ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 84981
ডাউনলোড: 10116

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 84981 / ডাউনলোড: 10116
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলন ও বিপ্লবে সুফিয়ানী অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব । সে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ভয়ঙ্কর শত্রু হবে ,যদিও ইমাম প্রকৃতপ্রস্তাবে যে সব কাফির নাস্তিক্যবাদী শক্তি সুফিয়ানীকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে তাদের মুখোমুখি দাঁড়াবেন এবং মোকাবিলা করবেন । সামনে আপনারা এ ব্যাপারে অধিক অবগত হবেন ।

রেওয়ায়েতে স্পষ্ট উল্লেখিত হয়েছে যে ,সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও আন্দোলন মহান আল্লাহর অন্যতম অবধারিত অঙ্গীকার । ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) বলেছেন : আল কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাবের বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী । আর সুফিয়ানীর আবির্ভাবও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্যম্ভাবী । সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও আগমনের পরপরই কেবল মাহ্দী আত্মপ্রকাশ করবে । 122

সুফিয়ানী সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ অর্থগতভাবে মুতাওয়াতির ( تواتر اجمالي ) 123 এবং এগুলোর মধ্যে কয়েকটি রেওয়ায়েত শাব্দিকভাবে মুতাওয়াতির 124 । এখন আমরা তার ব্যক্তিত্ব এবং আন্দোলনের প্রকৃতির একটি চিত্র তুলে ধরব । অতঃপর নিরবচ্ছিন্নভাবে আমরা এতদসংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবে এখানে উল্লেখ করব ।

সুফিয়ানীর জীবনী

মুসলিম মনীষীরা ঐকমত্য পোষণ করেন যে ,আবু সুফিয়ানের সাথে রক্তসম্পর্ক থাকার কারণে তার নাম হবে সুফিয়ানী । একদিকে সে যেমন আবু সুফিয়ানের একজন বংশধর ,তেমনি অন্যদিকে সে কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দেরও সন্তান (বংশধর) । উহুদের যুদ্ধে যখন সাইয়্যেদুশ শুহাদা (শহীদদের নেতা) হযরত হামযাহ্ (রা.) শাহাদাত বরণ করেন তখন এই হিন্দ চরম শত্রুতা ও ঘৃণাবশতঃ হযরত হামযার কলিজা চিবিয়েছিল । আর এ ধরনের নারীর সাথে তার রক্তসম্পর্ক থাকার কারণেই আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন : কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দের বংশধর ওয়াদী ইয়াবিস (শুষ্ক উপত্যকা) থেকে আবির্ভূত হবে ও বিদ্রোহ করবে । সে প্রশস্ত কাঁধবিশিষ্ট ,কুৎসিত চেহারার অধিকারী এক প্রকাণ্ড মাথা বিশিষ্ট পুরুষ হবে । তার মুখমণ্ডলে বসন্তের দাগ থাকবে । যখন তুমি তাকে দেখবে তখন ভাববে যে ,সে এক চোখ বিশিষ্ট । তার নাম হবে ওসমান এবং তার পিতার নাম হবে উয়াইনাহ্ (আরেকটি পাণ্ডুলিপিতে আম্বাসাহ্) । সে হবে আবু সুফিয়ানের বংশধর । শান্ত ও সুমিষ্ট পানির দেশে সে প্রবেশ করবে এবং সেখানকার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেবে । 125

আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে প্রসিদ্ধি আছে যে ,সে আবু সুফিয়ানের পুত্র আম্বাসার বংশধর । আর এ কারণেই তাকে উয়াইনাহ্ বলে গণ্য করা হয়েছে । কারণ রেওয়ায়েতে উয়াইনাহ্ শব্দকে আম্বাসা শব্দের সাথে ভুল করা হয়েছে । শেখ তূসী (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে তাকে আবু সুফিয়ানের পুত্র উতবার বংশধর বলা হয়েছে । 126 উল্লেখ্য যে ,আবু সুফিয়ানের পাঁচ পুত্র ছিল । যথা : উতবাহ্ ,মুয়াবিয়া ,ইয়াযীদ ,আম্বাসাহ্ ও হানযালাহ্ ।

