ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব 0%

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক: আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হুসাইন তাবাতাবাঈ
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 40535
ডাউনলোড: 5458

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 31 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 40535 / ডাউনলোড: 5458
সাইজ সাইজ সাইজ
ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

ইসলাম ও শীয়া মাযহাব

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

‘ইসলাম ও শীয়া মাযহাব’ নামক এ গ্রন্থে ইসলামের দু’টি বৃহৎ উপদলের (শীয়া ও সুন্নী) অন্যতম শীয়া মাযহাবের প্রকৃত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে । শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি, বিকাশ ও চিন্তাধারার প্রকৃতি এবং ইসলামী জ্ঞানের ব্যাপারে শীয়া মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গী এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে ।

ইমাম আলী (আ.)-এর পাঁচ বছরের খেলাফতের ফসল

হযরত আলী (আ.) তার 4 বছর 9 মাসের শাসন আমলে খেলাফত প্রশাসনের স্তুপীকৃত অরাজকতা ও বিশৃংখলাকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যদিও সমর্থ হননি তবুও এ ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল ।

1 । নিজের অনুসৃত ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক জীবনাদর্শের মাধ্যমে জনগণকে এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ও আকর্ষনীয় জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত করেন । মুয়াবিয়ার চোখ ধাধানো রাজকীয় জীবন যাপন পদ্ধতির সমান্তরাল তিনি জনগণের মাঝে অতি দরিদতেম জীবন যাপন করতেন । তিনি কখনো নিজের বন্ধু-বান্ধব , পরিবার বা আত্মীয় স্বজনকে অন্যায়ভাবে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেননি । অথবা ধনীকে দরিদ্রের উপর বা সক্ষমকে অক্ষমের উপর কখনো তিনি অগ্রাধিকার দেননি ।

2 । পর্বতসম সমস্যাকীর্ণ দিনগুলো অতিবাহিত করা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে তিনি ইসলামের সত্যিকারের অমূল্য জ্ঞান সম্ভার বা সম্পদ রেখে গেছেন ।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীরা বলত , ইমাম আলী (আ.) একজন মহাবীর ছিলেন । তিনি কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না । কেননা , তিনি বিরোধীদের সাথে সাময়িক বন্ধুত্ব স্থাপন ও তেলমর্দনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিত্রিক শান্ত করে , নিজের খেলাফতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারতেন । অতঃপর সময় বুঝে তাদের দমন করতে পারতেন ।

কিন্তু বিরোধীরা একথাটি ভুলে গেছে যে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফত ছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন । আর যে কোন বৈপ্লবিক আন্দোলনকেই সব ধরণের তৈল মর্দন ও মেকী আচরণ নীতিগুলো বর্জন করতে হয় । ঠিক একই পরিস্থিতি মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির যুগেও পরিলক্ষিত হয় । মহানবী (সা.)-কে মক্কার কাফের ও মুশরিকরা বহুবার আপোষের প্রস্তা দিয়েছিল । তাদের প্রস্তাব ছিল , মহানবী (সা.) যেন তাদের খোদাগুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করেন , তাহলে তারাও মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কোন বাধা দেবে না । কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের এই প্রস্তাব আদৌ মেনে নেননি । অথচ নবুয়তের চরম দূযোগপূর্ণ সেই দিনগুলোতে তৈলমদন ও আপোষমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারতেন । অতঃপর সময় সুযোগ মত শত্রুদের দমন করতে পারতেন । কিন্তু সত্যিকারের ইসলাম প্রচার নীতি কখনই একটি সত্যকে হত্যার মাধ্যমে অন্য একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা বা একটি মিথ্যাকে দিয়ে অন্য একটি মিথ্যাকে অপসারণ করার অনুমতি দেয় না । এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উল্লেখযোগ্য ।49

আবার অন্য দিকে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শত্রুরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে যে কোন ধরণের অন্যায় অপরাধ এবং ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিলংঘনের ব্যাপারেও কুন্ঠিত হয়নি । শুধু তাই নয় , নিজেদের চারিত্রিক কলঙ্ক গুলোকে সাহাবী বা মুজতাহীদ (ইসলামী গবেষক) উপাধি দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন । অথচ হযরত ইমাম আলী (আ.) সব সময়ই ইসলামী নীতিমালার পুঙ্খানু পুঙ্খ অনুসরণের ব্যাপারে ছিলেন বদ্ধ পরিকর ।

হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞান , বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় এগারো হাজার অমূল্য সংক্ষিপ্ত হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে ।50 তিনি ইসলামের সুগভীর জ্ঞানরাজীকে অত্যন্ত শুদ্ধ ও উন্নত অথচ প্রাঞ্জল ভাষার বক্তৃতামালায়51 বর্ণনা করেছেন ।52 তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার ব্যাকারণ ও সাহিত্যের মূলনীতি রচনা করেন । তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের উচ্চতর দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিস্থাপন করেন এবং উন্মুক্ত যুক্তি-বিন্যাস ও যৌক্তিক প্রত্যক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে ব্যাখার নীতি প্রচলন করেন । সে যুগের দার্শনিকরা তখনও যেসব দার্শনিক সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন , তিনি সেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে ছিলেন । এমন কি এ ব্যাপারে তিনি এতবেশী গুরুত্বারোপ করতেন যে , যুদ্ধের ভয়াবহ ডামাডোলের মাঝেও53 সুযোগ মত ঐসব জ্ঞানগর্ভ মুলক পর্যালোচনার প্রয়াস পেতেন ।

3 । হযরত ইমাম আলী (আ.) ব্যাপক সংখ্যক লোককে ইসলামী পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলেন ।54 ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ঐসব জ্ঞানী- পণ্ডিতদের মাঝে হযরত ওয়ায়েস কারানী (রা.) , হযরত কুমায়েল বিন যিয়াদ (রা.) , হযরত মেইসাম তাম্মার (রা.) ও রশীদ হাজারীর (রা.) মত অসংখ্য সাধুপুরুষও ছিলেন । যারা ইতিহাসে ইসলামী ইরফানের (আধ্যাত্মবাদ) উৎস হিসেবে পরিচিত । ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে আবার অনেকেই ইসলামী ফিকাহ (আইন শাস্ত্র) , কালাম (মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র) , তাফসীর , কিরাআত (কুরআনের শুদ্ধপঠন শাস্ত্র) ও অন্যান্য বিষয়ের মুল উৎস হিসেবে পরিচিত ।