ইমাম হোসাইনের আন্দোলন
মুয়াবিয়ার পরবর্তীতে ইয়াযিদ ইসলামী হুকুমতের সিংহাসনে আরোহণ করে এবং নিজেকে আমিরুল মুমিনীন বলে ঘোষণা দেয়। সে তার অবৈধ ও স্বৈরাচারী রাজত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ইসলামী ও সুপরিচিত ব্যক্তিবর্গের কাছে বার্তা পাঠায় এবং তাদেরকে তার হাতে বাইয়াত করতে আহ্বান জানায়। এই অসৎ উদ্দেশ্যে সে মদীনার গভর্ণরের কাছে একটি পত্র প্রেরণ করে। সেই পত্রে উল্লেখ করে যে
‘
আমার জন্যে হোসাইনের কাছ থেকে বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ গ্রহণ কর আর যদি বিরোধিতা করে তাহলে তাকে হত্যা কর।
’
গভর্ণর উক্ত সংবাদ ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে পৌঁছান। তিনি ইমামের কাছ থেকে উত্তর চাইলেন। ইমাম হোসাইন (আ.) উত্তরে এরূপ বলেন :
إِنَّا لِلَّه وَ إِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ وَ عَلَى اْلإِسْلاَمِ اْلْسَّلاَمُ إِذَا بُلِيَتِ اْلأُمَّةُ
بِرَاعِ مِثْلِ يَزِيْدَ
অর্থাৎ
“
নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যে এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করবো। ইসলামের বিদায় যখন উম্মতের উপর ইয়াযিদের মত (এমন মদ্যপায়ী
,জুয়াড়ি
,বেঈমান ও অপবিত্র ব্যক্তি যে বাহ্যিকভাবেও ইসলামের কোন কিছু অনুসরণ করতো না) ব্যক্তি শাসক হয়।
”
ইমাম হোসাইন অবগত ছিলেন যে এখন যেহেতু তিনি ইয়াযিদের শাসনকে স্বীকৃতি দেন নি
,যদি তিনি মদীনায় বসবাস অব্যাহত রাখেন তাহলে তাঁকে হত্যা করা হবে। তাই আল্লাহর নির্দেশে রাত্রির অন্ধকারে এবং গোপনীয়তার সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে মদীনা ত্যাগ করেন। মক্কায় তাঁর আগমন এবং ইয়াযিদের হতে বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতির সংবাদ মক্কা ও মদীনার জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে
,এমন কি এ খবর
‘
কুফা
’
পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কুফাবাসীরা মক্কা নগরীতে অবস্থান গ্রহণকারী ইমাম হোসাইনকে তাদের নিকট যাওয়া এবং তাদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে আমন্ত্রন জানায়। ইমাম কুফাবাসীদের অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে তাঁর চাচাত ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফা নগরীতে প্রেরণ করেন।
মুসলিম কুফায় পৌঁছলে কুফাবাসীদের অভূতপূর্ব ও উষ্ণ সম্বর্ধনা পান। অসংখ্য মানুষ ইমামের প্রতিনিধি হিসেবে হযরত মুসলিমের হাতে বাইয়াত করে। আর মুসলিমও ইমামের কাছে একটি পত্র প্রেরণ করেন। তিনি ইমামের দ্রুত কুফায় পৌঁছা প্রয়োজন বলে পত্রে
উল্লেখ করেন।
যদিও ইমাম হোসাইন (আ.) কুফাবাসীদেরকে খুবভালভাবেই চিনতেন এবং তার পিতা ও ভ্রাতার শাসনামলে তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারী চরিত্র
,অধার্মিকতা ও অবাধ্যতা স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন। আর তাই জানতেন তাদের প্রতিশ্রুতি ও মুসলিমের সাথে তাদের বাইয়াতকে বিশ্বাস করা যায় না। তারপরও তিনি তারা যেন আর কোন অজুহাত ও ওজর দেখাতে না পারে এবং আল্লাহর আদেশ কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে কুফা শহরের দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ অবস্থায় জিলহজ মাসের অষ্টম দিনে অর্থাৎ যেদিন হাজীরা
‘
মিনা
’
-র দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন
এবং যারা মক্কার পথে রয়ে গিয়েছিলেন তারা অতিদ্রুত মক্কায় পৌঁছতে চেষ্টা করছিলেন সেদিন তিনি মক্কায় রয়ে গিয়েছিলেন এবং এ দিনে পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা থেকে ইরাকের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। এ কাজের দ্বারা তিনি একদিকে তাঁর উপর মহান দায়িত্ব পালন করেন আবার অন্যদিকে বিশ্ব মুসলমানদেরকেও বুঝিয়ে দেন যে নবী (সা.)-এর সন্তান ইয়াযিদের ক্ষমতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেন নি। তিনি ইয়াযিদের হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন নি বরং তার অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।
