একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন16%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 43854 / ডাউনলোড: 5061
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

1

2

হিজাব পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে

নারীর হিজাবই পরিবারের প্রশান্তি , পারস্পরিক বিশ্বাস , আন্তরিকতা , ও ভালবাসার নিশ্চয়তা বিধায়ক । কারণ নারী-পুরুষ উভয়ে তার পরিবারের গণ্ডিতে যৌন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে । আর এই হিজাবই ইসলাম সম্মত বিবাহের দিকে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে । এ ধরনের বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ঐশ্বরিক নিগূঢ় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়ে থাকে । আর যখনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঐরূপ সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তখন তাদের পরিবার হয়ে উঠে অধিক সুন্দর ও সুখময় । পক্ষান্তরে বেপর্দা ও বন্ধনহীন স্বাধীনতা পরিবারে একে অপরের মধ্যে বন্ধনকে দুর্বল করে থাকে । কেননা এরূপ পরিবারের ভিত্তি শত্রুতা ও ঘৃণার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হয় না । কারণ তাদের সংসার জীবন যৌনতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল এবং যেহেতু কিছু দিন পরে ঐ চাহিদা তার রূপ ও রং পাল্টিয়ে নতরূপ ও রংয়ে সজ্জিত হয়ে থাকে ফলে সংসারে অশান্তি , সম্পর্কের অবনতি , অশালীন আচরণ প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয় ; যার ফলশ্রুতিতে তালাকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে । আর তাদের সন্তানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এদিক ওদিকে , যা উত্তম আদর্শে গড়ে ওঠার জন্য মোটেই উপযুক্ত নয় ।

হিজাব হচ্ছে দুঃশ্চরিত্র ব্যক্তিদের সামনে একটি বাঁধ সরূপ , যার ফলে এ ধরনের যুবকরা বিবাহের দিকে ধাবিত হয় । অন্যদিকে বেপর্দা ও সঠিক পর্দার অভাব যুবকদের বিবাহ করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং তারা বিভিন্ন অজুহাতে তাতে রাজি হতে চায় না । কেননা তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য তো পথ খোলাই আছে , তাই বিবাহের কি প্রয়োজন ?

যে পরিবারে ও সমাজে হিজাব ও ইসলামী অন্যান্য সব আদেশ-নিষেধ পুঙ্ক্ষানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা হয় সে পরিবারে ও সমাজে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে গভীবভাবে ভালবেসে থাকে । কিন্তু উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনার বাজারে নারীরা যেখানে পরিপূর্ণভাবে পণ্যের মত ব্যবহৃত হয় সেখানে বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনটির কোন মূল্যই থাকে না । আর তাদের পরিবারগুলো মাকড়সার জালের মত অতি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায় এবং শিশুরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ।

৩- হিজাব , অবৈধ সন্তান আসার পথ রোধ করে : পর্দাহীনতার সব থেকে কষ্টদায়ক ফল হচ্ছে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার বৃদ্ধি এবং অবৈধ সন্তান জন্মগ্রহণ । এর প্রমাণ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে আর তা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব । আর যা কিছু দৃশ্যমান তা মুখে বলার প্রয়োজন রাখে না । সেখানে ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী অবৈধ সন্তানরাই সমাজের সব থেকে নিকৃষ্টতম কাজের সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন ধরনের জঘন্য অপরাধ তারা করে । এরূপ কয়েকটি বিশেষ খবরের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি :

ইংল্যাণ্ডে গত বছরের শেষের তিন মাসে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের প্রায় ৩১ শতাংশের পিতা কে তা জানা নেই । অধিকাংশ পরিবারে যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের আগেই অবৈধ সম্পর্ক ছিল বিয়ের পরে তাদের সংসার ভেঙ্গে গেছে অর্থাৎ তালাক হয়ে গেছে । আর তাই তাদের অবৈধ সম্পর্কের ফলে যে সব সন্তান ভুমিষ্ট হয়েছিল দিনের পর দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে ।১৭০

সি ,এন ,এন সংবাদ সংস্থা আরো বলে যে , আমেরিকার শিশুদের ৫০ শতাংশই হচ্ছে অবৈধ । আর যে শিশুরা পিতা-মাতার বিয়ের আগেই তাদের অবৈধ সম্পকের্র কারণে জন্মগ্রহণ করেছিল , পিতা-মাতার মধ্যে বিচ্ছেদের হয়ে ফলশ্রুতিতে অভিভাবকহীন জীবন-যাপন করছে এমন শিশুর সংখ্যা সেখানে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।১৭১

সীমাহীন স্বাধীনতা এবং নষ্ট সংস্কৃতির পরিণতিতেই কি পাশ্চাত্যে এতসব অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে না ? অবশ্যই । আর তাই মুসলমানদের হুশিয়ার থাকতে হবে যে , তারা যেন শিরক ও কুফরী সংস্কৃতির মধু মাখানো কথায় বিভ্রান্ত না হন । তারা যদি ঐ সব মধু মাখা কথায় তাদের নষ্ট সংস্কৃতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তবে তাদের অপেক্ষায় রয়েছে কঠিন পরিণতি ।

নারীদের হিজাব ও সতীত্বের উপরই সমাজের উন্নতি ও টিকে থাকা নির্ভরশীল

নারীদের পর্দার কারণে যৌন চাহিদা সমাজে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে যেখানে সেখানে পূরণ না হয়ে প্রত্যেকের ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে । এর ফলে , সমাজ নোংরা পরিবেশে রূপান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং এভাবে পর্দা সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ার কাজে উপযুক্তভাবে সাহায্য করে । কারণ সমাজের কর্মক্ষম শক্তিকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা যায় । অন্যদিকে সমাজে বেপর্দা নারীদের বিচরণ দুর্বল ঈমান ও দুর্বলচেতা পুরুষদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে । ফলে তারা জ্ঞানার্জন ও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে ব্যর্থ হয় এবং সামাজিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয় । কারণ শয়তান চরিত্রের কোন নারী যদি পুরুষদের কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে ও সবসময় বিচরণ করে তবে তাদেরকে লক্ষ্যচ্যুত করে সামাজিক উন্নতির পথে ব্যাঘাত ঘটায় ।

নীতিশাস্ত্রবিদগণ ও বিভিন্ন সমাজ বিশেষজ্ঞের গবেষণা অনুযায়ী যে সকল স্কুল , কলেজ বা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়ে এক সঙ্গে লেখা-পড়া করে বা এমন অফিস যেখানে নারী ও পুরুষ এক সঙ্গে কাজ করে , এমন সব স্থানে লেখা-পড়া ও কাজের থেকে উচ্ছৃংলতাই বেশী হয় । তার ফলে কাজে ফাঁকি বা কম কাজ করা ও কোন বিষয়ে ফেল করা বা লেখা-পড়া না করার মত দায়িত্বহীনতার ঘটনাগুলো বেশী চোখে পড়ে ।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে হিজাব

কার্য ক্ষেত্রে নারী যখন হিজাব পরিহিত অবস্থায় থাকে তখন অন্যদের খুব বেশী আকৃষ্ট করে না । আর অন্যরা তার দিকে আকৃষ্ট না হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে হিজাব । হিজাব যেহেতু পুরুষের দৃষ্টি ও চিন্তাকে একজন নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পথে বিঘ্ন ঘটায় তাই তা তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে । এর ফলে অফিস-আদালতে একদিকে নারীর সম্ভ্রম ও পবিত্রতা যেমন রক্ষা হয় অন্যদিকে তেমনিভাবে অন্যদের কাজের গতি ও একনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে । যেহেতু কাজের গতি ও একনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় সেহেতু উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে থাকে , যার মাধ্যমে সমাজ ও দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে । আর যখন বেপর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী কর্মক্ষেত্রে আসে এবং হরেক রকমের উত্তেজনাকর পোশাক পরে তাদের মধ্যে চলাফেরা করে তখন হাজার জোড়া লোলুপ দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে থাকে । যার ফলে নিম্নরূপ খারাপ ফল সমাজে দৃষ্ট হয়ে থাকে যথা :

ক)- এ ধরনের মনোবৃত্তির কারণে সে তো ভাল কাজের পরিচয় দিতে পারেই না সাথে সাথে অন্যদের কাজেরও ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে । কেননা যখন কোন প্রতিষ্ঠানে এমন ধরনের নারীদের উপস্থিতি থাকে তখন এর প্রভাবে দুর্বল ঈমান ও চরিত্রের ব্যক্তিরা কলুষিত হয়ে পড়ে এবং তাদের কাজের গতি ও একনিষ্ঠতা হরাস পায় । যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন কম হয় এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নিম্নে আসতে থাকে ।

খ)- উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে যে নৈতিক অনাচারের সৃষ্টি হয়ে থাকে তা কোন কাজ দ্রুত সম্পাদিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । অন্যদিকে মু ’ মিনগণ এমন পাপে লিপ্ত হন না বরং এ ধরনের পাপ থেকে তারা দূরে থাকেন । কেননা তারা সব সময় আল্লাহ্ তা ’ য়ালাকে রাজি ও খুশি করার নিমিত্তে সময় ব্যয় করে থাকেন । আর সে কারণেই তারা কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দিয়ে থাকেন এবং মানুষকে সাহায্য করে থাকেন । তাই তারা ঐ ধরনের নারীদের থেকে দূরে থাকেন ।

