ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আহলে সুন্নাতের আকীদা-বিশ্বাস
কেউ কেউ ধারণা করে যে
,প্রতীক্ষিত মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস কেবল শিয়াদের সাথেই সংশ্লিষ্ট। অথচ শিয়াদের কাছে যেমন এটি মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসস ঠিক তেমনি আহলে সুন্নাতের কাছেও এটি একটি মৌলিক আকীদা বিশ্বাস। শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সবার কাছে মহানবী (সা.)কর্তৃক প্রদত্ত প্রতীক্ষিত আল মাহদী সংক্রান্ত সুসংবাদ প্রমাণিত হওয়া
,তার আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও মিশন
,তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও পবিত্র ব্যক্তিত্ব এবং তার আবির্ভাব ও বিপ্লবের নিদর্শন ও বৈশিষ্ট্যসমূহের ক্ষেত্রে কোন মতপার্থক্য নেই। এতৎসংক্রান্ত একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে
,শিয়ারা বিশ্বাস করে যে
,তিনি দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল আসকারী (আ.) যিনি 255 হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং মহান আল্লাহ যেমনভাবে হযরত খিযির (আ.)-এর বয়স দীর্ঘ করেছেন তেমনি তিনি তার জীবনকেও দীর্ঘায়িত করেছেন। তাই তিনি জীবিত আছেন এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক আবির্ভূত হবার অনুমতি দেয়া পর্যন্ত তিনি অন্তর্ধানে থাকবেন। অথচ আহলে সুন্নাতের অধিকাংশ আলেম বিশ্বাস করেন যে
,তিনি যে জন্মগ্রহণ করেছেন ও বর্তমানে অন্তর্ধানে আছেন তা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়নি
;বরং তিনি ভবিষ্যতে জন্মগ্রহণ করবেন এবং মহানবী (সা.) তার সম্পর্কে যে সুসংবাদ দিয়েছেন তা তিনি বাস্তবায়ন করবেন। তবে অল্প সংখ্যক সুন্নী আলেম আমাদের (বার ইমামী শিয়াদের) সাথে ইমাম মাহদী (আ.) যে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং অন্তর্ধানে আছেন সে ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছেন।
আহলে সুন্নাতের হাদীস ও মৌল বিশ্বাস সংক্রান্ত (কালামশাস্ত্র) গ্রন্থাদিতে অগণিত হাদীসে এবং তাদের আলেমদের ফতোয়ার গ্রন্থসমূহে ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আকীদা যে মৌলিক তা সুস্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের রাজনৈতিক ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে এ বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে।
এ ভিত্তির ওপরই হিজরী চতুর্দশ শতকে সুদানী মাহদীর আন্দোলন
,পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুতে পবিত্র মক্কার হারাম শরীফের আন্দোলন এবং এতদসদৃশ আরো বহু আন্দোলন সুন্নী মুসলমানদের মাঝে (মাহদী হওয়ার দাবীকারী আন্দোলনসমূহ এবং ইমাম মাহদী সংক্রান্ত সুস্পষ্ট চিন্তা-ধারণা লালনকারী আন্দোলনসমূহ
,যেমন মিশরের
‘
হিজরত ও জিহাদ
’
আন্দোলন এবং এতদ
;সদৃশ আন্দোলনসমূহ) চিন্তাগত কোন ভিত্তি ছাড়া অথবা ইমাম মাহদী সংক্রান্ত শিয়া চিন্তা-ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে উদ্ভূত হয়নি। তবে কতিপয় সুন্নী মুসলিম এমনই বিশ্বাস করে থাকেন।
সাহাবী ও সুন্নী তাবেয়ীদের থেকে বর্ণিত প্রতীক্ষিত মাহদী (আ.) সংক্রান্ত হাদীসসমূহের রাবীদের সংখ্যা এতৎসংক্রান্ত শিয়া রাবীদের সংখ্যা অপেক্ষা কম নয়
,আর তাদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তিত্ব আছেন যারা হাদীস বিষয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থ
