ইরানী জাতি এবং আবির্ভাবের যুগে তাদের ভূমিকা
ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পূর্ব থেকেই প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে ইসলামী বিশ্বের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইরান পাশ্চাত্যের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসাবে বিবেচিত হতো এবং মুসলমানদের দৃষ্টিতে দেশটি ছিল একটি ইসলামী ঐতিহ্যবাহী দেশ। পাশ্চাত্যের এজেন্ট ও ইসরাইলের মিত্র
‘
শাহ
’
ছিলেন ইরানের শাসক এবং তিনি ভালোভাবে তাঁর বিদেশী প্রভুদের সেবায় লিপ্ত ছিলেন ও এ ভূ-খণ্ডকে পুরোপুরি তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
ইরান সম্পর্কে অন্যরা যে ধারণা পোষণ করত তা ব্যতীত আমার মতো এক শিয়া মুসলমানের কাছে ইরান ছিল এমন এক দেশ যেখানে ইমাম রেযা (আ.)-এর পবিত্র মাযার এবং কোম নগরীর ইসলামী জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র বিদ্যমান এবং সে দেশটি শিয়া মাযহাব
,আলেম এবং মূল্যবান ধর্মীয় গ্রন্থাদি প্রণয়ন ও রচনা করার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশ। বিশেষ করে
,আমরা যখন ইরানীদের প্রশংসায় বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ অধ্যয়ন করতাম তখন আমরা পরস্পরকে বলাবলি করতাম যে
,এ রেওয়ায়েতগুলো ঐ সব রেওয়ায়েতের মতো যেগুলোয় বনি খুযাআহ্ বা ইয়েমেনীদের প্রশংসা বা নিন্দা করা হয়েছে। এ কারণেই যেসব রেওয়ায়েতে বিভিন্ন গোত্র
,দল ও কতিপয় দেশের প্রশংসা বা নিন্দা বিদ্যমান সেগুলো সমালোচনার ঊর্ধ্বে হতে পারে না। যদি এসব রেওয়ায়েত সহীহ্ হয়ে থাকে তবুও এগুলো ইসলামের প্রথম যুগের জাতিগুলোর বিভিন্ন অবস্থা
,অতীত ইতিহাস এবং পূর্ববর্তী শতাব্দীসমূহের সাথেই জড়িত।
তখন আমাদের মধ্যে একটি ধারণা খুব প্রচলিত ছিল যে
,তদানীন্তন মুসলিম উম্মাহ্ মূর্খতার মধ্যে নিমজ্জিত বিশ্ব কুফরী শক্তির আধিপত্যে ও কর্তৃত্বের অনুগত ছিল এবং তাদের সেবাদাস বলে গণ্য হতো। মুসলিম জাতি অন্য কোন জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল না
,এমনকি ইরানী জাতিও অন্য সকল জাতি অপেক্ষা নিকৃষ্ট ছিল। কারণ
,তারা কুফরী সভ্যতা
,জাতীয়তা ও বর্ণবৈষম্যভিত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের সমর্থক ছিল। শাহ
,তাঁর পাশ্চাত্য প্রভুরা এবং তাদের এজেন্টরা এ ধরনের মতবাদ (বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদ) ও ধ্যান-ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটানো এবং ইরানী জাতিকে এরূপ ধ্যান-ধারণার ওপর গড়ে তোলার জন্য জোর চালাত।
ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের সম্পূর্ণভাবে অপ্রস্তুত করে ফেলে এবং তাদের দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় এতটা প্রফুল্ল হয়েছিল যে
,বিগত শতাব্দীগুলোর মধ্যে তা ছিল বিরল এক ঘটনা
;বরং এর চেয়েও বড় কথা হলো যে
,তারা এ ধরনের বিজয়ের কথা চিন্তাও করতে পারে নি। মুসলিম উম্মাহ্ ও সকল মুসলিম দেশ এ আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল। মুসলিম উম্মার মহা আনন্দের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে
,সর্বত্র ইরানী জাতি এবং সালমান ফার্সীর সমর্থকদের শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনা হতে থাকে। যেমন ইসলামী বিশ্বের সুদূর পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সে সময় বিভিন্ন শিরোনামে এ সম্বন্ধে শত শত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ সময় প্রকাশিত একটি তিউনিসীয় ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল
‘
জ্ঞান ও পরিচিতি
’
যাতে বর্ণিত হয়েছিল :
“
মহানবী (সা.) মুসলিম উম্মার নেতৃত্বদানের জন্য ইরানীদেরকে মনোনীত করেছেন।
”
এ সব প্রবন্ধ ইরানীদের ব্যাপারে আমাদের অতীত ধারণাকে পুনঃমূল্যায়ন করতে বাধ্য করে এবং আমরা বুঝতে পারি যে
,ইরানী জাতির ব্যাপারে মহানবী (সা.) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ কেবল তাদের অতীত ইতিহাসের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়
;বরং তাদের ভবিষ্যতের সাথেও জড়িত।
হাদীসের সূত্রসহ ইরানী জাতির সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ অধ্যয়ন ও ব্যাখ্যা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে
,এসব রেওয়ায়েত ও হাদীস ইরানী জাতির অতীত ইতিহাসের সাথেই বেশি জড়িত এবং সবচেয়ে আর্কষণীয় ব্যাপার হচ্ছে
,শিয়া হাদীস সূত্রসমূহের চেয়ে সুন্নী হাদীস সূত্রসমূহে এ ধরনের হাদীস বেশি বিদ্যমান।
যখন ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং তাঁর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে ইরানী এবং ইয়েমেনীদের বিশেষ ভূমিকা উল্লিখিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে
,তারাই হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী এবং তাঁর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার দুর্লভ সম্মানের অধিকারী তখন কী আর করার আছে
?...আর একইভাবে মিশরের কতিপয় যোগ্য ব্যক্তি
,শামের কতিপয় প্রকৃত মুমিন এবং ইরাকের বেশ কিছু দল বা গোষ্ঠী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে
,তারা ইমামের সৈনিক হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে ও এ মহাকল্যাণ থেকে উপকৃত হবে। একইভাবে ইসলামী বিশ্বের আনাচে-কানাচে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যে সমর্থকবৃন্দ ছড়িয়ে আছেন তারাও মহান আল্লাহর স্বর্গীয় এ করুণা দ্বারা ধন্য হবে। অর্থাৎ তারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শুধু সৈনিকই নয়
;বরং তাঁর বিশেষ সাথী
,সহকারী ও উপদেষ্টাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আমরা এখন সাধারণভাবে যেসব রেওয়ায়েত ইরানী জাতির ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো আলোচনা করব। এরপর আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে তাদের ভূমিকার ওপরও আলোকপাত করব।
ইরানীদের প্রশংসায় পবিত্র কোরআন ও হাদীসসমূহ
পবিত্র কোরআনের যে সব আয়াত ইরানীদের সাথে সম্পর্কিত বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহ নয় প্রকার। যথা :
1
.সালমান ফার্সীর সমর্থকগণ
;
2
.প্রাচ্য দেশের জনগণ
;
3
.খোরাসানবাসী
;
4
.কালো পতাকাবাহীরা
;
5
.পারস্যবাসী
;
6
.গৌর বর্ণের মুখবিশিষ্টরা
;
7
.গৌর বর্ণের মুখবিশিষ্টদের সন্তানরা
;
8
.কোমের অধিবাসী
;
9
.তালেকানের অধিবাসী
;
অবশ্য আপনারা দেখতে পাবেন যে
,প্রধানত এসব শিরোনামের কাঙ্ক্ষিত অর্থ ও উদ্দেশ্য একটাই। আরো বেশ কিছু সংখ্যক হাদীস আছে যেগুলোতে তাদেরকে ভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
)
و إن تولّوا يستبدل قوما غيركم
(
‘
আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তোমাদের স্থলে অন্য এক জাতিকে আনবেন
’
-পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় স্বয়ং মহান আল্লাহ্ বলেছেন :
)
هأنتم هؤلاء تدعون لتنفقوا في سبيل الله فمنهم من يبخل و من يبخل فإنّما يبخل عن نفسه و الله الغنيّ و أنتم الفقراء و إن تتولّوا يستبدل قوما غيركم ثمّ لا يكونوا أمثالكم
(
“
জেনে রাখ যে
,মহান আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য তোমাদেরকে ডাকা হবে। তোমাদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি (ব্যয় করার ক্ষেত্রে) কার্পণ্য করবে
;আর যে কার্পণ্য করবে সে আসলে তার নিজের প্রতি কার্পণ্য করবে
;মহান আল্লাহ্ই অমুখাপেক্ষী এবং তোমরাই (মহান আল্লাহর) মুখাপেক্ষী
;আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তিনি তোমাদের থেকে ভিন্ন এক জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মতো হবে না।
”
তাফসীর গ্রন্থ আল্ কাশশাফ প্রণেতা বলেছেন যে
,মহানবী (সা.)-কে আয়াতটিতে উল্লিখিত জাতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। হযরত সালমান ফারসী মহানবী (সা.)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। মহানবী (সা.) সালমানের ঊরুতে হাত দিয়ে চাপড় মেরে বলেছিলেন :
“
যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ
,ঈমান যদি ছায়াপথসমূহেও বিদ্যমান থাকে
,তাহলে পারস্যের একদল লোক সেখান থেকেও তা নিয়ে আসবে।
”
ইমাম বাকির (আ.) থেকে মাজমাউল বায়ান গ্রন্থের রচয়িতা বর্ণনা করেছেন : তিনি (ইমাম বাকির) বলেছেন :
“
হে আরব জাতি! যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও
,তাহলে মহান আল্লাহ্ আরেক জাতিকে অর্থাৎ ইরানীদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।
”
তাফসীরে আল মীযানের রচয়িতা বলেছেন :
“
আদ দুররুল মানসুর
,আবদুর রাজ্জাক
,আবদ ইবনে হামীদ তিরমিযী
,ইবনে জারীর
,ইবনে আবী হাতিম
,কিতাব-ই আওসাত নামক গ্রন্থে তাবরানী এবং দালায়েল নামক গ্রন্থে বাইহাকী আবু হুরাইরাহ্ থেকে একটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। আবু হুরাইরাহ্ বলেছেন :
)
و إن تتولّوا يستبدل قوما غيركم ثمّ لا يكونوا أمثالكم
(
‘
আর যদি তোমরা (আরবরা) মুখ ফিরিয়ে নাও
,তাহলে মহান আল্লাহ্ তোমাদের থেকে ভিন্ন একটি জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন
,অতঃপর তারা তোমাদের মতো হবে না
’
-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! তারা কারা যারা আমাদের স্থলাভিষিক্ত হবে যখন আমরা মুখ ফিরিয়ে নেব। মহানবী (সা.) তখন সালমান ফারসীর কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিলেন : সে এবং তার জাতি। ঐ আল্লাহর শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ
,ঈমান যদি দূরতম ছায়াপথে থাকে তদুপরি একদল পারস্যবাসী তা সেখান থেকেও নিয়ে আসবে।
”
এ রেওয়ায়েত সদৃশ আরো একটি রেওয়ায়েত ভিন্ন সূত্রে আবু হুরাইরাহ্ এবং একইভাবে ইবনে মারদুইয়াহ্ ও জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
এ রেওয়ায়েতে দু
’
টি অর্থ বিদ্যমান যে ব্যাপারে সবার ঐকমত্য আছে। একটি অর্থ হচ্ছে এই যে
,আরবদের পরে ইসলামের পতাকা বহনের দায়িত্ব পাবে ইরানীরা। কারণ
,তারা ঈমান অর্জন করবে এমনকি যদি তা তাদের নাগালের বাইরেও থাকে।
এ রেওয়ায়েতে তিনটি বিষয় রয়েছে। যথা :
প্রথম বিষয়
:
আরব জাতিকে মহান আল্লাহ্ কর্তৃক তাদের স্থলে ইরানীদেরকে অধিষ্ঠিত করার হুমকি প্রদান
;এটি কি কেবল মহানবী (সা.)-এর যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট
,না তারপরেও যে কোন যুগ ও প্রজন্মের সাথে এমনভাবে সংশ্লিষ্ট যে
,তা নিম্নোক্ত এ অর্থ ব্যক্ত করে : যদি তোমরা (আরবরা) ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও আর তা যে কোন প্রজন্মের ক্ষেত্রেই হোক না কেন
,পারস্যবাসীদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করব। আয়াতের বাহ্য অর্থ থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,এ হুমকি
‘
উপলক্ষ বিধানের ক্ষেত্রকে সীমিত করে না
’
-এ নিয়মানুসারে পরবর্তীকালে সকল যুগ ও প্রজন্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ যে কোন প্রজন্মের জন্যই চন্দ্র-সূর্যের ন্যায় ভূমিকা পালন করে থাকে অর্থাৎ চন্দ্র-সূর্য যেমন সবসময় আলো দান করে যাচ্ছে তদ্রূপ পবিত্র কোরআনও সব সময় এবং সকল প্রজন্মের ক্ষেত্রে অলোকবর্তিকাস্বরূপ। কারণ
,এ বিষয়টি রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে এবং মুফাসসিরগণও এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
দ্বিতীয় বিষয়
:
“
পারস্যের একদল লোক ঐ ঈমান অর্জন করবে
,সবাই না
”
-এ থেকে স্পষ্ট বোধগম্য হয় যে
,এ বাক্যটি পারস্যের প্রতিভাবান ব্যক্তিদের প্রশংসা
,তা সকল পারস্যবাসীর প্রশংসা নয়।
কিন্তু আলোচ্য আয়াত ও রেওয়ায়েতের বাহ্য অর্থ থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,তা সাধারণভাবে সকল পারস্যবাসীরই প্রশংসা করেছে। কারণ
,তাদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা উচ্চতর পর্যায়ের ঈমান অথবা জ্ঞান অর্জন করেন
,বিশেষ করে আরবদের পরে সে গোষ্ঠী যারা ইসলাম ধর্মের ধারক-বাহক তাদেরকে পর্যালোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। অতএব
,যে প্রশংসা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তা এদিক থেকে যে
,তারা এ ধরনের প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে এবং তাঁদের অনুসরণ করে।
তৃতীয় বিষয়
:
এ পর্যন্ত কি আরবদের ইসলামের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন এবং পারস্যবাসীদেরকে আরবদের স্থলাভিষিক্ত হবার বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়েছে
?
জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে এ বিষয়টি গোপন নয় যে
,আরব-অনারব নির্বিশেষে মুসলমানরা প্রকৃত ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এভাবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে
,فعل شرط
অর্থাৎ শর্ত বাক্য
‘
যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর
’
বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কেবল
جوات شرط
অর্থাৎ শর্তের উত্তর
‘
আরবদের স্থলে পারস্যবাসীদের স্থলাভিষিক্ত হওয়া
’
অবশিষ্ট আছে। আর এ ক্ষেত্রে আমরা সূক্ষ্ম ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করলে বুঝতে পারব যে
,মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী রেওয়ায়েত যা তাফসীরে নুরুস্ সাকালাইন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,এ স্থলাভিষিক্তকরণ বনি উমাইয়্যার খিলাফতকালে বাস্তবায়িত হয়েছে। কারণ
,তখন আরবরা পদমর্যাদা
,শাসনকর্তৃত্ব এবং সম্পদ পুঞ্জীভূতকরণে ব্যস্ত ছিল
,আর ইরানীরা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছিল এবং এ ক্ষেত্রে তারা আরবদের চেয়ে অগ্রগামী হয়েছিল। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :
“
আল্লাহর শপথ
,তিনি তাদের চেয়ে উত্তমদেরকে অর্থাৎ আজমকে (মাওয়ালীকে) স্থলাভিষিক্ত করেছেন। যদিও মাওয়ালী বলতে ঐ যুগে অ-ইরানী অনারব অর্থাৎ যেসব তুর্কী ও রোমান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল তাদেরকেও বোঝাত। কিন্তু বিশেষ করে পারস্যবাসীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ আয়াতটি সম্পর্কে মহানবী (সা.) যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে ব্যাপারে ইমাম সাদিক (আ.) অবগত থাকার কারণে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে
,ঐ সময় মাওয়ালীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল ইরানী মুসলমানরা।
(و آخرين منهم لمّا يلحقوا بهم
)
আয়াতের তাফসীর :
মহান আল্লাহ্ বলেন :
“
তিনিই (মহান আল্লাহ্) নিরক্ষরদের মধ্যে তাদের থেকেই একজন রাসূল (মুহাম্মদ) প্রেরণ করেছেন যিনি তাদের কাছে মহান আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করবেন
,তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত (প্রজ্ঞা) শিক্ষা দেবেন। যদিও (এর) পূর্বে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে নিমজ্জিত ছিল এবং তাদের মধ্য থেকে আরো কতিপয় ব্যক্তির মাঝেও তিনি প্রেরিত হয়েছেন যারা এখনো তদের সাথে মিলিত হয় নি। আর মহান আল্লাহ্ই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
”
(সূরা জুমআ : 2-3)
সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরাহ্ থেকে বর্ণিত হয়েছে : তিনি বলেন :
“
আমরা মহানবী (সা.)-এর কাছে ছিলাম। তখন সূরা জুমআ নাযিল হয়। মহানবী (সা.) সূরা জুমআর
‘
এবং তাদের মধ্যে এখনও যারা তাদের সাথে মিলিত হয় নি
’
(
و آخرين منهم لمّا يلحقوا بهم
)
-এ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল : হে রাসূলাল্লাহ্! এরা কারা যারা এখনো আমাদের সাথে মিলিত হয় নি
?মহানবী কোন উত্তর দিলেন না।
”
আবু হুরাইরাহ্ বলেন :
“
সালমান ফারসীও আমাদের মাঝে ছিলেন। মহানবী (সা.) তাঁর পবিত্র হাত সালমানের ওপর রেখে বললেন : ঐ খোদার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ
,ঈমান যদি সুরাইয়া তারকা পর্যন্ত চলে যায় তাহলে এদের (সালমানের জাতির) মধ্য থেকে একদল লোক তা সেখান থেকে আনয়ন করবে।
”
আলী ইবনে ইবরাহীমের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে
‘
এবং অন্যান্য ব্যক্তির মাঝে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি
’
-এ আয়াতের অর্থ ঐ সব ব্যক্তি যারা তাদের (আরবদের) পরে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
তাফসীরে মাজমাউল বায়ানের রচয়িতা বলেছেন :
“
কিয়ামত দিবস পর্যন্ত সাহাবীদের পরবর্তী সকল প্রজন্মের মানুষ।
”
এরপর তিনি বলেছেন :
“
তারা হচ্ছে আজমী অর্থাৎ ঐ সব ব্যক্তি যারা আরবী ভাষায় কথা বলে না। যেহেতু মহানবী (সা.) যে সব ব্যক্তি তাঁকে দেখেছে এবং যে সব ব্যক্তি পরে জন্মগ্রহণ করবে
,আরব-অনারব (আজম) নির্বিশেষে সকলের উদ্দেশে নবুওয়াতসহ প্রেরিত হয়েছেন।
”
সাঈদ ইবনে যুবাইর ও ইমাম বাকির (আ.) থেকে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
‘
এবং তাদের মধ্যেও যারা তাদের পরে তাদের সাথে যুক্ত হবে
’
-এ বাক্যাংশের মুতলাক (শর্তহীন) হওয়ার কারণে আয়াতটি মহানবী (সা.)-এর যুগোত্তর সকল শ্রেণী ও প্রজন্ম
,আরব-অনারব সবাইকে শামিল করে।
কিন্তু
أمّيّين
ও
آخرين
শব্দদ্বয় খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও তুলনা করলে আমরা বলতে পারব যে
,أمّيّين
হলো আরবরা এবং
آخيرن
হলো ঐ সব অনারব যারা ইসলাম গ্রহণ করবে। আহলে বাইত থেকে বর্ণিত কতিপয় রেওয়ায়েত থেকেও এ বিষয়টি বোঝা যায় এবং তাফসীরে কাশশাফ গ্রন্থের রচয়িতা জামাখশারীও তা গ্রহণ করেছেন। মহানবী (সা.) আয়াতটি পারস্যবাসীরা শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। আসলে ফুরস (
فرس
) শব্দটি
آخرين
শব্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব নমুনা (মিসদাক) অথবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব নমুনার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। যদিও নিছক মিলে যাওয়াটাই কারো ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক নয়
,তবে মহানবী (সা.) তাদেরকে (পারস্যবাসীদের) প্রশংসা করে বলেছেন :
“
যত দূরে ও কষ্টসাধ্য হলেও ঈমান
,জ্ঞান বা ইসলামকে তারা হস্তগত করবে।
”
আরেকদিকে মহানবী এ দু
’
আয়াতের তাফসীরে তাঁর বক্তব্য হুবহু পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং সালমান ফারসীর কাঁধে হাত রেখে মহানবীর এ কথা বলা এ দাবির পক্ষে স্পষ্ট দলিল।
بعثنا عليكم عبادا لنا أولي بأس شديد
-এর তাফসীর :
তাওরাত গ্রন্থে আমরা বনি ইসরাইলকে জানিয়ে দিয়েছি যে
,তোমরা পৃথিবীতে দু
’
বার ফিতনা করবে। অতঃপর যখন এ দু
’
ফিতনার প্রথমটি সমাগত হবে (তোমরা পৃথিবীতে প্রথমবার ফিতনা করবে) তখন আমার পক্ষ থেকে ঐ বান্দাদেরকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করব যারা আশ্চর্যজনক ক্ষমতার অধিকারী হবে যাতে তারা তোমাদের খোঁজে সর্বত্র অনুসন্ধান চালায়
;আর এ ওয়াদা অবশ্যই পূরণ হবে। অতঃপর তোমাদের জন্য পুনরায় বিজয় ঘুরিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করব এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে সংখ্যায় অধিক ও শক্তিশালী করে দেব। যদি তোমরা ভাল কর তাহলে তা হবে তোমাদের নিজেদের জন্য
,আর যদি অন্যায় কর তাহলে তা তোমাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতি বয়ে আনবে এবং যখন দ্বিতীয় ফিতনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তারা তোমাদের মুখমণ্ডলকে বিকৃত করে দেবে। যেমনভাবে তারা প্রথমবার প্রবেশ করেছিল তদ্রূপ তারা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করবে এবং যা কিছুর ওপর তারা কর্তৃত্ব স্থাপন করবে তা পূর্ণরূপে ধ্বংস করবে।
-বনি ইসরাইল : 4-7
রওযা-ই কাফী থেকে নুরুস সাকালাইন তাফসীরে
(
بعثنا عليكم عبادا لنا أولي بأس شديد
)
‘
আমরা তোমাদের ওপর আমাদের কতিপয় প্রচণ্ড শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী বান্দাদের প্রেরণ করব
’
-এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন :
“
তারা হচ্ছে ঐ সব ব্যক্তি যাদেরকে মহান আল্লাহ্ কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাবের আগে প্রেরণ করবেন এবং তারা মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের যে শত্রুকেই আহবান করুক
,তাকে হত্যা না করে ছাড়বে না।
”
আইয়াশী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে ইমাম বাকির (আ.) থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে
,তিনি
(
بعثنا عليكم عبادا لنا أولي بأس شديد
)
-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন এবং বলতেন :
“
সে কায়েম আল মাহ্দী এবং তার সাথীরা প্রভূত শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী।
”
বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে (60তম খণ্ড
,পৃ. 216) ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে
,ইমাম সাদিক (আ.) উপরিউক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন... আমরা জিজ্ঞাসা করলাম :
“
আমরা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত! এ সব ব্যক্তি কারা
?”