গ)- অস্ত্র-সস্ত্র বা সামরিক শক্তি নয় বরং প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতার উৎস হচ্ছে সে রাষ্ট্রের জনগণ । তাই যখন বেপর্দার কারণে সমাজের উপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয় তখন রাষ্ট্রের উপর মানুষের অসন্তুষ্টি ও অনাস্থা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে এবং তা এমনও হতে পারে যে , সরকারের পতনও ঘটাবে ।

ঘ)- বেপর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী সাধারণতঃ সমাজের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে না কেননা সমাজ তাদেরকে খেলার উপকরণ মনে করে থাকে । এমন নারীরা নিজেদের পরিবারের প্রতি তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না । ফলশ্রুতিতে তালাকের পরিমান ক্রমশই বাড়তে থাকে এবং পরিবার ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায় ও বেশীর ভাগ সন্তানই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ।

রাজনৈতিক দৃষ্টিতে হিজাব

বিশ্ব অত্যাচারী ও লুটেরার দল কখনই হত্যা , সন্ত্রাস , ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে কোন দেশ বা জাতিকে নিজেদের অধীনে রাখতে পারে নি । শুধুমাত্র নৈতিক অনাচার , অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতার প্রচারের মাধ্যমে তারা সফল হয়েছে । স্বাধীনতা ও সভ্যতার নামে নারীদেরকে উলঙ্গ করে তারা তাদের নষ্ট ও অসৎ উদ্দেশ্যে পৌঁছিয়ে থাকে । এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের পরিপূর্ণ হিজাবই তাদেরকে নিরাশ করে থাকে । বর্তমান বিশ্বেও এই অসৎ পথেই শত্রুপক্ষ পবিত্র ইসলামকে ধ্বংস করতে চায় । প্রকৃতপক্ষে নারীদের পরিপূর্ণ হিজাব ও তাকওয়া সমাজকে পরিশুদ্ধ করে থাকে । আর এটার প্রতিই হচ্ছে শত্রুদের বেশী ভয় । ফারানতিস ফানুন আলজিরিয়ার বিপ্লবকে সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করে বলেছে : উপনিবেশবাদী সমাজ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ এটাই যে , সমাজের নারীদেরকে হাতের মুঠোয় আনতে হবে , তা হলে সব কিছুই এর টানে হাতের মুঠোয় আসবে ।

হিজাবের কারণেই নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে

নারীর হিজাব এবং লজ্জা এমন এক ব্যবস্থা যা নারী পুরুষের সামনে নিজেকে মূল্যবান করে তুলে ধরতে এবং নিজের মর্যাদাকে সংরক্ষণ করতে সহজাতভাবেই ব্যবহার করে থাকে । কেননা ধী-শক্তি সম্পন্ন নারী স্বভাবগত ভাবেই তার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এটা বুঝে নিয়েছে যে , সে শারীরিক শক্তি ও গড়নের দিক থেকে পুরুষের মত নয় । তাই সে যদি পুরুষকে তার আয়ত্তে আনতে চায় তবে দেহবলে নয় , বরং অন্যভাবে তাকে তা করতে হবে । সে এটাও বুঝে নিয়েছে যা আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা তার মধ্যে যা দিয়েছে , তা হচ্ছে পুরুষ তাকে চায় অর্থাৎ পুরুষকে প্রেমিক আর নারীকে প্রেমিকা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন । এই সূত্র ধরে লজ্জাশীলা ও পর্দানশিন নারী অন্যের চেয়ে উত্তম রূপে পুরুষকে তার আয়ত্তে রাখতে পারে । আর সে নিজেকে যতই অন্যের সামনে উম্মুক্ত করে তুলে ধরা থেকে বিরত থাকবে এবং গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিবে ততই তার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেতে থাকবে ।

তাই সম্মান ও মর্যাদা লাভের বিষয়টি কোন বেপর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করা নারীর ক্ষেত্রে ঘটে না । কেননা এই রূপ নারীদের কারণে দুশ্চরিত্র পুরুষরা খুব সহজেই তাদের অবৈধ চাওয়া-পাওয়ায় পৌঁছে যায় এবং কোন নারীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা এবং বিয়ে করে স্ত্রীর দেন-মোহর , ভরণপোষণ এবং পোশাক-আষাক দেয়ারও ঝামেলাও নিতে চায় না , যদি চায়ও তবে সে নারীকে সন্তান দেখাশোনা করা এবং তার দাসী হয়ে থাকার জন্যেই চাইবে । অন্যদিকে সে স্ত্রীকে অন্য নারীর সাথে স্বাধীন ভাবে (অবৈধ) মেলা-মেশার প্রতিবন্ধক বলে মনে করবে । এরূপ চিন্তা করাতে স্ত্রী তার কাছে ছোট হয়ে যায় । কারণ ঐ ধরনের পুরুষরা কখনোই স্ত্রীকে কোন প্রকার মর্যাদা দানে আগ্রহী নয় । তাই বলতে হয় যে , স্ত্রীর জন্য এরূপ জীবন বা স্বামী হচ্ছে নিকৃষ্টতম আজাব । সুতরাং হিজাব নারীকে তার স্বামীর কাছে প্রিয় করে তোলে এবং বেপর্দা নারীকে স্বামীর কাছে অপ্রিয় ও তুচ্ছ করে ফেলে ।

যে সমাজ নারীকে নগ্ন ও উম্মুক্ত শরীরে দেখতে চায় সেখানে এটা খুবই স্বাভাবিক যে , দিনের পর দিন সাজ- সজ্জা ও নিজেকে উম্মুক্ত ভাবে প্রকাশ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে । যখন নারীকে তার যৌন আকর্ষণের কারণে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হবে , অভ্যর্থনা কক্ষে অন্যদের আকর্ষণ করার জন্য বসিয়ে রাখা হবে , পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য তাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে তখন সমাজে নারীর মর্যাদা একটি পুতুলের বা বিক্রয়যোগ্য পণ্যের মানে নেমে আসবে । ফলে সে তার মানবিক ও নৈতিক মূল্য ভুলে গিয়ে তার শারীরিক সৌন্দর্য্য ও যৌবন নিয়েই অহংকার করতে থাকবে ।

আর এই প্রক্রিয়াতেই সে হয়ে ওঠে অন্যের যৌন চাহিদা পূরণের উপকরণ এবং সমাজকে নষ্ট করার এক উত্তম হাতিয়ার । এমন সমাজে নারীর পক্ষে কিভাবে সম্ভব যে , সে তার উত্তম নৈতিক চরিত্র ও জ্ঞান বৈশিষ্ট্যের পরিচয় তুলে ধরবে এবং এ বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটিয়ে মানবতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে উন্নীত করবে ?

এটা সত্যই অতি দুঃখের বিষয় যে , পশ্চিমা ও পশ্চিমা অনুসরণকারী দেশগুলোতে এমনকি ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগে এখানেও সেই সব নারীদেরকেই সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হতো এবং সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করা হতো যারা ছিল অসৎ চরিত্রের যদিও কণ্ঠ বা চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হতো , এমনকি তাদের জন্য উত্তম থাকার ব্যবস্থা করা হতো ও তাদের আগমনে শুভেচ্ছা স্বাগতম বলা হতো!

আল্লাহর অনেক শুকরিয়া যে , সেই সব জঘন্য দিন ও কর্মকাণ্ড ইসলামী ইরানের পবিত্র ভূ-খণ্ড থেকে তিনি তুলে নিয়েছেন । নারীরা তাদের প্রকৃত ব্যক্তি পরিচয় ফিরে পেয়েছে । তারা নিজেদেরকে পর্দা দিয়ে আবৃত করেছে ঠিকই কিন্তু এমন নয় যে , তারা ঘরের এক কোণে বসে রয়েছে বরং তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে ভূমিকা রাখছেন । এমনকি ঐ পর্দা করা অবস্থাতেই তারা যুদ্ধের ময়দানে ভূমিকা পালন করেছে ।

হিজাব ফ্যাশান প্রীতি , অপচয় ও ভোগবাদী সংস্কৃতি রোধ করে থাকে

সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের পণ্যের বাজার গরম করার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করে থাকে । তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বা প্রকৃতির জিনিসপত্র তৈরী করে তা বাজারে পেরণ করা । এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অধিক হারে ক্রেতা আকর্ষণ করে তারা বিশাল মুনাফা অর্জনের চেষ্টা চালায় । অনেক মানুষই বিশেষ করে এক দল নারী বাজারে নতুন জিনিস আসা মাত্রই তা কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে । যদিও তার ঐ পোশাকের পুরাতন মডেলটি থেকে থাকে তথাপিও । জিনিস-পত্রের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকার বিষয়টি হচ্ছে প্রতিটি মানুষেরই পছন্দের ব্যাপার । কেননা তা হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি ও স্বভাবগত বিষয় । যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা প্রতিটি সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ও আন্তর্জাতিক মুনাফা লোভী গোষ্ঠী মানুষের এই প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের অপব্যবহার মাধ্যমে মুনাফা লুটছে । এভাবে তারা মানুষের মধ্যে বিশেষ করে এক শ্রেণীর নারীদের মধ্যে অতিমাত্রায় ফ্যাশান প্রীতি ও ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়ে ব্যাপক পরিমানে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে ।