মুয়াবিয়ার কাছে আমীরুল মু মিনীন আলী (আ.)-এর প্রেরিত পত্রে স্পষ্ট উল্লিখিত হয়েছে যে ,সুফিয়ানী মুয়াবিয়ার একজন বংশধর ।

হে মুয়াবিয়া! তোমার একজন বংশধর বদমেজাজী ,অভিশপ্ত ,নির্বোধ ,অত্যাচারী ও রগচটা স্বভাবের হবে । মহান আল্লাহ্ তার হৃদয় থেকে দয়া-মায়া দূর করে দেবেন । তার মামারা হবে রক্ত পিপাসু কুকুরের ন্যায় । যেন আমি এখনই তাকে দেখতে পাচ্ছি । আমি যদি চাইতাম তাহলে তার নাম বলে দিতাম এবং তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলতাম যে ,তার বয়স কত হবে । সে মদীনাভিমুখে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে । তারা মদীনায় প্রবেশ করে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ,রক্তপাত ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে । ঐ সময় একজন পূতঃপবিত্র পরহেজগার ব্যক্তি সেখান থেকে পলায়ন করবে ;আর সে-ই হবেন ঐ ব্যক্তি যে অন্যায়-অত্যাচার ও অবিচারে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর সমগ্র পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ভরে দেবে । আমি তার নাম জানি এবং এও জানি যে ,ঐ দিন তার বয়স কত হবে এবং তার নিদর্শনটিও কী হবে ।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : সে খালিদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ানের বংশধর হবে । 127

সুফিয়ানীর পিতামহ আম্বাসাহ্ অথবা উতবাহ্ অথবা উয়াইনাহ্ অথবা ইয়াযীদ হতে পারে যে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের বংশধর ,তাহলে সব ভুল দূর হয়ে যাবে ।

আহলে সুন্নাহর আলেম ও পণ্ডিতদের প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে যে ,সুফিয়ানীর নাম হবে আবদুল্লাহ্ । আর ইবনে হাম্মাদের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির 74 পৃষ্ঠায় তার নাম আবদুল্লাহ্ ইবনে ইয়াযীদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । আর আহলে বাইতের অনুসারীদের হাদীস সূত্রগুলোতে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতেও তার নাম আবদুল্লাহ্ বলা হয়েছে । 128 তবে আমরা যেমন ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি তদনুযায়ী প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে যে ,তার নাম হবে ওসমান ।

সুফিয়ানীর পাপাচার ও অপরাধ

হাদীসের রাবীরা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে ,সুফিয়ানী হবে মুনাফিক ,চারিত্রিকভাবে ভ্রষ্ট এবং মহান আল্লাহ্ ,তাঁর রাসূল (সা.) ও হযরত মাহ্দী (আ.)-এর ভয়ঙ্কর শত্রু । তার স্বভাব-চরিত্র ,ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে শিয়া-সুন্নী হাদীস সূত্রসমূহে যে সব রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে সেগুলো একই ধরনের অথবা খুবই নিকটবর্তী ও সদৃশ । যেমন : এ ধরনের একটি রেওয়ায়েত নিম্নরূপ : সুফিয়ানী সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসনকর্তা হবে । সে আলেম ও পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে হত্যা করবে । অসৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সে তাদের কাছে সাহায্য চাইবে । আর যে তাকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবে তাকে সে হত্যা করবে । 129

অন্যত্র আরতাত থেকে বর্ণিত : সুফিয়ানী ছয় মাসের মধ্যে যারা তার বিরোধিতা করবে তাদেরকে হত্যা করবে ,করাত দিয়ে মাথা কর্তন করবে এবং সেগুলো পাতিলের মধ্যে সিদ্ধ করবে । 130

ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত : সুফিয়ানীর আবির্ভাব হবে । সে বিদ্রোহ করবে ,হত্যাযজ্ঞ ঘটাবে এবং রক্ত ঝরাবে । এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিড়ে গর্ভস্থ সন্তান বের করে এনে বড় বড় পাতিলের মধ্যে ফুটাবে । 131

