রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ 16%

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইতিহাস

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 22 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 13955 / ডাউনলোড: 3572
সাইজ সাইজ সাইজ
রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত  ও  বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

1

2

3

4

তথ্যসূত্র :

১.বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে সাধারণতঃ এ চার পবিত্র ব্যক্তিত্বের নামোল্লেখের পর ছ্বাহাবী বিবেচনায় রাযীয়াল্লাহু তা আলা আনহু/ আনহা/ আনহুম এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের মহান ইমামগণের নামের পরে (রাহমাতুল্লাহি আলাইহ্) বলা হয়। কিন্তু কোরআন মজীদে আহলে বাইতের যে পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে এবং আমরা নামাযে যেভাবে আালে মুহাম্মাদ্ (সা.)-এর প্রতি দরূদ প্রেরণের জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে আবেদন করে থাকি সে প্রেক্ষিতে আল্লাহর দ্বীনে তাঁদের বিশেষ মর্যাদা ও অবস্থানের কারণে আমরা তাঁদের নামোল্লেখের পরে তাঁদের প্রতি সালাম প্রেরণকে সঙ্গত ,বরং জরূরী বলে মনে করি।

২. আহলে সুন্নাতের ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য বলে পরিগণিত বিভিন্ন হাদীছ-গ্রন্থ ও তাফসীরে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর এ দু জন স্ত্রীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে এবং সংশ্লিষ্ট গোপন কথা সংক্রান্ত ঘটনা ও চক্রান্তের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লিখত আছে । কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদেরকে চিহ্নিত করা আমাদের অত্র আলোচনার জন্য অপরিহার্য নয় । বরং আমাদের আলোচনা হচ্ছে একটি নীতিগত আলোচনা । এ কারণে ,তাঁদের মধ্য থেকে একজনের ব্যাপারেও যদি মা ছ্বূম্ না হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয় (তা যিনিই হোন না কেন) তাহলে তা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে ,কেবল হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)- এর স্ত্রীর মর্যাদা কাউকে মা ছ্বূম্ বানাতে পারে না ।

৩. এখানে আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে ,এ মর্যাদা কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামের ;কোনো পার্থিব নেতৃত্বের জন্য নয় ,এমনকি মুসলিম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো দ্বীনী নেতার জন্য এ মর্যাদা নয় ,তা সে নেতা মুসলিম জনগণের সর্বসম্মতিক্রমেই নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হোন না কেন ।

৪. প্রচলিত ইলহাম পরিভাষার অর্থে কোরআন মজীদে ওয়াহী শব্দ ব্যবহারের একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে । অর্থাৎ ইলহাম হচ্ছে ওয়াহীয়ে গ্বায়রে মাত্লূ -যা পঠনযোগ্য আয়াত নয় । অন্যদিকে হেদায়াতের এক অর্থ নীতিগতভাবে পথনির্দেশ করা এবং আরেক অর্থ হচ্ছে কার্যতঃ পরিচালনা করা । প্রথমোক্ত ধরনের ওয়াহী - যাকে কোরআন মজীদের ভাষায় ও পারিভাষিক অর্থে উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াহী বলা হয় তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাবের আয়াত এবং দ্বিতীয়োক্ত ধরনের ওয়াহী - যাকে কোরআন মজীদের ভাষায় ওয়াহী ও পারিভাষিক অর্থে ইলহাম বলা হয় তা আল্লাহর কিতাবের আয়াত নয় । বরং এ হচ্ছে আয়াত থেকে সঠিক তাৎপর্য গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তব প্রয়োগের জন্য পরোক্ষ ঐশী পথনির্দেশ । আল্লাহ্ তা আলা তাঁর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামগণ সম্পর্কে আমরিনা (আমার আদেশ) বলতে একেই বুঝিয়েছেন । এ ছাড়া এ থেকে ভিন্ন কোনো তাৎপর্য গ্রহণের সুযোগ নেই ।

৫. অনেক লোকের ভ্রান্ত ধারণার বরখেলাফে নবী-রাসূলগণ ,নিষ্পাপ ইমামগণ ও অপর কতক খাছ্ব বান্দাহর বিষয়টি যে আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো শুধু তা-ই নয় ,এমনকি তাঁদের নাম-ও পূর্ব থেকে নির্ধারিত ছিলো । কোরআন মজীদে হযরত ইসমাঈল ,হযরত ইসহাক ,হযরত ইয়াকূব ,হযরত মূসা ,হযরত ঈসা ও হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ.)-এর নবুওয়াত সম্পর্কে তাঁদের জন্মের আগেই নামোল্লেখ সহ সুসংবাদ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । তেমনি হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর নামও পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিলো । কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে যে ,হযরত ঈসা (আ.) তাঁর আহমাদ নাম উল্লেখ করে তাঁর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন (সূরা আছ্ব-ছ্বাফ্ : ৬) । এছাড়া ইসলামের সকল মাযহাব ও ফির্কাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হাদীছ অনুযায়ী ,হযরত আদম (আ.) আল্লাহ্ তা আলার আরশে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের চার পবিত্র ব্যক্তিত্বের নূরানী রূপ ও নাম দেখতে পান এবং তাঁদেরকে উসিলাহ্ করে আল্লাহ্ তা আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । এ বিষয়টি ইয়াহূদীদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ ইদরীস (আ.)-এর কিতাব -এও উল্লেখ করা হয়েছে ।

