আবির্ভাবের যুগে ইহুদীদের ভূমিকা
সর্বশেষ যুগ অর্থাৎ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের যুগে ইহুদীদের ভূমিকা সম্পর্কে সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতগুলো ব্যতীত আমাদের কাছে যদি আর কিছু অবশিষ্ট নাও থাকত তবুও ঐ আয়াতগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট হতো
।
কারণ সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও এ সব আয়াত হচ্ছে ঐশী বাণী বা প্রত্যাদেশ এবং এতটা বলিষ্ঠ ও সাবলীল যা ইহুদী জাতির ইতিহাসের একটি ক্ষুদ্র অংশ বর্ণনা করেছে এবং অলৌকিক ও সূক্ষ্মভাবে তাদের ভবিষ্যৎ ভাগ্য স্পষ্ট করে চিত্রিত করেছে
।
এ সব আয়াত এবং অন্যান্য আয়াত ছাড়াও কিছু রেওয়ায়েত ও হাদীস আছে যেগুলোর কিয়দংশ আয়াতসমূহের ব্যাখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং বাকী কিছু অংশ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব ও বিপ্লবের যুগে ইহুদীদের সার্বিক অবস্থার ওপর আলোকপাত করে
।
আমরা আয়াতসমূহ ব্যাখ্যা করার পর ঐ রেওয়ায়েতগুলোও বর্ণনা করব
।
ইহুদীদের ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহর প্রতিজ্ঞা :
)
بسم الله الرحمان الرحيم
سبحان الّذي أسرى بعبده ليلاً من المسجد الحرام إلى المسجد الأقصى الّذي بركنا حوله لنريه من آياتنا إنّه هو السّميع البصير، واتينا موسى الكتاب وجعلناه هدىً لبني إسرائيل ألّا تتّخذوا من دوني وكيلاً، ذرّية مَنْ حملنا مع نوحٍ انّه كان عبداً شكوراً
(
.
“
পরম করুণাময় চিরদয়ালু আল্লাহর নামে
।
পরম পবিত্র ও মহিমান্বিত ঐ সত্তার প্রশংসা যিনি নিজ বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন যার চারদিকে আমরা পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে আমাদের (কুদরত ও মহিমার) কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই
।
নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও সর্বদ্রষ্টা
।
আর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং সে কিতাবকে বনি ইসরাইলের জন্য হেদায়েতের পথ হিসাবে মনোনীত করেছি
।
(আর তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি) তোমরা আমাকে ছাড়া আর কাউকে কার্যনির্বাহী স্থির করো না
।
তোমরা তাদের সন্তান (বংশধর) যাদেরকে আমি নূহের সাথে সওয়ার করিয়েছিলাম
।
নিশ্চয়ই সে ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা
।
”
)
وقضينآ إلى بني إسرائيل في الكتاب لتفسدنَّ في الأرضِ مرّتين ولتعلنّ علوًّا كبيراً
(
“
আমি বনি ইসরাইলকে (তাদের) কিতাবে স্পষ্ট বলে দিয়েছি যে
,তোমরা পৃথিবীতে দু
’
বার ফিতনা-ফাসাদ করবে এবং অন্যদের ওপর বড় ধরনের দম্ভ ও অহংকার প্রকাশ করবে
।
”
অর্থাৎ যে তাওরাত আমরা তাদের জন্য নাযিল করেছি সেই গ্রন্থে তাদের ধ্বংস হওয়ার অমোঘ বিধানও লিখে দিয়েছি
।
কারণ তোমরা অচিরেই সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পুনরায় সমাজে ফিতনা-ফাসাদে লিপ্ত হবে
।
কারণ তোমরা শীঘ্রই অন্যদের ওপর গর্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে বসবে
।
)
فإذا جآء وعْد أُوْلهما بعثنا عليهم عباداًلّنا أولي بأسٍ شديدٍ فجاسوا خلالَ الدِّيار، وكان وعداً مفعولاً
(
.