ইমাম সাদিক (আ.) তিনবার বললেন :
“
খোদার শপথ
,তারা কোমের অধিবাসী। খোদার শপথ
,তারা কোমের অধিবাসী। খোদার শপথ
,তারা কোমের অধিবাসী।
”
কিন্তু ইরানীদের প্রশংসা এবং ইসলামের হেদায়েতের পতাকা বহন করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা সংক্রান্ত যে সব হাদীস শিয়া ও সুন্নী সূত্রসমূহে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো অগণিত। যেমন আরবদেরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধ সংক্রান্ত রেওয়ায়েত:
শারহু নাহজিল বালাগাহ্ গ্রন্থে ইবনে আবীল হাদীদ বর্ণনা করেছেন :
“
একদিন আশআস ইবনে কায়েস ইমাম আলী (আ)-এর কাছে আসল এবং যারা সেখানে উপবিষ্ট ছিল তাদেরকে অতিক্রম করে ইমাম আলীর খুব কাছে গেল। এরপর সে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল : হে আমীরুল মুমিনীন! আপনারা চারপাশে বসে থাকা এ সব গৌর মুখাবয়বের অধিকারীরা আমাদের ওপর প্রভাবশালী হয়ে গেছে। হযরত আলী এ কথা শুনে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেন এবং পা দিয়ে মিম্বারের ওপর আঘাত করতে লাগলেন। এ দৃশ্য দেখে আলী (আ.)-এর বিশিষ্ট সাহাবী সাসাআহ্ বললেন : আশআসের সাথে আমাদের কী কাজ আছে
?আজ আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) আবরদের ব্যাপারে এমন কিছু বলবেন যা সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হবে এবং তা কখনো বিস্মৃত হবে না। এরপর আলী (আ.) মাথা উঁচু করে বললেন : এ সব ব্যক্তিত্বহীন পেট-পূজারীর মধ্যে কোন্ ব্যক্তি আমাকে অক্ষম করতে চায় এবং ন্যায়বিচার করার আদেশ দেয়
?এ সব ব্যক্তি গাধার মতো নিজেদের বিছানায় গড়াগড়ি দেয় এবং অন্যদেরকে হিতোপদেশ শোনা থেকে বঞ্চিত করে। তুমি কি আমাকে এদেরকে (ইরানীদেরকে) তাড়িয়ে দেবার আদেশ দিচ্ছ
?আমি কখনো তাদেরকে তাড়িয়ে দেব না। তাহলে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। তবে ঐ খোদার শপথ
,যিনি বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটিয়েছেন এবং বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন
,এরা অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের ধর্মের দিকে প্রত্যাবর্তন করানোর জন্য তোমাদের ওপর আক্রমণ চালাবে যেমনভাবে প্রথমবার তোমরা ইসলাম গ্রহণের জন্য তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলে।
আশআস ইবনে কায়েস ছিল অনেক বড় কিন্দা গোত্রের অধিপতি ও মুনাফিকদের নেতা। সে এমন কতিপয় ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা হযরত আলীকে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। তার কন্যা জাদা ছিল ইমাম হাসানের স্ত্রী যে তাঁকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করেছিল। তার পুত্র মুহাম্মদ ইবনে আশআস সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল।
এ রেওয়ায়েত অনুসারে
,আশআস মুসলমানদের রীতি অনুযায়ী নামাযীদের সর্বশেষ কাতারে না বসে কাতার ভেঙ্গে নামাযীদের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে এবং তাদেরকে এদিক-ওদিক সরিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। যখন সে নামাযীদের প্রথম কাতারে বা সামনে গিয়ে উপস্থিত হয় তখন সে দেখতে পায় যে
,অনেক ইরানী আলী (আ.)-এর মিম্বারের চারপাশে বসে আছে। আশআস ইমাম আলীর ভাষণ থামিয়ে উচ্চৈঃস্বরে বলেছিল :
“
হে আমীরুল মুমিনীন! এ সব গৌর মুখাবয়বের অধিকারী ব্যক্তিরা আমাদের ওপর প্রভাবশালী হয়ে গেছে এবং প্রাধান্য পাচ্ছে।
”
তবে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মিম্বারের ওপর পদাঘাত করে আশআসকে এ কথাই বুঝতে চেয়েছিলেন : তুমি কি বলছ
?ইমাম কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন এবং তাকে জবাব দেবার চিন্তা করতে লাগলেন।
কিন্তু ইমাম আলী (আ.)-এর ঘনিষ্ট সাহাবী সাসাআহ্ ইবনে সাওহান আবদী এ ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন যে
,আশআসের উদ্দেশ্য মুসলমানদেরকে জাতিগত ভিত্তিতে বিভক্ত করা যা একটি পার্থিব মানদণ্ড। আর তার দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে প্রথম সারিটি আরবদের জন্য নির্দিষ্ট হওয়া উচিত এবং (শ্বেতাঙ্গ) নও মুসলমানদের (অর্থাৎ ইরানীদের) উচিত নয় ইমাম আলীর নিকটবর্তী হওয়া। যেহেতু সাসাআহ্ আলী (আ.) যে সব নীতি অনুসারে জীবন-যাপন করতেন সেগুলো সম্পর্কে জানতেন সেহেতু তিনি ভালোভাবে জানতেন যে
,আশআসের প্রতি ইমাম আলী (আ.)-এর জবাব দাঁতভাঙ্গা হবে। এ কারণেই তিনি
‘
আশআসের সাথে আমাদের কী কাজ
’
-এ কথা বলে তাকে তিরস্কার করেছিলেন। যেহেতু আশআস ইরানীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বর্ণবাদী ও গোত্রীয় স্লোগান দিয়েছে
,সে কারণেই আলী (আ.) আরবদের প্রতিকূলে ও ইরানীদের অনুকূলে মন্তব্য করেছেন ও এরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। আশআসের কথা শুনে তিনি দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকার পর তার থেকে মুখ ফিরিয়ে মুসলমানদের সম্বোধন করে বলেছিলেন :
“
এ সব ব্যক্তিত্বহীনের মধ্য থেকে কে আমাকে অক্ষম করবে
?কে এ ব্যাপারে ইনসাফপূর্ণ ফয়সালা করবে যাদের না চিন্তা করার ক্ষমতা আছে
,আর না লক্ষ্য আছে
;বরং এরা সবাই গর্দভ
,নিদ্রালু ও প্রবৃত্তি-পূজারী।
”
তারা আমোদ-প্রমোদ
,প্রাচুর্যের লালসা এবং পশুর মতো উদরপূর্তি করে নিজেদের ব্যক্তিত্বহীনতা ও অলসতার পরিচয় দিয়েও ক্ষান্ত হয় নি
;বরং অন্যদেরকেও তারা ধর্মের জ্ঞান অর্জন করা থেকে বঞ্চিত করছে এবং তাদেরকে কটুক্তি করছে। কারণ
,তাদের (ইরানীদের) অন্তঃকরণ জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহী। আর এ কারণেই তারা তাদের ইমাম ও নেতা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর মিম্বারের চারপাশে বসেছিল।
“
হে আশআস! তুমি কি আমাকে আদেশ করছ যেভাবে নূহ (আ.)-এর একদল সম্পদশালী সমর্থক তাঁকে এ ধরনের অনুরোধ করেছিল : যে সব লোক আপনার চারপাশে আছে এবং আপনার অনুসরণ করছে
,তারা তো হীন-নীচ ছাড়া আর কিছুই নয়
-যাদের চিন্তা করার শক্তিও নেই। কখনোই আমি তাদেরকে তাড়িয়ে দেব না
;বরং হে আশআস! হযরত নূহ তাঁর কওমের ঐ সব ব্যক্তিত্বহীন লোকদেরকে যে জবাব দিয়েছিলেন সেই জবাবটিই আমি তোমাকে দেব। নূহ বলেছিলেন : আমি তাদেরকে তাড়াব না
;এমতাবস্থায় আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
”
এরপর পরহেজগারদের নেতা যে সব ব্যক্তি তাঁর মিম্বারের আশে-পাশে বসেছিল তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শপথ করে বলেছিলেন :
“
ঐ আল্লাহর শপথ
,যিনি বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটিয়েছেন এবং প্রাণীদেরকে সৃষ্টি করেছেন
,তোমরা যেভাবে তাদেরকে (ইরানীদের) ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করানোর জন্য যুদ্ধ করেছিলে তেমনি তারাও তোমাদেরকে ইসলাম ধর্মের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
”
এ বিষয়টি থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,আরবদের মাঝে অতি সত্বর এ ঐশী অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে
,তারা ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং মহান আল্লাহ্ ইরানীদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যারা আরবী ভাষাভাষী হবে না... এবং আরো প্রতীয়মান হয় যে
,এ পর্যায়ে ইসলামের বিজয় ইরান থেকেই শুরু হবে। বাইতুল মুকাদ্দাস (আল কুদ্স) অভিমুখে তা অব্যাহত গতিতে অগ্রসর হবে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।
’
‘
ঐ সব সিংহ যারা পলায়ন করবে না
’
-এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েত :
এ রেওয়ায়েতটি আহমদ ইবনে হাম্বল মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন :
“
অতি সত্বর মহান আল্লাহ্ তোমাদের স্থান অনারবদের দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন। তারা সিংহের মতো
,তারা পলায়নকারী হবে না। তারা তাদের সাথে যুদ্ধরত পক্ষ ও তোমাদের শত্রুদেরকে হত্যা করবে এবং তারা তোমাদের গনীমত ব্যবহার করবে না।
”
এ রেওয়ায়েতটি আবু নাঈম তাঁর গ্রন্থে হুযাইফাহ্
,সামারাহ্ ইবনে জুনদুব এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন
;তবে তিনি
‘
তারা তোমাদের (যুদ্ধলব্ধ) গনীমত ব্যবহার করবে না
’
-এ বাক্যের পরিবর্তে
‘
তারা ব্যবহার করবে
’
উল্লেখ করেছেন।
‘
সাদা-কালো দুম্বাসমূহ
’
সংক্রান্ত রেওয়ায়েত
মহানবী (সা.) বলেছেন :
“
কালো দুম্বাসমূহ আমার পেছনে হাঁটছে। অতঃপর এত অধিক সংখ্যক সাদা দুম্বা এসে তাদের সাথে যোগ দিল যে
,আমি আর কালো দুম্বাগুলোকে দেখতেই পেলাম না।
”
আবু বকর বললেন :
“
এ কালো দুম্বাগুলো হচ্ছে আরব এবং শ্বেত দুম্বাগুলো হচ্ছে
‘
আজম
’
,যারা তোমাদের অনুসরণ করবে এবং তাদের সংখ্যা এত বৃদ্ধি পাবে যে
,তাদের মাঝে আর আরবদেরকে দেখা যাবে না এবং তারা নগণ্য হবে।
”
মহানবী (সা.) বললেন :
“
ওহীর ফেরেশতা এভাবেই বর্ণনা করেছেন।
”
‘
ইরানীরা আহলে বাইতের সমর্থক
’
:এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েত
ইবনে আব্বাস থেকে হাফেয আবু নাঈম উপরিউক্ত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
“
মহানবী (সা.)-এর কাছে পারস্য সম্পর্কে আলোচনা হলে তিনি বলেছিলেন : ইরানীরা আমাদের (আহলে বাইতের) সমর্থক ও বন্ধু।
”
‘
আজম মহানবীর বিশ্বাসভাজন
’
এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েত :
এ রেওয়ায়েতটি আবু নাঈম তাঁর গ্রন্থে আবু হুরাইরাহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন :
“
মহানবী (সা.)-এর কাছে মাওয়ালী ও আজমীদের ব্যাপারে কথা উঠলে তিনি বলেছিলেন : মহান আল্লাহর শপথ
,আমি তোমাদের চেয়ে (অথবা তোমাদের কতিপয় ব্যক্তির চেয়ে) তাদের ওপর বেশি নির্ভর করি।
”
প্রায় একই অর্থের হাদীস তিরমিযীও তাঁর হাদীসগ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে আজম (অনারব) সাধারণ অর্থজ্ঞাপক এবং ইরানী ও সকল অনারব
,যেমন তুর্কীদেরকেও শামিল করে।
‘
জনগণ পারস্যবাসী ও রোমীয়গণ ব্যতীত অন্য কেউ নয়
’-
এ সংক্রান্ত রেওয়ায়েত :
আবু নাঈম তাঁর গ্রন্থে এ রেওয়ায়েতটি আবু হুরাইরাহ্ থেকে উদ্ধৃত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন :
“
আমার উম্মত পূর্ববর্তী উম্মত এবং তাদের আগের প্রজন্মগুলো যা কিছু পেয়েছিল সে সব হুবহু পাবে।
”
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো :
“
হে রাসূলাল্লাহ্! যেমনভাবে পারসিক ও রোমানরা অর্জন করেছে তেমন
?”
তখন তিনি বলেছিলেন :
“
পারস্যবাসী এবং রোমীয়গণ ব্যতীত জনগণ কারা
?”
এ রেওয়ায়েত সভ্যতার ইতিহাসের একটি বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত প্রদান করে
;আর তা হলো ইতিহাসে পারস্য (আজম) এবং রোমীয়গণ অর্থাৎ পাশ্চাত্য মানব সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু বলে গণ্য এবং বর্তমান যুগেও আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে
,পারস্যজাতি অর্থাৎ ইরানীদের মতো আর কোন জাতিই সভ্যতাকে কেন্দ্র করে পাশ্চাত্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত নয়।
ইরানী জাতি এবং ইমাম মাহ্দী
(
আ
.)-
এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণের শুভ সূচনা
শিয়া-সুন্নী হাদীস গ্রন্থ ও সূত্রসমূহে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে যে
,তাঁর পক্ষে যে প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক বিপ্লব ও আন্দোলন সফল হবে সেই বিপ্লব ও আন্দোলনের পরই তিনি আবির্ভূত হবেন এবং কালো পতাকাসমূহের বাহক হবে ইরানী জাতি যারা তাঁর সরকার ও প্রশাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী এবং তাঁর শাসন কর্তৃত্বের প্রাথমিক পূর্ব পদক্ষেদসমূহ বাস্তবায়নকারী। এসব রেওয়ায়েতে ঐকমত্য আছে যে
,দু
’
জন প্রতিশ্রুত ব্যক্তিত্ব খোরাসানী সাইয়্যেদ অথবা খোরাসানী হাশিমী এবং তাঁর সাহায্যকারী শুআইব ইবনে সালিহ্ উভয়ই ইরানী হবেন। এ দু
’
ব্যক্তিত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ শিয়া-সুন্নী হাদীস গ্রন্থ ও সূত্রসমূহে বিদ্যমান।
তবে শিয়া হাদীস সূত্রসমূহে ইরানী জাতি ছাড়াও
‘
ইয়েমেনিগণ
’
নামে খ্যাত অন্য এক জাতিকেও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আর্বিভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিয়া সূত্র ও গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান রেওয়ায়েত থেকে সার্বিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে সংগ্রামকারী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী বিভিন্ন সরকার
,শক্তি বা আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যেমন এ রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,“
তিনি আসবেন এবং মহান আল্লাহর জন্য কোষমুক্ত একটি তরবারী তখনও বিদ্যমান থাকবে।
”
অবশ্য এ ধরনের রেওয়ায়েত যদি থেকে থাকে। কারণ
,ইয়াওমুল খালাস গ্রন্থের রচয়িতা উপরিউক্ত হাদীসটি পাঁচটি সূত্র উল্লেখ করে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য ঐ সব সূত্রে আমি ঐ রেওয়ায়েতটি পাই নি। তবে তিনি আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রের কথা সূত্রসহ উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ্ রেওয়ায়েত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে যেন আমাদেরকে সূক্ষ্মদর্শী ও বিশ্বস্ত করেন।... যেমন ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত আবান ইবনে তাগলিবের রেওয়ায়েতটি। তিনি বলেছেন :
“
আমি ইমাম সাদিক (আ.)-কে বলতে শুনেছি যখন সত্যের পতাকা উড্ডীন হবে তখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সেই পতাকাকে অভিশাপ দিতে থাকবে। তুমি কি জান
,কি কারণে তারা অভিশাপ দেবে
?আমি বললাম : না। তখন তিনি বললেন : তার (মাহ্দী) আবির্ভাবের পূর্বেই (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের) জনগণ মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত এবং তাঁর বংশধরদের কাছ থেকে যে বিষয়ের সম্মুখীন হবে সেজন্য।
”
এ রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণিত হয় যে
,তাঁর (ইমাম মাহ্দী) আহলে বাইত বনি হাশিমের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁর অনুসারীরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে ক্রুদ্ধ ও অসন্তুষ্ট করবে। শত্রুরা যখনই তাঁর আবির্ভাবকামী আন্দোলনের মুখোমুখি হবে তখনই তা হবে তাদের জন্য এক বিরাট বিপদ যার ফলে তারা ঘাবড়ে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে যে রেওয়ায়েতটি
بعثنا عليكم عبادا لنا بأس شديد
-এ আয়াতটির ব্যাখ্যায়
‘
রওযাতুল কাফী
’
গ্রন্থে থেকে উল্লেখ করেছি তা ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন :
“
মহান আল্লাহ্ যে দলকে আল কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাবের পূর্বেই আবির্ভূত করবেন তারা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরদের কোন শত্রুকেই জীবিত রাখবে না।
”
আরো অন্যান্য রেওয়ায়েত থেকেও প্রতীয়মান হয় যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণের বিষয়টি সামরিক শক্তি ও বিশ্বব্যাপী প্রচার কার্যক্রমের সাথে জড়িত এবং কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,তাঁর নাম সকলের মুখে মুখে উচ্চারিত ও আলোচিত হতে থাকবে।
সুতরাং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় :
ক. কালো পতাকাবাহীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ করার সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ যেগুলোর ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নী মুসলমানদের ঐকমত্য রয়েছে।
খ. ইয়েমেনীর প্রশাসন ও সরকার সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ যেগুলো কেবল শিয়া হাদীস গ্রন্থ ও সূত্রসমূহে বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সব রেওয়ায়েতের সদৃশ কিছু রেওয়ায়েত ও হাদীস সুন্নী সূত্র ও গ্রন্থসমূহেও বিদ্যমান আছে যেগুলোয় বর্ণিত হয়েছে যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পরে ইয়েমেনীর আবির্ভাব হবে।
গ. ঐ সব রেওয়ায়েত যেগুলোয় ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের আবির্ভাব ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি তাদেরকে পরিচিতি দান না করেই বর্ণিত হয়েছে। তবে অতি সত্বর আপনারা বুঝতে পারবেন যে
,এ সব রেওয়ায়েত সঠিকভাবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ইরানী ও ইয়েমেনী সঙ্গীদেরকেই নির্দেশ করে যারা তাঁর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী হবে।
তবে রেওয়ায়েতসমূহে ইয়েমেনীদের হুকুমত প্রতিষ্ঠার সময়কাল নির্দিষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের বছরেই এবং সিরিয়ায় সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও অভ্যুত্থানের সমসাময়িক অথবা সুফিয়ানীর আবির্ভাব ও অভ্যুত্থানের নিকটবর্তী সময় ইয়েমেনীদের হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য যে
,সুফিয়ানী ইমাম মাহ্দীর শত্রু
ও বিরোধী হবে।
তবে ইরানী ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের হুকুমতের দু
’
টি পর্যায় রয়েছে। যথা :
প্রথম পর্যায়
: কোম থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ইরানীদের আন্দোলনের শুভ সূচনা। আর এ ব্যক্তির আন্দোলনই হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সূচনা স্বরূপ। কারণ
,রেওয়ায়েতসমূহে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে
,ইমাম মাহ্দীর আন্দোলনের শুভ সূচনা প্রাচ্য (ইরান) থেকে হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়
:
ইরানীদের মাঝে খোরাসানী সাইয়্যেদ এবং তাঁর সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও শ্যামল বর্ণের যুবক
-রেওয়ায়েতসমূহে যাঁর নাম
‘
শুআইব ইবনে সালিহ্
’
বলে উল্লিখিত হয়েছে- এ দুই প্রতিশ্রুত ব্যক্তির আবির্ভাব।
যে সব ঘটনা হাদীসসমূহে উল্লিখিত হয়েছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের ভূমিকা চার পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথা :
1। কোম থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ইরানীদের আন্দোলনের সূচনা থেকে তাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পর্যন্ত।
2। এক দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে তাদের জড়িয়ে যাওয়া থেকে শত্রুদের ওপর নিজেদের প্রত্যাশা ও দাবিসমূহ চাপিয়ে দেয়া পর্যন্ত।
3। নিজেদের ঘোষিত প্রাথমিক দাবি ও প্রত্যাশাসমূহ প্রত্যাখ্যান করে তাদের ব্যাপক উত্থান ও সংগ্রাম।
4। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে তাদের পতাকা অর্পণ এবং তাঁর বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্ত করার আন্দোলনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,ইরানীদের যুদ্ধকালে খোরাসানী ও শুআইবের আবির্ভাব হবে। আর তা এভাবে যে
,শত্রুদের সাথে তাদের যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যাচ্ছে দেখে ইরানীরা খোরাসানীকে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি পরিচালনা করার জন্য মনোনীত করবে যদিও তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজী হবেন না
।
তবুও তারা তাঁকেই তাদের প্রশাসক পরিচালক ও নেতা নির্বাচিত করবে। এরপর খোরাসানী সাইয়্যেদ শুআইব ইবনে সালিহকে তাঁর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করবেন।
কিছু কিছু রেওয়ায়েতে ইরানীদের ক্ষেত্র প্রস্তুকরণের সর্বশেষ পর্যায়ের সময়কাল ছয় বছর বলে উল্লিখিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে
,উক্ত সর্বশেষ পর্যায় ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সাথেই যুক্ত থাকবে
।
এ সময়কালটা হবে শুআইব ও খোরাসানীর পর্যায়। মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াহ্ থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
খোরাসান থেকে বনি আব্বাসের কতিপয় কালো পতাকা এবং তারপর অন্যান্য কালো পতাকা বের হবে যেগুলোর বাহকরা কালো টুপি ও সাদা পোশাক পরিহিত থাকবে। তাদের অগ্রভাগে এক ব্যক্তি থাকবেন যাঁকে সালিহ্ ইবনে শুআইব অথবা শুআইব ইবনে সালিহ্ বলা হবে। তিনি বনি তামীম গোত্রীয় হবেন। তারা সুফিয়ানী বাহিনীকে পরাজিত করবে এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করবে যাতে করে তারা ইমাম মাহ্দীর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তত করতে সক্ষম হয়। শামদেশ থেকে তিনশ
’
ষাট ব্যক্তি তাঁর (শুআইব ইবনে সালিহ) সাথে যোগ দেবে। তাঁর আবির্ভাব এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্ব অর্পণ করার মধ্যে ব্যবধান হবে 72 মাস।
”
এসব হাদীসের বিপরীতে আরো রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,খোরাসানী ও শুআইবের আবির্ভাব ইয়েমেনী ও সুফিয়ানীর আবির্ভাবকালের সমসাময়িক হবে।
ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
খোরাসানী
,সুফিয়ানী ও ইয়েমেনীর আবির্ভাব একই বছর
,একই মাস ও একই দিনেই হবে। এসব পতাকার মধ্যে ইয়েমেনীর পতাকা সবচেয়ে হেদায়েতকারী হবে। কারণ
,সে জনগণকে সত্যের দিকে আহবান করবে।
”
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
সুফিয়ানী
,ইয়েমেনী এবং খোরাসানীর আবির্ভাব একই বছরের একই মাস এবং একই দিনে হবে অর্থাৎ তাদের আবির্ভাব তাসবীহের দানাগুলোর সদৃশ একের পর এক সংঘটিত হবে। সবদিকেই যুদ্ধ বেধে যাবে। ঐ ব্যক্তিদের জন্য আক্ষেপ যারা তাদের (ইয়েমেনী ও খোরাসানীর) বিপক্ষে দাঁড়াবে। এসব পতাকার মধ্যে ইয়েমেনীর পতাকাই হবে সবচেয়ে হেদায়েতকারী। তা হবে সত্যের পতাকা এবং তোমাদের অধিপতি নেতার (ইমাম মাহ্দী) দিকে আহবান জানাবে।
”
বাহ্যত তাসবীহের দানাগুলোর মতো ধারাবাহিকভাবে এ তিনজনের আবির্ভাব ও আন্দোলন একই দিনে সংঘটিত হবে বলার সম্ভাব্য অর্থ হচ্ছে এ তিন জনের আবির্ভাব ও আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ একটির সাথে আরেকটি রাজনৈতিক সূত্রে গ্রোথিত থাকবে এবং তাদের আবির্ভাবের সূচনাও একই দিবসে হবে। তবে তাদের আন্দোলনের ধারাক্রম এবং তাদের যাবতীয় বিষয়ের দৃঢ়তা তাসবীহের দানাগুলোর মতো একের পর এক সংঘটিত ও বাস্তবায়িত হবে।
অধিকন্তু কোন কোন রেওয়ায়েতে খোরাসানীর আবির্ভাব ও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ও আন্দোলনের মধ্যে সময়গত ব্যবধান যে বায়াত্তর মাস বলে উল্লিখিত হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য। কারণ
,তা মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়াহ্ থেকে বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং রেওয়ায়েতসমূহ থেকে জানা যায় যে
,মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়ার কাছে তাঁর পিতা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর লিখিত পত্র ছিল যা মহানবী (সা.)-এর বাণী
।
এতে ভবিষ্যতের যাবতীয় ঘটনার বিবরণ ছিল
;বরং কতিপয় রেওয়ায়েত অনুসারে এতে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত মুসলমানদের সকল শাসনকর্তার নাম লিখিত ছিল। তাঁর থেকে তাঁর পুত্র আবু হাশিম এ লিখিত পত্র উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন। আব্বাসীদের মধ্য থেকে যারা শাসনকর্তৃত্ব লাভ করবে তাদের নামও এতে ছিল।
এতদসত্ত্বেও খোরাসানী ও শুআইবের ব্যাপারে ঐ সব রেওয়ায়েত উত্তম বলে মনে হয় যেগুলোয় বর্ণিত হয়েছে যে
,খোরাসানী ও শুআইবের আবির্ভাব সুফিয়ানী ও ইয়েমেনীর আবির্ভাবের সমসাময়িক হবে। কারণ
,এ রেওয়ায়েতগুলো আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এগুলোর সনদ অপেক্ষাকৃত দৃঢ়
;বরং এ সব রেওয়ায়েতে সহীহ সনদবিশিষ্ট (যে রেওয়ায়েতের সকল রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত) হাদীসও বিদ্যমান
,যেমন আবু বাসীর কর্তৃক বর্ণিত ইমাম বাকির (আ.)-এর হাদীস।
যাহোক
,যদি আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইরানীদের সরকার ও প্রশাসনের পর্যায় তাঁর আবির্ভাবের এক বছর আগে অথবা সম্ভাবনার ভিত্তিতে ছয় বছর আগে বাস্তবায়িত হবে বলে ধরে নিই তাহলে এ পর্যায়টি হবে তাদের হুকুমতের শেষ পর্যায়। তবে তাদের হুকুমত ও রাষ্ট্রের সর্বশেষ পর্যায়ের পূর্ববর্তী পর্যায়সমূহ সম্পর্কে জানাই অপেক্ষাকৃত দূরূহ মনে হয়। অর্থাৎ কোমের এক ব্যক্তির দ্বারা তাদের হুকুমতের সূচনা এবং খোরাসানী সাইয়্যেদ ও শুআইবের আবির্ভাবের মধ্যে কী পরিমাণ সময়গত ব্যবধান আছে তা জানা আসলে বেশ কঠিন। এটি ইরানীদের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহের পরম্পরায় একটি হারানো অংশ হবে। আর আমি রেওয়ায়েতসমূহে দেখি নি যে
,তা কী পরিমাণ ছিল।... তবে কতিপয় রেওয়ায়েতে এ প্রসঙ্গে কিছু ইশারা বিদ্যমান যা আমরা ইরানীদের হুকুমত সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেওয়ায়েতসমূহ বর্ণনা করার পরই উল্লেখ করব।
ইরান থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমতের সূচনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েত
এসব রেওয়ায়েতের মধ্যে একটি হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে
,প্রাচ্য থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলনের শুভ সূচনা হবে। আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন :
“
তার আবির্ভাবের সূচনা প্রাচ্য থেকে হবে। আর যখন এ বিষয়টি সংঘটিত হবে তখন সুফিয়ানী আবির্ভূত হবে।
”
আরেক দিকে আলেমদের যে ব্যাপারে ঐকমত্য আছে এবং যা রেওয়ায়েতসমূহে মুতাওয়াতির
সূত্রে বর্ণিত তা হচ্ছে
,ইমাম মাহ্দী (আ.) পবিত্র মক্কায় আবির্ভূত হবেন। সুতরাং
‘
প্রাচ্য থেকে তার আন্দোলনের সূত্রপাত হবে
’
-আমীরুল মুমিনীন আলীর এ হাদীসটির কাঙ্ক্ষিত অর্থ অবশ্যই এটি হবে যে
,তাঁর আন্দোলন প্রাচ্য অর্থাৎ ইরান থেকে শুরু হবে। একইভাবে উক্ত রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,তাঁর আন্দোলনের সূত্রপাত সুফিয়ানীর আবির্ভাবের আগেই হবে এবং তাঁর আবির্ভাবের সূত্রপাত ও সুফিয়ানীর আবির্ভাবের মাঝে সময়গত ব্যবধান খুব বেশিও হবে না
,আবার খুব কমও হবে না। কারণ
,রেওয়ায়েতে ইমাম মাহ্দীর আন্দোলন সুফিয়ানীর আন্দোলনের সাথে
واو
(এবং) অব্যয় দ্বারা সংযোজিত হয়েছে
,তা
ف
ও
ثمّ
(যেগুলোর অর্থ অতঃপর বা তারপর) দ্বারা সংযোজিত হয় নি। উল্লেখ্য যে
,ف
ও
ثمّ
অব্যয়দ্বয় ব্যবধান নির্দেশক
;বরং বলা যায়
,এ রেওয়ায়েতটি ইরান থেকে ইমাম মাহ্দীর হুকুমত ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীর কার্যক্রমের সূচনা এবং সুফিয়ানীর আবির্ভাবের মাঝে এক ধরনের কার্যকারণগত সম্পর্ক নির্দেশ করে। আপনাদের স্মরণে আছে যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব
,অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পটভূমি ও ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ইসলামী আন্দোলনের জোয়ারের উত্তরোত্তর প্রসারের মোকাবিলায় সুফিয়ানীর আন্দোলন হবে নিছক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ
।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত এবং তাঁর আহলে বাইতের বংশধারার এক ব্যক্তির হুকুমত সংক্রান্ত রেওয়ায়েত
যে রেওয়ায়েতটি আবু বাসীর ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন তা এ প্রসঙ্গে বিদ্যমান রেওয়ায়েতসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
সাদিক (আ.) বলেছেন :
“
হে আবু বাসীর! অমুকের বংশ যতক্ষণ মসনদে উপবিষ্ট থাকবে এবং তাদের শাসনক্ষমতা ধ্বংস না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মহানবী (সা.)-এর উম্মত সাচ্ছন্দ্য লাভ করবে না। ঐ বংশ নির্মূল হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ আহলে বাইতের বংশধারার এক ব্যক্তির কাছে হুকুমত অর্পণ করবেন যার কর্মপদ্ধতি হবে তাকওয়াভিত্তিক এবং কর্মকাণ্ড হবে জনগণের জন্য সুপথপ্রদর্শনকারী। সে জনগণের মাঝে বিচার-ফয়সালার ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করেেব না। মহান আল্লাহর শপথ
,আমি তার নাম ও তার পিতার নাম পর্যন্ত জানি। তখন ঐ শক্তিশালী ক্ষুদ্রকায় ব্যক্তি যার মুখমণ্ডলে একটি তিলের চি
হ্ন এবং দেহের ত্বকে আরো দু
’
টি চি
হ্ন বিদ্যমান সে হবে একজন ন্যায়পরায়ণ নেতা এবং তার কাছে যা কিছু আমানত হিসাবে রাখা হয়েছে তার রক্ষক। পৃথিবীকে পাপীরা যেমনভাবে অন্যায়-অত্যাচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবে তেমনি সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবে।
”
এটি একটি উল্লেখযোগ্য রেওয়ায়েত
;তবে আফসোসের বিষয় হচ্ছে এই যে
,এ হাদীসটির শেষাংশ অসম্পূর্ণ।
‘
বিহার
’
গ্রন্থের সংকলক এ রেওয়ায়েতটি সাইয়্যেদ ইবনে তাউস প্রণীত
‘
ইকবাল
’
নামক গ্রন্থ থেকে বর্ণনা করেছেন।
‘
ইকবাল
’
গ্রন্থের রচয়িতা তাঁর গ্রন্থের 559 পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে
,তিনি এ রেওয়ায়েতটি 362 হিজরীতে বাতায়েনীর
‘
আল মালাহিম
’
গ্রন্থে দেখেছেন এবং ঐ গ্রন্থ থেকে তিনি এ রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন
,তবে তা অসম্পূর্ণ
;অর্থাৎ তিনি তা পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা করেন নি। বাতয়েনী ইমাম সাদিক (আ.)-এর অন্যতম সাথী ছিলেন। তাঁর গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। অবশ্য এ গ্রন্থটি মুসলিম দেশগুলোর আনাচে-কানাচের গ্রন্থাগারসমূহে অজানা হস্তলিখিত গ্রন্থসমূহের মাঝে থাকতে পারে।
রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,ঐ সম্মানিত সাইয়্যেদ আহলে বাইতের বংশধারার হবেন যিনি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। তিনি জনগণকে তাকওয়া-পরহেজগারীর দিকে পরিচালিত করবেন এবং ইসলামের বিধি-বিধানের ভিত্তিতে তিনি আমল করবেন। তিনি উৎকোচগ্রহীতা হবেন না। এই সাইয়্যেদ যাঁর কথা এ রেওয়ায়েতে উল্লিখিত হয়েছে তাঁর ইমাম খোমেইনী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে
‘
অমুকের বংশ যতক্ষণ মসনদে উপবিষ্ট থাকবে
’
-ইমামের এ কথার মধ্যে
‘
অমুকের বংশ
’
-এর অর্থ যে বনি আব্বাস হবে
-এ ধরনের কোন বাধ্যবাধকতা প্রতিপন্ন হয় না
;অথচ সাইয়্যেদ ইবনে তাউস
‘
অমুকের বংশ
’
বলতে বনি আব্বাসকেই বুঝিয়েছেন। একইভাবে অন্য যে সকল রেওয়ায়েতে ইমামগণ
‘
অমুক ও অমুকের বংশ
’
বলেছেন অবশ্য সেগুলোয় তাঁদের এ ধরনের উক্তির অর্থ হলো কখনো কখনো বনি আব্বাস এবং কখনো ঐ সব বংশ যারা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে রাজত্ব করবে। যেমন যে সব রেওয়ায়েতে হিজাযের শাসনকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত অমুকের বংশ ও অমুকের বংশের মধ্যকার মতবিরোধ ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা উল্লিখিত হয়েছে তার অর্থ হলো তারা নিজেদের মধ্য থেকে কোন শাসনকর্তা (বাদশাহ্) নিযুক্ত করার ব্যাপারে ঐকমত্যে আসতে পারবে না। আর এ ধরনের অবস্থাতেই ইমাম মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হবেন। উদাহরণস্বরূপ আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত রেওয়ায়েত। এতে তিনি বলেছেন :
“
অমুকের বংশের রাজত্বের পতনের ব্যাপারে কি আমি তোমাদেরকে অবহিত করব না
?”
আমরা বললাম :
“
জি। হে আমীরুল মুমিনীন!
”
তিনি বললেন :
“
কুরাইশ বংশীয় এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে হারাম এলাকায় হত্যা করা হবে। ঐ আল্লাহ্ যিনি বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটনা এবং সকল অস্তিত্বশীল সত্তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন তাঁর শপথ
,এ হত্যাকাণ্ডের পনের রাত পরে তাদের (ঐ বংশের) রাজত্ব শেষ হয়ে যাবে।
”
এ রেওয়ায়েতটি ছাড়াও আরো বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়েত আছে যেগুলোয় অমুকের বংশের মধ্যকার বিরোধ ও মতপার্থক্য অথবা তাদের মধ্যকার এক অত্যাচারী শাসকের মৃত্যুর পর সুফিয়ানীর আবির্ভাব অথবা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিকটবর্তী কালের কতিপয় নিদর্শনের কথা উল্লিখিত হয়েছে। অতএব
,এ রেওয়ায়েতে উল্লিখিত
‘
অমুকের বংশ
’
-কে অবশ্যই বনি আব্বাস বলে ব্যাখ্যা করা যাবে না। কারণ
,তাদের রাজত্ব শত শত বছর আগেই নিশ্চি
হ্ন হয়ে গেছে।
বরং যে সব রেওয়ায়েতে স্পষ্টভাবে
‘
বনি আব্বাস
’
উল্লিখিত হয়েছে সেগুলো অবশ্যই সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা ও বাছাই করা দরকার
।
কারণ
,ইমামদের থেকে এ সব রেওয়ায়েত
‘
অমুকের সন্তানগণ
’
এবং
‘
অমুকের বংশধররা
’
-এরূপ উক্তি সহকারে বর্ণিত হয়েছে। আর রাবী (হাদীস বর্ণনাকারী) নিজেই এ ধরনের উক্তিকে পরিবর্তিত করে
‘
বনি আব্বাস
’
বলে বর্ণনা করেছেন এ বিশ্বাস নিয়ে যে
,ইমামদের এ উক্তি অর্থাৎ
‘
অমুকের সন্তানরা
’
-এর কাঙ্ক্ষিত অর্থ হচ্ছে বনি আব্বাস।
কখনো কখনো আবির্ভাব সম্পর্কিত রেওয়ায়েতসমূহে
‘
অমুকের বংশ
’
-এ উক্তিটিকে বনি আব্বাস বলে ব্যাখ্যা করা সঠিক হবে। কারণ
,বনি আব্বাসের নাম উল্লেখ করার অর্থ হচ্ছে তাদের অনুসৃত পদ্ধতি ও কর্মকাণ্ড যা সর্বদা মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের পবিত্র ইমামদের পথ ও পদ্ধতির ঠিক বিপরীত ছিল। তাই বনি আব্বাস বলার অর্থ স্বয়ং আব্বাসিগণ এবং তাদের বংশধারা নয়। অবশ্য খুব কদাচিৎ এ ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। কারণ
,অধিকাংশ রেওয়ায়েতে
‘
অমুকের বংশ ও সন্তানগণ
’
-এ ধরনের উক্তি বিদ্যমান।
যাহোক আলোচ্য রেওয়ায়েতে (অমুকের বংশ যতক্ষণ মসনদে উপবিষ্ট থাকবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাসনকর্তৃত্ব ধ্বংস না হবে ততক্ষণ... এবং তাদের রাজত্ব ও শাসনের পরিসমাপ্তির সাথে সাথে মহান আল্লাহ্ আহলে বাইতের বংশধারার এক ব্যক্তির হাতে শাসনকর্তৃত্ব অর্পণ করবেন।)
উল্লিখিত
‘
অমুকের বংশ
’
বলতে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে যারা আব্বাসী বংশোদ্ভূত নয়। আর তাদের পরেই প্রতিশ্রুত সাইয়্যেদ আবির্ভূত হবেন এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে ন্যায়পরায়ণতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন।
কিন্তু
‘
ঐ শক্তিশালী ও ক্ষুদ্রকায় ব্যক্তি যার মুখমণ্ডলে তিলের চি
হ্ন এবং দেহের ত্বকে আরো দু
’
টি চি
হ্ন বিদ্যমান থাকবে তিনি হবেন একজন্য ন্যায়পরায়ণ নেতা
’
-এ উক্তি থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,ঐ সাইয়্যেদের পর আরো কোনো ব্যক্তি আসবেন। যার অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে
,তিনি ইমাম মাহ্দী (আ.) হবেন। আর তিনিই এ সব চি
হ্নের অধিকারী হবেন। আর এ রেওয়ায়েতেও তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলীর মধ্যে ঐ সব নিদর্শনের উল্লেখ আছে। তবে
‘
শক্তিশালী ক্ষুদ্রকায় ব্যক্তি
’
-এ ধরনের উক্তি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে খাপ খায় না এবং তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলীর সাথে মিলে না। কারণ
,সকল রেওয়ায়েত ও হাদীসে ইমাম মাহ্দী (আ.)-কে দীর্ঘকায় ও নিখুঁত দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রেওয়ায়েতের এক বা একাধিক অংশ সাইয়্যেদ ইবনে তাউস অথবা অন্য কোন রাবীর বর্ণনা করার সময় বাদ পড়ে যেতেও পারে। আর ঐ শক্তিশালী ও ক্ষুদ্রকায় ব্যক্তিটির আগমন আমাদের আলোচিত সাইয়্যেদের পরপরই হবে এবং তাঁর আরো কিছু বৈশিষ্ট্য এ রেওয়ায়েত থেকে বাদ পড়ে গেছে। তাই আমাদের বহুল আলোচিত এ সাইয়্যেদের শাসনামল যে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে তা এ রেওয়ায়েত থেকে প্রতিভাত হয় না।
কোম এবং এ নগরীর প্রতিশ্রুত ব্যক্তি সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে কোম থেকে এক ব্যক্তি ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উত্থান ও বিপ্লব সংক্রান্ত রেওয়ায়েতটি বিদ্যমান। ইমাম কাযিম (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
কোমের এক ব্যক্তি জনগণকে মহান আল্লাহর দিকে আহবান জানাবে। তাঁর চারপাশে এমন সব ব্যক্তি সমবেত হবে যাদের অন্তঃকরণ লোহার টুকরার মতো দৃঢ় হবে। যাদেরকে ঘটনাপ্রবাহের ঝড় মোটেও টলাতে করতে পারবে না। তারা যুদ্ধ করে ক্লান্ত হবে না। তারা যুদ্ধকে ভয় করবে না। কেবল তারা মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। আর মুত্তাকী-পরহেজগারদের জন্যই হচ্ছে চূড়ান্ত শুভ পরিণতি।
”
একইভাবে এর পরবর্তী বিষয়াদি কোম নগরীর সাথে সম্পর্কিত।
উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এই যে
,ইমাম কাযিম (আ.) এ রেওয়ায়েতে কোমের এক ব্যক্তি
-এ উক্তিটি করেছেন। তিনি বলেননি :
“
কোমবাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি।
”
তাই এ বাক্যটি হযরত ইমাম খোমেইনীর ওপর আরোপ করা যায়। কারণ তিনি ছিলেন খোমেইন শহরের অধিবাসী এবং কোমে বসবাসকারী। আর তিনি
‘
জনগণকে মহান আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন
’
-এ বাক্যটি থেকে যে তিনি কেবল কোমের অধিবাসীদেরকে অথবা প্রাচ্যবাসীদেরকে আহবান জানাবেন তা প্রতিভাত হয় না। (বরং তিনি যে সমগ্র বিশ্ববাসীকেই মহান আল্লাহর দিকে আহবান জানাবেন সেটাই প্রতিপন্ন হয়)
;আর শত্রুদের তীব্র শত্রুতা এবং যুদ্ধ ও সংঘর্ষ যে তাঁর ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তা সত্ত্বেও তাঁরা এতটা দৃঢ়তার সাথে প্রতিরোধ করেছেন যে
,তাঁরা সামান্য পরিমাণও টলেননি ও বিচ্যুত হন নি।
এ ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তাঁর আবির্ভাবকাল এ রেওয়ায়েতে নির্দিষ্ট করা হয় নি। কিন্তু ইমাম খোমেইনীর আগে এতসব উল্লেখযোগ্য ও বিরল বৈশিষ্ট্যসমেত এ ধরনের ব্যক্তি ও সঙ্গী-সাথীদের কোন নজীর কোম ও সমগ্র ইরানের ইতিহাসে বিদ্যমান নেই। অবশ্য এ রেওয়ায়েতটি অসম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনাও বিদ্যমান। অথবা ইমাম কোন এক উপলক্ষে এ কথা বলে থাকতে পারেন। তবে
‘
বিহারুল আনওয়ার
’
গ্রন্থের সংকলক আল্লামা মাজলিসী (রহ.) এ রেওয়ায়েতটি এক হাজার বছর আগে হাসান বিন মুহাম্মদ বিন আল হাসান কোমী কর্তৃক রচিত কোমের ইতিহাস গ্রন্থ (কিতাব-ই তারীখ-ই কোম) থেকে উদ্ধৃত করেছেন। অবশ্য পরিতাপের বিষয় যে
,উক্ত গ্রন্থের কপি এখন দুষ্প্রাপ্য।
কখনো কখনো বলা হয় যে
,এটা ঠিক যে
,কোম ও ইরানের ইতিহাসে এতসব বিরল উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সঙ্গী-সাথীসমেত এ ধরনের প্রতিশ্রুত ব্যক্তির আবির্ভাবের কথা কারো জানা নেই
,তবে এ রেওয়ায়েতটি যে ইমাম খোমেইনী ও তাঁর সাথীদের ওপর আরোপ করা যাবে এমন কোন দলিল-প্রমাণও বিদ্যমান নেই
;বরং এ রেওয়ায়েতের উদ্দেশ্য হতে পারে অন্য কোন ব্যক্তি এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা যাঁরা আমাদের যুগে আবির্ভূত হবেন অথবা দীর্ঘ সময় বা অল্প কিছুকাল পরে আসবেন।
উত্তর : এটা ঠিক যে
,রেওয়ায়েতে প্রতিশ্রুত এ ব্যক্তির আবির্ভাবের সময়কাল নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করা হয় নি। তবে অন্যান্য অনেক রেওয়ায়েতে কোম ও ইরান সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে
,তা ছাড়াও এ রেওয়ায়েতে যে সব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় সে সব উল্লিখিত গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হচ্ছেন স্বয়ং ইমাম খোমেইনী এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা। সুতরাং মহানবী (সা.) ও ইমামগণ যদি কোন ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন যা বর্তমানে বিদ্যমান অবস্থার সাথে সম্পূর্ণ খাপ খায়
,তাহলে তা উপেক্ষা করে অনাগত ভবিষ্যৎ কালে এতদসদৃশ বা এ ঘটনার চেয়েও স্পষ্ট অন্য কোন ঘটনার ওপর তা আরোপ করা মোটেও যুক্তিসংগত হবে না।
কোম এবং এ নগরীর শ্রেষ্ঠত্ব ও ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত যে সব রেওয়ায়েত আহলে বাইত থেকে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো থেকে ভালোভাবে বোঝা যায় যে
,এ নগরী তাঁদের কাছে এক বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী ছিল
;বরং ইমাম বাকির (আ.) কর্তৃক 73 হিজরীতে ইরানের বুকে এ নগরীর গোড়াপত্তন হয়েছিল। তাই এ নগরীর প্রতি ইমাম বাকির (আ.) সবসময় বিশেষ দৃষ্টি দান করেছেন।
আহলে বাইতের ইমামগণ তাঁদের প্রপিতামহ রাসূলে খোদা (সা.) থেকে যে জ্ঞান লাভ করেছিলেন তার দ্বারা তাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে
,ভবিষ্যতে এ পবিত্র নগরী এক বিরাট মর্যাদার অধিকারী হবে এবং এ নগরীর অধিবাসীরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বস্ত সঙ্গী-সাথীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কতিপয় রেওয়ায়েতে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে
,এ পবিত্র নগরীর নাম কোম যা আল কায়েম বিল হাক্ক (সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত) ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নামের সাথে জড়িত এবং তাঁর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণ এবং তাঁকে সাহায্য করার জন্য কোমবাসীদের উত্থান ও বিপ্লবের সাথেও এ নাম সামঞ্জস্যপূর্ণ
;আরেক দিকে এ শহরের গোড়াপত্তনকালে এ শহরের অদূরে
‘
কামানদান
’
বা
‘
কামাদ
’
নামের একটি জনপদের অস্তিত্ব এতদর্থে নয় যে
,এ শহরের নামকরণ কালে আরবী
‘
কোম
’
(قم
)শব্দের অর্থ বিবেচনায় আনা হয় নি এবং এ সম্পর্কে চিন্তা ব্যতীতই এ নগরীর নাম
‘
কোম
’
রাখা হয়েছে অথবা এমনিতেই এর ফার্সী নামে পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে
,বিশেষ করে যখন ইমাম বাকির (আ.) ও ইমাম সাদিক (আ.) থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ও আলেমদের পক্ষ থেকে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে এ নগরীর গোড়াপত্তন সাধিত হয়েছিল...। ইমাম সাদিক (আ.) থেকে আফফান বাসরী বর্ণনা করেছেন :
“
ইমাম সাদিক (আ.) আমাকে বলেছেন : তুমি কি জান যে
,কেন এ শহরের নাম
‘
কোম
’
রাখা হয়েছে
?আমি বললাম : মহান আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সা.)-ই এ ব্যাপারে অধিক অবগত। তিনি বললেন : নিশ্চয়ই
‘
কোম
’
এ কারণে রাখা হয়েছে যে
,কোমের অধিবাসীরা আল কায়েম আল মাহ্দীর চারপাশে সমবেত হয়ে তার সাথে কিয়াম (আন্দোলন ও বিপ্লব) করবে
,তার পাশে দৃঢ়পদ থাকবে এবং তাকে সাহায্য করবে
।
”
এ রেওয়ায়েত এবং এ ধরনের রেওয়ায়েতসমূহ আবদুল্লাহ্ ইবনে মালিক আল আশআরী
,তাঁর ভাই আহওয়াস এবং তাঁদের সমর্থকগণ কর্তৃক পবিত্র কোম নগরীর পত্তন সংক্রান্ত সাক্ষ্য-প্রমাণস্বরূপ। উল্লেখ্য যে
,এই ব্যক্তিবর্গ সকলেই ইমাম বাকির (আ.)-এর বিশেষ সাথী এবং তাঁর হাদীস বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ সকল রেওয়ায়েত থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে
,ইমাম বাকির (আ.)-এর নির্দেশে এ নগরীটির গোড়াপত্তন হয়েছিল। আর
‘
কোম
’
নামটি স্বয়ং ইমাম বাকির (আ.)-ই নব্য প্রতিষ্ঠিত এ নগরীটির জন্য নির্বাচন করেছিলেন। রেওয়ায়েতসমূহে
‘
কোম
’
নামটি পুংলিঙ্গ হিসাবে
‘
নগর
’
(بلد
)অর্থে এবং স্ত্রী লিঙ্গ হিসাবে
‘
নগরী
’
(بلدة
)অর্থেও উল্লিখিত হয়েছে। এ শব্দটি যেমন মুনসারিফ (ব্যাকরণগত শব্দ প্রকরণ প্রক্রিয়ার নিময়াবলীর দ্বারা যে শব্দ পরিবর্তিত হয়) আকারে তেমনি গায়ের মুনসারিফ (ব্যাকরণগত শব্দ প্রকরণ প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী দ্বারা যে শব্দ পরিবর্তিত হয় না) আকারেও আরবী ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কতিপয় রেওয়ায়েতের বাহ্য অর্থ হচ্ছে এটাই যে
,ইমামগণ কোম নগরীর ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন এবং তাঁরা একটি শহর এবং এর অধিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অর্থের চেয়েও ব্যাপকতর ও উত্তম অর্থে এ নগরীকে অভিহিত করেছিলেন। তাই এ নামটি তাঁরা আহলে বাইতের বেলায়েত প্রতিষ্ঠার জন্য এ এলাকার অধিবাসীদের সব সময় দণ্ডায়মান (
قم
) থাকা এবং উত্থানের পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করা অর্থে ব্যবহার করেছেন বিশেষত প্রতিশ্রুত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গে তাদের সংগ্রামী ভূমিকার কারণে। এ কারণেই যখন রেই নগরীর কতিপয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন :
“
আমরা রাই নগরীর অধিবাসীরা আপনার সমীপে উপস্থিত হয়েছি
”
,তখন ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :
“
আমাদের কোমের ভ্রাতৃবৃন্দ! স্বাগতম।
”
অতঃপর তাঁরা বললেন :
“
আমরা রাই নগরীর অধিবাসী।
”
ইমাম সাদিক পুনরায় বললেন :
“
আমাদের কোমের ভ্রাতৃবৃন্দ! স্বাগতম।
”
তাঁরা পুনরায় বললেন :
“
আমরা রাই নগরীর অধিবাসী।
”
এরপরও ইমাম পূর্বের কথাই ব্যক্ত করলেন। তাঁরাও তাঁদের কথা (আমরা রাই নগরীর অধিবাসী) কয়েকবার উল্লেখ করলেন। আর ইমাম সাদিকও প্রথম বারের মতো তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করলেন (আমাদের কোমের ভ্রাতৃবৃন্দ! স্বাগতম) এবং বললেন :
“
মহান আল্লাহর একটি হারাম আছে
,আর তা হলো পবিত্র মক্কা মুকাররামাহ্
;মহানবী (সা.)-এর একটি হারাম আছে
,আর তা হলো মদীনা মুনাওওয়ারাহ্
;আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর একটি হারাম আছে যা হচ্ছে কুফা
;আর আমাদেরও (আহলে বাইতের) একটি হারাম আছে যা হচ্ছে কোম নগরী। অতি সত্বর ফাতিমা নাম্নী আমার বংশোদ্ভূত এক নারী এ নগরীতে চির নিদ্রায় শায়িত হবে। যে ব্যক্তি কোমে তার কবর যিয়ারত করবে সে বেহেশতবাসী হবে।
”
রাবী বলেন :
“
ইমাম সাদিক (আ.) এ কথা এমন এক সময় বলেছিলেন যে
,তখন ইমাম মূসা আল কাযিম (আ.) জন্মগ্রহণও করেন নি।
(
উল্লেখ্য যে
,ইমাম মূসা আল কাযিম ছিলেন হযরত ফাতিমা বিনতে মূসা ইবনে জাফরের কন্যা।
)
কোম আহলে বাইতের ইমামদের হারাম এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় পর্যন্ত এ কোম হচ্ছে আহলে বাইতের ইমামদের বেলায়েত এবং তাঁদেরকে সাহায্য করার কেন্দ্রস্থল। রাই নগরী ও ইরানের অন্যান্য এলাকার অধিবাসীরাও (বৃহত্তর অর্থে)
‘
কোমবাসী
’
বলে গণ্য হবে। কারণ তারাও আহলে বাইত প্রসঙ্গে কোমবাসীদের পথ
,মত ও পদ্ধতির অনুসারী। এ কারণেই রেওয়ায়েতসমূহে যে কোমবাসীদের কথা এবং তারা যে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন
-এ কথা বর্ণিত হয়েছে তাদের সবারই ইরানী হওয়া সম্ভব। তারা বেলায়েত
,বন্ধুত্ব
,যুদ্ধ ও জিহাদের ক্ষেত্রে ইমামদের অনুসারী
;;বরং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অনুসারী অ-ইরানী মুসলমানরাও (বৃহত্তর অর্থে) কোমবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
লক্ষ্যণীয় যে
,হযরত সাদিক (আ.) এ কথা যখন বলেছিলেন তখনও হযরত মূসা আল কাযিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেন নি
-রাবীর এ কথার অর্থ হচ্ছে এই যে
,ইমাম সাদিক (আ.) যে কথা ইমাম কাযিমের জন্মগ্রহণের আগেই বলেছেন তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর পুত্র ইমাম মূসার জন্মগ্রহণ (128 হিজরী) করার আগেই স্বীয় পৌত্রী (ইমাম মূসার কন্যা) হযরত ফাতিমা মাসূমার জন্মগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আর তাঁর কোমে সমাধিত হওয়ার ঘটনা 70 বছর পরে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
কোমের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বর্ণনা করেছেন যে
,যখন আব্বাসী খলীফা মামুন ইমাম আলী ইবনে মূসা আর রিযা (আ.)-কে 200 হিজরীতে মদীনা থেকে মারভে নিয়ে আসে
,তার এক বছর পর 201 হিজরীতে তাঁর বোন হযরত ফাতিমা মাসূমাহ্ ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য মদীনা থেকে বের হয়ে ইরানের দিকে যাত্রা করেন। যখন তিনি সভে শহরে পৌঁছে তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি জিজ্ঞাসা করেন :
“
আমার ও কোমের মাঝে কতখানি দূরত্ব আছে
?”
তখন তাঁকে বলা হয়েছিল :
“
10 ফারসাখ।
”
(এক ফারসাখ = 6.24 কি. মি.)
এ খবর সাদের সন্তানদের (মালিক আশআরীর পুত্র) কাছে পৌঁছলে সবাই সভের দিকে রওয়ানা হন যাতে তাঁরা তাঁকে তাঁদের শহর কোমে এসে বসবাস করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। যখন তাঁরা তাঁর কাছে পৌঁছেন তখন খাযরাজের পুত্র মূসা জনতার মধ্য থেকে বের হয়ে হযরত ফাতিমার দিকে গিয়ে তাঁর উটের রশি ধরে কোমে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে নিজ গৃহে স্থান দেন। কোমে 16 বা 17 দিন অবস্থান করার পর পূর্ব অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর গোসল ও কাফনের পর খাযরাজের পুত্র মূসা তাঁর নিজস্ব জমিতে তাঁকে দাফন করেন এবং আজও তাঁর পবিত্র কবর সেখানেই বিদ্যমান। দাফন করার পর মাদুর ও চাটাই নির্মিত ছাউনী তাঁর কবরের ওপর স্থাপন করা হয়েছিল। ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর মেয়ে যয়নাব (আ.) কর্তৃক হযরত ফাতিমা মাসূমার কবরের ওপর একটি গম্বুজ এবং তৎসংলগ্ন একটি হলঘর নির্মাণ করা পর্যন্ত তা পূর্বের অবস্থায়ই ছিল।
এ সব রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,হযরত ফাতিমা মাসূমাহ্ অত্যধিক ইবাদত-বন্দেগী করতেন। তিনি ছিলেন দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত ও মহানুভবতার অধিকারিণী। তিনি তাঁর দাদী হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর মতো অল্পবয়স্কা হয়েও আহলে বাইতের কাছে বিশেষ মর্যাদা
,উচ্চ সম্মান ও গুরুত্বের অধিকারিণী ছিলেন। আর তাঁর এ উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান কোম নগরীর আলেম এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অজ্ঞাত ছিল না। কারণ
,তাঁরা হযরত ফাতিমা মাসূমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য কোম থেকে সভে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর সমাধির ওপর তুলনামূলকভাবে একটি সাদামাটা সৌধ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর মাযারের ওপর একটি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর থেকেই তা আহলে বাইতের প্রেমিকদের যিয়ারতগাহে পরিণত হয়। কোম নগরীর বেশ কিছু সংখ্যক গণ্যমান্য ব্যক্তি অসিয়ত করেছিলেন যেন তাঁদেরকে মৃত্যুর পর হযরত ফাতিমা মাসূমার মাযারের পাশে দাফন করা হয়।
রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে
,মৃত্যুকালে হযরত ফাতিমা মাসূমা (আ.)-এর বয়স 28 বছর ছিল। তাঁর বয়স কম হওয়ার কারণেই ইরানীরা তাঁকে
‘
ফাতিমা মাসূমাহ্
’
(নিষ্পাপ ফাতিমা) অথবা
‘
মাসূমা-ই কোম
’
(কোম নগরীর নিষ্পাপ রমণী) বলে অভিহিত করে। কারণ
,ফার্সী ভাষায়
‘
মাসূম
’
শব্দের অর্থ নিষ্পাপ। আর এ কারণেই অল্পবয়স্ক শিশু যার কোন পাপ নেই
,তাকে মাসূম বলা হয়। অবশ্য পাপ থেকে মুক্ত থাকার কারণেও তাঁকে
‘
মাসূমাহ্
’
নামে অভিহিত করা হয়। কারণ
,শিয়া মাযহাবে ইসমাত (নিষ্পাপত্ব) দু
’
প্রকারের। এক ধরনের নিষ্পাপত্ব যা ওয়াজিব (অত্যাবশ্যক) এবং তা মহান নবী ও ইমামদের মধ্যে বিদ্যমান। আর মহানবী (সা.)-এর পর এ ধরনের ইসমাত কেবল 13 নিষ্পাপ ব্যক্তির মধ্যেই বিদ্যমান
।
আরেক ধরনের নিষ্পাপত্ব আছে যা ওয়াজিব নয়। আর এ ধরনের নিষ্পাপত্ব মহান আল্লাহর ওলী ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের মাঝে বিদ্যমান। তাঁরা পাপ এবং চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
পরবর্তী রেওয়ায়েত যা ইমাম রিযা (আ.) থেকে বর্ণিত তা থেকে বাহ্যত বোঝা যায় যে
,ইমামগণ কোম নগরীর গোড়াপত্তনের শুরু থেকে এ নগরীর জনগণকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথী বলে গণ্য করেছেন।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি এ নগরীর বাসিন্দাদের ভালোবাসা ও ভক্তি তাঁর জন্মগ্রহণের আগে থেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
সাফওয়ান ইবনে ইয়াহ্ইয়া বলেছেন :
“
একদিন আমি ইমাম রিযা (আ.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। কোমবাসীদের এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি তাদের ভক্তি ও ভালোবাসার কথা আলোচনা করা হলে তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন : মহান আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। এরপর তিনি বললেন : বেহেশ্ত আট দরজা বিশিষ্ট যার একটি কোমবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে। তারা সমগ্র বিশ্বে আমাদের অর্থাৎ আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে সর্বোত্তম। মহান আল্লাহ্ আমাদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব তাদের স্বভাবপ্রকৃতির মধ্যে মিশ্রিত করে দিয়েছেন।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,বেহেশ্তের দরজাগুলো মানব জাতির কর্ম অনুসারে শ্রেণীবিন্যাস ও বণ্টন করা হয়েছে। এ কারণেই
‘
জান্নাতের একটি দরজা কোমবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে
’
-এ বাক্যের অর্থ এও হতে পারে যে
,তারা ইমামদের সাথে সংগ্রামকারীদের দরজা অথবা সৎকর্মশীল বান্দাদের বিশেষ দরজা দিয়ে বেহেশ্তে প্রবেশ করবেন। উল্লেখ্য যে
,রেওয়ায়েতে সৎকর্মশীল হওয়ার বিষয়টি তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহের ক্ষেত্রে আলোচিত হয়েছে।
‘
তারা সমগ্র বিশ্বে আমাদের অনুসারীদের মধ্যে সর্বোত্তম
’
-ইমাম রিযা (আ.)-এর এ উক্তি থেকে আহলে বাইতের সকল অনুসারীর মধ্যে কোমবাসীদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়ে যায়।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে
,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতি কোমবাসীদের ভক্তি ও ভালোবাসা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সজীব ও জীবন্ত আছে
;বরং ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের সাথে সাথে তাদের এ ভক্তি-ভালোবাসা পূর্ণতার চরম শীর্ষে পৌঁছেছে।
তাঁদের ঈমান
,কর্মকাণ্ড এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে
,যেমন ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নামে তাদের সন্তান-সন্ততি
,মসজিদ-মাদ্রাসা
,স্কুল-কলেজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের নামকরণের ক্ষেত্রে এ সত্য পূর্ণরূপে দৃশ্যমান। আর বিষয়টি এতটা গভীর যে
,এ নগরীর কোন একটি গৃহও এ নাম হতে মুক্ত নয় (অর্থাৎ কোমের প্রতিটি গৃহে বসবাসকারীদের মধ্যে অন্তত একজনের নাম ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নামে রাখা হয়ে থাকে।)
কতিপয় রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,কোমবাসীদের থেকে বিপদাপদ দূর করে দেয়া হয়েছে এবং যারা এ নগরীর অনিষ্ট সাধন করতে চায় মহান আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন।
আবান ইবনে উসমান ও হাম্মাদ ইবনে নাব থেকে বর্ণিত আছে যে
,তাঁরা বলেছেন :
“
আমরা ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন উমরান ইবনে আবদুল্লাহ্ কোমী সেখানে প্রবেশ করলেন এবং ইমামের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে কিছু প্রশ্ন করলেন। ইমাম সাদিক (আ.) খুব স্নেহ ও মমতা সহকারে তাঁর সাথে আচরণ করলেন। তাঁর চলে যাওয়ার পর আমি ইমামকে জিজ্ঞাসা করলাম : এ লোকটি কে
,যার সাথে আপনি এত সদাচরণ করলেন
?ইমাম সাদিক (আ.) বললেন : সে মহানুভব ব্যক্তিদের বংশের লোকদের (কোমবাসীদের) অন্তর্ভুক্ত। কোন জালিমই তাদের প্রতি অসদিচ্ছা পোষণ করে না
;আর তা করলে মহান আল্লাহ্ তাকে দুমড়ে-মুচড়ে ধ্বংস করে দেবেন।
”
আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : কোম নগরী থেকে বালা-মুসিবত দূর করা হয়েছে।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে
,“
কোমবাসীরা আমাদের থেকে এবং আমরাও তাদের থেকে
।
যে পর্যন্ত তারা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করবে (আরেকটি পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত আছে : যে পর্যন্ত তারা তাদের মত
,পথ ও পদ্ধতি পরিবর্তন না করবে) সে পর্যন্ত যে জালিমই তাদের ব্যাপারে অসদিচ্ছা পোষণ করবে তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে। তবে যখন তারা এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়বে তখন মহান আল্লাহ্ অত্যাচারীদেরকে তাদের শাসনকর্তা বানিয়ে দেবেন। তবে তারা আল কায়েম আল মাহ্দীর সঙ্গী-সাথী এবং আমাদের আহলে বাইতের অত্যাচারিত হবার বিষয়টি সকলের কাছে প্রকাশকারী এবং আমাদের অধিকার সংরক্ষণকারী।
”
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন :
“
হে আল্লাহ্! তাদেরকে সব ধরনের ফিতনা
,অনিষ্ট ও অমঙ্গল থেকে রক্ষা করুন এবং তাদেরকে সব ধরনের আঘাত থেকে মুক্তি দিন।
”
ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : বিপদাপদ পবিত্র কোম এবং এর অধিবাসীদের থেকে দূর হয়ে গেছে। আর শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যখন কোম নগরী এবং এর অধিবাসীরা জনগণকে ওপর (মহান আল্লাহর দীনের) প্রামাণ্য দলিল হবে। আর তা হবে আমাদের কায়েম আল মাহ্দীর অন্তর্ধান এবং তার আবির্ভাবকালে। আর ব্যাপারটি যদি ঠিক এমন না হয় তাহলে পৃথিবী এর অধিবাসীদেরকে গ্রাস করবে।
মহান আল্লাহর ফেরেশতাগণ এ শহর এবং এ শহরের অধিবাসীদের থেকে বিপদাপদ দূর করে দেন। মুবতালা বলেন : আর যে জালিমই তাদের ব্যাপারে অসদিচ্ছা পোষণ করবে
,জালেমদের ধ্বংসকারী মহান আল্লাহ্ তাকে দুমড়ে-মুচড়ে ধ্বংস করে দেবেন অথবা তাকে সমস্যা
,বিপদাপদ অথবা শত্রুতার মুখোমুখি করবেন। মহান আল্লাহ্ অত্যাচারী শাসকদের শাসনামলে কোম ও তার অধিবাসীদেরকে তাদের (অত্যাচারীদের) স্মরণ থেকে এমনভাবে মুছে দেবেন যে
,যেভাবে জালেমরা মহান আল্লাহর নামে ভুলে গেছে
।
”
অবশ্য তা এতদর্থে নয় যে
,কোমের অধিবাসীরা অনিষ্ট দ্বারা মোটেও আক্রান্ত হবে না। বরং সম্ভাবনা রয়েছে তারা বেশ কিছু সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে। তবে মহান আল্লাহ্ তাদের থেকে অত্যন্ত কঠিন বিপদাপদ দূরে রাখবেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের অনুগ্রহ দিয়ে সাহায্য করবেন যার অতি বাস্তব ও উজ্জ্বল উদাহরণ হলো বিদ্রোহী ও সীমা লঙ্ঘনকারীদেরকে ধ্বংস করা এবং বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে আপতিত করে তাদের ব্যস্ত রাখা যেন তারা কোমবাসীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত না হতে এবং একেবারেই তাদের কথা স্মরণ করতে না পারে।
‘
বিহারুল আনওয়ার
’
গ্রন্থের রচয়িতা পবিত্র কোম নগরীর ভবিষ্যৎ এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগে এ নগরীর আদর্শিক ভূমিকা সম্পর্কে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে দু
’
টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
প্রথম হাদীস
:
“
মহান আল্লাহ্ কুফা নগরীর মাধ্যমে অন্য সকল নগরীর ওপর প্রমাণ উপস্থাপন করবেন এবং একইভাবে এ নগরীর মুমিনদের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মুমিনের কাছে এবং কোম নগরীর মাধ্যমে সকল শহর ও নগরীর ওপর এবং এ নগরীর অধিবাসীদের মাধ্যমে জিন ও মানব জাতি নির্বিশেষে সকল বিশ্ববাসীর ওপর যুক্তি প্রদর্শন ও প্রমাণ উপস্থাপন করবেন
;মহান আল্লাহ্ কোমবাসীদেরকে চিন্তাগতভাবে দুর্বল ও অনগ্রসর করেন নি
;বরং তাদেরকে তিনি সামর্থ্য দান ও সাহায্য করেছেন
;অতঃপর তিনি বললেন
:
এ নগরীর দীনদাররা খুব কষ্টে জীবন যাপন করবে
;আর এর অন্যথা হলে অন্যান্য স্থান থেকে জনগণ খুব দ্রুত সেখানে চলে আসবে এবং এ কারণে ঐ স্থান এবং এর অধিবাসীরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তখন তারা যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন বিশ্ববাসীদের জন্য হুজ্জাত
(
খোদার দীনের দলিল
)
হতে পারবে না। যখন কোম নগরীর অবস্থা এ পর্যায়ে উপনীত হবে
তখন আকাশ ও পৃথিবী শান্ত থাকবে না এবং এগুলোর অধিবাসীরা আর মুহূর্তের জন্যও টিকে থাকতে পারবে না। কোম এবং এর অধিবাসীদের থেকে বিপদাপদ দূর করে দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যখন কোম এবং এ নগরীর অধিবাসীরা সমগ্র মানব জাতির ওপর মহান আল্লাহর দলিল হয়ে যাবে এবং এটি হবে আমাদের কায়েম আল মাহ্দীর অন্তর্ধানকালে এবং তার আবির্ভাবের সময়। আর যদি এমন না হয় তাহলে পৃথিবী এর বাসিন্দাদেরকে সমূলে গ্রাস করবে
(
অর্থাৎ সকল বিশ্ববাসী ভূ
-
গর্ভে প্রোথিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে
)
।
মহান আল্লাহর ফেরেশতাগণ এ শহর ও এর অধিবাসীদের থেকে সব ধরনের বিপদ দূর করার জন্য নিয়োজিত আছ
েন
;আর যে অত্যাচারী এ নগরীর অনিষ্ট সাধন করার অসদুদ্দেশ্যে পোষণ করবে
,যিনি সকল অত্যাচারীকে ধ্বংস করেন সেই মহান আল্লাহ্ তাকে দুমড়ে
-
মুচড়ে গুঁড়িয়ে দেবেন
(যেমন ইরানের জালিম বাদশাহ্ মুহাম্মদ রেযা শাহ পাহলভী এবং ইরাকের স্বৈরাচারী সাদ্দাম হুসাইনকে মহান আল্লাহ্ ধ্বংস করেছেন।)
অথবা সংকটে জড়িয়ে দেবেন বা বিপদাপন্ন করবেন অথবা শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত করবেন। মহান আল্লাহ্ অত্যাচারীরা যেমন মহান আল্লাহর স্মরণ করা ভুলে গিয়েছিল ঠিক তেমনি কোম ও এ নগরীর অধিবাসীদের নাম তাদের স্মরণ থেকে মুছে দেবেন।
”
দ্বিতীয় হাদীস
:
“
শীঘ্রই কুফা নগরী ঈমানদার শূন্য হয়ে যাবে এবং সাপ যেভাবে নিজের গর্তে ঢুকে যায় সেভাবে ধর্মীয় জ্ঞান কুফা থেকে প্রস্থান করবে এবং কোম নামের একটি নগরী থেকে তা প্রকাশিত হবে এবং ঐ নগরী ও জনপদ এমনভাবে জ্ঞান ও উত্তম গুণাবলীর খনিতে পরিণত হবে যে
,পৃথিবীর বুকে কোন লোকই তখন চিন্তামূলক দাসত্ব ও দুর্বলতায় ভুগবে না
,এমনকি নববধূরাও তাদের নিজ বাসর ঘরে চিন্তামূলক দীনতায় ভুগবে না। আর এ সব ঘটনা আমাদের কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাবের নিকটবর্তী সময় সংঘটিত হবে। (সমগ্র বিশ্বে) কোম ও এ নগরীর অধিবাসীরা ইসলাম ধর্মের (শাশ্বত) বাণী পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে হুজ্জাতের (ইমাম মাহ্দী) প্রতিনিধিত্ব করবে
;আর এমন যদি না হয় তাহলে পৃথিবী এর অধিবাসীদেরকে সমূলে গ্রাস করবে এবং পৃথিবীর বুকে তখন আর কোন হুজ্জাতই অবশিষ্ট থাকবে না। এ নগরী থেকে জ্ঞান বিশ্বের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে বিস্তার লাভ করবে আর এভাবেই এ নগরী সমগ্র বিশ্ববাসীর ওপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত হয়ে যাবে এবং পৃথিবীর বুকে এমন কোন ব্যক্তিই বিদ্যমান থাকবে না যার কাছে দীন ও জ্ঞান পৌঁছবে না। আর তখনই কায়েম আল মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তাঁর আবির্ভাব বান্দাদের ওপর মহান আল্লাহর ক্রোধ ও গজবের কারণ হবে। কারণ
,মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ না তারা ইমাম মাহ্দীকে অস্বীকার করবে।
”
এ দু
’
হাদীস থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় :
1. যেহেতু এ দু
’
টি হাদীস হুবহু বা শাব্দিকভাবে বর্ণিত না হয়ে অর্থগতভাবে বর্ণিত হয়েছে সেহেতু এ দু
’
টি হাদীসের বর্ণিত বিষয়গুলোর মধ্যে কিছুটা অগ্র-পশ্চাৎ হয়েছে। তবে এ দু
’
টি হাদীসের অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
2. এ সব রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায় যে
,জ্ঞান ও আহলে বাইতের অনুসরণ করার ক্ষেত্রে কুফা নগরীর ধর্মীয় ভূমিকা আসলেই ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে হযরত মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের খুব কাছাকাছি সময় তা নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য নাজাফও কুফা নগরীরই অন্তর্ভুক্ত। কারণ এ নগরীর আসল নাম নাজাফ-ই কুফা (কুফার নাজাফ) ছিল
;বরং কখনো কখনো
‘
কুফা
’
বলতে সমগ্র ইরাক বোঝানো হতো। আর আমরা এ বিষয়টি ইতোমধ্যে যথাস্থানে উল্লেখ করেছি। তবে কোম নগরীর ধর্মীয় ভূমিকা একইভাবে অব্যাহত থাকবে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কাছাকাছি সময় এ নগরীর ভূমিকা আরো মহান ও গুরুত্বপূর্ণ হবে। আর হাদীসের নিম্নোক্ত দু
’
টি লাইনে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিতও রয়েছে। যেমন :
‘
এ সব কিছু আমাদের কায়েম আল মাহ্দীর অন্তর্ধানকালে এবং তার আবির্ভাবের সময় সংঘটিত হবে
’
এবং
‘
আর এ সব বিষয় আমাদের কায়েমের আবির্ভাবের কাছাকাছি সময় সংঘটিত হবে
’
।
3. ঐ সময় পবিত্র কোম নগরীর মহান আদর্শিক ভূমিকা কেবল ইরান বা শিয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না
;বরং তা হবে বিশ্বজনীন
,এমনকি তা অমুসলিমদেরকেও শামিল করবে।
‘
এবং শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যখন কোম নগরী এবং এর অধিবাসীরা সমগ্র মানব জাতির ওপর (মহান আল্লাহর) হুজ্জাত হবে
’
,‘
এবং পৃথিবীতে এমন কোন লোক থাকবে না যার কাছে ধর্ম ও জ্ঞান পৌঁছবে না
’
-এর অর্থ এই নয় যে
,এ নগরী থেকে জ্ঞান ও ধর্ম বিশ্বের প্রতিটি লোকের কাছে পৌঁছবে
;বরং এতদর্থে যে
,ইসলাম ধর্মের আহবান এমনভাবে সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে এবং এমনভাবে তাদের কাছে উপস্থাপিত হবে যে
,যদি কোন ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান জানার ও মানার চেষ্টা করে তাহলে এ বিষয় তার জন্য সম্ভব ও সহজসাধ্য হবে।
অবশ্য ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে পবিত্র কোম নগরীর এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সুসংগঠিত প্রচারণা সংস্থা ও পরিকল্পিত কার্যক্রম সম্বলিত একটি হুকুমত প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট
;বরং তা উদ্ধত বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী চক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার ওপরও নির্ভরশীল হবে। আর এ বিষয়টি পবিত্র কোম নগরী থেকে সমগ্র বিশ্ববাসীর কর্ণে ইসলাম ধর্মের বাণী ও আহবান পৌঁছে যাওয়ারও কারণ হবে।
4. কোম নগরীর এরূপ ব্যাপক সাংস্কৃতিক ভূমিকা অর্থাৎ এ নগরী থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম ধর্ম উপস্থাপিত হওয়ার বিষয়টি উদ্ধত সাম্রাজ্যবাদী চক্রের ক্রোধ ও শত্রুতার কারণ হবে। ইসলাম ধর্মের প্রতি এ শত্রুতার কারণেই মহান আল্লাহ্ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শক্তিশালী হাতের মাধ্যমে উদ্ধত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। কারণ
,এ শত্রুতা মানব জাতির ওপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ) পূরণ করে দেবে। শত্রুদের পক্ষ থেকে সমস্যা সৃষ্টি ইসলামের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতার কারণে নয়
;বরং এ ধর্মের প্রতি তাদের শত্রুতা ও বিরোধিতার কারণেই হবে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এই যে
,এ হাদীসে যা কিছু উল্লেখ করা হয়েছে তা কুফা ও ইরাকের ব্যাপারে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কোম ও ইরানের ব্যাপারে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আসলে বর্তমানে কোম ও ইরান বিশ্বের মুসলিম জাতির ওপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত। এমনকি আমরা যদি ধরেও নিই যে
,এ ধরনের সচেতনতা যা এ দুই রেওয়ায়েতে উল্লিখিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে তার উদ্ভব ও প্রসারে সম্ভবত কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। তারপরও কোন সন্দেহ নেই যে
,এর কতিপয় পূর্ব প্রক্রিয়া ও পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে
‘
আমাদের কায়েমের আবির্ভাবের কাছাকাছি সময়
’
-হাদীসের এ বাক্যটি নির্দেশ করে যে
,পবিত্র কোম নগরীর এ ধরনের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও গুরুত্ব অর্জন এবং হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের মধ্যে তেমন একটা সময়গত ব্যবধান থাকবে না।