ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত হয়েছে :
“
সুফিয়ানী কুফায় প্রবেশ করবে এবং তিন দিন সেখানে লুটতরাজ চালাবে
।
সে সেখানকার ষাট হাজার অধিবাসীকে হত্যা করবে
।
অতঃপর সে সেখানে আঠার রাত অবস্থান করবে
।
... তখন কালো পতাকাবাহীরা কুফা অভিমুখে যাত্রা করবে এবং পানির পাশে অবস্থান গ্রহণ করবে
।
তাদের আগমনের সংবাদ শোনামাত্রই সুফিয়ানীর সঙ্গী-সাথীরা পলায়ন করবে
।
তাদের একটি দল কুফার খেজুর বাগানসমূহের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যাবে অথচ তাদের মধ্য থেকে গুটিকতক ব্যক্তি ব্যতীত সকলেই সশস্ত্র থাকবে এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বসরার অধিবাসী হবে
।
.কালো পতাকাবাহীরা সুফিয়ানীর সঙ্গী-সাথীদের নাগাল পাবে এবং কুফার বন্দী অধিবাসীদেরকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করবে
।
এরপর কালো পতাকাবাহীরা বাইআত করার জন্য গুটিকতক ব্যক্তিকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে প্রেরণ করবে
।
”
পরবর্তী রেওয়ায়েত যা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) থেকে বর্ণিত তাতে সুফিয়ানী বাহিনী কর্তৃক ইরাক জবরদখল এবং খোরাসানী ও ইয়েমেনী ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী সেনাবাহিনীদ্বয়ের সেদেশে আগমনের একটি অংশ বর্ণিত হয়েছে :
“
সে (সুফিয়ানী) এক লক্ষ ত্রিশ হাজার সৈন্য কুফায় প্রেরণ করবে এবং তারা রাওহা ও ফারুকে অবতরণ করবে
।
সেখান থেকে ষাট হাজার সৈন্য কুফার উদ্দেশে প্রেরণ করা হবে এবং তারা নুখাইলায় হযরত হুদ (আ.)-এর সমাধিস্থলে অবস্থান নেবে এবং ঈদের দিন কুফাবাসীদের ওপর আক্রমণ চালাবে
।
ইরাকের জনগণের শাসনকর্তা হবে একজন অত্যাচারী ও শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তি যাকে
‘
ভবিষ্যদ্বক্তা ও যাদুকর
’
বলে অভিহিত করা হবে
।
এক ব্যক্তি সেনা কমান্ডার হিসাবে পাঁচ হাজার জ্যোতিষীকে সাথে নিয়ে বাগদাদ থেকে তাদের দিকে গমন করবে
।
ঐ শহরের সেতুর ওপর সত্তর হাজার লোককে এমনভাবে হত্যা করবে যে
,জনগণ রক্ত ও লাশের দুর্গন্ধে তিন দিন পর্যন্ত ফোরাত নদীর তীরে যাওয়া থেকে বিরত থাকবে
।
সে ঐ সব সত্তর হাজার কুমারী মেয়েকে বন্দী করবে যাদের চেহারা কখনই দেখা যায়নি এবং তাদেরকে হাওদায় বসিয়ে নাজাফের একটি অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে
।
আর তখন কুফা থেকে দশ হাজার মুশরিক ও মুনাফিক বের হয়ে আসবে এবং তারা দামেশকে প্রবেশ করবে
।
কোন প্রতিন্ধকতাই তাদেরকে বিরত রাখতে পারবে না
।
আর ঐ শহরটি হবে উঁচু ভবন বিশিষ্ট
।
তুলা ও রেশম নির্মিত নয় এমন চিহ্ণবিহীন পতাকাসমূহ পূর্ব দিক থেকে আবির্ভূত হবে যেগুলোর লাঠির ওপরে একটি চি
হ্ন বিদ্যমান থাকবে
।
ইমাম আলী (আ.)-এর বংশধর এক ব্যক্তি ঐ পতাকাগুলোকে চালনা করবেন
।
তিনি পূর্ব দিক থেকে আবির্ভূত হবেন এবং এর সুবাস মেশকে আম্বরের মতো পাশ্চাত্যেও অনুভূত হবে
।
তাদের পৌঁছানোর এক মাস আগেই শত্রুদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢুকে যাবে
।
অবশেষে তিনি তার পিতৃপুরুষদের রক্তের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কুফায় প্রবেশ করবেন
।
এই সময় ইয়েমেনী ও খোরাসানী অশ্বারোহীরা
,এলোকেশে ধূলা ধূসরিত দ্রুতগতিসম্পন্ন মাঝারি পাতলা গড়নের অশ্বসমূহের ন্যায় কুফা অভিমুখে দ্রুত ছুটে আসতে থাকবে
।
আর যখন তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি তার পায়ের নিচে তাকাবে তখন বলবে : আজ থেকে আমাদের জন্য বসে থাকার মধ্যে কোন কল্যাণ ও সৌভাগ্য নেই
।
হে আল্লাহ্! আমরা অনুশোচনা করছি
,অথচ ঐ অবস্থায় তারা হবে সর্বোত্তম ধার্মিক
।
আর মহান আল্লাহ্ তাঁর পবিত্র গ্রন্থে তাদের এবং মহানবী (সা.)-এর বংশধরদের হতে যারা তাদের সদৃশ হবে তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন :
“
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তওবাকারী ও সচ্চরিত্রের অধিকারীদেরকে ভালোবাসেন
।
”
একজন নজরানবাসী বের হয়ে এসে ইমামের আহবানে সাড়া দেবে
।
সে হবে প্রথম খ্রিস্টান যে ইমামের দাওয়াত কবুল করবে এবং নিজ উপাসনালয় ধ্বংস করবে
,ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবে
,দাস ও দুর্বল লোকদের সাথে বের হবে এবং হেদায়েতের পতাকাসমূহের সাথে নুখাইলার উদ্দেশে রওয়ানা হবে
।
... পৃথিবীর সকল অধিবাসীর সমবেত হবার স্থল হবে ফারুক
।
সেদিন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ (তিন মিলিয়ন) লোক নিহত হবে
।
যারা সেদিন নিহত হবে তারা পরস্পরকে হত্যা করবে
।
আর তখনই নিম্নোক্ত আয়াতের প্রকৃত অর্থ সবার কাছে উন্মোচিত হবে
।
আয়াতটি হলো :
“
যে পর্যন্ত আমরা তাদেরকে কর্তিত ফসলের মতো ও নিশ্চুপ করে না দেব সে পর্যন্ত সর্বদা তাদের ঐ আহবান ও দাবিটি অব্যাহত ছিল
।
”
এ রেওয়ায়েত প্রসঙ্গে পাণ্ডুলিপিসমূহে ভ্রম বিদ্যমান
।
আরেকটি রেওয়ায়েত যা এ রেওয়ায়েত অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম তা বিহার গ্রন্থে হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে
।
তিনি বলেছেন :
“
হে জনতা! ফিতনা-ফ্যাসাদ তোমাদের দেশকে এর জীবন-মৃত্যুর পরে লণ্ড-ভণ্ড ও ধ্বংস ও এর অশুভ ছায়া তোমাদের দেশ ও জনপদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা অথবা পশ্চিম দিক থেকে আগুন শুষ্ক ও বিশাল জ্বালানি কাঠে লেগে যাওয়া ও এর লেলিহান শিখার তীব্র গর্জন শ্রুত হবার আগেই (যা জিজ্ঞাসা করে জানা দরকার সে ব্যাপারে) আমাকে তোমরা প্রশ্ন কর
।
তখন তার জন্য আক্ষেপ প্রতিশোধ ও রক্তের বদলা ইত্যাদি নেয়ার জন্য যখন সময় ও কালের চাকার আবর্তন দীর্ঘ হবে (ইমাম মাহ্দীর আগমন বিলম্বিত ও দীর্ঘ হবে) এবং তোমরা বলবে যে
,সে মরে গেছে অথবা ধ্বংস হয়ে গেছে (যদি সে জীবিত থাকে তাহলে সে কোথায় আছে বা বসবাস করছে
?)।
এ সময়
‘
অতঃপর তোমাদের বিজয়ের চাকা আমরা ঘুরিয়ে দেব
,তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করব এবং তোমাদের জনসংখ্যাকে তাদের চেয়ে বেশি করে দেব
’
-এ আয়াতের অর্থ বাস্তবায়িত হবে
।
তার আবির্ভাবের বেশ কিছু নিদর্শন আছে
।
এগুলো হলো : ওঁৎ পেতে থেকে ও পাথর নিক্ষেপ করে কুফার প্রাচীরের বিভিন্ন কোণে ফাটল ধরিয়ে ঐ নগরী অবরোধ করা
,চল্লিশ রাত মসজিদসমূহ বন্ধ থাকা
,মন্দির আবিষ্কার
,বড় মসজিদের আশেপাশে বেশ কিছু সংখ্যক পতাকা পতপত করে উড়া যেগুলো হেদায়েতের পতাকাসদৃশ হবে
,হত্যাকারী ও নিহত উভয়ই দোযখের আগুনে থাকবে
,ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ
,ত্বরিত মৃত্যু
,সত্তর জন সৎ মানুষের সাথে একজন পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যক্তিকে (নাফসে যাকিয়াহ্) হত্যা করা
।
উল্লেখ্য যে
,তাকে রুকন ও মাকামের মাঝখানে জবাই করা হবে
।
শয়তানী চরিত্রের অধিকারী প্রচুর সংখ্যক ব্যক্তিসমেত প্রতিমালয়ে আসবাগ্ মুযাফ্ফারকে হত্যা
,সবুজ (অথবা হলুদ) রংয়ের পতাকা এবং সোনালী ক্রুশসমেত সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান ও বিপ্লব
।
এ বাহিনীর সেনাপতি হবে কালব গোত্রের এক ব্যক্তি এবং বারো হাজার আরোহী সৈন্য সুফিয়ানীর সাথে পবিত্র মক্কা ও মদীনা অভিমুখে যাত্রা করবে এবং এ সেনাবাহিনীর সেনাপতি হবে বনি উমাইয়্যার এক ব্যক্তি যার নাম হবে খুযাইমাহ্ এবং বলা হবে যে
,তার বাম চোখ কানা এবং তার ডান চোখে এক বিন্দু রক্ত আছে
।
সে হবে দুনিয়াপূজারী
।
মদীনা পৌঁছানোর আগে তার থেকে কোন পতাকাবাহীই ফিরে যাবে না
।
সে (মদীনায় প্রবেশ করেই) হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশের বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ ও মহিলাকে জড়ো করে আবুল হাসান উমাভীর গৃহে বন্দী করবে
।
সে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন বংশধরের সন্ধানে কতিপয় অশ্বারোহী সৈন্যকে পবিত্র মক্কায় প্রেরণ করবে যে ব্যক্তির চারপাশে গাতফান গোত্রীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বেশ কিছু সংখ্যক নির্যাতিত লোক সমবেত হবে
।
ঐ সেনাদল মরুভূমিতে বিস্তৃত ও শ্বেত-শুভ্র পাথর খণ্ডসমূহের মাঝে (ঐ ব্যক্তিকে খুঁজতে খুঁজতে) চলে আসবে এবং ভূ-গর্ভে প্রোথিত হবে
।
এক ব্যক্তি ব্যতীত তাদের মধ্য থেকে আর কেউ বাঁচবে না
।
মহান আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির মুখমণ্ডলকে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন যাতে করে তিনি তাদেরকে ভয় দেখাতে পারেন এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হয়
।
ঐ দিন
“
আর যদি আপনি ঐ মুহূর্তে দেখতেন যে
,তারা ভয় পেয়েছে এবং নিকটবর্তী একটি অবস্থান থেকে ধৃত হয়েছে...
-এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রকাশ পাবে
।
সুফিয়ানী কুফায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার সৈন্য প্রেরণ করবে
।
তারা রাওহা
,ফারুক এবং কাদিসিয়ায় হযরত মরিয়ম (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর স্থানে অবতরণ করবে এবং তাদের মধ্য থেকে আশি হাজার সৈন্য কুফার পথে রওয়ানা হবে এবং নুখাইলাস্থ হযরত হুদ (আ.)-এর সমাধিস্থলে পৌঁছবে
।
তারা ঈদ ও আলোকসজ্জার দিবসে তার ওপর আক্রমণ চালাবে
।
আর জনগণের নেতা হবে একজন অত্যাচারী প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি যাকে যাদুকর ও জ্যোতিষী বলা হবে
।
সে যাওরাহ্ অর্থাৎ বাগদাদ থেকে পাঁচ হাজার জ্যোতিষী সহ বের হবে এবং ঐ শহরের সেতুর ওপর সত্তর হাজার লোককে হত্যা করবে যে
,এর ফলে জনগণ ঐ সব রক্ত ও নিহতের পচা গলিত লাশের দুর্গন্ধে ফোরাত নদীর ধারে যাওয়া থেকে বিরত থাকবে
।
যে সব কুমারী মেয়ের হাত ও মুখ অনাবৃত দেখা যেত না তাদেরকে বন্দী করে হাওদার ওপর বসিয়ে নাজাফের একটি (অজ্ঞাত) স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে
।
তখন কুফা থেকে এক লক্ষ মুশরিক ও মুনাফিক বের হবে এবং বিনা বাঁধায় তারা দামেশকে প্রবেশ করবে
।
আর তা হবে উঁচু ইমারত ও ভবনবিশিষ্ট পার্থিব স্বর্গস্বরূপ
।
প্রাচ্য (ইরান) থেকে বেশ কিছু সংখ্যক পতাকা যেগুলো তূলা ও রেশম দ্বারা নির্মিত হবে না সেগুলো এমতাবস্থায় প্রকাশ পাবে
।
এগুলোর দণ্ডসমূহের ওপর বেশ কিছু চি
হ্ন উৎকীর্ণ থাকবে
।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এক বংশধর সেগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন
।
যেদিন তিনি প্রাচ্যে প্রকাশিত হবেন সেদিন তাঁর সুঘ্রাণ মেশকে আম্বরের মতো পশ্চিমে অনুভূত হবে
।
তাদের আবির্ভাবের এক মাস আগেই শত্রুদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢুকে পড়বে
।
বনি সা
’
দ কুফায় তাদের নিজ নিজ পিতার মৃত্যুর বদলা নেয়ার জন্য রুখে দাঁড়াবে এবং তারা সবাই হবে ফাসেকদের (ভ্রষ্টদের) সন্তান
।
ঐ সময় পর্যন্ত তাদের ফিতনা চলতে থাকবে যখন পর্যন্ত না হুসাইনের অশ্বারোহীরা এলোমেলো ও ধূলিধূসরিত কেশর ও শ্বেত-শুভ্র কপালবিশিষ্ট অশ্বসমূহের ন্যায় অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের ওপর আক্রমণ চালাবে
।
তখন হঠাৎ তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি অশ্রু
বিসর্জনরত অবস্থায় যমীনের ওপর পদাঘাত করে বলতে থাকবে :
‘
আজকের পর থেকে বসে থাকার মধ্যে কোন কল্যাণ ও বরকত নেই
।
হে আমাদের প্রভু! আমরা অনুশোচনা করছি এবং ভগ্ন হৃদয়ে আপনার সামনে আমাদের মাথা অবনত করছি এবং আমাদের কপাল মাটির ওপর রাখছি
’
।
তাঁরা হবেন ঐ সব মহান পুণ্যাত্মা যাঁদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :
“
মহান আল্লাহ্ অনুশোচনাকারী এবং পবিত্র ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসেন
।
”
তাঁদের মধ্যে এমন কতিপয় ব্যক্তিও থাকবেন যাঁরা হবেন মহানবী (সা.)-এর চরিত্রবান
,নিষ্কলঙ্ক ও পুতঃপবিত্র স্বভাবের অধিকারী বংশধর
।
নাজরান থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে ইমামের আহবানে সাড়া দেবে
।
সেই হবে প্রথম খ্রিস্টান যে ইতিবাচক সাড়া দেবে
।
সে তার উপাসনালয় ধ্বংস করবে এবং নিজের ক্রুশটি ভেঙে ফেলবে
।
সে দাস ও দুর্বল ব্যক্তি এবং অশ্বারোহীদের নিয়ে বের হবে এবং হিদায়েতের পতাকাসমূহের সাথে নুখাইলার দিকে অগ্রসর হবে
।
ফারুক হবে পৃথিবীর সকল মানুষের সমবেত হওয়ার স্থান
।
আর এটিই হচ্ছে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর হজ্বযাত্রার পথ
।
এরপর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে তিন মিলিয়ন ইহুদী ও খ্রিস্টান নিহত হবে
।
তারা পরস্পরকে হত্যা করবে
।
নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থের বাস্তব নমুনা ও ব্যাখ্যা সেদিন প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হবে
।
আয়াতটি হচ্ছে : যে পর্যন্ত আমরা তাদেরকে তরবারির মাধ্যমে এবং তরবারির ছত্রছায়ায় কর্তিত শস্য ও খড়-কুটার ন্যায় ছিন্নভিন্ন ও নিশ্চুপ করিয়ে দিয়েছি সে পর্যন্ত এটিই ছিল তাদের সার্বক্ষণিক দাবি
।
”
এ রেওয়ায়েতের প্রথম ও শেষাংশ একটি বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব সমগ্র পাশ্চাত্য বিশ্বের ওপর পড়বে
।
আর এ যুদ্ধে তিন মিলিয়ন লোক নিহত হবে এবং আমরা যথাস্থানে এতৎসংক্রান্ত আলোচনার অবতারণা করব
।
কুফার অলি-গলির কোণায় কোণায় ফাটল সৃষ্টি করার
’
অর্থ সম্ভবত সুফিয়ানীর আক্রমণের মোকাবিলায় সড়ক যুদ্ধের বাংকার ও আশ্রয়স্থল নির্মাণও হতে পারে
।
আর ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের একটু আগে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি হবে সে দিকে লক্ষ্য রেখে পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম এবং হিজাযের চারপাশে সমবেত তিন পতাকাবাহী দল ও গোষ্ঠী সংক্রান্ত বিবরণ শীঘ্রই পেশ করা হবে
।
সম্ভবত সত্তর জন এবং আরেকটি রেওয়ায়েতে সত্তর জন সৎ ও পুণ্যবান ব্যক্তি সমেত নাজাফে এক পবিত্র আত্মার অধিকারী ব্যক্তির নিহত হওয়ার বিষয়টি মহান শহীদ আয়াতুল্লাহ্ আল উযমা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আস সাদর-এর শাহাদাতের ঘটনার সাথে মিলে যায়
।
কারণ তিনি সত্তর জন সৎ ও পুণ্যবান ব্যক্তির সাথে শাহাদাত বরণ করেছেন
।
আর কুফার পেছনের অংশ হচ্ছে বর্তমান কালের পবিত্র নাজাফ নগরী
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের একটু আগে যে পবিত্র পুণ্যাত্মা ব্যক্তি পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদুল হারামের রুকন ও মাকাম-ই ইবরাহীমের মাঝখানে শাহাদাত বরণ করবেন তিনি মক্কাবাসীদের কাছে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রেরিত দূত হবেন
।
এ রেওয়ায়েতে কতিপয় নাম এবং শব্দ বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট নয়
,যেমন আসবাগ মুযাফ্ফার যে শয়তানী চরিত্র ও স্বভাবের অধিকারী বহু ব্যক্তির সাথে প্রতিমালয়ে নিহত হবে এবং সা
’
দের পুত্ররা প্রমুখ
।
কতিপয় রেওয়ায়েতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে
,হযরত মরিয়ম (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.) যখন ইরাক ভ্রমণ করেছিলেন তখন তাঁরা কাদেসিয়ায় যাত্রাবিরতি করেছিলেন এবং বাগদাদের কাছে বারাসা মসজিদে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন
।
আর এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ই উত্তমরূপে জ্ঞাত আছেন
।
তবে নুখাইলায় হযরত হুদ (আ.)-এর সমাধিস্থলটি বেশ প্রসিদ্ধ যা পবিত্র নাজাফ নগরীর অদূরে ওয়াদিউস্ সালামে অবস্থিত
।
জনগণের নেতা হবে এক যাদুকর ও জ্যোতিষী
।
সম্ভবত সে রেওয়ায়েতে বর্ণিত শাইসাবানীই হবে এবং সুফিয়ানীর আবির্ভাবের আগে ইরাকে বিদ্রোহ করবে
।
‘
প্রাচ্য দেশের পতাকাসমূহ
’
বলতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী খোরাসানী পতাকাবাহীদেরকেই বোঝানো হয়েছে এবং পতাকাসমূহে উৎকীর্ণ মোহর ও চিহ্নের অর্থ
الله
বা আল্লাহ্ খচিত মনোগ্রামও হতে পারে যা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রতীক
-যা ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) কর্তৃক মনোনীত
।
দ্বিতীয় রেওয়ায়েতে উল্লিখিত ফারুক অবশ্য কোন রাবী কর্তৃক একটি ব্যাখ্যা ও পাদটীকাই হবে যা রেওয়ায়েতের মূল ভাষ্যে ঢুকে গেছে এবং তা আমীরুল মুমিনীন (আ.) কর্তৃক উচ্চারিত শব্দ হওয়া অসম্ভব