পর্দা বিশেষ করে চাদরের (বোরখা) একটি উত্তম দিক হচ্ছে এই যে , ভোগবাদী সংস্কৃতি যা পশ্চিমাদের উপহার তা রোধ করে । সাথে সাথে তাদের রঙ্গিন বাজারকেও স্লান করে দিতে সাহায্য করে । সে কারণেই বিভিন্নভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা হিজাবের উপর আঘাত হানার চেষ্টা চালায় । তাই তারা পর্দার এই কঠিন বাঁধকে ধ্বংস করে দিতে বিভিন্নরূপ অপকৌশল প্রয়োগ করে থাকে । যাতে করে নারীদের বিভিন্ন মডেলের পোশাক প্রস্তুতকারকদের , অলংকার ও প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতকারকদের কারখানার চাকা সচল থাকে । আর এর মাধ্যমেই মিলিয়ন মিলিয়ন নারী যাদের কারণে সাম্রাজ্যবাদীরা শোষণ করার সুযোগ পেয়ে থাকে তাদের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয় ।

হিজাব প্রকৃতপক্ষে ঐ সমস্ত পোশাকের ব্যবহার হ্রাস করে থাকে তাই তাদের ক্ষতির কারণও বটে । কেননা মুসলমান নারী যেহেতু হিজাব পরিধান করে তাই বিভিন্ন মডেলের পোশাক পরে ও সে নিজেকে প্রকাশ ও অন্য পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য পুতুলের মত সাজ-সজ্জা করে বাইরে যায় না । অন্য দিকে আবার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উপরও তাদের কড়া নজর থাকে । আর এর মধ্য দিয়েই তারা পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে উষ্ণ ও আন্তরিকতাকে দৃঢ় রাখে ।

কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর নারীরা যে অর্থ দিয়ে অবশ্যই সংসার চালানো প্রয়োজন তা দিয়ে হরেক রকমের পোশাক কিনে থাকে । ফলশ্রুতিতে সংসার চালানোর অর্থ জোগাড় করতে তাদের স্বামীদের উপর অধিক চাপ পড়ে । এর ফলে তাদের মানসিক চাপও বৃদ্ধি পেতে থাকে । ক্রমেই তাদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা লোপ পেতে থাকে । আর যদি এই ধরনের নারীরা উপার্জনক্ষম হয়ে থাকে তবে সেই অর্থ বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে হোটেল , পিকনিক , চাকচিক্যময় পোশাক ক্রয় ও বিলাসিতায় ব্যয় করে থাকে । অবশ্য স্বামীর জন্য সুন্দর পোশাক পরিধান করা এবং সাজ-সজ্জা করাটা অতি উত্তম কাজ এবং ইসলাম এটা করতে বিশেষ তাগিদও দিয়েছে । এ বিষয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি ।

৭ম পাঠ

মু জিযাহ

নবুয়্যতকে প্রমাণের উপায়সমূহ :

নবুয়্যত অধ্যায়ের তৃতীয় মূল আলোচ্য বিষয়টি হল এই যে,সত্য নবীগণের দাবির সত্যতাকে এবং মিথ্যা নবীদের দাবির অসারতাকে কিরূপ অন্যদের জন্যে প্রমাণ করা যেতে পারে ?

নিঃসন্দেহে যদি এমন কোন দুষ্কৃতিকারী ও গুনাহে কলুষিত ব্যক্তি নবূয়্যতের দাবি করে,যার কুপ্রবনতার কুৎসিত দিকগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তি অনুধাবন করতে পারে,তবে এমন কোন ব্যক্তির দাবির কোন বিশ্বাসযোগ্যতা ও সত্যতা থাকবে না এবং নবীগণের জন্যে বর্ণিত ইসমাতের শর্তের আলোকে তার এ দাবির অসারতা প্রমাণ করা সম্ভব -বিশেষ করে যদি এমন কোন বিষয়ের দিকে আহবান করে,যা বুদ্ধিবৃত্তি ও ফিতরাত বিরোধী হয় অথবা যদি তার বক্তব্য স্ববিরোধী হয়।

অপরদিকে কোন ব্যক্তির এমন সুখ্যাতিপূর্ণ অতীত বিদ্যমান যে,নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা তার দাবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে -বিশেষ করে বুদ্ধিবৃত্তি যদি তার আহবানকৃত বিষয়ের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। অনুরূপ,অন্য কোন নবীর ভবিষ্যদ্বানী ও পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমেও কোন ব্যক্তির নবুয়্যতকে এরূপে প্রমাণ করা সম্ভব,যার ফলে সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তিদের জন্যে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।

কিন্তু যদি কোন সম্প্রদায়ের নিকট কারও নবুয়্যতের সত্যতা প্রমাণের জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোন সূত্র না থাকে অথবা অপর কোন নবী কর্তৃক ঐ ব্যক্তির নবুয়্যতের সুসংবাদ ও অনুমোদন প্রাপ্তির সংবাদ ঐ জনগোষ্ঠীর নিকট যদি না পৌছে থাকে তবে তার নবুয়্যতের প্রমানের জন্য অন্য কোন উপায়ের প্রয়োজনীয়তা থাকাটা স্বাভাবিক । আর তাই মহান আল্লাহ তার পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার আলোকে এ পথটি উন্মুক্ত করেছেন এবং নবীগণকে এমন কিছু মু জিযাহ দান করেছেন,যেগুলো তাদের দাবির সত্যতাকে নির্দেশ করে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ঐগুলোকে আয়াত (ایات )১৪ বা নিদর্শনসমূহ নামকরণ করা হয়েছে।

অতএব সত্য নবীগণের (আ.) দাবির সত্যতাকে তিনভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে। যথা :

১। বিশ্বাসযোগ্য সূত্রসমূহ থেকে,যেমন : আজীবন সত্যবাদীতা ও সঠিক পথে থাকা সত্যপথ থেকে অবিচ্যুত থাকা ও ন্যায়পরায়ণ থাকা। তবে এ উপায়টি ঐ সকল নবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যারা বর্ষ পরম্পরায় জনগণের মাঝে জীবন-যাপন করেছেন এবং যারা সংশ্লিষ্ট সমাজে চারিত্রিক দিক থেকে সুপরিচিত। কিন্তু যদি কোন নবী শৈশবে বা যৌবনে এবং জনগণ কর্তৃক তার ব্যক্তিত্ব ও সুনির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ শনাক্ত হওয়ার পূর্বেই রিসালাতের অধিকারী হন তবে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

২। পূর্ববর্তী বা সমসাময়িক কোন নবী কর্তৃক পরিচয় উপস্থাপনার মাধ্যমে : এ পদ্ধতিও ঐ জনসমষ্টির জন্যেই প্রযোজ্য যারা অন্য কোন নবীকে শনাক্ত করতে পেরেছেন এবং তার প্রদত্ত সুসংবাদ ও অনুমোদন সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। স্বভাবতঃই এ পথটি পূর্ববর্তী নবীর জন্যেও প্রযোজ্য নয়।

৩। মু জিযাহ প্রদর্শনের মাধ্যমে যা বিস্তৃত ও সার্বজনীনভাবে কার্যকরী। ফলে আমরা এ পদ্ধতিটির আলোচনায় মনোনিবেশ করব।

মু জিযাহর সংজ্ঞা :

মু জিযাহ বলতে বুঝায় -অলৌকিক কোন বিষয়কে,যা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নবুয়্যতের দাবিদার কোন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় এবং যা তার দাবির সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ।

লক্ষ্যণীয় যে,এ সংজ্ঞাটিতে তিনটি বিষয় সন্নিহিত আছে। যথা :

ক) এমন কিছু অলৌকিক বিষয়ের অস্তিত্ব রয়েছে যেগুলো সাধারণ ও জ্ঞাত কোন কারণের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করে না।

খ) এ অলৌকিক বিষয়সমূহের মধ্যে কতিপয় আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছা ও অনুমতিক্রমে নবীগণ কর্তৃক সম্পাদিত হয়।

গ) এ ধরনের অলৌকিক বিষয়সমূহই কেবল নবীগণের দাবির সত্যাতার নিদর্শন হতে পারে। আর তখন এগুলোকে পরিভাষাগত অর্থে মু জিযাহ (معجزه ) নামকরণ করা হয়ে থাকে।

এখন আমরা উপরোক্ত সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত বিষয়ত্রয় সম্পর্কে আলোচনায় মনোনিবেশ করব।

অলৌকিক বিষয়সমূহ :

এ বিশ্বে যে সকল বিষয় সংঘটিত হয়,সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এমন সকল কারণের মাধ্যমে অস্তিত্বে আসে যেগুলোকে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে শনাক্তকরণ সম্ভব। যেমন : পদার্থবিদ্যা,রসায়নবিদ্যা ও জীববিদ্যার অন্তর্ভূক্ত অধিকাংশ বিষয়। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রসমূহে এ অলৌকিক বিষয়সমূহের কিছু কিছু অন্য কোনভাবে সংঘটিত হয় এবং ঐগুলোর সঠিক কারণসমূহকে ঐন্দ্রিয় পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ ও পর্যবেক্ষণ করা যায় না। কারণ এ ধরনের বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে অন্য এক শ্রেণীর নির্বাহক কার্যকর। যেমন : যোগীদের বিভিন্ন বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড ইাত্যাদি। বিভিন্ন বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিবর্গ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে,এ সকল কর্মকাণ্ড বস্তুগত ও অভিজ্ঞতালব্ধ নিয়মের ভিত্তিতে সংঘটিত হয় না। আর এ ধরনের বিষয়সমূহই অলৌকিক বিষয় (خارق العادة ) নামে পরিচিত।

প্রভু কর্তৃক সংঘটিত অলৌকিক ঘটনা :

অলৌকিক ঘটনাসমূহকে সার্বিকভাবে দু ভাগে বিভক্ত করা যায়। একটি হল ঐ সকল ঘটনা যাদের কারণসমূহ সাধারণ না হলেও ঐ সকল অসাধারণ কারণসমূহ মোটামুটি মানুষের আওতাধীন এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে ঐ গুলোকে অর্জন করা সম্ভব। যেমন : যোগীদের কর্মকাণ্ড। আর অপরটি হল ঐ সকল অলৌকিক ঘটনা যেগুলোর বাস্তবায়ন প্রভুর বিশেষ অনুগ্রহ ও অনুমতির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ঐ গুলোর অধিকার মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা হয় না। অতএব উপরোক্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর অলৌকিক ঘটনাসমূহের দু টি মৌলিক বিশেষত্ব বিদ্যমান। যথা :

প্রথমতঃ শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণযোগ্য নয় এবং দ্বিতীয়তঃ অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয় না ও অন্য কোন নির্বাহকের নিকট পরাভূত হয় না ।

আর এ ধরনের অলৌকিক বিষয়সমূহ একমাত্র আল্লাহর নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গেরই অধীন এবং কখনোই বিপথগামী ও কলুষিতদের নাগালে আসে না। কিন্তু শুধুমাত্র নবীগণের জন্যেই নির্দিষ্ট নয়। বরং কখনো কখনো আল্লাহর অন্যান্য ওলীগণও এগুলোর অধিকারী হতে পারেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে কালামশাস্ত্রের পরিভাষায় বর্ণিত (দ্বিতীয় শ্রেণীর) সকল অলৌকিক ঘটনাকে মু জিযাহ বলা হয় না এবং এ ধরনের যে সকল কর্মকাণ্ড নবীগণ ব্যতীত অন্য কারও মাধ্যমে সংঘটিত হয় সেগুলোকে সাধারণত কেরামত নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন : প্রভু প্রদত্ত অসাধারণ জ্ঞান শুধুমাত্র নবুয়্যতের ওহী সংশ্লিষ্ট নয় এবং যখন এ ধরনের জ্ঞান (নবী ভিন্ন) অন্য কাউকে প্রদত্ত হয়,তখন এলহাম (الهام ),তাহ্দিস (تحدیث ) ইত্যাদি নামকরণ করা হয়।

যা হোক এ দু ধরনের (ঐশ্বরিক ও অনৈশ্বরিক) অলৌকিক ঘটনাসমূহকে শনাক্তকরণের উপায় জ্ঞাত হল অর্থাৎ যে সকল অলৌকিক ঘটনা শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণযোগ্য অথবা যদি অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে ঐগুলোর সংঘটন ও অগ্রগতিকে রোধ করা যায় এবং ঐগুলোর প্রভাব নস্যাৎ করা যায় তবে ঐগুলো প্রভু কর্তৃক সংঘটিত অলৌকিক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন : কোন ব্যক্তির দুস্কৃতি ও অন্যায় বিশ্বাস ও চরিত্রকে মহান আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কহীনতার এবং তার কর্মগুলো শয়তানী ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নিদর্শনরূপে গণনা করা যেতে পারে।

এখানে অন্য একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করাটা যুক্তিযুক্ত মনে করছি। আর তা হল এই যে,ঐশ্বরিক অলৌকিক ঘটনাসমূহের কর্তা হিসেবে মহান আল্লাহকে মনে করা যেতে পারে (সকল সৃষ্ট বিষয় যেমন : সাধারণ ঘটনাসমূহের কর্তৃত্ব ব্যতীতও) -এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে,ঐ গুলোর সংঘটন তার বিশেষ অনুমতির সাথে সম্পর্কিত।১৫ অনুরূপ ঐগুলোর মাধ্যম হিসেবে উদাহরণতঃ ফেরাস্তাগণ অথবা নবীগণের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা যেতে পারে। আর তা এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে,তারা মাধ্যম হিসাবে বা নিকটবর্তী কর্তা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। যেমন করে পবিত্র কোরান মৃতদেরকে জীবিতকরণ,অসুস্থকে আরোগ্যদান এবং পাখী সৃষ্টিকে ঈসার (আ.) কর্তৃত্ব বলে উল্লেখ করেছে।১৬ সুতরাং এ দু ধরনের কর্তৃত্বের উদ্ধৃতি দেয়ার মধ্যে বিরোধ ও বৈপরীত্য নেই। কারণ প্রভুর কর্তৃত্ব বান্দাদের কর্তৃত্বের উল্লম্বে অবস্থান করে।

নবীগণের মু জিযাহর বৈশিষ্ট্য :

মু জিযাহর সংজ্ঞায় তৃতীয় যে বিষয়টি সম্পর্কে ইংগিত করা হয়েছে তা এই যে,মু জিযাহ নবীগণের দাবির সত্যতার নিদর্শনস্বরূপ। এ দৃষ্টিকোণ থেকে,যখন অলৌকিক বিষয়সমূহকে কালামশাস্ত্রের পরিভষায় মু জিয়াহ নামকরণ করা হয় যখন প্রভুর বিশেষ অনুমতির প্রমাণ ছাড়াও নবীগণের নবুয়্যতের দলিলস্বরূপ সংঘটিত হয়। আর এর ভাবার্থের কিছুটা সম্প্রসারণ করলে,ঐ সকল অলৌকিক বিষয়কেও সমন্বিত করে,যা ইমামতের দাবির সত্যতার প্রমাণ হিসেবে সংঘটিত হয়ে থাকে। আর এভাবে কেরামত (کرامت ) পরিভাষাটি অন্যান্য ঐশ্বরিক অলৌকিক বিষয়সমূহ,যেগুলো আল্লাহর ওলীগণের মাধ্যমে,যাদুকর ভাগ্যগণক ও যোগীদের বিভিন্ন কর্মের মত শয়তানী ও কুমন্ত্রণাপ্রসূত অলৌকিক বিষয়সমূহের প্রতিকুলে সংঘটিত হয়। এ ধরনের (শয়তানী) কর্মগুলো একদিকে যেমন শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণযোগ্য,অপরদিকে তেমনি বৃহত্তর শক্তির নিকট পরাভূত হয় এবং সাধারণতঃ ঐগুলোর অনৈশ্বরিকতার প্রমাণ,সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস ও আচরণে প্রতিফলিত হয়।

এখানে স্মরণযোগ্য যে,নবীগণের (আ.) মু জিযাহসমূহ যা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করে তা হল তাদের নবুয়্যতের দাবির সত্যতা। কিন্তু রিসালাতের বিষয়বস্তুর সঠিকতা এবং আদিষ্ট বিষয়সমূহের আনুগত্যের অপরিহার্যতা অপ্রত্যক্ষভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় : নবীগণের নবুয়্যতকে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের মাধ্যমে এবং তাদের সংবাদের বিষয়বস্তুর বিশ্বস্ততা বিশ্বাসগত (تعبدی ) দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।১৭

৮ম পাঠ

কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণার জবাব

কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণার জবাব :

মু'জিযাহ সম্পর্কে একাধিক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। এখন আমরা ঐগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করব।

১। প্রথম ভ্রান্ত ধারণাটি হল : সকল বস্তুগত বিষয়ের জন্যেই বিশেষ কারণ বিদ্যমান,যাকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। পরীক্ষাগারের প্রচলিত সরঞ্জামের মাধ্যমে পরীক্ষার অনুপযোগী বিষয়সমূহের কারণ সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা,কোন বিষয়ের জন্যে সাধারণ কারণের অনুপস্থিতির দলিল নয়। অতএব অলৌকিক বিষয়সমূহ শুধুমাত্র এ হিসেবেই গ্রহণযোগ্য হবে যে,এ গুলো অজ্ঞাত কোন কারণ ও নির্বাহকের প্রভাবে অস্তিত্ব লাভ করে থাকে। সর্বোপরি যতক্ষণ পর্যন্ত এ অলৌকিক বিষয়সমূহের কারণ অজ্ঞাত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ গুলোকে মু জিযাহরূপে গণনা করা যেতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণযোগ্য কারণকে অস্বীকার করার অর্থ হল কার্যকারণ বিধির ব্যতিক্রম,যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

জবাব : কার্যকারণ বিধির আবেদন এর চেয়ে অধিক নয় যে,সকল নির্ভরশীল অস্তিত্বের জন্যই কোন না কোন কারণ বিদ্যমান। কিন্তু সকল কারণই যে,জ্ঞাত হবে তা কখনোই কার্যকারণ বিধির জন্যে অপরিহার্য নয় এবং এর স্বপক্ষে কোন যুক্তি পাওয়া যাবে না। কারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিধি প্রাকৃতিক বিষয়সমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং অতিপ্রাকৃতিক বিষয়সমূহের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব অথবা তাদের প্রভাবকে কখনোই পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে না।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণের জ্ঞানরূপে মু জিযাহর যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ যদি এ জ্ঞান সাধারণ কারণের মতই লব্ধ হয় তবে অন্যান্য সাধারণ ঘটনার সাথে এর কোন পার্থক্য থাকবে না এবং কখনোই একে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে গণনা করা যাবে না। আবার যদি উল্লেখিত জ্ঞান অসাধারণ পথে অর্জিত হয় তবে তা অলৌকিক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যখন মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবুয়্যতের সাক্ষীরূপে সংঘটিত হবে তখন তা এক প্রকার মু জিযাহরূপে পরিগণিত হবে। যেমন : মানুষের সঞ্চয় ও খাদ্য সম্পর্কে হযরত ঈসার (আ.) জ্ঞান,তার একটি মুজিযাহরূপে পরিগণিত হয়েছে। পবিত্র কোরানের আয়াত এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য :

) وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ(

আর যা কিছু আহার কর এবং নিজেদের গৃহে মওজুদ কর তা তোমাদেরকে বলে দিব। (সূরা আলে ইমরান -৪৯ )

কিন্তু মু জিযাহর অন্যান্য প্রকরণকে অস্বীকার করে একে শুধূমাত্র উল্লেখিত শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা যাবে না। কারণ তখনও এ প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায় যে,এ কার্যকারণ বিধির দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়টির সাথে অন্যান্য অলৌকিক ঘটনার কী পার্থক্য বিদ্যমান?

২। দ্বিতীয় ভ্রান্ত ধারণা : আল্লাহর নিয়ম এরূপ যে,সকল কিছুকেই স্বতন্ত্র কারণের মাধ্যমে অস্তিত্বে আনয়ন করেন। আর কোরানের পবিত্র আয়াত অনুসারে আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন হয় না।১৮ অতএব অলৌকিক ঘটনাসমূহ যে,আল্লাহর নিয়মে পরিবর্তন করে তা এ ধরনের আয়াতের মাধ্যমে অস্বীকৃত হয়।

এ ভ্রান্ত ধারণাটি পূর্বোক্ত ভ্রান্ত ধারণাটির মতই। তবে এতটুকু পার্থক্য বিদ্যমান যে,পূর্বোক্তটিতে কেবলমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছিল কিন্তু এখানে কোরানের আয়াতের মাধ্যমে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে । যা হোক এর উত্তর হল : কারণ ও উপকরণসমূহকে কেবলমাত্র সাধারণ উপকরণ ও কারণসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধকরণ আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মের অন্তর্ভুক্ত বলে গণনা করা অযৌক্তিক। নতুবা তা ঐ ব্যক্তির দাবির মত হবে যে মনে করে তাপের একমাত্র কারণ হল আগুন আর এটি হল আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মের অন্তর্ভূক্ত আর এ ধরনের দাবির প্রতিকূলে বলা যেতে পারে যে,বিভিন্ন প্রকারের কার্যের জন্যে একাধিক প্রকারের কারণের উপস্থিতি এবং সাধারণ কারণকে,অসাধারণ কারণের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন,সর্বদা এ বিশ্বে বিদ্যমান। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে একে আল্লাহর নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত মনে করা উচিৎ এবং কারণসমূহকে শুধু সাধারণ কারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধকরণই হল আল্লাহর নিয়মের পরিবর্তন,যা পবিত্র কোরানের উল্লেখিত আয়াতসমূহে অস্বীকার করা হয়েছে।

যাহোক,আল্লাহর নিয়মের অপরিবর্তনশীলতার প্রমাণ বহনকারী আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা করা,যেখানে সাধারণ কারণের প্রতিস্থাপনহীনতা আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হয়,তা অযৌক্তিক চিন্তা বৈ কিছু নয়। তদুপরি মুজিযাহ ও অলৌকিক ঘটনার প্রমাণবহ অসংখ্য আয়াত উপরোক্ত ব্যাখ্যার অসারতার সুস্পষ্ট দলিল। উল্লেখিত আয়াতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যার জন্যে তাফসিরগ্রন্থসমূহে অনুসসন্ধান করতে হবে।

এখানে আমরা সংক্ষেপে বলব যে,এ শ্রেণীর আয়াতসমূহ কারণের একাধিক্যের ও সাধারণ কারণের আসাধারণ কারণ কর্তৃক প্রতিস্থাপনের বিরোধী নয়। বরং কার্যের কারণহীনতার বিরোধী। সর্বোপরি সম্ভবত এটুকু বললেও অত্যুক্তি হবে না যে,উল্লেখিত আয়াতসমূহের বিষয়বস্তুর নিশ্চিত পরিমাণ (القدر المتیقین )১৯ অসাধারণ কারণসমূহের প্রভাবকে স্বীকার করে।

৩। তৃতীয় ভ্রান্ত ধারণা : পবিত্র কোরানে এসেছে যে,মানুষ উত্তর উত্তর ইসলামের নবীর (সা.) নিকট মু জিযাহ ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শণের জন্যে আবেদন করত। কিন্তু হয়রত (সা.) এ ধরনের আবেদনের জবাব প্রদানে বিরত থাকতেন।২০ যদি মু জিযাহ প্রদর্শন নবুয়্যতের প্রমাণের জন্যে একটি উপায় হয়ে থাকে তবে কেন নবী (সা.) এ উপায়টি ব্যবহার করেন নি ?

জবাব : এ ধরনের আয়াতসমূহ ঐ সকল আবেদন সংশ্লিষ্ট,যা সত্য প্রকাশ করার ও প্রাগুক্ত তিনটি পথের প্রতিটি পথেই নবুয়্যাত প্রতিপাদিত হওয়ার পর আক্রোশ ও শত্রুতাবশতঃ অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করেছিল,সত্যানুসন্ধিৎসা বশতঃ নয়।২১ আর এ ধরনের আবেদনে সাড়া দেয়া প্রভুর প্রজ্ঞা সঙ্গত নয়।

আর এর ব্যাখ্যা এরূপ : মু জিযাহ এ বিশ্বে বিদ্যমান বিন্যাস ব্যবস্থার একটি ব্যতিক্রমী বিষয় যা কখনো কখনো মানুষের আবেদনের জবাবস্বরূপ [যেমন : হযরত সালেহর (আ.) উটনী] আবার কখনো বা প্রারম্ভিকভাবেই [যেমন : ঈসার (আ.) মু জিযাহ] সংঘটিত হত। আর এ মু জিযাহ প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর নবীগণকে (আ.) পরিচিতকরণ এবং তাদের নবুয়্যতের দাবির স্বপক্ষে চূড়ান্ত যুক্তি-প্রমাণ পেশ করণ -নবীগণের (আ.) আহবানে সাড়া দেয়ার জন্যে বাধ্য করতে ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে নয় অথবা চিত্তবিনোদনের উপকরণ সরবরাহ ও সাধারণ কারণ ও কারণত্বের বিন্যাস ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করার জন্যে নয়। আর এ ধরনের উদ্দেশ্য সকল আবেদনেরই ইতিবাচক জবাব দেয়ার অবকাশ দেয় না। বরং এদের কোন কোনটির পক্ষে সাড়া দেয়া প্রজ্ঞাবিরোধী ও অনর্থক বৈ কিছু নয়। যেমন : যে সকল আবেদন স্বাধীনভাবে নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ও জনগণকে নবীগণের (আ.) অহবানে সাড়া দেয়ার জন্য বল প্রয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল অথবা সত্যানুসন্ধিৎসা ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্যে ও শত্রুতাবশতঃ করা হত। কারণ যদি ঐ সকল আবেদনে সাড়া দেয়া হত তবে একদিকে মু জিযাহ প্রদর্শন বেলেল্লাপনায় পর্যবসিত হত এবং মানুষ শুধুমাত্র চিত্তবিনোদনের বিষয় হিসাবেই এটাকে গ্রহণ করত অথবা ব্যক্তিগত বাসনা চরিতার্থ করার জন্যে নবীগণের পাশে জোটবদ্ধ হত। অপর দিকে পরীক্ষা ও স্বাধীন নির্বাচনের দ্ধার বন্ধ হত এবং মানুষ অসন্তুষ্টচিত্তে বাধ্য হয়ে নবীগণের (আ.) আনুগত্য স্বীকার করত। আর উল্লেখিত উভয় প্রক্রিয়াই প্রজ্ঞা ও মু জিযাহ প্রদর্শনের পরিপন্থী ছিল।

বর্ণিত ক্ষেত্রসমূহ ব্যতীত প্রভুর প্রজ্ঞাপন্থী অন্য যে কোন ক্ষেত্রেই মানুষের আবেদন গ্রহণ করা হত। যেমন : ইসলামের নবী (সা.) এর মাধ্যমেও অসংখ্য মু জিযাহ প্রদর্শিত হয়েছিল,যেগুলোর অধিকাংশ বহুবর্ণিত উদ্ধৃতির (হাদীসে মুতাওয়াতির) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এ গুলোর শীর্ষে রয়েছে চিরন্তন মু জিযাহ পবিত্র কোরান,যার আলোচনা পরবর্তীতে আসবে।

৪। চতুর্থ ভ্রান্ত ধারণা : মু জিযাহ যে দৃষ্টিকোণ থেকে প্রভুর বিশেষ অনুমতির সাথে সম্পর্কিত সে দৃষ্টিকোণ থেকে তা মহান আল্লাহর সাথে মু জিযাহ প্রদর্শনকারীর বিশেষ সম্পর্কের নিদর্শনরূপে গণনা করা যেতে পারে। আর তা এ যুক্তিতে যে,তাকে বিশেষ অনুমতি দেয়া হয়েছে। অন্যকথায় : মহান আল্লাহ স্বীয় কীর্তিকে তারই (মু জিযাহ প্রদর্শনকারী) ইরাদার প্রবাহ ধারায়,তার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু এ ধরনের শর্তের বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল এটা নয় যে,ওহীর প্রেরণ ও গ্রহণের মত অপর একটি সম্পর্ক মহান আল্লাহ ও মু জিযাহ প্রদর্শনকারীর মধ্যে বিদ্যমান। অতএব মু জিযাহকে নবুয়্যতের দাবির সত্যতার জন্যে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলরূপে গণ্য করা যায় না এবং সর্বোচ্চ হলেও একে সম্ভাব্য ও ইক্বনায়ী (اقناعی ) (পরিতৃপ্তকারী) দলিল হিসেবে গণনা করা যেতে পারে।

জবাব : অলৌকিক কর্মকাণ্ডগুলো (ঐশ্বরিক অলৌকিক বিষয় হলেও) স্বয়ংক্রিয় পন্থায় ওহীর সম্পর্কের জন্যে কোন দলিল নয়। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আল্লাহর ওলীগণের কেরামতকেও তাদের নবুয়্যতের দলিলরূপে গণ্য করা যায় না। কিন্তু বিবেচনার বিষয় হল তার ক্ষেত্রেই যিনি নবূয়্যতের দাবি করেছেন এবং এর প্রমাণ স্বরূপ মু জিযাহ প্রদর্শন করেছেন। মনে করুন,যদি এ ধরনের কেউ মিথ্যার বশবর্তী হয়ে নবূয়্যত দাবী করত (অর্থাৎ সে বিভৎস ও কদর্যপূর্ণ গুনাহে লিপ্ত হল,যা ইহ ও পরকালে কুৎসিততম অনাচার বলে পরিচিত)২২ তবে কখনোই সে মহান আল্লাহর সাথে এ ধরনের সম্পর্কের। যোগ্যতাসম্পন্ন হত না এবং প্রভুর প্রজ্ঞা কখনোই মু জিযাহ প্রদর্শনের ক্ষমতা তাকে প্রদান সঙ্গত মনে করত না,যার মাধ্যমে সে মানুষকে বিপথগামী করত।

সিদ্ধান্ত : বুদ্ধিবৃত্তি স্পষ্টতঃই অনুধাবন করতে পারে যে,যদি কেউ মহান আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্কের ও মু জিযাহ প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে তবে কখনোই স্বীয় প্রভুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না অথবা তার বান্দাদের বিপথগামিতা ও অনন্ত দুর্দশার কারণ হতে পারে না।

অতএব মু জিযাহ প্রদর্শন হল নবূয়্যতের দাবির সত্যতার জন্যে চূড়ান্ত বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল।

৭ম পাঠ

মু জিযাহ

নবুয়্যতকে প্রমাণের উপায়সমূহ :

নবুয়্যত অধ্যায়ের তৃতীয় মূল আলোচ্য বিষয়টি হল এই যে,সত্য নবীগণের দাবির সত্যতাকে এবং মিথ্যা নবীদের দাবির অসারতাকে কিরূপ অন্যদের জন্যে প্রমাণ করা যেতে পারে ?

নিঃসন্দেহে যদি এমন কোন দুষ্কৃতিকারী ও গুনাহে কলুষিত ব্যক্তি নবূয়্যতের দাবি করে,যার কুপ্রবনতার কুৎসিত দিকগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তি অনুধাবন করতে পারে,তবে এমন কোন ব্যক্তির দাবির কোন বিশ্বাসযোগ্যতা ও সত্যতা থাকবে না এবং নবীগণের জন্যে বর্ণিত ইসমাতের শর্তের আলোকে তার এ দাবির অসারতা প্রমাণ করা সম্ভব -বিশেষ করে যদি এমন কোন বিষয়ের দিকে আহবান করে,যা বুদ্ধিবৃত্তি ও ফিতরাত বিরোধী হয় অথবা যদি তার বক্তব্য স্ববিরোধী হয়।

অপরদিকে কোন ব্যক্তির এমন সুখ্যাতিপূর্ণ অতীত বিদ্যমান যে,নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা তার দাবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে -বিশেষ করে বুদ্ধিবৃত্তি যদি তার আহবানকৃত বিষয়ের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। অনুরূপ,অন্য কোন নবীর ভবিষ্যদ্বানী ও পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমেও কোন ব্যক্তির নবুয়্যতকে এরূপে প্রমাণ করা সম্ভব,যার ফলে সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তিদের জন্যে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।

কিন্তু যদি কোন সম্প্রদায়ের নিকট কারও নবুয়্যতের সত্যতা প্রমাণের জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোন সূত্র না থাকে অথবা অপর কোন নবী কর্তৃক ঐ ব্যক্তির নবুয়্যতের সুসংবাদ ও অনুমোদন প্রাপ্তির সংবাদ ঐ জনগোষ্ঠীর নিকট যদি না পৌছে থাকে তবে তার নবুয়্যতের প্রমানের জন্য অন্য কোন উপায়ের প্রয়োজনীয়তা থাকাটা স্বাভাবিক । আর তাই মহান আল্লাহ তার পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার আলোকে এ পথটি উন্মুক্ত করেছেন এবং নবীগণকে এমন কিছু মু জিযাহ দান করেছেন,যেগুলো তাদের দাবির সত্যতাকে নির্দেশ করে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ঐগুলোকে আয়াত (ایات )১৪ বা নিদর্শনসমূহ নামকরণ করা হয়েছে।

অতএব সত্য নবীগণের (আ.) দাবির সত্যতাকে তিনভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে। যথা :

১। বিশ্বাসযোগ্য সূত্রসমূহ থেকে,যেমন : আজীবন সত্যবাদীতা ও সঠিক পথে থাকা সত্যপথ থেকে অবিচ্যুত থাকা ও ন্যায়পরায়ণ থাকা। তবে এ উপায়টি ঐ সকল নবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যারা বর্ষ পরম্পরায় জনগণের মাঝে জীবন-যাপন করেছেন এবং যারা সংশ্লিষ্ট সমাজে চারিত্রিক দিক থেকে সুপরিচিত। কিন্তু যদি কোন নবী শৈশবে বা যৌবনে এবং জনগণ কর্তৃক তার ব্যক্তিত্ব ও সুনির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ শনাক্ত হওয়ার পূর্বেই রিসালাতের অধিকারী হন তবে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তার দাবির সত্যতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

২। পূর্ববর্তী বা সমসাময়িক কোন নবী কর্তৃক পরিচয় উপস্থাপনার মাধ্যমে : এ পদ্ধতিও ঐ জনসমষ্টির জন্যেই প্রযোজ্য যারা অন্য কোন নবীকে শনাক্ত করতে পেরেছেন এবং তার প্রদত্ত সুসংবাদ ও অনুমোদন সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। স্বভাবতঃই এ পথটি পূর্ববর্তী নবীর জন্যেও প্রযোজ্য নয়।

৩। মু জিযাহ প্রদর্শনের মাধ্যমে যা বিস্তৃত ও সার্বজনীনভাবে কার্যকরী। ফলে আমরা এ পদ্ধতিটির আলোচনায় মনোনিবেশ করব।

মু জিযাহর সংজ্ঞা :

মু জিযাহ বলতে বুঝায় -অলৌকিক কোন বিষয়কে,যা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নবুয়্যতের দাবিদার কোন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় এবং যা তার দাবির সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ।

লক্ষ্যণীয় যে,এ সংজ্ঞাটিতে তিনটি বিষয় সন্নিহিত আছে। যথা :

ক) এমন কিছু অলৌকিক বিষয়ের অস্তিত্ব রয়েছে যেগুলো সাধারণ ও জ্ঞাত কোন কারণের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করে না।

খ) এ অলৌকিক বিষয়সমূহের মধ্যে কতিপয় আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছা ও অনুমতিক্রমে নবীগণ কর্তৃক সম্পাদিত হয়।

গ) এ ধরনের অলৌকিক বিষয়সমূহই কেবল নবীগণের দাবির সত্যাতার নিদর্শন হতে পারে। আর তখন এগুলোকে পরিভাষাগত অর্থে মু জিযাহ (معجزه ) নামকরণ করা হয়ে থাকে।

এখন আমরা উপরোক্ত সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত বিষয়ত্রয় সম্পর্কে আলোচনায় মনোনিবেশ করব।

অলৌকিক বিষয়সমূহ :

এ বিশ্বে যে সকল বিষয় সংঘটিত হয়,সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এমন সকল কারণের মাধ্যমে অস্তিত্বে আসে যেগুলোকে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে শনাক্তকরণ সম্ভব। যেমন : পদার্থবিদ্যা,রসায়নবিদ্যা ও জীববিদ্যার অন্তর্ভূক্ত অধিকাংশ বিষয়। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রসমূহে এ অলৌকিক বিষয়সমূহের কিছু কিছু অন্য কোনভাবে সংঘটিত হয় এবং ঐগুলোর সঠিক কারণসমূহকে ঐন্দ্রিয় পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ ও পর্যবেক্ষণ করা যায় না। কারণ এ ধরনের বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে অন্য এক শ্রেণীর নির্বাহক কার্যকর। যেমন : যোগীদের বিভিন্ন বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড ইাত্যাদি। বিভিন্ন বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিবর্গ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে,এ সকল কর্মকাণ্ড বস্তুগত ও অভিজ্ঞতালব্ধ নিয়মের ভিত্তিতে সংঘটিত হয় না। আর এ ধরনের বিষয়সমূহই অলৌকিক বিষয় (خارق العادة ) নামে পরিচিত।

প্রভু কর্তৃক সংঘটিত অলৌকিক ঘটনা :

অলৌকিক ঘটনাসমূহকে সার্বিকভাবে দু ভাগে বিভক্ত করা যায়। একটি হল ঐ সকল ঘটনা যাদের কারণসমূহ সাধারণ না হলেও ঐ সকল অসাধারণ কারণসমূহ মোটামুটি মানুষের আওতাধীন এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে ঐ গুলোকে অর্জন করা সম্ভব। যেমন : যোগীদের কর্মকাণ্ড। আর অপরটি হল ঐ সকল অলৌকিক ঘটনা যেগুলোর বাস্তবায়ন প্রভুর বিশেষ অনুগ্রহ ও অনুমতির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ঐ গুলোর অধিকার মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা হয় না। অতএব উপরোক্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর অলৌকিক ঘটনাসমূহের দু টি মৌলিক বিশেষত্ব বিদ্যমান। যথা :

প্রথমতঃ শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণযোগ্য নয় এবং দ্বিতীয়তঃ অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয় না ও অন্য কোন নির্বাহকের নিকট পরাভূত হয় না ।

আর এ ধরনের অলৌকিক বিষয়সমূহ একমাত্র আল্লাহর নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গেরই অধীন এবং কখনোই বিপথগামী ও কলুষিতদের নাগালে আসে না। কিন্তু শুধুমাত্র নবীগণের জন্যেই নির্দিষ্ট নয়। বরং কখনো কখনো আল্লাহর অন্যান্য ওলীগণও এগুলোর অধিকারী হতে পারেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে কালামশাস্ত্রের পরিভাষায় বর্ণিত (দ্বিতীয় শ্রেণীর) সকল অলৌকিক ঘটনাকে মু জিযাহ বলা হয় না এবং এ ধরনের যে সকল কর্মকাণ্ড নবীগণ ব্যতীত অন্য কারও মাধ্যমে সংঘটিত হয় সেগুলোকে সাধারণত কেরামত নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন : প্রভু প্রদত্ত অসাধারণ জ্ঞান শুধুমাত্র নবুয়্যতের ওহী সংশ্লিষ্ট নয় এবং যখন এ ধরনের জ্ঞান (নবী ভিন্ন) অন্য কাউকে প্রদত্ত হয়,তখন এলহাম (الهام ),তাহ্দিস (تحدیث ) ইত্যাদি নামকরণ করা হয়।

যা হোক এ দু ধরনের (ঐশ্বরিক ও অনৈশ্বরিক) অলৌকিক ঘটনাসমূহকে শনাক্তকরণের উপায় জ্ঞাত হল অর্থাৎ যে সকল অলৌকিক ঘটনা শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণযোগ্য অথবা যদি অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে ঐগুলোর সংঘটন ও অগ্রগতিকে রোধ করা যায় এবং ঐগুলোর প্রভাব নস্যাৎ করা যায় তবে ঐগুলো প্রভু কর্তৃক সংঘটিত অলৌকিক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন : কোন ব্যক্তির দুস্কৃতি ও অন্যায় বিশ্বাস ও চরিত্রকে মহান আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কহীনতার এবং তার কর্মগুলো শয়তানী ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নিদর্শনরূপে গণনা করা যেতে পারে।

এখানে অন্য একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করাটা যুক্তিযুক্ত মনে করছি। আর তা হল এই যে,ঐশ্বরিক অলৌকিক ঘটনাসমূহের কর্তা হিসেবে মহান আল্লাহকে মনে করা যেতে পারে (সকল সৃষ্ট বিষয় যেমন : সাধারণ ঘটনাসমূহের কর্তৃত্ব ব্যতীতও) -এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে,ঐ গুলোর সংঘটন তার বিশেষ অনুমতির সাথে সম্পর্কিত।১৫ অনুরূপ ঐগুলোর মাধ্যম হিসেবে উদাহরণতঃ ফেরাস্তাগণ অথবা নবীগণের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা যেতে পারে। আর তা এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে,তারা মাধ্যম হিসাবে বা নিকটবর্তী কর্তা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। যেমন করে পবিত্র কোরান মৃতদেরকে জীবিতকরণ,অসুস্থকে আরোগ্যদান এবং পাখী সৃষ্টিকে ঈসার (আ.) কর্তৃত্ব বলে উল্লেখ করেছে।১৬ সুতরাং এ দু ধরনের কর্তৃত্বের উদ্ধৃতি দেয়ার মধ্যে বিরোধ ও বৈপরীত্য নেই। কারণ প্রভুর কর্তৃত্ব বান্দাদের কর্তৃত্বের উল্লম্বে অবস্থান করে।

নবীগণের মু জিযাহর বৈশিষ্ট্য :

মু জিযাহর সংজ্ঞায় তৃতীয় যে বিষয়টি সম্পর্কে ইংগিত করা হয়েছে তা এই যে,মু জিযাহ নবীগণের দাবির সত্যতার নিদর্শনস্বরূপ। এ দৃষ্টিকোণ থেকে,যখন অলৌকিক বিষয়সমূহকে কালামশাস্ত্রের পরিভষায় মু জিয়াহ নামকরণ করা হয় যখন প্রভুর বিশেষ অনুমতির প্রমাণ ছাড়াও নবীগণের নবুয়্যতের দলিলস্বরূপ সংঘটিত হয়। আর এর ভাবার্থের কিছুটা সম্প্রসারণ করলে,ঐ সকল অলৌকিক বিষয়কেও সমন্বিত করে,যা ইমামতের দাবির সত্যতার প্রমাণ হিসেবে সংঘটিত হয়ে থাকে। আর এভাবে কেরামত (کرامت ) পরিভাষাটি অন্যান্য ঐশ্বরিক অলৌকিক বিষয়সমূহ,যেগুলো আল্লাহর ওলীগণের মাধ্যমে,যাদুকর ভাগ্যগণক ও যোগীদের বিভিন্ন কর্মের মত শয়তানী ও কুমন্ত্রণাপ্রসূত অলৌকিক বিষয়সমূহের প্রতিকুলে সংঘটিত হয়। এ ধরনের (শয়তানী) কর্মগুলো একদিকে যেমন শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণযোগ্য,অপরদিকে তেমনি বৃহত্তর শক্তির নিকট পরাভূত হয় এবং সাধারণতঃ ঐগুলোর অনৈশ্বরিকতার প্রমাণ,সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস ও আচরণে প্রতিফলিত হয়।

এখানে স্মরণযোগ্য যে,নবীগণের (আ.) মু জিযাহসমূহ যা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করে তা হল তাদের নবুয়্যতের দাবির সত্যতা। কিন্তু রিসালাতের বিষয়বস্তুর সঠিকতা এবং আদিষ্ট বিষয়সমূহের আনুগত্যের অপরিহার্যতা অপ্রত্যক্ষভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় : নবীগণের নবুয়্যতকে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের মাধ্যমে এবং তাদের সংবাদের বিষয়বস্তুর বিশ্বস্ততা বিশ্বাসগত (تعبدی ) দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।১৭

৮ম পাঠ

কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণার জবাব

কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণার জবাব :

মু'জিযাহ সম্পর্কে একাধিক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। এখন আমরা ঐগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করব।

১। প্রথম ভ্রান্ত ধারণাটি হল : সকল বস্তুগত বিষয়ের জন্যেই বিশেষ কারণ বিদ্যমান,যাকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। পরীক্ষাগারের প্রচলিত সরঞ্জামের মাধ্যমে পরীক্ষার অনুপযোগী বিষয়সমূহের কারণ সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকা,কোন বিষয়ের জন্যে সাধারণ কারণের অনুপস্থিতির দলিল নয়। অতএব অলৌকিক বিষয়সমূহ শুধুমাত্র এ হিসেবেই গ্রহণযোগ্য হবে যে,এ গুলো অজ্ঞাত কোন কারণ ও নির্বাহকের প্রভাবে অস্তিত্ব লাভ করে থাকে। সর্বোপরি যতক্ষণ পর্যন্ত এ অলৌকিক বিষয়সমূহের কারণ অজ্ঞাত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ গুলোকে মু জিযাহরূপে গণনা করা যেতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণযোগ্য কারণকে অস্বীকার করার অর্থ হল কার্যকারণ বিধির ব্যতিক্রম,যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

