কোরআন মজীদে রাসূলুল্লাহর
(
সা
.)
আহলে
বাইত ও
বিবিগণ
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কোরআন মজীদের সূরা আল্-
আহযাবের ২৮ নং আয়াত থেকে ৩৩ নং আয়াতের প্রথমাংশ পর্যন্ত
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বিবিগণ সম্পর্কে নির্দেশাদি
দিয়েছেন এবং এরপর ৩৩ নং আয়াতের দ্বিতীয়াংশে আহলে
বাইতের কথা উল্লেখ করেছেন
।
আয়াতগুলো হচ্ছে :
)
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا (২৮) وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ فَإِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا (২৯) يَانِسَاءَ النَّبِيِّ مَنْ يَأْتِ مِنْكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا
(
)
وَمَنْ يَقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُؤْتِهَا أَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيمًا
)
)
يَانِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا
(
)
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“
হে নবী! আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন
,তোমরা যদি পার্থিব
জীবন ও তার সৌন্দর্য (ভোগ-বিলাসিতা) কামনা কর তাহলে এসো
,আমি তোমাদেরকে ভোগ্য উপকরণাদির ব্যবস্থা করে দেই এবং
তোমাদেরকে উত্তমভাবে বিদায় করে দেই
।
আর তোমরা যদি আল্লাহ্
ও তাঁর রাসূলকে এবং পরকালের গৃহকে কামনা কর তাহলে অবশ্যই
(জেনো যে
,)আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যকার উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীদের
জন্য মহাপুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন
।
হে নবী-পত্নীগণ! তোমাদের
মধ্য থেকে যে প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করবে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া
হবে এবং এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ
।
আর তোমাদের মধ্য থেকে
যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে এবং নেক আমল সম্পাদন
করবে সে জন্য তাকে আমি দুই বার পুরষ্কার প্রদান করবো এবং আমি
তার জন্য সম্মানজনক রিয্ক্ব প্রস্তুত করে রেখেছি
।
হে নবী-পত্নীগণ!
তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও
; (অতএব
,)তোমরা যদি
তাক্বওয়া অবলম্বন করে থাকো তাহলে তোমরা (পরপুরুষদের সাথে)
তোমাদের কথায় কোমলতার (ও আকর্ষণীয় ভঙ্গির) আশ্রয় নিয়ো না
,কারণ
,তাহলে যার অন্তরে ব্যধি আছে সে প্রলুব্ধ হবে
।
বরং তোমরা
স্বাভাবিকভাবে কথা বলো
।
আর তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান
করো এবং পূর্বতন জাহেলীয়াত-যুগের সাজসজ্জা প্রদর্শনীর ন্যায়
সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না
।
আর তোমরা নামায কায়েম
রাখো
,যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য
করো
।
হে আহলে বাইত! আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদের থেকে অপকৃষ্টতা
অপসারিত করতে এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতপবিত্র করতে
চান
।
”
এখানে সর্বপ্রথম লক্ষণীয় বিষয় এই যে
,৩৩ নং
আয়াতের শেষাংশে আহলে বাইতকে সম্বোধন করে কথা বলার
পূর্ব পর্যন্ত আলোচনা ও নির্দেশাদির লক্ষ্য হচ্ছেন হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর বিবিগণ
।
প্রথমে নবী করীম (সা.) কে সম্বোধন
করে তাঁর
‘
স্ত্রীগণকে
’
বলার জন্য তাঁকে নির্দেশ দান
,এরপর সরাসরি
তাঁদেরকে
‘
হে নবী-পত্নীগণ!