।
তবে ফারুক শব্দটি সম্ভবত এতদর্থে উক্ত স্থানে জনগণের সমবেত হওয়ার স্থল হতে পারে যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সৈন্যরা সেখানে একত্রিত হবে এবং তখনই মুসলমান ও বিধর্মীদের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাবে যা রেওয়ায়েতে উল্লিখিত হয়েছে
।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে
,আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর এ সব রেওয়ায়েত ও এতদসদৃশ অন্যান্য রেওয়ায়েতের সনদ এবং মূল ভাষ্য ও শব্দসমূহ নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ও আন্দোলনের নিদর্শনসমূহ সংক্রান্ত অনেক ভাষণ ও রেওয়ায়েত বাহ্যত কিছু সংখ্যক রাবী (বর্ণনাকারী) ও আলেমের ভাষণ ও প্রবন্ধাবলীর অন্তর্গত যা তাঁরা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং ইমামদের থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত হতে গ্রহণ ও সংকলন করেছেন এবং তা ইমামদের সাথে সম্পর্কিত করেছেন
।
অতএব
,এগুলোর তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত মূল্য এতটা যে
,তা হচ্ছে ঐ সব রাবী ও আলেমের বক্তব্য
,হাদীসসমূহের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে যাঁদের জ্ঞান ও পরিচিতি অনেক বেশি এবং তাঁরা আমাদের চেয়ে ইমামদের নিকট থেকে হাদীসসমূহ যে যুগে বর্ণিত হয়েছে সে যুগের অধিক নিকটবর্তী
।
... আর এখানে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনারও অবকাশ নেই
।
হিজাযের দিকে সুফিয়ানী বাহিনীর অগ্রসরমান যে দলটি ভূ-গর্ভে প্রোথিত হবে
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর পবিত্র আবির্ভাব ও আন্দোলনের ব্যাপারে (মহান আল্লাহর ইচ্ছায়) শীঘ্রই আমরা আলোচনা করব এবং আমরা হিজাযের রাজনৈতিক টানাপড়েন পর্যালোচনা করব যে রেওয়ায়েতসমূহের ভাষ্য অনুযায়ী হিজাযের শাসক আবদুল্লাহ্ নিহত হওয়ার অব্যবহিত পরেই তাঁর পরবর্তী শাসনকর্তা কে হবে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে হিজাযের গোত্রসমূহের মধ্যকার অন্তঃদ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের উদ্ভব হবে
।
... আর এ সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতসমূহ হিজায সরকারকে এতটা দুর্বল করবে যে
,এর ফলে ইমাম মাহ্দী (আ.) পবিত্র মক্কায় সহজে তার আন্দোলন শুরু করবেন এবং পবিত্র মক্কা নগরীকে অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্ত করে সেখানে তাঁর শাসনকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও সুদৃঢ় করবেন
।
এ যুগসন্ধিক্ষণে হিজায-সরকার নিজেদেরকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলনকে পরাস্ত ও ধ্বংস করার ব্যাপারে অক্ষম ও দুর্বল দেখতে পাবে
;তাই এ সরকার ও অন্যান্য বড় বড় রাষ্ট্র সুফিয়ানীকে গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে হাত দেয়ার জন্য প্ররোচিত করবে
।
সুফিয়ানী প্রথমে তার সেনাবাহিনীকে মদীনা মুনাওওয়ারায় এবং এরপর পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রেরণ করবে
।
এ সময় ইমাম মাহ্দী (আ.) সমগ্র মুসলমান ও বিশ্ববাসীর কাছে ঘোষণা করবেন যে
,তিনি এমন এক মুজিযা সংঘটিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন যার প্রতিশ্রুতি মহানবী (সা.) দিয়েছিলেন
।
আর ঐ মুজিযাটি হবে মক্কার অদূরে একটি মরুপ্রান্তরে সুফিয়ানী বাহিনীর ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া
।
এ মুজিযা সংঘটিত হবার পর হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) তাঁর আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন
।
বরং এ বিষয়টি যা কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া সম্ভব
।
আর তা হলো ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই মদীনায় সুফিয়ানী বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে
।
সুফিয়ানী বাহিনী ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের খোঁজে মদীনায় প্রবেশ করবে এবং সেখানে বেশ কিছু জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করবে
।
এ সময় ইমাম মাহ্দী (আ.) মদীনায় বসবাস করতে থাকবেন এবং সুফিয়ানী কর্তৃক পরিচালিত অনুসন্ধানী অভিযানের সময় তিনি হযরত মূসা (আ.)-এর মতো অস্থিরতা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সহকারে মদীনা থেকে বের হয়ে পবিত্র মক্কার দিকে চলে যাবেন
।
এর পরপরই মহান আল্লাহ্ তাঁকে আবির্ভূত হবার অনুমতি দেবেন
।
শিয়া ও সুন্নী হাদীসসমূহে পবিত্র মদীনা নগরীতে ইরাক ও শামদেশের দিক থেকে সুফিয়ানী বাহিনীর প্রবেশ অত্যন্ত কঠিন ও ধ্বংসকারী অভিযান বলে গণ্য করা হয়েছে যে
,তা কোন প্রতিরোধেরই সম্মুখীন হবে না
।
সে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথী এবং আহলে বাইতের অনুসারীদের সাথে নারী-পুরুষ
,আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে হত্যা ও ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ঐ একই আচরণ করবে যেরূপ সে ইরাকে করেছিল
;বরং রেওয়ায়েতসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে
,মদীনায় সুফিয়ানীর আক্রমণ হবে অপেক্ষাকৃত কঠোর
।
ইবনে শিহাব থেকে ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত হয়েছে :
“
অশ্বারোহীদের সাথে যে সেনাপতি কুফায় প্রবেশ করবে ঐ শহর ধ্বংস করার পর সুফিয়ানী তাকে সম্বোধন করে লিখবে এবং তাকে হিজায অভিমুখে রওয়ানা হবার নির্দেশ দেবে
।
আদিষ্ট হবার পর সে ঐ দেশ অর্থাৎ হিজায অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যাবে এবং কুরাইশদেরকে হত্যা করবে
।
সে তাদের এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীদের মধ্য থেকে চারশ
’
ব্যক্তিকে হত্যা করবে
।
সে গর্ভবতী নারীদের পেট চিড়ে গর্ভস্থ সন্তানদেরকে বের করে এনে হত্যা করবে
।
সে কুরাইশ বংশীয় দু
’
ভাইকে হত্যা করবে এবং মুহাম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে ফাতিমা নামের তার বোনসহ মদীনার মসজিদের নববীর প্রবেশ পথের ওপর ফাঁসীতে ঝুলাবে
।
আরো কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লিখিত হয়েছে :
“
ঐ ব্যক্তি ও তার বোন নাফসে যাকীয়ার (পবিত্র আত্মার অধিকারী) পিতৃব্যপুত্র ও কন্যাদের অন্তর্ভুক্ত হবে
।
উল্লেখ্য যে
,এই নাফসে যাকীয়াকেই ইমাম মাহ্দী (আ.) পবিত্র মক্কায় প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরণ করবেন
।
তাঁকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পনর দিন পূর্বে মসজিদুল হারামে হত্যা করা হবে
।
আর উক্ত ভাই-বোন (যাঁরা নাফসে যাকীয়ার চাচাতো ভাই-বোন এবং যাঁদেরকে মসজিদে নববীর প্রবেশ পথে ফাঁসীতে ঝুলানো হবে) ইরাকে সুফিয়ানী বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে মদীনায় চলে আসবেন এবং ইরাক থেকে যে গুপ্তচর তাঁদের পিছে পিছে আসবে সে-ই শত্রুদের কাছে তাঁদের পরিচিতি তুলে ধরবে
।
নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানী মদীনায় বনি হাশিম এবং তাদের অনুসারীদেরকে গণহত্যা করার বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করবে যে
,ইরাকে খোরাসানীদের হাতে তার সৈন্যদের নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে এ ধরনের কাজে হাত দিয়েছে
।
ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে আবু কুবাইল থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
সুফিয়ানী তার সেনাবাহিনীকে মদীনায় প্রেরণ করবে এবং তাদেরকে নির্দেশ দেবে যে
,তারা বনি হাশিমের যে কেউ সেখানে থাকবে তাকে
,এমনকি গর্ভবতী মহিলাদেরকেও যেন হত্যা করে
।
এ হত্যাকাণ্ড একজন হাশিমীর তৎপরতার জবাবে সংঘটিত হবে যিনি প্রাচ্য (ইরান) থেকে নিজ সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে অভ্যুত্থান করবেন
।
সুফিয়ানী বলবে : এ সব বিপদাপদ ও আমার সঙ্গী-সাথীদের নিহত হওয়ার জন্য বনি হাশিম-ই দায়ী
।
অতঃপর সে তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করার আদেশ দেবে যে
,এর ফলে তাদের কাউকেই আর মদীনায় খুঁজে পাওয়া যাবে না
,এমনকি তাদের নারীরাও মরুভূমি ও পাহাড়-পর্বতে আশ্রয় নেবে এবং পবিত্র মক্কার দিকে পালিয়ে যাবে
।
অতঃপর তারা হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে
।
পবিত্র মক্কায় হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে পাওয়া যাবে সে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে
।
আর যারাই সেখানে (মক্কায়) আসবে তারাই তার চারপাশে জড়ো হবে
।
”
ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
সুফিয়ানী ও তার সঙ্গী-সাথীরা আবির্ভূত হবে এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইত এবং তাঁর অনুসারীদের ওপর বিজয়ী হওয়া ব্যতীত তার আর কোন চিন্তা থাকবে না
।
এ কারণেই সে একদল সৈন্যকে কুফায় প্রেরণ করবে এবং তারা সেখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একদল অনুসারীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে যে
,হয় তাদেরকে হত্যা করবে অথবা ফাঁসীতে ঝুলাবে
।
আর তখন খোরাসান থেকে একটি সেনাবাহিনী বের হবে এবং দজলা অববাহিকায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তারা অব্যাহতভাবে অগ্রসর হতে থাকবে
।
স্বীয় সঙ্গী-সাথী সমেত এক দুর্বল অনারব ব্যক্তি বের হয়ে নাজাফে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে
।
সুফিয়ানী আরেকটি সেনাদলকে মদীনা অভিমুখে প্রেরণ করবে
।
আর তারা সেখানে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে এবং মাহ্দী (আ.) ও মানসূর সেখান থেকে পালিয়ে যাবেন
;সুফিয়ানী বাহিনী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের ছোট-বড় সবাইকে বন্দী করবে
।
তাদের মধ্য থেকে এমন কোন ব্যক্তি বিদ্যমান থাকবে না যাকে বন্দী করা হবে না
।
সুফিয়ানী বাহিনী ইমাম মাহ্দী ও তাঁর সঙ্গীর সন্ধানে তল্লাশী চালাতে থাকবে
।
আর ইমাম মাহ্দী (আ.) হযরত মূসা (আ.)-এর মতো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সাথে মদীনার বাইরে চলে আসবেন এবং মক্কায় এসে আশ্রয় নেবেন
।
”
বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থের 252 পৃষ্ঠায় সুফিয়ানীর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানী এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে মদীনায় প্রবেশ করবে এবং হাকিম সংকলিত আল মুস্তাদরাক গ্রন্থের 4র্থ খণ্ডের 442 পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানীর আক্রমণের আগেই মদীনার অধিবাসীরা শহর থেকে বের হয়ে যাবে
।
সম্ভবত রেওয়ায়েতে বর্ণিত মানসূর যিনি হযরত মাহ্দী (আ.)-এর সাথে মদীনা থেকে বের হবেন তিনি হবেন
‘
নাফসে যাকীয়াহ্
’
।
হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) তাঁকে মসজিদুল হারামে পাঠাবেন যাতে তিনি তাঁর বাণী বিশ্ববাসীর কানে পৌঁছে দেন
;তবে তাঁকে হত্যা করা হবে
।
তবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর একজন সঙ্গী নাফসে যাকীয়াহ্ ছাড়াও ভিন্ন এক ব্যক্তি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে
।
এগুলো হচ্ছে মদীনায় সুফিয়ানীর যুদ্ধ এবং সেখানে তার ধ্বংসযজ্ঞ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের কতিপয় নমুনা
।
মদীনা ব্যতীত হিজাযের অন্যান্য স্থানে সুফিয়ানী বাহিনীর প্রবেশ এবং এরপর মক্কায় প্রবেশের জন্য তাদের চেষ্টা সংক্রান্ত কোন কথা রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়নি
।
... আর এগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে
,পবিত্র মক্কা নগরীতে তার সকল সৈন্য অথবা সেনাবাহিনীর অংশবিশেষ প্রেরণ করা পর্যন্ত মদীনা নগরী জবরদখল করার সময়কাল বেশি স্থায়ী হবে না
।
আর তখনই প্রতিশ্রুত মোজেযা দেখা দেবে এবং মক্কা নগরীর অদূরে তাদের সবাই ভূমিতে প্রোথিত হবে
।
কতিপয় রেওয়ায়েতে মদীনায় সুফিয়ানী বাহিনী ও সৈন্যদের বিদ্যমান থাকাটা কেবল গুটিকতক দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে
।
তবে বাহ্যত এর অর্থ হচ্ছে মদীনায় সুফিয়ানী বাহিনীর প্রবেশ এবং সেখানে তার অপকর্মসমূহের সময়কাল
-মদীনা বা এর অদূরে সুফিয়ানী বাহিনীর অবস্থানকাল নয়
।
সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়ার ব্যাপারে রেওয়ায়েতসমূহ মুসলমানদের সূত্রসমূহে অনেক ও মুতাওয়াতির এবং আহলে সুন্নাতের সূত্রসমূহে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত সম্ভবত উম্মে সালামাহ্ থেকে বর্ণিত হয়েছে
।
তিনি বলেছেন :
“
মহান আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন : মহান আল্লাহর ঘরে একজন আশ্রয়গ্রহণকারী আশ্রয় গ্রহণ করবে
।
তখন একটি সেনাদল তার কাছে প্রেরণ করা হবে
;যখন ঐ সেনাদল মদীনার মরুপ্রান্তরে পৌঁছবে তখন সেখানে তারা ভূ-গর্ভে প্রোথিত হবে
।
”
আল কাশশাফ তাফসীর প্রণেতা জামাখশারী
‘
আর যদি আপনি ঐ মুহূর্তে দেখতেন যে
,তারা ভীত হয়ে গেছে এবং নিকটবর্তী একটি স্থান হতে তাদেরকে পাকড়াও করা হয়েছে
’
-এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন যে
,ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে
,উপরিউক্ত আয়াতটি বাইদা নামক মরুভূমির মাটিতে প্রোথিত হওয়ার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে
।
আল্লামা তাবারসী তাঁর মাজমাউল বায়ান গ্রন্থে বলেন :
“
আবু হামযাহ্ সুমালী বলেছেন : আলী ইবনুল হুসাইন এবং হুসাইন ইবনে আলী (আ.) থেকে শুনেছি যে
,ঐ দু
’
জন মহাত্মা ইমাম বলতেন : উপরিউক্ত আয়াতটির কাঙ্ক্ষিত অর্থ মরুভূমির সেনাবাহিনী যারা পায়ের নিচ থেকে মহান আল্লাহর শাস্তি কবলিত হবে অর্থাৎ যমীন তাদেরকে গ্রাস করবে
।
”
আল হুযাইফা ইয়েমেনী থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
মহানবী (সা.) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে যে ফিতনার উদ্ভব হবে তা স্মরণ করে বললেন : তারা যখন এ ধরনের ফিতনা কবলিত হবে তখন সুফিয়ানী ওয়াদি-ই ইয়াবিস থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে এবং সে দামেশকে প্রবেশ করবে
।
তখন সে দু
’
সেনাদলের একটি পূর্ব (ইরান) দিকে এবং অন্যটিকে মদীনার দিকে প্রেরণ করবে
।
প্রথম সেনাদলটি বাবেল ভূ-খণ্ড এবং অভিশপ্ত নগরীতে (বাগদাদে) অবতরণ করবে এবং তিন হাজারেরও অধিক লোক হত্যা করবে এবং একশ
’
র বেশি মহিলাকে জোর করে অপহরণ করবে
।
অতঃপর সে সেখান থেকে বের হয়ে সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন করবে
।
আর ঠিক এ সময়ই হেদায়েতের সেনাদল বের হবে এবং সুফিয়ানী কর্তৃক প্রেরিত সেনাদলের কাছে পৌঁছবে এবং তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যে
,তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিও জীবিত থাকবে না যে সবার মৃত্যুসংবাদ পৌঁছাতে পারে
।