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : যদি সুফিয়ানীকে দেখে থাক তাহলে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটিকেই দেখে থাকবে । তার দেহের রং হবে লাল ,নীল ও কালোর সংমিশ্রণ । সে কখনই আল্লাহ্ পাকের ইবাদতের জন্য মাথা নত করবে না । সে কখনই পবিত্র মক্কা ও মদীনা মুনাওয়ারাহ্ দেখবে না (অর্থাৎ হজ্ব ও যিয়ারত করার জন্য কখনই মক্কা-মদীনা সফর করবে না) । সে বলবে : হে প্রভু! আগুনের মাধ্যমে আমি প্রতিশোধ গ্রহণ করব । 132

সুফিয়ানীর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ

রেওয়ায়েতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ,সুফিয়ানী পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির ছায়ায় প্রতিপালিত ও তা দ্বারা প্রভাবিত হবে । হয়তোবা সে পাশ্চাত্যেই প্রতিপালিত ও বড় হবে । শেখ তূসীর গাইবাত গ্রন্থে বাশার বিন গালিব থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে :

সুফিয়ানী যখন একটি গোষ্ঠী বা দলের নেতৃত্ব দেবে তখন তার গলায় খ্রিস্টানদের মতো ক্রুশ থাকবে । সে পাশ্চাত্য (রোমানদের ভূমি) থেকে শামে আসবে ।

রেওয়ায়েতটিতে মুনতাসির (مُنْتَصِرْ )শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । কিন্তু তা অবশ্যই মূলে মুতানাসসির (مُتَنَصِّر )ছিল যার অর্থ হচ্ছে ঐ মুসলমান যে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছে । এ ধরনের রেওয়ায়েত বিহারের 52তম খণ্ডের 217 পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে । আর সে রোমানদের ভূমি থেকে আসবে -এ বাক্যের অর্থ হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে রোম (পাশ্চাত্য) থেকে শামে আসবে এবং বিদ্রোহ করবে । আর রেওয়ায়েতটি থেকে এও প্রতীয়মান হয় যে ,সে পাশ্চাত্যপন্থী ও ইহুদীদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দান করবে এবং রোম অর্থাৎ পাশ্চাত্যের শত্রু ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । সে তুর্কীদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে । আর আমাদের দৃষ্টিতে তুর্কীরা হবে রুশ জাতি । ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালীন ঘটনাবলী ঘটার সময় এবং ইমাম মাহ্দী (আ.) তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করার আগেই সুফিয়ানী দামেশক থেকে তার রাজধানী ফিলিস্তিনের রামাল্লায় (বর্তমানে ইসরাইলের দখলে) স্থানান্তর করবে । আর রেওয়ায়েত অনুসারে বিদ্রোহীরা ঐ স্থানেই অবতরণ করবে ।

বরং রেওয়ায়েতসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ,সুফিয়ানী ইহুদী ও রোমানদের স্বার্থে তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যূহ হিসাবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে । যে রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহ সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন সেগুলোয় ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে তার পরাজয় বরণের কথা বর্ণিত হয়েছে । আর তার পরাজয় মানেই ইহুদীদের পরাজয় ।

ঠিক একইভাবে সুফিয়ানীর পাশ্চাত্যপন্থী হওয়ার আরেকটি দলিল হচ্ছে এই যে ,তার পরাজয় ও নিহত হওয়ার পর তার সেনাবাহিনীর অবশিষ্টাংশ পাশ্চাত্যে পলায়ন করবে । অতঃপর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে পাশ্চাত্য থেকে ফিরিয়ে এনে হত্যা করবে ।

ইবনে খলীল আয্দী বলেছেন : যখন তারা আমাদের ক্রোধ ও শাস্তি অনুভব করল ,তখন তারা সেখান থেকে পলায়ন করতে লাগল । তোমরা পলায়ন করো না ;বরং তোমরা যেখানে বিলাসিতায় মত্ত ছিলে সেখানে এবং তোমাদের নিজ নিজ বাড়ি-ঘরে ফিরে এসো । আশা করা যায় যে ,তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে 133 -এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম আবু জাফর আল বাকির (আ.)-কে বলতে শুনেছি : যখন আল কায়েম আল মাহ্দী আন্দোলন ও বিপ্লব শুরু করবে এবং বনি উমাইয়্যার বিরুদ্ধে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে তখন তারা রোমের দিকে পালিয়ে যাবে । আর রোমানরা তাদেরকে বলবে : তোমরা যে পর্যন্ত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে নিজেদের গলায় ক্রুশ না ঝুলাবে সে পর্যন্ত আমাদের দেশে তোমাদের ঢুকতে দেব না । তখন তারা গলায় ক্রুশ ঝুলাবে এবং রোমানরা তাদেরকে তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেবে । যখন আল কায়েম আল মাহ্দীর সঙ্গী-সাথীরা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেখানে যাবে তখন রোমানরা তাদের কাছে সন্ধির আবেদন করবে । কিন্তু আল কায়েমের সঙ্গী-সাথীরা বলবে : যে পর্যন্ত তোমরা তোমাদের কাছে আমাদের দেশের যে সব ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে ফেরত না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে নিরাপত্তা দেব না । অতঃপর রোমানরা তাদেরকে আল কায়েমের সঙ্গী-সাথীদের কাছে হস্তান্তর করবে । আর এটিই হচ্ছে পলায়ন করো না এবং তোমরা যেখানে বিলাসিতায় মত্ত ছিলে সেখানে এবং নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরে এসো । আশা করা যায় যে ,তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে -এ আয়াতের অর্থ । এরপর তিনি বলেছিলেন : সে তাদেরকে গুপ্তধনসমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবে । অথচ সে অন্য সকলের চেয়ে এ ব্যাপারে অধিক অবগত । তারা বলবে : আমাদের জন্য দুর্ভোগ যে ,আমরা অত্যন্ত জালিম ছিলাম । তাদেরকে হত্যা করা পর্যন্ত তাদের কণ্ঠে অনবরত এ হতাশাব্যাঞ্জক স্বীকারোক্তি ধ্বনিত হতে থাকবে । 134

যখন আল কায়েম আল মাহ্দীর সঙ্গী-সাথীরা তাদের (পাশ্চাত্যের) মুখোমুখি হবে তখন তারা নিরাপত্তা চাইবে -এ বাক্যের অর্থ হচ্ছে এই যে ,ইমাম মাহ্দীর সঙ্গী-সাথীরা তাদের বিশাল সেনাবাহিনীকে রোমানদের বিরুদ্ধে প্রেরণ ও মোতায়েন করবে এবং তাদেরকে যুদ্ধের হুমকি দিতে থাকবে ।

আর বনি উমাইয়্যার অর্থ সুফিয়ানীর সঙ্গী-সাথীরা । আর এ বিষয়টি অন্য একটি রেওয়ায়েতেও স্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে । সম্ভবত তারা (পলাতক ব্যক্তিরা) হবে সুফিয়ানীর উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীর সেনাপতি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যারা প্রধান প্রধান রাজনৈতিক পদমর্যাদার অধিকারী হবে । এ কারণেই ঘটনাটি এতদূর গড়াবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা এ সব ব্যক্তিকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা না হলে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেবেন ।

সুফিয়ানী তার আন্দোলনকে ধর্মীয় রূপ দেয়ার চেষ্টা করবে

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের প্রসার ও মর্যাদাকর অবস্থান লাভ এবং কালো পতাকাবাহী ইরানীদের উত্থানের বিপরীতে অর্থাৎ তা মোকাবিলা করার জন্য সুফিয়ানীর আন্দোলন যে একটি পাশ্চাত্য-ইহুদী পরিকল্পনা হবে -এ ব্যাপারে সুফিয়ানী সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ অধ্যয়ন করলে যে কোন গবেষক সুফিয়ানী যে তার আন্দোলনকে ধর্মীয় রূপ দেবার চেষ্টা করবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাবেন । এ সব রেওয়ায়েতের মধ্যে এ রেওয়ায়েত বিদ্যমান যা ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে (পৃ. 75) বর্ণিত হয়েছে : ইবাদতের কারণে সুফিয়ানীর বর্ণ হলুদাভ হয়ে যাবে বা সুফিয়ানীকে হলুদ দেখাবে । এ রেওয়ায়েত থেকে মনে হচ্ছে সে নিজেকে বাহ্যত দীনদার দেখাতে চাইবে । তবে অন্য একটি রেওয়ায়েতের ভাষ্য অনুযায়ী তার এ অবস্থা কেবল তার আন্দোলন এবং প্রশাসনের শুরুতে দেখা যাবে ।