“
অতঃপর যখন উক্ত ফাসাদদ্বয়ের প্রথমটির প্রতিশ্রুতিকাল উপস্থিত হবে তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কতিপয় কঠোর যোদ্ধা বান্দাকে প্রেরণ করব
।
অতঃপর তারা (তোমাদের) প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত প্রবেশ করবে
।
আর এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবেই
।
”
তোমাদের প্রথম ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য তোমাদের শাস্তির মুহুর্ত ঘনিয়ে এলে আমার তরফ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে এমন সব বান্দাকে প্রেরণ করব যারা হবে অত্যন্ত কঠোর যোদ্ধা যাতে করে তারা তোমাদেরকে প্রচণ্ড শাস্তি দেয় এবং তোমাদের ঘরে ঘরে তল্লাশী চালায়
।
আর এটি হবে অবশ্যম্ভাবী ঐশী অঙ্গীকার
।
)
ثمّ رددنا لكم الكرّة عليهم وأمددناكم بأموالٍ و بنينَ وجعلناكم أكثر نفيراً
(
“
অতঃপর আমি তোমাদের অনুকূলে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দেব
,তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্র-সন্তান দ্বারা সাহায্য করব এবং তোমাদের জনবল বৃদ্ধি করে দেব (এবং তোমাদের সামরিক শক্তিও বাড়িয়ে দেব)
।
”
ব্যাখ্যা
:
অতঃপর যাদেরকে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করব (তোমাদের অন্যায়-অপরাধের শাস্তি প্রদান করার জন্য) তাদের বিপক্ষে তোমাদের অনুকূলে বিজয়ের পালা আবার ঘুরিয়ে দেব
।
আমি তোমাদেরকে প্রভূত ধন-সম্পদ এবং বহু সন্তান-সন্ততি দান করব এবং তোমাদেরকে অধিক জনবল ও সাহায্যকারীর অধিকারী করব যারা তোমাদের সাহায্যার্থে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে
।
)
إنْ أحسنتم أحسنتم لأنفسكم قف وإنْ أسأتم فلها فإذا جاء وعْد الآخرةِ ليسوءا وجوهكم وليدخلوا المسجد كما دخلوه أوّل مرّةٍ وليتبّروا ما علوا تتبيراً
(
.
তোমরা যদি ভালো কর তবে নিজেদের জন্যই ভালো করবে
।
আর যদি মন্দ কর তবে তাও (তোমাদের) নিজেদের জন্যই
।
এরপর যখন দ্বিতীয় অঙ্গীকারের সময় এসে যাবে তখন (অন্য) বান্দাদেরকে প্রেরণ করব যারা তোমাদের মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেবে
,মসজিদে ঢুকে পড়বে যেমন প্রথমবার তারা ঢুকেছিল এবং যা কিছু তাদের করায়ত্বে আসবে তারা তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে
।
আর তখন তোমাদের অবস্থা এমনই হবে এবং তোমরা যদি তওবা কর
,যে সব নেয়ামত অর্থাৎ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে সৎকাজ কর
,তাহলে তা তোমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে
।
আর যদি তোমরা অসৎকর্ম সম্পাদন
,সীমা লঙ্ঘন
,নাফরমানী এবং অন্যদের চেয়ে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করতেই থাক
,তাহলে তোমাদের এ আচরণের অশুভ পরিণতি তোমাদেরকেই বহন করতে হবে
।
তবে তোমরা শীঘ্রই ভালো কাজ তো করবেই না
,বরং গর্হিত অন্যায় কাজেই হাত দেবে (এবং তা করতেই থাকবে)
।
তোমাদের দ্বিতীয় ফিতনার জন্য তোমাদের শাস্তিপ্রাপ্তির সময় আসা পর্যন্ত আমরা তোমাদেরকে সুযোগ দিচ্ছি
।
দ্বিতীয় অপরাধের শাস্তির সময় যখন আসবে তখন আমরা আমাদের তরফ থেকে এমন সব ব্যক্তিদেরকে প্রেরণ করব যারা তোমাদের সাথে প্রথম বারের চেয়েও অনেক বেশি কঠোর আচরণ প্রদর্শন করবে
।
যে সব বিপদ তোমাদের অপছন্দ তোমাদের ওপর সেই সব বিপদ তারা আনয়ন করবে
।
অতঃপর তারা বিজয়ীবেশে মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করবে এবং প্রথমবার শত্রুরা যেভাবে তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছিল ও তোমাদের ঘরবাড়ীগুলোয় তল্লাশী চালিয়েছিল ঠিক সেভাবে তারা তোমাদের ঘরে ঘরে তল্লাশী চালাবে এবং তোমাদের শ্রেষ্ঠান্বেষী মনোবৃত্তি এবং গোলযোগ সৃষ্টি ও অপরাধ করার প্রবণতার ধ্বংস সাধন করবে
।
)
عسى ربّكم ان يرحمكم وإن عدتم عدنا وجعلنا جهنّم للكافرين حصيراً
(
.
হয়তো তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন
।
কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর
,আমিও পুনরায় তাই করব
।
আমি জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য সংকীর্ণ কয়েদখানা হিসাবে নির্ধারণ করেছি
।
সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক দ্বিতীয়বার শাস্তি প্রদান করার পর অনুগ্রহ করে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন
;আর দ্বিতীয়বার শাস্তিপ্রাপ্তির পর যদি তোমরা আবারও বিচ্যুত হও
,তাহলে আমরাও তোমাদেরকে আবার শাস্তি দেব এবং তোমাদের ওপর এ পার্থিব জগতেই সীমাবদ্ধতা আরোপ করব
।
আর আখেরাতে দোযখকে তোমাদের জন্য সংকীর্ণ জেলখানায় পরিণত করব
।
আমরা পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ থেকে প্রথম যে সিদ্ধান্তে উপনীত হই তা হলো : হযরত মূসা (আ.)-এর পরে তাদের চূড়ান্ত ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ইহুদী জাতির ইতিহাসের সারসংক্ষেপ হচ্ছে এই যে
,তারা সমাজে ফিতনা-ফাসাদ অব্যাহত রাখবে
।
এরপর যখন তাদের শাস্তিপ্রাপ্তির মুহূর্ত উপস্থিত হবে তখন মহান আল্লাহ্ তার পক্ষ থেকে একদল বান্দাকে প্রেরণ করবেন যারা তাদের ওপর বিজয়ী হবে
।
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বিশেষ কিছু কল্যাণের ভিত্তিতে ইহুদীদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করে দেবেন
।
তাদেরকে বিপুল ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রদান করবেন এবং পৃথিবীতে ঐ জাতির চেয়েও তাদের সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেবেন
।
কিন্তু ইহুদীরা তাদের এ সম্পদ এবং সঙ্গী-সাথীদেরকে যথোপযুক্তভাবে ব্যবহার করবে না
,বরং তারা এ সব নেয়ামতের অপব্যবহারই করবে
।
তারা দ্বিতীয়বারের মত পৃথিবীতে ফিতনা করবে
।
অবশ্য এবার তারা ফিতনা ছাড়াও দম্ভ ও শ্রেষ্ঠত্বকামিতার দোষেও আক্রান্ত হবে
।
তারা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য ও জাহির করবে
।
আর যখন তাদের শাস্তি প্রদানের সময় এসে যাবে তখন তিনি পুনরায় ঐ জাতিকে তাদের ওপর বিজয়ী করে দেবেন এবং তাদেরকে তিন পর্যায়ে এবং প্রথমবারের চেয়েও অত্যধিক কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন
।
দ্বিতীয় ফলাফল ও সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই যে
,মহান আল্লাহ্ যে জাতিকে তাদের বিরুদ্ধে প্রথমবার প্রেরণ করবেন
,খুব সহজেই তাদেরকে ইহুদীদের ওপর বিজয়ী করবেন এবং তারা তাদের ঘরে ঘরে তল্লাশী চালাবে
।
তখন তারা মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে তাদের সামরিক শক্তি ধ্বংস করে দেবে
।
এরপর মহান আল্লাহ্ দ্বিতীয় বার তাদেরকে প্রেরণ করবেন এবং তাদের ওপর ইহুদীদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব এবং সমর্থক
,পৃষ্ঠপোষক ও সঙ্গী-সাথীদের আধিক্য থাকা সত্ত্বেও বিপরীতে তিন পর্যায়ে তারা তাদের ওপর তীব্র মরণাঘাত হানবে
।
প্রথম পর্যায়ে তারা ইহুদীদের অপবিত্র কুৎসিত চেহারা প্রকাশ এবং তাদেরকে অপমানিত করবে
।
যেমনভাবে তারা প্রথমবার মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করেছিল ঠিক তদ্রূপ তারা মসজিদুল আকসায় বিজয়ীবেশে প্রবেশ করবে
।
এরপর তারা ইহুদীদের দম্ভ ও অন্যান্য জাতির ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্বের দর্পকে চূর্ণ করে দেবে
।
মুফাসসিররা যে মৌলিক প্রশ্নটি এ স্থলে উত্থাপন করেছেন সেটি হচ্ছে এই যে
,এ দু
’
ধরনের ফিতনা যার একটির সাথে দম্ভ ও শ্রেষ্ঠত্বকামিতাও যুক্ত রয়েছে তার কি পরিসমাপ্তি ঘটেছে অথবা উক্ত প্রতিশ্রুত শাস্তিদ্বয় কি ইতোমধ্যে তাদেরকে দেয়া হয়েছে নাকি এখনো দেয়া হয়নি
।
কতিপয় মুফাসসির বিশ্বাস করেন যে
,উক্ত প্রতিশ্রুত শাস্তিদ্বয় বাস্তবায়িত হয়েছে এভাবে যে
,প্রথম ফিতনার শাস্তি বানুখায্ নাসর (বখতুন নাসর) এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ফিতনার শাস্তি রোমান
‘
টাইটাসের
’
হাতে সংঘটিত হয়েছে
।
আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে
,প্রতিশ্রুত শাস্তিদ্বয় এখনও বাস্তবায়িত হয়নি
।
তবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমত হচ্ছে এই যে
,ইহুদীদের প্রথমবারের ফিতনার বরাবরে প্রথম শাস্তি ইসলামের প্রাথমিক যুগেই মুসলমানদের হাতে বাস্তবায়িত হয়েছে
।
আর যখন মুসলমানরা ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে সরে যায় তখন মহান আল্লাহ্ ইহুদীদেরকে তাদের ওপর বিজয়ী করে দিয়েছেন
।
এ পর্যায়ে আবারও ইহুদীরা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও সীমা লঙ্ঘন করেছে
।
আর যখনই মুসলমানরা ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে তখনই দ্বিতীয় শাস্তির সময় এসে যাবে এবং তা মুসলমানদের হাতে পুনরায় বাস্তবায়িত হবে
।
আর এ ব্যাখ্যারই ভিত্তিতে আহলে বাইতের ইমামদের থেকে বেশ কিছু রেওয়ায়েতও বর্ণিত হয়েছে
।
যেমন : মহান আল্লাহ্ যে গোষ্ঠীকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবেন তাঁরা হবেন ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা যাঁরা হবেন কোমবাসী এবং তাঁরা মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের আগেই প্রেরিত হবেন
।
তাফসীরে আইয়াশীতে ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে
,তিনি
)
بعثنا عليكم عباداً لنا أُولي بأسٍ شديد
(
‘
তোমাদের ওপর আমাদের একদল বান্দাকে প্রেরণ করব যারা হবে কঠোর যোদ্ধা ও শক্তির অধিকারী
’
-এ আয়াতটি পাঠ করে বললেন : এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো হযরত কায়েম আল মাহ্দী এবং তার সঙ্গীসাথী যারা হবে শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী ও দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন
।
‘
নূরুস সাকালাইন
’
নামক তাফসীরে ও
‘
রওযাতুল কাফী
’
গ্রন্থ হতে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“
হযরত কায়েম আল মাহ্দীর আবির্ভাবের আগে মহান আল্লাহ্ এমন এক জাতিকে প্রেরণ করবেন যারা আলে মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন শত্রুকেও জীবিত রাখবে না
।
‘
বিহারুল আন্ওয়ার
’
গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত :
“
যখন তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম : আপনার জন্য আমরা উৎসর্গীত হই
,তাঁরা কারা
?”
