ইমামের ইমামত সম্পর্কে আলোচনা
আমাদের প্রিয় ইমামগণের রীতি ছিল জ্ঞানগত
,রাজনৈতিক ও দীনী কেন্দ্ররূপে নিজের পরবর্তী ইমামকে পরিচয় করানোর জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করতেন
,যাতে একদিকে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য এ পথের অপব্যবহার করার মত কোন সুযোগ অবশিষ্ট না থাকে
;অপরদিকে সত্য অনুসারীরা তাঁকে চিনে নিতে পারে
।
আর এ জন্যেই আব্বাসীয়দের শ্বাসরুদ্ধকর দুঃশাসনের মধ্যেও তিনি নিজের পর ইমাম কাযেমের ইমামত সম্পর্কে তাঁর মহান পিতা বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করেছেন
।
এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করব :
1.
আলী ইবনে জা
’
ফর (আ.) বলেন : আমার পিতা ইমাম সাদেক (আ.) তাঁর একদল সাহাবীকে বলেছিলেন : আমার সন্তান মুসা সম্পর্কে আমার আদেশ গ্রহণ কর
,কারণ সে আমার সন্তানদের মধ্যে এবং যারা আমার স্মরণে আছে তাদের সকলের চেয়ে উত্তম
।
সে আমার উত্তরাধিকারী
,আমার পর সকল বান্দাগণের উপর আল্লাহর হুজ্জাত হবে
।
আমর ইবনে আবান বলেন : ইমাম সাদেক (আ.) তাঁর পরবর্তী ইমামগণের (আ.) নাম বর্ণনা করেছিলেন
।
2.
আমি তাঁর পুত্র ইসমাইলের নাম উল্লেখ করলে
,তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! এ কর্মে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই
,এর দায়িত্ব আল্লাহর হাতে
।
3.
ইমাম সাদেক (আ.)-এর প্রসিদ্ধ শিষ্যগণের মধ্যে জোরারাহ নামক একজন শিষ্য বলেন : ঐ মহান ব্যক্তির নিকট ছিলাম
;তাঁর অন্যতম সন্তান মুসা (আ.) তাঁর ডান পার্শ্বে ছিলেন এবং একটি শবদেহ (যা তাঁর অন্য সন্তান ইসমাইলের) তাঁর সম্মুখে শায়িত ছিল
।
ইমাম জা
’
ফর সাদেক (আ.) আমাকে বললেন : জোরারাহ
।
যাও দাউদ রাকী
,হোমরান ও আবু বাসিরকে (ইমামের তিনজন সহযোগী) ডেকে নিয়ে আস
।
আমি তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসলাম
।
অন্যান্যরাও আসল এবং কক্ষ পরিপূর্ণ হয়ে গেল
।
ইমাম দাউদ রাকীকে বললেন : শবদেহের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে নাও
।
ইমাম যা বললেন
,দাউদ তাই করল
।
অতঃপর তিনি বললেন : দাউদ! দেখতো ইসমাইল জীবিত
,না মৃত!
সে বলল : হে আমার নেতা
,মৃত
।
ইমাম একে একে প্রত্যেককে শবদেহ দেখালেন এবং সকলেই বলল যে
‘
মৃত
’
।
অতঃপর তিনি বললেন : হে প্রভু! তুমি সাক্ষী থাক (যে মানুষকে ভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কতটা চেষ্টা করেছি)
।
অতঃপর মৃতকে গোসল ও সুগন্ধি মেখে কাফন পড়াতে নির্দেশ দিলেন
।
যখন সব কাজ সম্পন্ন হল পুনরায় মোফাজ্জালকে আদেশ দিলেন : তার মুখের কাফন খুলে দাও
।
মোফাজ্জাল তা-ই করল
,যা ইমাম বললেন
।
অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন : জীবিত না মৃত
?মোফাজ্জল সবিনয়ে জবাব দিল : মৃত
।
পুনরায় উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন এবং সকলেই পূর্বের মত জবাব দিল
।
হযরত পুনরায় বললেন : প্রভু হে! তুমি সাক্ষী থাক
।
কিন্তু তারপর ও একদল যারা আল্লাহর জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে চায়
,তারা ইসমাইলের ইমামতের বিষয়টি উত্থাপন করবে
।
এ সময় তার সন্তান হযরত মুসা (আ.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন :
মহান আল্লাহ স্বীয় জ্যোতিকে নির্ধারণ করে থাকেন
,যদিও একদল তা না চেয়ে থাকে
।
ইসমাইলকে সমাধিস্থ করা হলো
।
ইমাম উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন : যাকে এখানে কবরস্থ করা হলো সে কে
?সকলেই বলল : আপনার সন্তান ইসমাইল
।
ইমাম বললেন : প্রভু হে ! তুমি সাক্ষী থাক
।
অতঃপর স্বীয় সন্তান মুসা (আ.)-কে ধরে বললেন :
هو الحقّ و الحقّ معه ومنه الي ان يرث الله الارض و من عليها
সে সত্যের উপর ও সত্যের সাথে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সত্য তার থেকে
।
4.
মানসূর ইবনে হাযিম বলেন যে
,ইমাম সাদেক (আ.)-এর নিকট নিবেদন করলাম : আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক
,সব সময় জীবন মৃত্যুর সম্মুখীন হয়
;যদি আপনার ক্ষেত্রে এরূপ ঘটে তবে কে আমাদের ইমাম হবেন
?ইমাম তাঁর সন্তান আবুল হাসান মুসা (আ.)-এর স্কন্ধে হাত রাখলেন এবং বললেন : যদি আমার কিছু ঘটে আমার এ সন্তান তোমাদের ইমাম হবে
।
ইমাম মুসা কাযেম (আ.) তখন পাঁচ বছরের ছিলেন এবং ইমাম জা
’
ফর সাদেকের অপর সন্তান আবদুল্লাহ (পরবর্তীতে কেউ কেউ তার ইমামতে বিশ্বাসী ছিল) সে সভায়
আমাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন
।
5.
শেখ মুফিদ (আল্লাহ তাঁর পবিত্র আত্মার উপর অপরিসীম রহমত বর্ষণ করুন) বলেন : ষষ্ঠ ইমামের একদল সঙ্গী যেমন : মোফাজ্জল ইবনে উমর
,মা
’
য়ায ইবনে কাসির
,আবদুর রহমান ইবনে হাজ্জাজ
,ফাইয ইবনে মোখতার
,ইয়াকুব সিরাজ
,সোলাইমান ইবনে খালিদ
,সাফওয়ান জাম্মাল এবং অন্যান্যরা (যাদের নাম উল্লেখ করা সময়সাপেক্ষ) হযরত ইমাম কাযেম (আ.)-এর উত্তরাধিকারী হওয়ার ব্যাপারটি বর্ণনা করেছিলেন
।
অনুরূপ ইমামের দু
’
ভাই ইসহাক ও আলী (যাদের তাকওয়া
,ফযিলাত ও পরহেজগারীর ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই) থেকেও বর্ণিত হয়েছে
।
এছাড়া ষষ্ঠ ইমামের পক্ষ থেকে এতটা গুরুত্ব ও সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে যে বিশেষ করে শিয়া এবং যারা ষষ্ঠ ইমামের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের জন্য এটা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট রূপে প্রতীয়মাণ ছিল যে
,তাঁর পর তার প্রিয় পুত্র আবুল হাসান মুসা ইবনে জা
’
ফার আল কাযেম ইমাম হবেন
,ইসমাইল (যিনি তাঁর পিতার বর্তমানেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন) নন বা ইসমাইলের পুত্র মুহাম্মদও নন
;কিংবা ইমাম সাদেকের অন্য পুত্র আবদুল্লাহ্ও নন
।
এতকিছুর পরও সত্য ইমাম জা
’
ফর সাদেকের শাহাদাতের পর একদল তার পুত্র ইসমাইল বা ইসমাইলের পুত্র অথবা অন্য পুত্র আবদুল্লাহর ইমামতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল
।
আর তাঁদের জন্য যে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ করা হয়েছিল
,তা থেকে বিচ্যুত হয়েছিল
।