ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)0%

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর) লেখক:
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক: আল্লামা আলী আল কুরানী
: মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন খান
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 84962
ডাউনলোড: 10116

পাঠকের মতামত:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 62 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 84962 / ডাউনলোড: 10116
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আত্মপ্রকাশ(আসরে যুহুর)

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবকালে তুর্কীদের ভূমিকা

আমাদের দৃষ্টিতে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর শুভ আবির্ভাব ও আন্দোলন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে উল্লিখিত তুর্ক অর্থ রুশ জাতি এবং পূর্ব ইউরোপীয় জাতিসমূহের মধ্য থেকে তাদের সমর্থকবৃন্দ হতে পারে । যদিও তারা ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান এবং রোমান সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক শাসন কবলিত জাতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়ে থাকে এবং জার্মানদের ন্যায় তারাও রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার দাবি করে নিজেদের রাজা-বাদশাহদেরকে সিজার উপাধিতে ভূষিত করেছে । তদুপরি যেহেতু তারা প্রথমত ইউরেশিয়ার পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গোত্রদ্ভূত সেহেতু তাদেরকে রেওয়ায়েত ও ইতিহাসের ভাষায় তুর্কী জাতিসমূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে । এ নাম তুরস্ক ও ইরানের তুর্কীদের ছাড়াও তাতার ,মঙ্গোল ,বুলগার ,রুশ ও অন্যান্যদেরকেও শামিল করে ।

দ্বিতীয়ত : সম্প্রতি খ্রিস্টধর্ম তাদের মাঝে প্রসার লাভ করেছে । তবে এর আগে তাদের মধ্যে মৌলিকভাবে এ ধর্মের প্রসার হয় নি ;বরং খ্রিস্টানরা একটি অপরিপক্ব শ্রেণী হিসাবে তাদের মধ্যে স্থান লাভ করেছে । কিন্তু পশ্চিম ইউরোপীয় জাতিসমূহের মধ্যে খ্রিস্টধর্মের অবস্থার চেয়েও এদের মধ্যে খ্রিস্টধর্মের অবস্থা শোচনীয় । কারণ শিরকমিশ্রিত বস্তুবাদ তাদের ধর্মের ওপর প্রাধান্য লাভ করেছে । আর সম্ভবত এ কারণেই তারা কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং এ মতবাদের প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করে নি ।

তৃতীয়ত মুসলমানদের বিরুদ্ধে তুর্কীদের আক্রমণ পরিচালনা সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের কিছু অংশ সপ্তম হিজরী শতকে মধ্য এশিয়া ,ইরান ,ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশে তুর্কী-মঙ্গোলদের আক্রমণসমূহের সাথে মিলে যায় । তবে এ সব রেওয়ায়েতের কিছু অংশ মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ঘটনাবলীর সাথে সংযুক্ত এবং তাতে তুর্কীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে রোমানদের সহযোগিতা করবে বলা হয়েছে এবং ঐ একই সময় তাদের মধ্যকার পারস্পরিক মতপার্থক্যের বিষয়টিও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে । আর এ বিষয়টি রুশ জাতি ব্যতীত অন্য কারো ওপরই আরোপ করা যায় না । তবে যদি এর পরিধি আরো বর্ধিত করা যায় তাহলে তাদের রাষ্ট্র ও প্রশাসনের উত্তরসূরিদের ওপরও তা আরোপ করা যাবে যারা রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের তুর্কী বংশোদ্ভূত জাতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত ।

এখানে ঐ সব রেওয়ায়েত থেকে গুটিকতক নমুনা পেশ করা হলো যেগুলোয় তাদের ভূমিকার কথা বর্ণিত হয়েছে ।

এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ফিতনা ও গোলযোগ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ : উল্লেখ্য যে ,এ ফিতনা তুর্কী ও রোমানদের পক্ষ হতে মুসলমানদের ওপর আপতিত হবে যা ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে । আর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুসলিম দেশসমূহের ওপর রুশ ও পাশ্চাত্যের পরিচালিত আক্রমণ ব্যতীত অন্য কিছুর দ্বারা তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । এ ফিতনা ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না মহান আল্লাহ্ মুসলিম উম্মাহর মাঝে মাহ্দী (আ.)-এর ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী আন্দোলন এবং তাঁর আবির্ভাবের মাধ্যমে তা প্রশমিত করবেন ।