তাদের হাতে যারা বন্দী ছিল তাদেরকে মুক্ত করা হবে এবং যে সব ধন-সম্পদ তারা গনীমত হিসাবে নিয়েছিল সেগুলো নিয়ে নেয়া হবে
।
তবে দ্বিতীয় দলটি মদীনায় প্রবেশ করে সেখানে তিন দিন ও তিন রাত লুটতরাজে লিপ্ত হবে
।
এরপর তারা সেখান থেকে বের হয়ে এসে পবিত্র মক্কার দিকে রওয়ানা হবে
।
যখন তারা মরু-প্রান্তরে পৌঁছবে তখন মহান আল্লাহ্ জিব্রাইল (আ.)-কে আদেশ দিয়ে বলবেন : জিব্রাইল যাও এবং এদেরকে ধ্বংস করে দাও
।
অতঃপর জিব্রাইল (আ.) তাঁর পা দিয়ে ঐ ভূ-খণ্ডের ওপর আঘাত করবেন এবং ভূ-পৃষ্ঠ তাদেরকে গ্রাস করবে
।
জুহাইনা গোত্রের দু
’
ব্যক্তি ব্যতীত তাদের মধ্য থেকে আর কেউ মুক্তি পাবে না
।
”
“
কোঁকড়ানো চুল ও গালে তিল বিশিষ্ট মাহ্দী (আ.) অগ্রসর হবেন
।
পূর্বদিক থেকে তাঁর আন্দোলন শুরু হবে
।
আর যখন এ বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে তখন সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান হবে এবং সে দিগ্বিজয়ে বের হবে এবং নারীর গর্ভধারণ কাল পরিমাণ সময় অর্থাৎ নয় মাস সে রাজত্ব করবে
।
সে শামে বিদ্রোহ করবে
।
সেখানকার সত্যপন্থী গোত্রসমূহ ব্যতীত শামবাসীরা তাদের আনুগত্য করবে
।
মহান আল্লাহ্ যে সব সত্যপন্থী গোত্র সুফিয়ানীর আনুগত্য করবে না তাদেরকে সুফিয়ানীর সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখবেন
।
সে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে মদীনা নগরীতে প্রবেশ করবে
।
অবশেষে যখন তার বাহিনী মদীনার মরুপ্রান্তরে গিয়ে পৌঁছবে তখন মহান আল্লাহ্ তাকে (তার সেনাবাহিনীকে) ভূ-গর্ভে প্রোথিত করবেন
।
আর এটিই হচ্ছে মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর অর্থ :
“
আর আপনি যদি ঐ মুহূর্তে দেখতেন যে
,তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং নিকটবর্তী একটি স্থান হতে তারা ধৃত হয়েছে (অর্থাৎ তারা ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়ার মতো আযাবে পতিত হয়েছে)
।
”
হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর বাণী
,‘
অগ্রসরমান অর্থাৎ যখন হাঁটবে
’
-এর অর্থ যেন তিনি সমগ্র দেহ ও অস্তিত্ব নিয়ে অগ্রসর হবেন
।
আর পূর্ব দিক থেকে তার আন্দোলনের সূত্রপাত হবে
’
-এ কথার অর্থ এই যে
,তাঁর বিপ্লব তাঁর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও সরকার দ্বারা শুরু হবে
।
‘
আর যখন এ বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে
’
-এ বাক্যটির অর্থ যখন তাঁর আন্দোলন শুরু অথবা প্রকাশিত হবে এবং তাদের (ইরানীদের) সরকার ও রাষ্ট্র কায়েম হবে তখনই সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান হবে এবং সে সামরিক অভিযানে বের হবে
।
এ রেওয়ায়েতে সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান ও তৎকর্তৃক পরিচালিত সামরিক অভিযানের সময়কাল নির্দিষ্ট করা হয়নি যে
,তা কি হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের রাষ্ট্র ও প্রশাসন কায়েম হবার পরপরই হবে অথবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বহু বছর পরে হবে... তবে রেওয়ায়েতটির বর্ণনারীতি ও প্রকাশভঙ্গি ইরানীদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও প্রশাসন এবং সুফিয়ানীর অভ্যুত্থান ও সামরিক অভিযানের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কের অস্তিত্বকে নির্দেশ করে
।
আর তার সামরিক তৎপরতা ও অভিযান আসলে ইরানীদের বিরুদ্ধে তার একটি পদক্ষেপ বলেই গণ্য হয় যা আমরা এ অধ্যায়ের প্রথমদিকে তার আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে আলোচনা করেছি
।
হান্নান ইবনে সুদাইর থেকে বর্ণিত :
“
আবু আবদিল্লাহ্ (ইমাম সাদিক)-কে মরুভূমিতে ভূমিগ্রাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন : এটি আমাসেহরার ডাকবাহকের রাস্তার ওপর যা
‘
যাতুল জাইশ
’
হতে বারো মাইল দূরে অবস্থিত
।
”
‘
যাতুল জাইশ
’
হচ্ছে পবিত্র মক্কা ও মদীনার মাঝখানে অবস্থিত একটি এলাকা
।
আর আমাসেহরা ঐ এলাকায় অবস্থিত
।
ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
শীঘ্রই একজন আশ্রয়গ্রহণকারী পবিত্র মক্কায় আসবে
।
তখন কাইস গোত্রীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সত্তর হাজার সৈন্য সেখানে প্রেরিত হবে
।
যখনই তারা সানীয়াহ্ এলাকায় পৌঁছবে তখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রথম প্রবেশকারী ব্যক্তি সেখান থেকে বের হবে না
।
তখন হযরত জিবরাইল (আ.) উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দেবেন যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে পৌঁছে যাবে : হে মরুভূমি! হে মরুভূমি! এদেরকে গ্রাস কর
।
এদের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই
।
একমাত্র ঐ রাখাল যে পার্বত্য ভূমি থেকে তাদেরকে ধ্বংস হয়ে যাবার সময় প্রত্যক্ষ করবে কেবল সে ব্যতীত আর কেউই তাদের ধ্বংস সম্পর্কে অবগত হবে না এবং তাদের পরিণতি সম্পর্কে সে-ই খবর দেবে
।
অতঃপর যখন পবিত্র কাবায় আশ্রয়গ্রহণকারী তাদের ধ্বংস প্রাপ্তির ঘটনা শুনবেন তখন তিনি বাইরে বের হবেন
।
”
এই একই গ্রন্থে আবু কুবাইল থেকে বর্ণিত :
“
একজন সুসংবাদ প্রদানকারী ও একজন ভয়প্রদর্শনকারী ব্যতীত তাদের মধ্যে আর কেউ জীবিত থাকবে না
;তবে সুসংবাদ প্রদানকারী ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের কাছে আসবে এবং যা যা ঘটেছে সে ব্যাপারে খবর দেবে
।
ঘটনার সাক্ষী যে হবে সে যে সত্য কথা বলছে তা তার মুখাবয়বের মধ্যে প্রকাশিত হবে
।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ তার মুখমণ্ডলকে তার মাথার পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন এবং এভাবে তার মুখমণ্ডলকে মাথার পিছনের দিকে ঘুরানো দেখতে পেয়ে সবাই তার কথা বিশ্বাস করবে এবং জানতে পারবে যে
,সুফিয়ানীর প্রেরিত সেনাদলটি ভূমিগ্রাসের মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছে
।
আর বেঁচে যাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তির মুখমণ্ডলও প্রথম ব্যক্তির মতো মহান আল্লাহ্ পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন
।
সে সুফিয়ানীর কাছে এসে তার সঙ্গী-সাথীদের ভাগ্যে যা ঘটেছে তা বর্ণনা করবে
।
সুফিয়ানীও ঐ ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে তার কথা বিশ্বাস করবে
।
আর এ দু
’
ব্যক্তি কালব গোত্রীয় হবে
।
”
এই একই গ্রন্থে হাফ্সা থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে
,মাগরিব (পশ্চিম দিক) থেকে একটি সেনাবাহিনী প্রেরিত হবে এবং তারা কাবা গৃহকে ধ্বংস করতে চাইবে
।
কিন্তু যখনই তারা মরুপ্রান্তরে পৌঁছবে এবং ভূমি তাদেরকে গ্রাস করবে তখন যে সব ব্যক্তি তাদের সামনে থাকবে তারা ঐ সেনাদলের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা প্রত্যক্ষ করার জন্য ভূমিধ্বসের স্থলে ফিরে যাবে
;আর তারাও ঠিক ঐ একই বিপদের সম্মুখীন হবে
।
তখনই মহান আল্লাহ্ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অন্তরের নিয়ত অনুসারে পরকালে পুনরুত্থিত করবেন
।
”
তাই যে ব্যক্তি সুফিয়ানীর সেনাদলে যোগদান করতে বাধ্য হয়েছিল যদিও সে আখেরাতে সুফিয়ানী বাহিনীতে স্বেচ্ছায় যোগদানকারী ব্যক্তির মতো গণ্য হবে না তবুও সেও ভূমিধ্বসের মাধ্যমে ধ্বংস হবে
।
মহানবী (সা.) বলেছেন :
“
ঐ কওমের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হচ্ছি যে
,তারা একত্রে এক জায়গায় মৃত্যুবরণ করবে অথবা নিহত হবে
।
তবে তাদের অবস্থা ও স্থান বিভিন্ন ধরনের হবে
।
”
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো :
“
হে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! এটি কিভাবে সম্ভব
?তখন তিনি বলেছিলেন :
“
এটি এ কারণে হবে যে
,তাদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যোগদান করতে বাধ্য হবে অর্থাৎ যে সব ব্যক্তি একত্রে একই স্থানে মৃত্যুবরণ করবে তাদের নিয়্যত অনুসারে কিয়ামত দিবসে তাদের বিচার ও প্রতিদান দেয়া হবে
।
কারণ তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য ভীত হয়ে সুফিয়ানীর সেনাদলে যোগদান করবে
।
আবার কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে যোগদান করতে বাধ্য করা হবে
।
আবার আরো কিছু সংখ্যক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ঐ সেনাদলে যোগদান করবে
।
আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানী বাহিনীর যে সব সৈন্য ভূমিধ্বসের মাধ্যমে ভূ-গর্ভে প্রোথিত হবে ও প্রাণ হারাবে তাদের সংখ্যা বারো হাজার হবে
।
তাদের সংখ্যা সত্তর হাজার হবে না
।
আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানী বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ ভূমিধ্বসের মাধ্যমে নিহত হবে
,এক-তৃতীয়াংশের মুখমণ্ডল পিঠের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হবে এবং অবশিষ্টাংশ অক্ষত থাকবে
।
সুফিয়ানীর পশ্চাদপসরণের সূচনা
মক্কা যাওয়ার পথে সুফিয়ানী বাহিনী ভূ-গর্ভে প্রোথিত হবার মুজিযা সংঘটিত হবার পর মাধ্যমে সুফিয়ানীর ভাগ্য-তারকা অস্তমিত হওয়া শুরু হবে
।
অপরদিকে ঐ সময় হযরত মাহ্দী (আ.)-এর ভাগ্য-তারকা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর এবং সৌভাগ্যের শীর্ষে উন্নীত হতে থাকবে
।
সুফিয়ানী বাহিনীর ভূমিধ্বসে ধ্বংস হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর হিজাযে তার আর কোন সামরিক তৎপরতার কথা রেওয়ায়েতসমূহে উল্লিখিত হয়নি
।
এ ঘটনা হিজাযে সুফিয়ানীর তৎপরতার অবসান ঘটাবে
।
তবে তখনও মদীনায় তার সেনাদল বিদ্যমান থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়
।
যারা (অমুক বংশের) সরকারী সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকবে এবং রেওয়ায়েতসমূহ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে
,শত্রু
সেনাদলের ভূমিধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবার মুজিযা সংঘটিত হবার পর হযরত মাহ্দী (আ.) মদীনা মুক্ত করার জন্য কয়েক হাজার যোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত সেনাবাহিনী নিয়ে মদীনার উদ্দেশে যাত্রা করবেন এবং সেখানে তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন
।
যাহোক
,ইমাম মাহ্দী (আ.) মদীনা বিজয় ও হিজায মুক্ত এবং তাঁর শত্রুদেরকে দমন করবেন
।
হিজায থেকে ইরাক ও শাম পর্যন্ত যেখানেই সুফিয়ানী বাহিনী তাঁর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে সেখানেই তারা পরাজিত হবে
।
রেওয়ায়েতসমূহে এক বা একাধিক যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে
।
বলা হয়েছে যে
,ইরাকে সুফিয়ানী বাহিনী ও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সৈন্য ও তাঁর খোরাসানী সঙ্গী-সাথীদের মাঝে ঐ সব যুদ্ধ সংঘটিত হবে
।
আহ্ওয়াযের যুদ্ধ
ইরানী ও ইয়েমেনী ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের হাতে সুফিয়ানী বাহিনীর পরাজিত হবার পর ইরাক ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের প্রতিষ্ঠিত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে আসাই হবে স্বাভাবিক
।
আর হিজাযে সুফিয়ানীর অলৌকিকভাবে উত্তরোত্তর পরাজয় বরণ ইরাকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথী ও সমর্থকদের শক্তি দৃঢ়ীকরণে সহায়তা করবে
।
রেওয়ায়েতসমূহ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে
,আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী শক্তিসমূহ সুফিয়ানী বাহিনীর পরাজয় বরণ করার পর ইরাকে অবস্থান গ্রহণ করবে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে বাইআত করার জন্য হিজাযে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করবে
।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহীরা যারা কুফায় আগমন করবে তারা সেখানে অবতরণ এবং অবস্থান গ্রহণ করবে
।
আর মাহ্দী আবির্ভূত হবে তখন তারা একটি প্রতিনিধি দলকে বাইআত করার জন্য তার কাছে পাঠাবে
।
”
কিন্তু ইরাকে সুফিয়ানী পূর্ণ পরাজয় বরণ করার কারণসমূহ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু রেওয়ায়েতে ইরাকে সুফিয়ানী বাহিনীর সঙ্গে স্বতন্ত্র যুদ্ধ ও সংঘর্ষের কথাও বর্ণিত হয়েছে
।
আর তাতে সুফিয়ানী কেবল ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর সাথেই সংঘর্ষে লিপ্ত হবে
।
এ সময় ইমাম মাহ্দী (আ.) ইরানী সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক শুআইব ইবনে সালিহকে তাঁর নিজ সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করবেন
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর এক বিরাট অংশ ইরানী
,ইয়েমেনী এবং অন্যান্য ইসলামী দেশের অধিবাসী হবে
।
কতিপয় রেওয়ায়েতে কেবল ইস্তাখরের ফটকের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ যুদ্ধটি সুফিয়ানী বাহিনী ও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর মধ্যে হবে যা ভয়াবহ হবে বলে বর্ণিত হয়েছে
।
আর ইস্তাখর দক্ষিণ ইরানের একটি প্রাচীন নগরী এবং আহ্ওয়ায অঞ্চলে অবস্থিত যা ইসলামের প্রথম যুগে উন্নত বসতি ছিল
।
আর এ শহরের ধ্বংসাবশেষ তেলসমৃদ্ধ নগরী মসজিদে সুলাইমানের অদূরে আজও বিদ্যমান
।
বর্ণিত আছে যে
,ইস্তাখর নগরী হযরত সুলাইমান (আ.) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল এবং তিনি শীতকালে সেখান থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন অর্থাৎ এ নগরী ছিল তাঁর শীতকালীন রাজধানী
।
আর মসজিদে সুলাইমান ছিল একটি মসজিদ যা হযরত সুলাইমান (আ.) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল
।
আরো দু
’
টি রেওয়ায়েত আছে যেগুলোয় ইরানী সেনাবাহিনীর সমবেত হওয়ার স্থান
‘
বাইযা-ই ইস্তাখর
’
অঞ্চল বলে উল্লেখ করা হয়েছে
।
অর্থাৎ বাইযা-ই ইস্তাখর হচ্ছে ইস্তাখর নগরীস্থ একটি শ্বেতাঞ্চল এবং সম্ভবত তা মসজিদে সুলাইমানের নিকটবর্তী উচ্চ চূড়াসমূহ যা
‘
কূহে সেফীদ
’
(শ্বেতপর্বত) বলে প্রসিদ্ধ
।
একইভাবে দু
’
টি অথবা তিনটি রেওয়ায়েত থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে
,যখন ইমাম মাহ্দী (আ.) পবিত্র মদীনা থেকে ইরাকের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন তখন তিনি সর্বপ্রথম বাইযা-ই ইস্তাখর এলাকায় অবতরণ করবেন এবং সেখানে ইরানীরা তাঁর হাতে বাইআত করবে এবং তাঁর নেতৃত্বে সেখানে তারা সুফিয়ানী বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং সুফিয়ানীকে পরাজিত করবে
।
এ যুদ্ধের পর ইমাম মাহ্দী (আ.) আলোর সাত হাওদা সহকারে ইরাকে প্রবেশ করবেন
।
জনগণ বুঝতে পারবে না যে
,তিনি কোন্ হাওদার মধ্যে আছেন
।
আমরা এতৎসংক্রান্ত বিশদ বিবরণ হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ও তাঁর আন্দোলনের অধ্যায়ে প্রদান করব
।
ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত আছে
।
তিনি বলেছেন :
“
যখন সুফিয়ানীর অশ্বারোহী সৈন্যরা কুফার দিকে যাবে তখন সে তার একদল সৈন্যকে খোরাসানীদের সন্ধানে প্রেরণ করবে
।
আর ঐ সময় খোরাসানবাসীরা ইমাম মাহ্দীর সন্ধানে বের হবে
।
তখন কালো পতাকাসমেত হাশেমী মাহ্দীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন
।
আর তখন ইরানী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক শুআইব ইবনে সালিহ্ ইমাম বাহিনীর সম্মুখভাগে থাকবে
।
আর এভাবেই মাহ্দী ইস্তাখর নগরীর ফটকের কাছে সুফিয়ানীর সঙ্গী-সাথীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং তাদের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংঘটিত হবে
।
এ সময় কালো পতাকাসমূহ স্পষ্ট দেখা যাবে এবং সুফিয়ানীর অশ্বারোহীরা পলায়ন করা শুরু করবে
।
”
[এ সময় জনগণ ইমাম মাহ্দীর সাথে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা করবে এবং তাঁকে সন্ধান করতে থাকবে
।
]
‘
হাশেমী তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে
’
-এ বাক্যটির অর্থ হলো হযরত মাহ্দী (আ.) ও হাশেমী খোরাসানী (ইরানী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক) একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করবেন
।
আর পরবর্তী রেওয়ায়েতে স্পষ্ট ভাষায় এ বিষয়টি বর্ণিতও হয়েছে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সন্ধানে ইরানী দলগুলো তার হাতে বাইআত করে তাঁর পাশে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে
।
এ কারণেই তিনি বসরার পাশ দিয়ে হিজাযের স্থল সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে দক্ষিণ ইরানের উদ্দেশে যাত্রা করবেন
।
এ সময়ই ইরানী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হাশেমী খোরাসানী ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন এভাবে যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.) হিজায মুক্ত করে দক্ষিণ ইরান অভিমুখে যাত্রা করবেন এবং তাদের (ইরানী সেনাবাহিনী) সাথে সাক্ষাৎ করবেন
।
তখন সুফিয়ানী বাহিনীর সাথে উল্লিখিত যুদ্ধ সংঘটিত হবে
।
আর রেওয়ায়েতেও উল্লিখিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানীর সৈন্যরা যখন দক্ষিণ ইরান ও ইরাকে প্রবেশ করবে তখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হবে
।
আর সম্ভবত এবারে সুফিয়ানী বাহিনী পারস্য উপসাগর ও বসরা হয়ে পাশ্চাত্য বাহিনীর সাথে যুদ্ধে যোগদান করবে যা রেওয়ায়েতেও উল্লিখিত হয়েছে
।
“
সুফিয়ানী ইরাকে যুদ্ধ করার সময় তার সেনাবাহিনীকে বিশ্বের সর্বত্র প্রেরণ করবে
।
”
এ বিষয়টি ইরাক এবং ইরান-ইরাক সীমান্তসমূহে সুফিয়ানী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি ও অবস্থানের কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে
।
আর পারস্যোপসাগরে সুফিয়ানীর নৌবাহিনী ও তার পাশ্চাত্য মিত্র শক্তিসমূহের উপস্থিতির বিষয়টি রেওয়ায়েত কর্তৃকও সমর্থিত হয়েছে
।
নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতে দক্ষিণ ইরানে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রবেশ এবং ইস্তাখর নগরীর ফটক অথবা শ্বেতপর্বতের যুদ্ধের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে
।
তবে দুঃখজনকভাবে রেওয়ায়েতের মূল ভাষ্যে এক ধরনের বিভ্রাট বিদ্যমান
।
“
কুফা ও বাগদাদে প্রবেশ করার পর সুফিয়ানী তার সেনাবাহিনীকে বিশ্বের সর্বত্র মোতায়েন করবে
।
মধ্য এশিয়ার দিক থেকে খোরাসানবাসীদের পক্ষ থেকে সুফিয়ানী ভয়-ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন হবে
।
তখন প্রাচ্যের সেনাদল সুফিয়ানী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাবে এবং তাদেরকে হত্যা করবে
।
যখন এ সংবাদ তার কাছে পৌঁছবে তখন সে এক বিশাল সেনাবাহিনী ইস্তাখরে প্রেরণ করবে
।
আর এ সময় সুফিয়ানী ও তার সৈন্যরা এবং হযরত মাহ্দী (আ.) ও হাশেমী শ্বেতপর্বতে পরস্পর যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত হবে
।
আর সেখানেই তাদের মধ্যে এতটা ভয়ঙ্কর যুদ্ধ বাঁধবে এবং অশ্বারোহী সৈন্যরা এতটা হত্যাযজ্ঞ চালাবে যে
,অশ্বসমূহের পায়ের নলা (গোছা) পর্যন্ত রক্তে রঞ্জিত হবে
।
প্রথম রেওয়ায়েতে আহ্ওয়ায যুদ্ধে সুফিয়ানী বাহিনীর পরাজয় বরণের ফলে যে আশ্চর্যজনক প্রভাব সৃষ্টি হবে তা বর্ণিত হয়েছে
।
এর ফলে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে যোগ দেয়া ও তাঁর হাতে বাইআত করার জন্য তখন মুসলিম জাতিসমূহের মাঝে এক গণজোয়ারের সৃষ্টি হবে
।
“
এ সময় জনগণ (বিশ্ববাসী) ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করবে এবং তাঁকে সন্ধান করতে থাকবে
।
”
যাহোক
,হিজায অঞ্চলে ভূমিধ্বসে সুফিয়ানী বাহিনীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ইরাকে সুফিয়ানীর সংঘটিতব্য যুদ্ধসমূহ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ যেমনই হোক না কেন যতটুকু ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই তা হচ্ছে এই যে
,এ ঘটনার পর সুফিয়ানী পশ্চাদপসরণ করবে ও তার পরাজয়ের পর্যায় শুরু হয়ে যাবে
।
এরপর থেকে তার সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা তার শাসনাধীন অঞ্চল অর্থাৎ শামদেশ রক্ষা
,ফিলিস্তিন ও বাইতুল মাকাদ্দাসের সর্বশেষ প্রতিরক্ষা ব্যূহ শক্তিশালীকরণ এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সার্বিকভাবে নিয়োজিত করবে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে সুফিয়ানীর যুদ্ধসমূহ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে মহান বিজয় ও সাফল্যের যুদ্ধ অর্থাৎ কুদ্স্ বিজয় ও ফিলিস্তিন মুক্ত করার যুদ্ধের কথাই কেবল উল্লিখিত হয়েছে
।
আর এ যুদ্ধই হবে সুফিয়ানীর সর্বশেষ যুদ্ধ
।
আর এ যুদ্ধে তার মিত্রদের অর্থাৎ ইহুদীদের এবং পাশ্চাত্যেরও পরাজয় হবে
।
কুদ্স বিজয়ের যুদ্ধে সুফিয়ানী
এ মহাসমর সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,সৌভাগ্যবশত সুফিয়ানী অনেক সংকটের মুখোমুখি হতে থাকবে
।
প্রথম সংকট : শামদেশে তার জনসমর্থন ও গণভিত্তি দুর্বল হওয়া
।
কারণ তার শাসন
,ক্ষমতা ও অবস্থান যতই তার অনুকূলে থাকুক না কেন শামের জনগণ তো মুসলিম এবং তারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মুজিযা ও কারামতসমূহ এবং তাদের যুগের অত্যাচারী সুফিয়ানীর পরাজয় বরণ ও মুসলমানদের শত্রুদের স্বার্থানুকূলে তার ভূমিকা ও কর্মতৎপরতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে
।
এ কারণেই শামবাসীদের মধ্যে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও ঝোঁক প্রবলভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং সুফিয়ানী ও তার রাজনীতির ব্যাপারে তাদের বিতৃষ্ণা ও অসন্তুষ্টি বাড়তে থাকবে
।
তাই তারা তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে
।
বরং আমার বিশ্বাস মতে সিরিয়া
,লোবানন
,জর্দান ও ফিলিস্তিনে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থকদের ব্যাপক ও জনপ্রিয় আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকবে
।
কারণ রেওয়ায়েতসমূহ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.) শামে সেনা অভিযান পরিচালনা করবেন এবং দামেশক থেকে 30 কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত
‘
মারজ আযরা
’
নামক অঞ্চলে সেনাছাউনী স্থাপন করবেন
।
এ থেকে ন্যূনপক্ষে প্রতীয়মান হয় যে
,সুফিয়ানী তার রাজত্বের সীমান্ত রক্ষা এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না
