ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)0%

ইমাম মাহদী (আ.) লেখক:
: মীর আশরাফুল আলম
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
: মীর আশরাফুল আলম
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 13471
ডাউনলোড: 3992

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 28 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13471 / ডাউনলোড: 3992
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইমামের চারজন প্রতিনিধি

স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময়ে শিয়া মাযহাবের বিশিষ্ট চারজন ব্যক্তি ইমাম মাহ্দীর (আ.) বিশেষ প্রতিনিধি বা খলিফা ছিলেন। যারা প্রতিনিয়ত তাঁর সান্নিধ্য পেতেন এবং তারা যে ইমামের বিশেষ প্রতিনিধি তা ইমামের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট ছিল। ইমামের কাছে লিখিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর লোকজন এই চারজন প্রতিনিধির মাধ্যমেই পেত।

অবশ্য এই চারজন ব্যতীত ইমামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে আরও প্রতিনিধি নিযুক্ত ছিল ,কিন্তু তারাও এই চারজন বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমেই ইমামের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত। তদ্রূপ ঐ প্রতিনিধিদের ব্যাপারে ইমামের যে আদেশ নির্দেশ থাকতো তা তাঁর এই চারজন বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমেই পাঠাতেন। 67 মরহুম আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মোহ্সেন আমিনের বক্তব্য অনুযায়ী ইমামের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র এই চারজনই বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে সার্বিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন কিন্তু অন্যান্য প্রতিনিধিরা এরূপ ছিলেন না বরং অন্যান্য প্রতিনিধিরা যেমন আবুল হুসাইন মুহাম্মদ বিন জা ফার আসাদী ,আহমাদ বিন ইসহাক আশআ রী ,ইবরাহীম বিন মুহাম্মদ হামাদানী ,আহমাদ বিন হামযাহ্ বিন ইয়াসা প্রমুখ বিশেষ কোন বিষয়ে প্রতিনিধি ছিলেন। 68

ইমামের চারজন বিশেষ প্রতিনিধি হলেন যথাক্রমে :

1-আবু আ মর উসমান বিন সাঈদ আ মরী।

2-আবু জা ফর মুহাম্মদ বিন উসমান বিন সাঈদ আ মরী।

3-আবুল কাসেম হুসাইন বিন রুহ নওবাখতী।

4-আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ সামারী।

আবু আ মর উসমান বিন সাঈদ আমরী মানুষের আস্থাভাজন ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং হযরত হাদী ও হযরত আসকারী (আ.) উভয়ের প্রতিনিধি ছিলেন। 69 ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নির্দেশে তিনি ইমাম আসকারী (আ.)-এর কাফন ও দাফন সম্পন্ন করেন। 70 তিনি ইরাকের সামাররা শহরের আসকার অঞ্চলে বসবাস করতেন বিধায় তাকেও আসকারী নামে অভিহিত করা হতো। আব্বাসীয় খলিফার লোকজন যেন বুঝতে না পারে যে তিনি ইমামের প্রতিনিধি এবং তাঁর কাজের ব্যাপারেও যেন কিছু জানতে না পারে সে জন্য তিনি তেল কেনাবেচার কাজ করতেন। 71 যখনই ইমাম আসকারীর সাথে অনুসারীদের যোগাযোগ অসম্ভব হয়ে পড়তো তখন তাঁর কাছেই শিয়ারা খুমস ,যাকাত ইত্যাদির অর্থ সম্পদ ইমামের কাছে পৌঁছানোর জন্য দিত। তিনি এই অর্থ সম্পদ তার তেলের টিনের মধ্যে ভরে তেল বিক্রয়ের ছলনায় ইমামের কাছে পৌঁছে দিতেন। 72

আহমাদ বিন ইসহাক কোমী বলেন : ইমাম হাদী (আ.)-এর কাছে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলাম যে ,আমি কখনও এখানে আবার কখনও অন্য জায়গায় যাই। আর যখন এখানে থাকি সবসময় আপনার কাছেও আসতে পারিনা ,এমতাবস্থায় আমি কাকে অনুসরণ করব বা কার কথা মেনে চলব ?

বললেন : এই আবু আ মর উসমান বিন সাঈদ আ মরী আমার আস্থা ভাজন ও নির্ভরযোগ্য। সে যা কিছু তোমাদেরকে বলবে মনে করবে যে আমিই তোমাদেরকে বলছি। আর যা কিছু তোমাদেরকে দেবে মনে করবে যে আমিই তোমাদেরকে দিয়েছি।

আহমাদ বিন ইসহাক বলেন : ইমাম হাদীর শাহাদাতের পর ইমাম আসকারীর কাছে গিয়েছিলাম এবং ঐ একই রকম প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলাম। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি তাঁর বাবার মতই একই কথা বললেন : আবু আ মর পূর্ববর্তী ইমামের আস্থা ভাজন ছিল ,তদ্রূপ সে আমার জীবদ্দশাতে এবং মৃত্যুর পরেও আমাদের আস্থা ভাজন থাকবে। যা কিছু সে তোমাদেরকে বলবে তা আমার পক্ষ থেকে মনে করবে এবং যা কিছু তোমাদের কাছে পৌঁছে দিবে তাও আমার পক্ষ থেকে মনে করবে। 73

উসমান বিন সাঈদ ইমাম আসকারী (আ.)-এর শাহাদতের পর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নির্দেশে প্রতিনিধিত্বের কাজকে অব্যাহত রাখেন। নিয়ম অনুযায়ী শিয়ারা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন তার কাছে পৌঁছে দিত এবং ইমামের দেওয়া জবাবকে আবার তার কাছ থেকেই নিয়ে আসতো। 74

মরহুম মুহাক্কেক দমাদ তার সিরাতুল মুসতাকিম নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : আবু আ মর উসমান বিন সাঈদ আ মরী বর্ণনা করেছেন যে ,ইবনে আবি গানিম কাযভীনী বলেন ,ইমাম হাসান আসকারী (আ.) কোন সন্তান-সন্ততি না রেখেই মৃত্যুবরণ করেন! শিয়ারা কাযভীনীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে এবং ইমামের উদ্দেশ্যে চিঠি পাঠায় ,চিঠিটি কাগজের উপর কালি বিহীন কলম দ্বারা লেখা হয়েছিল। এভাবে লেখার উদ্দেশ্য এই ছিল যে ,তাঁর পক্ষ থেকে আসা উত্তরটি পরবর্তীতে ইতিহাসের পাতায় একটি অলৌকিক বিষয় হিসাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। ঐ চিঠির জবাবটি ইমামের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত ভাবে আসে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল্লাহ্ তা য়ালা আমাদের ও তোমাদেরকে যেন পথভ্রষ্ট হওয়া এবং ফিতনা সৃষ্টি করা থেকে দূরে রাখেন। তোমাদের মধ্যে যে একটি অংশ তাদের দীন ও ওয়ালী আমরের বেলায়তের ( নির্দেশদাতা কর্তৃপক্ষের অভিভাবকত্বের ) বিষ য়ে দ্বিধা - দ্বন্দ্বে উপনীত হয়েছে সে খবর আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এই খবরটি আমাদেরকে প্রভাবিত ও দুঃখিত করেছে। অবশ্য আমাদের প্রভাবিত ও দুঃখিত হওয়াটা আমাদের জন্য নয় বরং তা তোমাদের জন্যই। কেননা আল্লাহ্ ও সত্য আমাদের সাথে। যারা আমাদের থেকে দূরে সরে যায় তারা আমাদের জন্য কোন আতঙ্কের বিষয় নয়। আমরা আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিনের মাধ্যমে শিক্ষিত - প্রশিক্ষিত ও পূর্ণতা লাভ করেছি। আর অন্যান্য সকল সৃষ্টি জীব আমাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও পূর্ণতা লাভ করে। আমরা আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিনের নূর থেকে আলোকিত হই আর অন্যান্য সকল কিছুই আমাদের নূর থেকে আলোকিত হয়। কেন তোমরা দ্বিধা - দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছো , তোমরা কি জান না যে পূর্ববর্তী ইমামগণের কাছ থেকে তোমাদের কাছে যা কিছু পৌঁছেছে অবশ্যই তা বাস্তবায়িত হবে ( পূর্ববর্তী ইমামগণ খবর দিয়েছিলেন যে ইমাম মাহ্দী ( .) অন্তর্ধানে থাকবেন ) , তোমরা কি দেখ নি যে কিভাবে আল্লাহ্ তা য়ালা হযরত আদম ( .) থেকে শুরু করে পূর্ববর্তী ইমামের সময় পর্যন্ত সর্বদা তাঁদেরকে আশ্রয়স্থ ল হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। যাতে করে মানুষ তাদের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে এবং তাঁদের সংস্পর্শে  থেকে তারা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারে। যখনই একটি নিদর্শন অন্তরালে চলে গিয়েছে সাথে সাথে আরেকটি নিদর্শন তার স্থানে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। আর যখনই একটি নক্ষত্রের অবসান ঘটেছে তখনই আরেকটি নক্ষত্রের উদয় হয়েছে। তোমরা কি এটাই ভেবে নিয়েছ যে , আল্লাহ্ তা য়ালা তাঁর পাঠানো এগারতম প্রতিনিধির রূহকে কবজ করে তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়ার পর নিজের দেয়া দীনকে রহিত করে দিয়েছেন এবং তাঁর নিজের ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যকার যোগাযোগের মাধ্যমকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। অবশ্যই এরকম নয় এবং কিয়ামত না হওয়া পর্যন্ত এরকম কখনও হবে না। আর এমনটি মনে করছো যে আল্লাহর নির্দেশ প্রতিষ্ঠিত হবে যখন কিনা তাঁর পছন্দনীয় ও মনোনীত প্রতিনিধিরা থাকবে না। না তা অবশ্যই না। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করে চল এবং আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ কর এবং পরিচালনার দায়িত্বকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে উপদেশ দান করছি , আর এ ব্যাপারে আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে রইলেন। 75

উসমান বিন সাঈদ মৃত্যুর পূর্বে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নির্দেশে নিজের সন্তান আবু জা ফর মুহাম্মাদ বিন উসমানকে তার স্থলাভিষিক্ত করে মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেন।

মুহাম্মদ বিন উসমান নিজেও তার পিতার মতই খোদাভীরুতা ,ন্যায়পরায়নতা ও মহানুভবতার দিক দিয়ে মানুষের মাঝে বিশ্বাসী ও সম্মানের অধিকরী ছিলেন। হযরত ইমাম আসকারী (আ.) ইতিপূর্বেই এই পিতা ও পুত্রের বিশ্বস্ততার ও আস্থাভাজন হওয়ার ব্যাপারে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। মরহুম শেখ তুসি এ ব্যাপারে লিখেন : শিয়া জনগোষ্ঠী তাদের ন্যায়পরায়নতা ,খোদাভীরুতা ও আমানতদারীতার ব্যাপারে অবগত ছিল। 76

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রথম প্রতিনিধি জনাব উসমান বিন সাঈদ এর মৃত্যুর পরে যে তৌকিয়া 77 পাওয়া যায় তাতে তার মৃত্যুর ও তার সন্তান মুহাম্মদকে ইমামের দ্বিতীয় প্রতিনিধির পদে অধিষ্ঠিত করার ব্যাপারে খবর ও নিদের্শ ছিল ,যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

اِناَّ لِلَّهِ وَ اِناَّ اِلَيْهِ راجِعُون   মহান আল্লাহর সকল আদেশ-নির্দেশের নিকট আত্মসমর্পন করছি এবং তাঁর নির্ধারিত সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট আছি। তোমার পিতা সম্মানজনকভাবে জীবন-যাপন করেছে এবং সৌভাগ্যবান হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আল্লাহ্ তাকে রহমত করুন এবং তাকে তার ইমামদের (আ.) সাথে স্থান দান করুন। সর্বদা সে তার ইমামগণের কাজে শরিক হতো এবং যা কিছুতে আল্লাহ্ তা য়ালা খুশি হবেন ও ইমামগণের পছন্দ ছিল তাই করার চেষ্টা করতো। আল্লাহ্ তা য়ালা তার উপর রাজী ও খুশি হোন এবং তার ভুল-ত্রুটিগুলোকে ক্ষমা করুন।

এই তৌকিয়া অন্য আরেক জায়গায় বলেছেন :

আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন তোমাকে উত্তম পুরস্কারে পুরস্কৃত করুন এবং তোমাকে মুসিবতের মধ্যেও স্বস্তি ও শান্তি দান করুন। তুমি মুসিবতের মধ্যে আছো এবং আমরাও একই পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। তোমার বাবার বিচ্ছেদ তোমাকে ও আমাদেরকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে এবং তার অনুপস্থিতি তোমাকে ও আমাদেরকে মুসিবতের মধ্যে পতিত করেছে। আল্লাহ্ তা য়ালা তাঁর রহমতের ছায়ায় তাকে তার চিরস্থায়ী আবাসে প্রশান্তি দান করুন। তোমার পিতা এতই সৌভাগ্যবান ছিল যে আল্লাহ্ তা য়ালা তাকে তোমার মত সন্তান দিয়েছেন ,যে পিতার পরে তার স্থলাভিষিক্ত হবে ও তার প্রতিটি বিষয়ের দায়িত্বশীল হবে। তার জন্য আল্লাহর কাছে রহমত ও মাগফিরাত কামনা করবে। আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি এ কারণে যে ,সমস্ত ইমামগণের দৃষ্টি তোমার উপর এবং যা কিছু আল্লাহ্ তোমার মধ্যে ও তোমাকে দিয়েছেন তা সকলের জন্য খুশি ও আনন্দের বিষয়। আল্লাহ্ তা য়ালা তোমাকে সাহায্য করুন এবং শক্তিশালী ও দৃঢ় করুন। আর তিনি যেন তোমাকে সাফল্য দান করেন এবং তোমার অভিভাবক ও রক্ষক হোন। 78

আবদুল্লাহ্ বিন জাফর হেমইয়ারী বলেন : উসমান বিন সাঈদ এর মৃত্যুর পর ইমামের হাতে লেখা একাট চিঠি আমাদের কাছে আসে। যাতে লেখা ছিল আবু জাফর ( মুহাম্মদ বিন উসমান বিন সাঈদ আ মরী) তার পিতার স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে 79

অন্য আরেকটি তৌকিয়াতে ইসহাক বিন ইয়াকুব কুলাইনীর প্রশ্নের উত্তরে ইমাম এমনই লিখেছেন:

মুহাম্মদ বিন উসমান আ মরী ও তার পিতা যে আগেই গত হয়েছে আল্লাহ্ তাদের উপর রাজী ও খুশি আছেন। সুতরাং সেও ঐরূপ আমার বিশ্বস্ত এবং তার লিখিত বিষয়গুলি হচ্ছে আমারই লেখা। 80

আবদুল্লাহ্ বিন জাফর হেমইয়ারী বলেন : মুহাম্মদ বিন উসমানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ইমাম মাহ্দী (আ.)-কে দেখেছো ?

বলল : হ্যাঁ ,তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল বাইতুল্লাহিল হারামের (কা বা ঘর) পাশে ,আর তিনি বলছিলেন :

اللَّهُمَّ اَنْجِزْلى ما وَعَدْتَنى 81

হে আল্লাহ্! আমাকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ করুন।

এবং তাকে মুসতাযারে 82 দেখেছিলাম ,আর তিনি বলছিলেন :

اَللَّهُمَّ اَنْتَقِمْ بى اَعْدائى 83

হে আল্লাহ্! আমার শত্রুরদের হতে আপনি প্রতিশোধ গ্রহণ করুন।

মুহাম্মদ বিন উসমান আরও বলেন : ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রতি বছর হজের সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে দেখেন এবং সবাইকে চিনতে পারেন। আর অন্যরাও তদ্রুপ তাকে দেখতে পায় কিন্তু চিনতে পারে না। 84

মুহাম্মদ বিন উসমান নিজের জন্য একটি কবর তৈরী করে তা সাজ (এক ধরনের কাপড় বা পোশাক) দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। আর সেই কাপড়ের উপর পবিত্র কোরআন মজিদের কয়েকটি আয়াত ও ইমামদের (আ.) নাম লিখে সেই কবরের মধ্যে গিয়ে প্রতিদিন এক পারা কোরআন তেলাওয়াত করত। 85

তিনি তার মৃত্যুর পূর্বেই তার মৃত্যুর দিন সম্পর্কে জানিয়েছিলেন । যে দিনের ব্যাপারে তিনি পূর্বে খবর দিয়েছিলেন ঠিক সে দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 86 তার মৃত্যুর কিছু সময় আগে শিয়া মাযহাবের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি তার কাছে আসলে তাদের সামনে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নির্দেশে আবুল কাসেম হুসাইন বিন রূহ নওবাখতিকে ইমামের পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন : তিনি আমার স্থলাভিষিক্ত ,তোমরা এখন থেকে তার সাথে যোগাযোগ রাখবে। 87

জনাব আবু জাফর মুহাম্মদ বিন উসমান আ মরী 305 হিজরী সনে মৃত্যুবরণ করেন। 88

হুসাইন বিন রুহ নওবাখতি

জনাব আবুল কাসেম হুসাইন বিন রুহ নওবাখতি তার পক্ষের ও বিপক্ষের লোকজনদের কাছে বিশেষ সম্মানের পাত্র ছিলেন। তিনি আকল ,উন্নত চিন্তা ,খোদাভীরুতা ও মর্যাদার দিক দিয়ে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন ফিরকা ও মাযহাবের লোকেরা তার কাছে আসা-যাওয়া করত। ইমামের দ্বিতীয় প্রতিনিধি মুহাম্মদ বিন উসমান আ মরীর আমলে তিনি তার কাজের কয়েকটি বিভাগের দায়িত্বশীল ছিলেন। বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে বিশেষ করে মুহাম্মদ বিন উসমান ,জাফর বিন আহমাদ বিন মুতাইল কোমীর সাথে অন্যদের তুলনায় তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক এতই গভীর ছিল যে মুহাম্মদ বিন উসমানের জীবনের শেষ দিকে জাফর বিন আহমাদের বাড়ীতে তার খাবার রান্না হতো। দ্বিতীয় প্রতিনিধির বন্ধুদের মধ্যে জাফর বিন আহমাদ বিন মুতাইলেরই অন্যদের তুলনায় তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী ছিল। জীবনের শেষ সময়ে এবং যখন মুহাম্মদ বিন উসমান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অপেক্ষায় তখন জাফর বিন আহমাদ তার মাথার কাছে ও হুসাইন বিন রুহ নওবাখতি তার পায়ের কাছে বসে ছিলেন। 89 এমতবস্থায় মুহাম্মদ বিন উসমান জাফর বিন আহমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন : ইমামের প্রতিনিধিত্বকে আবুল কাসেম বিন রুহ নওবাখতির উপর অর্পণ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাফর বিন মুহাম্মদ তার নিজের জায়গা থেকে উঠে গিয়ে হুসাইন বিন রুহ নওবাখতির হাত ধরে তাকে মুহাম্মদ বিন উসমানের মাথার কাছে বসিয়ে দিল ও নিজে তার পায়ের কাছে বসলো। 90

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পক্ষ থেকে হুসাইন বিন রুহ নওবাখতির ব্যাপারে এই তৌকিয়া আসে :

আমরা তাকে জানি। আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন যেন তার প্রতিটি ভাল ও পছন্দনীয় বিষয়গুলোকে তাকে চিনিয়ে দেন এবং তার ক্ষমতা দিয়ে যেন তাকে সাহায্য করেন। তার লিখিত বিষয়ের প্রতি খবর রাখি ও তার ব্যাপারে বিশ্বাস রাখি। আমাদের কাছে তার মর্যাদা ও সম্মান আছে যা তাকে আনন্দিত করবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যেন তার মধ্যে উন্নত দিকগুলোকে বৃদ্ধি করে দেন। কেননা তিনি সকলের অভিভাবক ও সকলের উপর কর্তৃত্বশালী। প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা য়ালার যার কোন শরিক নেই এবং দরুদ ও সালাম সেই আল্লাহ্ প্রেরিত নবী মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারের উপর।

এই চিঠিটি রোজ শনিবার 305 হিজরীর শাওয়াল মাসের 6 তারিখে ইস্যু হয়। 91

আবু সাহল নওবাখতি যিনি একজন বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তি ও নওবাখতি বংশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন এবং অনেক গ্রন্থও রচনা করেছিলেন তার কাছে জানতে চাওয়া হলো যে কেন তিনি ইমামের প্রতিনিধিত্বে অধিষ্ঠিত না হয়ে আবুল কাসেম হুসাইন রুহ নওবাখতি এই পদে উপনীত হলো ?

বললেন : তারা (ইমামগণ) সকলের থেকে বিজ্ঞ এবং যা কিছু নির্বাচন করেন তা অধিকতর উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমি এমন এক লোক যে শত্রুদের সাথে ইমামতের বিষয়ে কথোপকথন ও আলোচনা করি। যদি ইমামের প্রতিনিধি হতাম এবং তার অবস্থান সম্পর্কে জানতাম ,যেমন এখন আবুল কাসেম হুসাইন বিন রুহ নওবাখতি প্রতিনিধিত্বের সূত্রে জানে ,ইমামতের বিষয়ে বিরুদ্ধাবাদীদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে হয়তো তাদের কাছে ইমামের অবস্থানের ব্যাপারে বলে দিতাম। কিন্তু সে এ ব্যাপারে এমন শক্ত যে ,যদি ইমাম তার জোব্বার নিচে লুকিয়ে থাকে এবং তাকে বিশাল ধারালো অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তবুও সে তার জোব্বা উঠিয়ে নিবে না এবং ইমামকে শত্রুদের দেখিয়ে দিবে না। 92

আবুল কাসেম হুসাইন বিন রুহ নওবাখতি আনুমানিক 21 বছর ইমামের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার মৃত্যুর আগে তার প্রতিনিধিত্বকে ইমামের নির্দেশে আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ সামারীর নিকট হস্তান্তর করে যায়। 326 হিজরীর শাবান মাসে তার ইন্তেকাল হয়। তার সমাধিস্থানটি বাগদাদে অবস্থিত। 93