৬ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ,ব্যাপক মুসলমানদের মধ্যে এরূপ আক্বীদাহ্ রয়েছে যে ,হযরত আদম (আ.)-এর বংশে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যতো মানুষের আগমন ঘটবে তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই তাদের সকলের নাফ্স্ (যদিও ভুল করে বলা হয় রূহ্ )সৃষ্টি করা হয় । কিন্তু এটি ভ্রান্ত অদৃষ্টবাদী আক্বীদাহ্ থেকে সৃষ্ট একটি কল্পকাহিনী বৈ নয় - যার পিছনে কোনো অকাট্য দলীল নেই । আর এ কল্পকাহিনীকে যথার্থতা প্রদানের লক্ষ্যে কোরআন মজীদের সেই আয়াতের (সূরা আল্-আ রাফ্ : ১৭২) ভ্রান্ত ব্যাখ্যা করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে ,আল্লাহ্ তা আলার প্রশ্ন الست بربکم (আমি কি তোমাদের রব নই ?)-এর জবাব দেয়া হয়েছিলো : بلا হচ্ছেন (অবশ্যই) । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিলো হযরত আদম (আ.)-এর ভবিষ্যত বংশধরদের থেকে নয় ,বরং তাঁর সন্তানদের ( بنی آدم ) বংশধরদের ( من ظهورهم ذریتهم ) তথা হযরত আদম (আ.)-এর সন্তানদের সন্তান ও নাতি-নাত্নীদের কাছ থেকে । অর্থাৎ তা এ দুনিয়ার বুকেই সংঘটিত হয়েছিলো ।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে মনে করি যে ,অদৃষ্টবাদীদের আক্বীদাহ্ অনুযায়ী আল্লাহ্ তা আলা যদি সকল মানুষের সৃষ্টি ,তাদের জন্ম- মৃত্যু ও ভালো-মন্দ সহ সব কিছুই আগেই নির্ধারিত করে রেখে থাকবেন তাহলে সে সবের ঘটা তো অনিবার্য হয়ে যায় এবং তাহলে লোকদের আমলের জন্য পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা তথা দ্বীন ও শারী আত্ অযৌক্তিক ও অর্থহীন হয়ে যায় ,শুধু তা-ই নয় ,বরং সব একবারে নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার ফলে সব সৃষ্টি অনিবার্য হয়ে যাওয়ায় অতঃপর আল্লাহ্ তা আলার স্রষ্টা -গুণ আর অনন্ত কালের জন্য অব্যাহত থাকে না । [আমি আমার অপ্রকাশিত গ্রন্থ অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ।]

৭. এ ধরনের রাজনৈতিক মিথ্যাচারের দৃষ্টান্ত ইসলামের ইতিহাসে আরো অনেক আছে । হযরত ইমাম হোসেন (আ.) কে ক্ষমতালোভী বলে প্রচার করা হয়েছিলো ,আর হযরত আলী (আ.) যখন কূফাহর মসজিদে ঘাতকের তলোয়ারের আঘাতে আহত হয়ে পরে শাহাদাত বরণ করেন সে খবর দামেশকে পৌঁছলে অনেক লোক বিস্মিত হয়ে বলেছিলো : আলী মসজিদে গিয়েছিলো কী জন্য ?!সে কি নামাযও পড়তো নাকি ?!

৮. গ্রন্থকারের বাল্যকালে শোনা একটি ঘটনার দৃষ্টান্ত দেয়া হলে বিষয়টি বুঝতে পারা সহজতর হবে বলে মনে করি । ঘটনাটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সংক্ষেপে তা হলো : দু জন (বা তিনজন) মুসলমান (!) চোর একজন হিন্দুর ঘরে সিঁদেল চুরি করে বিভিন্ন মালামাল বাইরে এনে এরপর হাঁড়িপাতিল নেয়ার জন্য রান্নাঘরে প্রবেশ করে । সেখানে একটি পাত্রে তৈরী রুটি ও একটি পাতিলে রান্না করা মাংস পেয়ে তাকে পাঠার মাংস মনে করে তারা রুটি ও মাংস খেতে শুরু করে । এক পর্যায়ে মাংসের ভিতর কাছিমের পা আবিষ্কৃত হলে তাদের বমি শুরু হয়ে যায় এবং পেট পুরোপুরি খালি হয়ে যাবার পরেও বমির ভাব বন্ধ হয় না ,বরং নাড়িভুঁড়িও বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় । এমনটা কেন হলো ?চুরি করে অন্যের সম্পদ ভোগ করা এবং চুরি করে অন্যের খাবার খাওয়া হারাম জানা সত্ত্বেও তাদের জ্ঞান ও ঈমান তাদেরকে চুরি থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি ,কারণ ,তাদের সে ঈমান ছিলো অগভীর । কিন্তু কাছিম হারাম হবার ব্যাপারে তাদের জ্ঞান ও ঈমান তাদের সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো । এ কারণে তাদের পাকস্থলী কাছিমকে কাছিম বলে জানার পরে আর তার মাংসকে গ্রহণ করতে রাযী হয় নি ,যদিও পাঠা বলে জানা অবস্থায় তা গ্রহণ করতে আপত্তি করে নি । অথচ ইসলামী শারী আতে যা কিছু খাওয়া হারাম করা হয়েছে জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিমাণে তা খাওয়ার অনুমতি আছে এবং তাতে গুনাহ্ হবে না ;জীবন বাঁচানোর জন্যও চুরি করে গরুর গোশত খাওয়ার তুলনায় ইঁদুর-বিড়ালের মাংস খাওয়া অপেক্ষাকৃত উত্তম ,কারণ ,প্রথম ক্ষেত্রে কম হলেও গুনাহ্ হবে ,কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে গুনাহ্ হবে না । উপরোক্ত ঘটনায় কাছিম হারাম হওয়ার জ্ঞান ও ঈমান যেভাবে চোরদের সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো ,একইভাবে আল্লাহ্ তা আলার যে কোনো নাফরমানী তথা যে কোনো গুনাহর কাজ সংক্রান্ত জ্ঞান ও ঈমান মা ছ্বূম ব্যক্তিদের সত্তার অংশে পরিণত হয়ে যায় ।

৯. ইমাম আবু হানীফাহর মূল নাম নু মান্ বিন্ ছাবেত ।

১০. বিশেষ করে হযরত ইমাম আবু হানীফাহকে কারাগারে নিক্ষেপ করে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় । অন্যদিকে ,ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে ,হযরত ইমাম মালেককে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় ।