তুর্কীদের সাথে সুফিয়ানীর যুদ্ধ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহও এ সব রেওয়ায়েতের সাথে জড়িত এবং এ সব রেওয়ায়েতে সম্ভবত তুর্কীদের অর্থ হচ্ছে রুশ জাতি । কারণ সুফিয়ানী রোম ও ইহুদীদের মিত্র হবে এবং হাদীসমূহে বর্ণিত হয়েছে যে ,সিরিয়ার ওপর তুর্কীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই সিরিয়া-জর্ডান এলাকায় সুফিয়ানীর উত্থান ও আন্দোলনের সূত্রপাত হবে । আর যদি এতৎসংক্রান্ত রেওয়ায়েত সঠিক হয় তাহলে ঐ আধিপত্য ও কর্তৃত্বের সময়কাল সংক্ষিপ্ত হবে । কারণ ইলজ আসহাবের বিদ্রোহ দমন করার পর উক্ত আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে ।

যখন ইলজ আসহাব বিদ্রোহ করবে এবং শামের রাজধানী দামেশক সংকটজনক অবস্থায় পতিত হবে তখন অল্প সময়ের মধ্যেই সে (ইলজ আসহাব) নিহত হবে । তখন আকহাল তার হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিদ্রোহ করবে । আর তখন শাম নাস্তিক্যবাদীদের (আরেকটি পাণ্ডুলিপিতে তুর্কীদের কাছে) হস্তগত হবে । 36

আবির্ভাব সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহে আসহাব ও আবকা (সুফিয়ানীর আন্দোলনের বিরোধী দু জন নেতা)-এর কথা উল্লিখিত হয়েছে । সুফিয়ানী এ দু জনের ওপর বিজয়ী হবে এবং সমগ্র শামের ওপর নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে ।

দামেশক অথবা এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তুর্কদের সাথে সুফিয়ানীর যুদ্ধ সম্পর্কে সরাসরি যে সব রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো আমি পাই নি । তবে ইজমালী তাওয়াতুর (অর্থগতভাবে মুতাওয়াতির) সূত্রে বর্ণিত বিপুল সংখ্যক রেওয়ায়েতে কিরকীসীয়ায় তুর্কীদের সাথে সুফিয়ানীর ব্যাপক যুদ্ধের কথা বর্ণিত হয়েছে । উল্লেখ্য যে ,কিরকীসীয়া এলাকাটি সিরিয়া ,ইরাক ও তুরস্ক সীমান্তে অবস্থিত । এ যুদ্ধ ঐ সব ভয়াবহ বিশাল যুদ্ধসমূহের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর ব্যাপারে পূর্ব হতেই আভাস দেয়া হয়েছিল । আর ফোরাত নদীর গতিপথে অথবা ফোরাত নদীর নিকটে যে বিশাল গুপ্তধন (খনিজ সম্পদ) আবিস্কৃত হবে সেটিকে কেন্দ্র করেই এ যুদ্ধ সংঘটিত হবে ।

অধিকন্তু তুর্কী অর্থ এ যুদ্ধে রুশজাতি না হয়ে তুরস্কের তুর্কীরাও হতে পারে । আবার তুর্কীদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে রুশজাতি হয়তো বা গোপনে সুফিয়ানীর সাথে থাকতে পারে এবং তাকে সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে । আর আমরা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় অতি শীঘ্রই শামদেশের ঘটনাবলী এবং সুফিয়ানীর আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করার সময় কিরকীসীয়ার যুদ্ধের কথা উল্লেখ করব ।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে তুর্কীদের মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত আযারবাইজানী বিপ্লবের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ ।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : আমাদের জন্য আযারবাইজান (সম্ভবত সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আযারবাইজান) গুরুত্বপূর্ণ । এ বিপ্লবের বিরুদ্ধে কোন কিছুরই প্রতিরোধ করার শক্তি নেই । আর যখন আমাদের বিপ্লবী বিপ্লব করবে তখন তোমরা তার দিকে দ্রুত ছুটে যাবে ,এমনকি চার হাত-পায়ে বরফের ওপর হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও । 37

