ইরান ও ইরাক অভিমুখে ইমাম মাহ্দী (আ.)
হিজায থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.) এর অগ্রাভিযান সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে পার্থক্য ও ভিন্নতা বিদ্যমান । আমাদের শিয়া সূত্র ও উৎস্যসমূহে বর্ণিত হাদীসসমূহে সার্বিকভাবে উল্লেখিত হয়েছে যে
,হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) সরাসরি হিজায থেকে ইরাকের দিকে যাত্রা করবেন। তবে কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,তিনি পবিত্র মক্কা নগরী থেকেই সরাসরি ইরাকের দিকে যাত্রা করবেন। আর রওয়াতুল কাফী গ্রন্থের পূর্বোল্লেখিত রেওয়ায়েতটি থেকেও এ বিষয়টির সমর্থন পাওয়া যায় এভাবে যে তিনি পবিত্র মদীনায় একটি সেনাদল প্রেরণ করবেন।
তবে
,আহলুস সুন্নাহর সূত্র সমূহে বর্ণিত রেওয়ায়েত সমূহে সার্বিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,তিনি পবিত্র মক্কানগরী থেকে সরাসরি শাম ও বাইতুল মুকাদ্দেসের দিকে যাবেন। আর সুন্নী সূত্রসমূহে বর্ণিত কিছু কিছু রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে
যে
,তিনি প্রথমে ইরাকে যাবেন এবং তারপর তিনি শাম ও বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে অগ্রসর হবেন।
তবে ইবনে হাম্মাদের হস্তলিপিতে কেবল দু
’
একটি রেওয়ায়েত বিদ্যমান আছে সেখানে বর্ণিত হয়েছে যে
,সর্বপ্রথম তিনি দক্ষিণ ইরানে আসবেন। সেখানে ইরানীরা এবং তাদেরকে নেতা খোরাসনী ও তাঁর সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক শুআইব ইবনে সালেহ্ তাঁর হাতে বাইআত করবেন। এরপর তিনি তাদেরকে বসরা অঞ্চলে সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করবেন। অতঃপর তিনি ইরাকে প্রবেশ করবেন।
তাই রেওয়ায়েত সমূহে যে বিষয়টির ব্যাপারে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তা হচ্ছে এই যে
,তাঁর লক্ষ্যস্থল হবেম বাইতুল মুকাদ্দাস্। আর তিনি এ দুভয়ের মাঝখানে কিছুকাল তার নবপ্রতিষ্ঠিত সরকারের বিশেষ করে ইরাকের সার্বিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা এবং আল-কুদ্স্ অভিমুখে সামরিক অভিযান পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত করার ব্যাপারে ব্যস্ত থাকবেন।
এটাই স্বাভাবিক যে
,মহানবী (সা.) নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.) সাহাবা এবং তাবেয়ীদের রেওয়ায়েত সমূহের লক্ষ্য ইমাম মাহ্দী (আ.) এর যাবতীয় পদক্ষেপ এবং অভিযানের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রদান করা নয় বরং এমন সব মৌলিক ঘটনা বর্ণনা করাই লক্ষ্য যেগুলো তার আন্দোলন ও গৃহীত পরিকল্পনার জন্য ক্ষতিকর হবে না এবং মুসলমানদের অন্তরে আশার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবে। এরপর সেগুলো ঐশী মুজিযা বলেও পরিগণিত হবে যা তাঁর আবির্ভাবকালে মুসলমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ়-মজবুত করবে এবং তাঁকে (আ.) সাহায্য করার ব্যাপারে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে।
তাই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অভিমত হচ্ছে এই যে তিনি এ সময় ইসলাম ও আন্দোলনের স্বার্থে হিজায
,ইরান
,ইরাক ও ইয়েমেনে যাতায়াত করতে থাকবেন আর তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োজন না হলে তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন না।
বিশেষ কতকগুলো কারণে আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.) এর দক্ষিণ ইরানে আগমনের বিষয়টি ইরান সংক্রান্ত অধ্যায়ে
’
প্রাধান্য ও গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এসব কারণের মধ্যে এ বিষয়টি আছে যে শিয়া-সূন্নী হাদীস সূত্র ও গ্রন্থ সমূহের রেওয়ায়েতসমূহে হিজায মুক্ত করার পর বসরার যুদ্ধের উল্লেখ আছে। আর সেটি হবে একটি বিরাট ও ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ।
এ সব কারণের মধ্যে এ বিষয়টিও আছে যে তাঁর সেনাবাহিনী ও জনবলের বৃহত্তম অংশ বা সিংহভাগই হবে অন্ততঃ পক্ষে ঐ পর্যায়ে ইরানীরা। তাই বসরা ও পারস্যোপসাগরের যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য তখনও তার ইরানে আসাই হবে স্বাভাবিক।
ইবনে হাম্মাদ তার হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে (পৃ. 86) বলেছেন :
‘‘
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) থেকে আবু রুমান
,তাঁর থেকে আমাদেরকে ওয়ালীদ ইবনে মুসলিম ও রুশদ (রাশাদ) ইবনে সা
’
দ বলেছেন : যখন কূফার দিকে সুফিয়ানীর অশ্বারোহী বাহিনী
(সাজোয়া
বাহিনী) বের হবে তখন সে খোরাসাবাসীর খোজে সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে । আর খোরাসানবাসী মাহদীর সন্ধানে বের হবে । সে তখন হাশেমী এবং কালো পতাকাধারীদের সাক্ষাত পাবে । উল্লেখ্য যে
,কালো পতাকাবাহী সেনাদলের নেতৃত্বে থাকবে শুআইব ইবনে সালেহ । সে ইস্তাখরের ফটকের কাছে সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করবে । তাদের মধ্যে ভয়ংকর যদ্ধ বেধে যাবে । অতঃপর কালো পতাকাবাহী সেনাবাহিনী জয়যুক্ত হবে এবং সুফিয়ানীর সাজোয়া বাহিনী পালিয়ে যাবে
।
আর তখনই জনগণ মাহদীকে কামনা করবে এবং তার সন্ধান করতে থাকবে ।
”
একইভাবে তিনি সাঈদ আবু উসমান সূত্রে ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন । ইমাম বাকির বলেছেন :
“
সুফিয়ানী কুফা ও বাগদাদে পৌঁছানোর পর সমগ্র বিশ্বে তার সেনাবাহিনী প্রেরণ ও মোতায়েন করবে । এ সময় মধ্য এশিয়া ও খোরাসানবাসীর পক্ষ থেকে সে হুমকির সন্মুখীন হবে । কারণ
,প্রাচ্যবাসী সুফিয়ানী বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য আক্রমণ চালাতে থাকবে ।যখন এ সংবাদ সুফিয়ানী বাহিনীর কাছে পৌছবে তখন সে উমাইয়্যা বংশীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি বিশাল সেনাবাহিনী ইস্তাখরের দিকে প্রেরণ করবে এবং কোমেম
,দৌলতে রাই এবং মারযে যার অঞ্চলে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হবে । এ সময় সুফিয়ানী কুফা ও মদীনাবাসীকে ব্যাপকভাবে হত্যা করার আদেশ জারী করবে । এ সময় কালো পতাকাবাহীরা আবির্ভূত হবে যাদের অগ্রভাগে হাতে একটি পতাকা নিয়ে বনি হাশিমের এক যুবক থাকবে । মহান আল্লাহ তার জন্য সকল বিষয় ও কাজ সহজসাধ্য করে দিবেন । খোরাসান সিমান্তে সে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে । আর রাইয়ের দিকে যাওয়ার পথে সে দাসদের অন্তর্ভূক্ত শুআইব ইবনে সালেহ নামের বনি তামীম গোত্রের এক ব্যক্তিকে ইস্তাখরের দিকে যাত্রা ও সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আহবান জানাবে । বাইযা-ই ইস্তাখরে সে (শুআইব)
,মাহদী ও হাশিমী পরস্পর সাক্ষাৎ করবে । তখন তাদের ও সুফিয়ানীর মধ্যে ব্যপক যুদ্ধ বেধে যাবে । এ যুদ্ধে এতটা রক্তপাত হবে যে
,অশ্বসমূহের পায়ের নলি পর্যন্ত রক্তে ভরে যাবে । এ সময় সীস্তানের দিক থেকে বনি উদ্দী গোত্রের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিশাল সেনাদল সেখানে পৌছবে এবং এভাবেই মহান আল্লাহ তার সাথী ও সেনাবাহিনীকে বিজয়ী করবেন । রাই অঞ্চলে দু
’
টি সংঘর্ষের পর মাদায়েনেও যুদ্ধ হবে এবং আকের কুফেতে সাইলামীয়ার যুদ্ধও সংঘটিত হবে । ঐ সময় তাদের গ্রামগুলোর মধ্য থেকে একটি সম্প্রদায় আখওয়াসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে । তারা এমন সব দল হবে যারা সাধারণভাবে কুফা ও বসরার অধিবাসী হবে । অতঃপর তারা তার হাত থেকে কুফার বন্দীদের মুক্ত করবে ।
যদিও একদিকে এ দু
’
রেওয়ায়েতের সনদ দুর্বল এবং তাতে বর্ণিত বিষয়বস্তুর মধ্যে বিভ্রাট বিদ্যমান
,অন্যদিকে যে সব ঘটন ও যুদ্ধ দ্বিতীয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো কেবল দুর্বল রেওয়ায়েতসমূহেই দেখতে পাওয়া যায়
,এতদসত্বেও বসরার যুদ্ধ যা ইরাক সংক্রান্ত অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে তা এ রেওয়ায়েতেও সমর্থিত হয়েছে । একইভাবে ইমাম মাহদী (আ.) এর বিপ্লব বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ যে সব রেওয়ায়েতে বসরা যুদ্ধের কথা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে সমর্থন করে । তবে এ দিক থেকে যে
,ইমাম মাহদী ও তার সাথীদের বিপক্ষ শক্তি হবে বাইবেলের অনুসারী পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা এবং ইবনে হাম্মাদের রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বলা যায় পাশ্চাত্য সেনাশক্তির পক্ষেই সুফিয়ানী বাহিনীর দাড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী ।
আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বসরার ব্যাপারে একটি ভাষণে বলেছেন :
“
আবুল্লার শহীদদের সংখ্যার অনুরূপ সংখ্যক বসরাবাসী-যাদের বুকে ইঞ্জিল ঝোলানো থাকবে
,তারা তার পেছনে যেতে থাকবে ।
যদি এ রেওয়ায়েত সঠিক এবং এর উদ্দেশ্য বসরা ও পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ হয় যেমনটি ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব সংশ্লিষ্ট ইবনে হাম্মাদের রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে
,তাহলে বিষয়টির গুরুত্ব ও বিরাটত্ব প্রমাণিত হয় এ দৃষ্টিতে যে
,পরবর্তিতে সবার কাছে পরিষ্কার হবে শক্তির পাল্লা ইমাম মাহদীর দিকেই ঝুকে রয়েছে । ইবনে হাম্মাদের বর্ণনায় এভাবে এসেছে যে
,তখন জনগণ ইমাম মাহদীকে চাইবে ও তাকে পাবার জন্য খুজবে ।
একটি রেওয়ায়েত যা আমি মৌলিক কোন গ্রন্থে পাই নি সেই রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : ইমাম মাহদী (আ.) আলোর সাত হাওদায় করে ইরাকে প্রবেশ করবেন ।
)
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانفُذُوا لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ
(
“
হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায় যদি তোমরা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজ্যসমূহ অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হও তাহলে প্রবেশ করে দেখ তো । তবে তোমরা শক্তি ও ক্ষমতা ব্যতীত সেগুলোয় প্রবেশ করতে পারবে না ।
”
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
কায়েম (মাহদী) ভূমিকম্পের দিনে এমনভাবে আলোর সাত হাওদার মাঝে ইরাকে প্রবেশ করবে যে
,কুফায় অবতরণ করা পর্যন্ত কেউ বুঝতেই পারবে না মাহদী ঐ সব হাওদার কোনটিতে আছে ।
”
আরেকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে : তিনি কুফার অদূরে ফারুকে আলোর হাওদাসমূহের মধ্যে অবতরণ করবেন । ইমাম মাহদীর ক্ষেত্রে এ ঘটনা মহান আল্লাহর ঐশী বিষয় বলে গণ্য হতে পারে । আবার তা এক স্কোয়াড্রন বিমান অথবা এতদসদৃশ যান্ত্রিক যান ব্যাবহার করে ইমাম মাহদীর ইরাকে প্রবেশ করার একটি ব্যাখ্যাও হতে পারে যেগুলোকে রেওয়ায়েতসমূহে
‘
আলোর হাওদা
’
বলে বর্ণনা করা হয়েছে । যা হোক
,পবিত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় আলোর সাত হাওদার উল্লেখ ওপরে উল্লিখিত অভিমতকে (বিমান বা এতদসদৃশ যান্ত্রিক যান ব্যবহার) সমর্থন করে ।
ইরাকে ইমাম মাহদী (আ.) পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সেসব সংক্রান্ত বহু রেওয়ায়েত বিদ্যমান । আমরা সেগুলোর কয়েকটি
‘
ইরাক অধ্যায়ে
’
বর্ণনা করেছি । এখন সেগুলোর মধ্য থেকে যেগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরব ।
এগুলোর মধ্যে বহু রেওয়ায়েত আছে যেগুলোয় ইমাম মাহদীর হাতে ইরাকের অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিশুদ্ধকরণ এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নির্মূল হওয়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে । আমরা সেগুলোর অধিকাংশই স্ব-স্ব স্থানে উল্লেখ করেছি ।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমাম মাহদীর কুফা
,নাজাফ ও কারবালায় প্রবেশ
,কুফা নগরীকে রাজধানী হিসেবে মনোনীত করা এবং এ নগরীর অদূরে
‘
বিশ্ব জুমআ মসজিদ
’
নির্মাণ-রেওয়ায়েতসমূহ অনুযায়ী যা একহাজার দরজাবিশিষ্ট হবে ।
ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
নিশ্চয় আমাদের কায়েম যখন আবির্ভূত হবে তখন পৃথিবী স্বীয় প্রভুর আলোয় আলোকিত হয়ে যাবে এবং মহান আল্লাহর বান্দারা সূর্যালোকের প্রতি মুখাপেক্ষী থাকবে না । তার শাসনামলে পুরুষরা এতটা দীর্ঘায়ু লাভ করবে যে
,প্রত্যেক পুরুষের এক হাজার পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যাদের মধ্যে কোন কন্যা সন্তান থাকবে না । সে কুফার পশ্চাতে অর্থাৎ নাজাফে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে যা এক হাজার দরজা বিশিষ্ট হবে । কুফার বাড়িগুলো কারবালার নদী ও হিরার সাথে এমনভাবে যুক্ত থাকবে যে
,যদি কোন ব্যক্তি শুক্রবার দিনে দ্রুতগামী চিকন খচ্চরের পিঠে (দ্রুতগামী যানে) সওয়ার হয়ে জুমআর নামায পড়ার জন্য সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয় তবুও সে নামাযে উপস্থিত হতে সক্ষম হবে না।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : যখন দ্বিতীয় জুমআ (শুক্রবার) সমাগত হবে তখন জনগণ বলবে : হে রাসূলুল্লাহর সন্তান ! আপনার পেছনে নামায রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পেছনে নামায পড়ার মতোই । কিন্তু মসজিদে স্থান সংকুলান হচ্ছে না । তখন সে মজবুত ভিত্তিসম্পন্ন একটি মসজিদের নকশা তৈরি করবে যা এক হাজার দরজা বিশিষ্ট হবে । আর জনগণেরও এর ভিতরে স্থান সংকুলান হবে ।
”
এক হাজার দরজার উল্লেখ হয়তোবা মসজিদটির বিশাল আয়তনবিশিষ্ট হবার দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করে । আর এ থেকে মণে হয় যে
,মসজিদটি জামে মসজিদ হবে যেখানে পৃথিবীর দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ইমাম মাহদীর পেছনে জুমআর নামায পড়ার জন্য আসবে । আর এ মসজিদ হয়তো বিমানবন্দর এবং গাড়ি পার্কিং করার স্থানসমেত কুফা ও কারবালার মধ্যবর্তী পুরো জায়গাই ধারণ করবে যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় আশি কিলোমিটার ।
রেওয়ায়েতসমূহ অনুসারে ইমাম মাহদী (আ.)-এর গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে থাকবে পবিত্র কারবালার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে নিজ প্রপিতামহ শহীদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.)- এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সে সাথে কারবালাকে আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করা ।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন :
“
মহান আল্লাহ অবশ্যেই কারবালাকে একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ও দুর্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন যা হবে ফেরেশতা ও মুমিনদের যাতায়াত করার স্থল এবং কারবালাও তখন এর সর্ব্বোচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হবে ।
”
এ সব পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে ঐ নিদর্শন বা মুজিযা যা কুফার নাজাফে প্রকাশ পাবে । আর তা এভাবে হবে যে
,তিনি স্বীয় পিতামহ মহানবী (সা.)-এর বর্ম পরিধান এবং একটি বিশেষ বাহনের ওপর আরোহণ করবেন যা সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করবে । এর ফলে বিশ্বব্যাপী সব মানুষ তাদের নিজ নিজ দেশ ও স্থান থেকেই তাকে দেখতে পাবে ।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন :
“
আমি যেন কায়েমকে নাজাফে দেখতে পাচ্ছি
,সে মহা নবী (সা.)-এর বর্ম পরিধান করেছে এবং ঐ বর্ম তার দেহে ওপর আটসাট হলে সে তা নাড়া দিচ্ছে
,ফলে তা ঢিলা হয়ে যাচ্ছে । এরপর সে মোটা সবুজ রেশমী বস্তু দ্বারা ঐ বর্ম ঢেকে দিচ্ছে এবং নিজের সাদাকালো বর্ণের অশ্বের ওপর সওয়ার হয়েছে যার দু
‘
চোখের মাঝ থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে । এরপর সে তার অশ্বকে চালনা করছে । পৃথিবীর ওপর এমন কোন লোক থাকবেনা যার কাছে এ আলোর দ্যুতি পৌছবে না । এটি হবে তাদের জন্য একটি নিদর্শন । অতঃপর সে মহানবী (সা.)-এর পতাকা উত্তোলন করবে । যখনই সে ঐ পতাকা বাতাসে নাড়বে তখন এর আলোয় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আলোকিত হয়ে যাবে ।
আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন :
“
আমি যেন তাকে শ্বেত পাবিশিষ্ট ও সুসজ্জিত একটি অশ্বের ওপর সওয়ার অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি যার কপাল থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে । সে ওয়াদীউস সালাম (নাজাফে অবস্থিত) অতিক্রম করে সাহলার নদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় বলছে :
لا اله الا الله حقاً حقاً، لا اله الا الله تعبداً ورقاً اللهم معز کل مؤمن وحید و مذل کل جبار عنید، انت کنفی حین تعیینی المذاهب و تضیق علی الارض بما رحبت. اللهم خلقتنی و کنت غنیاً عن خلقی و لولا نصرک ایای لکنت من المغلوبین. یا منشر الرحمة من مواضعها و مخرج البرکات من معادنها و یا من خص نفسه بشموخ الرفعة فأولیاؤه بعزه یتعززون، یا من وضعت له الملوک نیر المذلة علی اعناقهم فهم من سطوته خائفون........الخ
সত্যসত্যই মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই
;একমাত্র মহান আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নেই । হে আল্লাহ যিনি প্রত্যেক নিঃসঙ্গ মুমিনের মর্যাদা দানকরী এবং প্রত্যেক শত্রুভাবাপন্ন অত্যাচারী পরাক্রমশালীকে অপদস্তকারী । যখন ধর্ম
,পথ ও মতসমূহ আমাকে বিচ্যুত করতে চায় এবং প্রশস্ত হওয়া সত্বেও পৃথিবী যখন আমার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন আপনিই আমার রক্ষাকারী । হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অথচ আমাকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে আপনি মোটেও মুখাপেক্ষী ছিলেন না (আপনি আমাকে সৃষ্টি নাও করতে পারতেন) । হে আল্লাহ যদি আপনি আমাকে সাহায্য না করতেন তাহলে আমি পরাভূত হয়ে যেতাম । হে ঐ সত্তা! যার সামনে সব রাজা-বাদশাহ নিজেদের গর্দানের ওপর অপদস্ততার জোয়াল পড়েছে
;তাই তারা সবাই তার প্রতিপত্তি ও দাপটে ভীত-সন্ত্রস্ত
…
।
আমরা শীঘ্রই মহান আল্লাহ তার মাধ্যমে যে সব গায়েবী সাহা্য্য
,কারামত ও মুজিযা প্রকাশ করবেন সেগুলো এবং যে সব রেওয়ায়েতে তার যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম বিকাশ ও বিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করব ।
তার গৃহিত পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডসমূহের মধ্যে এও অন্তর্ভুক্ত থাকবে যে
,তিনি সাহলাকে নিজের ও তার পরিবারের বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করবেন । আর কারবালার দিক থেকে সাহলা কুফার কাছাকাছি একটি স্থানের নাম । এ ব্যাপারে বেশ কিছু রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে । এগুলোয় ইঙ্গিত রয়েছে যে
,আবির্ভাবের পর তার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি থাকবে ।
তার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে থাকবে আল কুদসের দিকে অভিযান ও যাত্রার আগে ইরাকে তার দীর্ঘকাল অবস্থান । রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে :
“
অতঃপর তিনি কুফায় আসবেন এবং সেখানে মহান আল্লাহ যতদিন চান ততদিন তিনি তার অবস্থানকে দীর্ঘ করবেন ।
”
সম্ভবত ইরাকের অভ্যন্তরীণ অবস্থা স্থিতিশীল হওয়া এবং সে দেশকে তার প্রশাসনের রাজধানী হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়াও সেখানে তার দীর্ঘকাল অবস্থান করার কারণ এটাও হতে পারে যে
,তিনি ইরাকে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তার মনোনীত সঙ্গী-সাথীদেরকে একত্রিত করবেন । তিনি ইরাক থেকে সেনাদল গঠন করে পৃথিবীর সব দেশে প্রেরণ করবেন । এরপর তিনি তার সেনাবাহিনীকে নিয়ে পবিত্র কুদস বিজয়ের জন্য যাত্রা করবেন ।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
কায়েম যখন কুফায় প্রবেশ করবে তখন (পৃথিবীর বুকে) এমন কোন মুমিন থাকবে না যে সেখানে উপস্থিত থাকবে না অথবা সেখানে আসবে না । আর এটিই হচ্ছে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এর বাণী । আর সে তার সঙ্গীদেরকে বলতে থাকবে : আমাদেরকে এ অত্যাচারী সীমা লঙ্ঘনকারীর কাছে নিয়ে যাও ।
”
ইমাম বাকির থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে :
“
আমি যেন কায়েমকে কুফার নাজাফে দেখতে পাচ্ছি । সে পবিত্র মক্কা থেকে পাঁচ হাজার ফেরেশতার মাঝে সেখানে এসেছে । তার ডান পাশে জীবরাঈল
,বাম পাশে মীকাঈল এবং মুমীনরা তার সামনে রয়েছে । আর সে সেখান থেকে প্রথিবীর বিভিন্ন দেশে সেনাবাহিনী প্রেরণ করছে ।
”
‘
এবং শুআইব ইবনে সালেহ তার সামনে থাকবে
’—
এ শিরোনামে বর্ণিত রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে শুআইব হবেন তার সেনাপতি ।
কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,তিনি তুর্কীদের বিরুদ্ধে তার প্রথম সামরিক অভিযান শুরু করবেন অর্থাৎ প্রথমে তিনি তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করবেন । তাই ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে (পৃ.58) আরতাত থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
সুফিয়ানী তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে
;অতঃপর মাহদীর হাতে তাদের পূর্ণ বিলোপ সাধিত হবে
;আর মাহদী সর্বপ্রথম যে সেনাদল প্রস্তুত করবেন তা তিনি তুর্কীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবেন ।
এ রেওয়ায়েতের সদৃশ্য একটি রেওয়ায়েত সাইয়্যেদ ইবনে তাউসের আল মালাহিম ওয়াল ফিতান গ্রন্থের 52 পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে । তিনি এ গ্রন্থে ইবনে হাম্মাদের গ্রন্থ থেকে সত্তর বা ততোধিক পৃষ্ঠা উদ্ধৃত করেছেন ।
আরো কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,ইামম মাহদী (আ.) একটি সেনাবাহিনী কন্সট্যান্টিনোপল
,দেইলাম ও চীনের দিকে প্রেরণ করবেন । আর সম্মিলিতভাবে সব রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,ইমাম মাহদী ইরাকে নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও প্রশাসনের অবস্থা সুশৃঙ্খল ও দৃঢ়ীকরণ
,রাশিয়া ও চীনের দিক থেকে রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তসমূহ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা ও তা জোরদার করা
,অতঃপর কুদস বিজয়ের যুদ্ধের জন্য জাতীয়
,রাজনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের মতো বেশ কিছু মৌলিক কাজ করবেন ।
বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে অভিযান
কতিপয় রেওয়ায়েত অনুসারে ইমাম মাহদী (আ.) আনতাকিয়ায় রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেনাবাহিনী প্রেরণ করবেন । তিনি ঐ সেনাবাহিনীর সাথে তার কতিপয় সাহাবীকেও প্রেরণ করবেন । অতঃপর তারা আনতাকিয়ার একটি গুহা থেকে পবিত্র সিন্দুক বের করে আনবেন যার ভেতরে তাওরাত ও ইঞ্জিলের আসল কপি থাকবে ।
অবশ্য ইয়াওমুল খালাস গ্রন্থে এ বিষয়টি বিহার (পৃ.284) এবং মুন্তাখাবুল আসার গ্রন্থদ্বয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে । অবশ্য আমি এ দু
‘
টি গ্রন্থে তা পাইনি
…
সম্ভবত পাশ্চাত্যের জন্য এ মুজিযা প্রকাশিত হওয়া হচ্ছে ইমাম মাহদীর পক্ষ থেকে এমন এক পদক্ষেপ যা আনতাকিয়ার উপকুলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পাশ্চাত্য সেনাবাহিনীকে কুদস মুক্ত করার মহাসমরে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখবে । রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে
,এ সব সৈন্য (পাশ্চাত্য-বাহিনী) রমযান মাসে আসমানী গায়েবী আহবান ধ্বনির পরেই এ অঞ্চলে অবতরণ করবে এবং মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফকে মুজিযাস্বরূপ তাদের সামনে আবির্ভূত করবেন ।
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
রোমানরা আসহাবে কাহাফের গুহার নিকটবর্তী সমুদ্র সৈকতের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে এবং মহান আল্লাহ ঐ যুবকদেরকে তাদের কুকুরসহ গুহা থেকে বের করে আনবেন । তাদের মধ্য থেকে
‘
মালীখা
’
ও
‘
খাসলাহা
’
নামক দু
‘
ব্যক্তি থাকবে যারা উভয়ই কায়েমের নির্দেশ মেনে নেবে ।
”
এ কথার অর্থ এও হতে পারে যে
,মালীখা ও খাসলাহা ইমাম মাহদীর কাছে এসে তার হাতে বাইআত করবেন অথবা তার কাছে আসহা্বে কাহাফের সাথে বিদ্যমান উত্তরাধিকারসমূহ অর্পণ করবেন ।
সুতরাং গায়েবী সাহায্য পাশ্চাত্য বিাহিনীকে ইহুদীদের ও সুফিয়ানীর পক্ষাবলম্বন এবং ইমাম মাহদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে দ্বিধায় ফেলে দেবে । প্রথম মুজিযা আসহাবে কাহাফের আবির্ভাব এবং দ্বিতীয় মুজিযা আনতাকিয়ার গুহা থেকে পবিত্র সিন্দুক এবং তাওরাত ও ইঞ্জিলের বেশ কিছু (আসল) কপি বের করে এনে সেগুলোর সাহায্যে ইমাম মাহদীর সঙ্গীদের ইসলাম ধর্মের পক্ষে যুক্তি ও দলিল প্রমাণ উপস্থাপন । আর এ কারণেই পাশ্চাত্য শক্তি এবং ইমাম মাহদীর মধ্যে আনতাকিয়ায় যুদ্ধ সংঘটিত হ্ওয়া অসম্ভব বলেই মনে হয় । একইভাবে তুরস্কে নয়
,বরং তুর্কী সমুদ্রোপকূলে পাশ্চাত্য বাহিনীর অবতরণ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে
,তুরস্ক পাশ্চাত্যের আধিপত্যের বাইরে থাকবে অথবা ঐ সময় তুর্কী জাতির বিপ্লবের মাধ্যমে অথবা ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনীর দ্বারা তুরস্ক বিদেশী আধিপত্য ও প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে থাকবে ।
তবে রোমের যে সব সৈন্য ফিলিস্তিনের সমুদ্রোপকূলে রামাল্লায় অবতরণ করবে এবং যাদেরকে কতিপয় রেওয়ায়েতে
‘
রোমের বিদ্রোহী
’
বলে অভিহিত করা হয়েছে সেই সেনাদলটি আল কুদসের মহাসমরে ইহুদীদের ও সুফিয়ানীর পক্ষে অংশগ্রহণ করবে ।
একইভাবে কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,ইমাম মাহদী (আ.) আল কুদসের রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করার জন্য শামে তার সেনাবাহিনী প্রেরণ করবেন যা থেকে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে
,তিনি উক্ত যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করবেন না । বরং তার শত্রুদের পরাজয়ের পর তিনি আল কুদসে প্রবেশ করবেন । তবে অধিকাংশ রেওয়ায়েতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে
,তিনি নিজেই সেনাবাহিনীর সাথে যাত্রা করবেন এবং দামেস্কের অদূরে মারজ আযরায় সেনাশিবির স্থাপন করবেন ।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
অতঃপর সে কুফায় এসে সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করা পর্যন্ত যতদিন মহান আল্লাহ চাইবেন ততদিন অবস্থান করবে । এরপর সে তার সেনাবাহিনী নিয়ে মারজ আযরায় যাবে এবং বেশ কিছু সংখ্যক লোক তার সাথে যোগ দেবে । আর সুফিয়ানী তখন রামাল্লা উপত্যাকায় অবস্থান নেবে । রদবদল করার দিনে যখন মাহদী ও সুফিয়ানী পরস্পর সাক্ষাৎ করবে তখন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আহলে বাইতের যে সব অনুসারী সুফিয়ানীর সাথে থাকবে তার এবং সুফিয়ানীর যে সব অনুসারী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে ঢুকে গিয়ে থাকবে তারা বের হয়ে নিজ নিজ দলের পতাকাতলে আশ্রয় নিবে । আর সেদিনটি হবে রদবদল করার দিন । আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেছেন : সেদিন সুফিয়ানী এবং যারা তার সাথে থাকবে তারা নিহত হবে
,এমনকি তাদের মধ্য থেকে কোন কোন সংবাদদাতাও জীবিত থাকবে না । ঐ দিন হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে ঐ ব্যক্তি যে সুফিয়ানীদের গনীমতের সম্পদ লাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকবে ।
”
এর রেওয়ায়েত বেশ কয়েকটি বিষয় নির্দেশ করে । এ সব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে জনগণের সার্বিক অবস্থা । যারা ইমাম মাহদীকে সমর্থন ও তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে । কারণ সিরিয়ার ভূ-খণ্ডে ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনী প্রবেশ করার সময় তারা কোন ধরণের প্রতিরোধ ছাড়াই দামেস্কের ত্রিশ কিলোমিটারের মধ্যে শিবির স্থাপন করবে । আর এভাবে যে সব বিষয় আমরা সুফিয়ানীর আন্দোলনের ক্ষেত্রে বর্ণনা করেছি সেগুলোও এ রেওয়ায়েতে নির্দেশিত বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত ।
আল কুদস মুক্ত করার যুদ্ধের আগে এ এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা যা রেওয়ায়েতসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় তা হচ্ছে পাশ্চাত্য ইয়েমেন
,হিজায ও ইরাকে ইমাম মাহদী এবং তার সঙ্গীদের আশ্চর্যজনক বিজয় ও সাফল্য
,যেমন পরস্যপোসাগরীয় অঞ্চলের ওপর তাদের আধিপত্য লাভ এবং মুসলিম জাতিসমূহ
,বিশেষকরে এ অঞ্চলের মুসলমানদের পক্ষ থেকে ইমাম মাহদী ও তার সাথীদের প্রতি জোরালো সমর্থন এবং তাদের পক্ষে তাদের উত্থানের কারণে ইমাম মাহদীর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে এক ধরণের ভীতি ও দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যাবে । যার ফলে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রসমূহে অস্থিরতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আনতাকিয়ার সমুদ্রোপকূলীয় অঞ্চল
,ফিলিস্তিনের রামাল্লা অথবা মিশরে সামরিক বাহিনী প্রেরণ করা ব্যতীত
।
অন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না । এ যুদ্ধে পাশ্চাত্যের ভূমিকা হবে নিজেদের ইহুদী মিত্র এবং সুফিয়ানীকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রদান ।
তবে ইহুদীদের অবস্থা অত্যন্ত ভীতিপূর্ণ ও উত্তেজনাকর হবে । কারণ
,যুদ্ধের পরিণতি তাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িত হবে । এ কারণেই তারা ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনীর সাথে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে না জড়িয়ে বরং সূফিয়ানীর নেতৃত্বে একটি প্রতিরক্ষা ব্যূহ স্থাপন করাকে বেশী গুরুত্ব দেবে । আর এটিই হচ্ছে বিভিন্ন জাতি এবং সীমা লঙ্ঘনকারী ও আরাম প্রিয় সরকারের মধ্যে ক্রিয়াশীল একটি সার্বিক ঐশ্বরিক রীতি (সুন্নাতে ইলাহী) যে
,এ সব স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী সরকার সব সময় একটি জাতি বা একটি সামরিক শক্তিকে কিনে নিয়ে তাদেরকে নিজেদের পক্ষ থেকে যুদ্ধে লিপ্ত করে এবং ঐ জাতি বা সামরিক গোষ্ঠির পশ্চাতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারিতে অবস্থান গ্রহণ করে । আজও পাশ্চাত্য-বিশ্ব ও ইহুদীদের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে আমারা এ অবস্থা বিদ্যমান দেখতে পাচ্ছি । মহান আল্লাহ বলেছেন :
)
لَأَنتُمْ أَشَدُّ رَهْبَةً فِي صُدُورِهِم مِّنَ اللَّـهِ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ لَا يُقَاتِلُونَكُمْ جَمِيعًا إِلَّا فِي قُرًى مُّحَصَّنَةٍ أَوْ مِن وَرَاءِ جُدُرٍ
بَأْسُهُم بَيْنَهُمْ شَدِيدٌ تَحْسَبُهُمْ جَمِيعًا وَقُلُوبُهُمْ شَتَّىٰ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُونَ
(
“
নিশ্চয় তারা তাদের অন্তরসমূহে মহান আল্লাহর চেয়েও তোমাদেরকে অধিক ভয় পায়
;আর তা এজন্য যে
,তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা কিছুই বোঝেনা । তারা সবাই সুরক্ষিত দুর্গসমূহে অথবা প্রাচীরসমূহের পশ্চাতে অবস্থান করেই তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় । তাদের নিজেদের মধ্যেই তারা তীব্র ও প্রবল
;আপনি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করবেন
,অথচ তাদের হৃদয়সমূহ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত । আর তা এজন্য যে
,তা এজন্য যে তারা এমন সম্প্রদায় যারা অনুধাবন করে না।
”
তবে এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক অবস্থা ইমাম মাহদীকে সাহায্য ও সমর্থন করার ক্ষেত্রে এতটা অনুকূল থাকবে যে
,যদি বিদেশী পরাশক্তি ও ইহুদীরা সুফিয়ানী ও তার সেনাবাহিনীকে সাহায্য ও সমর্থন না করে তাহলে এলাকার জনগণই সুফিয়ানীকে উৎখাত করে সমগ্র শামদেশকে ইমাম মাহদীর শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হবে ।
এও অসম্ভব নয় যে
,ইমাম মাহদীর সেনাদলের অভিযানের ফলশ্রুতিতে সুফিয়ানী বাহিনীর রামাল্লায় পশ্চাতপসরণের সময়ে সিরয়ায় রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে ।
ইবনে হাম্মাদ তার হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিতে
‘
পবিত্র মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ইমাম মাহদী (আ.)-এর অগ্রযাত্রা
’
শিরোনামে বিশটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন
,যেগুলোর কয়েকটি শিয়া সূত্র ও গ্রন্থসমূহেও বিদ্যমান । যেমন হযরত আলী (আ.)-কে ইবনে যারীর গাফিকী বলতে শুনেছেন :
“
সে কমপক্ষে বারো হাজার থেকে সর্বাধিক পনের হাজার লোকসহ পবিত্র মক্কা থেকে বের হবে । তার অগ্রযাত্রার সাথে শত্রুদের অন্তরে ভয় ঢুকে যাবে । যে শত্রুই তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে তাকে সে মহান আল্লাহর নির্দেশে ধরাশায়ী করবে । তাদের সামরিক স্লোগান হবে
‘
হত্যা করুন
,হত্যা করুন
’
।
তারা মহান আল্লাহর পথে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না । এ সময় সিরীয় একটি সেনাদল তাদের ওপর আক্রমণ করবে । ইমাম তাদের সবাইকে পরাস্ত এবং বন্দী করবে । তাদের ভালবাসা
,নেয়ামত
,قاصه
ও
بزاره
মুসলমানদের কাছে ফিরে আসবে । এরপর দাজ্জালের আবির্ভাব ও উত্থান ব্যতীত আর কোন ঘটনা ঘটবে না । আমি জিজ্ঞাসা করলাম :
قاصه
ও
بزاره
কী
?তিন বললেন : যামানার ইমাম এমনভাবে শাসনকর্তৃত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করবে যে
,কোন ব্যক্তি যা ইচ্ছা করবে তা বলতে পারবে এবং কোন কিছুকেই ভয় করবে না ।
”
একই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে :
“
বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করা পর্যন্ত মাহদীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে । তখন তার কাছে ধনভাণ্ডারসমূহ উপস্থাপন করা হবে । আরব-অনারব
,যুদ্ধবাজ ও রোমানসহ সবাই তার আনুগত্য করবে ।
”
একই গ্রন্থের আরেক স্থানে বর্ণিত হয়েছে :
“
মাহদী বললেন
;আমার চাচাত ভাইকে (সুফিয়ানী) নিয়ে এসো যাতে আমি তার সাথে কথা বলতে পারি
;তখন তাকে তার কাছে আনা হবে এবং তিনি তার সাথে কথা বলবেন । সে ইমামের কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তার হাতে বাইআত করবে । কিন্তু যখনই সে বনি কালব গোত্রীয় তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে যাবে তখন তারা তার কৃতকর্মের জন্য তাকে অনুতপ্ত হতে বাধ্য করবে এবং সে ইমামের কাছে এসে তার বাইআত প্রত্যাহার করবে । ইমাম মাহদী তার বাইআত বাতিল করে দেবেন । এরপর ইমাম ও সুফিয়ানী বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাবে । আর তার বাহিনী সাত দলে বিভক্ত হবে যার প্রতিটি দলের অধিনায়ক যাবতীয় ক্ষমতা নিজেই কুক্ষিগত করতে চাইবে । কিন্তু ইমাম তাদের সবাইকে পরাজিত করবেন ।
”
একই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে :
“
সুফিয়ানী ইমামের কাছে এসে তার বাইআত ভঙ্গ করার আবেদন জানালে ইমামও তা বাতিল ঘোষণা করবে । তখন সে ইমামের বিরুদ্ধে স্বীয় সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ করার জন্য পরিচালনা করবে । আর ইমাম তাকে পরাজিত করবে এবং মহান আল্লাহ রোমানদেরকেও তার হাতে পরাজিত করাবেন ।
”
অভিশপ্ত সুফিয়ানী ইমাম মাহদী (আ.)-এর চাচাত ভাই হবে । কারণ
,প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী উমাইয়্যা ও হাশিম ছিলেন পরস্পর ভাই । যদি এ রেওয়ায়েত সহীহ হয়ে থাকে তাহলে ইমাম মাহদী (আ.) তার এই প্রাজ্ঞজনোচিত নীতি এবং উন্নত চারিত্রিক মহানুভবতার দ্বারা যতদূর সম্ভব সুফিয়ানীকে পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে আনতে চাইবেন অথবা তার সকল অজুহাত পেশ করার পথ বন্ধ করে দেবেন । যদিও সুফিয়ানী ইমাম মাহদী (আ.)-এর মহান ব্যক্তিত্বের দ্বারা সাময়িকভাবে প্রভাবিত হয়ে দ্রুত অনুতপ্ত হবে
,কিন্তু তার বনি কালব গোত্রীয় আত্মীয়স্বজন এবং তার সেনাবাহিনীর সাত অধিনায়ক যাদের নেতৃত্বের ভার তার হাতে থাকবে তারা এবং তার পাশ্চাত্য ও ইহুদী প্রভুরা তাকে ইমামের প্রতি আনুগত্যের পথ থেকে ফিরিয়ে আনবে ।
‘
মালাহিম ও ফিতান
’
গ্রন্থে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) থেকে উপরিউক্ত যুদ্ধের বর্ণনা করে একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে :
“
মহান আল্লাহ সুফিয়ানীর ওপর ক্রুদ্ধ হবেন এবং আল্লাহর বান্দারাও মহান আল্লাহর ক্রোধের কারণে তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন । পাখিরা তাদের ডানা দিয়ে
,পাহাড়-পর্বতসমূহ পাথর দিয়ে এবং ফেরেশতারা তাদের ধ্বনি দিয়ে তাদের (সুফিয়ানী বাহিনী) ক্ষতিসাধন করবে । আর এক ঘন্টা গত না হতেই মহান আল্লাহ সুফিয়ানীর সকল সঙ্গীকে ধ্বংস করে দেবেন এবং কেবল সে (সুফিয়ানী) ব্যতীত পৃথিবীতে আর কোন শক্রই থাকবে না । মাহদী তাকে বন্দী করে যে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখাগুলো তাবারীয়াহ হরদের ওপর ছায়া দেবে সে বৃক্ষের নিচে হত্যা করবে ।
”
ইলযামুন নাসিব
’
গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের 104 পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে :
“
সাইয়াহ নাম্নী ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনীর এক সেনাপতি সুফিয়ানীর কাছে যাবেন এবং তাকে বন্দী করবেন । ইশার নামাযের সময় সে সুফিয়ানীকে মাহদীর কাছে আনবে । মাহদী সুফিয়ানীর ব্যাপারে নিজ সঙ্গীদের সাথে পরামর্শ করবে এবং তারও তাকে হত্যা করর মধ্যে কল্যাণ আছে বলে অভিমত প্রকাশ করবে । তখন সে যে বৃক্ষের ডালপালাগুলো ঝুলে থাকবে তার ছায়ায় ছাগল যেভাবে জবাই করা হয় সেভাবে সুফিয়ানীকে হত্যা করবে ।
”
পূর্বের রেওয়ায়েতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা ছাড়াও আরো কতিপয় রেওয়ায়েত এ যুদ্ধকে মুসলমানদের জন্য আরো এক ধরনের গায়েবী সাহায্য বলে উল্লেখ করেছে :
“
ঐ দিন আকাশ থেকে একটি আহবান ধ্বনি শোনা যাবে এবং একজন আহবানকারী ঘোষণা করতে থাকবে : তোমরা জেনে রাখ
,মহান আল্লাহর ওলীরা হচ্ছে অমুক অর্থাৎ মাহদীর সঙ্গীরা এবং সুফিয়ানীর সঙ্গীদের জন্য নির্ধারিত আছে পরাজয় ও দুর্ভাগ্য । অতঃপর সুফিয়ানীর সঙ্গীরা এমনভা্বে নিহত হবে যে
,একমাত্র পলাতক ব্যক্তি ব্যতীত তাদের মধ্য থেকে আর কেউ সেদিন জীবিত থাকবে না ।
”
সম্ভবত শিয়া ও সুন্নী সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহে ইহুদীদের বিরুদ্ধে শেষ যামানায় মুসলমানদের যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে তার উদ্দেশ্য এ যুদ্ধ অর্থাৎ ইহিুদী ও পাশ্চাত্য সমর্থিত সুফিয়ানী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ । কারণ
,একদিকে সেগুলোর বিষয়বস্তু ও বাচনভঙ্গী সদৃশ
,অন্যদিকে পবিত্র কোরআনের
(
بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ
)
(তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের প্রচণ্ড শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী বান্দাদেরকে প্রেরণ করব)- এ আয়াতের ব্যাখ্যায় যে সব রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী বান্দা বলতে ইমাম মাহদী (আ.)-এর সঙ্গীদেরকেই বোঝানো হয়েছে ।
আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহে এতৎসংক্রান্ত প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে একটি রেওয়ায়েত আছে যা মুসলিম
,আহমদ ও তিরমিযী মহানবী (সা.) থেকে উদ্ধৃত করেছেন । তিনি বলেছেন :
“
মুসলমান ইহুদীদের মধ্যে এমন এক যুদ্ধ সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না
,যে যুদ্ধে মুসলমানরা তাদের সবাইকে হত্যা করবে
,এমনকি কোন ইহুদী যদি পাথর বা গাছের পেছনে লুকায় তাহলে একমাত্র ইহুদীদের গাছ গারকদ ব্যতীত সব পাথর ও গাছ বাকশক্তি লাভ করে বলতে থাকবে : হে মুসলমান! এ ইহুদী আমার কাছে এসে আত্মগোপন করেছে । অতএব
,তাকে হত্যা কর ।
”
সহীহ মুসলিম ও সহীহ আত তিরমিযীর
‘
কিতাবুল ফিতান
’
অধ্যায়ে এবং সহীহ বুখারীর
‘
কিতাবুল মানাকিবে
’
(ফযিলত সংক্রান্ত অধ্যায়ে) বর্ণিত
‘
ইহুদীরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তোমরা তাদের ওপর বিজয়ী হবে
’
-এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েত উপরোল্লিখিত রেওয়ায়েতের সদৃশ্ ।
একইভাবে শিয়া-সুন্নী উভয় মাজহাবের হাদীস গ্রন্থ ও সূত্রসমূহে ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত হাদীসসমূহের মধ্যে একাধিক রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে
,তিনি পবিত্র সিন্দুক এবং তাওরাতের কয়েকটি অধ্যায় আনবেন এবং সেগুলো দিয়ে ইহুদীদের বিপক্ষে যুক্তি ও দলিল প্রমাণ পেশ করবেন । সম্ভবত তা ইহুদীদের ওপর তার বিজয় এবং পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাসে তার প্রবেশ করার পরই হবে ।
আমি এ সব রেওয়ায়েতে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ইমাম মাহদী (আ.)-এর সাথে আগত মুসলিম বাহিনী অথবা সুফিয়ানী বাহিনী অথবা ইহুদী ও পাশ্চাত্য বাহিনীর সৈন্যদের নির্দিষ্ট সংখ্যা খুজে পাই নি । তবে কিছু কিছু রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,সুফিয়ানীর সব সৈন্যকে তাবারিয়াহ হরদে মোতায়েন করা হবে কবেল তাদের সংখ্যাই একলক্ষ সত্তর হাজার হবে । তবে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দানকারী কিছু কিছু বিষয় থেকে প্রতিয়মান হয় যে
,উভয় পক্ষের সৈন্যসংখ্যা হবে বিরাট । যেমন ইমাম বাকির (আ.) থেকে ইতোমধ্যে বর্ণিত রেওয়ায়েত যেখানে তিনি বলেছেন :
“
এবং তার সাথে অগণিত জনতা যোগ দেবে ।
”
আর যুদ্ধক্ষেত্রের বিশাল আয়তন যা অধিকাংশ রেওয়ায়েত অনুযায়ী তারাবীয়াহ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত বিস্তৃত হবে । কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,মারজ আক্কা
,সূর ও দামেস্কও ঐ বিশাল রণাঙ্গনের অন্তর্ভুক্ত হবে
।
তবে কতিপয় রেওয়ায়েতে ইমাম মাহদী (আ.)-এর সৈন্যসংখ্যা যে কয়েক দশ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা আসলে ঐ সৈন্যসংখ্যা হবে যারা তার সাথে পবিত্র মক্কা থেকে পবিত্র মদীনায় যাবে । সম্ভবত কতিপয় রাবী যে সেনাবাহিনী নিয়ে ইমাম মাহদী ইরাক থেকে পবিত্র কুদসের দিকে রওয়ানা হবেন সেটাকে এ সেনাবাহিনী মনে করে ভুল করেছেন । উল্লেখ্য যে
,ইরাক থেকে পবিত্র কুদসের দিকে যাত্রাকারী সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন ইরানী সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক শুআইব ইবনে সালিহ । এ সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দশ লক্ষাধিক হতে পারে । কারণ
,এ সেনাবাহিনীতে ইরানী
,ইয়েমেনী ও ইরাকী সেনাবাহিনী ছাড়াও অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে আগত বাহিনীও যোগ দেবে । অতঃপর শাম থেকেও বেশ কিছু সংখ্যক যোদ্ধা এ সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হবে । সম্ভবত অন্যান্য ভূ-খণ্ড থেকেও যোদ্ধারা এ বাহিনীতে যোগ দেবে ।
তিনি এ গ্রন্থের 107 পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় যে রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে
,তার দেহরক্ষীর সংখ্যা হবে ছত্রিশ হাজার এবং বাইতুল মুকাদ্দাস অভিমুখী প্রতিটি রাস্তার ওপর বারো হাজার সৈন্য মোতায়েন থাকবে । আর এ রেওয়ায়েত থেকে ইমাম মাহদীর সেনাবাহিনীর বিশালতা প্রতীয়মান হয় ।
ইবনে হাম্মাদ অনুরূপভাবে তার গ্রন্থের 110 পৃষ্ঠায় মাহদী (আ.) কর্তৃক পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস পুনঃনির্মাণ সংক্রান্ত রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন যাতে বলা হয়েছে যে
,বনি হাশিমের এক খলীফা এসে পৃথিবীকে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন । তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসকে এমনভাবে নির্মাণ করবেন যেভাবে তা কখনো নির্মিত হয় নি ।
এটিই স্বাভাবিক যে
,ইমাম মাহদী (আ.)-এর আশ্চর্যজনক ও অবধারিত বিজয় এবং বিজয়ী বেশে তার বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ পাশ্চাত্য-বিশ্বের ওপর বজ্রপাত তুল্য মনে হবে । তাদের ইহুদী মিত্রদের পরাজয় ও অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবার কারণে তারা উন্মাদ হয়ে যাবে । রাজনৈতিক হিসাব
–
নিকাশের ভিত্তিতে এবং তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমাদের যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আ্ছে তার আলোকে বলা যায়
,তারা ইমাম মাহদী (আ.) ও তার সেনাবাহিনীর ওপর অবশ্যই সমুদ্র ও আকাশ পথে সামরিক আক্রমণ চালাবে এবং সম্ভাব্য সব ধরণের মারণাস্ত্র (পারমাবিক
,রাসায়নিক ও অন্যান্য অস্ত্র) ব্যবহার করবে ।
তবে রেওয়ায়েতসমূহ থেকে বোঝা যায় যে
,বেশ কিছু শান্তকারী নিয়ামকও থাকবে যেগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হবে পৃথিবীতে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর অবতরণ এবং এর পরই থাকবে ইমাম মাহদীর (আ.) মোকাবিলা করার ভয়-ভীতি যা পাশ্চাত্যবাসী তাদের হৃদয়ের গভীরে অনুভব করবে ।
এ ছাড়াও ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের আন্দোলনে মহান আল্লাহ তাকে যে গায়েবী সাহায্য করেছিলেন সেই গায়েবী সাহায্যের উপায় উপকরণও থাকবে । এ প্রসঙ্গে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ের অবতারণা করা পয়োজন । আর এগুলো দ্বারা কেবল পাশ্চাত্য সরকারসমূহ নয়
;বরং সেখানের জাতিসমূহও যথেষ্ট প্রভাবিত হবে । এগুলোর পাশাপাশি ইমাম মাহদীর হাতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রও থাকবে যেগুলো পাশ্চাত্য বাহিনীর সমরাস্ত্রসমূহের সমকক্ষ বা সেগুলো অপেক্ষা উন্নত হবে ।