নির্বাচিত খেলাফতের রাজনীতি ও শীয়াদের দৃষ্টিভঙ্গী
শীয়া মাযহাবের অনুসারীরা বিশ্বাস করতেন যে , ইসলামের ঐশী আইন বা শরীয়ত , যার উৎস পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবী (সা.)-এর সুন্নাত তা কেয়ামত পর্যন্ত সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন ও অপরিবর্তীত অবস্থায় এবং স্বীয় মর্যাদায় টিকে থাকবে ।
ইসলামী আইনসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যাপারে এতটকু টাল-বাহানা করার অধিকার ইসলামী সরকারের নেই । ইসলামী সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে পরামর্শ সভার পরামর্শ ও সমস্যামায়িক পরিস্থিতি অনুযায়ী ইসলামী শরীয়তের (আইন) ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ । কিন্তু রাসূল (সা.)-এর মৃত্যু পুর্ব অসুস্থ অবস্থার সময়ে সেই ঐতিহাসিক‘
কাগজ কলম আনার ঘটনা’
খলিফা নির্বাচন ও রাজনৈতিক বাইয়াত গ্রহণসহ ইত্যাদি ঘটনা তদানিন্তন খেলাফতের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তোলে । এ ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে যায় যে , নির্বাচিত খেলাফতের মূল ব্যক্তিবগ ও সমর্থকগণ পবিত্র কুরআনকে কেবল মাত্র একটি সংবিধান হিসাবে সংরক্ষণে বিশ্বাসী । কিন্তু রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত ও আদর্শকে তারা অপরিবর্তনীয় বলে মনে করত না । বরং তাদের ধারণা ছিল ইসলামী সরকার নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত বাস্তবায়ন থেকেও বিরত থাকতে পারে । তদানিন্তন খেলাফততন্ত্রের এ দৃষ্টি ভঙ্গীর প্রমাণ পরবর্তীতে রাসূল (সা.)-এর বহু সাহাবীদের কথা ও কাজে পরিলক্ষিত হয় (সাহাবীরা মুজতাহিদ । ইজতিহাদ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যদি সত্যে উপনীত হন , পুরস্কৃত হবেন । আর যদি ভুল করেন , ক্ষমা প্রাপ্ত হবেন) । এর স্পষ্ট উদাহরণ জনৈক সাহাবী ও সেনাপতি খালিদ বিন ওয়া লিদের ঐতিহাসিক ঘটনায় পাওয়া যায় । কোন এক রাতে খালিদ বিন ওয়ালিদ জনাব মালিক বিন নুওয়াইরা নামক জনৈক গণ্যমান্য মুসলমানের বাড়িতে আকস্মিকভাবে অতিথি হন । খালিদ বিন ওয়ালিদ তাকে অপ্রত্যাশিতভাবে হত্যা করেন এবং তাঁর কর্তিত মাথা চুলার আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন ।
অতঃপর ঐ রাতেই নিহতের স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন । কিন্তু , সামরিক বাহিনীর জন্যে খালিদ বিন ওয়ালিদের মত সুযোগ্য সেনাপতির প্রয়োজন । এই স্বার্থে খলিফা এ ধরণের জঘণ্য ও নৃশংস হত্যা কান্ডের বিচার ও প্রয়োজনীয় শাস্তি , খালিদ বিন ওয়ালিদের উপর প্রয়োগ থেকে বিরত খাকলেন ।
একইভাবে খলিফার প্রশাসন মহানবী (সা.)-এর আত্মীয়- স্বজন ও পবিত্র আহলে বাইতগণের (আ.) প্রতি নিয়মিত প্রদত্ত খুমস্ বন্ধ করে দেন ।
রাসূল (সা.)-এর হাদীস লেখা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় । যদি কখনও লিপিবদ্ধ কোন হাদীস কোথাও কারো কাছে পাওয়া যেত তাহলে সাথে সাথেই তা বাজেয়াপ্ত করা হত এবং পুড়িয়ে ফেলা হত ।
হাদীস লিপিবদ্ধকরণ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সমগ্র‘
খুলাফায়ে রাশেদীনের’
যুগে অব্যাহত ছিল । আর তা উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজের শাসন আমলে (হিঃ 99 - 102 হিঃ) পর্যন্ত বলবৎ থাকে ।
দ্বিতীয় খলিফা ওমরের সময় (হিঃ 13 - 25 হিঃ) খেলাফত প্রশাসনের এ রাজনৈতিক পদক্ষেপটি আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে । এ সময় দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইসলামী শরীয়তের বেশ কিছু আইনের পরিবর্তন সাধান করেন । যেমন :‘
হজ্জে তামাত্তু’
‘
মুতা বিবাহ্ এবং আযান’
এ‘
হাইয়্যা আলা খায়রিল আমাল’
ব্যাক্যটির ব্যাবহার তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ।
তিনিই একই বৈঠকে তিন তালাকসহ এজাতীয় আরো অন্য নীতির প্রচলন শুরু করেন ।
দ্বিতীয় খলিফা ওমর সর্বপ্রথম বাইতুল মালের অর্থ জনগণের মধ্যে বন্টনের সময় বৈষম্যেরে সৃষ্টি করেন ।
এ বিষয়টি পরবর্তীতে মুসলমানদের মাঝে আশ্চর্যজনক শ্রেণীবৈষম্য এবং ভয়ংকর ও রক্তাক্ত সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায় । দ্বিতীয় খলিফা ওমরের খেলাফতের সময়েই মুয়াবিয়া সিরিয়ায় রাজপ্রাসাদে বসে শাসনকার্য পরিচালনার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের সূচনা করেন । দ্বিতীয় খলিফা ওমর তাকে আরবের‘
কাসূরা’
(জনৈক বিখ্যাত পারস্য সম্রাটের উপাধি) বা বাদশাহ্ বলে ডাকতেন । তিনি কখনো মুয়াবিয়ার এধরণের কাজের প্রতিবাদ করেননি ।
দ্বিতীয় খলিফা ওমর হিজরী 23 সনে জনৈক পারসিক ক্রীতদাসের হাতে নিহত হন । মৃত্যুর পূর্বে খলিফা ওমরের নির্দেশে 6 সদস্য বিশিষ্ট খলিফা নির্বাচন কমিটি গঠিত হয় । এ কমিটির সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে তৃতীয় খলিফা নির্বাচিত হন ও তার শাসনভার গ্রহণ করেন । তৃতীয় খলিফা ওসমান তার শাসন আমলে উমাইয়া বংশীয় আপন আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপক হারে প্রশাসনে নিযুক্ত করার মাধ্যমে উমাইয়্যাদেরকে জনগণের উপর প্রভুত্ব বিস্তারে সহায়তা করেন । হিজাজ (বর্তমান সৌদি আরব) ইরাক ও মিশরসহ অন্যান্য ইসলামী প্রদেশগুলোর শাসনভার তিনি উমাইয়া বংশের লোকজনের উপর অর্পন করেন ।
এরা সবাই প্রকাশ্যভাবে অন্যায়-অত্যাচার , দূর্নীতি , ইসলামী নীতিমালা লংঘন ও পাপাচার পচলনের মাধ্যমে ইসলামী প্রশাসনে চরম অরাজকতার সূত্রপাত ঘটায় ।
তৎকালীন ইসলামী বিশ্বের চতুর্দিক থেকে জনগণের অভিযোগ ওসমানের কাছে পৌছতে লাগল । কিন্তু খলিফা ওসমান উমাইয়া বংশীয় ক্রীতদাসী এবং বিশেষ করে জনাব মারওয়ান বিন হাকামের (খলিফার চাচাতো ভাই এবং প্রধানমন্ত্রী) দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবান্বিত ছিলেন । ফলে জনগণের অভিযোগকে তিনি কখনই গুরুত্ব দিতেন না ।
শুধু তাই নয় , মাঝে মাঝে তিনি অভিযোগকারীদের শায়েস্তা করার নির্দেশ জারী করতেন ।
অবশেষে হিজরী 35 সনে জনগণ খলিফার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে । খলিফা ওসমানের বাড়ী বেশ ক’
দিন ঘেরাও রাখা হয় এবং কিছু সংঘর্ষের পর তারা খলিফাকে হত্যা করে । সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া বংশের লোক এবং তৃতীয় খলিফা ওসমানের ঘনিষ্ট আত্মীয় । ওসমান তার শাসন আমলে সিরিয়ার প্রশাসনকে অধিক শক্তিশালী করেন । প্রকৃতপক্ষে খেলাফতের গুরুভার ক্রমেই সিরিয়ায় কেন্দ্রীভূত হতে থাকে । যদিও রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামোগত কেন্দ্র ছিল মদীনা । তবে তা একটি বাহ্যিকরূপ ছাড়া আর কিছুই ছিল না ।
ইসলামের প্রথম খলিফা সাহাবীদের দ্বারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন । দ্বিতীয় খলিফা , প্রথম খলিফার ওসিয়াত নামার মাধ্যমে মনোনয়ন লাভ করে ক্ষমতায় আসেন । আর তৃতীয় খলিফা , দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা মনোনিত ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে মনোনীত হন । ঐ কমিটির নির্বাচনের নীতিমালাও পূর্ব থেকেই দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল । যাই হোক , ইসলামের প্রথম তিন খলিফা , যাদের শাসনকাল প্রায় পচিশঁ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাদের গৃহীত রাজনীতির স্বরূপ এটাই ছিল যে , তারা নিজস্ব‘
ইজতিহাদু’
(গবেষণা) অনুসারে প্রয়োজনীয় যুগপোযাগী সিদ্ধান্ত নিবেন এবং সমাজে তা প্রয়োগ করবেন । ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রসারের ব্যাপারে তাদের নীতি ছিল এই যে , পবিত্র কুরআন , তাফসীর (ব্যাখা) বা গবেষণা ছাড়াই পঠিত হবে । আর রাসূল (সা.) এর হাদীস অলিখিত ভাবে প্রচারিত হবে এবং অবশ্যই তা মৌখিক বর্ণনা ও শবণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে । পবিত্র কুরআনের অনুলিপি তৈরী করণ অত্যন্ত সীমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত ছিল । আর হাদীস লিখন ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।
হিজরী 12 সনে সংঘটিত‘
ইয়ামামা’
র যুদ্ধ পর্যন্ত এ অবস্থা বলবৎ ছিল । ঐ যুদ্ধে বেশ কিছু সাহাবী নিহত হন যারা কুরআনের কারী ও হাফেজ ছিলেন । তখন দ্বিতীয় খলিফা ওমর , প্রথম খলিফা আবুব বকরকে সমগ্র কুরআনকে গ্রন্থবদ্ধ আকারে এক যায়গায় সংগৃহীত করার জন্য প্রস্তাব দেন । দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাব বলেন , ভবিষ্যতে যদি এ ভাবে কুরআনের আরও হাফিজ নিহত হন , তাহলে অদুর ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যে আর কুরআনের অস্তিত্ব থাকবে না । সুতরাং কুরআনের সব আয়াতগুলো এক যায়গায় সংগ্রহ করে পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন ।
এ সিদ্ধান্ত শুধু কুরআনের ক্ষেত্রেই গৃহীত হয় । অথচ রাসূল (সা.)-এর হাদীস , কুরআনের পরই যার অবস্থান , তাও একই বিপদের সম্মুখীন ছিল । কারণ , রাসূল (সা.)-এর হাদিসের ভাবার্থ মুলক বর্ণনা তার পরিবর্তন , পরিবর্ধন সংকোচন , বিস্মৃতি , বিকৃতি ও জালকৃত হওয়ার হাত থেকে আদৌ নিরাপদ ছিল না । কিন্তু রাসূল (সা.)-এর হাদীস সংরক্ষণের ব্যাপারে আদৌ কোন গুরুত্ব দেয়া হয়নি । এমন কি যেখানেই লিপিবদ্ধ কোন হাদীস পাওয়া যেত , সাথে সাথেই তা পুড়িয়ে ফেলা হত । পরিণতিতে অবস্থা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌছালো যে , খুব অল্প দিনের মধ্যেই নামায , রোযা.... ইত্যাদির মত ইসলামের অতীব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারেও পরস্পর বিরোধী মতামতের সৃষ্টি হল । একইভাবে এ যুগে ইসলামী জ্ঞানবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলোর উন্নয়নের ব্যাপারেও আদৌ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি । অথচ , পবিত্র কুরআনে ও হযরত রাসূল (সা.)-এর হাদীসে , জ্ঞান অর্জন ও তার প্রসারের ব্যাপারে যে প্রশংসা , অনুপ্রেরণা ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে , খেলাফতের যুগে এসে তা সম্পূর্ণ নিস্ক্রীয় ও স্থবির হয়ে পড়ে । অধিকাংশ মুসলমানই তখন একের পর এক রাজনৈতিক বিজয় নিয়ে মেতে ছিল । আর তখন তাদের যুদ্ধলদ্ধ গণিমতের সীমাহীন সম্পদের স্রোত সমগ্র আরব সাম্রাজ্যের দিকে ধাবিত হয়েছিল । যার ফলে নবীবংশের পবিত্র জ্ঞানের ঝর্ণাধারা থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে মুসলমানরা আদৌ কোন গুরুত্ব দেয়নি । ঐ পবিত্র জ্ঞানধারার উৎসমুখ ছিলেন হযরত ইমাম আলী (আ.) তার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন যে , হযরত আলী (আ.)-ই ইসলাম এবং পবিত্র কুরআন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি । এমন কি কুরআন সংগ্রহের সময়ও খেলাফত প্রশাসন হযরত আলী (আ.)-কে সে ব্যাপারে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করার অধিকার দেয়নি । শুধু তাই নয় , এ ব্যাপারে তার নামটাও তারা উচ্চারণ করেনি সেদিন । অথচ খেলাফত প্রশাসন এটা ভাল করেই জানতেন যে , রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (আ.) বহুদিন পর্যন্ত নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখেন । আর ঐ সময়ে তিনি কুরআনের সমগ্র লিপিসমূহকে একর্তিতে ভাবে সংগ্রহ করে ছিলেন ।
খেলাফত প্রশাসনের এমনই ধরণের আরও অনেক কর্মকান্ড হযরত আলী (আ.) এর ভক্ত ও অনুসারীদের বিশাসকে অধিকতর সূদৃঢ় এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক হতে সাহায্য করেছিল । এর ফলে দিনের পর দিন তাদের কার্যক্রমের গতিও বহু গুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে । ওদিকে ব্যাপক ভাবে গণ-প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় হযরত আলী (আ.) ব্যক্তিগত পর্যায়ে লোক তৈরীর কাজ চালিয়ে যান । এই দীর্ঘ 25 বছরের মধ্যে হযরত আলী (আ.)-এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চারজন শিষ্য ও আপ্রাণ সহযোগীর তিনজনই পরলোক গমন করেন । যারা ছিলেন হযরত সালমান ফারসী (রা.) , হযরত আবুযার গিফারী (রা.) এবং হযরতুমিকদাদ কিন্তু ইতিমধ্যেই আরও বহু সংখ্যক সাহাবী এবং হেজাজ (বর্তমান সৌদি আরব) , ইয়ামান , ইরাক সহ বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য তাবেয়ীন (যারা রাসূলের সাহাবীদের সাক্ষাত লাভ করেছেন) হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারীতে পরিণত হন । যার ফলে তৃতীয় খলিফা নিহত হওয়ার পর প্রশাসন রাজ্যের চতুর্দিক থেকে গণসমর্থনের জোয়ার হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দিকে ধাবিত হয় । সকলে গণভাবে হযরত আলী (আ.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং তিনি খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন ।