বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)0%

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক: দার রাহে হাক প্রকাশনীর লেখকবৃন্দ
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 15897
ডাউনলোড: 3915

পাঠকের মতামত:

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15897 / ডাউনলোড: 3915
সাইজ সাইজ সাইজ
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ইসলামী ভ্রাতৃত্ব (ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ধ্বনি)

ইসলামী ভ্রাতৃত্ব কোন আনুষ্ঠানিকতা নয় , বরং এক বাস্তবতা যা ঈমানের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত এবং তার ফল পর্যায়ক্রমে প্রকাশ লাভ করে।

ইমাম জাফর সাদেক (আ.) ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যকে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন :

মুমিন অপর মুমিনের ভাই এবং পথ প্রদর্শক। সে অপরের প্রতি জুলুম এবং খিয়ানত করে না। তাকে ধোকা দেয় না এবং কখনোই ওয়াদা ভঙ্গ করে না।76

ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অপর এক অবদান হলো এই যে , প্রত্যেক মুসলমান তার নিজের জন্যে যা চায় , তার ভাইয়ের জন্যে একই প্রত্যাশা করবে। তাঁকে (দীনি ভাইকে) অর্থ সম্পদ , শক্তি ও কথার মাধ্যমে সাহায্য করবে। ইসলামী ভ্রাতৃত্ব থেকে এটা আশাই করা যায় না যে , এক মুসলমান পেট ভরে খেয়ে , ভাল পোশাক পরে আনন্দে থাকবে , অথচ তার অপর মুসলমান ভাই অনাহারে বস্ত্রহীন ভাবে দিন কাটাবে।

হযরত ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন : যদি তোমার ভৃত্য ও সেবক থাকে অথচ তোমার ভাইয়ের না থাকে তাহলে তোমার ভৃত্যকে ঐ ভাইয়ের কাজে সাহায্যের জন্যে পাঠাও।77

ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সকল সম্পর্ক এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ককেও নিয়ম নীতির আওতাভূক্ত করেছে। কোরআন স্পষ্ট ভাষায় বলছে :

তুমি এমন কোন কওম পাবে না যারা আল্লাহ্ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে , (অপরদিকে) তারা তাদেরকেও ভালবাসে যারা আল্লাহ্ এবং তার রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করেছে , যদিও তারা তাদের পিতৃপুরুষ অথবা তাদের সন্তান-সন্ততি অথবা তাদের ভ্রাতৃবৃন্দ অথবা তাদের গোত্র গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হউক না কেন।

ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সালমান ফার্সী এবং বেলাল হাবাশীকে মহানবী (সা.)-এর নিকটতম অনুসারীর অন্তর্ভূক্ত করেছে। ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ছায়ায় চরম শত্রুতারও অবসান ঘটে। ছত্রভঙ্গ জনতা একে অপরের বন্ধুতে পরিণত হয়। এই ঐক্য এবং সংহতির কারণেই প্রত্যেক মুসলমানই এক বৃহৎ পবিরারের ন্যায় একে অপরের সুখ-দুঃখের অংশীদার।

দয়াশীল এবং পুতঃচরিত্রের অধিকারী জনগণের শ্লোগান হলো ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ব।

ইসলামী ভ্রাতৃত্ব প্রত্যেক মুসলমানের উপর এক দায়িত্ব সৃষ্টি করে। যার জন্যে কোন মুসলমানই নিজেকে অন্যের সমস্যা ও বিপদ থেকে পৃথক করে দেখতে পারে না। বরং সকলেই তাদের সামর্থ অনুযায়ী মুসলমানদের সমস্যা সমাধান করতে সদা সচেষ্ট।

এ দায়িত্ব দু ভাগে বিভক্ত :

প্রথম ভাগ

অর্থনৈতিক সহযোগিতা

অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সহযোগিতা করা যেমন : সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা বিধান , সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা , বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থান ইত্যাদি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন এবং মহান ইমামগণের বাণীতেও কিছু সংখ্যক মৌল কর্মসূচী উপস্থাপিত হয়েছে যেমন : যাকাত , খুমস , সদকা , দান ইত্যাদি।

দ্বিতীয় ভাগ

জ্ঞানগত এবং প্রশিক্ষণগত সহযোগিতা

দীনি প্রচার , তাবলিগ , পথ নির্দেশনা এবং উপদেশ দান করা , যে যতটুকু জানে অন্যদেরকে তা জানানো সকলের উপর একান্ত জরুরী। অন্যদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে শৈথিল্য করা চলবে না। ন্যায় কাজে আদেশ ও অন্যায় কাজে নিষেধ করতে হবে। যা প্রকৃতপক্ষে এক প্রকার হিত সাধন এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের এক প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু মুসলমানরা যদি কল্পনাপ্রসূত ভয়ের কারণে এবং অবাস্তব স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে এই মহান সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে এবং গুনাহ থেকে নিষেধ না করে ও সৎ কাজে অনুপ্রেরণা না যোগায় , তাহলে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রশিক্ষণের প্রাণ নিঃশেষিত হবে। আর এ ভাবে একটি সচেতন সমাজের সকল ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য বিদায় নিবে।

বর্তমান যুগে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব

বর্তমান যুগের মুসলমানদের জন্য ঐক্য ও সংহতির প্রযোজনীয়তা সর্ব যুগের চেয়ে বেশি। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা ইসলামী দেশসমূহে অনেক মূল্যবান খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ দান করেছেন , যার প্রতি অন্যদের দৃষ্টি পড়েছে এবং এ কারণে তারা মুসলমানদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করতে চায়।

আমাদেরকে অবশ্যই সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্বের স্থিতি যার ভিত্তি মহানবীর পবিত্র এবং শক্তিশালী হাতে স্থাপিত হয়েছে তা সহ ইসলামের সকল নিয়মের অনুসরণ করতে হবে।

মুসলমানরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অতএব , ইসলামী ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের কর্মসূচী প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। ফলে উচ্চ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানগত শিক্ষার মাধ্যমে তা মজবুত হবে। তাছাড়া প্রত্যেক পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে মুসলামান ভাই ভাই এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসাবে গড়ে তোলা।

ইসলামে জিহাদ

রহমতের নবী (সা.)

একশো কোটির অধিক সংখ্যক মুসলমান বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতের 14শ বৎসর পূর্তি (পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রবেশ) উপলক্ষে উৎসব পালন করেন।

এ উৎসব সেই মহতী দিনের কারণে উদযাপিত হচ্ছে যে দিন রাসূল (সা.) শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের ঝান্ডাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আর( وما ار سلنا ك الا رحمة للعا لمين ) শ্লোগান দিয়ে বিশ্ব শান্তির ভিত্তি এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে শান্তির সাথে বসবাসের নিশ্চয়তা বিধান করেন।78

ইসলাম শ্রেণী এবং গোত্র এবং জাতিগত বৈষম্য যা অধিকাংশ যুদ্ধ ও অঘটনের কারণ , তাকে উত্তম উপায়ে সমাধান করেছে। কিন্তু আধুনিক বিশ্ব এখন পর্যন্ত তার শিকার এবং প্রত্যহ যে কোন বাহানায় যুদ্ধ করছে।

ইসলামের শান্তিপ্রিয়তা ও ন্যায়পয়ায়ণতা এতই বেশী যে আহলে কিতাবদেরকে (ইহুদী ও খ্রিস্টান) ঐক্য ও সংহতির দিকে উদার আহবান জানিয়ে বলছে :

তুমি বল , হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন এক কথায় আস যা আমাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে সমান , (আর তা হলো) আমরা যেন আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করি। (আলে ইমরান : 64)

মুসলমানরা যখন মদীনায় হিজরত করলেন এবং ইসলামের বিজয় পতাকা তাদের মাথার উপর শোভা পাচ্ছিল তখন বিরোধীরা মহানবী (সা.)-এর নিকট সন্ধি পত্র নিয়ে উপস্থিত হলো এবং মহানবী (সা.)ও তাদেরকে স্বাগত জানালেন। এ সন্ধির সাক্ষী স্বরূপ হিজরতের প্রথম বর্ষে ইহুদীদের সাথে যে সকল সন্ধি হয়েছিল তা উল্লেখ করা যেতে পারে।79

ইসলাম শান্তি ও একত্রে বসবাসে আগ্রহী এবং এ ক্ষেত্রে বহু ফলপ্রসু কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

কিসের জন্যে জিহাদ ?

ইসলাম জীবন্ত ও বিশ্বজনীন দীন , যা পৃথিবীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করেছে।

ইসলাম সাবেক রোমীয় ধর্ম , ইহুদী এবং নাজীদের মত সমাজ এবং গোত্রের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় , বরং সমগ্র বিশ্বের জন্যে। মুসলমানরা ইসলামের শিক্ষার অনুসারী হিসাবে তাদের দায়িত্ব হলো , বঞ্চিত ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তি দানে এবং শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের জনগণকে জীবনের কর্মসূচী সম্পর্কে অবহিত করতে সচেষ্ট হওয়া।

ইসলামের মুজাহিদরা চিলতে পরিমাণ জমি হস্তগত করার জন্যে জিহাদ করেনি। আর এ জন্যেও জিহাদ করেনি যে এক সরকারকে বদলে ঐ স্থানে ঐ রূপ এক সরকার অথবা তার চেয়ে আরো বেশী অত্যাচারী সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। বরং জিহাদ হলো একটি মানবপ্রেম মুখী প্রচেষ্টা যা আল্লাহর রাহে এবং মানুষের কল্যাণের জন্যে ও অসংখ্য দুর্বল মানুষকে মুক্তি দিতে সংঘটিত হয়ে থাকে যেন ফেৎনা দূরীভূত হয় এবং সর্বজনীন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই মহৎ উদ্দেশ্য এবং এ জীবন্ত শিক্ষা ব্যাপক সংখ্যক জনগণের অসচেতনতার ইতি টানবে। তাছাড়া কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাবাদী যারা অনাথদের কলিজার রক্ত চুষে স্বপ্নের জীবন গড়ে তাদের পথ বন্ধ করে দেয়।

মানুষের ফিতরাতের (সহজাত প্রবণতা ও বিবেকের) দাবী হলো আগাছা এবং সমাজের নষ্ট অংশ সমূহ কেটে ফেলতে হবে। তাহলে জনগণের মুক্তির ও কল্যাণের পথ সুগম হবে। মানব প্রেমিক , ন্যায় পরায়ণ এবং স্বাধীনচেতা মানুষেরা এরূপ সংগ্রামের প্রতি উদ্যোগী ও তার প্রশংসা করেন ।

মহান আল্লাহ্ কতইনা অপূর্ব ভাষায় বলেছেন :

এবং আল্লাহ্ যদি মানব জাতিকে , তাদের একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তাহলে অবশ্যই পৃথিবী ফ্যাসাদপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ্ সকল জগদ্বাসীর উপর অতীব অনুগ্রহশীল। (সূরা বাকারা : 251)

ইসলামী আইনে জিহাদ প্রধান উদ্দেশ্য হিসাবে গৃহীত হয়নি। বরং তা সীমালংঘন ও নির্যাতন রোধের জন্যে। তাছাড়া যোগ্য মানুষদের কল্যাণের পথ সুগম করতে জিহাদকে সর্বশেষ উপায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরব মুসলমানদের প্রতিনিধি ইরানের সেনাপতি রুস্তম ফারাখযাদকে বলেছিলেন :

আল্লাহ্ আমাদেরকে নির্বাচন করেছেন এই জন্যে যে , জনগণকে বান্দা পূজারী থেকে খোদা পূজারীতে , বিশ্বের বন্দিত্ব থেকে স্বাধীন ও সৌভাগ্যবান করতে এবং ভ্রান্ত দীন সমূহের অত্যাচার থেকে ন্যায় ভিত্তিক ইসলামের পথে দাওয়াত করার জন্যে। যারা আমাদের দাওয়াত গ্রহণ করবে তার দেশকে তার কাছে সপে দিয়ে চলে যাব... । 80

ইসলামের অগ্রগতি কি তববারীর সাহায্যে হয়েছে ?!

মুসলমানদের জিহাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এটা যে , নিজেদের ও আপামর বঞ্চিতদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে তারা ইসলামের কানুন সম্পর্কে জানতে পারবে এবং ইসলামের মহত্ত্ব ও সত্যতাকে নিকট থেকে দেখবে।

মুসলমানরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধের সময় কখনোই কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করত না। তারা সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের দীনে অটল থাকতে পারত। এর পরিবর্তে ইসলামী রাষ্ট্র তাদেরকে সাহায্য করত।

রাসূল (সা.) হুদাইবিয়ার সন্ধিতে অঙ্গিকার করেন যে , যদি মক্কার কোন ব্যক্তি মুসলমান হয় এবং মদীনায় মুসলমানদের নিকট চলে আসে , মুসলমানরা তাকে গ্রহণ না করে মক্কায় পাঠিয়ে দিবে।81 এবং তিনি সে ওয়াদা অনুযায়ী আমল করেন।82 যদিও পারতেন কাফেরদের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিতে যে , যদি কোন মুসলমান ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মক্কায় কাফেরদের নিকট যায় তাহলে তাকে মদীনায় ফিরিয়ে দিতে।

রাসূল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিনে কুরাইশদেরকে স্বাধীন ভাবে ছেড়ে দেন এবং কাউকেই ইসলাম গ্রহণের জন্যে বাধ্য করেন নি। বরং ছেড়ে দিয়েছিলেন যেন তারা নিজেরাই সঠিক দীনকে চিনে নেয়। তাছাড়া রাসূল (সা.) মুসলমানদেরকে বলে রেখে ছিলেন যে , মক্কার দু এক জন অপরাধী ব্যতীত কাউকেই যেন হত্যা না করা হয়।83 অনুরূপ যখনই কোন কাফের নিরাপত্তা চাইত , তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হতো। যেন সে গবেষণার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। যেমন : সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা মক্কা বিজয়ের পর জেদ্দায় পালিয়ে যায়। যখন রাসূল (সা.)-এর কাছে তার জন্যে নিরাপত্তা চাইল , রাসূল (সা.) নিজের আমামা তার জন্যে পাঠিয়ে দেন , যেন এটার মাধ্যমে সে নিরাপদে থাকতে পারে এবং মক্কায় প্রবেশ করতে পারে। সাফওয়ান জেদ্দা থেকে ফিরে এসে রাসূল (সা.)-এর কাছে দুই মাস সময় চায়। রাসূল (সা.) গ্রহণ করেন এবং তাকে চার মাস সময় দেন। সে কাফের থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.)-এর সাথে হুনাইন এবং তায়েফ যায় ও অবশেষে স্বেচ্ছায় মুসলমান হয়।84 এভাবে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে , তলোয়ারের ব্যবহার শুধুমাত্র তাদের জন্যেই , যারা সত্যকে চেনা সত্বেও তার বিরোধিতা করে এবং অন্যদের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথে বাধা দান করে।

তরবারি ফেৎনাসমূহ দূরীভূত করার জন্যে বঞ্চিতদের মুক্তির জন্যে এবং মানুষের উন্নতি ও পরিপূর্ণতার জন্যে উপযুক্ত ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের ঈমান ও দৃঢ়তাই উত্তম দলিল যে , তরবাবির মাধ্যমে ইসলামের অগ্রগতি সাধিত হয়নি। প্রথম যুগের মুসলমানরা দীনকে এত বেশি ভালবাসত যে , সকল সমস্যার বিপরীতে অবিচল থাকতেন ; এমনকি নিজের জন্মভূমি ছেড়ে হিজরত করতেন।

বেলাল হাবাশী ইসলামের প্রথম দিকের মুসলমানদের মধ্যে একজন ছিলেন। আবু জেহেল তাকে হেজাজের গরম বালিতে ফেলে রেখে বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে রাখত এবং রৌদ্রের তাপে গরম হলে যখন সে যন্ত্রণায় চিৎকার করত তাকে বলা হতো : মুহাম্মদের খোদাকে অস্বীকার কর , কিন্তু বেলাল অনবরত বলত : আহাদ , আহাদ।85 এত সকল অত্যাচার সহ্য করেও সে ইসলাম থেকে হাত গুটিয়ে নেয়নি বরং দীন ইসলামের প্রতি অটল থেকেছে।

এ অবস্থার পরও কি বলা যায় যে , ইসলামের অগ্রগতি তরবারির জোরে হয়েছে ?!

ইসলামের শত্রুরা যেহেতু ইসলামের কোন দুর্বল দিক খুঁজে পাচ্ছিল না ; তাই চেয়েছিল এভাবে ইসলামকে কলঙ্কিত করতে। কিন্তু তারা জানে না যে ইসলাম তার সহজ সরল নীতি এবং বঞ্চিত ও নিপীড়িত জনগণকে সাহায্য করার মাধ্যমে অগ্রগতি সাধন করবে।

ফরাসী ঐতিহাসিক ড. গুস্তাভলুবুন লিখেছেন : ইসলামী বিশ্বের সম্প্রসারণ যুদ্ধের মাধ্যমে যতটা না হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশী হয়েছে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যমে।86