ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 84949
ডাউনলোড: 10116

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 84949 / ডাউনলোড: 10116
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

বিশ্বব্যাপী ফিতনা ও শামের ফিতনা

বিশ্বব্যাপী ও শামের ফিতনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহে শামের এক বিশেষ ফিতনা সম্পর্কিত বর্ণনা এসেছে যা সুফিয়ানীর আবির্ভাবের আগে সে দেশে সংঘটিত হবে । এ ফিতনা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কর্তৃক সৃষ্ট ফিতনা হতে ভিন্ন হবে । উল্লেখ্য যে ,প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ফিতনা দ্বারা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ আক্রান্ত হবে । আর আমরা এ ব্যাপারে আগেই আলোচনা করেছি । অধিকতর শক্তিশালী সম্ভাবনার ভিত্তিতে বলা যায় উল্লিখিত ফিতনা বিশ্বব্যাপী ফিতনার সাথে সংযুক্ত অথবা এর প্রত্যক্ষ ফলাফল হতে পারে । কখনো কখনো এ সব ফিতনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েত এবং এগুলোর রাবীদের (রেজালশাস্ত্রগত) অবস্থা একে অপরের সাথে মিশে গেছে ।

শামের ফিতনায় সবচেয়ে স্পষ্ট যে দিক বিদ্যমান তা হচ্ছে ,ঐ সব মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত শত্রুদের সামনে শামের অধিবাসীদের প্রতিরোধ-ক্ষমতা বিলুপ্ত করে দেবে এবং তা তাদের হুকুমত দুর্বল হওয়ার কারণ হবে । অবস্থা এমন হবে যে ,তারা নিজেদের দেশ শাসন ও পরিচালনা করতে অক্ষম হয়ে যাবে । হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) একে দলসমূহের মতবিরোধ ও দ্বন্দ্বের ফিতনা বলে অভিহিত করেছেন যা পবিত্র কোরআনেও বর্ণিত হয়েছে । কারণ নিম্নোক্ত আয়াতটির ব্যাপারে ইমাম আলী (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ।

তাদের বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী (হযরত ঈসা মসীহর ব্যাপারে) নিজেরাই মতবিরোধ করেছিল ,সুতরাং ঐ মহান দিবসে (কিয়ামত দিবসে) এ সব কাফির জনতার জন্য ধ্বংস । 100

তিনি বলেছিলেন : তিনটি নিদর্শনের মধ্যে মহামুক্তির জন্য প্রতীক্ষা করো । তাঁকে তখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল : হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ নিদর্শনগুলো কি ? তিনি বলেছিলেন : শামবাসীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ ,খোরাসান থেকে কালো পতাকাসমূহ উত্তোলিত হওয়া এবং রমযান মাসে আসমান থেকে গায়েবী আওয়াজ । তাঁকে প্রশ্ন করা হলো : রমযান মাসে ঐ আসমানী গায়েবী আওয়াজটি কি ? তখন তিনি বলেছিলেন : তোমরা কি পবিত্র কোরআনে যদি আমরা চাই আসমান থেকে তাদের ওপর এমন কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করব যার সামনে সবাই আত্মসমর্পণ করবে 101 -এ আয়াতটি সম্পর্কে শুননি ?তা হবে এমন এক নিদর্শন যা যুবতীকে তাঁবু থেকে বের করে আনবে ,ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করবে এবং জাগ্রতকে ভীত-সন্ত্রস্ত করবে । 102

অবশ্য উপরিউক্ত নিদর্শনত্রয়ের মধ্য থেকে দু টি নিদর্শন ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে । একটি হচ্ছে শামবাসীদের আন্তঃবিভক্তি ও মতবিরোধ এবং অন্যটি হচ্ছে খোরাসান হতে কালো পতাকাসমূহের আবির্ভাব । তবে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) শামবাসীদের মতবিরোধের সূত্রপাত কবে হবে এবং রমযান মাসে আসমানী গায়েবী আওয়াজ পর্যন্ত কালো পতাকাসমূহের আবির্ভাবের সময়কাল সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি এবং তা বহু বছর দীর্ঘায়িত হতে পারে ।

রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,আবির্ভাবের বছরেই আসমানী গায়েবী আহবান জানানো হবে যার পরবর্তী মুহররম মাসে ইমাম মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হবেন ।

মহানবী (সা.) বলেছেন : মাহ্দীর আবির্ভাবের আগে একটি ফিতনার উদ্ভব হবে যা জনগণকে তীব্রভাবে আক্রান্ত করবে । অতঃপর এমন যেন না হয় যে ,তোমরা শামবাসীদেরকে গালি দেবে । কারণ ঐ দেশে প্রকৃত মুমিনগণও আছে ;বরং তাদের মধ্যকার অত্যাচারীদেরকে অভিশাপ দাও । আর মহান আল্লাহ্ শীঘ্রই আকাশ থেকে এমন ভাগ্য ও ফয়সালা প্রেরণ করবেন যার মাধ্যমে তিনি তাদেরকে (অত্যাচারীদের) এমনভাবে ছত্রভঙ্গ করে দেবেন যে ,শৃগালও তাদের ওপর আক্রমণ করে জয়ী হতে পারবে । তখন মহান আল্লাহ্ মাহ্দীকে ন্যূনতম বারো হাজার এবং সর্বোচ্চ পনর হাজার ব্যক্তির মাঝে আবির্ভূত করবেন এবং যাদের মুখে উচ্চারিত বাক্য বা সামরিক স্লোগান হত্যা করুন , হত্যা করুন হবে তাদের নিদর্শন । তারা পতাকাধারী তিনটি দল হবে যাদের সাথে সাত পতাকার সমর্থকগণ যুদ্ধ করবে । ঐ সাত দলের মধ্যে এমন কোন পতাকাধারী থাকবে না যার মধ্যে শাসনক্ষমতা ও নেতৃত্বের লোভ থাকবে না । তখন মাহ্দী আবির্ভূত হবে এবং মুসলমানদের কাছে তাদের দয়া-মায়া ,ভালোবাসা ,বন্ধুত্ব ও নেয়ামতসমূহ পুনঃপ্রত্যাবর্তন করাবে । 103

আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : মহান আল্লাহ্ শামবাসীদের ওপর এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করবে ,এমনকি শৃগালরাও তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদের ওপর বিজয়ী হবে । এমন সময় আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি পতাকাবাহী তিন গোষ্ঠীসহ আবির্ভূত হবে... । 104

আবদাল শব্দের অর্থ প্রকৃত-সত্যবাদী মুমিনরা । এ শব্দটি মহানবী (সা.)-এর হাদীসে ব্যবহৃত হয়েছে । আর এ শব্দের অর্থের বিশদ ব্যাখ্যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীদের কথা উল্লেখ করার সময় দেয়া হবে ।

অরেকটি রেওয়ায়েতে কাযা ও কদর অর্থাৎ ভাগ্য ও ফয়সালার পরিবর্তে সাবাব (কারণ) শব্দটি এসেছে । আর এর অর্থ হচ্ছে এই যে ,মহান আল্লাহ্ শামবাসীদের ওপর এমন কোন ব্যক্তিকে কর্তৃত্বশীল করে দেবেন যে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করবে অর্থাৎ এমন কিছু লোককে তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবেন যারা তাদের ঐক্যে ফাটল ধরাবে এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণ হবে ।

হত্যা করুন , হত্যা করুন অথবা হে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হত্যা করুন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কতিপয় সঙ্গীর সামরিক স্লোগান হবে ।

