি এসে তার অনুসারীদের সাহায্যে সবধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধ গড়ে তুলবে কেবলমাত্র মো
’
জেযার মাধ্যমে বিশ্বকে সুসজ্জিত করা
সম্ভবপর নয়।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতীক্ষা
,প্রতীক্ষাকারীদের মধ্যে তাকে সাহায্য
করা ও সঙ্গ দেওয়ার স্পৃহা তথা অনুপ্রেরণা যোগায়। মানুষকে ব্যক্তিত্ব ও
জীবন দান করে এবং তাদেরকে শুন্যতা ও হতাশা থেকে মুক্তিদান করে।
যা বর্ণিত হয়েছে তা প্রতীক্ষার বিশাল বৈশিষ্ট্যের (যা সকলমানুষের
অন্তরে গেঁথে আছে) একটি অংশ মাত্র এবং কোন প্রতীক্ষাই তার প্রতীক্ষার
সমকক্ষ নয়। সুতরাং ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রতীক্ষার বিভিন্ন দিক ও
বহুমুখী ফলাফল সম্পর্কে জানা এবং প্রতীক্ষাকারীদের দায়িত্ব ও তার
নজিরবিহীন পুরস্কার সম্পর্কে কথা বলা যথাযত হবে।
প্রতীক্ষার বিভিন্ন দিক
মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে:
এক দিকে সে চিন্তাগত ও কার্যগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী
,অন্য দিকে সে
ব্যক্তিগত ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী
,অপর দিকে আবার সে
শারীরিক ও আত্মিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। নিঃসন্দেহে উল্লিখিত প্রতিটি
দিকেরই নির্দিষ্ট সীমারেখার প্রয়োজন রয়েছে যার মধ্যে মানুষের জীবনের
সঠিক পথ উম্মোচন হবে এবং ভ্রান্ত পথসমূহ বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সঠিক
পথটিই হচ্ছে প্রতীক্ষার পথ।
বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতার প্রতীক্ষা
,প্রতীক্ষাকারীর জীবনের প্রতিটি
দিকেই প্রভাব বিস্তার করে। চিন্তাগত দিক যা মানুষের কার্যগত দিকের
ভিত্তি তা মানুষের জীবনের মৌলিক বিশ্বাসের সীমারেখাকে রক্ষা করে।
অন্যকথায় সঠিক প্রতীক্ষার দাবি হচ্ছে প্রতীক্ষাকারী তার আক্বীদা-বিশ্বাস ও
চিন্তার ভিত্তিকে মজবুত করবে যাতে করে সে ভ্রান্ত মাযহাবসমূহের ফাদে না
পড়ে অথবা ইমাম মাহদী (আ.)-এর অন্তর্ধান দীর্ঘ হওয়ার ফলে হতাশার
অন্ধকুপে নিমজ্জিত না হয়।
ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.) বলেছেন:
মানুষের প্রতি এমন দিন আসবে যে দিন তাদের ইমাম অদৃশ্যে
থাকবেন। অতঃপর তাদের জন্য সুসংবাদ
,যারা সে সময়ে আমাদের
ইমামতের উপর বিশ্বাসে অটল থাকবে।
অর্থাৎ অদৃশ্যকালীন সময়ে শত্রুরা বিভিন্ন সন্দেহমূলক প্রশ্ন উত্থাপন
করার মাধ্যমে শিয়া মাযহাবের সঠিক আক্বীদাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে
আর ঠিক তখনই প্রতীক্ষার ঘাটিতে অবস্থান নেওয়ার ফলে বিশ্বাসের
সীমানা রক্ষিত হবে।
কার্যগত ক্ষেত্রে প্রতীক্ষা মানুষের সবধরণের কর্মকাণ্ডে সঠিক পথ নির্দেশ
করে। প্রতীক্ষাকারীকে কর্মক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে যার মাধ্যমে ন্যায়নিষ্ঠ
শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। সুতরাং প্রতীক্ষাকারী এ পর্যায়ে আত্মগঠন
ও সমাজ সংশোধনে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। অনুরূপভাবে
ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও আত্মগঠনের জন্য চারিত্রিক গুনাবলির দিকে গুরুত্ব দেয়
এবং নূরানী দলে কার্যকরী ভূমিকা পালন করার জন্য শারীরিক শক্তি
উপার্জন করে।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
যারা ইমাম মাহদী (আ.)-এর সাহায্যকারী হতে চায় তাদেরকে প্রতীক্ষা
করতে হবে এবং প্রতীক্ষার অবস্থায় পরহেজগার এবং উত্তম চরিত্রের
অধিকারী হতে হবে।
মোদ্দা কথা প্রতীক্ষা এমন একটি পবিত্র ঘটনা যা প্রতিক্ষিত ব্যক্তি ও
সমাজের শিরা উপশিরায় ধাবমান। মানুষের জীবনের সকল অধ্যায়ে
খোদায়ী রং দান করে এবং কোন রং খোদায়ী রঙের চেয়ে উত্তম ও স্থায়ী
হতে পারে
?পবিত্র কোরআন পাকে বর্ণিত হয়েছে:
)
صِبْغَةَ اللَّـهِ
وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّـهِ صِبْغَة
(
আল্লাহর রং (গ্রহণ কর)
,রঙে আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিকতর সুন্দর
?এবং
আমরা তারই ইবাদতকারী।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে
,বিশ্বমানবতার
মুক্তিদানকারীর প্রতীক্ষাকারীদেরকে অবশ্যই আল্লাহর রং ধারণ করতে
হবে। যার মাধ্যমে প্রতীক্ষার বরকত ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের
প্রতিটি স্তরে শোভা বর্ধন করবে। এভাবে দেখলে এ দায়িত্ব আর আমাদের
কাধে বোঝার সৃষ্টি করবে না বরং তা মধুর ঘটনা হিসাবে আমাদের
জীবনের প্রতিটি দিককে অর্থবোধক ও সৌন্দর্য মণ্ডিত করে তুলবে। সত্যিই
যদি দয়াময় রাষ্ট্রের অধিপতি এবং দয়ালু কাফেলার প্রধান আমির তোমাকে
ঈমানের তাবুর যোগ্য সৈন্য হিসাবে সত্যের ঘাটির জন্য ডেকে থাকেন আর
তা প্রতীক্ষায়রূপ নেয় তখন তুমি কি করবে
?তোমার উপর কি দায়িত্ব
অর্পণ করতে হবে যে
,এটা কর ওটা কর নাকি তুমি নিজেই প্রতীক্ষার
পথকে চিনেছ এবং যে (সঠিক) পথকে নির্বাচন করেছ সে দিকেই যাত্রা
করবে
?
প্রতীক্ষাকারীদের দ্বায়িত্ব
রেওয়ায়াতে এবং ইমামগণ (আ.)-এর বাণীতে আবির্ভাবের
প্রতীক্ষাকারীদের বহু দায়িত্ব-কর্তব্য বর্ণিত হয়েছে এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু
দায়িত্ব-কর্তব্য তুলে ধরছি।
ক) - ইমামকে চেনা
প্রতীক্ষিত ইমাম (আ.)-কে না চিনে প্রতীক্ষার পথকে অতিক্রম করা
অসম্ভব। প্রতিশ্রুত ইমামকে চেনার মাধ্যমেই প্রতীক্ষার পথে টিকে থাকা
সম্ভব। সুতরাং ইমাম (আ.)-এর নাম ও বংশ পরিচয় জানার পাশাপাশি তার
মর্যাদা
,মহিমা
,অবস্থান ও পদমর্যাদা সম্পর্কেও বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন
রয়েছে।
ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর খাদেম আবু নাসর ইমাম মাহ্দী (আ.)-
এর অন্তর্ধানের পূর্বে ইমামের কাছে আসলে ইমাম (আ.) তাকে জিজ্ঞাসা
করলেন: তুমি আমাকে চেন
?সে বলল: হ্যাঁ
,আপনি আমার নেতার সন্তান
এবং আমার নেতা। ইমাম বললেন: এমন পরিচয় সম্পর্কে আমি তোমাকে
প্রশ্ন করি নি। আবু নাসর বলল: তাহলে আপনি কেমন পরিচয় সম্পর্কে
জানতে চেয়েছেন
,দয়া করে নিজেই বলুন।
ইমাম (আ.) বললেন:
আমি রাসূল (সা.)-এর সর্বশেষ প্রতিনিধি এবং আল্লাহ আমার মাধ্যমেই আমার বংশ ও আমাদের অনুসারীদের বালা-মুছিবত দূর করে থাকেন
।
যদি প্রতীক্ষাকারী ইমামের সঠিক পরিচিতি অর্জন করতে পারে তাহলে
সে এখন থেকেই নিজেকে ইমাম (আ.)-এর পক্ষে অনুভব করবে অর্থাৎ মনে
করবে যে
,সে ইমাম (আ.)-এর তাবুতে তার পাশেই অবস্থান করছে।
সুতরাং কখনোই সে ইমাম (আ.)-এর দলকে শক্তিশালী করার জন্য
সামান্যতম সময়কেও হেলায় কাটাবে না।
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
من مات و هو عارف لامامه لم یضره تقدم هذا الامر او تأخر و من مات و هو عارف لامامه کان کمن هو مع الفائم فی فسطاطه
“
যে ইমাম (আ.)-কে সঠিকভাবে চিনে মৃত্যুবরণ করবে ইমামের আবির্ভাব
দেরীতেই হোক আর নিকটেই হোক তার জন্য কোন ক্ষতির কারণ নয়।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমাম (আ.)-কে সঠিকভাবে চিনে মৃত্যুবরণ করবে সে সেই
ব্যক্তির ন্যায় যে
,ইমাম (আ.)-এর তাবুতে তার পাশেই অবস্থান করছে।
”
এই পরিচিতি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে ইমামগণ (আ.) বলেছেন
,তা অর্জন
করার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর দীর্ঘ অন্তর্ধানে বিপথগামিরা সন্দেহে পড়বে।
ইমামের ছাত্র যুরারাহ বলল: ঐ পরিস্থিতির শিকার হলে কি করতে হবে
?ইমাম (আ.) বললেন: এই দোয়া
’
টি পাঠ করবে।
اَللّهُمَّ عَرِّفْني نَفْسَکَ فَاِنَّکَ اِنْ لَمْ تُعَرِّفْني نَفْسَکَ لَمْ اَعْرِفْ رَسُولَکَ اَللّهُمَّ عَرِّفْني رَسُولَکَ فَاِنَّکَ اِنْ لَمْ تُعَرِّفْني رَسُولَکَ لَمْ اَعْرِفْ حُجَّتَکَ اَللّهُمَّ عَرِّفْني حُجَّتَکَ فَاِنَّکَ اِنْ لَمْ تُعَرِّفْني حُجَّتَکَ ضَلَلْتُ عَنْ ديني
উপরিউক্ত আলোচনায় সৃষ্টিজগতে ইমাম (আ.)-এর অবস্থানের পরিচয়
সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। তিনি আল্লাহর হুজ্জাত
,রাসূল (সা.)-এর প্রকৃত
প্রতিনিধি এবং সর্বসাধারণের নেতা তথা ইমাম। তার আনুগত্য সবার জন্য
ওয়াজিব
,কেননা তার আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যেরই অনুরূপ।
ইমাম (আ.) পরিচিতির অপর দিকটি হল তার সিরাত ও বৈশিষ্ট্যকে
চেনা। এই পরিচিতি প্রতীক্ষাকারীর কার্যগত জীবনের প্রতিটি দিকে ব্যাপক
প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ইমাম তথা আল্লাহর হুজ্জাতের জীবনের প্রতিটি
দিকের সাথে মানুষের পরিচয় যত বেশী ঘনিষ্ট ও গভীর হবে তার প্রভাবও
মানুষের জীবনের প্রতিটি দিকে অধিক হবে।
খ)- আদর্শ গ্রহণ
ইমাম (আ.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয়লাভের পর অনুসরণ ও
আদর্শ গ্রহণের পালা আসে।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান
,
যে আমার বংশের কায়েমকে দেখবে এবং
তার আবির্ভাবের পূর্বেই তার ও তার পূর্ববর্তী ইমামগণের প্রতি বিশ্বাস
রাখবে এবং তাদের শত্রুদের প্রতি ঘৃনা প্রদর্শন করবে। তারা আমার নিকট
সবচেয়ে ভাল বন্ধু ও উত্তম সাথী
।
সত্যিই যে তাকওয়া
,ইবাদত
,সাধারণ জীবন-যাপন
,দানশীলতা
,ধৈর্য
এবং সকল চারিত্রিক গুনাবলিতে ইমাম (আ.)-এর অনুসরণ করে চলে সেই
ঐশী নেতার নিকট সে কতইনা মর্যাদাবান হবে এবং যখন তার সাক্ষাৎ
পাবে তখন সে কতই না মহিমান্বিত থাকবে
?
