শামদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে আসহাব ও আবকার মধ্যে দ্বন্দ্ব
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
ঐ বছরে পাশ্চাত্যের দিক থেকে সকল দেশ ও অঞ্চলে তীব্র মতভেদ ও বিরোধ দেখা দেবে
।
সর্বপ্রথম যে দেশ ধ্বংস হবে তা হচ্ছে শাম
।
সেখানে তিন ধরনের পাতাকার সমর্থকরা অর্থাৎ আসহাব
,আবকা এবং সুফিয়ানীর বাহিনী পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে
।
”
মনে হচ্ছে যে
,প্রশাসক আবকা (ঐ ব্যক্তিকে আবকা বলা হয় যার মুখমণ্ডলে সাদা-কালো দাগ আছে) শামদেশ শাসন করার ক্ষেত্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আসহাবের (অর্থাৎ হলুদ বর্ণের মুখ-মণ্ডলের অধিকারী) আগেই (সেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়) অধিষ্ঠিত থাকতে পারে
।
কারণ রেওয়ায়েতসমূহ থেকে জানা যায় যে
,আসহাবের উত্থান ও আন্দোলন রাজধানীর বাইরে থেকে হবে
।
আর সে রাজধানীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে গিয়ে পরাজিত হবে
,অথচ আবকা হবে আসল শক্তিধর বা এমন এক বিপ্লবী যে বেশ খানিকটা বিজয়ী হবে এবং আসহাব তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং রাজধানীর বাইরে থেকে তার ওপর আক্রমণ করবে
;কিন্তু আবকা ও আসহাব কেউই তাদের প্রতিপক্ষের ওপর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করতে পারবে না
।
আর এ কারণেই সুফিয়ানী এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে রাজধানীর বাইরে বিদ্রোহ করবে এবং তাদের দু
’
জনকেই পরাস্ত করবে
।
সম্ভবত আসহাব অমুসলিমও হতে পারে
।
কারণ কতিপয় রেওয়ায়েতে তাকে
‘
ইলজ
’
বলা হয়েছে যে শব্দটি সাধারণত কাফিরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
।
যেমনটি মনে হয় তদনুযায়ী নূমানীর
‘
গাইবাত
’
গ্রন্থের মতো প্রথম সারির হাদীস গ্রন্থসমূহে যে মারওয়ানের কথা উল্লিখিত হয়েছে সে-ই হবে আবকা তবে কোন শাসনকর্তাই সুফিয়ানীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে গণ্য হবে না
।
অবশ্য যে সব রেওয়ায়েতে আবকা ও আসহাবের নিন্দা ও ভর্ৎসনা করা হয়েছে সেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,তারা আসলে ইসলামবিরোধী ও কাফিরদের সমর্থক হবে
।
পরবর্তী রেওয়ায়েতটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,আসহাব রুশদের সমর্থক হবে
।
“
যখন ঐ কাফির (আসহাব) আবির্ভূত হবে এবং রাজধানীতে তার অবস্থান তার জন্য কঠিন হবে তখন অনতিবিলম্বে সে নিহত হবে এবং তারপর তুর্কীরা ঐ সরকার ও প্রশাসনের কর্ণধার হয়ে যাবে
।
”
যদি এ রেওয়ায়েতটি সহীহ হয় তাহলে পাশ্চাত্য সমর্থক আবকার দুর্বল হওয়ার কারণে অল্প সময়ের জন্য জনগণ প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে তাদের ওপর বিজয়ী হবে
।
অতঃপর পাশ্চাত্য ও ইহুদীরা মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশ ও অঞ্চলের ওপর নিজেদের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের মিত্র সুফিয়ানীর পক্ষে ব্যাপক পরিকল্পনা ও কর্মসূচী গ্রহণ করবে যা আমরা পরে উল্লেখ করব
।
অতএব
,রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত শামে দু
’
টি সামরিক গোষ্ঠীর মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব
,সংঘাত ও মতবিরোধের অর্থ রোমান (পাশ্চাত্য) ও তুর্কীদের (রুশদের) প্রতিনিধিত্বকারী দু
’
নেতার মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ
।
এর ফলে তাদের মাঝে অত্র অঞ্চলের ওপর প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করাকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘাতের উদ্ভব হবে
।
আর তা এভাবে ঘটবে যে
,তারা সেখানে নিজ নিজ সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে যার ফলে যুদ্ধ বেধে যাবে
।
ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদীসটিতে তিনি কুফার অধিবাসী জাবির জু
