রোমানরা এবং আবির্ভাবের যুগে তাদের ভূমিকা
আখেরী যামানা (সর্বশেষ যুগ) এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব কালের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহে
‘
রূম
’
(روم
)শব্দের অর্থ
‘
ইউরোপীয় জাতিসমূহ
’
।
বিগত শতাব্দীগুলোতে আমেরিকা মহাদেশেও তাদের বিস্তৃতি ঘটেছে
।
অর্থাৎ আমেরিকা মহাদেশের ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতগণও রোমের সন্তান এবং ঐতিহাসিক রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী
।
কখনো কখনো বলা হয়ে থাকে যে
,রোমানদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনের একটি সূরা (সূরা রূম) অবতীর্ণ করেছেন এবং পরবর্তীকালে মহানবী (সা.) ও মুসলমানগণ যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তারা এদের থেকে ভিন্ন
।
কারণ তারা ছিল বাইজানটাইনীয় যাদের আদি রাজধানী ছিল ইতালীর রোম নগরী
।
অতঃপর কন্সটানটিনোপল নগরী 500 বছর আগে মুসলমানদের হাতে বিজিত হওয়া পর্যন্ত তাদের রাজধানী বলে গণ্য হতো
।
মুসলমানগণ বিজিত এ নগরীর নাম দেয়
‘
ইসলাম বূল
’
এবং সাধারণ জনগণ এ শহরের নাম
‘
ইস্তাম্বূল
’
উচ্চারণ করত
।
এটি ঠিক যে
,রোমানগণ সূরা-ই রূম অবতীর্ণ হওয়া এবং তাদের ব্যাপারে রেওয়ায়েতসমূহ বর্ণিত হওয়ার সমসাময়িক রোমান বা বাইজানটাইনীয় সাম্রাজ্যের সমর্থক বলে প্রসিদ্ধ ছিল
।
তবে আজকের পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা এদের থেকে ভিন্ন নয়
।
বরং বর্তমানকালের পাশ্চাত্যবিশ্ব হচ্ছে অতীত রোমান সভ্যতা ও রাজনীতিরই সম্প্রসারিত রূপ এবং তাদেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ
।
আর (বর্তমানকালে) ফরাসী
,ব্রিটিশ এবং জার্মান জাতিগুলো সাংস্কৃতিক
,রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও রোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত স্তম্ভ বলে গণ্য হয়
।
যেহেতু এ সব জাতি ঐ সময় রোমান সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল এবং রোমান সাম্রাজ্যের উপনিবেশ বলে গণ্য হতো সেহেতু এ বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না
।
বরং দীর্ঘ 200 বছর রোম ও কন্সটানটিনোপল ছিল রোমান বাইজানটাইনীয় রাজন্যবর্গ এবং আমীর-অমাত্যদের রাজধানী
।
অথচ তাদের সবাই ইতালীয় জাতিভুক্ত এবং একই বংশোদ্ভূত ছিলেন না
।
বরং তাঁরা ছিলেন বিভিন্ন ইউরোপীয় গোত্র ও জাতিভুক্ত
।
অতঃপর গ্রীস বাইজানটাইনীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হলে রাজন্যদের মধ্যে গ্রীকদেরকেও দেখা যেত
।
আর সম্ভবত এ কারণেই রোমান সাম্রাজ্য দুর্বল এবং তা কন্সটানটিনোপল ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলে তা মুসলিম জাতিসমূহ কর্তৃক আরোপিত সামুদ্রিক অবরোধের সম্মুখীন হয় এবং ইউরোপীয়রা রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্যের দাবি তোলে
।
তাই জার্মানী ও অন্যান্য দেশের কতিপয় শাসনকর্তা নিজেদেরকে
‘
কায়সার
’
(সিজার) বলে ঘোষণা করে
।
সাম্রাজ্য ও রাষ্ট্রসমূহের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবর্তন ছিল নিতান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার
।
কারণ সরকার ও প্রশাসন এক দেশ থেকে আরেক দেশে এবং এক জাতি থেকে আরেক জাতিতে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে
।
তাই এ স্থানান্তর পূর্ববর্তী সরকার ও প্রশাসনের নাম ও তার মৌলিক বিশেষত্বের সাথে মোটেও অসংগতিপূর্ণ নয়
।
সুতরাং যে সব রেওয়ায়েত রোমানদের ভবিষ্যৎ অথবা আরবদের ভাষায়
‘
বনি আসফার
’
বা হলুদ বর্ণবিশিষ্টদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর প্রকৃত অর্থ সকল ইউরোপীয় জাতিকে বাদ দিয়ে শুধু ইতালীয় বাইজানটাইনীয় রোমানগণ নয়
।
এ কারণেই মুসলমানরা তাদের ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহে ইউরোপীয়দেরকে কখনো কখনো
‘
রোমান
’
এবং কখনো কখনো
‘
ফিরিঙ্গী
’
বলে উল্লেখ করেছে এবং
‘
রূম
’
ও
‘
রোমান
’
-এর বহুবচন আরওয়াম করেছে
।
অধিকন্তু সূরা রূমের 31 ও 32 নং আয়াত এবং সূরা কাহাফের 12 ও 21 নং আয়াতসমূহে যা কিছু মহান আল্লাহর সাথে তাদের শরিক স্থাপন এবং তাদের অনুসারী বিভিন্ন জাতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে
,এ সব গোষ্ঠী ও জাতির কাঙ্ক্ষিত অর্থ হচ্ছে হযরত মসীহ্ (আ.)-এর অনুসারী হওয়ার দাবিদার ইউরোপীয় জাতি ও গোষ্ঠীসমূহ
।
এটি সুস্পষ্ট যে
,খ্রিস্টান জাতিসমূহের ধর্মীয় নেতৃত্ব ইতালীয় এবং কন্সটানটিনোপলের রোমানদের হাতে ন্যস্ত ছিল
।
অতঃপর বর্তমান পাশ্চাত্যবিশ্ব তাদের থেকে তা উত্তরাধিকারসূত্রে অর্জন করেছে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগ সংক্রান্ত বহু রেওয়ায়েতে রোমের নাম উল্লিখিত হয়েছে
।
যেমন : তাদের ফিতনা ও গোলযোগ এবং মুসলমানদের ওপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ
।
আর এ সংক্রান্ত বিবরণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু কাল আগে আরব ভূখণ্ডের উপকূলীয় এলাকাসমূহের দিকে রোমানদের যুদ্ধ জাহাজগুলোর আগমন সংক্রান্ত আরো কিছু রেওয়ায়েত বিদ্যমান আছে
।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন :
“
যখন শামে তুমি বিপদাপদ ও বিশৃঙ্খলা প্রত্যক্ষ করবে তখন হতে আরব দেশসমূহের দিকে পাশ্চাত্যের অগ্রসর হওয়া পর্যন্ত রয়েছে কেবল মৃত্যু আর মৃত্যু
।
তখন তাদের মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হবে
।
”
আবির্ভাবের যুগ সম্পর্কিত রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত শামের ফিতনা ও গোলযোগ
,মুসলিম উম্মাহর ওপর ধর্মদ্রোহীদের আধিপত্য বিস্তার ও গোলযোগ সৃষ্টি করার পর যে সব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উদ্ভব হবে সেগুলোর সাথে মিলে যায়
।
তা এ কারণে যে
,বনি আসফার অর্থাৎ পাশ্চাত্য ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের তীব্র প্রতিরোধ
এবং সেখানে বিদ্যমান রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে ফিলিস্তিনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ওপর তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় এবং অত্র এলাকায় তাদের সামরিক আগ্রাসন ভবিষ্যতে আরব দেশসমূহের মুসলমানদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকায় তাদের প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ করার বিষয়টিকে অনিবার্য বলে বিবেচনা করবে
।
হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
রমযান মাসের ফজরের সময় পূর্ব দিক থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলবে : হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে একত্রিত হও
।
আর সাদা ভাব মিলিয়ে যাবার পর পশ্চিম দিক থেকে আরেক জন আহবানকারী বলবে : হে বাতিলপন্থীরা! তোমরা সবাই একত্রিত হও
।
রোমানরা আসহাব-ই কাহাফের গুহার নিকটবর্তী সমুদ্র সৈকতে আগমন করবে এবং মহান আল্লাহ্ ঐ সব যুবককে তাদের কুকুরসহ গুহা থেকে বের করে আনবেন
।
তাঁদের মধ্য থেকে মালীখা ও খামলাহা নামের দু
’
ব্যক্তি থাকবেন যাঁরা হযরত কায়েমের (মাহ্দী) নির্দেশাবলী মেনে নেবেন
।
”
এই সামরিক অভিযান হয়তো অতীতের সামরিক অভিযানেরই ধারাবাহিকতা অথবা আবির্ভাবের কাছাকাছি সময়ের অভিযানও উদ্দেশ্য হতে পারে
।
আর রেওয়ায়েত থেকে যেন বোঝা যায় যে
,এই সামরিক অভিযান ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের আন্দোলনের খুব কাছাকাছি সময় সংঘটিত হবে
।
কারণ ঘটনাসমূহ রমযান মাসে আসমান থেকে একের পর এক গায়েবী ধ্বনির পরপরই শুরু হবে এবং মুহররম পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে
।
আর ইমাম মাহ্দী মুহররমের দশ তারিখের রাত অথবা দিবসের মধ্যে আবির্ভূত হবেন
।
কতিপয় রেওয়ায়েত থেকে প্রতীয়মান হয় যে
,পাশ্চাত্য বাহিনীসমূহ শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে এবং আক্কা ও সূর এলাকায় এবং উপরিউক্ত রেওয়ায়েত অনুসারে আসহাব-ই কাহাফের গুহার কাছে অর্থাৎ সিরিয়া-তুরস্কের সমুদ্র সৈকতের কাছে অবস্থিত আনতাকিয়ায় অবতরণ করবে
।
আসহাব-ই কাহাফ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত আছে : মহান আল্লাহ্ তাদেরকে আখেরী যামানায় আবির্ভূত করাবেন যাতে করে তারা জনগণের জন্য নিদর্শন বলে গণ্য হতে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথী হতে পারেন
।
আমরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীদের ব্যাপারে যে আলোচনা করব সেখানে আসহাবে কাহাফের ব্যাপারেও আলোচনা করব
।
ঐ অতি সংবেদনশীল সন্ধিক্ষণে পাশ্চাত্যবাহিনীর আগমনের মুহূর্তে আসহাব-ই কাহাফের আবির্ভূত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এই যে
,তাঁরা খ্রিস্টানদের জন্য মুজিযা বলে গণ্য হবেন
;কারণ রেওয়ায়েতসমূহ অনুযায়ী ইমাম মাহ্দীর সঙ্গী-সাথীরা তাওরাত ও ইঞ্জিলের আসল কপিসমূহ আনতাকিয়ার গুহা থেকে বের করে আনবেন এবং এগুলোর মাধ্যমে তাঁরা রোমান ও ইহুদীদের সাথে আলোচনা ও বিতর্ক করবেন
।
এই গুহাটি আসহাব-ই কাহাফের গুহা অথবা অন্য কোন গুহাও হতে পারে
।
ইমাম বাকির (আ.)-এর নিকট থেকে জাবির জুফী বর্ণনা করেছেন :
“
তিনি বলেছেন : রোমের বিদ্রোহীরা অতি শীঘ্রই রামাল্লায় অবতরণ করবে
।
হে জাবির! ঐ বছর পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে সমগ্র বিশ্বে প্রচুর দ্বন্দ্ব-সংঘাত সংঘটিত হবে
।
”
অবশ্য এই বিদ্রোহীরা পাশ্চাত্যের বেতনভুক চর হতে পারে যারা ইহুদীদের পক্ষে স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করার জন্য ফিলিস্তিনের রামাল্লায় আসবে
।
বাহ্যত এ মতবিরোধ পাশ্চাত্য অথবা মাগরিব (লিবিয়া
,আলজেরিয়া
,তিউনিসিয়া ও মরক্কো)-এর পক্ষ থেকে হতে পারে
।
কারণ এর পরপরই রেওয়ায়েতটিতে বলা হয়েছে সর্বপ্রথম যে ঘটনা শামে ঘটবে তা হচ্ছে সে দেশের ধ্বংস সাধন এবং সম্ভবত তা পাশ্চাত্যের কারণেই হবে
।
এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হচ্ছে এমন কিছু বিষয় আহলে বাইত থেকে সূরা রূমের প্রথম দিকের আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে :
)
بسم الله الرّحمان الرّحيم الم غلبت الرّوم في أدنى الأرض و هم من بعد غلبهم سيغلبون في بضع سنين لله الأمر من قبل و من بعد و يومئذ يفرح المؤمنون بنصر الله ينصر من يشاء و هو العزيز الرّحيم
(
“
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
।
আলিফ লাম মীম
।
রোমানরা পরাজিত হয়েছে
।
নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর বিজয়ী হবে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই
।
অগ্র-পশ্চাতের কাজ মহান আল্লাহর হাতেই
।
সেদিন (যেদিন রোমানরা বিজয়ী হবে) মুমিনগণ আনন্দিত হবে মহান আল্লাহর সাহায্যে
।
তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী
,পরম দয়ালু
।
”
ইমাম বাকির (আ.) উক্ত আয়াতে উল্লিখিত
‘
মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহর সাহায্য
’
-কে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব হিসাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে
,মহান আল্লাহ্ তাঁকে রোমানদের ওপর বিজয়ী করবেন
।
এতদপ্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে ঐ সব রেওয়ায়েতও আছে যেগুলোতে হযরত ঈসা (আ.)-এর অবতরণ এবং ইসলাম গ্রহণ ও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অনুসরণ করার প্রতি খ্রিস্টানদেরকে তাঁর আহবান জানানোর বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে
।
আর এ সব রেওয়ায়েত মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে :
“
তিনি (ঈসা) কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন
।
”
“
তার মৃত্যুর আগে সকল আহলে কিতাব তার প্রতি ঈমান আনবে এবং সে কিয়ামত দিবসে তাদের ওপর সাক্ষী থাকবে
।
”
হযরত ঈসা মসীহ্ (আ.) কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন
।
আর যখন তিনি পৃথিবীতে আসবেন তখন সকল খ্রিস্টান ও ইহুদী তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তারা তাঁর মৃত্যুর আগেই তাঁকে এবং তাঁর মুজিযাসমূহকে প্রত্যক্ষ করবে
।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে
,হযরত ঈসা (আ.) ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাহায্যে এবং যে সব মুজিযা মহান আল্লাহ্ তাঁকে দেবেন সেগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে রোমানদের সাথে আলোচনা ও বিতর্কে লিপ্ত হবেন
।
ঈসা (আ.) আকাশ থেকে অবতরণ করার পর পাশ্চাত্য দেশগুলোর শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের জাতিসমূহের বিদ্রোহ এবং সে সব দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন আনয়ন করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন
।
এতৎসংক্রান্ত বিশদ বিবরণ আমরা হযরত মসীহ্ (আ.)-এর পৃথিবীতে অবতরণের ঘটনা বর্ণনা করার সময় প্রদান করব
।
আলোচ্য রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে মুসলমান ও রোমানদের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বিদ্যমান
।
হযরত মাহ্দী (আ.) রোমানদের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন
।
বাহ্যত এ চুক্তিটি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সেনাবাহিনী এবং ইহুদী ও রোমানদের সমর্থনপুষ্ট সুফিয়ানী বাহিনীর মধ্যে আক্কা-কুদ্স-আনতাকিয়া ট্রায়াঙ্গলে কুদ্স মুক্ত করার যে বৃহৎ যুদ্ধ সংঘটিত হবে তার পরে সম্পাদিত হবে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিজয়
,আল কুদসে তাঁর প্রবেশ এবং ঈসা (আ.)-এর অবতরণের পরে এ ঘটনা ঘটবে
।
সম্ভবত হযরত ঈসা (আ.) এ যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করবেন
।
এ ব্যাপারে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব
।
মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত :
“
হে আউফ! কিয়ামতের আগে ছয়টি ঘটনা স্মরণে রেখ... যে ফিতনা ও গোলযোগ থেকে কোন আরব পরিবার ও ঘর নিরাপদ থাকবে না
।
তন্মধ্যে তোমাদের ও
‘
বনি আসফার
’
-এর (পাশ্চাত্য) মধ্যে একটি সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে
।
এরপর তারা তোমাদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং 80টি সেনাদল যাদের প্রতিটিতে 12000 সৈন্য থাকবে
,তারা তোমাদের ওপর আক্রমণ চালাবে
।
”
মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত :
“
তোমাদের ও রোমানদের মাঝে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে
।
এগুলোর চতুর্থটি হিরাক্লিয়াসের বংশের এক ব্যক্তির সাথে হবে এবং তা দু
’
বছর টিকে থাকবে
।
এই সময় সুদাদ ইবনে গাইলান নামীয় আবদুল কাইস গোত্রের এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল : ঐ সময় জনগণের (মুসলমানদের) নেতা কে থাকবেন
?তিনি বললেন : আমার বংশধর মাহ্দী
।
”
কিছু রেওয়ায়েতে উক্ত চুক্তির মেয়াদ আট বছর হবে বলা হয়েছে
।
কিন্তু দু
’
বছর পরেই পাশ্চাত্য ঐ চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং 80টি পতাকাধারী প্রায় দশ লক্ষ সৈন্যের এক বিরাট বাহিনী নিয়ে ফিলিস্তিন ও শামের সমুদ্র সৈকতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে
।
এর পরপরই ইমাম মাহ্দী (আ.) ইউরোপ ও অনৈসলামী বিশ্ব জয় করার জন্য সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রযাত্রা শুরু করবেন যা আমরা ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবের আন্দোলন সংক্রান্ত অধ্যায়ে আলোচনা করব
।
রোমানদের সাথে সুফিয়ানীর সম্পর্ক
,তার পরাজয়ের পর তার সমর্থকদের রোম অর্থাৎ পাশ্চাত্যে পলায়ন এবং হযরত মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথী কর্তৃক তাদেরকে পশ্চাদ্ধাবন করে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ :
ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
যখন আল কায়েম (মাহ্দী) আন্দোলন শুরু করবে এবং বনি উমাইয়্যার (সুফিয়ানীদের) বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করবে তখন তারা রোমের দিকে পালিয়ে যাবে
।
রোমানরা তাদেরকে বলবে : যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমাদের ধর্ম গ্রহণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তোমাদেরকে আমাদের ভূখণ্ডে প্রবেশাধিকার দেব না
।
তারা তা মেনে নেবে এবং রোমানরাও তাদেরকে রোমে প্রবেশ করতে দেবে
।
ঠিক তখনই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীরা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে
।
তখন তারা সন্ধির প্রস্তাব দেবে
।
ইমাম মাহ্দীর অনুসারীরা তাদেরকে প্রত্যুত্তরে বলবেন : যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ধর্মানুসারীদের আমাদের হাতে অর্পণ না করবে সে পর্যন্ত আমরা তোমাদের নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা দেব না
।
অতঃপর তারা তাদেরকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথীদের হাতে তুলে দেবে
।
”
অন্যান্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে
,সুফিয়ানী পাশ্চাত্যমনা হবে
।
সে প্রথমে পাশ্চাত্যে বসবাস করবে ও এরপর শামে এসে সেখান থেকে তার আন্দোলন শুরু করবে
।
আমরা এ বিষয়টি পরে বিস্তারিত আলোচনা করব
।
শেখ তূসীর
‘
গাইবাত
’
গ্রন্থে বর্ণিত আছে :
“
যে সুফিয়ানী কওমের নেতা হবে সে রোম থেকে আন্দোলন শুরু করবে এমতাবস্থায় যে
,তার গলায় তখন ক্রুশ থাকবে
।
”
ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক রোম বিজয় এবং তাঁর হাতে রোমানদের ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে বর্ণিত আছে
,পাশ্চাত্য কর্তৃক শান্তি চুক্তি ভঙ্গ
,ফিলিস্তিন ও শামের সমুদ্র সৈকতের ওপর তাদের সামরিক আক্রমণ এবং তাদের পরাজয় বরণের পরপরই এ ঘটনা ঘটতে পারে
।
এ যুদ্ধটিই ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে রোমানদের সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধ হতে পারে
-যার পরপরই ইসলাম ধর্মের প্রতি পাশ্চাত্যের জাতিসমূহ ঝুঁকে পড়বে
।
কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে :
“
তাকবীর ধ্বনি দিয়ে 70000 মুসলমান রোম দখল করবে
।
”
“
স্বয়ং পাশ্চাত্যবাসীদের আন্দোলন
,বিক্ষোভ এবং তাদের তাকবীরের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের এ রাজধানীর পতন হতে পারে
।
আর সে সময় ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা তাদেরকে সাহায্য করবেন
।
”
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“
তখন রোমবাসীরা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করবে
।
তিনি তাদের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন
।
এরপর তিনি তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে সেখানে তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে প্রত্যাবর্তন করবেন
।
”
বাহ্যত পাশ্চাত্যের জাতিসমূহের মাঝে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে হযরত ঈসা (আ.) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন
।
যে দু
’
তিন বছর ইমাম মাহ্দী (আ.) ও পাশ্চাত্যের মধ্যে শান্তি বিরাজ করবে সেই বছরগুলোতে সম্ভবত হযরত ঈসা পাশ্চাত্যে অবস্থান করবেন অথবা অধিকাংশ সময় তিনি পাশ্চাত্যে কাটাবেন
।
”