হযরত আলীর জ্ঞান
ইবনে আব্বাস মহানবীর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
“
আলী আমার উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী এবং বিচারকার্যে সকলের চেয়ে উত্তম।
”
মহানবী (সা.) বলেন :
انا مدينة العلم و علي بابها فمن أراد العلم فليقتبسه من عليّ
“
আমি জ্ঞানের শহর
,আলী তার দ্বার। যে কেউ জ্ঞানার্জন করতে চায় সে যেন আলী থেকেই জ্ঞানার্জন করে।
”
ইবনে মাসউদ বলেন :
“
মহানবী (সা.) আলীকে ডাকলেন এবং তাঁর সাথে একান্তে বসলেন। যখন আলী ফিরে আসলেন
,তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম কী আলোচনা করছিলেন
?তিনি বললেন : মহানবী (সা.) জ্ঞানের সহস্রটি দ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত করলেন
,প্রত্যেকটি দ্বার থেকে আবার সহস্র দ্বার উন্মুক্ত হয়!
একদা হযরত আলী (আ.) মিম্বারে বললেন :
يا معشر النّاس سلوني قبل ان تفقدوني
“
হে লোক সকল! আমাকে হারানোর পূর্বেই
,আমার কাছে জিজ্ঞাসা কর।
”
আমার নিকট থেকে জেনে নাও
,কেননা পূর্ববর্তী ও উত্তরবর্তীদের জ্ঞান আমার নিকট বিদ্যমান। আল্লাহর শপথ
,যদি বিচারের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়
,ইহুদীদের জন্য তাদের কিতাব থেকে
,ইঞ্জিলের অনুসারীদের জন্য সে কিতাব থেকে
,যবূরের অনুসারীদের জন্য তাদের কিতাব থেকে
,আর কোরআনের অনুসারীদের জন্য কোরআন থেকে তবে সেভাবেই বিচার করব... আল্লাহর শপথ
,আমি কোরআন ও তার ব্যাখ্যায় সকলের চেয়ে জ্ঞানী।
অতঃপর পুনরায় বললেন :
سلوني قبل ان تفقدوني
আমাকে হারানোর পূর্বেই আমাকে জিজ্ঞাসা কর। কোরআনের যে কোন আয়াত সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা কর
,আমি তার জবাব দিব
;বলতে পারব তার অবতীর্ণ হওয়ার সময় সম্পর্কে
,কার উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়েছে
,নাসেখ ও মানসূখ সম্পর্কে
,আর বলতে পারব সাধারণ ও বিশেষ আয়াত সম্পর্কে
,মোহকাম ও মোতাশাবিহ আয়াত সম্পর্কে
,মাক্কী ও মাদানী আয়াতসমূহ সম্পর্কে...।
রাসূল (সা.) হযরত আলীর সকল প্রকৃষ্টতার ভিত্তিতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উত্তরাধিকারী হওয়ার কথাটি মানুষের নিকট ঘোষণা করার জন্যে আদিষ্ট হয়েছিলেন এবং এ কর্ম বিভিন্ন ভাবে তিনি সম্পাদন করেছিলেন। যেমন : গাদীর দিবসে যিনি এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মহানবী (সা.) দশম হিজরী সালে মক্কায় হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। ঐ বছর মহানবীর সঙ্গী এক লক্ষ বিশ হাজার বলে বর্ণিত হয়েছে এবং হজ থেকে আসার সময়ও অনুরূপ সংখ্যক মানুষ তাঁর সাথে ছিল। তিনি 18ই যিলহজ অর্ধ দিবসের সময়
‘
জোহফা
’
প্রান্তরে
‘
গাদীরে খুম
’
নামক স্থানে পৌঁছলেন। এ সময় নামাজের জন্য আযান ধ্বনিত হলো। মানুষ একত্র হয়ে নামায সম্পন্ন করল। অতঃপর উটের পিঠের একাধিক গাঁট বাঁধ দিয়ে উঁচু স্থান তৈরী করা হলো। মহানবী (সা.) ঐ উঁচু স্থানে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপনান্তে বললেন : তোমরা এবং আমি (মহান আল্লাহর নিকট) দায়বদ্ধ
,তাই নয় কি
?জবাবে বলা হলো : আমরা সাক্ষী দিচ্ছি যে
,আপনি আমাদের নিকট সত্য দীনের প্রচার করেছেন এবং এ পথে আপনি যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন
;মহান আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।
মহানবী (সা.) বললেন : হে লোকসকল! তোমরা মহান আল্লাহর একত্বে ও তাঁর বান্দা মুহাম্মদের নবুয়্যতের স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান কর কি
?বেহেশত
,দোযখ
,মৃত্যু
,পুনরুত্থান ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সত্যতায় বিশ্বাস কর কি
?জবাবে তারা বলল : আমরা সাক্ষ্য প্রদান করছি। মহানবী (সা.) বললেন : প্রভু হে
,তুমি সাক্ষী থাক।
অতঃপর মানুষের দিকে ফিরে পুনরায় বললেন : হে লোকসকল! আমরা হাউজে কাউসারের নিকট পরস্পরের সাক্ষাৎ পাব। আমার পর আমার দুটি
‘
মহামূল্যবান সম্পদ
’
সম্পর্কে তোমারা সাবধান থেকো যে
,এতদুভয়ের প্রতি তোমরা কিরূপ আচরণ করছ
?
জনতা বলল : হে আল্লাহর রাসূল ঐ দুটি বস্তু কী
?
তিনি জবাবে বললেন : ঐ দুটি মহামূল্যবান বস্তু হলো : আল্লাহর কিতাব ও আমার
‘
আহলে বাইত
’
।
মহান আল্লাহ্ আমাকে অবহিত করেছেন যে
,তারা আমার নিকট হাউজে কাউসারে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। ...তাদের অগ্রবর্তী হয়ো না
,তাহলে ধ্বংস হবে
,তাদের পশ্চাদবর্তী হয়ো না
,তাহলেও ধ্বংস হবে।
এ পর্যায়ে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীর হস্ত মোবারক সমুন্নত করে ধরলেন যাতে সবাই তাঁকে দেখতে পায় ও চিনতে পারে এবং ঐ অবস্থায় বললেন :
ايهّا النّاس ! من أولى النّاس بالمؤمنين من انفسهم ؟
হে মানবসকল! মুমিনদের মধ্যে তাঁর (আলীর) চেয়ে উত্তম কে আছে যে তাদের উপর অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পেতে ও নেতৃত্ব দিতে পারে
?জনতা বলল : আল্লাহ্ ও তাঁর নবীই ভাল জানেন। নবী (সা.) বললেন : মহান আল্লাহ্ আমার উপর বেলায়েত (কর্তৃত্ব) রাখেন এবং আমি মুমিনদের উপর। আমি মুমিনগণের নিজেদের চেয়ে (তাদের উপর বেলায়েতের জন্য) শ্রেয়তর।
অতএব
,
من كنت مولاه فهذا عليّ مولاه
“
আমি যার মাওলা
,এ আলীও তার মাওলা। হে আমার প্রভূ! যে তাঁর বন্ধু হয়
,তুমিও তার বন্ধু হও এবং যে তাঁর শত্রু
হয়
,তুমিও তার শত্রু
হও। আর তাকে তুমি সাহায্য কর যে তাঁকে সাহায্য করে
;তাকে তুমি শাস্তি দাও যে তাঁর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ...ওহে! প্রত্যেকেই যে এখানে উপস্থিত
,সে যেন অনুপস্থিত সকলকে এ সংবাদ পৌঁছে দেয়।
সভাভঙ্গ না হতেই নিম্নলিখিত আয়াতটি অবতীর্ণ হলো :
)
اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الاسلام دينا
(
‘
অদ্য তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম (মায়েদাহ : 3)।