১১. এ সব পার্থক্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন তালাক্বকে চূড়ান্ত তালাক্ব বলে গণ্যকরণ অন্যতম ,অথচ মশহূর এই যে ,হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহ্ঃ) একে এক তালাক বলে গণ্য করতেন । স্মর্তব্য ,ইমাম আবু হানীফাহর নামে হানাফী মায্হাব্ প্রবর্তন করা হলেও এ মায্হাবের মূল নায়ক ছিলেন ক্বাযী আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ বিন্ হাসান্ শায়বানী । স্বয়ং ইমাম আবু হানীফাহর ফিক্বাহ্ কী ছিলো তা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেই জানা যায় না । অনেকের ধারণা ,ক্বাযীর চাকরি গ্রহণ না করার কারণে নয় ,বরং হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) কে ইমাম হিসেবে স্বীকার করার কারণেই তাঁকে কারারুদ্ধ ও হত্যা করা হয় ।

১২. বলা বাহুল্য যে ,এ বিশেষণটিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় । কারণ ,বিচারবুদ্ধির অকাট্য রায় অনুযায়ী বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে স্তরসংখ্যা যতো বেশী হবে তথ্যবিকৃতির আশঙ্কাও ততো বেশী থাকে এবং স্তরসংখ্যা যতো কম হবে নির্ভরযোগ্যতার সম্ভাবনাও ততো বেশী হবে । এ কারণেই সুন্নী ধারার হাদীছ-গ্রন্থাবলীর মধ্যে হযরত ইমাম মালেক কর্তক সংকলিতৃ মুওয়াত্বত্বা য় ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্বলতার আশঙ্কা কম ছিলো । [তাই শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ দেহলাভী মুওয়াত্বতা কে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য হাদীছ-গ্রন্থ বলে গণ্য করতেন ।] কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুওয়াত্বতা কে ছ্বহীহ নয় বলে জনমনে ধারণা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরবর্তী কালে ছয়টি হাদীছ- সংকলনকে ছ্বিহাহ্ সিত্তাহ্ (ছয়টি ছ্বহীহ্) বলে চিহ্নিত করা হয় ,যদিও সেগুলো মুওয়াত্বতা সংকলনের শতাব্দী কালেরও বেশী পরে সংকলিত হয় ।

১৩. এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে ,উমাইয়াহ্ ও আব্বাসী যুগে অসংখ্য জাল হাদীছ রচিত হওয়া এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওফাতের শতাব্দীকালেরও বেশী সময় পরে অনেকগুলো স্তরের নামে বর্ণিত খবরে ওয়াহেদ্ জাল ও ছ্বহীহ্ হাদীছের মধ্যে নিশ্চিতভাবে পার্থক্য করতে পারা অসম্ভব না হলেও প্রায় অসম্ভব ছিলো ,বিশেষ করে হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ তা অসম্ভব মনে করতেন বলেই তা গ্রহণ করেন নি । এ থেকে আরো শতাব্দীকাল পরে সংগৃহীত হাদীছ সমূহের অবস্থা অনুমান করা যেতে পারে । বস্তুতঃ মুসলমানদের মধ্যে মাযহাবী বিষয়াদির ক্ষেত্রে মতপার্থক্যের সিংহ ভাগের জন্যই জাল হাদীছ দায়ী ।

১৪. এ প্রসঙ্গে পুনরায় উল্লেখ করতে হয় যে ,খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছকে চোখ বুঁজে প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয় ,বরং ইসলামের চারটি অকাট্য জ্ঞানসূত্র গ্রহণের পরে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সে সবের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়ার শর্তে খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছ গ্রহণ করা যেতে পারে । তবে এটা অনস্বীকার্য যে ,চার অকাট্য জ্ঞানসূত্র গ্রহণ করার পর আক্বাএদের শাখা-প্রশাখা এবং ফরয ও হারাম সহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই জবাব বিহীন থাকে না ;কেবল কতক গৌণ ও খুটিনাটি (মুস্তাহাব্ ,মাকরূহ্ ও প্রায়োগিক) বিষয় অবশিষ্ট থাকে । আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে ,আজকের দিনে উক্ত চার জ্ঞানসূত্রের ব্যবহার ও তার ভিত্তিতে খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছ পরীক্ষা করা যতোখানি সহজ তৎকালে তা অতো সহজ ছিলো না ।এ প্রসঙ্গেই আরো উল্লেখ করতে হয় যে ,অনেক পরবর্তীকালে আহলে সুন্নাতের ধারাবাহিকতায় উদ্ভূত আহলে হাদীছ নামক ফির্কাহর অনুসারীদের অনেকে হানাফীদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন যে ,তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কথা মানে না ,আবু হানীফাহর কথা মানে । অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো ,রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কথা বলে দাবীকৃত কথা ও প্রকৃতই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কথা কখনোই এক নয় এবং ইমাম বুখারী সহ হাদীছ সংকলকগণের বিচারক্ষমতার ওপরে অন্ধভাবে আস্থা পোষণের পক্ষে কোনো দলীল নেই ,বিশেষ করে তাঁরা যখন না মা ছ্বূম্ ছিলেন ,না অকাট্যভাবে ঐশী ইলহামের অধিকারী ছিলেন ,না রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকটবর্তী কালের ছিলেন ,বরং তাঁদেরকে হাদীছের ব্যাপারে অনেকগুলো স্তরের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিলো যেগুলোর গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে তাঁদের পক্ষে শতকরা একশ ভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ছিলো না ।

১৫.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন ,আকরাম (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ

আল্লাহ্ চিরসতেজ করে রাখুন (তাঁর) সেই বান্দাহকে যে আমার কথা শুনলো ,অতঃপর তা সংরক্ষণ করে রাখলো ও স্মরণ রাখলো এবং তা যেভাবে শুনলো হুবহু সেভাবেই (অন্যের কাছে) পৌঁছে দিলো ;আর অনেক সময় এমন হয় যে , (পরোক্ষভাবে) যার কাছে তা পৌঁছেছে সে তা (আমার কাছ থেকে) শ্রবণকারীর তুলনায় উত্তমরূপে গ্রহণ করেছে । (আবু দাউদ ;তিরমিযী)

