ইমাম আসকারী (আ.)

ইমাম আসকারী (আ.)0%

ইমাম আসকারী (আ.) লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ইমাম হাসান বিন আলী আল আসকারী (আ.)

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 17 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 4750 / ডাউনলোড: 2437
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমাম আসকারী (আ.)

ইমাম আসকারী (আ.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

মুজেজা ও অদৃশ্য জগতের সাথে ইমামের সম্পর্ক

ইমাম আসকারী (আ.)-এর পূর্ব পুরুষ ও ইমামগণ মহান আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের কারণে অদৃশ্য জগত ও ফেরেস্তাগণের উপর জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব লাভ করেছিলেন। ইমামও এরূপ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ইমামের অসংখ্য মুজেজা ও অলৌকিক কর্মকান্ডের বিবরণ দিতে গেলে পৃথক একটি বই লেখার প্রয়োজন হবে। আমরা এখানে এর কয়েকটি নমুনা পেশ করবো মাত্র।

1 আবু হাশেম জা ফরী বলেন : একদা চেয়েছিলাম ইমাম আসকারী (আ.) - এর কাছে একটি আংটি তৈরী করার মতো কিছু পরিমান রৌপ্য সাহায্য চাইবো। ইমামের সাক্ষাতে গেলাম , বসলাম কিন্তু যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম বেমালুম ভুলে গেলাম। অতঃপর যখন আসার জন্য রওনা হলাম ইমাম আমাকে একটি আংটি দিয়ে বললেন , রৌপ্য চেয়েছিলে আমি তোমাকে দিলাম এবং আংটির পাথর মুজুরী অতিরিক্ত লাভ হিসাবে পেলে। তোমার মঙ্গল হোক।

বললাম : হে আমার মাওলা , আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর ওলি ও আমার ইমাম। আপনার অনুসরণ আমার দ্বীনেরই কর্তব্য।

বললেন : হে আবুল হাসেম , আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করুক।37

2 সাবলানজী আবু হাশেম জা ফরীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : এক সময় আমি এবং আরও চারজন লোক সালেহ ইবনে ওয়াসিফের কারাগারে বন্দী ছিলাম। একদিন ইমাম আসকারী (আ.) ও তাঁর ভাই জা ফর কারাগারে প্রবেশ করলেন। আমরা ইমামের খেদমত করার জন্য ইমামের চার পাশে অবস্থান নিলাম। বনি জাম গোত্রের এক ব্যক্তি আমাদের সাথে ছিল সে নিজেকে আলী (আ.) - এর বংশধর বলে দাবি করতো। ইমাম আমাদের বললেন যদি তোমাদের মাঝে তোমাদের ঘনিষ্ট লোক ব্যতীত অন্য কেহ না থাকতো তাহলে বলে দিতাম কখন তোমরা মুক্তি পাবে। অতঃপর ঐ লোকটিকে বাহিরে যাওয়ার ইঙ্গিত করলেন। লোকটি বাইরে চলে গেলে ইমাম বললেন : এই লোকটি তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় তার থেকে সাবধান থাকবে। এ পর্যন্ত তোমরা যা বলেছ সব তথ্যই খলিফাকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে সে লিখে রেখেছে এবং তা এখনও তার পোশাকের ভিতর লুকায়িত আছে। আমাদের কয়েকজন তাকে তল্লাশী চালিয়ে তার পোশাকের ভিতর থেকে লুকায়িত তথ্য সমূহ কেড়ে নিলো। তখন বুঝতে পারলাম সত্যই বিপদজনক অনেক তথ্যই সে লিখে রেখেছে ।38

3 মুহাম্মদ ইবনে রাবি শাইবানী বলেন : একবার আহ্ওয়াজে এক দ্বিত্ববাদীর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম অতঃপর সামাররা গিয়ে পৌঁছলাম। ঐ দ্বিত্ববাদীর যুক্তির কিছু প্রভাব আমার উপর পড়েছিল। ফলে একত্ববাদের উপর কিছু সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। একদিন আহমদ ইবনে খোসাইব এর বাড়িতে বসে ছিলাম এমন সময় ইমাম আসকারী (আ.) এক সভা থেকে এলেন , আমাকে লক্ষ্য করে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন ,اَحَدٌ اَحَدٌ فَوحِّدهُ আল্লাহ্ এক আল্লাহ্ এক এবং তাকে অদ্বিতীয় মেনে নাও। আমি বেহুশ হয়ে পড়লাম।39

4.ইসমাইল ইবনে মুহাম্মদ বলেন : একদিন ইমাম আসকারী (আ.)-এর বাড়ির দরজায় বসে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যখন তিনি বাইরে এলেন তাঁর সামনে গিয়ে আমার দুঃখ দুর্দশার কথা জানিয়ে অভিযোগ করলাম এবং কসম খেয়ে বললাম আমার এমন অবস্থা যে একটি দিরহামও আমার কাছে নেই।

ইমাম বললেন : কসম খেয়ে ফেললে অথচ 200 দিরহাম মাটির নিচে পুঁতে রেখে এসেছো!

অতঃপর বললেন : এ কথা বললাম বলে তোমাকে সাহায্য করব না এমন নয়। এরপর তিনি তার ভৃত্যকে ইশারা করে বললেন , তোমার কাছে যা আছে তা ইসমাইলকে দিয়ে দাও। ভৃত্যটি আমাকে 100 দিনার দিলো। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিলাম। এমন সময় ইমাম বললেন আমার ভয় হয় যখন ঐ 200 দিরহাম তোমার খুব প্রয়োজন পড়বে তখন ওটাকে আর পাবে না।

আমি ফিরে এসে দিনারগুলি যেখানে পুঁতে রেখেছিলাম তুলে নিয়ে জায়গা পরিবর্তন করে এমনভাবে লুকিয়ে রাখলাম যাতে কেউ খুঁজে না পায়। কিছু দিন পর আমার অর্থের প্রয়োজন পড়লে ঐ দিনারগুলো যেখানে লুকিয়ে রেখেছিলাম তা উঠিয়ে আনতে গেলাম কিন্তু একটি দিরহামও সেখানে পেলাম না। আমার আক্কেল সেলামি হলো। পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে , আমার ছেলে ওখান থেকে সবগুলো দিনার তুলে নিয়েছিল এবং তার এক দিনারও আমার হাতে আর ফিরে আসে নি। ঠিক যেমন ইমাম বলেছিলেন।40

5 মুহাম্মদ ইবনে আইয়াশ বলেন : একদিন আমরা কয়েকজন একত্রে বসে ইমাম আসকারী (আ.) - এর মুজেজা সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। আমাদের মাঝে এক নাসেবী ছিল সে বললো আমি কয়েকটা প্রশ্ন একটা কাগজের উপর কালি বিহীন কলমে লিখবো। যদি ইমাম জবাব দিতে পারেন তাহলে বিশ্বাস করবো তিনি সত্যিকার ইমাম। আমরা সে কথা মত কতগুলো বিষয় লিখলাম নাসেবীও কালি বিহীন কলমে তার প্রশ্নগুলো লিখলো। আমরা সেগুলো ইমাম আসকারী (আ.) - এর নিকট পাঠালাম। ইমাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠালেন এবং নাসেবীর কাগজের উপর তার নাম , তার পিতার নাম , তার মাতার নাম লিখে পাঠালেন। নাসেবী তা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তার হুশ ফিরে আসার পর ইমামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো। এরপরে সে ইমামের একনিষ্ঠ অনুসারীদের মধ্যে শামিল হলো।41

6 ওমর ইবনে আবি মুসলেম বলেন : সামিউম মুসমায়ি আমার এক প্রতিবেশী , যার বাড়ী আমার বাড়ির দেয়ালের সাথে লাগানো ছিল। সে আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করতো। আমি চিঠি লিখে ইমামকে এ ব্যাপারে দোয়া করতে অনুরোধ করলাম। তিনি জবাবে লিখলেন : অতি শীঘ্রই তোমার দুঃখ বেদনা লাঘব হবে এবং তুমি উক্ত প্রতিবেশীর বাড়ির মালিক হবে।

একমাস পরেই লোকটি মারা গেল এবং আমি বাড়িটি কিনে নিলাম ও ইমামের দোয়ার বরকতে ঐ বাড়িটি আমার বাড়ির সাথে সংযুক্ত হলো।42

7 আবু হামজা বলেন : অনেকবার দেখেছি ইমাম তার ভৃত্যদের (যারা বিভিন্ন দেশী তুর্কী , রোমীয় , দাইলামী ও অন্যান্য ভাষাভাষী ছিল ) সাথে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলতেন। আমি অবাক হয়ে যেতাম এবং মনে মনে বলতাম ইমাম মদীনায় জন্মগ্রহণ করেছেন অথচ কিভাবে তিনি এত ভাষায় কথা বলেন ; ইমাম আমার দিকে ফিরে বললেন : মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রতিনিধিদের অন্যান্য সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং সব কিছুর উপর জ্ঞান দান করেছেন। ইমামগণ বিভিন্ন ভাষা , বিভিন ব্যক্তির বংশ পরিচয় ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলী সম্পর্র্কে সম্যক অবগত থাকেন। যদি এরকম না হতো তাহলে সাধারণ মানুষ ও ইমামদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতো না।43

ইমাম আসকারী (আ.)-এর কিছু বাণী

1 « عَلَيْكَ بِالْاَقْتِصادِ وَ اِياَّكَ وَ الْاِسْرافَ»

মিতব্যয়ী হও এবং অপচয় ও অপব্যয় করো না।44

ইমাম যখন ছোট ছিলেন এক ব্যক্তি দেখলেন কিছু ছেলে খেলাধুলায় মগ্ন আর ইমাম পাশে বসে কাঁদছেন। লোকটি ভাবলেন হয়তো অন্যান্য ছেলেদের মত খেলাধুলা করতে পারছে না বলে ইমাম কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলেন : তোমাকে কি কিছু খেলনা কিনে দেব ?

ইমাম বললেন : يا قَليلَ الْعَقْلِ ما لِلَّعِبِ خُلِقْنا হে অল্প বিদ্যার অধিকারী ,আমাদেরকে খেলাধুলার জন্য সৃষ্টি করা হয় নি।

লোকটি জিজ্ঞেস করলো : তাহলে কিজন্য সৃষ্ট হয়েছো ?

বললেন :لِلْعِلْمِ وَ الْعِبادَةِ জ্ঞানার্জন ও ইবাদতের জন্য।

জিজ্ঞেস করলো : একথা কোথায় পেয়েছো ?

বললেন : মহান আল্লাহর বাণী থেকে। যেমন কোরআনে উল্লিখিত আছে :

اَفَحَسِبْتُمْ انَّما خَلَقْناكُمْ عَبَثاً وَ اَنَّكُمْ اِلَيْنا لاَ تُرْجَعُونَ

আমরা কি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা কি আমাদের নিকট কি প্রত্যাবর্তন করবে না।45

2لاَ تُمارِ فَيَذْهَبُ بَهاَؤُكَ وَ لاَ تُمازِحْ فَيُجْتَرَئُ عَلَيْكَ

ঝগড়াঝাটি করো না তাহলে মানসম্মান থাকবেনা , ঠাট্টা করো না তাহলে অন্যরা সাহস পেয়ে যাবে।46

3مِنَ التَّواضُعِ السَّلامُ عَلَى كُلِّ مَنْ تَمُرُّبِهِ وَ الْجُلُوسُ دُونَ شَرَفِ الْمَجْلِس

সবাইকে (যার সাথেই দেখা হোক ) সালাম করা এবং সভা সমাবেশের নিচে ও পিছনে বসা বিনয় ও নম্রতার লক্ষণ।47

4اِذا نَشَطَتِ الْقُلُوبُ فَاَوْدِعُوها وَ اِذا نَفَرَتْ فَوَدِّعُوها

যখন মন উৎফুল্ল থাকে তখন জ্ঞানার্জন কর , আর যখন বিষণ্ন থাকে তখন বিরত থাকো।48

5لَيْسَ مِنَ الْاَدَبِ اِظْهارُ الْفَرَحِ عِنْدَ الْمَحْزُونِ

শোকার্ত লোকের সামনে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করা অভদ্রতার লক্ষণ।49

6اَلتَّواضُعُ نِعْمَةُ لاَ يُحْسَدُ عَلَيْها

বিনয় এমন এক নিয়ামত যে , বিনয়ীর প্রতি কেহই ঈর্ষা করে না।50

7مَنْ وَعَظَ اَخاهُ سِرّاً فَقَدْ زانَهُ وَ مَنْ وَعَظَهُ عَلانِيَةً فَقَدْ شانَهُ

যে ব্যক্তি কাউকে গোপনে উপদেশ দেয় সে তাকে অলংকৃত করলো , আর যে ব্যক্তি সকলের সামনে প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করলো (উপদেশ দিলো ) শুধু তার বদনামই করলো সংশোধন করতে পারলো না।51

8كَفاكَ اَدَباً لِنَفْسِكَ تَجَنُّبُكَ ما تَكْرَهُ مِنْ غَيْرِكَ

অন্যের যে কাজ তোমার অপছন্দ যদি তা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পার তাই তোমার আত্মশুদ্ধির জন্য যথেষ্ট।52

9حُسْنُ الصُّورَةِ جمالٌ ظاهِرٌ وَ حُسْنُ الْعَقْلِ جَمالٌ باطِنٌ

চেহারার সৌন্দর্য কেবলমাত্র বাহ্যিক কিন্তু জ্ঞানের সৌন্দর্য অন্তরেও বিদ্যমান।53

10اِنَّ الْوُصُولَ اِلىَ اللَّهِ عَزَّوَجَلَّ سَفَرٌ لاَ يُدْرِكُ اِلاَّ بِاسْتِطاءِ اللَّيْلِ

আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে হলে এমন এক সফর করতে হবে যেখানে রাত্রি জাগরণ ব্যতীত বিকল্প কোন রাস্তা নেই।54

11جُعِلَتِ الْخَبائِثُ فِي بَيْتٍ وَ الْكِذْبُ مِفاتيحُها

অপবিত্রতাসমূহ একটি ঘরে একত্রিত করা হয়েছে যাদের চাবি হচ্ছে মিথ্যা।55

12اِنَّ لِلْجُودِ مِقْداراً فَاِذا زادَ عَلَيْهِ فِهوَ سَرَفٌ

দান করারও একটা পরিমান আছে যদি তা লংঘন করা হয় তা হবে অপচয়।56

13وَ اِنَّ لِلْحَزْمِ مِقْداراً فَاِذا زادَ عَلَيْهِ فَهُوَ جُبْنٌ

সংযমেরও একটা সীমা আছে যদি তা অতিক্রম করা হয় তাহলে তা ভীতি বলে গণ্য।57

ইমামের কয়েকজন সহযোগী

শাসকদের দ্বারা সৃষ্ট শ্বাস রুদ্ধকর পরিবেশ ও ইমামের উপর কড়া নজর থাকার কারণে ইমামের সহযোগীদের সংখ্যা নিতান্ত কম হলেও যারা ইমামের বিশেষ সান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছে তারাই মহান দীনী ব্যক্তিত্ব ও পরহেজগার আলেমে পরিণত হয়েছেন। তাদের কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরবো :

1 আহমাদ ইবনে ইসহাক আশআরী কোমী : তিনি কোমের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে ইমামের একজন বিশেষ সহযোগী প্রতিনিধি ছিলেন। কোমবাসীদের বিভিন্ন বিষয়ের সমস্যামূলক প্রশ্নাদি ইমামের কাছে নিয়ে যেতেন এবং ইমামের কাছ থেকে প্রাপ্ত জবাব কোমবাসীদের নিকট পৌঁছে দিতেন। তিনি ইমাম জাওয়াদ ইমাম হাদী ( আ.) - এরও সাহাবী ছিলেন। এই দুই ইমামের কাছ থেকেও হাদীস বর্ণনা করেছেন। 58

আহমাদ ইবনে ইসহাকহুসাইন ইবনে রুহ নওবাখতী ( ইমাম মাহ্দী ( আ.) - এর স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময়ের তৃতীয় বিশেষ প্রতিনিধি ) এর কাছে হজ্বে যাওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখেন। হজ্বের অনুমতিপত্রের সাথে কিছু পরিমান কাপড়ও হস্তগত হলো। আহমাদ বললো আমার মৃত্যু সংবাদ এসেছে ( যে কাপড়টি পাঠানো হয়েছিল তা ছিল কাফনের কাপড় এটা দেখেই সে বুঝে নিয়েছিল তার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে ) এবং হজ্ব থেকে ফেরার পথে হালওয়ান যার বর্তমান নাম পুলে জাহাব সেখানে তার মৃত্যু হয়। 59

সাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ আহমাদ ইবনে ইসহাকের মৃত্যু সম্পর্কে বলেন : হালওয়ানে পৌঁছার তিন ফারসাখ ( এক ফারসাখ = 6 24 কি মি ) পূর্বেই তার জ্বর হয় এবং মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফলে আমরা নিরাশ হয়ে পড়লাম। বুঝতে পারলাম সে আর বাঁচবে না। যখন হালওয়ানে পৌঁছালাম সরাই খানায় আশ্রয় নিলাম। আহমদ বললো আজ রাতে আমাকে একা থাকতে দাও তোমরা তোমাদের গন্তব্যে চলে যাও। সবাই চলে গেলেও আমি গেলাম না। ফজর নামাজের ঠিক পূর্বে জেগে দেখি ইমাম আসকারী ( আ.) - এর খাদেম কাফুর সেখানে উপস্থিত। সে বললো :

اَحْسَنَ اللَّهُ بالْخَيْرِ عَزائَكُمْ وَ جَبَرَ بِالْمَحْبوبِ رَزِيَّتَكُمْ

-আল্লাহ্ তোমার মঙ্গল করুন এবং তোমার ঊপর আপতিত এই মুসিবতের প্রতিদান স্বরূপ উত্তম পুরস্কার দান করুন।

অতঃপর বললেন : তোমার সাথী আহমাদের গোসল ও কাফন সম্পন্ন হয়েছে। এখন যাও তার দাফনের ব্যবস্থা কর। সত্যিই আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের কারণে ইমামের দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে আহমাদ শ্রেষ্ঠ ছিল। একথা বলে কাফুর অদৃশ্য হয়ে গেল।60

2 আবু হাশেম দাউদ ইবনুল কাসেম জা ফরী : তিনি জনাব জা ফর তাইয়ার61 এর বংশধর এবং তার বংশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বাগদাদে বসবাস করতেন। ইমামদের কাছে তার যথেষ্ট মূল্য ও কদর ছিল। তিনি ইমাম জাওয়াদ , ইমাম হাদী ও ইমাম আসকারী (আ.) - এর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং মাহ্দী (আ.) এর বিশেষ উকিল ও বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন।

আবু হাশেম ইমামদের খুব ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ সাথিদের মধ্যে পরিগণিত। ইমামদের হতে প্রচুর হাদিস তিনি বর্ণনা করেন এবং এ সম্পর্কিত একটি বইও লিখেন। শিয়াদের প্রসিদ্ধ আলেমগণ তার এ বইয়ের প্রশংসা ও তা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।62

আবু হাশেম একজন স্বাধীনচেতা , অকুতোভয় ও সাহসী লোক ছিলেন। যখন ইয়াহিয়া ইবনে ওমর জায়দী63 এর কর্তিত মাথা বাগদাদের গর্ভণর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ তাহের এর নিকট নিয়ে আসা হয় অনেকেই তখন এ ঘটনাকে মহা বিজয় উল্লেখ করে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। আবু মুহাম্মদ গভর্ণরের কাছে গিয়ে সম্মান ও সম্বোধন ব্যতীরেকেই বললেন : হে আমির , তোমাকে এমন এক বিষয়ে সম্বর্ধনা জানাতে এসেছি যদি রাসূল (সা.) এখন জীবিত থাকতেন তার জন্য শোক প্রকাশ করতেন। গভর্ণর আবু হাশেমের এ কথার কোন প্রকার জবাব দিল না।64

3 আবদুল্লাহ্ ইবনে জা ফর হামিরী : তিনি কোম শহরের এক মহান ব্যক্তি এবং ইমাম আসকারী (আ.) - এর বিশিষ্ট সঙ্গীদের একজন। তিনি অনেক বই লেখেন এর মধ্যে কুরবুল আসনাদ ” আজও পর্যন্ত মহান শিয়া আলেম ও ফকীহদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আবদুল্লাহ্ ইবনে জা ফর 290 হিজরীতে কুফায় গমন করেন। কুফার জনগণ তার কাছ থেকে হাদিস শিক্ষা নিত।65

4 আবু আমর উসমান ইবনে যাইদ আমরী : ইমাম মাহ্দী (আ.) - এর স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময়কার প্রথম প্রতিনিধি। তিনি ইমাম হাদী , ইমাম আসকারী ও ইমাম মাহ্দী (আ.) - এর পক্ষ থেকে যাকাত ও খোমস সংগ্রহের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি 11 বছর বয়স থেকে ইমাম হাদী (আ.) - এর বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভে ধন্য হন। ইমাম হাদী , ইমাম আসকারী ও ইমাম মাহ্দী (আ.) - এর আমলে জনগণ এবং ইমামদের মাঝে যোগ সূত্র হিসেবে কাজ করতেন। তার থেকে মাঝে মাঝে জনগণ কেরামতিও লক্ষ্য করেছেন। পূর্বেও বলা হয়েছে তিনি ইমাম মাহ্দী (আ.) - এর প্রথম ও বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন এবং এর আগেও ইমাম হাদী ও ইমাম আসকারী (আ.) শিয়াদেরকে তার কাছ থেকে ধর্মীয় ও শরিয়তী বিষয়াদি শিক্ষা নেয়ার জন্য বলতেন। ইমাম হাদী ও ইমাম আসকারী (আ.) তার ব্যাপারে বলেছেন : আবু ওমর আমাদের বিশ্বাসভাজন ও আস্থাবান , সে যাই বলুক তা সবই আমাদের কথা এবং তোমাদের নিকট যে খবরই পৌঁছাবে তা সবই আমাদের পক্ষ থেকে।66