ইমাম হুসাইনের
(আ.) জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
নাতি হুসাইনের(আ.) জন্য বিভিন্ন উপলক্ষে মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
1. উম্মুল ফাযলের হাদীসঃ
মুসতাদরাকে সহীহাইন, তারিখে ইবনে আসাকির, মাকতালে খাওয়ারিযমীসহ আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন গ্রন্থে
বর্ণিত হয়েছেঃ
হারিসের কন্যা উম্মুল ফাযল থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মহানবী (সা.) এর কাছে গেলেন ও বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমি গত রাতে দুঃখজনক এক স্বপ্ন দেখলাম ! বললেনঃ কী দেখেছো ? জবাব দিলেনঃ খুব কঠিন ! তিনি বললেনঃ কী হয়েছে ? তখন বললেনঃ আমি দেখলাম আপনার শরীরের একটি টুকরা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমার আচলে এসে পড়লো !
আল্লাহর রাসূল(সা.) বললেন তুমি খুব ভাল স্বপ্ন দেখেছো; আল্লাহর ইচ্ছায় ফাতেমার একটি ছেলে জন্ম গ্রহণ করবে এবং তোমার আচলে জায়গা নিবে
।”
এর কিছুদিন পরই ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্ম হল [যেমনটি মহানবী (সা.) বলেছিলেন] এবং তিনি আমার আচলে স্থান নিলেন
।একদিন মহানবী(সা.)এর নিকট গেলাম এবং হুসাইনকে তার কোলে রাখলাম, এর কিছুক্ষণ পর আমার থেকে তার দৃষ্টি অন্য দিকে গেল
।হটাৎ দেখলাম মহানবী(সা.) এর দু
’
চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে! তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (সা.) ! আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার কি হয়েছে ? তিনি বললেনঃ
‘
জিবরাঈল(আ.) আমার সাক্ষাতে এসে আমাকে এ খবর দিলেন যে, আমার উম্মত খুব শীঘ্রই আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে
।’
বললাম, এই শিশুকে ?!
’
তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, সে (জিব্রাঈল) আমার জন্য রক্তিম কিছু মাটিও এনেছেন
।”
মুসতাদরাকে সহীহাইনের লেখক হাকিম বলেনঃ এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ ।কিন্তু তারা এটি বর্ণনা করেন নি ।
2.যয়নাব বিনতে যাহাশের বর্ণনাঃ
তারিখে ইবনে আসাকির, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, তারিখে ইবনে কাসিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে
যয়নাব বলেনঃ একদিন মহানবী(সা.) আমার ঘরে ছিলেন, সবে হাটতে শেখা হুসাইনকে (আ.) আমি নজরে রাখছিলাম
।হটাৎ আমি অন্য মনস্ক হয়েছিলাম ।এ সুযোগে হুসাইন(আ.) আল্লাহর রাসূলের (সা.) নিকট গেলেন
।তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও ।(এরপর বলা হয়) অতঃপর হাত ওপরে তুললেন
।এরপর মহানবী(সা.) নামায শেষ করলে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমি আপনাকে আজ একটি কাজ করতে দেখলাম যা এ পর্যন্ত কখনোই দেখিনি ? তিনি বললেনঃ
‘
জিবরাঈল এসে আমাকে এ খবর দিলেন যে, আমার উম্মত আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে
।’
বললামঃ তাহলে আমাকে ঐ মাটি দেখান
।তিনি আমার জন্য রক্তিম মাটি আনলেন ।
3. হযরত আয়েশার (রা.) বর্ণনাঃ
তারিখে ইবনে আসাকির মাকতালে খাওয়ারেযমী, মাজমাউয যাওয়ায়িদসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে আবি সালমা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ
হযরত আয়েশা বলেন আল্লাহর রাসূল(সা.) হুসাইনকে (আ.) তার উরুতে বসিয়েছিলেন
।জিবরাঈল(আ.) তার নিকট এসে বললেনঃ
‘
এ আপনার বংশধর?’
মহানবী (সা.) বললেনঃ হ্যাঁ,
।জিবরাঈল বললেনঃ কিন্তু শীঘ্রই আপনার উম্মত(আপনার পরে) তাকে হত্যা করবে
।মহানবী(সা.)-এর চোখ দু
’
টি অশ্রুসিক্ত হল ।জিবরাঈল বললেনঃ যদি আপনি চান তাহলে যে মাটিতে তিনি(ইমাম হুসাইন) শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি
।তিনি বললেনঃ তাই করুন ।”
জিবরাঈল (আ.) তাফ (কারবালা) থেকে মাটি এনে হযরত (সা.)-কে দেখালেন
।
অপর এক বর্ণনায় এসেছেঃ জিবরাঈল ইরাকের তাফের(কারবালা) দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং লাল রংয়ের মাটি তাকে দেখিয়ে বললেনঃ এ হল তার শাহাদত স্থলের মাটি
।
এ বিষয়ে অন্যান্য বর্ণনাও এসেছে যা থেকে ফেরেশতা কর্তৃক আল্লাহর রাসূলকে(সা.) ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের খবর দানের বিষয়টি সমর্থিত
।যেমনঃ
1. উম্মে সালমার বর্ণনাঃ
মুসতাদরাকে সহীহাইন, তাবাকাতে ইবনে সা
’
দ, তারিখে ইবনে আসাকিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে
যে বর্ণনাকারী বলেনঃ উম্মে সালমা(রা.) আমাকে সংবাদ দিলেন যে, এক রাতে মহানবী (সা.) ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুলেন এবং (কিছুক্ষণ) পরে বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলেন, পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন ও নীরব হলেন
।দ্বিতীয়বার প্রথমবারের চেয়ে আরও বেশী বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠলেন ।আবার ঘুমিয়ে পড়লেন ।পুনরায় রক্তিম বর্ণের মাটি হাতে নিয়ে তাতে চুম্বনরত অবস্থায় জেগে উঠলেন ।আমি বললাম! হে আল্লাহর রাসূল ! এ মাটি কিসের ? তিনি বললেনঃ
“
জিবরাঈল আমাকে সংবাদ দিল যে, সে (হুসাইন) ইরাকের মাটিতে শহীদ হবে
।আমি জিবরাঈলকে বললাম যে মাটিতে শহীদ হবে তা আমাকে দেখাও ।আর এ হল সেখানকার মাটি ।”
হাকিম বলেনঃ এ হাদীস প্রসিদ্ধ দুই হাদীসবেত্তার(বুখারী ও মুসলিম) শর্তানুসারে সহীহ বলে গণ্য কিন্তু তারা এটি তাদের নিজেদের গ্রন্থে বর্ণনা করেন নি
।
2. আনাস ইবনে মালিকের বর্ণনাঃ
মুসনাদে আহমাদ, আল-মো
’
জামূল কাবির তাবরানী, তারিখে ইবনে আসাকিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিতঃ
আনাস ইবনে মালিক বলেনঃ‘
ক্বাতর’
নামক এক ফেরেশতা আল্লাহর কাছে মহানবী (সা.) এর সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলেন
।মহান আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ফেরেশতা রাসূলের‘
উম্মে সালমার’
গৃহে অবস্থানের দিবসে আসলেন
।মহানবী(সা.) উম্মে সালমাকে বললেনঃ সাবধান থেকো, কেউ যেন আমাদের মজলিসে প্রবেশ না করে
।এমন সময় তিনি যখন কক্ষে অবস্থান করছিলেন হটাৎ হুসাইন ইবনে আলী(আ.) দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন
।ঐ ফেরেশতা বললোঃ তাকে ভালবাসেন? তিনি (সা.) বললেনঃ হ্যাঁ
।বললোঃ‘
আপনার উম্মত খুব শীঘ্রই তাকে হত্যা করবে ।যদি আপনি চান তবে যে স্থানে তিনি শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি’
।তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, দেখতে চাই
।(উম্মে সালমা) বলেনঃ ঐ ফেরেশতা (ইমাম হুসাইনের) শাহাদতের স্থান থেকে এক মুষ্ঠি মাটি এনে হযরত (সা.) কে দেখালেন
।কিছুক্ষণ পর রক্ত মিশ্রিত কিছু বালি বা রক্তিম মাটি আনলেন ।উম্মে সালমা তা গ্রহণ করলেন এবং নিজের কাপড়ে রাখলেন ।হাদীসের বর্ণনাকারী সাবিত বলেনঃ আমরা(ঐ সময়) বলতামঃ এ হল কারবালা !