,হাদীস বিষয়ক বিশ্ব-কোষ এবং বিশেষ বিশেষ গ্রন্থও রচনা করেছেন।
সম্ভবত ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আমাদের কাছে বিদ্যমান সবচেয়ে প্রাচীন সুন্নী গ্রন্থ হচ্ছে হাফেয নাঈম ইবনে হাম্মাদ আল মারওয়াযী (মৃ.227 হি.) প্রণীত
‘
আল ফিতান আল মালাহিম
’
নামক গ্রন্থটি। আর তিনি সিহাহ অর্থাৎ সুন্নী সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহের রচয়িতাদের অনেকের
,যেমন ইমাম বুখারী ও অন্যদেরও শেখ (হাদীস বিষয়ক শিক্ষাগুরু) ছিলেন। এ গ্রন্থের একটি হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি ভারতের হায়দ্রাবাদের দায়েরাতুল মাআরিফ আল উসমানিয়াহ লাইব্রেরীতে (ক্যাটালগ নং 3187-83) বিদ্যমান। এ গ্রন্থের আরেকটি হস্ত লিখিত পাণ্ডুলিপি দামেস্কের আয যাহিরিয়াহ লাইব্রেরীতে (ক্যাটালগ নং 62: সাহিত্য) সংরক্ষিত আছে। ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরীতে এ গ্রন্থের যে কপি বিদ্যমান তাতে প্রায় 200 পৃষ্ঠা রয়েছে। 706 হিজরীতে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ কপির কতিপয় পৃষ্ঠায় হুসাইন আফেন্দীর ওয়াকফ–
এ বাক্যাংশ বিদ্যমান যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,তা তুরস্কের ওয়াকফকৃত গ্রন্থসমূহ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 1924 সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরীতে তা নিবন্ধন করা হয়। আমরা আমাদের এ গ্রন্থে কপিটি থেকেই উদ্ধৃতি পেশ করেছি। তবে অন্যান্য সুন্নী হাদীস ও আকীদা-বিশ্বাস বিষয়ক প্রামাণ্য উৎসসমূহ যেগুলোয় প্রতীক্ষিত মাহদী (আ.) এর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে অথবা অন্তত একটি অধ্যায় বিদ্যমান সেগুলোর সংখ্যা পঞ্চাশেরও অধিক হবে। এগুলোর মধ্যে আহলে সুন্নাতের সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহও বিদ্যমান। তবে ইমাম মাহদী (আ.) বিষয়ক ম্বতন্ত্র গ্রন্থ ও প্রবন্ধসমূহের সংখ্যা উপরিউক্ত প্রামাণ্য উৎসসমূহের সংখ্যার সমান হতে পারে।
ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত সবচেয়ে প্রাচীন শিয়া গ্রন্থ যা আমাদের হাতে রয়েছে তা হচ্ছে
‘
আল গাইবাত
’
অথবা ফাদল ইবনে শামান আল আযদী আন নিশাপুরী (যিনি নাঈম ইবনে হাম্মাদের সমসাময়িক ছিলেন) প্রণীত‘
আল কায়েম
’
।
ফাদল ইবনে শামান উক্ত গ্রন্থ ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম গ্রহন ও অন্তর্ধানের আগেই রচনা করেছিলেন । এ গ্রন্থের হস্তলিখিত কপিসমূহ আমাদের আলেমদের নিকট ছিল। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে বর্তমানে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে । তবে আলেমগণ এ গ্রন্থ থেকে তাদের প্রণীত গ্রন্থসমূহে যতটুকু উদ্ধৃত করেছেন কেবল ততটুকুই এখন বিদ্যমান । বিশেষ করে আল্লামা মাজলিসী তার হাদীস বিষয়ক গ্রন্থ বিহারুল আনওয়ারে এ গ্রন্থ থেকে বেশ কিছু রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন
।
কালক্রমে আহলে সুন্নাতের আলেম ও সর্বসাধারণের কাছে প্রতীক্ষিত মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আকীদা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও তর্কাতীত বিশ্বাসসমূহের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হয়েছে । ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত বিশ্বাস অস্বীকারকারী অথবা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণকারী কোন ব্যতিক্রমধর্মী ও বিরল অভিমত ও ধারণার উদ্ভব হয় তাহলে সুন্নী আলেম ও গবেষকগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন । তারা ইসলাম ধর্মের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস যা মহানবী (সা.) থেকে মুতাওয়াতির হাদীস সূত্রে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয়েছে সে সম্পর্কে সংশয় পোষণকারীদের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন
।
আমাদের হাতে ইমাম মাহদী সম্পর্কে যারা সন্দেহ পোষণ করেছে তাদের কতিপয় নমুনা বিদ্যমান । উল্লেখ্য যে
,আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এ সব সন্দেহ পোষণকারীদের ধারণা ও অভিমত প্রত্যাখ্যান করেছেন ।
কালক্রমে আহলে সুন্নাতের আলেম ও সর্বসাধারণের কাছে প্রতীক্ষিত মাহদী (আ.) সংক্রান্ত আকীদা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও তর্কাতীত বিশ্বাসসমূহের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হয়েছে । যদি ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত বিশ্বাস অস্বীকারকারী অথবা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণকারী কোন ব্যতিক্রমধর্মী ও বিরল অভিমত ও ধারণার উদ্ভব হয় তাহলে সুন্নী আলেম ও গবেষকগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন । তার ইসলাম ধর্মের অন্যতম মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস যা মহানবী (সা.) থেকে মুতাওয়াতির হাদীস সূত্রে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয়েছে সে সম্পর্কে সংশয় পোষণকারীদের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন । আমাদের হাতে ইমাম মাহদী সম্পর্কে যারা সন্দেহ পোষণ করেছে তাদের কতিপয় নমুনা বিদ্যমান । উল্লেখ্য যে
,আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এ সব সন্দেহ পোষণকারীদের ধারণা ও অভিমত প্রত্যাখ্যান করেছেন ।
প্রথম নমুনা
:
হিজরী অষ্টম শতাব্দীর আলেম ইবনে খালদুন তার প্রসিদ্ধ
‘
তারিখে
’
(তারিখে ইবনে খালদুন) গ্রন্থের ভূমিকায় (পৃ. 311
;দারু ইহয়ায়িত তুরাস আল আরাবী কর্তৃক প্রকাশিত)
বলেছেন :
“
জেনে রাখুন
,যুগের পর যুগ ধরে যে বিষয় সকল মুসলমানের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে তা হচ্ছে
,শেষ যুগে রাসূলের আহলে বাইতভুক্ত এক ব্যক্তির অবশ্যই আবির্ভাব হবে যিনি ধর্মকে সাহায্য করবেন ও ন্যায়পরায়ণতাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন । মুসলমানরা তার অনুসরণ করবে এবং তিনি সকল মুসলিম দেশের ওপর শাসনকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন । তাকে
‘
মাহদী
’
বলা হবে । দাজ্জালের আবির্ভাব (ও বিদ্রোহ) এবং তারপর যা কিছু ঘটবে সে সব কিছুই কিয়ামতের লক্ষণ যেগুলো সহীহগ হাদীসে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত । হযরত ঈসা (আ.) তার পরে অবতরণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন অথবা তিনি তার (মাহদী) সাথে অবতরণ করে দাজ্জালকে বধ করার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবেন এবং মাহদীর পেছনে নামায পড়বেন ।
এরপর ইবনে খালদুন ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত 28টি হাদীস উদ্ধৃত করে সেগুলোর সনদসমূহের কতিপয় রাবী সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন এবং 322 পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত কথা বলে তার সমালোচনার ইতি টেনেছেন :
“