তাই নয় কি যে প্রতীক্ষাকারী পৃথিবীর সুন্দরতম অস্থিত্বের অপেক্ষায়
রয়েছে সে নিজেকেও সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করবে ও সকল প্রকার
পঙ্কিলতাকে দূরিভুত করবে এবং সর্বদা নিজের চিন্তা ও আমলের প্রতি
সতর্ক থাকবে। অন্যথায় অপকর্ম ধীরে ধীরে তার ও তার কাঙ্ক্ষিতের মধ্যে
ব্যবধানকে বৃদ্ধি করবে এবং এ সতর্কবাণী প্রতিশ্রুত ইমাম থেকেই বর্ণিত
হয়েছে:
فما یحبسنا عنهم الا ما یتصل بنا مما نکرهه و لا نوثره منهم
কোন কিছুই আমাদের অনুসারীদের নিকট থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে
নেয় না
,
কেবল মাত্র তাদের কর্মফল ব্যতীত। যে সকল কাজ আমাদেরকে
সন্তুষ্ট করে না এবং আমরা যা তাদের কাছে আশা করি না
।
প্রতীক্ষাকারীদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল বিশ্বজনীন ন্যায়নিষ্ঠ সরকার
গঠনে তার ভুমিকা রাখতে চায় এবং আল্লাহর শেষ হুজ্জাতের সাথী ও
সাহায্যকারী হওয়ার মত গৌরব অর্জন করতে চায়। কিন্তু আত্মশুদ্ধি ও
সুচরিত্রবান হওয়া ব্যতীত কি এ মহান উদ্দেশ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব
?ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
“
যে ব্যক্তি ইমাম মাহ্দী
(
আ
.)-
এর অনুসারী হতে
চায় তাকে অবশ্যই প্রতীক্ষা
করতে হবে এবং প্রতীক্ষিত অবস্থায় পরহেজগার এবং সৎকর্মশীল হতে
হবে
।
এটা স্পষ্ট যে
,এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইমাম মাহ্দী (আ.) ব্যতীত
অন্য কোন আদর্শই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা
,তিনি হচ্ছেন সকল
সৌন্দর্যের আয়না স্বরূপ।
গ) - ইমামের স্মরণ
যে জিনিসটি প্রতীক্ষাকারীকে ইমাম মাহদী (আ.)-এর পরিচিতি এবং
অনুসরণের জন্য সহায়ক এবং প্রতীক্ষার পথে দৃঢ় রাখে তা হচ্ছে
নিয়মিতভাবে ওই মহান ইমাম (আ.)-এর সাথে সম্পর্ক রাখা।
সত্যিই যখন দয়ালু ইমাম সর্বত্র ও সর্বক্ষণ আমাদের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি
রাখেন এবং ক্ষণিকের জন্যেও আমাদেরকে ভুলে যান না
,তাহলে কি
দুনিয়ার মোহে তাকে ভুলে যাওয়া আমাদের উচিৎ হবে
?নাকি বন্ধুত্বের
নিয়ম হল যে
,সর্বদা তাকে নিজের এবং অন্যদের চেয়ে বেশী গুরুত্ব
দেয়া। নামাযের পাটিতে প্রথমে তার জন্য দোয়া করতে হবে এবং তার
সুস্থতা ও আবির্ভাবের জন্য দোয়া করতে হবে। তিনি নিজেই বলেছেন:
আমার আবির্ভাব তরান্বিত হওয়ার জন্য সর্বদা দোয়া করবে।
এবং সর্বদা
এই দোয়াটা পাঠ করবে।
اللَّهُمَّ کُنْ لِوَلِیِّکَ الحُجَهِ بنِ الحَسَن صَلَواتُکَ علَیهِ و عَلی آبائِهِ فِی هَذِهِ السَّاعَهِ وَ فِی کُلِّ سَاعَهٍ وَلِیّاً وَ حَافِظاً وَ قَائِداً وَ نَاصِراً وَدَلِیلًا وَ عَیْناًحَتَّى تُسْکِنَهُ أَرْضَکَ طَوْعاً وَ تُمَتعَهُ فِیهَا طَوِیل
হে আল্লাহ আপনার ওয়ালী হুজ্জাত ইবনুল হাসান যার নিজের ও পরিবারের
প্রতি আপনার সালাম বর্ষিত হয় এই সময়ে এবং সবসময় তার অভিভাবক
,
সাহায্যকারী
,
নেতা
,
বন্ধু
,
পথপ্রদর্শক এবং নিয়ন্ত্রক হন। এমনকি তাকে
আপনার স্বইচ্ছায় দীর্ঘ দিনের জন্য দুনিয়াতে প্রেরণ করুন।
প্রকৃত প্রতীক্ষাকারী সদকা দেওয়ার সময় প্রথমে পবিত্র ইমামের সুস্থতা
কামনা এবং যে কোন বাহানায় তার উপর তাওয়াসসুল করে। এ ছাড়াও
তার পবিত্র ও অতিসুন্দর চেহারা দেখার জন্য সর্বদা ক্রন্দন করে।
عزیز علی ان اری الخلق و لا تری
আমার জন্য অধিক কষ্টদায়ক যে
,
সকলকে দেখতে পাই অথচ আপনাকে
দেখতে পাই না
!