’
বলে সম্বোধন এবং তাঁদেরকে বুঝাতে
کنتنّ، تردن، منکنّ
ইত্যাদিতে বহুবচনে স্ত্রীবাচক সংযুক্ত সর্বনাম
ব্যবহার থেকে এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহের অবকাশ থাকছে না
।
কিন্তু ৩৩ নং আয়াতের শেষাংশে আহলে বাইতকে সম্বোধন করে কথা
বলার ক্ষেত্রে
عَنْكُمُ
ও
يُطَهِّرَكُمْ
বলা হয়েছে
-যাতে বহুবচনে
পুরুষবাচক সংযুক্ত সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে
।
আর আরবী ভাষায়
বহুবচনে দু
’
টি ক্ষেত্রে পুরুষবাচক সর্বনাম ব্যবহার করা হয় : শুধু পুরুষ
বুঝাতে এবং নারী ও পুরুষ একত্রে বুঝাতে
।
অতএব
,এ থেকে সুস্পষ্ট যে
,এখানে
“
আহলে বাইত
”
কথাটি
আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয় নি
।
কারণ
,যেহেতু হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর পরিবারে কেবল তাঁর স্ত্রীগণ ছিলেন
;কোনো
নাবালেগ (এমনকি সাবালেগও) পুরুষ সন্তান ছিলেন না
,সেহেতু
“
আহলে বাইত
”
কথাটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহার করা হলে আগের
মতোই বহুবচনে স্ত্রীবাচক সম্বোধন ব্যবহার করা হতো
।
অতএব
,এতে
সন্দেহের অবকাশ নেই যে
,এখানে কথাটি বিশেষ পারিভাষিক অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে
,আর সে অর্থে নারী ও পুরুষ উভয়ই হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর আহলে বাইত-এর মধ্যে শামিল রয়েছেন
।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে এই যে
,আহলে বাইত-এ শামিলকৃত পুরুষ
সদস্য কে বা কারা এবং নারী সদস্যই বা কে অথবা কারা
?এ নারী
সদস্য কি হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বিবিগণ
,নাকি অন্য
কেউ
,নাকি তাঁর বিবিগণের সাথে অন্য কেউ
?
এখানে আমাদেরকে আয়াতের বক্তব্যের ও তার বাচনভঙ্গির
প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে
।
উল্লিখিত আয়াত সমূহে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর
বিবিগণ সম্পর্কে এবং তাঁদেরকে সম্বোধন করে যে সব কথা বলা
হয়েছে তাতে তাঁদেরকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে
,বরং চরম
পত্র দেয়া হয়েছে
,কয়েকটি বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে এবং কয়েকটি
বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়েছে
।
চরম পত্রের বিষয় হচ্ছে এই যে
,তাঁরা
পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য (ভোগ-বিলাসিতা) কামনা করলে
তাঁদেরকে বিদায় করে দেয়া হবে
।
এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে
,তাঁরা
পার্থিব উপায়-উপকরণাদির জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর
ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন
।
এছাড়া তাঁদেরকে পরবর্তী বক্তব্যে যে সব বিষয়ে সতর্ক করা
হয়েছে ও নিষেধ করা হয়েছে সে সব বিষয়ে কোরআন মজীদের
অন্যত্র সাধারণভাবে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল মু
’
মিনা
নারীকেই সতর্ক ও নিষেধ করা হয়েছে
,কিন্তু এ সত্ত্বেও নবী-
পত্নীগণকে স্বতন্ত্রভাবে সতর্কীকরণ ও নিষেধকরণ থেকে এ ইঙ্গিত
মিলে যে
,অন্য মু
’
মিনা নারীদের মতোই তাঁদেরও ঐ সব বিষয় থেকে
মুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত নয়
,কিন্তু রাসূলের (সা.)-এর বিবি
হিসেবে তাঁর মর্যাদার সাথে জড়িত বিধায় তাঁদের এ সব থেকে মুক্ত
থাকা অনেক বেশী প্রয়োজন এবং এ কারণেই তাঁদেরকে আলাদাভাবে
সতর্ক করা ও নিষেধ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে
।
সুস্পষ্ট যে
,একই