ইয়াযিদ কুফা অভিমুখে মুসলিমের যাত্রা এবং তাঁর হাতে জনগণের বাইয়াতের সংবাদ অবহিত হওয়ার পর কুফার নতুন গভর্ণর হিসেবে ইবনে যিয়াদকে (ইয়াযিদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সঙ্গী এবং বনি উমাইয়ার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ও কঠোর ব্যক্তি) কুফায় পাঠায়।
ইবনে যিয়াদ কুফাবাসীদের ভীরু স্বভাব
,দুমুখো আচরণ এবং দুর্বল ঈমানকে ব্যবহার করে তাদেরকে হুমকি ও লোভ দেখিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলের চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মুসলিম একাকি ইবনে যিয়াদের অধীনস্থ সৈন্যদের আক্রমনের মোকাবিলা করেন
।
অবশেষে তিনি সাহস ও বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহর সালাম তাঁর উপর বর্ষিত হোক। ইবনে যিয়াদ কুফার ঈমানহীন
,বিশ্বাসঘাতক ও দ্বৈত চেহারার সমাজকে ইমামের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে। একাজ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে যারা ইমামকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে একটা বিরাট অংশ অস্ত্র হাতে নিয়ে ইমাম হোসাইনকে হত্যা করার জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ইমাম হোসাইন যে রাত্রিতে মদীনা ত্যাগ করেন যত দিন মক্কা নগরীতে অবস্থান করেছিলেন মক্কা থেকে কারবালায় যাত্রার পথে যেখানেই যাত্রা বিরতি করেছেন প্রতিটি স্থানেই এমনকি শাহাদাত পর্যন্ত কখনও ইঙ্গিতে আবার কখনও সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দিয়েছিলেন :
“
আমার যাত্রার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করা এবং
ইয়াযিদের অনৈসলামী শাসনের প্রতিবাদ করা
,অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো
,সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। আর আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত দীনকে পুনর্জীবিত করা ব্যতীত আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
”
যদিও এ আন্দোলনের পরিণতিতে স্বয়ং ইমাম
,তাঁর সন্তান ও সঙ্গীদের শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বন্দীত্ব বরণ করে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল কিন্তু যেহেতু আল্লাহ্ই এমন দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করেছিলেন তাই তিনি এমন কঠিন দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যান ।
মহানবী (সা.)
,আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং ইমাম হাসানের মত ইসলামের পূর্ববর্তী নেতৃবৃন্দ বহুবার ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের কথা বর্ণনা করেছিলেন। এমন কি মহানবী (সা.) ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্মের সময় তাঁর শাহাদাতের কথা স্মরণ করে কেদেছিলেন।
আর স্বয়ং ইমাম হোসাইনও ইমামতের জ্ঞানের মাধ্যমে অবহিত হয়েছিলেন যে
,তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে এই সফরের ইতি ঘটবে। কিন্তু তিনি তো আল্লাহর নির্দেশ ও আসমানী আদেশের মোকাবিলায় নিজের জীবনের মূল্য বিবেচনা করার মত ব্যক্তিও নন
,আর তাঁর পরিবারের বন্দিত্ব অন্তরে রেখাপাত করার মত ব্যক্তি তিনি নন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিপদ-আপদকে মর্যাদার উপকরণ এবং শাহাদাতকে সৌভাগ্য জ্ঞান করতেন (চির কালের জন্যে তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
“
কারবালাতে ইমাম হোসাইন (আ.)