পতাকাবাহী তিনটি দল - এর অর্থ : ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীরা তিনটি দলে বিভক্ত হবেন । সাত নেতার সমর্থকরা ইমাম মাহ্দী ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একে অপরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবে । যেহেতু এদের সকলেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও নেতৃত্বের লোভী হবে ,সেহেতু তাদের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা দেবে । তবে এ মতভেদ সুফিয়ানী যে তাদের সকলের নেতা হবে এ ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না । কারণ ইরাক ও হিজাযে সামরিক আক্রমণ এবং তার সেনাবাহিনীর পরাজয় বরণ করার কারণে তার সরকার ও প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়বে । আর এর ফলে তার ক্ষমতালোভী সঙ্গী-সাথী ও বিরোধীদের জন্য ক্ষমতা দখল করার প্রস্তুতি নেয়ার এক দুর্লভ সুযোগের সৃষ্টি হবে । অথচ তারা তখন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে ।

শামের ওপর পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ এবং খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গে বেশ কিছু রেওয়ায়েত বিদ্যমান আছে । উল্লেখ্য যে ,সেখানকার জনগণ অনির্দিষ্ট কালের জন্য উক্ত দুর্ভিক্ষ ,খাদ্য-সংকট ও অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার হবে । আর এটিই স্বাভাবিক যে ,এ সংকট বহিস্থঃ ও অভ্যন্তরীণ ফিতনার সহযোগী হবে এবং মুসলমানদেরকে চাপের মধ্যে রাখার জন্য এটি হবে একটি হাতিয়ারস্বরূপ ।

কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করবে ।

মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : অনতিবিলম্বে শামের জনগণের (সিরিয়া ,জর্ডান ,লেবানন ও ফিলিস্তিন) দীনার (অর্থ-সম্পদ) ও খাদ্যভাণ্ডার ফুরিয়ে যাবে । আমি জিজ্ঞাসা করলাম : এটা কিভাবে ঘটবে ?তিনি বললেন : রোমানদের (পাশ্চাত্য) পক্ষ থেকে । অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন : আখেরী যামানায় একজন খলীফা (শাসক) আসবে যে জনগণকে কম ধন-সম্পদ প্রদান করবে এবং তা গণনায় আনবে না । 105

এ অর্থনৈতিক চাপ ও খাদ্য-সংকটের উদ্গাতা হবে রোমানরা ।

জাবির জু ফী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম বাকির (আ.)-কে নিশ্চয়ই আমরা ভয়-ভীতি ও ক্ষুধার মতো বেশ কিছু বিষয় দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করব -মহান আল্লাহর এ বাণীর ব্যাপারে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন : ক্ষুধা দু ধরনের । যথা : সাধারণ ও বিশেষ । তবে কুফায় ক্ষুধা হবে বিশেষ ধরনের যা মহান আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের শত্রুদের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারণ করবেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করবেন ;তবে শামে সাধারণ ব্যাপক ক্ষুধার প্রাদুর্ভাব হবে । আর তা হবে এমন এক ভয়-ভীতি ও ক্ষুধা যে ,ঐ সময় পর্যন্ত তারা কখনই এর শিকার হয় নি । তবে ক্ষুধা কায়েম আল মাহ্দীর উত্থান ও আবির্ভাবের আগে এবং ভয়-ভীতি ও অস্থিরতা তার উত্থান ও আবির্ভাবের পরে হবে । 106

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন : আল কায়েম আল মাহ্দীর উত্থান ও আবির্ভাবের আগে নিশ্চিতভাবে এক বছরের জন্য জনগণ দুর্ভিক্ষ কবলিত হবে এবং তাদের মধ্যে নিহত হওয়া ,জান-মাল ,ফল ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তীব্র ভয়-ভীতি বিরাজ করবে । আর এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট পরিদৃষ্ট হয় । তখন তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন : নিশ্চয়ই আমরা তোমাদেরকে বেশ কিছু জিনিস ,যেমন ভয়-ভীতি ,ক্ষুধা ,ধন-সম্পদ ,প্রাণ ,শস্য ও ফল-মূলের ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে পরীক্ষা করব এবং ধৈর্যশীলদেরকে আপনি সুসংবাদ দিন 107

