একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন0%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক: মীর আশরাফ-উল-আলম
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 42967
ডাউনলোড: 4671

পাঠকের মতামত:

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 42967 / ডাউনলোড: 4671
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

হিজাব পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে

নারীর হিজাবই পরিবারের প্রশান্তি , পারস্পরিক বিশ্বাস , আন্তরিকতা , ও ভালবাসার নিশ্চয়তা বিধায়ক । কারণ নারী-পুরুষ উভয়ে তার পরিবারের গণ্ডিতে যৌন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে । আর এই হিজাবই ইসলাম সম্মত বিবাহের দিকে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে । এ ধরনের বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ঐশ্বরিক নিগূঢ় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়ে থাকে । আর যখনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঐরূপ সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তখন তাদের পরিবার হয়ে উঠে অধিক সুন্দর ও সুখময় । পক্ষান্তরে বেপর্দা ও বন্ধনহীন স্বাধীনতা পরিবারে একে অপরের মধ্যে বন্ধনকে দুর্বল করে থাকে । কেননা এরূপ পরিবারের ভিত্তি শত্রুতা ও ঘৃণার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হয় না । কারণ তাদের সংসার জীবন যৌনতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং যেহেতু কিছু দিন পরে ঐ চাহিদা তার রূপ ও রং পাল্টিয়ে নতরূপ ও রংয়ে সজ্জিত হয়ে থাকে ফলে সংসারে অশান্তি , সম্পর্কের অবনতি , অশালীন আচরণ প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয় ; যার ফলশ্রুতিতে তালাকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে । আর তাদের সন্তানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এদিক ওদিকে , যা উত্তম আদর্শে গড়ে ওঠার জন্য মোটেই উপযুক্ত নয় ।

হিজাব হচ্ছে দুঃশ্চরিত্র ব্যক্তিদের সামনে একটি বাঁধ সরূপ , যার ফলে এ ধরনের যুবকরা বিবাহের দিকে ধাবিত হয় । অন্যদিকে বেপর্দা ও সঠিক পর্দার অভাব যুবকদের বিবাহ করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং তারা বিভিন্ন অজুহাতে তাতে রাজি হতে চায় না । কেননা তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য তো পথ খোলাই আছে , তাই বিবাহের কি প্রয়োজন ?

যে পরিবারে ও সমাজে হিজাব ও ইসলামী অন্যান্য সব আদেশ-নিষেধ পুঙ্ক্ষানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা হয় সে পরিবারে ও সমাজে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে গভীবভাবে ভালবেসে থাকে । কিন্তু উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনার বাজারে নারীরা যেখানে পরিপূর্ণভাবে পণ্যের মত ব্যবহৃত হয় সেখানে বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনটির কোন মূল্যই থাকে না । আর তাদের পরিবারগুলো মাকড়সার জালের মত অতি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায় এবং শিশুরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ।

3- হিজাব , অবৈধ সন্তান আসার পথ রোধ করে : পর্দাহীনতার সব থেকে কষ্টদায়ক ফল হচ্ছে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার বৃদ্ধি এবং অবৈধ সন্তান জন্মগ্রহণ । এর প্রমাণ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে আর তা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব । আর যা কিছু দৃশ্যমান তা মুখে বলার প্রয়োজন রাখে না । সেখানে ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী অবৈধ সন্তানরাই সমাজের সব থেকে নিকৃষ্টতম কাজের সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন ধরনের জঘন্য অপরাধ তারা করে । এরূপ কয়েকটি বিশেষ খবরের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি :

ইংল্যাণ্ডে গত বছরের শেষের তিন মাসে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের প্রায় 31 শতাংশের পিতা কে তা জানা নেই । অধিকাংশ পরিবারে যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের আগেই অবৈধ সম্পর্ক ছিল বিয়ের পরে তাদের সংসার ভেঙ্গে গেছে অর্থাৎ তালাক হয়ে গেছে । আর তাই তাদের অবৈধ সম্পর্কের ফলে যে সব সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছিল দিনের পর দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে ।170

সি ,এন ,এন সংবাদ সংস্থা আরো বলে যে , আমেরিকার শিশুদের 50 শতাংশই হচ্ছে অবৈধ । আর যে শিশুরা পিতা-মাতার বিয়ের আগেই তাদের অবৈধ সম্পকের্র কারণে জন্মগ্রহণ করেছিল , পিতা-মাতার মধ্যে বিচ্ছেদের হয়ে ফলশ্রুতিতে অভিভাবকহীন জীবন-যাপন করছে এমন শিশুর সংখ্যা সেখানে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।171