।
এমনকি রেওয়ায়েতসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,সুফিয়ানী নিজ রাজধানী দামেশক ত্যাগ করে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে গমন করবে এবং রামাল্লা অঞ্চলে তার রাজধানী ও সেনাসদর দপ্তর স্থাপন করবে
।
উল্লেখ্য যে
,এই রামাল্লা শহরেই রোমীয় বিদ্রোহীরা অবতরণ করবে
।
একইভাবে রেওয়ায়েতসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.) যুদ্ধ শুরু করার ব্যাপারে দেরী করবেন এবং বেশ কিছুকাল দামেশকের শহরতলীতে অবস্থান করতে থাকবেন যাতে করে শামের মুমিন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যারা তখনও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে যোগদান করেননি তারা তাঁর সাথে যোগ দিতে পারে
।
অতঃপর তিনি সুফিয়ানীর কাছে প্রস্তাব দেবেন যাতে করে সে আলোচনা করার জন্য সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে
।
সে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর মহান ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়বে এবং তাঁর হাতে বাইআত করবে
।
সে তখন যুদ্ধ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেবে এবং অত্র এলাকাটির নিয়ন্ত্রণভার ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে অর্পণ করবে
।
কিন্তু সুফিয়ানীর ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা ও পৃষ্ঠপোষকরা এ কারণে তাকে ভর্ৎসনা করবে এবং তাকে তার গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে
।
এ সব ঘটনা কুদ্স বিজয় ও ফিলিস্তিন মুক্ত করার কিছু পূর্বে সংঘটিত হবে এবং আমরা এটি মাহ্দী (আ.) সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে অধ্যয়ন করব
।
শামে সুফিয়ানীর গণভিত্তি ও জনসমর্থন দুর্বল হয়ে পড়া এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থনে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়া ব্যতীত প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক মাপকাঠিসমূহের আলোকে এ সব ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায় না
;বরং কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে
,সুফিয়ানীর বাহিনীর একটি অংশ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে বাইআত এবং তাঁর সেনাদলে যোগদান করবে
।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
তখন সে (ইমাম মাহ্দী) কুফায় আসবে এবং আবির্ভূত হওয়া পর্যন্ত যতদিন আল্লাহ্ চাইবেন ততদিন সেখানেই থাকবে
।
এরপর সে ও তার সঙ্গী-সাথীরা মারজ আযরায় যাবে এবং অধিকাংশ জনগণই তার সাথে যোগ দেবে
।
... আর তারা পরস্পর সাক্ষাৎ করা ও যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সুফিয়ানী রামাল্লা নগরীতে অবস্থান করতে থাকবে
।
আর ঐ দিবসটি হবে প্রকৃত মুমিনকে শনাক্ত করার দিবস
।
যে সব লোক সুফিয়ানীর সাথে থাকবে তারা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের অনুসরণ করবে না এবং জনগণের একটি অংশ যারা মহানবী (সা.)-এর বংশধরদের সাথে থাকবে তাদের অনেকেই সুফিয়ানীপন্থী হয়ে যাবে
।
ঐ দিন প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ পতাকার দিকে দ্রুত ধাবিত হবে
।
আর ঐ দিন হবে প্রকৃত মুমিনদেরকে চেনার দিবস
।
”
ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
যখন সুফিয়ানী মাহ্দীর দিকে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে তখন তারা বাইদার মরুপ্রান্তরে ধ্বংস হবে
।
আর এ সংবাদ শামবাসীদের কাছে পৌঁছবে
।
তারা তাদের খলীফাকে বলবে : মাহ্দী আবির্ভূত হয়েছে
।
তাঁর হাতে বাইআত করুন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য করুন
।
আর যদি তা না করেন তাহলে আমরা আপনাকে হত্যা করব
।
সে বাইআত করার জন্য কতিপয় ব্যক্তিকে মাহ্দীর কাছে প্রেরণ করবে
।
আবার অন্যদিকে মাহ্দীও তাঁর সেনাদল নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছবে
।
”
নিম্নোক্ত এ রেওয়ায়েতে ব্যাপক গণজাগরণ
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বন্ধু এবং সুফিয়ানীবিরোধীদের ব্যাপকভিত্তিক আন্দোলন ও কর্মকাণ্ডের কথা উল্লিখিত হয়েছে
।
বর্ণিত হয়েছে যে
,
“
হযরত মাহ্দী (আ.) বলবেন : আমার পিতৃব্যপুত্রকে আমার কাছে নিয়ে এসো যাতে করে আমি তার সাথে কথা বলতে পারি
।
অতঃপর সে (সুফিয়ানী) তাঁর কাছে আসবে এবং তাঁর সাথে আলোচনা করবে
।
সে তার সকল কর্তৃত্ব ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে অর্পণ করবে এবং তাঁর হাতে বাইআত করবে
।
এরপর যখন সুফিয়ানী তার বন্ধুদের কাছে ফিরে যাবে তখন বনি কালব গোত্র তাকে অনুতাপ করাবে
।
এ কারণেই সে ইমামের কাছে ফিরে গিয়ে চুক্তি বাতিল করার অনুরোধ করবে এবং ইমামও তার বাইআত বাতিল করে দেবেন
।
তখন সুফিয়ানী তার বাহিনীকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মোতায়েন করবে
।
কিন্তু ইমাম মাহ্দী (আ.) তাকে পরাজিত করবেন এবং মহান আল্লাহ্ তাঁর হাতে রোমীয়দেরকে ধ্বংস করবেন
।
”
বনি কালব গোত্র তাকে অনুতাপ করাবে
-এ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে তাকে হযরত মাহ্দী (আ.)-এর হাতে বাইআত করার জন্য অনুতাপ করাবে
।
কালব সুফিয়ানীর মাতুলদের গোত্রের নাম
।
আসলে যারা সুফিয়ানীর পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে এবং তার হুকুমতকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থনকারী গণআন্দোলন ও বিপ্লবের বরাবরে পতনের হাত থেকে রক্ষা করবে তারা হবে তার ইহুদী ও রোমীয় পৃষ্ঠপোষক
।
যেমন পূর্বোক্ত রেওয়ায়েত ও অন্যান্য রেওয়ায়েত থেকেও এ অর্থটি স্পষ্ট হয়ে যায় এবং আমরা আল কুদ্স বিজয়ের মহাসমর সংক্রান্ত অধ্যায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব
।
যাহোক
,সুফিয়ানী এ গণজোয়ারে একটি পক্ষকেও তার দিকে টানতে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.) তাকে যে সুযোগ দেবেন তার সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না
।
আর শামের মুসলমানরাও সুফিয়ানী সরকার ও তার সেনাশক্তির পতন ঘটাতে সক্ষম হবে না
।
এ কারণেই সুফিয়ানী এবং তার মিত্ররা নিজেদেরকে এ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে থাকবে যা রেওয়ায়েতসমূহের ভাষ্য অনুসারে আক্কা থেকে সূর
,সেখান থেকে সমুদ্র সৈকতস্থ আনতাকিয়া এবং দামেশক থেকে তাবারীয়াহ্ ও আল কুদসের অভ্যন্তরভাগ পর্যন্ত প্রসার লাভ করবে
।
এ সময় মহান আল্লাহর অভিশাপ এবং ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সেনাবাহিনীর ক্রোধ সুফিয়ানী ও তার মিত্রদের ওপর আপতিত হবে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে ঐশ্বরিক মুজিযা ও নিদর্শনাদি বাস্তবায়িত হবে
।
সুফিয়ানী এবং তার ইহুদী ও পাশ্চাত্য মিত্র ও পৃষ্ঠপোষকদের ওপর দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভাগ্য আপতিত হবে এবং তারা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করবে
।
আর পরিণামে সুফিয়ানী ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর একজন সৈনিকের হাতে বন্দী হবে এবং রেওয়ায়েতসমূহ অনুযায়ী তাকে তাবারীয়াহ্ হ্রদের পাশে অথবা আল কুদসে প্রবেশ অঞ্চলের কাছে হত্যা করা হবে
।
আর এভাবেই সেই খোদাদ্রোহী নাস্তিক যে পনর মাসব্যাপী এমন সব জঘন্য অপরাধ করেছে যা অন্য কারো পক্ষে এর থেকে দীর্ঘ সময়েও করা সম্ভব নয়
,তার পাপপূর্ণ কালো জীবনের চির অবসান হবে
।