এ রেওয়ায়েত অনুসারে আবির্ভাবের বছরই এ চাপ ও সংকীর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হবে । এ সংকট ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বেশ কিছুকাল পূর্ব হতে শুরু হয়ে আবির্ভাবের বছরে অতীতের চেয়ে আরো তীব্র আকার ধারণ করবে এবং এর পরপরই তিনি আবির্ভূত হবেন । তাই পূর্বোক্ত বর্ণনা এ বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক নয় ।

কিন্তু রেওয়ায়েতসমূহে শামে এ ফিতনার সময়কাল দীর্ঘ হওয়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে । যখনই বলা হবে যে ,ফিতনা শেষ হয়ে গেছে ,তখনই তা দীর্ঘায়িত হবে । তারা এ থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে । পরিত্রান পাওয়ার পথ খুঁজে বের করতে চাইবে ,কিন্তু তা তারা পাবে না । 108

আর রেওয়ায়েতসমূহ এ ফিতনাকে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের ফিতনার উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ সমেত উল্লেখ করেছে যা সকল আরব ও মুসলমানের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করবে এবং যখনই এক দিক থেকে এর সংস্কার করা হবে তখনই তা অন্য দিক থেকে গোলযোগের উদ্ভব হবে । 109

যতক্ষণ পর্যন্ত বৃহত্তর ফিতনার কোন একটি ফলাফল বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ এগুলোই হবে পূর্বোক্ত ফিতনার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ;অর্থাৎ উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ এই ফিতনার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য যা বহিরারোপিত বৃহত্তর ফিতনাসমূহের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াস্বরূপ... বরং কতিপয় রেওয়ায়েতে এ ফিতনাকে ফিলিস্তিনের ফিতনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন : ইতোমধ্যে ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে (পৃ. 63) এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ।

কতিপয় হাদীসে এ ফিতনার সময়কাল 12 ও 18 বছর বলে সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে । এ সময়কাল সম্ভবত ফিতনার সর্বশেষ পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকবে । তবে তা এর সার্বিক সময়কাল হবে না ।

আর আমরা আশাবাদী যে ,এটি হচ্ছে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সর্বশেষ সময়কাল । 110

সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন : শামে একটি ফিতনা সৃষ্টি হবে যা শুরুতে শিশুদের খেলাসদৃশ হবে ,কিন্তু এরপর থেকে তাদের সার্বিক অবস্থার কোন উন্নতি হবে না । আকাশ থেকে একজন আহবানকারী উচ্চৈঃস্বরে আহবান ও ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাদের আর কোন ক্ষমতা থাকবে না । আহবানকারী ঘোষণা করবে : তোমাদের উচিত অমুকের অনুবর্তী হওয়া এবং ঐ অবস্থায় একটি হাত আসমানে দেখা যাবে এবং ইঙ্গিত করতে থাকবে । 111

উল্লিখিত আসমানী আহবান-ধ্বনিতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নাম ঘোষণা করা হবে ঠিক একইভাবে যে হাত আকাশ থেকে ইঙ্গিত করবে সেটিও ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের অন্যতম নিদর্শন হবে ।

মহানবী (সা.) থেকে আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : চতুর্থ ফিতনা 18 বছর স্থায়ী হবে এবং যথাসময়ে তা সমাপ্ত হবে । ফোরাত নদী থেকে একটি স্বর্ণ-পর্বত নির্গত হবে । এর ফলে মানুষ এমনভাবে এ স্থানের ওপর আক্রমণ চালাবে যে ,তাদের প্রতি 9 জনের মধ্যে 7 জন নিহত হবে । 112 আর শীঘ্রই ফোরাতের গুপ্তধনকে কেন্দ্র করে কিরকীসীয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ।

দামেশক ও এর আশেপাশে ভূমিকম্প

এ ভূমিকম্প সংক্রান্ত অগণিত স্পষ্ট রেওয়ায়েত বিদ্যমান । এগুলোর মধ্যে গুটিকতক রেওয়ায়েতে পাশ্চাত্য বাহিনীর আগমনের আগেই যে এ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে তা স্পষ্ট বিধৃত হয়েছে । যদিও কতিপয় রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,ভূমিকম্প সংঘটিত হবার সময় পাশ্চাত্য বাহিনী দামেশকে উপস্থিত থাকবে । ঠিক একইভাবে হাদীসসমূহে এ ভূমিকম্পকে আর-রাজফাহ্ ,আল খাসাফ এবং আয-যালযালাহ্ অর্থাৎ তীব্র ঝাঁকুনি ,ভূমিধ্বস ও ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া এবং কম্পন বলে উল্লিখিত হয়েছে । যেমন ইমাম বাকির (আ.) আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন :

যখন শামদেশে দুই সেনাবাহিনী পরস্পর দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে তখন সেখানে মহান আল্লাহর একটি নিদর্শন প্রকাশিত হবে । তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো : হে আমীরুল মুমিনীন ঐ নিদর্শনটি কী ?তখন তিনি বললেন : শামদেশে একটি ভূমিকম্প হবে যার ফলে এক লক্ষ লোক নিহত হবে এবং এ ভূমিকম্পকে মহান আল্লাহ্ মুমিনদের জন্য রহমত এবং কাফিরদের জন্য আযাব করে দেবেন । যখন এ ভূমিকম্পের সময় ঘনিয়ে আসবে তখন তোমরা মাগরিব (মরক্কো ,আলজেরিয়া ,লিবিয়া ও তিউনিসিয়া) থেকে হলুদ পতাকাবাহী শ্বেত অশ্বারোহী সেনাদলকে শামে প্রবেশ করতে দেখবে । আর ঠিক তখনই আর্তনাদ ,ভয়ঙ্কর অশান্তি এবং লাল মৃত্যু (হত্যাকাণ্ড) ঘনিয়ে আসবে । যখন এ অবস্থার উদ্ভব হবে তখন হারশা (অন্যান্য পাণ্ডুলিপিতে খারীশা মারমারাস্তা) নামক দামেশকের একটি গ্রাম্য জনপদ ভূ-গর্ভে প্রোথিত হতে দেখবে । ঠিক এ সময় কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দের বংশধর সুফিয়ানী মরু এলাকা থেকে বিদ্রোহ করবে এবং দামেশকের মিম্বারে আরোহণ করবে । আর এ যুগ সন্ধিক্ষণে তোমরা সবাই মাহ্দীর আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে । 113

এ রেওয়ায়েত ও অন্যান্য রেওয়ায়েতে উল্লিখিত ভূমিকম্পটি দামেশক ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া থেকে ভিন্ন হতে পারে এবং ঐ দুই ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়ার মধ্যে দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যবধানও থাকতে পারে । তবে ঐ ভূমিকম্প কেন মুমিনদের জন্য রহমত  এবং কাফিরদের জন্য আযাব হবে ?এর কারণ এটি হতে পারে যে ,নির্যাতিত মুমিনরা নয় ;বরং কাফিরদের এবং তাদের অনুসারীদের ঘর-বাড়িসমূহই ক্ষতিগ্রস্ত হবে । অথবা এ ভূমিকম্পের বদৌলতে এর পরপরই মুমিনদের অনুকূলে বেশ কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধিত হবে ।

অন্যান্য রেওয়ায়েতসমূহে দু টি স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । উক্ত স্থানদ্বয়ে ভূমিধ্বস সংঘটিত হবে । এ স্থানদ্বয়ের নাম হারাসতা এবং জাবিয়াহ্ । তাই মনে হচ্ছে যে ,পাশ্চাত্য সেনাবাহিনীসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে যেমন বর্ণিত হবে ঠিক তদ্রূপ এ রেওয়ায়েতে হারাসতা শব্দটি ভুল উচ্চরিত হয়েছে । আর দামেশকের মসজিদের পশ্চিম দেয়ালটি ধ্বংস হবে ।