-এর শাহাদাত বরণ
”
-এর সংবাদ মুসলিম সমাজে এমন ভাবে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল যে ইমামের এ সফরের পরিণতি সম্পর্কে সাধারণ জনগণও অবহিত ছিল।
কেননা এ ব্যাপারটি বিক্ষিপ্তভাবে তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)
,ইমাম আলী ও ইমাম হাসান (আ.) এবং আরো অন্যান্য বিশিষ্ট মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে শুনেছিল।
এত প্রতিকূলতা ও কষ্টের মধ্য দিয়ে ইমাম হোসাইনের আন্দোলন অগ্রসর হতে দেখে তাঁর নিহত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ মানুষের মনেও প্রবলতর হয়ে উঠে। বিশেষ করে যখন স্বয়ং ইমাম যাত্রা পথে প্রায়ই বলতেন :
مَنْ كَانَ بَاذِلاً فِيْنَا مُهْجَتَهُ وَ مُوَطِّنًا عَلَى لِقَآءِ اللهِ نَفْسَهُ فَلْيَرْحَلْ مَعَنَا
অর্থাৎ
“
যে ব্যক্তি আমাদের পথে প্রাণ বিসর্জন দিতে এবং আল্লাহর সাক্ষাত লাভে প্রস্তুত সে যেন আমাদের সাথে আসে।
”
আর সে কারণেই তাঁর কিছু হিতাকাঙ্ক্ষীর হৃদয়ে এ আকাঙ্ক্ষা ছিল যে
,ইমামকে এই সফর থেকে বিরত রাখবে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে একেবারে অসচেতন যে
,হযরত আলী (আ.)-এর সন্তান
,নবী (সা.)-এর উত্তরসূরী ও ইমাম
,অন্যদের চাইতে তাঁর কর্তব্যের ব্যাপারে বেশি সচেতন। তাঁর স্কন্ধে অর্পিত আল্লাহ্ প্রদত্ত দায়িত্ব থেকে কখনো তিনি হাত গুটিয়ে নিতে পারেন না।
হ্যাঁ
,ইমাম হোসাইন (আ.) এতসব চিন্তা ও মতামতের মাঝে তাঁর পথ চলা অব্যাহত রাখেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তে কেউ সামান্যতম বিঘ্ন
ঘটাতে পারেনি।
অবশেষে তিনি গেলেন
,শাহাদাতের সুধা পান করলেন
,তিনি শুধু একাই নন বরং সন্তান ও সঙ্গী-সাথীদের সহ
,যারা প্রত্যেকে ইসলামের দিগন্তে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন
,তারা সকলে তাঁর সঙ্গী হলেন এবং শাহাদাত বরণ করলেন এবং তারা কারবালার উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমিকে নিজেদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত করেছেন যেন মুসলমান সমাজ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে
,ইয়াযিদ (উমাইয়া বংশের পাপ ও অপবিত্র ঐ ধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ) কোনমতেই রাসূল (সা.)-এর উত্তরসূরী নয় আর মূলতঃ ইসলাম বনি উমাইয়া থেকে এবং বনি উমাইয়া ইসলাম থেকে বহু দূরে।
সত্যি কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি যে যদি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর হৃদয় বিদারক ও বীরত্বপূর্ণ শাহাদাতের ঘটনা না ঘটতো তবে জনগণ ইয়াযিদকে আল্লাহর রাসূলের খলীফা হিসেবে মনে করতো ইয়াযিদও তার অধীনস্থদের অনাচার
,অবৈধ যৌনাচার ও অন্যান্য অপকর্মের খবরাখবর তাদের কানে পৌঁছতো এবং তারা সেটিকেই ইসলাম মনে করে কতই না ঘৃণার চোখে দেখতো
?কেননা যে ইসলামে রাসূলের খলীফা হিসেবে ইয়াযিদের মত ব্যক্তি সমাসীন হয় তার ব্যাপারে ঘৃণা আসাই স্বাভাবিক। হযরত ইমাম হোসাইনের পবিত্র পরিবার বন্দী হলেন। এর মাধ্যমে তারা এ মর্মান্তিক শাহাদাতের সর্বশেষ বাণী মানুষের কানে পৌঁছাতে সক্ষম হন। আমরা শুনেছি এবং পড়েছি যে তাঁরা শহরে শহরে বাজারে বাজারে
,বিভিন্ন মসজিদে
,ইবনে যিয়াদের দুর্গন্ধময় দরবারে এবং ইয়াযিদের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডের
রাজসভায় অর্থাৎ সর্বদা এবং সর্বত্র তারা মুখ খুলেছেন এবং ফরিয়াদ তুলেছেন আর বনি উমাইয়ার শয়তানী
,অপরাধী ও দুর্গন্ধযুক্ত চেহারা থেকে প্রতারণার সুন্দর পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে তারা প্রমাণ করেছেন যে কুকুরপ্রেমী ও মদ্যপায়ী ইয়াযিদ এক মূহুর্তের জন্যেও খেলাফতের যোগ্যতা রাখে না। যে সিংহাসনে সে বসেছে এটা তার স্থান নয়
।
তাদের বক্তৃতাবলী হুসাইনী শাহাদাতের বাণীকে পূর্ণতায় পৌঁছিয়েছে। তারা এমনভাবে অন্তরসমূহে ঝড় তুলেছেন যে ইয়াযিদের নাম চিরদিনের জন্যে ইতরতা
,হীনতা ও নীচতার সমার্থক শব্দ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এবং তার শয়তানী ও সোনালী আকাঙ্ক্ষাগুলো ধুলোয় মিশে গেছে। নিগূঢ় ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিই পারবে এ মহান ও সীমাহীন সুফলদায়ক শাহাদাতের সব দিকের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে। তাঁর শাহাদাতের প্রথম দিন থেকে অদ্যবধি তাঁর প্রেমিকগণ
,তাঁর অনুসারী যারা মানুষের মহত্ব ও মর্যাদার মূল্য ও সম্মান দিয়ে থাকেন তাদের সকলে প্রতিবৎসর তাঁর শাহাদাত ও মহান আত্মত্যাগের দিবসে কালো কাপড় পরিধান করে এবং শোকপালনের মাধ্যমে সম্মানের সাথে তাঁকে স্মরণ করে থাকেন এবং তাঁর উপর আপতিত মুসিবতসমূহের জন্যে ক্রন্দন ও বিলাপ করে তাদের আন্তরিক ভালবাসার প্রকাশ করে থাকেন। আমাদের ঐশী ইমামগণ সর্বদা কারবালার ঘটনার বর্ণনা এবং এ ঘটনাকে জীবন্ত রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তারা নিজেরা তো তাঁর মাজার যিয়ারতে যেতেন এবং তাঁর শোকে বিহ্বল হতেনই তাছাড়াও ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্যে শোক পালন ও শোকাভিভূত থাকার মর্যাদা ও গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য বক্তব্য ও বাণী
পেশ করেছেন।
জনাব আবু আম্মারা বলেন :
“
একদা আমি ইমাম জা
’
ফর সাদিক (আ.)
-এর খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শোকে কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন । যখন আমি আবৃত্তি শুরু করি তখন ইমামের কান্নার আওয়াজ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি পাঠ করছিলাম আর তিনি ক্রন্দন করছিলেন। আর কান্নার শব্দ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে বাড়ীর বাহির থেকেও তা শুনা যাচ্ছিল। আমার কবিতা আবৃত্তি সমাপ্ত হলে তিনি মর্সিয়া পাঠে এবং ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শোকে মানুষকে কাঁদানোর সওয়াব ও ফযিলতের ব্যাপারে কিছু বক্তব্য পেশ করেন।
”
তিনি আরো বলেছেন :
“
ইমাম হোসাইন বিন আলী (আ.)
-এর উপর আপতিত মুসিবত ছাড়া অন্য কোন মুসিবতে ক্রন্দন ও বিলাপ করা যথাযথ নয়
,কেননা তাঁর মুসিবতে ক্রন্দনের জন্যে মূল্যবান পুরস্কার ও পূণ্য অবধারিত।
”
আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম
,মুহাম্মদ বাকেরুল উলুম তাঁর অন্যতম সঙ্গী মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমকে বলেন :
“
আমাদের অনুসারীদেরকে বল যে তারা যেন হযরত হোসাইনের মাজার যিয়ারতে গমন করেন। কেননা যে ঈমানদার ব্যক্তি আমাদের ইমামতের প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের প্রত্যেকের জন্যে হযরত আবা আবদিল্লাহ্ আল হোসাইনের কবর যিয়ারত করা অবশ্য কর্তব্য।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন :
إِنَّ زِيَارَةَ اْلْحُسَيْنِ عَلَيْهِ اْلْسَّلاَمُ أَفْضَلُ مَا يَكُوْنُ مِنَ اْلأَعْمَالِ
অর্থাৎ
“
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর যিয়ারত যে কোন নেক আমলের চেয়ে অধিক মূল্যবান ও ফযিলতের অধিকারী।
”
কেননা প্রকৃতপক্ষে এই যিয়ারত এমন এক শিক্ষালয় যেখান থেকে বিশ্ববাসী ঈমান ও সৎ কর্মের শিক্ষা পেয়ে থাকে। বলা চলে
,রুহকে পবিত্রতা
,পূণ্যতা ও ত্যাগের আধ্যাত্মিক জগতের দিকে যাত্রার উপযোগী করে তোলে। যদিও ইমাম হোসাইনের উপর আপতিত মুসিবতের জন্যে ক্রন্দন ও শোক প্রকাশ করা এবং তাঁর কবর যিয়ারত ও কারবালাতে তাঁর বীরত্বময় ও সম্মানজনক ইতিহাসের স্মরণ ইত্যাদি কর্মসমূহ খুবই মূল্যবান। কিন্তু আমাদের
জেনে রাখা দরকার যে শুধুমাত্র এ যিয়ারত ও কান্না ও মর্মব্যথা উপলব্ধিই যথেষ্ট নয় বরং প্রতিরক্ষার দায়িত্ব আমাদেরকে ধার্মিকতা
,উৎসর্গী মনোভাবের লালন ও আসমানী বিধানের পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর এতসব কিছুর উদ্দেশ্যও তাই। মনুষ্যত্বের শিক্ষা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল কিছু থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করাই হলো হুসাইনী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর যদি তা অর্জিত না হয় অর্থাৎ যদি শুধুমাত্র বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র উদ্দেশ্যই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ।