ইমামের সাক্ষাৎ
মরহুম শেখ তাবারসী তার
“
এলামুল ওয়ারা
”
নামক গ্রন্থে যারা ইমাম মাহ্দীকে (আ.) ও তাঁর দ্বারা সংঘটিত অলৌকিক কোন ঘটনা দেখতে সমর্থ হয়েছেন তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন তেরজন ইমামের সাধারণ প্রতিনিধি ও খেদমতকারী যারা
,বাগদাদ
,কুফা
,আহওয়ায
,কোম
,হামাদান
,রেই
,আযারবাইজান ও নিশাবুরে ছিলেন এবং পঞ্চাশজন যারা বাগদাদ
,হামাদান
,দিনাওয়ার
,ইসফাহান
,সীমারী
,কাযভীনের আশে পাশের এলাকায় ও অন্যান্য জায়গায় ছিলেন।
মরহুম হাজী নূরী যিনি 14 শতাব্দীর প্রথম দিকের একজন বিশিষ্ট আলেম ছিলেন। তিনি তার বিখ্যাত বই
“
মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল
”
-এ ও অন্য একটি সুপরিচিত বই
“
নাজমুস সাকিব
”
-এ 120 জনেরও বেশী লোকের নাম উল্লেখ করেছেন। মরহুম তাবারসী বর্ণিতদের নামও তিনি উল্লেখ করে বলেন
,যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হয় হযরত মাহ্দী (আ.)-কে দেখেছেন অথবা তাঁর হতে কোন অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন অথবা দু
’
টি সৌভাগ্যই তারা লাভ করেছেন। তিনি বলেন : হয়তো উল্লিখিতদের বেশীরভাগই উভয় সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়েছেন। আল্লাহর রহমতে বিভিন্ন শিয়া লেখকের রচিত গ্রন্থসমূহে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। প্রসিদ্ধ যে
,নিরপেক্ষ যে কোন ব্যক্তি যদি এই বইগুলোর লেখকদের ব্যক্তিত্ব
,খোদাভীরুতা
,মর্যাদা
,সত্যবাদিতা ও কর্মের ক্ষেত্রে সতর্কতা সম্পর্কে অবহিত হন তবে ঐ বিষয়গুলোর সত্যতাকে স্বীকার করবেন বা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পক্ষ থেকে সংঘটিত অলৌকিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে কোনরূপ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পতিত হবেন না। যেহেতু বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীদের হতে একইরূপ অর্থের অসংখ্য বর্ণনা (বিভিন্ন সূত্রে ইমাম মাহ্দীর কেরামত প্রমাণ করে বর্ণনা) এসেছে তাদের সবগুলোকেই মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করা যায় না। যদিও ঐ বিষয়গুলোর প্রতিটিতেই এ ধরনের সম্ভাবনা দেয়ার অবকাশও থাকে তথাপিও না। কেননা এইরূপ অলৌকিক ঘটনা তাঁর পবিত্র পিতৃপুরুষদের মাধ্যমেও ঘটেছে তার যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।
কোন কোন বড় আলেম
,যারা দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানে যাওয়ার পরেও ইমামের খেদমতে পৌঁছেছে অথবা স্বচক্ষে বা ঘুমের মধ্যে তাঁর বিভিন্ন কারামত প্রত্যক্ষ করেছে তাদের নাম ও ঘটনাকে নিজেদের লেখা গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ করেছেন। যেমন : কাশফুল আসতার
,বিহারুল আনওয়ার ও দারুল ইসলাম এবং নাজমুস সাকিবে মরহুম হাজী নূরী এরূপ প্রায় একশত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। যার ভূমিকায় তিনি এমন লিখেছেন :
যা কিছু এই অধ্যায়ে উল্লেখ করছি তা হলো ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মাধ্যমে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাসমূহ। যার সনদসমূহ বিশ্বাসযোগ্য
,সঠিক ও উন্নত পর্যায়ের। বিচার বিশ্লেষণ করলে অতীত অলৌকিক ঘটনা বা পুরাতন গ্রন্থসমূহে ঘাটিয়ে দেখার প্রয়োজন হবে না ...
।
আরও বলেন : যা কিছু বর্ণনাকারীদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রেখেছি তা হলো তাদের সত্যবাদিতা ও ধার্মিকতা এবং যা কিছুই শুনেছি তাই বর্ণনা করি নি বরং আল্লাহ্ সাক্ষী যে
,উদ্ধৃতি উল্লেখের ক্ষেত্রে সত্যতা ও বিশ্বস্ততাকে রক্ষা করেছি। আর যাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ঘটনার উল্লেখ করেছি তারা বেশীরভাগই বিশেষ শান ও মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব বা তারাও কেরামতের অধিকারী ছিলেন।
হাজী নূরীর পরে আরও অনেকের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ঘটনার অবতারণা হয়। যেমন বিশিষ্ট আলেম আগা লুতফুল্লাহ্ সাফি তার
“
ইসালাতে মাহ্দাভিয়াত
”
গ্রন্থে (ইমাম মাহ্দীর যথার্থতা ও সত্যতা প্রমাণের উপর লিখিত বই) কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছেন : সংক্ষিপ্ততার কারণে শুধুমাত্র আমাদের সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার বর্ণনা দিয়েই শেষ করছি।
আমরাও এই লেখনীতে সংক্ষিপ্ততার দিকে খেয়াল রেখে মহামুল্যবান বই
“
নাজমুস সাকিব
”
থেকে শুধুমাত্র একটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ করবো :
বিশিষ্ট আলেম আলী বিন ঈসা আরবিলী তার
“
কাশফুল গুম্মাহ
”
নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে
,আমাকে একদল সত্যবাদী লোক খবর দিল যে (আমার বংশীয় এক ভাই যে হিল্লা শহরে বসবাস করতো। সে একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক ছিল। সবাই তাকে ইসমাঈল বিন ঈসা বিন হাসান হারকেলী বলে সম্বোধন করতো। হারকেল এলাকায় বসবাস করতো বলে তাকে হারকেলী বলে ডাকতো) সে ইন্তেকাল করেছে। তাকে আমি কখনও দেখিনি। তার ছেলে (শামসুদ্দিন) আমাকে তার বাবার কাছ থেকে শোনা একটি ঘটনার বর্ণনা করেছে : তার বাবা বলেছে
,যুবক বয়সে তার বাম পায়ের ঊরুতে হাতের মুষ্টি পরিমান ফোড়া বিশেষ হয়েছিল এবং প্রতি বছর বসন্তকালে সেটি পেকে ফেটে যেত এবং তা থেকে পুঁজ-রক্ত বের হতো। প্রচণ্ড ব্যথা-বেদনায় সে কাতর হয়ে পড়তো। যার কারণে সে কোথাও কাজ করতে পারতো না বা তাকে কোথাও কেউ কাজ দিত না। সে হিল্লা শহরে রাজী উদ্দিন
আলী বিন তাউসের কাছে আসে এবং তার কাছে এই উপদংশ রোগের ব্যাপারে সব খুলে বলে। সাইয়্যেদ শহরের অভিজ্ঞ সার্জেনদেরকে এক জায়গায় জমা করলেন। তারা সবাই দেখে বললেন এটা বিশেষ ধরনের ফোড়া যা তার ঊরুর মূল শিরার উপর হয়েছে এবং ভাল করার কোন উপায় নেই একমাত্র কেটে ফেলা ছাড়া। যদি কেটে ফেলি হয়তো তার মূল শিরাটি কাটা পড়তে পারে। যখনই ঐ শিরাটি কাটা পড়বে ইসমাঈলও আর বেঁচে থাকবে না। এই অপারেশনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ
,আমরা কেউ তা করতে চাই না।
সাইয়্যেদ ইসমাঈলকে বলল আমি বাগদাদে যাবো। অপেক্ষা কর তোমাকেও আমার
সাথে নিয়ে যাবো এবং সেখানকার ডাক্তারদেরকে তোমাকে দেখাবো। হয়তো তারা আরও অভিজ্ঞ
,হয়ত তোমাকে ভাল করতে পারবে। বাগদাদে এসে সেখানকার ডাক্তারদের সাথে কথা বললে তাদের সবাই আগের ডাক্তারদের মতই বলল ও অপরাগতা প্রকাশ করল। এ দিকে ইসমাঈল আরও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। সাইয়্যেদ তাকে এটাই বলল : আল্লাহ্ রাব্বুল আ
’
লামিন তোমার নামাজকে এই অপবিত্রতা সহই কবুল করবেন। আর এই কষ্ট সহ্য করা নিষ্ফল নয়
,নিশ্চয় এর পুরষ্কার রয়েছে। ইসমাঈল বলল তাহলে যদি তাই হয়ে থাকে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সামাররাতে যাবো এবং ইমামগণের (আ.) কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবো। এই বলে সে সামাররার দিকে রওনা হলো।
“
কাশফুল গুম্মাহ্
”
-এর লেখক বলেন তার ছেলের কাছ থেকে শুনেছিলাম যে
,সে তার বাবার কাছ থেকে শুনেছে তিনি বলেছেন: যেখানে ইমাম আলী নাকী ও ইমাম হাসান আসকারী (আ.) শায়িত আছেন আমি সেখানে গেলাম এবং তাদের যিয়ারত করলাম । সারদাবেহর
নিকটে রাত্রটা কাটালাম। আর সারা রাত ধরে প্রচুর কান্না-কাটি করলাম। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাহায্য কামনা করলাম। সকালে তাইগ্রীস নদীতে গিয়ে জামা-কাপড় ধুয়ে যিয়ারত করার জন্য গোসল করলাম এবং যে কটি এবরীকি (চামড়ার তৈরী থলে বিশেষ যার মধ্যে পানি বহন করা হতো) ছিল তা পানি ভর্তি করে নিলাম। আর একবারের মত যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ইমামগণের মাজার শরীফের দিকে রওনা হলাম। ওখানে পৌঁছানোর আগেই চারজন ঘোড় সওয়ারীকে এ দিকেই আসতে দেখলাম। যেহেতু ইমামদের মাজারের আশে পাশে কিছু সংখ্যক ভদ্র ও অভিজাত পরিবারের লোকজন বসবাস করতেন ভাবলাম হয়তো তারা হবে। আমার কাছে পৌঁছালে
দেখতে পেলাম যে দু
’
যুবকের কোমরে তলোয়ার বাঁধা আছে। তাদের একজনের সবে দাড়ি দেখা দিয়েছে। তাদের সাথে একজন বৃদ্ধ যিনি অত্যন্ত পরিপাটি ছিলেন এবং তার হাতে একটি বল্লম ছিল। আর অন্যজনের সাথে ছিল তলোয়ার
,গায়ে ছিল আলখেল্লা
,মাথায় বড় পাগড়ী
,যা মাথা হয়ে গলায় পেচিয়ে পিঠে গিয়ে পড়েছিল। তার হাতে ছিল বল্লম। বৃদ্ধ লোকটি হাতের ডান পাশে বল্লমটিকে মাটিতে গেঁথে দিয়ে দাঁড়ালো। ঐ যুবক দু
’
টি হাতের বাম পাশে এসে দাঁড়ালো এবং আলখেল্লা পরিহিত ব্যক্তিটি মধ্যখানে থাকলেন। আমাকে সালাম দিলেন। আমি সালামের জবাব দিলাম। তিনি আমাকে বললেন : আগামীকাল বাড়ীর দিকে রওনা হবে
?
বললাম : জী হ্যাঁ।
বললেন : এগিয়ে এসো দেখি কী তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
আমার চিন্তায় আসলো যে মরুভূমিতে বসবাসকারীরা অপবিত্রতার বিষয়কে এড়িয়ে চলে না। মনে মনে (নিজেকে )বললাম তুমি গোসল করেছো এবং তোমার জামা-কাপড় সবে ধুয়েছো এখনও ভিজা আছে। তার হাত তোমার শরীরে না লাগাই ভাল। এই চিন্তায় মগ্ন ছিলাম হঠাৎ তিনি নিচু হয়ে আমাকে তার কাছে টেনে নিলেন এবং তার হাত দিয়ে আমার উরুর ঐ জায়গাটায় চাপ দিলেন। এমনভাবে চাপ দিলেন যে আমি প্রচণ্ড ব্যথা পেলাম। তারপর আমার পা সোজা হয়ে মাটি স্পর্শ করলো। সে সময় ঐ বৃদ্ধ লোকটি বলল :
(أَفْلَحْتَ يا اِسْماعِيلُ
)ত
ুমি সফল হয়েছো
,হে ইসমাঈল। আমি বললাম :
(
أَفْلَحْتُمْ
) (আপনি সফল হয়েছেন)। আমি আশ্চর্য হলাম যে তিনি আমার নাম জানলেন কিভাবে। ঐ বৃদ্ধ লোকটি আমাকে আলখেল্লা পরিহিত লোকটিকে দেখিয়ে বললেন যে তিনি হচ্ছেন ইমাম। আমি আঁখি জল ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ে চুমু দিতে লাগলাম। ইমাম চলতে শুরু করলেন আর আমিও তার পিছু পিছু জ্ঞানহীনের মত ছুটতে লাগলাম। তিনি আমাকে ফিরে যেতে বললেন।
বললাম : আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
বললেন : ফিরে যাও এতে তোমার মঙ্গল হবে।
আমি আমার আগের কথাটিই পুনরায় বললাম। ঐ বৃদ্ধ লোকটি আমাকে বললেন
,হে ইসমাঈল! তোমার লজ্জা নেই
,ইমাম দুই বার তোমাকে ফিরে যেতে বললেন আর তুমি তার কথার অবমাননা করছো!
তার এই কথাটি আমার উপর দারুণভাবে প্রভাব ফেললো। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তারা আমার থেকে কিছুটা দূরে চলে গিয়েছিলেন সেখান থেকেই আমাকে বললেন : বাগদাদে পৌছার কয়েকদিন পর মুসতানসের
তোমাকে ডেকে পাঠাবে এবং সে তোমাকে কিছু উপহার সামগ্রী দান করবে। তুমি যেন তা নিও না। আমার সন্তান রাজীকে বলবে যে আমি তোমার ব্যাপারে আলী বিন আরাযকে কিছু লিখতে বলেছি যে
,তুমি যা কিছু চাও তা যেন সে তোমাকে দেয়।
আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম
।
কিছু সময় পরে তারা আমার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন। ভীষণ দুঃখে কয়েক ঘন্টা ওখানেই বসে ছিলাম। তারপর ইমাম নাকী ও ইমাম আসকারী (আ.)-এর হারাম শরীফে ফিরে এলাম। যেহেতু হারাম শরীফের লোকেরা আমাকে আগে দেখেছিল সেহেতু বলল
,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার অবস্থার উন্নতি হয়েছে
,এখন কোন কষ্ট অনুভব করছো কী
?
বললাম : না।
তারা বলল : কারো সাথে মারা-মারি বা হাতা-হাতি করেছো নাকি
?
বললাম : না
,বল দেখি এই যে এখান থেকে ঘোড় সওয়ারীরা গিয়েছে তাদেরকে দেখেছ কি না
?
তারা বলল : তারা হয়তো কোন সম্ভ্রান্ত লোক হবেন।
বললাম : তারা সম্ভ্রান্ত লোক ছিলেন ঠিকই কিন্তু তাদের মধ্যে একজন ইমাম ছিলেন।
তারা বলল : ঐ বৃদ্ধ লোকটি না ঐ আলখেল্লা পরিহিত লোকটি
?
বললাম : আলখেল্লা পরিহিত লোকটি।
তারা বলল : তোমার অসুস্থতাকে কি তিনি ভাল করেছেন
?
বললাম : হ্যাঁ। তিনি ওখানে চাপ দিলেন। আমার ভীষণ ব্যথা লাগলো। তারপর আমার উরুর কাপড়টি খুললেন। কিন্তু সেখানে কোন কিছুই ছিল না। আমি নিজেও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। অন্য পায়ের উরুতেও ভালভাবে লক্ষ্য করলাম কিন্তু সেখানেও কিছু দেখতে পেলাম না। এই কথা বলার সাথে সাথে উপস্থিত সবাই আমার উপর হুমড়ী খেয়ে পড়লো
,আমার শরীর ছোয়ার জন্য। আমার জামা-কাপড় ছিড়ে ফেললো। যদি হারাম শরীফের খাদেমরা আমাকে সরিয়ে নিয়ে না আসতো তাহলে আমি তাদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে যেতাম। এমন সময়
“
বাইনুন্নাহারাইন
”
এর গর্ভণরের চিৎকার শোনা গেল। কাছে এসে ঘটনাটি শুনে চলে গেল এ কারণে যে বিষয়টি খলিফার কাছে লিখে জানাতে হবে। আমি রাতে সেখানে থাকলাম। সকালে একদল লোক এসে তাদের মধ্যে দুইজনকে আমার সাথে দিয়ে আমাকে বিদায় জানিয়ে ফিরে গেল। আমরা তারপর দিন সকালে বাগদাদে পৌঁছে দেখলাম প্রচুর পরিমানে মানুষ শহরের পুলের মাথায় জমা হয়ে আছে। শহরে কেউ এলে সবাই তার নাম জানতে চায় তদ্রুপ আমরাও এসেছি আমাদের নামও জানতে চাইলো। আমরা আমাদের নাম বলতেই সবাই মিলে আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। কিছু সময় আগে
যে পোশাকটি পরেছিলাম তাও ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম যেন আর একটু হলেই আমার নিঃশ্বাস বের হয়ে যেত। সাইয়্যেদ রাজী আমাকে মানুষের মধ্য থেকে বের করে এনে তাদেরকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন।
“
বাইনুন্নাহারাইন
”
এর গভর্ণরের লেখা প্রতিবেদনটি বাগদাদ শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল যা সাইয়্যেদের কানেও গিয়েছিল। সাইয়্যেদ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন : এখানকার সবাই বলছে যে কে যেন শাফা (অসুস্থতা থেকে আরোগ্যলাভ করা) পেয়েছে সে ব্যক্তি কি তুমি
?
বললাম : জী হ্যাঁ।
তিনি ঘোড়া থেকে নেমে এসে আমার উরুর কাপড় সরিয়ে দেখলেন। যেহেতু তিনি আগেও আমার উরুর অবস্থাটি দেখেছিলেন আর এখন তার কোন চি
হ্ন দেখতে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরে এলে বললেন : খলিফার উজির আমাকে ডেকে বলেছিলো সামাররা থেকে একটি চিঠি এসেছে
,আর তাতে বর্ণিত লোকটির সাথে তোমার সম্পর্ক আছে
,যত দ্রুত সম্ভব আমাকে তার খবর জানাও।
সাইয়্যেদ আমাকে তার সাথে নিয়ে ঐ উজিরের কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন : এই লোকটি আমার ভাই এবং সে আমার সব থেকে প্রিয় সঙ্গী।
উজির বললো : আমাকে তোমার ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দাও।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে তার বর্ণনা দিলাম। ঐ সময় উজির কাউকে ডাক্তারদের ডাকতে পাঠালো। তারা হাজির হওয়ার পর তাদেরকে বললো :
তোমরা এই লোকের উরুর ক্ষতটি দেখেছিলে কি
?
তারা বললো : হ্যাঁ দেখেছিলাম
।
জিজ্ঞেস করলো : এই রোগের চিকিৎসা কি
?
তারা বললো : একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে কেটে ফেলা। যদি কেটে ফেলা হয় তবে ভয় হচ্ছে যে
,আদৌ সে বেঁচে থাকবে কি না।
জিজ্ঞেস করলো : যদি ধরে নেই যে সে বেঁচে থাকবে তাহলে কত দিনে তার ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
?
বললো : প্রায় দু
’
মাস লাগবে তার ভাল হয়ে উঠতে। ভাল হয়ে উঠার পরে তার ঐ জায়গায় সাদা হয়ে থাকবে বা কোন দিন ওখানে লোম উঠবে না।
আবারও জিজ্ঞেস করলো : কত দিন হয়েছে তোমরা তাকে দেখেছ
?
বললো : আজকে নিয়ে দশদিন আগে দেখেছি।
সুতরাং উজির আমার কাছে এসে আমার উরুর কাপড় সরিয়ে দেখলেন যে অন্য একটি উরুর সাথে কোন পার্থক্য নেই বা কোন প্রকার ক্ষত এর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ঐ সময় একজন ডাক্তার যে ছিল খৃস্টান চিৎকার দিয়ে বললো :
(
وَ اللَّهِ هَذا مِنْ عَمِلِ الْمَسيِحِ
)-- আল্লাহর কসম! এটা সাধারণ রোগ মুক্তি নয়
,বরং এটা মাসীহ এর (ঈসা ইবনে মারিয়াম) অলৌকিক শক্তিতে অর্জিত রোগমুক্তি।
উজির বলল : যেহেতু এটা তোমাদের কারো কাজ নয়
,সেহেতু আমি জানি এটা কার কাজ।
এই খবর খলিফার কাছে পৌঁছালে সে উজিরকে ডেকে পাঠালো। উজির আমাকে সাথে নিয়ে খলিফার দরবারে উপস্থিত হলো। খলিফা মুসতানসির আমাকে ঐ ঘটনাটি পুনরায় বর্ণনা করার জন্য বলল। আমি ঘটনাটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করায় আমাকে একটি ব্যাগ যার মধ্যে একহজার দিনার ছিল উপহার স্বরূপ দিয়ে খলিফা বলল : এই অর্থ তুমি তোমার নিজের খরচের জন্য রাখ।
বললাম : এটা আমি নিতে পারবো না।
বলল : তুমি কার ভয় পাচ্ছ
?
বললাম : যে আমাকে সুস্থ করে দিয়েছে। কেননা তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে
,তোমার কাছ থেকে যেন কোন কিছু গ্রহণ না করি। এ কথা শুনে খলিফা মর্মাহত হয়ে কাঁদতে লাগলো।
“
কাশফুল গুম্মাহ
”
এর লেখক বলেন :
এই ঘটনায় আমি দারুণভাবে আশ্চর্য হয়ে ইসমাঈলের ছেলে শামসুদ্দিন মুহাম্মদকে বললাম : তুমি তোমার বাবার ঐ স্থানটি ক্ষত থাকা অবস্থায় দেখেছিলে কী
?
বলল : আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন সুস্থ হয়েছিলেন তখন দেখেছিলাম যে তার ওখানে লোম উঠেছে এবং ক্ষত হওয়ার কোন চিহ্নই সেখানে ছিল না। আমার পিতা প্রতি বছর একবার বাগদাদে যেতেন এবং সেখান থেকে সামাররাতে। অনেক সময় ধরে সেখানে থাকতেন এবং প্রচুর কান্না-কাটি করতেন। তার বিশেষ ইচ্ছা ছিল আর একবার ইমামকে দেখবে। সে কারণেই সেখানে তাঁকে খুঁজে বেড়াতেন কিন্তু আর তাকে দেখতে পান নি। আমি যতুটুকু জানি যে তিনি 40 বার সামাররা যিয়ারত করতে গিয়েছিলেন এবং পুনরায় তাকে দেখতে না পাওয়ার ব্যথায় মৃত্যুবরণ করবেন।
এই ঘটনা বর্ণনা শেষে
“
নাজমুস সাকিব
”
এর লেখক শেখ হুররে আ
’
মিলির
‘
আমালুল আ
’
মাল
’
নামক গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল একজন বিশিষ্ট আলেম ও আল্লামা হিল্লির ছাত্র ছিল।
সাইয়্যেদ বিন তাউস বলেন : আমি আমার জামানায় কিছু সংখ্যককে দেখেছি যে
,বলতেন হযরত মাহ্দীকে (আ.) দেখিছি এবং অন্যদেরকে দেখেছি তাদের কাছে ইমামের চিঠি ও প্রশ্নের উত্তর আসতো।
মরহুম শেখ হুররে আ
’
মিলি যিনি একজন বিশিষ্ট আলেম ও শিয়া বিশিষ্ট মারজা ছিলেন। হিজরী একাদশ শতকের প্রথক দিকে তিনি হারকেলীর অনুরূপ একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন : এই ঘটনার মত আরও অনেক ঘটনা আমাদের জামানায় অথবা অতীতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পক্ষ থেকে সত্য সত্যই সংঘটিত হয়েছে যার প্রকৃত প্রমান আছে
।
তিনি আরও বলেন : সত্যবাদী হিসাবে পরিচিত একদল লোক আমাকে বলেছেন যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-কে তারা স্বচক্ষে দেখেছেন এবং তাঁর বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি তাদেরকে অদৃশ্যের ব্যাপারে কিছু কথা বলেন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন যা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন যা বর্ণনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় এবং সেগুলো সবই তাঁর দ্বারা সংঘটিত অলৌকিক ঘটনার মধ্যে শামিল হবে।
আরও বলেন : আমি নিজেও ঘুমন্ত অবস্থায় ইমাম মাহ্দী (আ.) এর কারামতকে প্রত্যক্ষ করেছি
,যা পরবর্তীতে বর্ণনাও করেছি
।