অপরাধ করলে সাধারণ মু
’
মিনা নারীর তুলনায় তাঁদের দ্বিগুণ শাস্তি
দেয়ার ফয়ছ্বালার কারণও এটাই যে
,তাঁদের আচরণের সাথে রাসূলের
(সা.) ব্যক্তিগত মর্যাদা ও আল্লাহর দ্বীনের মর্যাদা জড়িত
।
এখানে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে
,বিদায় করে দেয়ার
হুমকির ক্ষেত্রে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বিবিগণের সকলকে
একত্রে শামিল করা হয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে
,এ ব্যাপারে
দাবী তোলা বা চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাঁরা সকলেই শামিল ছিলেন
।
যদিও
,উল্লেখ না করলে নয় যে
,স্ত্রী বা স্ত্রীগণ স্বামীর কাছে
স্বাভাবিক ভরণ-পোষণ ও ভোগোপকরণ
‘
দাবী
’
করলে
,এবং এমনকি
তার অতিরিক্ত অলঙ্কারাদি ও আরাম-আয়েশের উপকরণাদির জন্য
‘
আবদার
’
করলে তা গুনাহর কাজ নয়
,তেমনি স্বামীর জন্যও স্ত্রীকে বা
স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়া নাজায়েয নয়
।
কিন্তু রাসূলের (সা.) বিবি
হওয়ার মর্যাদার এটাই দাবী ছিলো যে
,তিনি যা কিছু দিতে সক্ষম তার
চেয়ে বেশী দাবী করে (এমনকি বৈধ হলেও) তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করা
হবে না
,কিন্তু তা সত্ত্বেও চাপ সৃষ্টি করা হলে তা আল্লাহ্ তা
‘
আলার
পছন্দনীয় হয় নি
।
কিন্তু গুনাহর জন্য শাস্তির ভয় দেখানো ও নেক আমলের
পুরষ্কারের সুসংবাদের বিষয়গুলোতে তাঁদের সকলকে সম্মিলিতভাবে
শামিল না করে প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক করা হয়েছে ও
সুসংবাদ দেয়া হয়েছে
।
অতঃপর আহলে বাইত সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে :
)
إِنَّمَا وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ
(
“
হে আহলে বাইত! আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদের থেকে অপকৃষ্টতা অপসারিত করতে এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতপবিত্র
করতে চান
।
”
আয়াতের এ অংশে ব্যবহৃত শব্দাবলীর প্রতি সতর্কতার
সাথে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই যে
,এখানে আল্লাহ্
তা
‘
আলা আহলে বাইতকে সম্বোধন করলেও হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর বিবিগণের ন্যায় তাঁদেরকে কোনোরূপ
সতর্কীকরণ তো দূরের কথা
,কোনো আদেশ দেন নি বা নছ্বীহতও
করেন নি
।
বরং এখানে আল্লাহ্ তা
‘
আলা আহলে বাইত সম্পর্কে
তাঁর দু
’
টি ফয়ছ্বালা বা সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন
।
তা
হচ্ছে
,তিনি তাঁদের থেকে অপকৃষ্টতা অপসারিত করতে এবং
তাঁদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতপবিত্র করতে চান
।
আর এ সিদ্ধান্ত
ঘোষণার বাক্য শুরু করা হয়েছে
انّما
(অবশ্যই) শব্দ দ্বারা
।
এর
মানে হচ্ছে
,এটি একটি অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত
;কোনোরূপ দুই সম্ভাবনাযুক্ত বিকল্প সিদ্ধান্ত নয়
।
এ থেকে আহলে বাইতের পাপমুক্ততা
(عصمة
)-ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়
।
কিন্তু এর বাইরে কোরআন মজীদে কোথাওই হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর বিবিগণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ
কোনোভাবেই পাপমুক্ততা (
عصمة
)-এর ঘোষণা দেয়া হয় নি
।
[এখানে আমরা বলে রাখতে চাই যে
,কারো মা
‘
ছুম্ (
معصوم
-পাপমুক্ত) হওয়ার মানে এই যে
,তিনি নিশ্চিতভাবেই পাপমুক্ত
ছিলেন
,কিন্তু কারো মা
‘
ছুম্ না হওয়ার মানে এই নয় যে
,তিনি নিশ্চিতভাবেই পাপ করেছেন
।
বরং মা
‘
ছুম্ না হওয়ার মানে হচ্ছে
,পাপ থেকে মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা না থাকা
।
এমতাবস্থায় কারো পাপে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে পাপী বলে গণ্য করা চলে না
।
]
কোরআন মজীদের উপরোদ্ধৃত আয়াত সমূহে ব্যবহৃত বাচনভঙ্গি থেকেই সুস্পষ্ট যে
,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর
বিবিগণ মা
‘
ছুম্ ছিলেন না
।
অবশ্য কোরআন মজীদে তাঁদেরকে মু
’
মিনদের মাতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা আল্-আহযাব্ : ৬) এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাঁদের কাউকে বিবাহ করা মু
’
মিনদের জন্য হারাম করে দেয়া হয় (সূরা
আল্-আহযাব্ : ৫৩)
।
এ কারণে তাঁদের সাথে মু
’
মিনদের যে
সম্মানার্হ সম্পর্ক তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে তাঁদের মর্যাদাকে
পাপমুক্ততার পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করেন
।
কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো মু
’
মিনদের জন্য মাতৃস্বরূপ হওয়া আর মা
‘
ছুম্ হওয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই
,ঠিক যেমন কোনো
মু
’
মিন ব্যক্তির জন্মদাত্রী মায়ের সাথে তার সম্মানার্হ সম্পর্ক থাকা
সত্ত্বেও তার মাকে অনিবার্যভাবেই মা
‘
ছুম্ বলে গণ্য করা সঠিক
হতে পারে না
।
এমনকি কোনো মু
’
মিন ব্যক্তির পিতা-মাতা যদি
কাফেরও হয় তাহলেও তাদের সাথে সম্মানার্হ ও সৌজন্যমূলক
আচরণ অব্যাহত রাখার জন্য কোরআন মজীদে নির্দেশ দেয়া
হয়েছে
,কিন্তু ঐ মু
’
মিন ব্যক্তির এ আচরণ তার পিতা-মাতাকে
মু
’
মিনে পরিণত করবে না
।
মু
’
মিনদের জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর
বিবিগণকে মায়ের ন্যায় সম্মানার্হ গণ্য করার বিষয়টিও একই ধরনের
।
প্রকৃত পক্ষে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্ত্রীর মর্যাদাই তাঁদের প্রতি
সম্মান প্রদর্শনকে মু
’
মিনদের জন্য অপরিহার্য করেছে
।
কারণ
,হযরত
রাসূলে আকরাম (সা.) মু
’
মিনদের জন্য পিতৃতুল্য
,বরং তিনি পিতার
চেয়েও অধিকতর সম্মান
,শ্রদ্ধা
,ভক্তি ও ভালোবাসা পাবার হক্বদার
।
এমতাবস্থায় তাঁর পরে তাঁর কোনো স্ত্রীকে বিবাহ করলে স্বয়ং
রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রতি পূর্বানুরূপ সম্মান
,শ্রদ্ধা
,ভক্তি ও ভালোবাসা
বজায় থাকবে না এটাই স্বাভাবিক
।
এমতাবস্থায় তাঁর পরে তাঁর
বিবিগণকে বিবাহ করা হারাম হওয়া ও তাঁদেরকে মাতৃতুল্য গণ্য করা
অপরিহার্য ছিলো
।
কিন্তু এর দ্বারা কিছুতেই তাঁদেরকে মা
‘
ছুম্ বলে গণ্য
করা চলে না
।
যদিও অনুরূপ ক্ষেত্রে অতীতের নবী-রাসূলগণের (আ.)
বিবিগণের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা
‘
আলার বিধান কী ছিলো তা
কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয় নি (এবং তা উল্লেখের
প্রয়োজনও ছিলো না)
।
তবে আমরা নির্দ্বিধায় ধরে নিতে পারি যে
,অতীতের নবী-রাসূলগণের (আ.) বিবিগণের ক্ষেত্রেও আল্লাহ্
তা
‘
আলার বিধান অভিন্ন ছিলো
।
কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রেও মা
‘
ছুম্
হওয়ার বিষয় প্রমাণিত হয় না
।
অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ
মা
‘
ছুম্ থেকে থাকলে তা ব্যক্তি হিসেবে
,নবী-রাসূলের (আ.) স্ত্রী
হিসেবে নয়
।
তার প্রমাণ
,কোরআন মজীদে হযরত নূহ্ (আ.) ও
হযরত লূত (আ.)-এর স্ত্রীর কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার বিষয়টি
সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লিখিত হয়েছে
।
একটি ঐশী মূলনীতি হিসেবে
নবী-রাসূলের (আ.) স্ত্রী তথা মু
’
মিনদের মাতা হওয়া যদি কারো
পাপমুক্ততা নিশ্চিত করতো তাহলে ঐ দু
’
জন নারী তার ব্যতিক্রম
হতো না
।
নীতিগতভাবে তথা একটি ঐশী মূলনীতি হিসেবে
উম্মাহাতুল মু
’
মিনীন অর্থাৎ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর
বিবিগণ-এর মা
‘
ছুম্ না হওয়ার তথা আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত না
হওয়ার বিষয়টি উল্লিখিত আয়াত সমূহ ও উপরোক্ত আলোচনা থেকে
অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়
।
কোরআন মজীদের আরো কতক আয়াত
থেকে এ বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়
।
অর্থাৎ
এখানে যা এজমালীভাবে প্রমাণিত হয় অন্য কতক আয়াত থেকে তা
দৃষ্টান্ত সহকারে প্রমাণিত হয়
।
কোরআন মজীদের সূরা আত্-তাহরীম্ থেকে জানা যায়
যে
,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) তাঁর কোনো একজন স্ত্রীর কাছে
একটি গোপন কথা বললে তিনি গোপনীয়তা ভঙ্গ করে তা রাসূলুল্লাহ্
(সা.)-এর অপর এক স্ত্রীর কাছে বলে দেন
।
এছাড়া তাঁর দুই স্ত্রী
[যথাসম্ভব ঐ দু
’
জনই অর্থাৎ যারা একজন আরেক জনের কাছে
রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর গোপন কথা বলে দিয়েছিলেন]
“
রাসূলুল্লাহ্
(সা.)-এর বিরুদ্ধে
”
পরস্পরকে সাহায্য করতে তথা তাঁর বিরুদ্ধে
কোনো একটি বিষয়ে চক্রান্ত করতে যাচ্ছিলেন
।
এ জন্য আল্লাহ্
তা
‘
আলা তাঁদেরকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেন ও সতর্ক করে
দেন এবং তাওবাহ্ করার জন্য নছ্বীহত্ করেন
।
এরশাদ হয়েছে :
)
وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَنْ بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنْبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ
(
“
আর নবী যখন তাঁর স্ত্রীদের কারো কাছে কোনো একটি কথা
গোপনে বললেন
,অতঃপর সে (অন্য কাউকে) তা জানিয়ে দিলো এবং
আল্লাহ্ তাঁর [রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর] কাছে তা প্রকাশ করে দিলেন তখন
তিনি (তাঁর ঐ স্ত্রীকে) তার কিছুটা জানালেন এবং কিছুটা জানালেন
না
।
আর তিনি যখন তাকে তা জানালেন তখন সে বললো : কে
আপনাকে এটি জানিয়েছে
?তিনি বললেন : পরম জ্ঞানী সর্বজ্ঞ
(আল্লাহ্)ই আমাকে জানিয়েছেন
।
”
(সূরা আত্-তাহরীম : ৩)
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে
,যে কোনো ঈমানদার
কর্তৃক
,বিশেষ করে নবীর (সা.) একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কর্তৃক
-যাকে
তিনি বিশ্বাস করে কোনো গোপন কথা বলেছিলেন
-তাঁর গোপন
কথা অন্যের কাছে বলে দেয়া একটি গুরুতর বিষয় ছিলো
।
কিন্তু
এখানেই শেষ নয়
।
আল্লাহ্ তা
‘
আলা এরপর এরশাদ করেছেন :
)
إِنْ تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ
(
“
তোমাদের দু
’
জনের অন্তর অন্যায়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার
কারণে তোমরা যদি তাওবাহ্ করো (তো ভালো কথা)
,নচেৎ
তোমরা দু
’
জন যদি তাঁর (রাসূলের) বিরুদ্ধে পরস্পরকে সহায়তা
করো (তথা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করো) তাহলে (জেনে রেখো
,)অবশ্যই আল্লাহ্ই তাঁর অভিভাবক
,আর এছাড়াও জিবরাঈল
,উপযুক্ত মু
’
মিনগণ ও ফেরেশতাগণ তাঁর সাহায্যকারী
।
”
(সূরা
আত্-তাহরীম : ৪)
পরবর্তী আয়াত থেকে মনে হয় যে
,তাঁদের দু
’
জনের
কাজটি এমনই গুরুতর ছিলো যে কারণে হযরত রাসূলে আকরাম
(সা.)-এর পক্ষ থেকে তাঁদেরকে তালাক্ব প্রদান করা হলেও
অস্বাভাবিক হতো না
।
আর তাতে দ্বিবচনের পরিবর্তে স্ত্রীবাচক
বহুবচন ব্যবহার থেকে মনে হয় যে
,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্ত্রীগণের
মধ্যে যারা এ চক্রান্তে অংশ নেন নি সম্ভবতঃ তাঁরাও বিষয়টি জানার
পরে তাতে বাধা দেন নি বা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে সাথে সাথে
অবগত করেন নি
,তাই এ শৈথিল্যের কারণে তাঁদেরকেও
তালাক্ব দেয়া হলে তা-ও অস্বাভাবিক হতো না
।
এরশাদ হয়েছে :
)
عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا
(
“
তিনি (রাসূল) যদি তোমাদেরকে তালাক্ব প্রদান করেন
তাহলে হয়তো তাঁর রব তোমাদের পরিবর্তে তাঁকে তোমাদের চেয়ে
উত্তম অকুমারী ও কুমারী স্ত্রীবর্গ প্রদান করবেন যারা হবে ঈমানদার
, (আল্লাহর কাছে) আত্মসমর্পিত
,আজ্ঞাবহ
,তাওবাহ্কারিনী
,‘
ইবাদত-
কারিনী ও রোযা পালনকারিনী (বা আল্লাহর পথে পরিভ্রমণকারিনী)
।
”
(সূরা আত্-তাহরীম : ৫)
এ আয়াতে এ ধরনের ইঙ্গিতও রয়েছে যে
,হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর ঐ সময় জীবিত বিবিগণের কারো মধ্যেই এতে
উল্লিখিত সবগুলো গুণ-বৈশিষ্ট্য বাঞ্ছিত সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিলো না
।
এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে
,হযরত রাসূলে
আকরাম (সা.)-এর বিবিগণ মা
‘
ছুম্ ছিলেন না এবং তাঁরা আহলে
বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না
।
কিন্তু এরপরও অনেকে ভাবাবেগের
বশে কেবল আল্লাহর রাসূলের স্ত্রী হবার কারণে তাঁদেরকে পাপ ও
ভুলের উর্ধে গণ্য করেন
।
তাঁদের এ ভুল ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য
কোরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতই যথেষ্ট হওয়া উচিত
-যা
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর স্ত্রীগণের সমালোচনা ও তাঁদের
উদ্দেশে উচ্চারিত হুমকির ধারাবাহিকতায় তাঁদেরকে সতর্ক করার
লক্ষ্যে নাযিল হয়েছে :
)
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِلَّذِينَ كَفَرُوا امْرَأَتَ نُوحٍ وَامْرَأَتَ لُوطٍ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَقِيلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِينَ
(
“
যারা কাফের হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ্ নূহের স্ত্রী ও লূত্বের
স্ত্রীর উপমা প্রদান করেছেন
;তারা দু
’
জন আমার দু
’
জন নেক বান্দাহর
আওতায় (বিবাহাধীনে) ছিলো
,কিন্তু তারা উভয়ই তাদের সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করলো
।
ফলে তারা দু
’
জন (নূহ্ ও লূত্ব) তাদের
দু
’
জনকে আল্লাহর (শাস্তি) থেকে রক্ষা করতে পারলো না
;আর
তাদেরকে বলা হলো : (অন্যান্য) প্রবেশকারীদের সাথে দোযখে প্রবেশ
করো
।
”
(সূরা আত্-তাহরীম্ : ১০)
এছাড়াও আল্লাহ্ তা
‘
আলা কোরআন মজীদে বিশেষভাবে
উম্মাহাতুল্ মু
’
মিনীনকে সম্বোধন করে বলেছেন :
(
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ
)
-“
আর তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান কর
।
”
(সূরা আল্-আহযাব্ : ৩৩) কিন্তু তা সত্ত্বেও সর্বসম্মত ও মশহুর ঐতিহাসিক
তথ্য অনুযায়ী তাঁদের একজন আল্লাহ্ তা
‘
আলার এ বিশেষ আদেশ
অমান্য করে বৈধ খলীফাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং রণাঙ্গনে গিয়ে
তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেন যার পরিণতিতে হাজার হাজার
মুসলমানের প্রাণহানি ঘটে
।
এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে
,উম্মাহাতুল্
মু
’
মিনীন্ মা
‘
ছুম্ ছিলেন না এবং আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না
।