একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন0%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক: মীর আশরাফ-উল-আলম
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 42956
ডাউনলোড: 4671

পাঠকের মতামত:

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 42956 / ডাউনলোড: 4671
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

পবিত্র কোরআনে হিজাব

) وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِ‌هِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُ‌وجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ‌ مِنْهَا وَلْيَضْرِ‌بْنَ بِخُمُرِ‌هِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ‌ أُولِي الْإِرْ‌بَةِ مِنَ الرِّ‌جَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُ‌وا عَلَىٰ عَوْرَ‌اتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِ‌بْنَ بِأَرْ‌جُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّـهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ(

হে নবী! ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও যে , তাদের চক্ষুদ্বয়কে নিচের দিকে রাখতে (না-মাহরামদের প্রতি তাকানো থেকে নিজের চোখ ফিরিয়ে রাখা) এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে আর কখনোই যেন তারা তাদের সৌন্দর্য্যকে প্রকাশ্যে উম্মুক্ত না করে । শুধুমাত্র ঐ পরিমান ব্যতীত যা স্বাভাবিক ভাবেই উম্মুক্ত থাকে । তাদের ওড়না যেন বুকের উপর পর্যন্ত আসে (যাতে করে ঘাড় ও বুক তা দিয়ে ঢেকে যায়) এবং তাদের সৌন্দর্য্যকে যেন উম্মুক্ত না করে , শুধুমাত্র তাদের স্বামী অথবা পিতাগণ (পিতা , দাদা , দাদার বাবা , দাদার বাবার বাবা...) অথবা স্বামীর পিতাগণ (পিতা , দাদা , দাদার বাবা , দাদার বাবার বাবা...) অথবা তাদের নিজেদের পুত্রগণ অথবা তাদের স্বামীদের অন্য স্ত্রীর পুত্রগণ অথবা নিজেদের ভ্রাতা , ভ্রাতুষ্পুত্র , ভগ্নীপুত্র , স্বজাতির নারীগণ , তাদের অধিকারভুক্ত বাঁদী অথবা নির্বোধ ব্যক্তি (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি প্রাকৃতিক ভাবেই যার নারীর প্রতি কোন প্রকার আসক্তি থাকে না) অথবা শিশুগণ (এমন শিশু যাদের নারীদের গোপণ অঙ্গ সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণাই নেই) ব্যতীত । আর পথ চলার সময় তারা যেন এমনভাবে পা মাটিতে না রাখে যাতে করে তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশ পেয়ে যায় (অর্থাৎ পায়ে নুপুর দিয়ে জোরে জোরে মাটিতে পা ফেলে হেটে যাওয়া যার শব্দ পুরুষের কানে পৌঁছায়) । হে মু ’ মিনগন! তোমাদের অতীত গোনাহর ব্যাপারে তওবা করো যাতে করে সফলতা লাভ করতে পারো ।154

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَ‌فْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّـهُ غَفُورً‌ا رَّ‌حِيمًا

হে নবী! তোমার স্ত্রী ও কন্যাগণকে এবং মু ’ মিনদের স্ত্রীগণকে বলে দাও যে , তারা যেন বড় ওড়না (চাদরের ন্যায়) দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে রাখে যাতে তাদেরকে (সম্মানিত বলে) চেনা যায় এবং নিপীড়নের শিকার না হয় । (আর যদি এখন পর্যন্ত তাদের কোন গোনাহ হয়ে থাকে তবে তাদের জানা প্রয়োজন যে) আল্লাহ্ তা ’ য়ালা সর্বদা পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান ।155

দ্রষ্টব্য :

1- উপরোল্লিখিত দু ’ টি আয়াতে খুমুর ’ ও জালাবিব ’ এর মধ্যে পার্থক্য :