ইমাম তিনবার বললেন : মহান আল্লাহর শপথ
,তারা কোমের অধিবাসী
;মহান আল্লাহর শপথ
,তারা কোমের অধিবাসী
।
”
এ তিন রেওয়ায়েত অর্থ ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে এক ও পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল এবং এগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ নেই
।
কারণ কোমের অধিবাসীরা অর্থাৎ ইরানীরাই হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সঙ্গী-সাথী যাঁদেরকে মহান আল্লাহ্ ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য প্রেরণ করবেন এবং রেওয়ায়েতসমূহ অনুসারে হযরত মাহ্দীর (আ.) আবির্ভাবকালে তাঁর বিশেষ সঙ্গীসাথীদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি কোমবাসী অর্থাৎ ইরানীদের মধ্যে হতে বিদ্যমান থাকবে
।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভূত হওয়া পর্যন্ত এ সব জনগণ এবং তাদের মুসলিম সমর্থকদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের প্রতিরোধ কয়েক ধাপে সম্পন্ন হবে
।
তবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নেতৃত্বে এবং তাঁর শক্তিশালী হস্তেই ইহুদীদের চূড়ান্ত ধ্বংস সাধন হবে
।
ইহুদীদের প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় শাস্তিপ্রাপ্তি যে মুসলমানদের হাতেই হবে তা নির্দেশকারী যে সব বিষয় আছে সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত এ বিষয়টিও যে
,যে জাতিকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে পুনরায় প্রেরণ করার প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ্ দিয়েছেন আসলে তারা একই উম্মতভুক্ত এবং তাদের যে সব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো এবং ইহুদীদের সাথে তাদের যুদ্ধের বিশেষত্বসমূহ কেবল মুসলমানদের সাথেই মিলে যায়
।
কারণ মিশর
,ব্যাবিলন
,গ্রীস
,ইরান
,রোমের বাদশাহরা এবং অন্যান্য জাতির শাসকবৃন্দ যারা ইহুদীদের ওপর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য কায়েম করেছিল তাদের সাথে
عباداً لنا
(আমাদের কতিপয় বান্দা)
-এ বৈশিষ্ট্যটি খাপ খায় না
।
আর প্রথম শাস্তির বর্ণনা সম্বলিত আয়াতের পরের আয়াতগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী ঐ সব রাজা-বাদশাহ্ ও শাসকবর্গের ওপর ইহুদীদের বিজয়ী হবারও কোন ঘটনা এখনো ঘটে নি
।
অথচ ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানদের হাতে ইহুদীদের প্রথম শাস্তিভোগের পর তারা বর্তমানে আমাদের ওপর বিজয়ী হয়েছে
।
আর মহান আল্লাহ্ তাদেরকে এমনভাবে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করেছেন যে বিশ্বে তাদের সমর্থকদের সংখ্যা মুসলমানগণ এবং তাদের মিত্রদের চেয়েও বেশি এবং তারা পরাশক্তিবর্গের সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে ও বিদ্রোহ করেছে
।
আর এ সব ইহুদীই পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ করছে এবং আমাদের ও অন্যান্য বঞ্চিত জাতির ওপর গর্ব
,শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করছে
।
কুফরের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী ইসলামের মুজাহিদরাই তাদের ঘৃণ্য কুৎসিত দেহ ও মুখমণ্ডলের ওপর তীব্র আঘাত হানবে এবং তাদেরকে ধ্বংস করবে
।
যারা ইহুদী জাতির ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য পড়াশোনা করেছেন এবং জানেন তাদের কাছে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট
।
আর আমরা তা খুব শীঘ্রই উল্লেখ করব
।