’
ফীকে বলেছেন :
“
সবসময় নিজ স্থানে অবস্থান করবে এবং যে সব নিদর্শন আমি তোমার কাছে বর্ণনা করব সেগুলো না দেখা পর্যন্ত হাত-পা নড়াবে না (অর্থাৎ নিজ স্থানের বাইরে যাবে না)
।
সেগুলো হলো : অমুক বংশের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব
,আসমান হতে একজন গায়েবী আহবানকারীর আহবান ও বাণী প্রদান
-এ বাণী বা ধ্বনি দামেশকের দিক থেকে শোনা যাবে এবং মাহ্দীর আবির্ভাবের সুসংবাদ প্রদান করবে
,শামের একটি জনপদ ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া যার নাম হবে জাবিয়াহ্
,তুর্কীদের সমর্থকদের আগমন ও জাযীরায় তাদের অবতরণ এবং রামাল্লায় রোমের বিদ্রোহীদের অবস্থান গ্রহণ
;ঐ বছর পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উদ্ভব হবে
।
আর সর্বপ্রথম যে
,দেশটি ধ্বংস হবে তা
‘
শাম
’
এবং সেখানে তিন সেনাবাহিনী অর্থাৎ আসহাব
,আবকা ও সুফিয়ানী বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উদ্ভব হবে
।
”
অমুক বংশের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধের অর্থ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে হিজাযে ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যকার মতবিরোধ
।
আর আপনারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব-আন্দোলনের অধ্যায়ে এ ব্যাপারে অধিক অবগত হবেন
।
দামেশকের দিক থেকে যে আহবানধ্বনি শোনা যাবে তা হবে ঐ আসমানী বাণী যে ব্যাপারে জনগণ মনে করবে যে
,তা শাম অথবা পশ্চিম দিক থেকে আসছে ও শোনা যাচ্ছে
।
অথবা তা ইরাকের জনগণের কাছে ঠিক এমনই মনে হবে
।
কারণ জাবির আল জু
’
ফী আল কুফীর সাথে ইমাম বাকির (আ.) এ ব্যাপারেই আলাপ করেছিলেন
।
তখন তিনি বলেছিলেন :
“
ঐ ধ্বনি দামেশকের দিক থেকে শোনা যাবে
।
”
এ রেওয়ায়েতে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে
‘
তুর্কীদের সমর্থকরা
’
এবং
‘
রোমের ধর্মদ্রোহীরা
’
-বাক্যাংশের ব্যবহার যা তুর্কীদের অর্থ যে রুশজাতি হয় তা সমর্থন করে
।
আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে :
“
তুর্কীদের পক্ষ থেকে একদল বিদ্রোহী আত্মপ্রকাশ করবে এবং তাদের পরপরই রোমের ফিতনা দেখা দেবে...
।
”
এ ধরনের ধর্মত্যাগীরা যে তুর্কদের (রুশজাতি) পক্ষ থেকে বের হবে তা উক্ত রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে
।
খুবই স্পষ্ট যে
,আবকা ও আসহাবের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং এ যুগসন্ধিক্ষণে শামের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে যে সব রেওয়ায়েত আছে সেগুলো এবং সুফিয়ানী ও ঐ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও শামে মাগরিবী ও ইরানী সেনাবাহিনীদ্বয়ের উপস্থিতি সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ যে কেউ অধ্যয়ন করবে সে উপলব্ধি করতে পারবে যে
,পরাশক্তিসমূহের গতিবিধি
,কর্মকাণ্ড
,তাদের মধ্যকার বিরোধ
,তাদের বশংবদ শাসকগোষ্ঠীর মতবিরোধ এবং তাদের মোকাবিলায় মুসলিম উম্মার প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে এ সব ঘটনার একটি শক্তিশালী সম্পর্ক বিদ্যমান
।
এখন আমরা এমন একটি রেওয়ায়েতের দিকে ইঙ্গিত করব যা শামে পরস্পর বিবদমান তিন গোষ্ঠীর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে
।
এ তিনটি গোষ্ঠী হচ্ছে হাসানী বাহিনী
,উমাইয়্যা বাহিনী এবং কাইসের বাহিনী
।
সুফিয়ানী এসে তাদেরকে পরাজিত করবে
।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি বর্ণিত হয়েছে :
“
হে সুদাইর! বিছানো কার্পেটের মতো সবসময় ঘরে বসে থাকবে এবং রাত-দিন নিজ গৃহে চুপচাপ অবস্থান করবে
।
যখনই সুফিয়ানী আবির্ভূত হবে তখন এমনকি পায়ে হেঁটে হলেও আমাদের দিকে হিজরত করবে
।
”
আমি বললাম : আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হই
।
এ ঘটনার আগে কি আর কিছু আছে
?”