শ্বেত অশ্বসমূহের অর্থ হচ্ছে পাশ্চাত্যবাসীদের অশ্বসমূহ যেগুলোর কান কর্তিত হবে । আর এ সব অশ্ব হবে পাশ্চাত্য সৈন্যদের বাহন ।

কলিজা ভক্ষণকারিণীর বংশধরদের অর্থ আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দের বংশধর । কারণ সুফিয়ানী মুয়াবিয়ার বংশধর হবে । আর এ বিষয়টি পরে বর্ণিত হবে । একটি রেওয়ায়েতে ওয়াদী ইয়াবিস (শুষ্ক মরু এলাকা বা উপত্যকা) থেকে সুফিয়ানীর উত্থান হবে বলা হয়েছে । আর উক্ত অঞ্চলটি সিরিয়া-জর্দান সীমান্তে আযরুআতের (দিরআ) কাছে হাবওরান এলাকায় অবস্থিত ।

শামে ইরানী ও মাগরিবী সেনাবাহিনীর আগমন

শামে মাগরিবী সেনাবাহিনীসমূহের আগমন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ সুস্পষ্ট । দু টি গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র যুদ্ধের পরপরই তাদের আগমন হবে । যেমন পূর্বে বর্ণিত সেই রেওয়ায়েতটি ।

যখন শামে দু টি সামরিক গোষ্ঠী সংঘর্ষে লিপ্ত হবে তখন মহান আল্লাহর একটি নিদর্শন প্রকাশিত হবে । জিজ্ঞাসা করা হলো : হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ নিদর্শনটি কী হবে ?তিনি বলেছিলেন : শামে একটি ভূমিকম্প হবে যার ফলে এক লক্ষ লোকের প্রাণহানি হবে । আর মহান আল্লাহ্ এ ভূমিকম্পটি মুমিনদের জন্য রহমত এবং কাফিরদের জন্য আযাব করে দেবেন । যখন ঐ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসবে তখন তোমরা হলুদ পতাকাবাহী শ্বেত অশ্বারোহীদেরকে দেখতে পাবে যে ,তারা মাগরিব বা পশ্চিম থেকে এসে শামে প্রবেশ করবে ।

ইবনে হাম্মাদ আবু সাহাব থেকে রেওয়ায়েত করেছেন ,তিনি হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের যুগে বলতেন :  তোমাদের কাছে মাগরিবীদের আগমন ব্যতীত তোমরা সুফিয়ানীকে দেখতে পাবে না । যখনই তোমরা দেখবে যে ,সে বিদ্রোহ করেছে এবং (বক্তৃতা দেয়ার জন্য) দামেশকের মিম্বারে আরোহণ করেছ তখন তোমরা অনতিবিলম্বে মাগরিবীদেরকে দেখতে পাবে ।

এ ধরনের রেওয়ায়েতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,তাবেয়ী রাবীদের কাছে এটি প্রসিদ্ধ ছিল যে ,সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান ও বিদ্রোহের আগেই শামে মাগরিবী সেনাবাহিনীর আগমন হবে ।

এ সব হাদীসে মাগরিব ও মাগরিবীর অর্থ হচ্ছে আল মাগরিব নামে মুসলিম বিশ্বের একটি অঞ্চল যার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বর্তমান কালের লিবিয়া ,তিউনিসিয়া ,আলজেরিয়া ও মরক্কো । এর উদ্দেশ্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো অথবা মরক্কো নামে পরিচিত মাগরিব সরকারের সেনাবাহিনী নয় । আমাদের এ বক্তব্য যে জিনিসটি সমর্থন করে তা হচ্ছে ,কিছু কিছু রেওয়ায়েতে মাগরিবী বাহিনীকে (পশ্চিমাঞ্চলীয়) বার্বার জাতি ও বার্বার বাহিনী বলে অভিহিত করা হয়েছে ।

আরেকটি রেওয়ায়েতে উক্ত মাগরিবী সেনাবাহিনীর আগমনের সূচনাকাল সুস্পষ্ট করে নির্ধারণ করা হয়েছে । অর্থাৎ মাগরিবী বাহিনীর আগমন ভূমিকম্প ও ভূমিধ্বসের সমসাময়িক হবে । মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াহ্ থেকে ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন : মাগরিবী সেনাবাহিনীর প্রথম দলগুলো দামেশকের মসজিদে আগমন করে যখন এর আশ্চর্যজনক দর্শনীয় বস্তুসমূহ দেখতে থাকবে তখন হঠাৎ ভূমিধ্বস হয়ে দামেশক-মসজিদের পশ্চিমাংশ এবং হারাসতা নামের একটি গ্রাম ভূ-গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে । আর এ সময় সুফিয়ানীর উত্থান হবে এবং সে বিদ্রোহ করবে । 114

তবে এ বাহিনী কেন আসবে এবং তাদের ভূমিকা কী হবে ?বহিঃশত্রু অর্থাৎ ইহুদী ও রোমানদের বিরুদ্ধে শামদেশের জনগণকে সাহায্য করার জন্য অথবা শাম দেশস্থ কোন বিবাদমান পক্ষকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে হয়তো বা তাদের আগমন হতে পারে । তবে কতিপয় রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী খোরাসানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তারা শামে আগমন করবে । উল্লেখ্য যে ,খোরাসানী বাহিনী মাগরিবী বাহিনীর আগেই শামে প্রবেশ করবে । ... যেহেতু সকল রেওয়ায়েত অনুযায়ী কালো পতাকাবাহী খোরাসানী সেনাদলের লক্ষ্যই হবে আল কুদ্স (বাইতুল মুকাদ্দাস) সেহেতু তাদের বিরোধী মাগরিবী সেনাবাহিনীদের আগমন অনিবার্য হবে এ কারণে যে ,তারা খোরাসানী বাহিনীর অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে । বিশেষ করে যে রেওয়ায়েতে কুনাইতারায় উক্ত বাহিনীদ্বয়ের মধ্যকার যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই রেওয়ায়েতটি বিবেচনায় আনলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,কুনাইতারা সিরিয়ার একটি শহর যা ইসরাইলের দখলে রয়েছে ।

যুহরী থেকে ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন : ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার জন্য কুনাইতারায় কালো পতাকাবাহী খোরাসানী বাহিনী এবং হলুদ পতাকাবাহী মাগরিবী বাহিনী পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । আর যখনই মাগরিবীরা জর্দানে আগমন করবে ঠিক তখনই খোরাসানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সুফিয়ানী সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে । মাগরিবী বাহিনীর প্রধান মৃত্যুবরণ করলে তারা তিন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে । এদের একটি দল তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করবে । আরেক দল হজ্বব্রত পালন করবে এবং তৃতীয় দলটি শামে থেকে যাবে । সুফিয়ানী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তাদেরকে পরাজিত করে নিজের আজ্ঞাবহ করবে । 115

এ রেওয়ায়েতটি মুরসাল 116 যা একজন তাবেয়ী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে । এ থেকে বোঝা যায় যে ,শামদেশে ফিতনা ও সংঘর্ষ ইরানী সেনাবাহিনীকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অত্র অঞ্চলে সামরিক হস্তক্ষেপ করার সুযোগ এনে দেবে । তবে রোমীয় (পাশ্চাত্য) ও অরোমীয়রা ইরানীদের মোকাবিলা করার জন্য মাগরিবী সেনাবাহিনীকে অত্র অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করবে । আর এ যুদ্ধের স্থান হবে কুনাইতারা নগরী । অবশেষে ইরানী বাহিনী ফিলিস্তিনে উপস্থিত হয়ে যে মাগরিবী বাহিনী পরাজয় বরণের পরপরই পালিয়ে গিয়ে জর্দানে অবস্থান গ্রহণ করবে তাদেরকে ধ্বংস করবে । ঐ সময় মাগরিবে এ সেনাবাহিনীর প্রধান অথবা মাগরিবী বাহিনীর আশ্রয়দানকারী জর্দানের শাসনকর্তার মৃত্যু হবে । এর ফলে তাদের সকল কর্মতৎপরতা দুর্বল হয়ে পড়বে । আর ঠিক তখনই সুফিয়ানী মাগরিবী বাহিনীর অবশিষ্টাংশকে বশীভূত করে ফেলবে । যেমন কতিপয় রেওয়ায়েতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে শামে সুফিয়ানীর আবির্ভাবের পর ইরানী সেনাবাহিনী শামদেশ থেকে পশ্চাদপসরণ করবে ।

আমরা একটি ব্যাপারে সম্মানিত পাঠক ও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই । আর তা হলো যে ,এ ক্ষেত্রে এবং আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে মাগরিবী সেনাবাহিনী এবং কালো পতাকাবাহী ইরানী সেনাবাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ মাগরিবে ফাতিমীয়দের আন্দোলন এবং আব্বাসীয় কালো পতাকাবাহীদের অভ্যুত্থান ও বিপ্লব সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের সাথে মিশ্রিত হয়ে রয়েছে । ঠিক একইভাবে রোমানদের (পাশ্চাত্য) সাথে সম্পর্কিত রেওয়ায়েতসমূহ ইউরোপীয় ক্রুসেড যোদ্ধাদের আক্রমণ এবং তাদের সর্বশেষ মূক-বধির ফিতনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের সাথে মিশে গেছে । তাই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব-পূর্ব আন্দোলন ,বিপ্লব অভিযান ও অভ্যুত্থানসমূহ এবং তাঁর আবির্ভাবের সাথে যুক্ত আন্দোলন ,বিপ্লব অভিযান ও অভ্যুত্থানসমূহের মধ্যে পার্থক্য শনাক্তকরণের উপায় হচ্ছে এই যে ,সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও অভ্যুত্থান এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সাথে যে সব ঘটনা যুক্ত তা স্পষ্ট করে রেওয়ায়েতসমূহে উল্লিখিত হয়েছে । ঠিক একইভাবে আমরা যে সব রেওয়ায়েত সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করেছি সে সব রেওয়ায়েতে অথবা আবির্ভাবের যুগ ও এর ঘটনাবলী এবং সে যুগে প্রভাবশালী শক্তিসমূহের তৎপরতার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নিদর্শন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহেও এ বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে ।

এ কারণেই আবির্ভাব সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মাঝে অগণিত রেওয়ায়েত বিদ্যমান যেগুলো মাগরিবী ফাতিমীয়দের অথবা কালো পতাকাবাহী আব্বাসীয়দের অভ্যুত্থান ও আন্দোলন অথবা ইউরোপীয় ক্রুসেড যোদ্ধা ও সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী পাশ্চাত্যের সামরিক অভিযানসমূহের সাথে সম্পর্কিত । আর যে পর্যন্ত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে এ ধরনের অভ্যুত্থান ,আন্দোলন ও অভিযানসমূহের অস্তিত্বের সহায়ক ও প্রমাণস্বরূপ কোন রেওয়ায়েত বা দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান থাকবে ,ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্বোল্লিখিত ঐ সব হাদীসকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে তাদের অভ্যুত্থান ,আন্দোলন ও অভিযানসমূহ বাতিল করে দেয়ার দলিল বলে গণ্য করা ঠিক হবে না ।