অতঃপর এগুলো হচ্ছে ঐ সব হাদীস যেগুলো হাদীসশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞগণ ইমাম মাহদী (আ.) এবং শেষ যামানায় তার আবির্ভাব ও আন্দোলন সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন । ইতিমধ্যে আপনারা দেখতে পেয়েছেন যে
,মাত্র গুটিকতক হাদীস ব্যতীত বাকী হাদীসগুলি সমালোচনামুক্ত নয় ।
এরপর তিনি প্রতীক্ষিত মাহদী (আ.) সংক্রান্ত কয়েকজন সূফীর কিছু অভিমত তুলে ধরেছেন এবং 327 পৃষ্ঠায় এ সব অভিমত সম্পর্কে চুলচেরা সমালোচনা করার পর বলেছেন :
“
আর যে সত্য আপনাদের কাছে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয় তা হচ্ছে
,ধর্ম ও রাজত্বের দিকে আহবান কেবল তখনেই সম্ভব হবে যখন কোন শক্তিশালী ধর্মীয়-গোত্রীয় অনুভূতি বিদ্যমান থাকবে । এ বিষয়টিই ধর্ম ও রাজত্বের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর আদেশ বা ফয়সালা না আসা পর্যন্ত ধর্মকে আক্রমণকারীর হাত থেকে সংরক্ষণ করে থাকে । আর আমরা অকাট্য দলীল উপস্থাপন করার মাধ্যমে আগেই তা প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করেছি । ফাতিমীয়সহ সকল কুরাইশ বংশের গোত্রীয় বন্ধনের অনুভূতি সব দিক থেকেই ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং তাদের স্থলে অন্যান্য জাতির আবির্ভাব হয়েছে যাদের মধ্যে গোত্রীয় বন্ধনের অনুভূতি তীব্র অবস্থায় রয়েছে । তাই আমরা লক্ষ করি হিজাজের মক্কা এবং মদীনার ইয়াম্বুতে বসবাসকারী তালেবীয়দের (আবু তালিবের বংশধর) মধ্য থেকেই ইমাম হাসান
,ইমাম হুসাইন ও ইমাম জাফর আস সাদিকের বংশধরগণ ব্যতীত বাকী সব কুরাইশ বংশ গোত্রীয় সংখ্যায় হাজার হাজার হওয়া সত্ত্বেও আবাসভূমি
,শাসনক্ষমতা
,আকীদা-বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে তারা বহু দল ও উপদলে বিভক্ত । তাই এ মাহদীর আবির্ভাব যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তার আবির্ভাব ও আন্দোলনের একমাত্র গ্রহণযোগ্য কারণ হবে তার ফাতিমী (হযরত ফাতিমার বংশধর) হওয়া এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক সকল ফাতিমীর অন্তরকে তার প্রতি আনুগত্যশীল করা যাতে ঐশী বাণী অর্থাৎ ইসলাম ধর্মকে জয়ী করা এবং সমগ্র মানব জাতিকে তা গ্রহণ করতে বাধ্য করার ব্যাপারে তার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও গোত্রীয় সমর্থনের ক্ষেত্র তৈরী করা যায় । গোত্রীয় সমর্থন ও ক্ষমতা ব্যতীত নিছক মহানবী (সা.) এর আহলে বাইতের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার কারণে পৃথিবীর কোন এক অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের দিকে কোন ফাতিমীর আহবান বাস্তবে কখনো সফল হবে না ।
”
অধিকন্ত ইবনে খালদুন পতীক্ষিত মাহদী সংক্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস ও ধারণা প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে নিশ্চিত হন নি
,তবে তিনি তা বাহ্যত অসম্ভব বলে মনে করেছেন এবং এতৎসংক্রান্ত বেশ কিছু হাদীসের সমালোচনাও করেছেন । কিন্তু আলেমগণ ইবনে খালদুনের এ মতকে ইসলামী আকীদার পরিপন্থি ও একরূপ বিকৃতি বলে গণ্য করেছেন । কারণ
,আলোচ্য বিষয়ের সমর্থনে অগণিত ও মুতাওয়াতির হাদীস বিদ্যমান । তাই তারা সমালোচনা করে বলেছেন যে
,তিনি একজন ঐতিহাসিক এবং কখনই হাদীস বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত নন যার ফলে হাদীসের সমালোচনা
,তা গ্রহণ বা বর্জন এবং এ সম্পর্কিত ইজতিহাদ (গবেষণা) তার জন্য বৈধ নয় । আমি ইবনে খালদুনের অভিমত অপনোদন সংক্রান্ত যা কিছু দেখেছি তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক হচ্ছে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আলেম আহমাদ ইবনুস সিদ্দিকী আল মাগরিবী প্রণীত
‘
আল ওয়াহম আল মাকনূন মিন কালামি ইবনে খালদুন
’
(ইবনে খালদুনের বক্তব্যের মধ্যে লুক্কায়িত ভ্রান্ত ধারণা) নামক গ্রন্থ যা 150 পৃষ্ঠা সম্বলিত । লেখক উক্ত গ্রন্থের
একটি পূর্ণাঙ্গ ভুমিকাও লিখেছেন যাতে তিনি প্রতীক্ষিত মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের সত্যতার ব্যাপারে হাদীসশাস্ত্রের ইমামদের বেশ কিছু অভিমতও উল্লেখ করেছেন । এরপর তিনি ইবনে খালদুনের উল্লিখিত 28টি হাদীসের সনদের সমালোচনাগুলোকেও একের পর এক খণ্ডন করেছেন এবং ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসের সংখ্যা একশ
’
পর্যন্ত পূর্ণ করেছেন ।
দ্বিতীয় নমুনা
:
لا مهدی ینتظر بعد الرسول خیر البشر
অর্থাৎ
‘
সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পর কোন প্রতীক্ষিত মাহদী নেই
’
নামক গ্রন্থ যার রচয়িতা হচ্ছেন কাতারের ধর্মীয় আদালতের প্রধান বিচারপতি শেখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ । তিনি এ গ্রন্থ (1400 হিজরীর শুরুতে)‘
মসজিদুল হারাম বিপ্লব
’
এবং এ বিপ্লবের নেতা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল কারাশীর‘
প্রতীক্ষিত মাহদী
’
বলে নিজেকে দাবী করার পরপরই প্রকাশ করেন । অতঃপর হিজাযের কতিপয় আলেম এর প্রতিবাদ ও খণ্ডন করেছেন । এ মত খণ্ডনকারী আলেমদের মধ্যে আছেন শেখ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ যিনি الرد علی من کذّب بالأحدیث الصحیحة الواردة فی المهدی
অর্থাৎ
‘
মাহদী সংক্রান্ত বর্ণিত সহীহ হাদীস যারা পত্যাখ্যান করেছে তাদের অভিমত খণ্ডন
’
শিরোনামে পঞ্চাশের অধিক পৃষ্ঠা সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধে উক্ত উক্ত লেখকের মত খণ্ডন করেছেন । উক্ত আলোচনা মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে 45তম সংখ্যায় (মুহররম
,1400 হিজরী) প্রকাশিত হয়েছে। লেখক শেখ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ উক্ত ম্যাগাজিনে তার প্রকাশিত প্রবন্ধের ভুমিকায় উল্লেখ করেছেন :“
আর প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরকে দুঃখ ও বেদনা দানকারী এ ঘটনা ঘটার পর শেষ যুগে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ও আন্দোলন সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে
,যেমন মাহদী মাহদীর আবির্ভাব প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) থেকে কি বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত বিদ্যমান
?এর পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় আলেম রেডিও
,পত্র পত্রিকা
,ম্যাগাজিন এবং বই পুস্তকে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত মুস্তাফীয ও বিশুদ্ধ হাদীসের দ্বারা ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের বিষয়টি প্রমাণ করেছেন এবং এসব বাতিলপন্থী যারা পবিত্র বাইতুল্লাহর ওপর আগ্রাসন পরিচালনা করেছে তাদের ব্যাপারে কঠোর নিন্দা করে রেডিওতে বক্তব্য দিয়েছেন এবং কতিপয় পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রবন্ধ লিখেছেন । তাদের মধ্যে মসজিদে নববীর ইমাম ও খতীব শেখ আবদুল আযীয বিনসালেহও আছেন
।
তিনি জুমআর এক খুতবায় এ জালেম পাপী গোষ্ঠির বিভ্রান্ত দল কর্তৃক বাইতুল্লাহ আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে
,তারা এবং যারা তাকে মাহদী বলে মনে করেছে তারা সবাই এক উপত্যকায় রয়েছে । আর যে মাহদীর কথা বলে হাদীসসমূহে বর্ণিত তিনি এদের থেকে ভিন্ন এক উপত্যকায় অবস্থান করছেন ।
উক্ত ঘটনার প্রতিক্রিয়াস্বরূপই কাতারের ধর্মীয় আদালতে প্রধান শেখ আবদুল্লাহ বিন যায়দ আল মাহমুদ
‘
সর্বশেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরে কোন প্রতীক্ষিত
,মাহদী নেই’
শীর্ষক প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছেন । তিনি উক্ত প্রবন্ধে হিজরী চতুর্দশ শতকের কতিপয় লেখকের সাথে সূর মিলিয়েছেন যাদের হাদীসের বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য এবং তার বিশুদ্ধতা ও অবিশুদ্ধতা সংক্রান্ত কোন জ্ঞান নেই । এদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তিও আছেন যারা বুদ্ধিবৃত্তিক সন্দেহ-সংশয়ের ওপর নির্ভর করে ইমাম মাহদী (আ.) সংক্রান্ত যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি ঠিক তাদের মতই বলেছেন :
“
এগুলো হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথাবার্তা
…
।
”
আমি এ প্রবন্ধে তার ভুল-ভ্রান্তি ও অলীক ধারণাসমূহ তুলে ধরে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করব যে
,শেষ যুগে মাহদীর আবির্ভাব ও আন্দোলন সংক্রান্ত বিশ্বাস সহীহ হাদীসসমূহের দ্বারা সমর্থিত এবং বিরল কতিপয় ব্যক্তি ব্যতীত আহলে সুন্নাতের সকল আলেম এ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং এ আকীদা-বিশ্বাস প্রসঙ্গে অতীত ও বর্তমান কালে লেখা বই পুস্তকও বিদ্যমান ।
প্রসঙ্গত একটি বিষয় উল্লেখ করা আমি সমীচীন মনে করি । আর তা হলো আমি আগেরও
‘
প্রতীক্ষিত মাহদী সংক্রান্ত আহলে সন্নাতের আকীদা-বিশ্বাস এবং তাদের লেখা বই পুস্তক
’
শীর্ষক একটি প্রবন্ধ রচনা করেছিলাম যা মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনের প্রথম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় (1388 হিজরীর যীলকদ মাসে প্রকাশিত) ছাপা হয়েছিল । এ প্রবন্ধ দশটি বিষয় সম্বলিত ছিল । যথা :
1. মহানবী (সা.) এর ঐ সব সাহাবীর নাম যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে মাহদীর হাদীসসমূহ রেওয়ায়েত করেছেন
;
2. ঐ সব শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির নাম যারা তাদের গ্রন্থসমূহে মাহদী সংক্রান্ত হাদীস ও সাহাবীদের বক্তব্য বর্ণণা করেছেন
;
3 ঐ সব আলেমের নাম যারা ইমাম মাহদী সংক্রান্ত স্বতন্ত্র গ্রন্থাবলী রচনা করেছেন
;
4. ঐ সব আলেম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহকে মুতাওয়াতির বলে সাব্যস্ত করেছেন
,তাদের নাম এবং এতৎসংক্রান্ত তাদের বক্তব্য বর্ণনা
;
5. মাহদীর সাথে সংশ্লিষ্ট সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসমূহ
;
6. অন্যান্য হাদীস গ্রন্থসমূহে মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের দ্বারা যুক্তি ও দলিল পেশ করেছেন এবং এগুলোর সূত্রও বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস পোষণ করেছেন তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের নামও উল্লেখ এবং এতৎসংক্রান্ত তাদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি
;
8. যারা মাহদী সংক্রান্ত বিশ্বাসের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ অস্বীকার করেছেন অথবা সেগুলোর ব্যাপারে দ্বিধা-সংশয় প্রকাশ করেছেন
,তাদের বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত সমালোচনাসহ তাদের নাম
;
9. যে সব হাদীস মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের বিরোধী বলে ধারণা করা হয় সেগুলো এবং সেগুলোর জবাব দান
;
10.