সীমাহীন স্বাধীনতা এবং নষ্ট সংস্কৃতির পরিণতিতেই কি পাশ্চাত্যে এতসব অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে না ? অবশ্যই । আর তাই মুসলমানদের হুশিয়ার থাকতে হবে যে , তারা যেন শিরক ও কুফরী সংস্কৃতির মধু মাখানো কথায় বিভ্রান্ত না হন । তারা যদি ঐ সব মধু মাখা কথায় তাদের নষ্ট সংস্কৃতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তবে তাদের অপেক্ষায় রয়েছে কঠিন পরিণতি ।

নারীদের হিজাব ও সতীত্বের উপরই সমাজের উন্নতি ও টিকে থাকা নির্ভরশীল

নারীদের পর্দার কারণে যৌন চাহিদা সমাজে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে যেখানে সেখানে পূরণ না হয়ে প্রত্যেকের ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে । এর ফলে , সমাজ নোংরা পরিবেশে রূপান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং এভাবে পর্দা সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ার কাজে উপযুক্তভাবে সাহায্য করে । কারণ সমাজের কর্মক্ষম শক্তিকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা যায় । অন্যদিকে সমাজে বেপর্দা নারীদের বিচরণ দুর্বল ঈমান ও দুর্বলচেতা পুরুষদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে । ফলে তারা জ্ঞানার্জন ও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে ব্যর্থ হয় এবং সামাজিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয় । কারণ শয়তান চরিত্রের কোন নারী যদি পুরুষদের কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে ও সবসময় বিচরণ করে তবে তাদেরকে লক্ষ্যচ্যুত করে সামাজিক উন্নতির পথে ব্যাঘাত ঘটায় ।

নীতিশাস্ত্রবিদগণ ও বিভিন্ন সমাজ বিশেষজ্ঞের গবেষণা অনুযায়ী যে সকল স্কুল , কলেজ বা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়ে এক সঙ্গে লেখা-পড়া করে বা এমন অফিস যেখানে নারী ও পুরুষ এক সঙ্গে কাজ করে , এমন সব স্থানে লেখা-পড়া ও কাজের থেকে উচ্ছৃংলতাই বেশী হয় । তার ফলে কাজে ফাঁকি বা কম কাজ করা ও কোন বিষয়ে ফেল করা বা লেখা-পড়া না করার মত দায়িত্বহীনতার ঘটনাগুলো বেশী চোখে পড়ে ।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে হিজাব

কার্য ক্ষেত্রে নারী যখন হিজাব পরিহিত অবস্থায় থাকে তখন অন্যদের খুব বেশী আকৃষ্ট করে না । আর অন্যরা তার দিকে আকৃষ্ট না হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে হিজাব । হিজাব যেহেতু পুরুষের দৃষ্টি ও চিন্তাকে একজন নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পথে বিঘ্ন ঘটায় তাই তা তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে । এর ফলে অফিস-আদালতে একদিকে নারীর সম্ভ্রম ও পবিত্রতা যেমন রক্ষা হয় অন্যদিকে তেমনিভাবে অন্যদের কাজের গতি ও একনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে । যেহেতু কাজের গতি ও একনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় সেহেতু উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে থাকে , যার মাধ্যমে সমাজ ও দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে । আর যখন বেপর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী কর্মক্ষেত্রে আসে এবং হরেক রকমের উত্তেজনাকর পোশাক পরে তাদের মধ্যে চলাফেরা করে তখন হাজার জোড়া লোলুপ দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে থাকে । যার ফলে নিম্নরূপ খারাপ ফল সমাজে দৃষ্ট হয়ে থাকে যথা :

ক)- এ ধরনের মনোবৃত্তির কারণে সে তো ভাল কাজের পরিচয় দিতে পারেই না সাথে সাথে অন্যদের কাজেরও ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে । কেননা যখন কোন প্রতিষ্ঠানে এমন ধরনের নারীদের উপস্থিতি থাকে তখন এর প্রভাবে দুর্বল ঈমান ও চরিত্রের ব্যক্তিরা কলুষিত হয়ে পড়ে এবং তাদের কাজের গতি ও একনিষ্ঠতা হরাস পায় । যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন কম হয় এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিম্নে আসতে থাকে ।

খ)- উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে যে নৈতিক অনাচারের সৃষ্টি হয়ে থাকে তা কোন কাজ দ্রুত সম্পাদিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । অন্যদিকে মু ’ মিনগণ এমন পাপে লিপ্ত হন না বরং এ ধরনের পাপ থেকে তারা দূরে থাকেন । কেননা তারা সব সময় আল্লাহ্ তা ’ য়ালাকে রাজি ও খুশি করার নিমিত্তে সময় ব্যয় করে থাকেন । আর সে কারণেই তারা কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দিয়ে থাকেন এবং মানুষকে সাহায্য করে থাকেন । তাই তারা ঐ ধরনের নারীদের থেকে দূরে থাকেন ।

গ)- অস্ত্র-সস্ত্র বা সামরিক শক্তি নয় বরং প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতার উৎস হচ্ছে সে রাষ্ট্রের জনগণ । তাই যখন বেপর্দার কারণে সমাজের উপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয় তখন রাষ্ট্রের উপর মানুষের অসন্তুষ্টি ও অনাস্থা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে এবং তা এমনও হতে পারে যে , সরকারের পতনও ঘটাবে ।

ঘ)- বেপর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী সাধারণতঃ সমাজের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে না কেননা সমাজ তাদেরকে খেলার উপকরণ মনে করে থাকে । এমন নারীরা নিজেদের পরিবারের প্রতি তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না । ফলশ্রুতিতে তালাকের পরিমান ক্রমশই বাড়তে থাকে এবং পরিবার ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায় ও বেশীর ভাগ সন্তানই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ।

রাজনৈতিক দৃষ্টিতে হিজাব

বিশ্ব অত্যাচারী ও লুটেরার দল কখনই হত্যা , সন্ত্রাস , ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে কোন দেশ বা জাতিকে নিজেদের অধীনে রাখতে পারে নি । শুধুমাত্র নৈতিক অনাচার , অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতার প্রচারের মাধ্যমে তারা সফল হয়েছে । স্বাধীনতা ও সভ্যতার নামে নারীদেরকে উলঙ্গ করে তারা তাদের নষ্ট ও অসৎ উদ্দেশ্যে পৌঁছিয়ে থাকে । এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের পরিপূর্ণ হিজাবই তাদেরকে নিরাশ করে থাকে । বর্তমান বিশ্বেও এই অসৎ পথেই শত্রুপক্ষ পবিত্র ইসলামকে ধ্বংস করতে চায় । প্রকৃতপক্ষে নারীদের পরিপূর্ণ হিজাব ও তাকওয়া সমাজকে পরিশুদ্ধ করে থাকে । আর এটার প্রতিই হচ্ছে শত্রুদের বেশী ভয় । ফারানতিস ফানুন আলজিরিয়ার বিপ্লবকে সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করে বলেছে : উপনিবেশবাদী সমাজ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ এটাই যে , সমাজের নারীদেরকে হাতের মুঠোয় আনতে হবে , তা হলে সব কিছুই এর টানে হাতের মুঠোয় আসবে ।

হিজাবের কারণেই নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে

নারীর হিজাব এবং লজ্জা এমন এক ব্যবস্থা যা নারী পুরুষের সামনে নিজেকে মূল্যবান করে তুলে ধরতে এবং নিজের মর্যাদাকে সংরক্ষণ করতে সহজাতভাবেই ব্যবহার করে থাকে । কেননা ধী-শক্তি সম্পন্ন নারী স্বভাবগত ভাবেই তার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এটা বুঝে নিয়েছে যে , সে শারীরিক শক্তি ও গড়নের দিক থেকে পুরুষের মত নয় । তাই সে যদি পুরুষকে তার আয়ত্তে আনতে চায় তবে দেহবলে নয় , বরং অন্যভাবে তাকে তা করতে হবে । সে এটাও বুঝে নিয়েছে যা আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা তার মধ্যে যা দিয়েছে , তা হচ্ছে পুরুষ তাকে চায় অর্থাৎ পুরুষকে প্রেমিক আর নারীকে প্রেমিকা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন । এই সূত্র ধরে লজ্জাশীলা ও পর্দানশিন নারী অন্যের চেয়ে উত্তম রূপে পুরুষকে তার আয়ত্তে রাখতে পারে । আর সে নিজেকে যতই অন্যের সামনে উম্মুক্ত করে তুলে ধরা থেকে বিরত থাকবে এবং গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিবে ততই তার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেতে থাকবে ।