ক)- খুমুর হচ্ছে খিমারের বহুবচন যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আবৃত হওয়া বা আবৃত থাকা ইত্যাদি । কিন্তু সাধারণত বড় ওড়নাকে বলা হয়ে থাকে যা দ্বারা নারীরা তাদের মাথা , ঘাড় , গলা ও বুক ঢেকে রাখে । আর জালাবিব হচ্ছে জিলবাবের বহুবচন যার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে বড় চাদর অথবা ঢিলা ঢালা পোশাক বিশেষ । অবশ্য এই জিলবাবের আবার বিভিন্ন অর্থ রয়েছে এবং স্থান , কাল , পাত্র ভেদে অর্থের পরিবর্তনও হয়ে থাকে তবে যেটা পরিস্কার তা হচ্ছে এমন কিছু যার মাধ্যমে নারীরা তাদের সম্পূর্ণ শরীরকে ঢেকে রাখতে পারে ।

খ)- উস্তাদ মুতাহহারী (রহ.) এই দু ’ টির পার্থক্যের ব্যাপারে বলেছেন যে : নারীদের জন্য দু ’ ধরনের ওড়না বা চাদরের প্রচলন ছিল যার একটি হচ্ছে ছোট যাকে খুমুর বলা হয়ে থাকে এবং বাড়ীর ভিতরে পরিধানের জন্যে । আর অন্যটি হচ্ছে বড় যাকে জিলবাব বলা হয়ে থাকে এবং তা নিঃসন্দেহে বাড়ীর বাইরে পরিধানের জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । কেননা এই জিলবাব শব্দটি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে উক্ত অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে ।156

2- নারীদের শরীর জিলবাব (বড় চাদর) দ্বারা আবৃত করার উদ্দেশ্য কী ?

উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই যে , এই জিলবাবের মাধ্যমে নারিগণ তাদের শরীরকে না-মাহরামের দৃষ্টি থেকে দূরে রাখতে পারে । তবে তা যেন তারা তাদের শরীরের সাথে সুন্দর করে আঁকড়ে রাখে , এমন যেন না হয় যে ; তারা বড় চাদর পরেছে ঠিকই কিন্তু শরীরের সাথে তা আঁকড়ে রাখে নি এবং বাতাসে তা এদিক ওদিক উড়ে যাচ্ছে ও তাদের শরীরের আকর্ষনীয় স্থানগুলো সহজেই নজরে পড়ছে । চাদর বা বোরকা পরাটা যদি শুধু নাম মাত্র হয়ে থাকে আর সে কারণে রাস্তা-ঘাটে তাদের সৌন্দর্য্যতা , শরীরের আকর্ষনীয় স্থান , মাথার চুল সব কিছুই প্রকাশিত হয় তবে এ ধরনের চাদর বা বোরকাপরিধানকারিনীকে দুর্বল ঈমানের অধিকারী বলা যায় ।

আবৃত করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে যে , নারীরা তাদের চাদর বা বোরকা এমনভাবে পরবে যাতে করে তাদের সৌন্দর্য্য ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে থাকে এবং অসভ্য ও ইতর প্রকৃতির পুরুষরা তাদের শরীরের উপর নজর দেয়া থেকে নিরাশ হয় । আর বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করার লক্ষ্যে নারিগণ যেন চাদর পরার পরও একটি ছোট ওড়না যা তাদের মাথা , ঘাড় , গলা ও বুকের নিচ অংশ ঢেকে যায় পরিধান করবেন । কেননা কখনো যদি ভুলবশত বাতাসে চাদরটি শরীর থেকে সরে যায় সেক্ষেত্রেও যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না পায় ।

3- মাহরামদের (যাদের সাথে বিয়ে করা হারাম) সামনে সৌন্দর্য্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও সীমা রয়েছে যা নিম্নলিখিত আয়াতে এসেছে । আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা উক্ত বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন :

) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِيَسْتَأْذِنكُمُ الَّذِينَ مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ وَالَّذِينَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنكُمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ مِّن قَبْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ الظَّهِيرَةِ وَمِن بَعْدِ صَلَاةِ الْعِشَاءِ ثَلَاثُ عَوْرَاتٍ لَّكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌ بَعْدَهُنَّ طَوَّافُونَ عَلَيْكُم بَعْضُكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمُ الْآيَاتِ وَاللَّـهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ(

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দাস-দাসীরা(ভৃত্যরা) ও (তোমাদের সন্তানদের মধ্যে) যারা এখনো বালেগ হয় নি তারা তোমাদের ঘুমানোর ঘরে প্রবেশ করার জন্য তিনটি সময়ে অনুমতি নিবে : 1- ফজরের নামাজের আগে , 2- দুপুর বেলা যখন সাধারণত পোশাক খুলে ফেল , 3- এ ’ শার নামাজের পরে । এই বিশেষ তিনটি সময় তোমাদের জন্য , কিন্তু উক্ত তিনটি সময় ব্যতীত তোমাদের উপর কোন গোনাহ্ নেই এবং তাদের উপরেও নেই যদি তারা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে । (কারণ) তোমাদেরকে তো একে অপরের কাছে যাতায়াত করতেই হয় এবং তখন আন্তরিকতার সাথে একে অপরকে খেদমত কর । আল্লাহ তা ’ য়ালা এরূপেই তোমাদের জন্য আয়াতসমূহকে বর্ণনা করেছেন । কেননা আল্লাহ তা ’ য়ালা হচ্ছেন সর্বজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ।157

ফলাফল :

এটা ঠিক যে , পরিবারের সদস্যগণ সকলেই মাহরাম ও স্বাধীন , কিন্তু এই মাহরাম ও স্বাধীন থাকাটাও শর্তহীন নয় । মাহরাম ও স্বাধীন হওয়ার কারণে মা ও মেয়ে যেন সন্তানদের ও ভাইদের সামনে যে কোন পোশাক পরে আসা-যাওয়া না করে । কেননা শরীর অর্ধ প্রকাশ অথবা সম্পূর্ণ প্রকাশ এবং পা অনাবৃত থাকাটা সন্তানদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে যা তাদের কুপ্রবৃত্তিকে উস্কে দিতে পারে । আর এটা বলা ঠিক হবে না যে , তারা তো বাচ্চা কিচ্ছু বোঝে না , বরং এটা অবশ্যই বলা যায় যে , তারা বেশী কৌতুহলী ও উৎসুক এবং এই পরিবেশই হয়তো তাদেরকে যৌন বিষয়ের আগ্রহী করে তুলতে পারে ।158

4- যারা রাস্তা ও অলি-গলিতে নারীদের বিরক্ত করে থাকে অবশ্যই তাদের কঠিন শাস্তিপাওয়া উচিৎ , যেমনভাবে নিম্নের আয়াতে উল্লেখহয়েছে :

) لَّئِن لَّمْ يَنتَهِ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْمُرْجِفُونَ فِي الْمَدِينَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا يُجَاوِرُونَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا(

যদি মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরসমূহ হচ্ছে অসুস্থ এবং যারা মিথ্যা কথা ও অবাস্তব খবর মদীনায় ছড়িয়ে বেড়ায় এবং তারা যদি অপকর্ম থেকে সরে না দাঁড়ায় , তবে অবশ্যই তাদের উপর তোমাকে প্রতিপত্তি দান করবো , অতঃপর অল্প দিনের মধ্যেই তারা আর তোমার পাশে এই শহরে বাস করতে পারবে না ।159

সিদ্ধান্ত :

এই আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে , মদীনায় তিনটি দল চক্রান্ত করতো এবং প্রতিটি দলই বিভিন্নভাবে ইসলামের উপর আঘাত হানার জন্য পরিকল্পনা করতো । এই তিনটি দল হচ্ছে যথাক্রমে :

1- মুনাফিকরা ।

2- বখাটে ও ভবঘুরেরা ।

3- আর একদল হচ্ছে যারা অবাস্তব খবর প্রচার করতো বিশেষত যখন নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীরা যুদ্ধে যেতেন তখন মদীনায় থাকা অন্যান্য মুসলমানদের মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য তারা এ কাজ করতো ।

আল্লাহ্ তা ’ য়ালা নির্দেশ দিলেন যে , উক্ত দলসমূহের সাথে যেন কঠোর আচরণ করা হয় । এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্যে সর্বনিম্ন শাস্তি হচ্ছে তাদেরকে নির্বাসনে পাঠানো যাতে করে ইসলামী সমাজ পবিত্র থাকে । আর শাস্তির পরিমান যত কঠিন হবে ইসলামী সমাজে পবিত্রতা ও নৈতিকতা ততই বৃদ্ধি পাবে এবং এ ধরনের ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যাপারে যতই বিলম্ব করা হবে ইসলামী সমাজের জন্য তা হবে ততই ক্ষতিকর । কেননা এর ফলে ইসলামী সমাজে নৈতিক অনাচার ও পাপের পরিমান বাড়তেই থাকবে । কারণ এ ধরনের ব্যক্তিরা যখনই ইসলামী সমাজে প্রবেশের সুযোগ পায় তখনই ঐ সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় যাতে করে পর্যায়ক্রমে ভাল ও নীতিবান মানুষ প্রথম কাতার থেকে দূরে সরে যায় । তাকওয়া ও পরহেজগার ব্যক্তিদেরকে এ কারণেই সরিয়ে দিতে চায় যে , তারা যদি সমাজের প্রথম সারিতে অবস্থান করে তবে সে সমাজের অন্যদেরকেও তাদের মতই তৈরী করবে । প্রকৃতপক্ষে ইসলামী হুকুমত তো বিপ্লবী ও মু ’ মিন ব্যক্তিদের সহযোগিতায় টিকে থাকে । আর তারা যদি না থাকে তবে ইসলামী হুকুমত তাদের হাত ছাড়া হবে । কেননা এ ধরনের খারাপ ব্যক্তিরা শুধুমাত্র পেট পুজা ও যৌন সম্ভোগ ব্যতীত অন্য কিছুর ব্যাপারেই চিন্তা করে না । তাই ইসলামী হুকুমতকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ ও নীতিবান মানুষের দায়িত্বশীল হওয়া বিশেষ প্রয়োজন ।

রেওয়ায়েতে হিজাব

علی بن ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ فی تفسیره عن ابی ﺟﻌﻔﺮ (ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻪ) ﰱ ﻗﻮﻟﻪ : ﻻﻳﺒﺪﻳﻦ الا ﻣﺎ ﻇﻬﺮ ﻣﻨﻬﺎ، ﻓﻬﻰ ﺍﻟﺜﻴﺎﺏ ﻭ ﺍﻟﻜﺤﻞ ﻭ الخاتم و خضاب الکف و السوار و الزینت ثلاث : زینة للناس و زینة للمحرم و زینة للزوج. فأما رینة الناس، فقد ذکرناها، و اما زینة المحرم فموضع القلادة فما فوقها و الدملج و ما دونه و الخلخال و ما اسفل منه، و اما زینة الزوج فالجسد کله

ইমাম বাকির (আ.) পবিত্র এ আয়াতের ব্যাপারে বলেছেন : নারিগণ যেন তাদের সৌন্দর্য্য কে প্রকাশ না করেন , শুধুমাত্র যে স্থানগুলো স্বাভাবিক ভাবে বেরিয়ে থাকে । বাহ্যিক সৌন্দর্য্য হচ্ছে যথাক্রমে ; পোশাক , সুরমা , আংটি , মেহেদী ও চুড়ি । অতঃপর তিনি বলেন , সৌন্দর্য্য হচ্ছে তিন প্রকার যথা ; 1- সকলের জন্য যা উপরে বর্ণিত হয়েছে , 2- মাহরামদের জন্য -তা হচ্ছে গলা ও বুকের উপরের অংশ , কনুই হতে কব্জি পর্যন্ত এবং গোড়ালীর একটু উপর হতে নীচ পর্যন্ত , 3- শুধুমাত্র স্বামীর জন্য -তা হচ্ছে নারীর সম্পূর্ণ শরীর ।160

একজন হাদীস বর্ণনাকারী বলেন , হযরত ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম যে , একজন না-মাহরাম পুরুষের জন্য নারীর শরীরের কোন অংশ পর্যন্ত দেখা জায়েয ? ইমাম সাদিক (আ.) বললেন : মুখন্ডল , দু ’ হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত ও দু ’ পায়ের গিরা পর্যন্ত ।161

যা ব্যতিক্রম করা হয়েছে তা হচ্ছে দু ’ হাত কব্জি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত ও মুখমন্ডল , তবে সেদিকে যাতে উপভোগ করার ইচ্ছায় তাকানো না হয় । ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেছেন : নারীর মুখমণ্ডল ও দু ’ হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত দেখা যদি উপভোগ করার ইচ্ছায় হয়ে থাকে তবে তা হারাম হবে । সতর্কতা মূলক ওয়াজিব হচ্ছে উপভোগ না করার ইচ্ছায়ও যেন না তাকানো হয় । অনুরূপ পুরুষের শরীরের দিকে নারীর তাকানোটাও মুখমন্ডল ও দু ’ হাত (কনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত) ব্যতীত হারাম হবে ।162

ইমাম সাদিক (আ.) আল্লাহর বাণী তা ব্যতীত যে সৌন্দর্য্য প্রকাশিত থাকে ’ সে ব্যাপারে বলেছেন : বাহ্যিক সৌন্দর্য্য (যা প্রকাশ করা যাবে তা) হচ্ছে সুরমা ও আংটি ।163

হযরত আবু বকরের কন্যা ও আয়েশার বোন আসমা নবী (সা.) -এর ঘরে প্রবেশ করে যখন তার পরনে ছিল পাতলা পোশাক যার মধ্য থেকে তার শরীর দেখা যাচ্ছিলো । রাসূলে আকরাম (সা.) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন :

হে আসমা! যখনই কোন মেয়ে বালেগ হয়ে যায় তখন এটা উচিৎ নয় যে , তার শরীরের কোন অংশ দেখা যাক , শুধুমাত্র দু ’ হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত এবং মুখমণ্ডল ।164

ফুযাইল ইবনে ইয়াসার বলেন : ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম যে , নারীরা তাদের হাতের কনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত কী না-মাহরামদের সামনে অবশ্যই ঢেকে রাখবে ? ইমাম বললেন : হ্যাঁ , যা কিছু ওড়নার (মাথা থেকে বুকের উপর পর্যন্ত পড়ে এমন কাপড়) নিচে থাকে এবং চুড়ি পরার স্থান থেকে উপরের দিকে অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে ।165

রাসূল (সা.) হাউলাকে (আত্তারের স্ত্রী) উদ্দেশ্য করে বলেন :

হে হাউলা , তোমার সৌন্দর্য্য ও সাজ-সজ্জা স্বামী ব্যতীত অন্য করো সামনে প্রকাশ করো না । আর নারীর জন্যে এটাও জায়েয নয় যে , হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা না-মাহরামদের (স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষ) সামনে উম্মুক্ত রাখবে । যদি কেউ এমন কাজ করেই ফেলে তবে প্রথমত আল্লাহ্ সুবহানাহু তা ’ য়ালা সব সময় তাকে অভিসম্পাত করেন , দ্বিতীয়ত আল্লাহ্ সুবহানাহু তা ’ য়ালার ক্রোধ ও গজবের কারণ হয় ; তৃতীয়ত আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালার ফেরেশতাগণ অভিসম্পাত দিতে থাকে এবং চতুথর্ত কিয়মাতের দিনে তার জন্য কঠিন আজাবের ব্যবস্থা থাকবে ।166

হে হাউলা , যে নারিগণ আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা ও কিয়ামত দিনের প্রতি ঈমান রাখে তারা তাদের (দৈহিক) সৌন্দর্য্য স্বামী ব্যতীত অন্য কোন না- মাহরাম পুরুষের সামনে প্রকাশ করে না এবং সাথে সাথে তাদের মাথার চুল , হাতের কব্জি ও পায়ের পাতাও কারো সামনে উন্মুক্ত করে না । আর যে নারীরা তাদের স্বামী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের জন্য এই কাজগুলো করে থাকে সে তার ধর্মকে নষ্ট এবং আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালাকে তার উপর রাগান্বিত করলো ।167

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : মুসলমান নারীদের জন্য জায়েয নয় যে , এমন ওড়না ও পোশাক পরিধান করে যা তাদের শরীরকে ঢেকে রাখে না ।168

দ্রষ্টব্য :

1- উপরে যতগুলো আয়াত ও রেওয়ায়েত উল্লিখিত হয়েছে তা থেকে একটি মূল বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় আর তা হচ্ছে এই যে , নারী অবশ্যই নিজেকে না-মাহরামদের সামনে ঢেকে রাখবে । আর যে সব আচার-আচরণ , বাচন ভঙ্গি , পোশাক-আশাক না-মাহরামকে তার দিকে আকৃষ্ট করে তোলে তা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করবে এবং পাতলা পোশাক পরিধান করা হতে দূরে থাকবে ।

2- ইমাম বাকির (আ.)-এর হাদীসটি থেকে যা তিনি আয়াতের তফসীর হিসেবে বলেছিলেন এটাই স্পষ্ট যে , নারীর যারা মাহরাম যেমন বাবা , ভাই , মামা , চাচা , নানা , দাদা ...তারাও তার পুরো শরীর দেখার অধিকার রাখে না বা ঐ নারীও যেন তাদেরকে তার গলা থেকে নিচের অংশ এবং বাহুবন্ধনী হতে উপরের অংশ ও পায়ের গোড়ালীর উপরের অংশ পর্যন্ত দেখতে না দেয় । এমনটি নয় যে , কোন নারী তার মাহরাম ব্যক্তির সামনে যে কোন ধরনের পোশাক পরে এবং সাজ-সজ্জা করে ও শরীরের আকর্ষণীয় স্থানসমূহ উম্মুক্ত করে চলা-ফেরা করতে পারবে । কেননা যদি কোন নারী তার মাহরাম ব্যক্তির সামনে ঐরূপভাবে চলা- ফেরা করে তবে তাদের মধ্যে কামভাব বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর পরিণতি খারাপ হতে পারে । তাই ইসলামী আদব- কায়দা ও সচ্চরিত্রতার দাবী হলো আমরা আমাদের পবিত্র ইমামদের (আ.) আদেশ-নিষেধকে সঠিকভাবে মেনে চলবো । কেননা ঐ আদেশ-নিষেধের প্রতি লক্ষ্য না রাখার ফলে পশ্চিমারা দুনিয়া পুজারী ও কামভাবী হয়ে উঠেছে ।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইংল্যান্ডে প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ শিশু ধর্ষণের স্বীকার হয় । গত বছরে এই দেশটিতে 6300 জন ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে । এই বলাৎকার বা ধর্ষণের শতকরা অধিকাংশই পিতাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে , এসব শিশুরা তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে ঘটনাগুলো গোপন রেখেছে । তবে সাম্প্রতিক রির্পোট অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয়েছে যে , পিতারা মায়েদের সাহায্য নিয়ে তাদের শিশুদেরকে বলাৎকার বা ধর্ষণ করেছে ।169

মানুষ যখন এই বিষয়গুলো পড়ে তখন প্রথমত এটা বুঝতে পারে যে , কারো যদি আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা ও কিয়ামত দিনের প্রতি ভয় না থাকে সে ব্যক্তি দুনিয়া ও যৌনতা ব্যতীত অন্য কিছু চিন্তা করে না এবং তার নষ্ট উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যে কোন ধরনের কাজ আঞ্জাম দিতে পারে ; যদিও তা তার সন্তানদের উপর জুলুম ও অত্যাচার করেও হয় । দ্বিতীয়ত পবিত্র কোরআন ও ইসলামী আদেশ-নিষেধের প্রতি তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে এবং অন্তরের অন্তস্তল থেকে চিৎকার ধ্বনিতে বলবে : হে আল্লাহ্! তোমার প্রতি অনেক শুকরিয়া যে , আমার অন্তরকে ইসলামী আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান এবং শিরক ও কুফরী থেকে আমাকে রক্ষা করেছো । তৃতীয়ত যারা বাহ্যিকভাবে মুসলমান কিন্তু আমল- আখলাকের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের মত তারা বিচলিত হয়ে উঠবে যে , কেন ইসলামী বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখছে না ।

হিজাবের দর্শন

নিঃসন্দেহে বর্তমান যুগে পাশ্চাত্য মনস্ক ব্যক্তিরা নারীদের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে তাদের স্বাধীনতার অংশ বলে মনে করে এবং একে বিশেষ গুরুত্বও দিয়ে থাকে । তাই অনেকে এই যুগকে উলঙ্গপনা ও যৌন স্বাধীনতার যুগ বলে আখ্যায়িত করেছে । এ কারণে তাদের কাছে বর্তমান যুগে হিজাব সম্পর্কে কথা বলাটা হচ্ছে অসহনীয় একটি ব্যাপার এবং তা হচ্ছে অতীত যুগের কিচ্ছা-কাহিনী যা সেই যুগের জন্যেই প্রযোজ্য!

অবশ্য মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতার ফলে যেহেতু সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসাদ , অশ্লীলতা ও নৈতিক অনাচারের সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু কিছু কিছু আগ্রহী ব্যক্তি পর্দা সম্পর্কে শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করছে । যদিও ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে বিশেষ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে এ সমস্যার সমাধান অনেক আগেই হয়েছে ও এ সম্পর্কে দলিল ভিত্তিক উত্তরও প্রদান করা হয়েছে । কিন্তু বিষয়টি অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তা সম্পর্কে আরো ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয় । বিশেষ করে যখন বর্তমানে ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন আঙ্গিকে তাদের নষ্ট সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় রত । তারা আমাদের কাছ থেকে ইসলামী সংস্কৃতিকে কেড়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের তৈরী অশ্লীল পর্নো ছবি , বিজাতীয় গান , প্রভৃতির সিডি , ভিডিও ক্যাসেট ইসলামী সমাজে প্রবেশ করিয়ে এদেশের পবিত্র ইসলামী রূপটিকেই ধ্বংস করে দিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । যুবকদের মধ্যে এসব প্রচারের জন্য তারা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে ।

এখন নারীদের কাছেই প্রশ্ন যে , তারা কি সত্যিই পুতুলের মত বেশ-ভুষায় বাইরে আসতে চায় , যাতে তাদের উপর কিছু চরিত্রহীন , কামুক ব্যক্তিদের নোংরা দৃষ্টি পড়ে যা তাদের ব্যক্তিত্বকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় ? নাকি তারা তাদের স্বামীদের জন্যেই শুধু সাজ-সজ্জা করবে ?

অন্যভাবে বললে বলতে হয় যে , নারীরা কি তাদের শরীরের আকর্ষণীয় অংশগুলো প্রদর্শন করে পুরুষের কামভাবকে উস্কে দেয়ার সীমাহীন এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে , নাকি সমাজ থেকে তারা এরূপ বিষয়ের উচ্ছেদ ঘটিয়ে পারিবারিক পরিসরে তা করে সংসার , পরিবার- পরিজন ও স্বামী-সন্তানের প্রতি মনোযোগী ও যত্নবান হবে ?

পবিত্র ইসলাম দ্বিতীয় পথটিকে পছন্দ করে এবং হিজাবকেও এই প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করে । যদিও পশ্চিমারা ঐ নোংরা প্রথম পথটিকে পছন্দ করে । ইসলাম বলে : দৈহিক চাহিদার সম্পূর্ণটাই হচ্ছে (সহবাস সহ অন্যান্য সব কিছু) স্বামী ও স্ত্রীর জন্যে এতে অন্য করো কোন অংশীদারিত্ব নেই । আর যদি কেউ এই সীমার বাইরে পা রাখতে চায় তবে তা হবে অন্যায় ও পাপ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।

মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিজাব

হিজাব হচ্ছে নারী এবং নামাহরাম ব্যক্তিদের মধ্যে সীমা নির্ধারণকারী একটি বিষয় এবং যৌন প্রবৃত্তিকে সংযতকরণের একটি উপকরণ । আর এই অগ্নি শিখা সঠিকভাবে নির্বাপিত হওয়া ও তার স্বাভাবিক পথে প্রবাহিত হওয়ার ফলে সমাজে বিদ্যমান অনেক সমস্যাই যেমন হত্যা , অপরাধ ও অন্যান্য অনাচার দূর হয়ে যাবে । আর যদি এই সীমাটিকে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং বাঁধনহীন স্বাধীনতা আমাদের সমাজে ভিত গাড়তে পারে তবে সেক্ষেত্রে আমরা এক বন্য সমাজের মুখোমুখী হবো । যার ফলে সমাজে অস্থিরতা , সহিংসতা ও অরাজকতা আরো বৃদ্ধি পাবে । কেননা যৌন প্রবণতা প্রচন্ড শক্তিশালী লাগামহীন এক ছুটন্ত ঘোড়ার ন্যায় । তাই যতই কেউ তার আনুগত্য করবে ততই সে উদ্ধত হয়ে উঠবে এবং মানুষের জন্য ততই ক্ষতি বয়ে আনবে । অথবা তা হচ্ছে এমন আগুন , তাতে যত বেশী জ্বালানী দেয়া যাবে তার শিখাগুলো ততবেশী লেলিহান হবে । প্রকৃতপক্ষে মানুষকে যদি মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তার অন্তরে আল্লাহর ভালবাসা ও ভয় না থাকে তবে দুনিয়ার বিষয়াদি যেমন : অর্থ , মর্যাদা , যৌনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে কখনোই পরিতৃপ্ত হবে না । আর এর ফলে সে দুনিয়াবী চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে এতটা নিমজ্জিত হয়ে যাবে যে নিজেকে ও অন্যদেরকেও ধ্বংস করবে । হিজাব হচ্ছে এমনই একটি বিষয় যা নারী ও পুরুষের মধ্যে বিশেষ সীমা টেনে দিয়েছে যা যৌন প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে সীমালংঘন থেকে উভয়কে রক্ষা করে থাকে ।

নারীদের বেহায়াপনা যা তাদের সাজ-সজ্জা , পোশাক- আষাক , গোপন অভিসার প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকাশিত হয় তা পুরুষদেরকে বিশেষ করে যুবকদেরকে সবসময়ের জন্য দৈহিকভাবে উত্তেজিত করে রাখে । আর তা এমনই এক উত্তেজনা যা তাদের মধ্যে বিষন্নতা ও অবসাদের সৃষ্টি করে এবং তাদের স্নায়ুবিকভাবে দুর্বল করে । যার পরিণতিতে বিভিন্ন মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে । কেননা মানুষের স্নায়ুর ক্ষমতা কতই যে , সে এত পরিমান চাপ ও উত্তেজনা সহ্য করতে পারবে ? মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কি এটা বলেন না যে , অবিরাম উত্তেজনা ও চাপ মানুষকে মানসিক রোগে আক্রান্ত করে ফেলে ? আর যদি তা যৌনতার মত একটি বিষয় হয়ে থাকে তবে তো কথাই নেই । কেননা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , মানুষের যৌন প্রবণতার কারণে কত বড় বড় অঘটন ঘটেছে যার পরিণতি ছিল খুবই ভয়ঙ্কর । কেউ কেউ বলেছেন , ইতিহাসে এমন কোন ঘটনাই খুঁজে পাওয়া যাবে না যে , যার পেছনে কোন এক নারী ছিল না । ”

অনবরত যৌন প্রবণতাকে উস্কে দেয়া , উলঙ্গপনা এবং বেহায়াপনার মাধ্যমে তাকে আরো প্রজ্জলিত করা কি আগুনের সাথে খেলা করা নয় ? এ কাজ কি বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেক সম্মত ? ইসলাম চায় যে , মুসলমান নারী-পুরুষ সুস্থ মানসিকতা ও মস্তিস্ক নিয়ে পবিত্র চক্ষু-কর্ণের অধিকারী হোক । আর এটা হচ্ছে হিজাবের একটি দর্শন ।