আযারবাইজান গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন কিছুরই তার সামনে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে না -ইমাম সাদিক (আ.)-এর এ বাণীর অর্থ এও হতে পারে যে ,এ বিপ্লব হবে হিদায়েতকারী আন্দোলন যা আযারবাইজান অথবা ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের দ্বারা সফল হবে । এরপর এর নিকটবর্তী নিদর্শনসমূহ প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা আবশ্যক । আর নিচের রেওয়ায়েতটি থেকে বোঝা যায় রুশদের সাথে সংঘর্ষ ও প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটবে :

তুর্কীরা (রুশ জাতি) দু টি সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে যেগুলোর একটির দ্বারা আযারবাইজান ধ্বংস হবে এবং অরেকটি জাযীরায় পরিচালিত হবে যা বাসর ঘরে উপবিষ্টা নববধূদেরকেও ভীত-সন্ত্রস্ত করবে । এ সময় মহান আল্লাহ্ মুসলমানদেরকে সাহায্য করবেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই মহান আল্লাহর জন্য কোরবানী হবে । 38

শুধু এ রেওয়ায়েতটি অধ্যয়ন করলে তা মুসলিম বিশ্বে মঙ্গোলদের আক্রমণ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হতে পারে । প্রথম পর্যায়ে মঙ্গোলরা আযারবাইজানে পৌঁছে তা ধ্বংস করে দেবে । এরপর তারা ফোরাতে পৌঁছবে । আর তখন মুসলমানরা তাদের ওপর বিজয়ী হবে এবং জালূত ঝর্ণা ও অন্যান্য স্থানে তাদের মধ্যে অনেকেই নিহত হবে ।

কিন্তু এ রেওয়ায়েত ও পূর্ববর্তী রেওয়ায়েতের মাঝে সমন্বয় সাধন করলে উক্ত রেওয়ায়েতে উল্লিখিত তুর্কীরা রুশ জাতিও হতে পারে । তাদের প্রথম সমরাভিযান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব নিকটবর্তী নিদর্শনসমূহ ও তাদের মাধ্যমে আযারবাইজান দখল করার আগে পরিচালিত হবে ।

তাদের দ্বিতীয় সমরাভিযান জাযীরার দিকে পরিচালিত হবে । জাযীরাহ্ হচ্ছে ইরাক ও সিরিয়াকে বিভক্তকারী সীমান্তে কিরকীসীয়ার অদূরে অবিস্থত একটি জায়গার নাম । সুফিয়ানীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য তারা সেখানে পৌঁছবে । আর উক্ত রণাঙ্গনে মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার অর্থ হচ্ছে যে ,তারা পরোক্ষভাবে বিজয়ী হবে অর্থাৎ তাদের অত্যাচারী শত্রুদের ক্ষয়-ক্ষতি ও ধ্বংস হওয়ার মাধ্যমে তারা এ বিজয় অর্জন করবে । কিরকীসীয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে কোন হিদায়েতকারী সেনাদল থাকবে না অথবা মুসলমানদের বিজয় আনয়ন করবে এমন কোন পতাকাধারী সেনাদল সেখানে থাকবে না । তবে মহানবী (সা.) ও ইমামদের এতদপ্রসঙ্গে সুসংবাদ প্রদান এ দিক থেকে হতে পারে যে ,এ যুদ্ধে অত্যাচারীরা নিজেদের সমর্থকদের দ্বারাই নিহত ও ধ্বংস হবে ।

জাযীরাহ্ ও ফোরাত এলাকায় তুর্কীদের আগমন সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বিদ্যমান যেগুলোয় উল্লিখিত তুর্কগণের সম্ভাব্য অর্থ রুশজাতি হতে পারে । কারণ ফিলিস্তিনের রামাল্লা ও এর সমুদ্র উপকূলসমূহে রোমানদের (পাশ্চাত্য) আগমনের সমসাময়িক হবে তাদের অত্র এলাকায় আগমন ।

ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি যে ,কিরকীসীয়া জাযীরার অদূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল যা দিয়ারবাকর জাযীরাহ্-ই রবীআহ্ নামেও পরিচিত । সাধারণভাবে ঐতিহাসিক গ্রন্থাদিতে যে জাযীরাহ্ শব্দের অর্থ বর্ণিত হয়েছে তা এ এলাকাকেই নির্দেশ করে । তবে এ শব্দের দ্বারা জাযীরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপ) বা অন্য কোন দ্বীপকে বোঝানো হয় নি । (আরবী ভাষায় দ্বীপকে জাযীরাহ্ বলে । )

হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে জাযীরাহ্ ও ফোরাতে তুর্কী-মঙ্গোলদের আগমনের সাথে এ বিষয়টি মোটেও সাংঘর্ষিক নয় । কারণ কতিপয় ব্যক্তি তুর্কী-মঙ্গোলদের আগমনকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিকটবর্তী নিদর্শনাদির অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করেছেন । অথচ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের নিকটবর্তী নিদর্শনাদির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জাযীরাহ্ এলাকায় তুর্কীদের আগমন এবং কিরকীসীয়ায় সুফিয়ানীর সাথে তাদের যুদ্ধ ।

তুর্কী-মঙ্গোলদের গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং মুসলিম দেশসমূহে তাদের আক্রমণ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ মহানবী (সা.)-এর মুজিযা এবং ভবিষ্যৎ ঘটনাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহের অন্তর্ভুক্ত । মুসলিম উম্মাহ্ এ সব হাদীস ও রেওয়ায়েত জানত এবং সেগুলো তারা ইসলামের প্রাথমিক যুগে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে বর্ণনা করেছে । অতঃপর তুর্কী-মঙ্গোলদের আক্রমণের যুগে এবং তৎপরবর্তী যুগে এ ধরনের রেওয়ায়েত ও হাদীস অধিক অধিক প্রচলিত হতে থাকে । অথচ এ সব রেওয়ায়েতে তাদের ফিতনা ও গোলযোগ প্রশমিতকরণ এবং মুসলমানদের বিজয় ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের দিকে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত করা ব্যতিরেকেই উল্লেখ করা হয়েছে । ঠিক একইভাবে যে তুর্কীদের নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েত ও হাদীসসমূহে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সাথে তাদের (তুর্কদের) ফিতনা ও গোলযোগ প্রশমনের বিষয়টি মুসলমানদের বিজয়ের ইঙ্গিতসহ বর্ণিত হয়েছে ।

এখানে মঙ্গোলদের আক্রমণ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের কতিপয় নমুনা পেশ করা হলো :

হযরত আলী (আ.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত : আমি যেন একটি জাতিকে দেখতে পাচ্ছি ,হাতুড়ির ঘা খাওয়া ঢালের মতো যাদের মুখমণ্ডল স্পষ্ট দৃশ্যমান ,যারা রঙিন রেশমী কাপড় পরিহিত এবং উন্নত জাতের অশ্ব চালনা করছে ,সেখানে হত্যাযজ্ঞ এতটা অধিক যে ,আহতরা নিহতদের লাশের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পার হচ্ছে । ঐ যুদ্ধে পলায়নকারীদের সংখ্যা যুদ্ধবন্দীদের চেয়ে অনেক কম । এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করল : হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞানের সাথে পরিচিত । হযরত আলী হেসে বনি কালব গোত্রের ঐ লোককে বললেন : হে বনি কালব গোত্রীয় ভ্রাতা! এটি গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞান নয় ;বরং এ হচ্ছে এক ধরনের অবগতি যা একজন জ্ঞানী অর্থাৎ রাসূলুল্লাহর নিকট থেকে শিখেছি । কারণ গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞান কেবল কিয়ামত সংক্রান্ত জ্ঞান এবং যা কিছু মহান আল্লাহ্পাক এ আয়াতের মধ্যে উল্লেখ করেছেন তা । আর আয়াতটি হচ্ছে : একমাত্র মহান আল্লাহ্ই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে জ্ঞাত । তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন । তিনি মাতৃগর্ভসমূহে যা আছে সে ব্যাপারে জ্ঞাত ,আর কোন ব্যক্তি জানে না যে ,তার জীবন (আয়ু) কোথায় শেষ হয়ে যাবে... । একমাত্র মহান আল্লাহ্ মাতৃগর্ভে যা আছে -ছেলে না মেয়ে ,সুন্দর না কুৎসিত ,দাতা না কৃপণ ,সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা এবং কোন্ ব্যক্তি দোযখের অগ্নির দাহ্য কাষ্ঠ ,কোন্ ব্যক্তি বেহেশ্তী এবং কোন্ ব্যক্তি নবীদের সাথী সে সম্পর্কে জ্ঞাত । অতএব ,গায়েব সংক্রান্ত যে জ্ঞান মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউই জানে না তা হচ্ছে ঠিক এটিই । যা কিছু বলা হয়েছে তা ছাড়া আর সবকিছু হচ্ছে এমন জ্ঞান যা মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে শিখিয়েছেন । মহানবী (সা.) আবার তা আমাকে শিখিয়েছেন এবং আমার জন্য দোয়া করেছেন যাতে করে মহান আল্লাহ্ তা আমার হৃদয়ে স্থাপন করে দেন এবং আমার অন্তঃকরণকে তা দিয়ে পূর্ণ করে দেন । 39

পূর্ববর্তী রেওয়ায়েতসমূহের ধারাবাহিকতার মধ্যে তুর্কীদের সাথে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুদ্ধ সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বিদ্যমান ।

ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত : ইমাম মাহ্দী প্রথম যে বাহিনীটি গঠন করবে তা সে তুর্কীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবে । তাদেরকে পরাস্ত ও বন্দী এবং তাদের ধন-সম্পদ গনীমত হিসাবে গ্রহণের পর সে শামদেশ অভিমুখে রওয়ানা হবে এবং তা জয় করবে । 40

এ হাদীসের অর্থ হলো ইমাম মাহ্দী (আ.) প্রথম যে সেনাবাহিনী গঠন করে প্রেরণ করবেন তাদের সাথে তিনি এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন না । কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) হিজায ও ইরাক মুক্ত করার জন্য ইরাকে প্রবেশ এবং বেশ কয়েকটি যুদ্ধের পর এ সেনাবাহিনী প্রেরণ করবেন ।

এখানে তুর্কী বলতে তুরস্কের তুর্কদেরও বোঝানো হতে পারে । তবে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সম্ভাবনার ভিত্তিতে তুর্কগণ বলতে রুশ জাতিকেই বোঝানো হয়েছে যারা কিরকীসীয়ায় সুফিয়ানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে । কিন্তু কোন পক্ষই প্রতিপক্ষের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না ।

কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে তুর্কীরা ধ্বংস হবে এবং প্রচণ্ড বজ্রাঘাতে তাদের দেশ সম্পূর্ণ নিশ্চি ‎‎ হ্ন হয়ে যাবে ।

কতিপয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে : তুর্কীদের দেশ বজ্রপাত ও ভূমিকম্পের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে । তাদের দেশ ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের মতো অস্ত্রসমূহের আঘাতেও ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে যেগুলোর ধ্বংসক্ষমতা হবে বজ্রপাত ও ভূমিকম্পের অনুরূপ । সম্ভবত এ ঘটনা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ করার পরপরই ঘটবে এবং তাদের ধ্বংস এতটা ব্যাপক হবে যে ,পরবর্তী রেওয়ায়েতসমূহে তাদের আর কোন উল্লেখই নেই । কেবল তাদের দ্বিতীয় সমরাভিযানের পরবর্তী রেওয়ায়েতসমূহে فلا ترك بعدها (অর্থাৎ এরপর আর কোন তুর্কী বিদ্যমান থাকবে না) -এ বাক্যটি বিদ্যমান আছে । আর এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে , তুর্ক শব্দটির দ্বারা রুশ জাতিকেই 41 বোঝানো হয়েছে । কারণ এ ধরনের কথা কোন মুসলিম জাতির ক্ষেত্রে বলা হয় নি ।

পঞ্চম অধ্যায়