‘
শেষ যুগে মাহদীর আবির্ভাব সত্য বলে মেনে নেয়া আসলে গায়েবে ঈমাম বা বিশ্বাসেরই অন্তর্গত এবং (মাহদী সংক্রান্ত) শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাসের সাথে আহলে সুন্নাতের আকীদা-বিশ্বাসের কোন সম্পর্ক নেই
’
এতৎসংক্রান্ত একটি সমাপনী বক্তব্য ।
সত্যিই ইবনে খালদুনের দৃষ্টিভঙ্গির অপনোদন সংক্রান্ত ইবনুস সিদ্দীক আল মাগরিবীর আলোচনা এবং শেখ আব্বাদের উপরোল্লিখিত আলোচনাদ্বয় প্রতীক্ষিত মাহদী সংক্রান্ত আহলে সুন্নাতের হাদীস ও আকীদাভিত্তিক আলোচনাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ । তবে ইসফাহানের ইমাম আমীরুল মুমিনীন লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত
‘
আহলে সুন্নাতের নিকট ইমাম মাহদী
’
নামক গ্রন্থ থেকে অন্যান্য সুন্নী আলেমের বক্তব্য ও অভিমত উদ্ধৃত করা যদি অধিক উপকারী না হতো তাহলে আমি ইবনুস সিদ্দীক আল মাগরিবীর প্রবন্ধ এবং শেখ আব্বাদের প্রবন্ধদ্বয় থেকে আরো কিছু উদ্ধৃতি পেশ করার ইচ্ছা করতাম । উল্লেখ্য যে
,
‘
আহলে সুন্নাতের নিকট ইমাম মাহদী
’
গ্রন্থে প্রতীক্ষিত মাহদী প্রসঙ্গে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ এবং পঞ্চাশ জনেরও অধিক সুন্নী আলেম ও ইমামের লিখিত স্বতন্ত্র প্রবন্ধ থেকে বেশ কয়েকটি অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে । আর ইমাম আমীরুল মুমিনীন লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ আরো একটি খণ্ডে হস্তলিখিত অবশিষ্ট সূত্রসমূহ প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
ইবনুর কাইয়্যেম আল জাওযীয়াহ :
তিনি তার
‘
আল মানার আল মুনীফ ফীস সহীহ ওয়াদ দাইফ
’
গ্রন্থে প্রতীক্ষিত মাহদী সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেছেন :“
এ সব হাদীস চার শ্রেণীতে বিভক্ত । যতা:- সহীহ
,হাসান
,গরীব এবং বানোয়াট
।
আর মাহদী প্রসঙ্গে সাধারণ মুসলমান চারটি ভিন্ন অভিমত পোষণ করেছে ।
প্রথম অভিমত
:
মসীহ ইবনে মারিয়ামই হচ্ছেন মাহদী । এ অভিমত পোষণকারীরা পূর্বে উল্লিখিত মুহাম্মদ ইবনে খালিদ আল জুনদীর হাদীসের (
لا مهدی الا عیسی
অর্থাৎ
‘
মাহদী-ই ঈসা
’
)দ্বারা প্রমাণ উপস্থাপন করেছে আমরা এ হাদীসের অবস্থা বর্ণনা করে বলেছি যে
,এ হাদীস সহীহ নয় । আর তা যদি সহীহ হয় তবু তাতে স্বতন্ত্র কোন মাহদীর অস্তিত্বের প্রমাণে কোন যুক্তি নেই । কেননা ঈসা (আ.)-ই মহানবী (সা.) ও কিয়ামতের মাঝে সবচেয়ে বড় মাহদী বলে গণ্য ।
দ্বিতীয় অভিমত
:
বনি আব্বাসের মধ্য থেকে যে মাহদী খিলাফত ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তার সময় গত হয়ে গেছে । আর এ অভিমতের প্রবক্তারা মুসনাদে আহমাদে যে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তা দিয়ে এ মতের পক্ষে যুক্তি-প্রমান পেশ করেছে । হাদীসটি নিম্নরূপ:
“
যখন তোমরা প্রত্যক্ষ করবে যে
,খোরাসান থেকে কালো পতাকাসমূহ আগমন করেছে তখন এমনকি বরফের ওপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তোমরা সেগুলোর কাছে যাবে । কারণ
,সেগুলোর মাঝে মহান আল্লাহর খলীফা আল মাহদী থাকবেন ।
”
সুনানে ইবনে মাজায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত :
“
আমরা একদা মহানবী (সা.) এর কছে উপস্থিত ছিলাম
,তখন বনি হাশিমের একদল যুবক সামনের দিকে এগিয়ে আসল । অতঃপর যখন মহানবী তাদেরকে দেখলেন তখন তার নয়নদ্বয় অশ্রুতে পূর্ণ হয়ে গেল এবং রং পরিবর্তিত হয়ে গেল । আমি তখন তাকে বললাম :আপনার পবিত্র মুখমণ্ডলে এমন কিছু এখনো দেখতে পাচ্ছি যা আমার কাছে পছন্দনীয় নয় । তিনি বললেন : মহান আল্লাহ আমাদের (আহলে বাইতের) জন্য দুনিয়ার পরিবর্তে আখেরাতকে মনোনীত করেছেন । আর আমার আহলে বাইত অচিরেই বিপদাপদ
,নির্বাসন ও দেশান্তরের শিকার হবে । এ অবস্থা প্রাচ্যবাসীর মধ্য থেকে একটি দল যাদের সাথে কালো পতাকা থাকবে
,তাদের আগমন পর্যন্ত চলতে থাকবে । ঐ কালো পতাকাবাহীরা তখন ন্যায্য অধিকার দাবী করবে
,কিন্তু তাদেরকে তা দেয়া হবে না । তাই তারা যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে । অতঃপর তারা যা চেয়েছিল তা তাদেরকে দেয়া হবে । কিন্তু এবার তারা নিজেরাই তা গ্রহণ করবে না । তাই তারা যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে । অতঃপর তারা যা চেয়েছিল তা তাদেরকে দেয়া হবে । কিন্তু এবার তারা নিজেরাই তা গ্রহণ করবে না । অবশেষে তারা তাদের পতাকাসমূহ আমার আহলে বাইতভুক্ত এক ব্যক্তি- যে এ পৃথিবী যেভাবে অন্যায়-অত্যাচার দিয়ে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল তদ্রূপ তা ন্যায়পনায়ণতা দিয়ে ভরে দেবে-তার হাতে তুলে দেবে । সুতরাং যারা তা প্রত্যক্ষ করবে তাদের উচিত হবে বরফের ওপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের সাথে যোগ দেয়া ।
”
এ হাদীস এবং এর পূর্ববর্তী হাদীসটি যদি সঠিক হয় তুবুও এগুলো থেকে প্রমাণিত হয় না যে
,বনি আব্বাসের মধ্য থেকে যে মাহদী শাসনকর্তৃত্ব লাভ করেছিলেন তিনিই ঐ মাহদী যিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন । বরং তিনি অন্যতম মাহদী হিসেবে মাহদীর অন্তর্ভুক্ত । যেমন উমর ইবনে আব্দুল আযীযও মাহদী ছিলেন এবং তিনি বনি আব্বাসের মাহদীর চেয়েও
‘
মাহদী
’
নাম বা উপাধি গ্রহণ করার জন্য অধিক যোগ্য ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ।
দাজ্জাল যেমন পথভ্রষ্টতা ও অমঙ্গলের এক প্রান্তে ও শীর্ষে অবস্থান করেছে তদ্রূপ মাহদীও হেদায়েত
,কল্যাণ ও মঙ্গলের শীর্ষে ও অপর প্রান্তে অবস্থান করছেন । যেরূপ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী সবচেয়ে বড় দাজ্জালের আগমনের পূর্বে বহু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল আছে তদ্রূপ প্রধান বা সর্বশ্রেষ্ঠ মাহদীর পূর্বেও অনেক হেদায়েতপ্রাপ্ত মাহদীও রয়েছেন ।
তৃতীয় অভিমত
:
তিনি মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ও হাসান ইবনে আলী (রা.)- এর বংশধর হবেন । তিনি শেষ যুগে বের হবেন যখন পৃথিবী অন্যায়-অত্যাচার দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে । তখন তিনি পৃথিবীকে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন । অধিকাংশ হাদীসই এ বিষয় নির্দেশ করে
…
।
মাহদী যে ইমাম হাসানের বংশধর হবেন তাতে এক সুক্ষ্ণ রহস্য বিদ্যমান । আর তা হল হাসান (রা.) মহান আল্লাহর উদ্দেশে খেলাফত ত্যাগ করেছিলেন । তাই মহান আল্লাহও তার বংশধরদের খিলাফতে অধিষ্ঠিত করবেন যিনি সমগ্র পৃথিবীকে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন । আর এটিই হচ্ছে স্বীয় বান্দাদের মধ্যে মহান আল্লাহর সুন্নাত অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর জন্য কোন কিছু ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তাকে অথবা তার সন্তান-সন্তুতিকে (বংশধর) ঐ জিনিসের চেয়েও উত্তম জিনিস প্রদান করেন
…
।
(আল ইমাম আল মাহদী ইনদা আহলুস সুন্নাহ (আহলে সুন্নাতের নিকট ইমাম মাহদী)
,পৃ. 289)