যেখানেই ইমামের নামে অনুষ্ঠান হয় তার প্রতি ভালবাসাকে আরও দৃঢ়
করার জন্য প্রতীক্ষাকারীরা সেখানেই উপস্থিত হয়ে থাকে। যেমন: মসজিদে
সাহলা
,মসজিদে জামকারান এবং পবিত্র সারদাবে গমনা গমন করে।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের প্রতীক্ষাকারীদের জীবনের উত্তম
দিকগুলো হচ্ছে তারা প্রত্যহ ইমামের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং সেই
প্রতিজ্ঞার প্রতি নিজেদের দৃঢ়তাকে প্রমাণ করে।
দোয়ায়ে আহ্দে বর্ণিত হয়েছে:
اَللّـهُمَّ اِنّي اُجَدِّدُ لَهُ في صَبيحَةِ يَوْمي هذا وَ ما عِشْتُ مِنْ اَيّامي عَهْداً وَ عَقْداً وَ بَيْعَةً لَهُ في عُنُقي ، لا اَحُولُ عَنْها وَ لا اَزُولُ اَبَداً اَللّـهُمَّ اجْعَلْني مِنْ اَنْصارِهِ وَ اَعْوانِهِ وَ الذّابّينَ عَنْهُ وَ الْمُسارِعينَ اِلَيْهِ في قَضاءِ حَوائِجِهِ ، وَ الْمُمْتَثِلينَ لاِوامِرِهِ وَ الْمحامينَ عَنْهُ ، وَ السّابِقينَ اِلى اِرادَتِهِ وَ الْمُسْتَشْهَدينَ بَيْنَ يَدَيْهِ .
“
হে আল্লাহ আমি এই প্রভাতে এবং আমার সারা জীবনে ইমামমের প্রতি যে
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে তা পূণরায় স্বীকার করছি। আমি কখনোই যেন এই
প্রতিজ্ঞা থেকে দূরে সরে না যাই এবং তার প্রতি অটল থাকতে পারি। হে
আল্লাহ আমাকে তার সাহায্যকারী
,সহযোগী
,সাথী এবং তার চাহিদা
মেটানোর জন্য দ্রুত তার দিকে ধাবমানকারীদের অন্তুর্ভূক্ত করুন। আমি যেন
তার নির্দেশ পালন করি। আমি যেন তাকে সাহায্য করি এবং তার আদেশ
পালনকারীদের শীর্ষে থাকি। আমাকে তার দলে শহীদ হওয়ার তৌফিক দান
করুন।
”
যদি কেউ সর্বদা এই প্রতিজ্ঞা পড়তে থাকে এবং আন্তরিকভাবে তার
প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে তাহলে কখনোই অলসতা করবে না। নিজ ইমামের
উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এবং তার আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য বিন্দুমাত্র
অবহেলা করবে না। এ ধরণের ব্যক্তিরাই কেবলমাত্র মহান ইমামের
সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারবে।
ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন এই দোয়া পাঠ করবে সে আমাদের কায়েমের
সাহায্যকারী হবে। যদি তার আবির্ভাবের পূর্বেই মারা যায় আল্লাহ তাকে
ইমাম মাহ্দীকে সাহায্য করার জন্য পূণরায় জীবিত করবেন।
ঘ) - ঐক্য ও সহানুভূতি
প্রতীক্ষাকারীদের প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি প্রতিক্ষিত
সমাজেও ইমামের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট কার্যক্রম থাকতে
হবে। অন্যকথায় প্রতিক্ষিত সমাজকে তাদের প্রতিটি কর্মকেই ইমামের
সন্তুষ্টির জন্য পালন করতে হবে। সুতরাং প্রতিক্ষিত সমাজের দায়িত্ব হল
ইমামের সাথে যে প্রতিজ্ঞায় তারা আবদ্ধ হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা। যার
মাধ্যমে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।
ইমাম মাহ্দী (আ.) এরূপ সমাজের উদ্দেশ্যে বলেছেন:
আমাদের অনুসারীরা যদি (আল্লাহ তাদেরকে তার আদেশ পালনে
সাহায্য করুন) তাদের গৃহীত প্রতিজ্ঞার প্রতি অটল থাকে তাহলে তারা
অচিরেই আমাকে দেখতে পাবে। আমাদের প্রতি পরিপূর্ণ ও সঠিক
ভালবাসা পোষণ করলে আমার আবির্ভাব ত্বরান্বিত হবে।
উক্ত প্রতিজ্ঞা যা পবিত্র কোরআনে ও নবীগণের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে
তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে বর্ণিত হল:
1- ইমামদের অনুসরণের চেষ্টা এবং তাদের বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব ও
শত্রুদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।
ইমাম বাকের (আ.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন:
সে ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান
,
যে আমাদের কায়েমকে দেখবে এবং তার
আবির্ভাবের পূর্বেই তার অনুসরণ করবে। তার শত্রুদের সাথে শত্রুতা এবং
বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করবে। তারা আমার বন্ধু এবং কিয়ামতের
দিনে তারা আমার সবচেয়ে প্রিয় ও নিকটতম ব্যক্তি
।
2- প্রতীক্ষাকারীরা দ্বীনের ভ্রান্তি ও বিদয়া
’
ত সম্পর্কে অচেতন নন এবং
সমাজের পঙ্কিলতা ও বিশৃঙ্খলা সম্পর্কেও অসতর্ক নন। তারা সমাজে
সৎকর্ম ও চারিত্রিক মর্যাদাকে পদদলিত হতে দেখলে তার বিরুদ্ধাচারণ
করেন।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
শেষ যামানায় এমন এক দল আসবে যাদের পুরস্কার ইসলামের প্রথম
যুগের উম্মতের সমপরিমাণ হবে। তারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ
কাজের নিষেধ করবে এবং ফিতনা ফ্যাসাদকারীদের সাথে যুদ্ধ করবে
।
3- প্রতীক্ষিত সমাজ অন্যদের সাথে সাক্ষাতের সময় সহযোগিতাকে
মূলমন্ত্র মনে করবে। এ সমাজের অধিবাসিরা কোন প্রকার কৃপনতা ও
স্বার্থপরতা ব্যতীত সর্বদা সমাজের দিন-দুঃখিদের খোঁজ খবর রাখবে এবং
তাদের সমস্যার সমাধান করবে। একদল শিয়া ইমাম বাকের (আ.)-কে
নসিহত করার অনুরোধ করলে ইমাম বললেন:
তোমাদের মধ্যে যে শক্তিশালী সে দূর্বলকে সাহায্য করবে
,
যে স্বনির্ভর
সে অভাবিদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে ও সাহায্য করবে এবং প্রত্যেকেই
প্রত্যেকের ভাল চাইবে
।
এটা জানা দরকার যে
,এই সহযোগীতা ও সহমর্মিতার সীমা কেবলমাত্র
আমরা যেখানে বসবাস করি তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং
প্রতীক্ষাকারীদের কল্যাণ ও মহানুভবতা অনেক দূরের অধিবাসিদের
নিকটেও পৌঁছে থাকে। কেননা প্রতীক্ষিত সমাজে জনতার মধ্যে কোন
প্রকার ব্যবধান ও বৈষম্যের ঠাঁই নেই।
4- যারা প্রতীক্ষিত সমাজের সদস্য তারা সমাজে মাহ্দীবাদের রং ও
সুগন্ধ বিলাবে এবং ইমামের নাম ও স্মরণকে সর্বত্র উচু রাখবে। ইমামের
কথা ও বৈশিষ্ট্যকে সকল কিছুর মূল হিসাবে সবার সামনে উপস্থান করবে।
এ পথে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করলে অবশ্যই ইমাম তাদের প্রতি দয়া
করবেন।
আব্দুল হামিদ ওয়াসেতী ইমাম বাকের (আ.)-কে বলল:
আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় জীবনকে উৎসর্গ
করেছি এবং অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি!
ইমাম তার প্রশ্নের জবাবে বললেন:
হে আব্দুল হামিদ তুমি কি মনে কর
,যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিজের
জীবনকে উৎসর্গ করে আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান করবেন না
?আল্লাহর
শপথ করে বলছি আল্লাহ এমন ব্যক্তির জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
আল্লাহ তার উপর রহমত করুক
,যে আমাদের বেলায়াতকে জীবিত
রাখবে!
শেষ কথা হল প্রতীক্ষিত সমাজ
,সমাজ জীবনের সকল স্তরে অন্য সব
সমাজের আদর্শ হওয়ার চেষ্টা করবে এবং বিশ্বমানবের প্রতিশ্রুত
মুক্তিদাতার আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট তৈরী করবে।
ঙ) - প্রতীক্ষার প্রভাব
অনেকে মনে করে যে
,ইমাম মাহ্দীর প্রতীক্ষা মানুষকে স্থবির করে
দেয়। প্রতীক্ষাকারীরা ইমাম মাহ্দী আবির্ভুত হয়ে অন্যায়-অত্যাচারের মূল
উৎপাটন না করা পর্যন্ত জুলুমের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করবে না বরং
তারা হাতের উপর হাত দিয়ে বসে থকবে এবং বসে বসে অত্যাচার
দেখবে!!
প্রকৃতপক্ষে এটা কোন সঠিক চিন্তা ভাবনা নয় বরং সম্পূর্ণ একটা ভুল
ধারণা। কেননা
,আমরা ইমাম মাহ্দীর প্রতীক্ষার স্বরূপ ও তার বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কে এবং প্রতীক্ষার বিভিন্ন দিক ও তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা বলেছি তা
থেকে বোঝা যায় ইমাম মাহ্দীর প্রতীক্ষা মানুষকে নিথর তো করেই না
বরং মানুষের চঞ্চলতা ও উদ্দিপনার সৃষ্টি করে থাকে।
প্রতীক্ষা
,প্রতীক্ষাকারীর মধ্যে পবিত্র ও কল্যাণময় চাঞ্চল্য ও উদ্দেশ্য
মণ্ডিত উদ্দিপনা সৃষ্টি করে এবং প্রতীক্ষাকারী যত বেশী প্রতীক্ষার
হকিকতের নিকটবর্তী হবে প্রকৃত উদ্দেশ্যের দিকে ততবেশী ধাবিত হবে।
প্রতীক্ষার ছত্রছায়ায় মানুষ আত্মকেন্দ্রিকতার গণ্ডি থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে
ইসলামী সমাজের একটা অংশ মনে করে। সুতরাং সমাজকে তার সাধ্য
অনুযায়ী সংশোধনের চেষ্টা করে। সমাজ যখন এমন ধরনের যোগ্য ব্যক্তিত্ব
দ্বারা গঠিত হয় তখন তা ফযিলত বিস্তারের চেষ্টা করে। তখন সকলেই
ভালকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অগ্রসর হয়। এমন পরিবেশেই সমাজে
বসবাসরত মানুষের মধ্যে ধর্ম ও মাহ্দীবাদের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যায়।
প্রতীক্ষার কারণেই প্রতীক্ষাকারীরা ফ্যাসাদের মধ্যে নিমজ্জিত না হয়ে
তাদের দ্বীনি বিশ্বাসকে রক্ষা করে। তারা সকল সমস্যার মোকাবেলায়
ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আশায় সকল
বালা-মুছিবতকে বক্ষে ধারণ করে। তারা কখনোই নিরাশ হয় না।
প্রকৃতপক্ষে এমন কোন মাকতব দেখেছেন কি যেখানে তার অনুসারীদের
জন্য এত সুন্দর ও সুব্যবস্থা করা হয়েছে
?এমন পথ যা ঐশী উদ্দেশ্যে
অতিবাহিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত মহান পুরস্কার অর্জন করে নিয়ে আসে।
চ) - প্রতীক্ষাকারীদের পুরষ্কার
তারা সৌভাগ্যবান
,যারা কল্যাণের প্রতীক্ষায় রয়েছে। তাদের পুরস্কার
কতইনা বড় যারা ইমাম মাহ্দীর প্রতীক্ষায় দিনাতিপাত করে এবং তাদের
মর্যাদাও অধিক যারা কিনা কায়েমে আলে মুহাম্মদের প্রকৃত প্রতীক্ষাকারী।
এ অধ্যায়ের শেষে প্রতীক্ষাকারীদেও মর্যাদা ও ফযিলত সম্পর্কে
ইমামদের কিছু বাণী বর্ণিত হল।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
আমাদের কায়েমের অনুসারীদের জন্য সৌভাগ্য যে
,তারা তার অদৃশ্যের
সময়ে তার আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় থাকবে এবং তার আবির্ভাবের পর তার
অনুগত থাকবে। তারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোন ভয় ও দৃঃখ থাকবে না।
এর চেয়ে বড় গৌরব আর কি হতে পারে যে
,আল্লাহর বন্ধুত্বের প্রতীক
কারো গলায় থাকবে। কেনইবা তারা দুঃখ ও কষ্ট পাবে
,কেননা তাদের
জীবন ও মৃত্যু তো তখন অনেক বড় মর্যাদার অধিকারী।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছেন:
যে ব্যক্তি আমাদের কায়েমের অদৃশ্যের সময়ে আমাদের বেলায়াতের প্রতি
প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহ তাকে বদর ও হুদের যুদ্ধের সহস্র শহীদের
সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন।
হ্যাঁ যারা অদৃশ্যকালীন সময়ে তাদের যামানার ইমামের বেলায়াতের
উপর দৃঢ় থাকবে তারা ঐ সকল মুজাহিদদের সমান যারা রাসূল (সা.)-এর
পক্ষে আল্লাহর দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করেছে এবং সেখানে নিজের রক্তে
রঞ্জিত হয়েছে।
যে সকল প্রতীক্ষাকারীরা জীবন বাজি রেখে রাসূল (সা.)-এর সন্তানের
সাহায্যের প্রতীক্ষায় রয়েছে তারা এখনই যুদ্ধের ঘাটিতে সত্যপন্থি নেতার
পাশে রয়েছেন।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় থাকা
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে
,সে ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে যে ইমামের
তাবুতে ইমামের পাশে ছিল। অতঃপর একটু থেমে আবার বললেন: না বরং
তার মত
,যে ইমামের পক্ষে যুদ্ধ করেছে! অতঃপর বললেন: না
,আল্লাহর
শপথ বরং তার মত
,যে রাসূল (সা.)-এর পাশে শাহাদত বরণ করেছেন।
এরা সেই দল
,যাদেরকে বহু যুগ পূর্বে রাসূল (সা.) তার ভাই ও বন্ধু
হিসাবে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন
,‘
আমি তাদেরকে আন্তরিকভাবে
ভালবাসি।
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
একদা রাসূল (সা.) সাহাবাদের সামনে বললেন: হে আল্লাহ আমার ভাইদেরকে
আমাকে দেখান! এই কথা তিনি দুইবার বললেন। সাহাবারা বলল: হে
আল্লাহর রাসূল (সা.) আমরা কি আপনার ভাই নই
?রাসূল (সা.) বললেন: না
,তোমরা আমার সাহাবা। আমার ভাই তারা যারা
শেষ যামানায় আমাকে না দেখেই আমার প্রতি ঈমান আনবে! আল্লাহ
তাদেরকে তাদের পিতার নামসহ আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। দ্বীনের
প্রতি তাদের ঈমানের দৃঢ়তা হচ্ছে রাতের অন্ধকারে কাঁটাওয়ালা উদ্ভিদ তোলা
এবং হাতে জলন্ত আগুন ধরার চেয়েও মজবুত। তারা হচ্ছে হেদায়াতের
মশাল। আল্লাহ তাদেরকে সকল প্রকার ফিতনা থেকে মুক্তি দিবেন।
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন:
তারা সৌভাগ্যবান যারা আমার আহলে বাইতের কায়েমকে দেখবে এবং তার
সংগ্রামের পূর্বেই তার অনুসরণ করবে। তার শত্রুদের সাথে শত্রুতা এবং
বন্ধৃদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে এবং তার পূর্বের সকল ইমামদেরকেও
ভালবাসবে। তারা আমার বন্ধু এবং আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় উম্মত।
যারা রাসূল (সা.)-এর নিকট এত বেশী মর্যাদার অধিকারী হয়েছে তারা
আল্লাহর আহবান শুনতে পাবে! সে আহবান ভালবাসা ও আন্তরিকতায় পূর্ণ
থাকবে এবং তা প্রমাণ করবে যে
,তারা আল্লাহর অধিক নৈকট্যলাভ
করেছে।
ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:
এমন দিন আসবে যখন উম্মতের ইমাম অদৃশ্যে থাকবেন। অতএব তারা
সৌভাগ্যবান যারা সে সময়ে আমাদের বেলায়াতের প্রতি দৃঢ় থাকবে। তাদের
নুন্যতম পূরস্কার হচ্ছে যে
,আল্লাহ তাদেরকে আহবান করে বলবেন: হে
আমার বান্দারা
,তোমরা আমার রহস্যের (অদৃশ্য ইমামের) প্রতি ঈমান
এনেছ এবং তাকে স্বীকার করেছ। অতএব তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কারের
সুসংবাদ দিচ্ছি যে
,তোমারা আমার প্রকৃত বান্দা। তোমাদের সৎকর্মকে গ্রহণ
করব এবং তোমাদের গোনাহসমূহকে ক্ষমা করব। তোমাদের বরকতে
বান্দাদের উপর পানি বর্ষণ করব এবং তাদের থেকে বালা-মুছিবত দূর করব।
যদি তোমরা তাদের মধ্যে না থাকতে তাহলে গোনাগারদের উপর আমার
আযাব প্রেরণ করতাম।
কিন্তু কি জিনিস প্রতীক্ষাকারীদেরকে শান্ত করতে পারে এবং তাদের
প্রতীক্ষার সমাপ্তি ঘটাতে পারে
?কোন জিনিস তাদের চোখ উজ্জল করতে
পারে এবং তাদের আনচান মনকে শান্ত করতে পার
?যারা দীর্ঘদিন ধরে
প্রতীক্ষার পথে চেয়ে আছে এবং এ পথেই সকল কষ্ট সহ্য করে পথ
চলেছে। তারা আবির্ভাবের সবুজ উদ্দ্যানে না পৌঁছে এবং তাদের
কাঙ্ক্ষিতের পাশে বসতে না পেরে সন্তুষ্ট হতে পারে কি
?এর চেয়ে সুন্দর
মূহুর্ত আর কি হতে পারে
?
ইমাম কাযিম (আ.) বলেছেন:
আমাদের অনুসারীদের সৌভাগ্য যারা আমাদের কায়েমের অদৃশ্যের সময়ে
আমাদের সাথে বন্ধুত্বে অটল থাকবে এবং আমাদের শত্রুদের সাথে শত্রুতায়
অটল থাকবে। তারা আমাদের এবং আমরাও তাদের। তারা আমাদের
নেতৃত্বতে সন্তুষ্ট (এবং আমাদের ইমামতকে গ্রহণ করেছে) এবং আমরাও
সন্তুষ্ট যে তারা আমাদের অনুসরী (শিয়া)। তারা সৌভাগ্যবাণ! আল্লাহর শপথ
করে বলছি কিয়ামতের দিন তারা আমাদের সাথেই থাকবে।