তিনি বললেন :
“
হ্যাঁ
।
”
আর তিনি হাতের তিন আঙ্গুল দিয়ে শামের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন :
“
শামে তিন ধরনের পতাকাবাহী সেনাদল হাসানী সেনাবাহিনী
,উমাইয়্যা বাহিনী এবং কাইসের বাহিনী একে অপরের সাথে সংঘাতে লিপ্ত থাকবে
।
হঠাৎ করে সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও অভ্যুত্থান হবে এবং সে তাদেরকে শস্যক্ষেত্রের ফসল মাড়াই করার মতো কর্তন করবে যার নজীর আমি কখনই দেখিনি
।
”
এ রেওয়ায়েতটি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে
।
কারণ যে অগণিত রেওয়ায়েতে শামে বিবদমান প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীত্রয়কে আবকা
,আসহাব ও সুফিয়ানী সাথে জড়িত করে উল্লেখ করা হয়েছে এটি সেগুলোর পরিপন্থী
।
অধিকন্তু আল্লামা কুলাইনী
‘
আল কাফী
’
গ্রন্থের 8ম খণ্ডের 264 পৃষ্ঠায় এ রেওয়ায়েতটি কেবল
‘
এমনকি পায়ে হেঁটে হলেও
’
পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন
।
সর্বশেষ এ অংশটি কতিপয় রাবীর পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা অথবা সংযোজিত হয়ে থাকার সম্ভাবনাও বিদ্যমান
।
আর এ বাড়তি অংশ মূল রেওয়ায়েতের সাথে মিশে গেছে
।
আর রেওয়ায়েতটিকে সহীহ বলে ধরে নিলে হাসানীর পতাকা অবশ্যই হুসাইনীর সাথে ভুল করে লেখা বা বলা হয়েছে যা হবে খোরাসানীদের পতাকা অর্থাৎ কালো পতাকাবাহী সেনাদলের পতাকা
।
আর যেহেতু আগেই আমরা বলেছি যে
,কালো পতাকাবাহী খোরাসানী (ইরানী) সেনাদল শামে মাগরিবী সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে আর আসহাবের পতাকা হবে উমাইয়্যাদের পতাকা এবং কাইসের পতাকা হবে আবকার পতাকা যা বেশ কিছু রেওয়ায়েতে মিশরীয়দের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লিখিত হয়েছে
।
বরং কিছু কিছু রেওয়ায়েতে দেখানো হয়েছে যে
,আবকা তার আন্দোলন ও অভিযান মিশর থেকে শুরু করবে অথবা সে মিশরীয় এবং কাইস গোত্রভুক্ত হবে
।
কিছু কিছু রেওয়ায়েত হতে বোঝা যায় যে
,সুফিয়ানী মিশরের ওপরও আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে
।
আর মহান আল্লাহ্ই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন
।
ঠিক একইভাবে আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে :
“
বনি হাশিমের এক ব্যক্তি শাসন করবেন ও নেতৃত্ব দেবেন এবং তিনি এমনভাবে বনি উমাইয়্যাকে হত্যা করবেন যে
,কেবল অল্প কিছু সংখ্যক ব্যতীত তিনি তাদের আর কাউকে জীবিত রাখবেন না
।
যারা বনি উমাইয়্যার অন্তর্ভুক্ত নয় তাদেরকে তিনি হত্যা করবেন না
।
তখন বনি উমাইয়্যা বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি বিদ্রোহ করবে এবং প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির বদলে দু
’
জন করে হত্যা করবে
।
আর এভাবে কেবল নারীরা ব্যতীত সে আর কোন ব্যক্তিকে জীবিত রাখবে না
।
আর ঠিক এ সময়ই হযরত মাহ্দী (আ.) আত্মপ্রকাশ করবেন
।
”
তবে এ হাশিমী ব্যক্তিটি যিনি সুফিয়ানীর আগে আসবেন তাঁর হুকুমতের আওতাধীন অঞ্চল এ রেওয়ায়েতে নির্দিষ্ট করা হয়নি অর্থাৎ তাঁর শাসনাধীন এলাকা কি হিজায নাকি ইরাক
-এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বিধৃত হয়নি
।
আর রেওয়ায়েতসমূহে যদি তাঁর শাসনাধীন এলাকা শাম হয়ে থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই আবকার আগে আবির্ভূত হবেন
।
কারণ সকল রেওয়ায়েত একমত যে
,সুফিয়ানী আবকা ও আসহাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তাদেরকে হত্যা করবে
।
আর হাদীসসমূহ এ দু
’
ব্যক্তিকে আহলে বাইতের অনুসারীদের শত্রু
বলে উল্লেখ করেছে
।