১৬. বাংলাদেশে (এবং হয়তো আরো কোথাও কোথাও) অনেক লোক রাগের মাথায় স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক্ব দেয়ার পর জীবনের প্রয়োজনে ,বিশেষতঃ সন্তানদের কারণে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে হীলা র (শব্দটি আরবী হলেও ফার্সী ভাষায় প্রতারণা অর্থে ব্যবহৃত হয়) আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে । যেহেতু চূড়ান্ত তালাক্বের পর তালাক্বপ্রাপ্তা স্ত্রী অন্য কোনো পুরুষের সাথে স্থায়ীভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার ও সে স্বামীর মৃত্যু ঘটা বা সে স্বামী কর্তৃক তালাক্বপ্রাপ্তা হওয়ার পূর্বে প্রথম স্বামীর জন্য তাকে বিবাহ করার সুযোগ নেই এবং যেহেতু নতুন স্বামীর মৃত্যু ঘটা বা তার পক্ষ থেকে ঐ স্ত্রীকে তালাক্ব দেয়ার কোনোই নিশ্চয়তা থাকে না সেহেতু এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে আপোসে কোনো ব্যক্তিকে এ শর্তে ঐ নারীকে বিবাহ করার জন্য রাযী করানো হয় যে ,বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী মাত্র এক রাতের জন্য একত্রবাস করার পরই নতুন স্বামী তাকে তালাক্ব দেবে । বলা বাহুল্য যে ,এ ধরনের বিবাহ ইসলামের কোনো মাযহাবের দৃষ্টিতেই ছ্বহীহ্ নয় । কারণ ,প্রকাশ্য বা গোপন যে কোনোভাবেই হোক না কেন তালাক্ব দেয়ার পূর্বশর্ত বিশিষ্ট বিবাহ ইসলামসম্মত কোনো বিবাহের আওতায় পড়ে না । এ ধরনের বিবাহ না স্থায়ী বিবাহ ,না অস্থায়ী বিবাহ । ইসলামের সকল ফির্কাহ্ ও মাযহাবের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে তালাক্বপ্রাপ্তা নারী কেবল স্থায়ী বিবাহের পরেই এ স্বামীর মৃত্যু বা তালাক্বের পরে পূর্ববর্তী স্বামীর সাথে পুনর্বিবাহিত হতে পারবে । এমতাবস্থায় স্থায়ী বিবাহ হিসেবে পাতানো এই তথাকথিত বিবাহ সুস্পষ্টতঃই ব্যভিচার বৈ নয় । কারণ ,যেহেতু অস্থায়ী বিবাহের ক্ষেত্রে অস্থায়ী হিসেবেই ও মেয়াদ নির্দিষ্ট করে আক্বদ্ পড়ানো হয় এবং মেয়াদশেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিবাহের সমাপ্তি ঘটে ;তালাক্ব দেয়ার প্রয়োজন হয় না সেহেতু এ ধরনের পাতানো বিবাহ অস্থায়ী বিবাহ ও নয় । অন্যদিকে যারা এ ধরনের হীলা (প্রতারণা)র ঘৃণ্য নাজায়েয কাজ হওয়ার কারণে এর আশ্রয় গ্রহণ করে না প্রচলিত ফত্ওয়ার কারণে তারা তালাক্ব দেয়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারে না ,ফলে অনেক সময় তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের ওপর অন্ধকার নেমে আসে - যা আল্লাহ্ তা আলার পছন্দনীয় নয় বলেই তিনি দু -দুই বার তালাক্বের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছেন ।

১৭. উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে ,কোরআন মজীদের আয়াত  إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَس - অবশ্যই মুশরিকরা অপবিত্র । (সূরা আত্- তাওবাহ্ : ২৮) - এ আয়াতের ভিত্তিতে শিয়া মাযহাবের মুজতাহিদগণের বেশীর ভাগেরই ফত্ওয়া হচ্ছে এই যে ,মূলগতভাবে যে খাবার হালাল তা-ও মুশরিকের দ্বারা প্রস্তুত হলে খাওয়া জায়েয নয় । যদিও অতীতের কতক শিয়া  মুজতাহিদ জায়েয বলেছেন ,তবে সাধারণভাবে শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ নাজায়েয হওয়ার ফত্ওয়া অনুযায়ীই আমল করে থাকে । কিন্তু বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ক্বোমের দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্রের অন্যতম শিক্ষক আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মাদ জান্নাতী (রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বনামখ্যাত আয়াতুল্লাহ্ আহমাদ জান্নাতী নন) তাঁর এক গবেষণামূলক প্রবন্ধে এ বিষয়ে শিয়া-সুন্নী উভয় ধারার হাদীছ ও মুজতাহিদগণের ফত্ওয়া পর্যালোচনা করে সুন্নী ফত্ওয়ার অনুরূপ উপসংহারে উপনীত হন যে ,সংশ্লিষ্ট আয়াতে শারীরিক অপবিত্রতার ( نجسة جسمانی ) কথা বলা হয় নি ,বরং আত্মিক অপবিত্রতার ( نجسة روحانی ) কথা বলা হয়েছে ,অতএব ,বাহ্যতঃ নাপাকীর প্রমাণ বা নিদর্শন না থাকলে হালাল খাবার মুশরিকের দ্বারা প্রস্তুত হলেও তা হালাল । প্রবন্ধটি ক্বোমের দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রের মুখপত্র کیهان اندیشه তে প্রকাশিত হয় এবং এর বিরুদ্ধে কোনো মহল থেকেই কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শিত হয় নি ।

১৮. যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুন্নী সমাজে ইজতিহাদের দরযা বন্ধ গণ্য করার কারণে কোনো মুজতাহিদ নেই ,কিন্তু এখানে যা আলোচনা করা হয়েছে কোনো সমাজে তা গ্রহণযোগ্য হিসেবে পরিগণিত হলে ফরযে কেফায়ী হিসেবে অবশ্যই সেখানে ইজতিহাদ শুরু হবে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় হয়তো সেখানে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা বেলায়াতে ফাক্বীহ্ তত্ত্ব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে । অতএব ,সুন্নী সমাজে কোনো শিয়া মুজতাহিদকে এনে শাসনকর্তৃত্ব দিতে হবে বা ইরান থেকে কোনো মুজতাহিদকে ধার করে এনে শাসনকর্তৃত্বে বসাতে হবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই । তার চেয়েও বড় কথা এই যে ,সুন্নী সমাজে ইজতিহাদের ধারা পুনঃপ্রবর্তিত হলে বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে যে শিয়া- সুন্নী বিভক্তি ও ব্যবধান রয়েছে তার পুরোপুরি বিলুপ্তি না ঘটলেও প্রায়বিলুপ্তি ঘটবে । কারণ ,একজন প্রকৃত মুজতাহিদ মাযহাবী সঙ্কীর্ণতার উর্ধে থেকে সত্যকে উদ্ঘাটন করেন এবং তিনি সত্য হিসেবে যে উপসংহারে উপনীত হন তা-ই সমাজের কাছে পেশ করেন ।

সূচীপত্র

রাসূলুল্লাহর ( সা.) আহলে বাইত ও বিবিগণ

কোরআন মজীদে রাসূলুল্লাহর ( সা .) আহলে বাইত ও বিবিগণ ১০

রাসূলুল্লাহর (সা.) আহলে বাইত কারা ? ১৯

বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের জবাব ২৪

ইসলামে আহলে বাইত - এর মর্যাদা ২৯

আদর্শিক ও বংশগত উত্তরাধিকারের অভিন্নতা প্রসঙ্গে ৪৫

সতর্কতার নীতি যা দাবী করে ৫৪

ইতিহাসের পৃষ্ঠা ওল্টানো কেন ৬২

আজকের করণীয় ৬৬

পরিশিষ্ট ৭৬

হযরত ইমাম হোসেনের (আ.) আন্দোলনের  তাৎপর্য ৭৭

কারবালার চেতনা কি বিলুপ্তির পথে ? ৮৬

তথ্যসূত্র ৯২

সূচীপত্র ৯৯

গ্রন্থকার পরিচিতি ১০০

সতর্কতার নীতি যা দাবী করে

কেউ যদি মনে করে যে ,হযরত আলী (আ.) কে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর অব্যবহিত পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করার বিষয়টি আল্লাহ্ তা ‘ আলার পক্ষ থেকে ছিলো না ,বরং রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তা নিজের পক্ষ থেকে করেছিলেন তাহলেও তা মেনে নেয়া উম্মাহর জন্য অপরিহার্য ছিলো । কারণ ,সে ক্ষেত্রে নবী যে তাঁর অনুসারীদের ওপর তাঁদের নিজেদের চেয়েও অধিকতর অধিকার রাখেন (সূরা আল্-আহযাব্ : 6) সে কারণে তাঁর সিদ্ধান্তের কাছে আত্মসমর্পণ করা অপরিহার্য ছিলো । কারণ ,তিনি ( ভাত খাবেন ,নাকি রুটি খাবেন ’ -এ জাতীয় নেহায়েতই পার্থিব মোবাহ্ বিষয়াদি ব্যতীত) স্বীয় দায়িত্ব পালনের সাথে সম্পৃক্ত যে কোনো বিষয়ে আল্লাহ্ তা ‘ আলার প্রত্যক্ষ ওয়াহী ( وحی متلو ) বা পরোক্ষ ওয়াহী ( وحی غیر متلو )-এর ভিত্তিতে ছাড়া কখনো কিছু বলতেন না বা করতেন না । আর বলা বাহুল্য যে ,নেতা বা উত্তরাধিকারী মনোনয়ন একটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ দায়িত্বপূর্ণ কাজ । আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى (

তিনি ( রাসূল ) স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে কোনো কথা বলেন না ;তা ( তিনি যা বলেন ) তো ওয়াহী ছাড়া আর কিছু নয় - যা তাঁকে পরম শক্তিধর শিক্ষা দান করেন । ” (সূরা আন্ - নাজম : 3 - 5 )

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা ‘ আলা মু ’ মিনদেরকে আরো নির্দেশ দিয়েছেন :

) آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا (

আর রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করো এবং তিনি যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো । ” ( সূরা আল - হাশর : 7 )

আর , খোদা না করুন , কেউ যদি মনে করে যে , হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারণ ছাড়াই , বা ( এরূপ নির্ধারণ না থাকার ক্ষেত্রে ) সর্বোচ্চ যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও , কেবল স্বীয় জামাতা হওয়ার কারণেই হযরত আলী ( আ .) কে উম্মাহর জন্য পরবর্তী নেতা ও শাসক মনোনীত করে গেছেন তাহলে রিসালাত সম্পর্কে এরূপ ভ্রান্ত আক্বীদাহ্ পোষণের কারণে তার ঈমানই বিনষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য । কারণ , পক্ষপাতিত্ব অত্যন্ত খারাপ ধরনের একটি বৈশিষ্ট্য হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) সহ সকল নবী - রাসূল ( আ .) ই যা থেকে পুরোপুরি মুক্ত ছিলেন ।

অন্যদিকে কারো কাছে যদি ইখ্লাছ্ব সত্ত্বেও এরূপ মনে হয় যে , হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) গ্বাদীরে খুমের ভাষণে হযরত আলী ( আ .) কে যে উম্মাহর জন্য مولی বলে ঘোষণা করেছেন তাতে তিনি এ শব্দ দ্বারা বন্ধু বুঝাতে চেয়েছেন , সে ক্ষেত্রেও যেহেতু এ শব্দের অন্যতম অর্থ শাসক এবং স্বয়ং হযরত আলী ( আ .) সহ কতক ছ্বাহাবী এ থেকে এই শেষোক্ত অর্থই গ্রহণ করেছিলেন এবং এর ভিত্তিতে খেলাফতকে তাঁর হক বলে গণ্য করতেন সেহেতু ইসলামের সকল মাযহাব ও ফির্কাহর কাছে গৃহীত সতর্কতার নীতি র দাবী অনুযায়ী তাঁকেই খেলাফত প্রদান করা কর্তব্য ছিলো । কারণ , যেহেতু , তাঁদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো অকাট্য দলীল ছিলো না যে , হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) এর দ্বারা বন্ধু বুঝিয়েছেন সেহেতু এতে বন্ধু বুঝানো হলেও হযরত আলী ( আ .) কে খলীফাহ্ করা হলে কোনো সমস্যা ছিলো না , কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ ( সা .) যদি এর দ্বারা শাসক বুঝিয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে তাঁকে শাসকের দায়িত্ব প্রদান না করায় রাসূলুল্লাহ্ ( সা .)- এর সিদ্ধান্ত কার্যকর করা থেকে বিরত থাকা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা আলার সুস্পষ্ট নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে ।

এছাড়া আহলে বাইতের পাপমুক্ততার অকাট্যতার কারণে বিচারবুদ্ধির অকাট্য রায় অনুযায়ী ইসলামের পরবর্তী নেতৃত্ব - কর্তৃত্বও আহলে বাইতের ধারাবাহিকতায় থাকা অপরিহার্য ছিলো । এমনকি নেতৃত্ব - কর্তৃত্ব তাঁদেরকে অর্পণের বিষয়টি কারো কাছে যদি ফরয বলে পরিগণিত না - ও হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রেও সতর্কতার নীতির দাবী অনুযায়ী তা তাঁদেরকে অর্পণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার প্রদান করা জরূরী ছিলো ।

ইতিপূর্বে আমরা ইসলামের চারটি অকাট্য দ্বীনী জ্ঞানসূত্রের কথা উল্লেখ করেছি এবং খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছ সমূহ গ্রহণকে এ চার জ্ঞানসূত্রের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়ার শর্তসাপেক্ষ বলে উল্লেখ করেছি । এর মানে হচ্ছে , খবরে ওয়াহেদ হাদীছ চোখ বুঁজে গ্রহণ করা যাবে না , তেমনি তা চোখ বুঁজে বর্জন করাও যাবে না ; কেবল চারটি অকাট্য সূত্রের কোনোটির সাথে সাংঘর্ষিক হলেই তা বর্জন করা যাবে ।

আমরা যেমন দেখেছি আহলে বাইতের ( চার ব্যক্তিত্বের ) পবিত্রতা ও পাপমুক্ততা এবং নেতৃত্ব - কর্তৃত্বের অধিকার - অন্ততঃ অগ্রাধিকার - কোরআন মজীদ , মুতাওয়াতির হাদীছ ও ( সতর্কতার নীতি সহ ) আক্বলের অকাট্য রায়ের দ্বারা প্রমাণিত । অনুরূপভাবে যেহেতু হযরত আলী ( আ .)- এর মাওলা হবার বিষয়টিও মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত এবং প্রাপ্ত আক্বলী ( বিচারবুদ্ধিজাত ) ও নাক্বলী ( বর্ণিত ) সকল নিদর্শন থেকে এখানে এ পরিভাষাটির নেতৃত্ব ও শাসনকর্তৃত্ব তাৎপর্য প্রমাণিত হয় , সেহেতু অন্ততঃ সতর্কতার নীতির দাবী অনুযায়ী এ তাৎপর্যের ভিত্তিতে আমল করা অপরিহার্য ছিলো ।

এর সাথে যোগ করতে হয় যে , আরো বিভিন্ন হাদীছে , বিশেষ করে আহলে সুন্নাতের ধারাবাহিকতার অনেক হাদীছে হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .)- এর ওফাতের পরে হযরত আলী ( আ .) , হযরত ইমাম হাসান ( আ .) ও হযরত ইমাম হোসেন ( আ .) এবং হযরত ইমাম হোসেন ( আ .)- এর অধস্তন পুরুষ নয়জন পবিত্র ব্যক্তিত্বের নামোল্লেখ সহ পর্যায়ক্রমিক ইমামতের কথা বর্ণিত হয়েছে ।

অনেক হাদীছ বিশেষজ্ঞের মতে এ সব হাদীছের মূল বক্তব্য মুতাওয়াতির পর্যায়ের । অবশ্য এর তাওয়াতুরের বিষয়টি গ্বাদীরে খুমে হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) কর্তৃক হযরত আলী ( আ .) কে উম্মাহর জন্য মাওলা ঘোষণার তাওয়াতুরের ন্যায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নয় । এমতাবস্থায় অপর এগারো জন ব্যক্তিত্বের ইমামত সংক্রান্ত হাদীছ মুতাওয়াতির কিনা এ ব্যাপারে কারো পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলার অবকাশের কথা মাথায় রেখে এ সব হাদীছকে যুক্তির খাতিরে খবরে ওয়াহেদ্ বলে গণ্য করলেও একই বিষয়বস্তুতে এর সাথে সাংঘর্ষিক অনুরূপ পর্যায়ের হাদীছ না থাকায় এর ভিত্তিতে আমল করা অপরিহার্য । অর্থাৎ যেহেতু হযরত রাসূলে আকরাম ( সা .) থেকে অন্য কোনো লোকদের সম্পর্কে তাঁর পরে পর্যায়ক্রমিক ইমামতের কথা বর্ণিত হয় নি সেহেতু সতর্কতার নীতি অনুযায়ী তাঁদের ইমামতের বিষয়টি মেনে নেয়া অপরিহার্য ।

আহলে সুন্নাতের ধারাবাহিকতার শীর্ষস্থানীয় অনেক দ্বীনী ব্যক্তিত্বই আহলে বাইতের ধারাবাহিকতার উক্ত বারো জন পবিত্র ব্যক্তিত্বের ইমামতকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে না নিলেও তাঁদের অনেকের উক্তি ও আচরণে আমরা দেখতে পাই যে , তাঁরা উক্ত ব্যক্তিত্ববর্গকে উম্মাহর মধ্যে বিশিষ্ট দ্বীনী মর্যাদার অধিকারী বলে গণ্য করতেন । তাঁরা কখনোই উক্ত বারো জন ব্যক্তিত্বের সমালোচনা করতেন না এবং তাঁদের নিষ্পাপত্ব ( عصمة ) কে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও কখনোই বলেন নি যে , তাঁরা মা ছুম ছিলেন না বা আর দশজন দ্বীনী বুযুর্গ ব্যক্তিত্বের অনুরূপ ছিলেন । এর ফলে সামগ্রিকভাবে আহলে সুন্নাতের অনুসারীদের কাছে তাঁরা অনুরূপ মর্যাদা লাভ করেছেন ।

বিশেষ করে আমরা হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহ্ঃ) কে - যার নামে পরবর্তীকালে হানাফী মাযহাব্ তৈরী ও প্রবর্তন করা হয় - আহলে বাইতের ধারাবাহিকতার ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (আ.)-এর নিকট দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করতে ও তাঁর ভূয়সীপ্রশংসা করতে দেখি । হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) সম্পর্কে হযরত ইমাম আবু হানীফাহর একটি উক্তি খুবই বিখ্যাত ,তা হচ্ছে ,তিনি বলেন : আমি জাফর ইবনে মুহাম্মাদের চেয়ে বড় কোনো আলেমের সাক্ষাৎ পাই নি । ” এছাড়াও তিনি যে ইমাম সাদেক (আ.)- এর কাছে দুই বছর দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেন সে সম্পর্কে তিনি বলেন : ঐ দুই বছর না হলে নু মান 9 ধ্বংস হয়ে যেতো । এছাড়া হযরত ইমাম মালেকও ইমাম সাদেক (আ.)-এর কাছে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেন এবং তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন ।

ইমাম আবু হানীফাহ্ ও ইমাম মালেক যে আহলে বাইত-কে কোন্ দৃষ্টিতে দেখতেন তা তাঁদের আরো কোনো কোনো আচরণ থেকে প্রকাশ পায় । তা হচ্ছে ,এমনকি আহলে বাইতের ধারাবাহিকতার যে সব বুযুর্গ ব্যক্তিত্বের জন্য উক্ত বারো জন ব্যক্তিত্বের ন্যায় আল্লাহ্ তা ‘ আলার পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম হওয়া সংক্রান্ত হাদীছের বর্ণনা বিদ্যমান নেই কেবল আহলে বাইতের ধারাবাহিকতার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে তাঁরা অন্যদের তুলনায় তাঁদেরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করতেন ।

উদাহরণস্বরূপ ,উমাইয়াহ্ শাসনামলের শেষ দিকে হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর পুত্র ও হযরত ইমাম বাক্বের (আ.)-এর ভ্রাতা হযরত ইমাম যায়দ (রহ্ঃ) স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলে হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ তাঁকে সত্যিকারের ইমাম ’ (ইমামে হাক্ব) বলে ঘোষণা করেন এবং এ জিহাদে অংশগ্রহণের জন্যে লোকদেরকে উৎসাহিত করেন । এছাড়া তিনি এ জিহাদে হযরত ইমাম যায়দকে দশ হাজার দেরহাম আর্থিক সাহায্য দেন এবং বলেন যে ,তাঁর নিকট লোকদের বহু আমানত না থাকলে তিনি এ জিহাদে সশরীরে অংশগ্রহণ করতেন । এছাড়া পরবর্তীকালে হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর বংশধর হযরত ইমাম মুহাম্মাদ নাফ্সে যাকীয়্যাহ্ (রহ্ঃ) ও হযরত ইমাম ইব্রাহীম্ (রহ্ঃ) - দুই ভাই - আব্বাসী স্বৈরশাসক মানছুরের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলে হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ এ জিহাদের পক্ষে ফত্ওয়া দেন ও এতে অংশগ্রহণের জন্যে লোকদেরকে উৎসাহিত করেন । বিশেষ করে মানছুরের একজন সেনাপতি পর্যন্ত হযরত ইমাম আবু হানীফাহর নির্দেশে উক্ত ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানান ।

অনুরূপভাবে হযরত ইমাম মালেকও আব্বাসী স্বৈরশাসক মানছুরের বিরুদ্ধে হযরত ইমাম মুহাম্মাদ নাফ্সে যাকীয়্যাহ্ ঘোষিত জিহাদকে সমর্থন করে ফত্ওয়া দেন । শুধু তা-ই নয় ,স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এ জিহাদের যথার্থতা জানা সত্ত্বেও মানছুরের অনুকূলে ইতিপূর্বে কৃত বাই ‘ আত্ ভঙ্গ করা জায়েয হবে কিনা এ ব্যাপারে অনেকের মনে সংশয় দেখা দিলে তাঁরা যখন হযরত ইমাম মালেকের মত জানতে চান তখন তিনি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত ফয়ছ্বালার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন : যাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য করা হয়েছে তার জন্যে অঙ্গীকার নেই । ” অর্থাৎ বলপ্রয়োগ বা চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে যে বাই ‘ আত্ আদায় করা হয়েছে অথবা ভয়ের কারণে লোকেরা যে বাই ‘ আত করেছে তা আদৌ বাই ‘ আত নয় ,অতএব ,তা রক্ষা করা অপরিহার্য নয় এবং তা ভঙ্গ করলে গুনাহ্ হবে না । তাঁর এ ফত্ওয়ার ভিত্তিতে বহু লোক মানছুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ইমাম নাফ্সে যাকীয়্যাহ্ (রহ্ঃ)-এর সাথে জিহাদে যোগদান করেন । এ ফত্ওয়া দেয়ার কারণে ইমাম মালেককে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁর শরীর থেকে পোশাক খুলে নিয়ে তাঁকে চাবূক মারা হয় । এর ফলে কাঁধ থেকে তাঁর হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । [অবশ্য পরে তিনি (হয়তোবা জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে) মানছুরের সাথে আপোস করেন ও তার সাথে সহযোগিতা করেন । ]

এ থেকে সুস্পষ্ট যে ,হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) ক্ষমতাসীন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিলে ও হুকুমতের ওপর স্বীয় দাবী উপস্থাপন করলে হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ ও হযরতে ইমাম মালেক একইভাবে তা সমর্থন করতেন ,যদিও হযরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর পরবর্তী আহলে বাইতের ইমামগণ হুকুমতের ওপর স্বীয় অধিকারের প্রবক্তা হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় বাছ্বীরাত্ (বিচক্ষণতা) দ্বারা পর্যালোচনা করে নিজ নিজ সমকালীন পরিস্থিতিকে বিপ্লবের পতাকা উত্তোলনের জন্য উপযোগী মনে করেন নি এবং সশস্ত্র যুদ্ধকে তখনকার পরিবেশে ইসলামের স্বার্থের জন্য সহায়ক গণ্য করেন নি বলে জিহাদ ঘোষণা করেন নি ।

হযরত ইমাম শাফে ‘ ঈ ও হযরত ইমাম আহমাদ ইব্নে হাম্বালও আহলে বাইতকে ভালোবাসতেন এবং তাঁদের সাথে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক রাখতেন । আর এ জন্য তাঁদের উভয়কেই আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের পক্ষ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা পোষণের কারণে ইমাম শাফে ‘ ঈকে রাফেযী ” ( শিয়া ’ বুঝাতে গালি) বলে অভিহিত করা হয় এবং ইমাম আহমাদ ইব্নে হাম্বালের গৃহে তল্লাশী চালানো হয় ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ,হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ সহ আহলে সুন্নাতের চার ইমাম ও শীর্ষস্থানীয় দ্বীনী মনীষীগণের অনেকেই আহলে বাইত (আ.) সম্পর্কে ,বিশেষ করে আহলে বাইতের ইমামগণ সম্পর্কে স্বীয় কথা ও কাজে যে সম্মান ,সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধার পরিচয় দিয়েছেন তা কী প্রমাণ করে ?তাঁরা কি সংশ্লিষ্ট হাদীছগুলোর ভিত্তিতে তাঁদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম ’ বলে গণ্য করতেন ,কিন্তু সমকালীন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করাকেই নিজেদের জন্য কল্যাণকর বিবেচনা করেছিলেন ?নাকি এ ব্যাপারে অকাট্য আক্বীদায় উপনীত হতে না পারলেও এমনটি হবার সম্ভাবনায় সতর্কতার নীতি ’ অনুযায়ী তাঁদের প্রতি সম্মান ,সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধার পরিচয় দিয়েছিলেন ?

এ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন ।

প্রথমতঃ বিশেষ করে হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ সহ আহলে সুন্নাতের ইমামগণ ফিক্বহী বিষয়াদিতে স্বীয় মতামত ব্যক্ত করলেও বর্তমানে মাযহাব্ বলতে যা বুঝায় সেভাবে তাঁরা নিজেরা কোনো মাযহাবের প্রচলন করে যান নি । বরং পরবর্তীকালে তাঁদের নামে মাযহাবের প্রচলন করা হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে মুসলমানদের বিভক্ত করা হয়েছে ।

দ্বিতীয়তঃ উক্ত ইমামগণ তাঁদের সমসাময়িক রাজতান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকারগুলোর বিরোধী ছিলেন এবং তাদের সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানানোর ও আহলে বাইতের সাথে সম্পর্কের কারণে তাঁদের কাউকে কাউকে নির্যাতনের শিকার হতে হয় 10 এবং এ কারণে তাঁদের কেউ কেউ ,তাঁদের বিবেচনায় ,ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ,সরকারের সাথে বাহ্যতঃ সমঝোতার নীতি অনুসরণ করেন । কিন্তু তাঁদের পরবর্তীকালে তাঁদের শিষ্য - শাগরিদগণ তাঁদের নামে বিভিন্ন মাযহাবের প্রচলন করে স্বৈরাচারী সরকারগুলোর সাথে সার্বিক সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করেন । এর ফলে ,আহলে বাইতের ইমামগণের সাথে ক্ষমতাসীনদের দুশমনীর প্রেক্ষাপটে দলীয় অনুভূতি ও শিয়া - সুন্নী পার্থক্য ক ্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

তৃতীয়তঃ বহুলাংশে সরকারের সাথে সুন্নী মায্হাব্গুলোর ইমাম - পরবর্তী নেতৃবৃন্দের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রভাবেই পরবর্তীকালে ফিক্ব্হী ক্ষেত্রে আহলে বাইতের সাথে এ সব মায্হাবের পার্থক্য ব্যাপকতর হয়ে ওঠে । 11

চতুর্থতঃ একান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আহলে বাইতের ইমামগণের অনুসারীদেরকে সুন্নাতে রাসূল ( সা .)- এর অনুসারী নয় বলে জনমনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আহলে সুন্নাত্ ওয়াল্ জামা আত্ নাম তৈরী করে সে নামে চার মায্হাবকে অভিহিত করা হয় ।

পঞ্চমতঃ ছ্বিহাহ্ সিত্তাহ্ 12 নামে পরিচিত হাদীছ - গ্রন্থ সমূহ সহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য হাদীছ - গ্রন্থ হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ ও হযরত ইমাম মালেকের শতাব্দীকাল পরে বা তারও বেশী পরে সংকলিত হলেও সেগুলোকে গ্রহণ করার ফলে শিয়া - সুন্নী ব্যবধান আরো বেশী ব্যাপকতা লাভ করে । বিশেষ করে হযরত ইমাম আবু হানীফাহ্ যেখানে ফিক্বহী ব্যাপারে খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছকে নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করতেন না 13 ,সেখানে পরবর্তীকালে খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছ ব্যাপকভাবে গ্রহণের ফলে বিশেষ করে হানাফী মাযহাবের চেহারা অনেক বেশী পরিবতিরত হয়ে যায় এবং বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে পার্থক্য তীব্রতর হয়ে ওঠে । 14


7

8

9

10

11

12