তাই সম্মান ও মর্যাদা লাভের বিষয়টি কোন বেপর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীর ক্ষেত্রে ঘটে না । কেননা এই রূপ নারীদের কারণে দুশ্চরিত্র পুরুষরা খুব সহজেই তাদের অবৈধ চাওয়া-পাওয়ায় পৌঁছে যায় এবং কোন নারীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা এবং বিয়ে করে স্ত্রীর দেন-মোহর , ভরণপোষণ এবং পোশাক-আষাক দেয়ারও ঝামেলাও নিতে চায় না , যদি চায়ও তবে সে নারীকে সন্তান দেখাশোনা করা এবং তার দাসী হয়ে থাকার জন্যেই চাইবে । অন্যদিকে সে স্ত্রীকে অন্য নারীর সাথে স্বাধীন ভাবে (অবৈধ) মেলা-মেশার প্রতিবন্ধক বলে মনে করবে । এরূপ চিন্তা করাতে স্ত্রী তার কাছে ছোট হয়ে যায় । কারণ ঐ ধরনের পুরুষরা কখনোই স্ত্রীকে কোন প্রকার মর্যাদা দানে আগ্রহী নয় । তাই বলতে হয় যে , স্ত্রীর জন্য এরূপ জীবন বা স্বামী হচ্ছে নিকৃষ্টতম আজাব । সুতরাং হিজাব নারীকে তার স্বামীর কাছে প্রিয় করে তোলে এবং বেপর্দা নারীকে স্বামীর কাছে অপ্রিয় ও তুচ্ছ করে ফেলে ।

যে সমাজ নারীকে নগ্ন ও উম্মুক্ত শরীরে দেখতে চায় সেখানে এটা খুবই স্বাভাবিক যে , দিনের পর দিন সাজ- সজ্জা ও নিজেকে উম্মুক্ত ভাবে প্রকাশ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে । যখন নারীকে তার যৌন আকর্ষণের কারণে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হবে , অভ্যর্থনা কক্ষে অন্যদের আকর্ষণ করার জন্য বসিয়ে রাখা হবে , পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য তাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে তখন সমাজে নারীর মর্যাদা একটি পুতুলের বা বিক্রয়যোগ্য পণ্যের মানে নেমে আসবে । ফলে সে তার মানবিক ও নৈতিক মূল্য ভুলে গিয়ে তার শারীরিক সৌন্দর্য্য ও যৌবন নিয়েই অহংকার করতে থাকবে ।

আর এই প্রক্রিয়াতেই সে হয়ে ওঠে অন্যের যৌন চাহিদা পূরণের উপকরণ এবং সমাজকে নষ্ট করার এক উত্তম হাতিয়ার । এমন সমাজে নারীর পক্ষে কিভাবে সম্ভব যে , সে তার উত্তম নৈতিক চরিত্র ও জ্ঞান বৈশিষ্ট্যের পরিচয় তুলে ধরবে এবং এ বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটিয়ে মানবতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে উন্নীত করবে ?

এটা সত্যই অতি দুঃখের বিষয় যে , পশ্চিমা ও পশ্চিমা অনুসরণকারী দেশগুলোতে এমনকি ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগে এখানেও সেই সব নারীদেরকেই সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হতো এবং সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করা হতো যারা ছিল অসৎ চরিত্রের যদিও কণ্ঠ বা চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হতো , এমনকি তাদের জন্য উত্তম থাকার ব্যবস্থা করা হতো ও তাদের আগমনে শুভেচ্ছা স্বাগতম বলা হতো!

আল্লাহর অনেক শুকরিয়া যে , সেই সব জঘন্য দিন ও কর্মকাণ্ড ইসলামী ইরানের পবিত্র ভূ-খণ্ড থেকে তিনি তুলে নিয়েছেন । নারীরা তাদের প্রকৃত ব্যক্তি পরিচয় ফিরে পেয়েছে । তারা নিজেদেরকে পর্দা দিয়ে আবৃত করেছে ঠিকই কিন্তু এমন নয় যে , তারা ঘরের এক কোণে বসে রয়েছে বরং তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে ভূমিকা রাখছেন । এমনকি ঐ পর্দা করা অবস্থাতেই তারা যুদ্ধের ময়দানে ভূমিকা পালন করেছে ।

হিজাব ফ্যাশান প্রীতি , অপচয় ও ভোগবাদী সংস্কৃতি রোধ করে থাকে

সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের পণ্যের বাজার গরম করার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করে থাকে । তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বা প্রকৃতির জিনিসপত্র তৈরী করে তা বাজারে পেরণ করা । এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অধিক হারে ক্রেতা আকর্ষণ করে তারা বিশাল মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায় । অনেক মানুষই বিশেষ করে এক দল নারী বাজারে নতুন জিনিস আসা মাত্রই তা কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে । যদিও তার ঐ পোশাকের পুরাতন মডেলটি থেকে থাকে তথাপিও । জিনিস-পত্রের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকার বিষয়টি হচ্ছে প্রতিটি মানুষেরই পছন্দের ব্যাপার । কেননা তা হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি ও স্বভাবগত বিষয় । যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা প্রতিটি সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ও আন্তর্জাতিক মুনাফা লোভী গোষ্ঠী মানুষের এই প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের অপব্যবহার মাধ্যমে মুনাফা লুটছে । এভাবে তারা মানুষের মধ্যে বিশেষ করে এক শ্রেণীর নারীদের মধ্যে অতিমাত্রায় ফ্যাশান প্রীতি ও ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়ে ব্যাপক পরিমানে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে ।

পর্দা বিশেষ করে চাদরের (বোরখা) একটি উত্তম দিক হচ্ছে এই যে , ভোগবাদী সংস্কৃতি যা পশ্চিমাদের উপহার তা রোধ করে । সাথে সাথে তাদের রঙ্গিন বাজারকেও স্লান করে দিতে সাহায্য করে । সে কারণেই বিভিন্নভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা হিজাবের উপর আঘাত হানার চেষ্টা চালায় । তাই তারা পর্দার এই কঠিন বাঁধকে ধ্বংস করে দিতে বিভিন্নরূপ অপকৌশল প্রয়োগ করে থাকে । যাতে করে নারীদের বিভিন্ন মডেলের পোশাক প্রস্তুতকারকদের , অলংকার ও প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতকারকদের কারখানার চাকা সচল থাকে । আর এর মাধ্যমেই মিলিয়ন মিলিয়ন নারী যাদের কারণে সাম্রাজ্যবাদীরা শোষণ করার সুযোগ পেয়ে থাকে তাদের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয় ।

হিজাব প্রকৃতপক্ষে ঐ সমস্ত পোশাকের ব্যবহার হ্রাস করে থাকে তাই তাদের ক্ষতির কারণও বটে । কেননা মুসলমান নারী যেহেতু হিজাব পরিধান করে তাই বিভিন্ন মডেলের পোশাক পরে ও সে নিজেকে প্রকাশ ও অন্য পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য পুতুলের মত সাজ-সজ্জা করে বাইরে যায় না । অন্য দিকে আবার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উপরও তাদের কড়া নজর থাকে । আর এর মধ্য দিয়েই তারা পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে উষ্ণ ও আন্তরিকতাকে দৃঢ় রাখে ।

কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর নারীরা যে অর্থ দিয়ে অবশ্যই সংসার চালানো প্রয়োজন তা দিয়ে হরেক রকমের পোশাক কিনে থাকে । ফলশ্রুতিতে সংসার চালানোর অর্থ জোগাড় করতে তাদের স্বামীদের উপর অধিক চাপ পড়ে । এর ফলে তাদের মানসিক চাপও বৃদ্ধি পেতে থাকে । ক্রমেই তাদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা লোপ পেতে থাকে । আর যদি এই ধরনের নারীরা উপার্জনক্ষম হয়ে থাকে তবে সেই অর্থ বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে হোটেল , পিকনিক , চাকচিক্যময় পোশাক ক্রয় ও বিলাসিতায় ব্যয় করে থাকে । অবশ্য স্বামীর জন্য সুন্দর পোশাক পরিধান করা এবং সাজ-সজ্জা করাটা অতি উত্তম কাজ এবং ইসলাম এটা করতে বিশেষ তাগিদও দিয়েছে । এ বিষয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি ।