ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব 0%

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক: আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হুসাইন তাবাতাবাঈ
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 40531
ডাউনলোড: 5458

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 31 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 40531 / ডাউনলোড: 5458
সাইজ সাইজ সাইজ
ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

‘ইসলাম ও শীয়া মাযহাব’ নামক এ গ্রন্থে ইসলামের দু’টি বৃহৎ উপদলের (শীয়া ও সুন্নী) অন্যতম শীয়া মাযহাবের প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে । শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি, বিকাশ ও চিন্তাধারার প্রকৃতি এবং ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে শীয়া মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গী এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে ।

সাধারণ দৃষ্টিতে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব

ইতিপূর্বে আমরা নবুয়ত ও ইমামতের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি যে , গণহেদায়েতের নীতি সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে বলবৎ রয়েছে । সেই নীতির , অপরিহার্য ফলাফল স্বরূপ মানবজাতি ওহী নবুয়তের শক্তি সরঞ্জামে সুসজ্জিত । ঐ বিশেষ শক্তিই মানব জাতিকে মানবতার শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌভাগ্যের পথে পরিচালিত করে । আর এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার যে , আল্লাহ প্রদত্ত ঐ বিশেষ শক্তি যদি সামাজিক জীবন যাপনকারী মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌভাগ্যের পথে পরিচালিত করতেই না পারে , তাহলে ঐ বিশেষ শক্তির সরঞ্জাম মানবজাতিকে সুসজ্জিত করার মূলকাজটিই বৃথা বলে প্রমাণিত হবে । অথচ , এ সৃষ্টিজগতে বৃথা বলে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই । অন্যকথায় বলতে গেলে , মানব জাতি যেদিন থেকে এ জগতে জীবন যাপন করতে শুরু করেছে , সেদিন থেকেই সে সৌভাগ্যপূর্ণ (সার্বিক অর্থে) এক সামাজিক জীবন যাপনের আকাংখা তার হৃদয়ে লালন করে আসছে । আর সেই কাংখিত লক্ষ্যে পৌছার জন্যেই সে প্রয়াজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে । তার হৃদয়ে ঐ আকাংখা সত্যিই যদি অবাস্তব হত , তাহলে নিশ্চয়ই সে ঐ আকাংখার স্বপ্নিল ছবি তার হৃদয় পটে আকতো না । অথচ , আবহমান কাল থেকে জগতের প্রতিটি মানুষই তার জীবনে এমন একটি আকাংখা হৃদয় কঠুরীতে লালন করে আসছে । যদি খাদ্যের অস্তিত্ব না থাকত তা হলে ক্ষুধার অস্তিত্ব থাকত না । পানির অস্তিত্বই যদি না থাকবে , তাহলে কিভাবে তৃষ্ণার অস্তিত্ব থাকতে পারে ? যৌনাংগের অস্তিত্বই যদি না থাকত তা হলে যৌন কামনার অস্তিত্বও থাকত না । এ কারণেই বিশ্ব জগতে এমন এক দিনের আবির্ভাব ঘটবে , যখন মানব সমাজ সম্পূর্ণ রূপে ন্যায়বিচার ভোগ করবে । সমগ্র বিশ্বে তখন শান্তি নেমে আসবে । সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করবে । তখন মানুষ শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের মাঝে নিমিজ্জিত হবে । অবশ্য ঐ ধরণের পরিবেশ টিকিয়ে রাখার ব্যাপরটি তখন মানুষের উপরই নির্ভরশীল হবে । ঐধরণের সমাজের নেতৃত্ব দান করবে বিশ্ব মানবতার মুক্তিদাতা ; হাদীসের ভাষায় যার নাম হবে মাহ্দী (আ.) । পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্মেই বিশ্ব মানবতার মুক্তিদাতা সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে এবং সাধারণভাবে তার আবির্ভাবের সুসংবাদও প্রদান করা হয়েছে । যদিও ঐ বক্তব্যের বাস্তব প্রয়োগে কমব েশী মতভেদ রয়েছে । সর্বসম্মত হাদীসে মহানবী (সা.) হযরত ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে বলেছেনঃ প্রতিশ্রুত মাহদী আমারই সন্তান ।

বিশেষ দৃষ্টিকোণে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব

মহানবী (সা.) ও পবিত্র আহলে বাইতের ইমামদের পক্ষ থেকে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে যে , ইমাম মাহদী (আ.) তার আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে সমগ্র মানব সমাজকে প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্বে উন্নীত করবে এবং আধ্যাত্মিক জীবন দান করবে ।232 অসংখ্য হাদীসের সাক্ষ্য অনুযায়ী একাদশ ইমাম

হযরত হাসান আসকারীর (আ.) সন্তানই ইমাম মাহদী (আ.) ।233 হাদীস সমূহের বক্তব্য অনুযায়ী হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর জন্মের পরে সুদীর্ঘকালের জন্যে তিনি অদৃশ্যে অবস্থান করবেন । তারপর তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারপূর্ণ বিশ্বে সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন ।

কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর

প্রশ্ন : শীয়া বিদ্বেষী লোকেরা এ ব্যাপারে আপত্তিমূলক প্রশ্ন উপস্থাপন করে যে , ইমাম মাহদী (আ.) শীয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী এ যাবৎ প্রায় 1200 বছর জীবন যাপন করেছেন । অথচ এযাবৎ পৃথিবীর কোন মানুষই এত দীর্ঘ জীবন যাপন করতে পারে না ।

উত্তর : বাহ্যিকভাবে আপত্তিটি গ্রহণযোগ্য বটে । তবে আমরা যদি উক্ত বিষয় সংক্রান্ত মহানবী (সা.) ও ইমামগণের (আ.) হাদীসগুলো পড়ে দেখি , তা হলে অবশ্যই দেখতে পাব যে , সেখানে ইমাম মাহদী (আ.)-এর ঐ দীর্ঘ জীবনকে অলৌকিক ও অসাধারণ একটি বিষয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে । অবশ্য অলৌকিক বিষয় এবং অসম্ভব বিষয় এক নয় । বরং দু টিই সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় । জ্ঞানগত দিক থেকে অলৌকিক বিষয়কে অস্বীকার করা সম্ভব নয় । কারণ , এটা কারও পক্ষে আদৌ বলা সম্ভব নয় যে , শুধুমাত্র আমাদের দেখা এবং জানা কার্য-কারণ গুলোই এ বিশ্বজগতে ক্রিয়াশীল । আর এর বাইরে এ জগতে অন্য কোন কার্য-কারণই ক্রিয়াশীল নয় , যা সম্পর্কে আমাদের আদৌ কোন জ্ঞান বা ধারণা নেই । অথবা যে সব কার্য-কারণ , কখনই আমরা দেখিনি , অনুধাবন করিনি তার কোন অস্তিত্বই এ জগতে থাকতে পারে না । সুতরাং উপরোক্ত বিষয়ের ভিত্তিতে বলা যায় যে , এক বা একাধিক মানুষের ক্ষেত্রে এ বিশ্ব জগতে এমন কোন কার্য কারণ ঘটতে পারে , যার ফলে তাদের আয়ু একাধিক হাজার বছর পর্যন্তও দীর্ঘায়িত হতে পারে । আর এই সম্ভাবনার অস্তিত্বের কারণেই আজ আমরা দেখতে পাই যে , চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মানুষের দীর্ঘায়ু লাভ সংক্রান্ত বিষয়ের গবেষণায় আজও নিরাশ হয়নি । আর ঐশীগ্রন্থের অধিকারী এবং নবীদের অলৌকিক নিদর্শনে বিশ্বাসী ইহুদী বা খৃষ্টান ধর্মের অনুসারীদের পক্ষ থেকে এ ধরণের আপত্তিমূলক প্রশ্নের উপস্থাপন সত্যিই আশ্চার্যজনক ।

প্রশ্ন : শীয়া বিরোধীরা আপত্তি করে বলে যে , শীয়ারা তো দ্বীনি বিধান ও ইসলামের নিগূঢ়তত্ত্ব বর্ণনা ও জনগণের নেতৃত্ব প্রদানের জন্যেই ইমামের উপস্থিতিকে অপরিহার্য বলে বিশ্বাস করে । কিন্তু ইমামের অর্ন্তধানের বিষয়টি শীয়াদের বর্ণিত ঐ উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ বলেই প্রমাণ করে । অর্ন্তধানের ফলে জনগণ যদি ইমামের নাগালই না পায় , তাহলে ঐ ইমামের অদৃশ্য অস্তিত্বই তো মূল্যহীন । মানবসমাজ সংস্কারের জন্যে যদি ইমামের অস্তিত্বের প্রয়োজন আল্লাহ কখনও উপলদ্ধি করেন , তাহলে ঐ মুহুর্তেই তাকে সৃষ্টি করার মত ক্ষমতাও আল্লাহর রয়েছে ।

সুতরাং ইমামের আবির্ভাবের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত ইমামের আয়ু দীর্ঘায়িত করার কোন প্রয়োজন আল্লাহর নেই ।

উত্তর : উপরোক্ত প্রশ্ন উত্থাপনকারী আসলে ইমামতের প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হননি । ইতিপূর্বে ইমামতের অধ্যায়ে আলোচনায় এটা সুস্পষ্ট হয়েছে যে , ইসলামের বাহ্যিক জ্ঞান ও বিধিবিধান বর্ণনা এবং জনগণের প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দানই ইমামের একমাত্র দায়িত্ব নয় । মানুষের বাহ্যিক পথনির্দেশনা যেমন ইমামের দায়িত্ব , তেমনি গোপন ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রমের নেতৃত্ব দানও তারই দায়িত্ব । মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে তো তিনিই বিন্যাস করেন এবং মানুষের কৃতকর্মের প্রকৃত স্বরূপকেও তিনিই আল্লাহর অভিমুখে পরিচালিত করেন । এটা খুবই স্বাভাবিক যে , ইমামের দৈহিক উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি এখানে আদৌ কার্যকর নয় । আধ্যাত্মিকভাবে সকল মানুষের হৃদয় ও আত্মার সাথে ইমামের সংযোগ বিদ্যমান এবং সবার আত্মার উপরই তিনি সম্যক দ্রষ্টা ও প্রভাবশালী । যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে তিনি অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছেন এবং তার দ্বারা মানবসমাজের সংস্কার ও তার আত্মপ্রকাশের সময় এখনও উপস্থিত হয়নি । তবুও তার প্রতিনিয়ত অদৃশ্য উপস্থিতি মানবজাতির জন্যে একান্ত প্রয়োজন ।

পরিশিষ্টঃ শীয়াদের আধ্যাত্মিক আহবান

বিশ্ববাসীর প্রতি শীয়াদের বাণী শুধু এটাই যে , আল্লাহকে জানুন । অর্থাৎ জীবনে যদি সৌভাগ্য ও মুক্তি কামনা করেন , তাহলে আল্লাহকে জানার পথ অবলম্বন করুন । আর এটা প্রকৃতপক্ষে প্রিয়নবী (সা.)-এর হাদীসের অনুরূপ । বিশ্বনবী (সা.) যখন ইসলামের আন্তর্জাতিক আহবানের কাজ শুরু করেন , তখন তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন : হে জনগণ! এক আল্লাহকে জানতে চেষ্টা কর এবং আল্লাহকে এক বলেই স্বীকার কর । কেননা এর মধ্যেই তোমাদের মুক্তি নিহিত রয়েছে । এই অমিয় বাণীর ব্যাখায় সংক্ষেপে এটাই বলব মানুষ হিসেবে আমরা স্বভাবগতভাবে জীবনের বিভিন্ন পার্থিব লক্ষ্য ও কামনা বাসনার পুজারী । যেমন : সুস্বাদু খাদ্য , পানীয় , সুন্দর পোষাক , আরামপ্রদ বাসস্থান , মনোরম দৃশ্য , সুন্দরী স্ত্রী , অন্তরঙ্গ বন্ধু , বিশাল ধনসম্পদ , প্রবল ক্ষমতা , উচ্চতর রাজনৈতিক পদমর্যাদা , সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি , নেতৃত্ব ও প্রভুত্ব , আপন মনের সাধ , ইচ্ছা ও অনিচ্ছা বাস্তবায়ন ও বিরোধীদের বিনাশই আমাদের প্রবৃত্তির চির আকাংখা । কিন্তু এর পাশাপাশি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক অনুযায়ী আমরা সবাই এটা উপলদ্ধি করতে পারি যে , এ বিশ্বজগতের উপভোগ্য সবকিছু মানুষের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে । মানুষকে ঐসবের জন্যে সৃষ্টি করা হয়নি । স্বাভাবতই ঐ সমস্ত কিছু মানুষের পিছনে ছুটে আসবে । তাই মানুষকে ঐসবের পিছনে ধাবিত হওয়া উচিত নয় । উদরপূর্তি এবং যৌনতৃপ্তি ভোগই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া তো গরু ছাগেলেরই বা পাশবিক জীবনাদর্শ । অন্যদের হত্যা করা , ছিন্ন-ভিন্ন করা এবং অসহায় করাতো বাঘ , নেকড়ে , বা শিয়ালেরই নীতি । আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেকপ্রসূত স্বভাবই মানুষের জীবনাদর্শ । বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রজ্ঞাজাত জীবন দর্শনের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী আমাদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত করে । আমাদেরকে তা কখনোই কামরিপু চরিতার্থের পথে বা আত্মঅহমিকা অথবা স্বার্থ পরতার পথে পরিচালিত করে না । বিবেক ও প্রজ্ঞা প্রসূত জীবন দর্শন মানুষকে এ সৃষ্টি জগতেরই একটি অংশ বিশেষ হিসেবে বিবেচনা করে । ঐ জীবন দর্শনের দৃষ্টিতে মানুষ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও সার্বভৌম কোন অস্তিত্বের অধিকারী নয় । অথচ মানুষ সাধারণতঃ ধারণা করে যে , সে এই প্রকৃতি জগতের নিয়ন্ত্রক । তার ধারণা অনুযায়ী সে-ই এই অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল প্রকৃতিকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার কাছে নতজানু হতে বাধ্য করে । অথচ , প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার নিজের অজান্তেই এই প্রকৃতির হাতের পুতুল এবং তার নির্দেশ পালনকারী আজ্ঞাবহ দাস মাত্র । প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তি প্রসূত জীবন দর্শন মানুষকে এই দ্রুত ধ্বংসশীল জগতের নিগুঢ় রহস্য উপলদ্ধির ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সূক্ষ পর্যবেক্ষণের আহবান জানায় । কেননা , এর ফলে মানুষের কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে , এ সৃষ্টিজগতের কিছুই নিজ থেকে অস্তিত্বশীল হয়নি । বরং তা এক অসীম উৎস থেকেই উৎসরিত । ঐ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে এটা মানুষের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে , এ আকাশ ও পৃথিবীর সব সুন্দর ও অসুন্দর অস্তিত্ব বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অন্য একটি বাস্তবতারই প্রতিফলন মাত্র । এটা ঐ মূল অস্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র , যার বহিঃপ্রকাশ কখনও নিজ থেকে নয় । অতীতের সকল ঘটনা , শক্তি ও মহিমা সবই আজ রূপকথার গল্প বৈ আর কিছুই নয় । তেমনি আজকের ঘটনাপ্রবাহও আগামীকালের রূপকথা বৈ কিছু নয় । অর্থাৎ সবকিছুই তার নিজের কাছে রূপকথারই নামান্তর বটে । এ বিশ্বজগতে একমাত্র মহান আল্লাহ বাস্তব অস্তিত্বের অধিকারী । তাঁর অস্তিত্বই অমর । বিশ্বের সবকিছু তাঁরই আশ্রয়ে অস্তিত্বের রং ধারণ করে । তারই সত্তার জ্যোতিতে সবকিছু অস্তিত্বের জ্যোতি লাভ করে । মানুষ যখন এধরণের উপলদ্ধির অধিকারী হয় , তখন তার অন্তরচক্ষু উম্মোচিত হয় । তখন সে তার ঐ অন্তরচক্ষু দিয়ে এ বিশ্বজগতের অস্তিত্বগত সীমাবদ্ধতা অবলোকন করতে সক্ষম হয় । তখন সে উপলদ্ধি করে যে , সমগ্র বিশ্ব জগত এক অপরিসীম আয়ু , শক্তি ও জ্ঞানের অস্তিত্বের উপরই নির্ভরশীল । এ জগতের প্রতিটি অস্তিত্বই অনন্ত জগতের এক একটি জানালা স্বরূপ , যার ভিতর সেই অনন্ত অসীম জগতের দৃশ্যাবলীর কিয়দংশ পরিদৃষ্ট হয় । মানুষের উপলদ্ধি যখন এমনই এক স্তরে উন্নীত হবে , তখন সে তার মৌলিকত্ব ও সার্বভৌমত্বকে তার প্রকৃত সত্তার অধিকারীর কাছেই প্রত্যর্পণ করবে । তখন সে আপন হৃদয়কে সকল অস্তিত্বের বাধন থেকে মুক্ত করে শুধুমাত্র এক আল্লাহর সত্তার সাথে হৃদয়কে গেথে নেবে । একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কোন শক্তির সামনে সে মাথা ঝোকাবে না । এ পর্যায়ে পৌছানোর পরই সে মহান আল্লাহর পবিত্র তত্ত্বাবধান ও কৃতকর্মের অধীন হয় । তখন প্রতিটি অস্তিত্বকেই সে আল্লাহর মাধ্যমেই চেনে এবং সৎকাজ ও সচ্চরিত্র অর্জনের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর দ্বারাই সে পরিচালিত হয় । আর এটাই হচ্ছে মানুষের জন্যে শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ স্তর । ইমামগণ মহান আল্লাহর অনুগ্রহও তত্ত্বাবধানেই শ্রেষ্ঠত্বের ঐ বিশেষ মানবীয় স্তরে উন্নীত হন । আর যে ব্যক্তি তার স্বীয় প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই পর্যায়ে উন্নীত হন , তিনিই ইমামের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে আল্লাহর কাছে বিবেচিত হন । এটাই তার সাথে ইমামের পদমর্যাদাগত পার্থক্য । তাই এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , আল্লাহর পরিচিতি এবং ইমাম পরিচিতির বিষয় পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । একইভাবে আল্লাহ পরিচিতি ও আত্মপরিচিতির বিষয়ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । কেননা , যে তার আপন সত্তাকে চিনতে সক্ষম হল , নিঃসন্দেহে ঐ ব্যক্তিই সর্বস্রষ্টা আল্লাহর সত্তাকেও অনুধাবন করতে সক্ষম হল ।