সুফিয়ানীর ধার্মিক হওয়া এবং তার খ্রিস্টান হওয়া ,গলায় ক্রুশ ঝুলানো ও পাশ্চাত্য থেকে শামে আগমন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা কখনো কখনো দুঃসাধ্য ও জটিল হতে পারে । তবে আমরা পাশ্চাত্যের এজেন্ট-রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে যা জানি তা হয়তো রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার ক্ষেত্রে জটিলতা ও অসুবিধা দূর করতে পারে । এ সব রাজনৈতিক নেতা (পাশ্চাত্যের) খ্রিস্টানদের সাথে এমনভাবে ওঠা-বসা ও জীবন যাপন করে যে ,তাদের ও খ্রিস্টানদের মাঝে আর কোন পার্থক্যই লক্ষ্য করা যায় না । এরা তাদের এতটা ঘনিষ্ট হয় যে ,সোনালী ক্রুশ গলায় ঝুলায় বা ঘড়িতে বাঁধে ,এমনকি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করার জন্য গীর্জায়ও উপস্থিত হয় ।

যে পর্যন্ত পাশ্চাত্য সুফিয়ানীকে বাহ্যত নামাযী ও দীনদার প্রদর্শন করে সাধারণ মুসলমানকে ধোঁকা দেবার জন্য মুসলমানদের নেতা ও প্রশাসক নিযুক্ত না করবে সে পর্যন্ত তার এ অবস্থা (পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান রীতিনীতি মেনে চলা) অব্যাহত থাকবে । বরং সে আলেম ও জ্ঞানী-পণ্ডিতদের হত্যা করবে এবং তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের কাছে সাহায্য চাইবে ;আর যে তাকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবে তাকে সে হত্যা বা ধ্বংস করবে -এ হাদীসটির মূল ভাষ্য থেকে এটিই প্রতিভাত হয় যে ,সুফিয়ানী ভীষণভাবে তার আন্দোলন ও প্রশাসনের ওপর ইসলামী রং ও লেবেল এঁটে দিতে চাইবে । এ কারণেই সে আলেমদেরকে এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে । রেওয়ায়েতে সে তাদেরকে পরীক্ষা করবে -এ বাক্যের স্থলে সে তাদেরকে ধ্বংস করবে -এ বাক্যটি সম্ভবত ভুলক্রমে উল্লিখিত হয়ে থাকতে পারে ।

আহলে বাইত ও তাঁদের অনুসারীদের প্রতি সুফিয়ানীর শত্রুতা ও বিদ্বেষ

সুফিয়ানীর অন্যতম প্রকট বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ -যা তার সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহেও উল্লেখ করা হয়েছে । বরং ঐ সব রেওয়ায়েত থেকে এমনই প্রতীয়মান হয় যে ,তার আসল কাজই হবে মুসলমানদের মধ্যে মাযহাবী (সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক) ফিতনা উস্কে দেয়া এবং আহলে সুন্নাতকে সাহায্য করার ধূঁয়ো তুলে শিয়াদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেপিয়ে তোলা । অথচ সে প্রকৃতপ্রস্তাবে ইহুদী ও পাশ্চাত্যের নাস্তিক্যবাদী-বস্তুবাদী নেতাদের বেতনভুক এজেন্ট ও সমর্থক হবে ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : আমরা (মহানবীর আহলে বাইত) এবং আবু সুফিয়ানীর বংশধররা এমন দু টি বংশ যারা মহান আল্লাহর কারণে একে অপরের শত্রু । আমরা বলি : মহান আল্লাহ্ সত্য বলেছেন এবং তারা বলে : মহান আল্লাহ্ মিথ্যা বলেছেন । আবু সুফিয়ান মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং আবু সুফিয়ানের পুত্র মুয়াবিয়া হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল । আর মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াযীদ হুসাইন ইবনে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল । আর সুফিয়ানী আল কায়েম আল মাহ্দীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে । 135

ঠিক একইভাবে ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : আমি যেন সুফিয়ানীকে (অথবা তার বন্ধুকে) দেখতে পাচ্ছি যে ,সে কুফায় তোমাদের সবুজ-শ্যামল জমিগুলোর ওপর অবস্থান নিয়েছে এবং তার পক্ষ থেকে আহবানকারী আহবান করছে : যে কেউ আলীর অনুসারীদের মধ্য থেকে কারো মাথা কেটে আনবে তাকে এক হাজার দিরহাম পুরস্কার দেয়া হবে । ঐ সময় প্রতিবেশী প্রতিবেশীর ওপর আক্রমণ চালাবে এবং বলবে যে ,এ ব্যক্তি তাদেই একজন । তার মাথা কর্তন করে এক হাজার দিরহাম সে নিয়ে যাবে । তোমরা জেনে রাখ যে ,ঐ দিন জারজদের হাতে তোমাদের শাসনকর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকবে । আর আমি যেন একজন মুখোশ পরিহিত ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছি । আমি জিজ্ঞাসা করলাম : ঐ নেকাব পরিহিত লোকটি কে ?তিনি বললেন : সে তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি হবে যে তোমাদের অনুরোধেই বক্তৃতা দেবে । সে মুখোশ পরিহিত থাকবে ,সে তোমাদেরকে জড়ো করবে এবং চিনবে ;কিন্তু তোমরা তাকে চিনবে না । সে তোমাদের দোষ অন্বেষণ করে তোমাদের দুর্নাম করবে । তোমরা জেনে রাখ যে ,সে জারজ ব্যতীত আর কেউ নয় । 136

আমরা অবশ্য লেবাননে এ সব মুখোশ পরিহিত ব্যক্তির কতিপয় নমুনা দেখেছি যারা ইহুদী ,ফ্যালাঞ্জিস্ট এবং অন্যদের এজেন্ট । আমরা দেখেছি যে ,তারা তাদের কুৎসিত চেহারাকে কালো বা অন্যান্য রঙের মুখোশে ঢেকে একত্রে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাসমূহে প্রবেশ এবং মুমিনদেরকে চি হ্নিত করে তাদের সহযোগীদের কাছে তাদের পরিচিতি তুলে ধরে । তখন তারা বিপ্লবী মুসলমানদেরকে ঘিরে ফেলে এবং বন্দী করে কারাগারে নিয়ে যায় অথবা তাদেরকে হত্যা করে । সুফিয়ানী এ সব শত্রুর হাতে প্রশিক্ষিত হবে । আর তার মুখোশ পরিহিত চরেরা এ গোষ্ঠীরই মুখোশ পরিহিত সদস্যদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত হবে ।

অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : সুফিয়ানীর অশ্বারোহী সৈন্যরা খোরাসানবাসীদের খোঁজ করতে থাকবে এবং কুফায় মহানবীর আহলে বাইতের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে । তখন খোরাসানবাসীরা হযরত মাহ্দী (আ.)-এর খোঁজে বের হবে ।

শামে শিয়াদের ব্যাপারে সুফিয়ানীর গৃহীত নীতি সম্পর্কে ওয়াদী ইয়াবিস (শুষ্ক উপত্যকা) থেকে তার উত্থান ও আন্দোলনের সূত্রপাত সংক্রান্ত হাদীসসমূহে উল্লেখ করা হবে ।

সুফিয়ানীর লাল পতাকা

কতিপয় রেওয়ায়েতে এ বিষয়টির উল্লেখ আছে । যেমন বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে আরেকটি দীর্ঘ রেওয়ায়েতের মাঝে বর্ণিত এই রেওয়ায়েতটি :

এর বেশ কিছু নিদর্শন আছে । লাল পতাকাসহ সুফিয়ানী আবির্ভূত হবে এবং বনি কালব গোত্রের এক লোক তার সেনাপতি হবে । 137

আসলে এ লাল পতাকা সুফিয়ানীর শ্রেষ্ঠত্বকামী ও তার রক্তপিপাসু রাজনীতির প্রতীক হবে ।