জবাব : কার্যকারণ বিধির আবেদন এর চেয়ে অধিক নয় যে,সকল নির্ভরশীল অস্তিত্বের জন্যই কোন না কোন কারণ বিদ্যমান। কিন্তু সকল কারণই যে,জ্ঞাত হবে তা কখনোই কার্যকারণ বিধির জন্যে অপরিহার্য নয় এবং এর স্বপক্ষে কোন যুক্তি পাওয়া যাবে না। কারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিধি প্রাকৃতিক বিষয়সমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং অতিপ্রাকৃতিক বিষয়সমূহের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব অথবা তাদের প্রভাবকে কখনোই পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে না।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণের জ্ঞানরূপে মু জিযাহর যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ যদি এ জ্ঞান সাধারণ কারণের মতই লব্ধ হয় তবে অন্যান্য সাধারণ ঘটনার সাথে এর কোন পার্থক্য থাকবে না এবং কখনোই একে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে গণনা করা যাবে না। আবার যদি উল্লেখিত জ্ঞান অসাধারণ পথে অর্জিত হয় তবে তা অলৌকিক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যখন মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবুয়্যতের সাক্ষীরূপে সংঘটিত হবে তখন তা এক প্রকার মু জিযাহরূপে পরিগণিত হবে। যেমন : মানুষের সঞ্চয় ও খাদ্য সম্পর্কে হযরত ঈসার (আ.) জ্ঞান,তার একটি মুজিযাহরূপে পরিগণিত হয়েছে। পবিত্র কোরানের আয়াত এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য :

) وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ(

আর যা কিছু আহার কর এবং নিজেদের গৃহে মওজুদ কর তা তোমাদেরকে বলে দিব। (সূরা আলে ইমরান -৪৯ )

কিন্তু মু জিযাহর অন্যান্য প্রকরণকে অস্বীকার করে একে শুধূমাত্র উল্লেখিত শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা যাবে না। কারণ তখনও এ প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায় যে,এ কার্যকারণ বিধির দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়টির সাথে অন্যান্য অলৌকিক ঘটনার কী পার্থক্য বিদ্যমান?

২। দ্বিতীয় ভ্রান্ত ধারণা : আল্লাহর নিয়ম এরূপ যে,সকল কিছুকেই স্বতন্ত্র কারণের মাধ্যমে অস্তিত্বে আনয়ন করেন। আর কোরানের পবিত্র আয়াত অনুসারে আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন হয় না।১৮ অতএব অলৌকিক ঘটনাসমূহ যে,আল্লাহর নিয়মে পরিবর্তন করে তা এ ধরনের আয়াতের মাধ্যমে অস্বীকৃত হয়।

এ ভ্রান্ত ধারণাটি পূর্বোক্ত ভ্রান্ত ধারণাটির মতই। তবে এতটুকু পার্থক্য বিদ্যমান যে,পূর্বোক্তটিতে কেবলমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছিল কিন্তু এখানে কোরানের আয়াতের মাধ্যমে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে । যা হোক এর উত্তর হল : কারণ ও উপকরণসমূহকে কেবলমাত্র সাধারণ উপকরণ ও কারণসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধকরণ আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মের অন্তর্ভুক্ত বলে গণনা করা অযৌক্তিক। নতুবা তা ঐ ব্যক্তির দাবির মত হবে যে মনে করে তাপের একমাত্র কারণ হল আগুন আর এটি হল আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মের অন্তর্ভূক্ত আর এ ধরনের দাবির প্রতিকূলে বলা যেতে পারে যে,বিভিন্ন প্রকারের কার্যের জন্যে একাধিক প্রকারের কারণের উপস্থিতি এবং সাধারণ কারণকে,অসাধারণ কারণের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন,সর্বদা এ বিশ্বে বিদ্যমান। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে একে আল্লাহর নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত মনে করা উচিৎ এবং কারণসমূহকে শুধু সাধারণ কারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধকরণই হল আল্লাহর নিয়মের পরিবর্তন,যা পবিত্র কোরানের উল্লেখিত আয়াতসমূহে অস্বীকার করা হয়েছে।

যাহোক,আল্লাহর নিয়মের অপরিবর্তনশীলতার প্রমাণ বহনকারী আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা করা,যেখানে সাধারণ কারণের প্রতিস্থাপনহীনতা আল্লাহর অপরিবর্তনশীল নিয়মসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হয়,তা অযৌক্তিক চিন্তা বৈ কিছু নয়। তদুপরি মুজিযাহ ও অলৌকিক ঘটনার প্রমাণবহ অসংখ্য আয়াত উপরোক্ত ব্যাখ্যার অসারতার সুস্পষ্ট দলিল। উল্লেখিত আয়াতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যার জন্যে তাফসিরগ্রন্থসমূহে অনুসসন্ধান করতে হবে।

এখানে আমরা সংক্ষেপে বলব যে,এ শ্রেণীর আয়াতসমূহ কারণের একাধিক্যের ও সাধারণ কারণের আসাধারণ কারণ কর্তৃক প্রতিস্থাপনের বিরোধী নয়। বরং কার্যের কারণহীনতার বিরোধী। সর্বোপরি সম্ভবত এটুকু বললেও অত্যুক্তি হবে না যে,উল্লেখিত আয়াতসমূহের বিষয়বস্তুর নিশ্চিত পরিমাণ (القدر المتیقین )১৯ অসাধারণ কারণসমূহের প্রভাবকে স্বীকার করে।

৩। তৃতীয় ভ্রান্ত ধারণা : পবিত্র কোরানে এসেছে যে,মানুষ উত্তর উত্তর ইসলামের নবীর (সা.) নিকট মু জিযাহ ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শণের জন্যে আবেদন করত। কিন্তু হয়রত (সা.) এ ধরনের আবেদনের জবাব প্রদানে বিরত থাকতেন।২০ যদি মু জিযাহ প্রদর্শন নবুয়্যতের প্রমাণের জন্যে একটি উপায় হয়ে থাকে তবে কেন নবী (সা.) এ উপায়টি ব্যবহার করেন নি ?

জবাব : এ ধরনের আয়াতসমূহ ঐ সকল আবেদন সংশ্লিষ্ট,যা সত্য প্রকাশ করার ও প্রাগুক্ত তিনটি পথের প্রতিটি পথেই নবুয়্যাত প্রতিপাদিত হওয়ার পর আক্রোশ ও শত্রুতাবশতঃ অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে করেছিল,সত্যানুসন্ধিৎসা বশতঃ নয়।২১ আর এ ধরনের আবেদনে সাড়া দেয়া প্রভুর প্রজ্ঞা সঙ্গত নয়।

আর এর ব্যাখ্যা এরূপ : মু জিযাহ এ বিশ্বে বিদ্যমান বিন্যাস ব্যবস্থার একটি ব্যতিক্রমী বিষয় যা কখনো কখনো মানুষের আবেদনের জবাবস্বরূপ [যেমন : হযরত সালেহর (আ.) উটনী] আবার কখনো বা প্রারম্ভিকভাবেই [যেমন : ঈসার (আ.) মু জিযাহ] সংঘটিত হত। আর এ মু জিযাহ প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর নবীগণকে (আ.) পরিচিতকরণ এবং তাদের নবুয়্যতের দাবির স্বপক্ষে চূড়ান্ত যুক্তি-প্রমাণ পেশ করণ -নবীগণের (আ.) আহবানে সাড়া দেয়ার জন্যে বাধ্য করতে ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে নয় অথবা চিত্তবিনোদনের উপকরণ সরবরাহ ও সাধারণ কারণ ও কারণত্বের বিন্যাস ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করার জন্যে নয়। আর এ ধরনের উদ্দেশ্য সকল আবেদনেরই ইতিবাচক জবাব দেয়ার অবকাশ দেয় না। বরং এদের কোন কোনটির পক্ষে সাড়া দেয়া প্রজ্ঞাবিরোধী ও অনর্থক বৈ কিছু নয়। যেমন : যে সকল আবেদন স্বাধীনভাবে নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ও জনগণকে নবীগণের (আ.) অহবানে সাড়া দেয়ার জন্য বল প্রয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল অথবা সত্যানুসন্ধিৎসা ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্যে ও শত্রুতাবশতঃ করা হত। কারণ যদি ঐ সকল আবেদনে সাড়া দেয়া হত তবে একদিকে মু জিযাহ প্রদর্শন বেলেল্লাপনায় পর্যবসিত হত এবং মানুষ শুধুমাত্র চিত্তবিনোদনের বিষয় হিসাবেই এটাকে গ্রহণ করত অথবা ব্যক্তিগত বাসনা চরিতার্থ করার জন্যে নবীগণের পাশে জোটবদ্ধ হত। অপর দিকে পরীক্ষা ও স্বাধীন নির্বাচনের দ্ধার বন্ধ হত এবং মানুষ অসন্তুষ্টচিত্তে বাধ্য হয়ে নবীগণের (আ.) আনুগত্য স্বীকার করত। আর উল্লেখিত উভয় প্রক্রিয়াই প্রজ্ঞা ও মু জিযাহ প্রদর্শনের পরিপন্থী ছিল।

বর্ণিত ক্ষেত্রসমূহ ব্যতীত প্রভুর প্রজ্ঞাপন্থী অন্য যে কোন ক্ষেত্রেই মানুষের আবেদন গ্রহণ করা হত। যেমন : ইসলামের নবী (সা.) এর মাধ্যমেও অসংখ্য মু জিযাহ প্রদর্শিত হয়েছিল,যেগুলোর অধিকাংশ বহুবর্ণিত উদ্ধৃতির (হাদীসে মুতাওয়াতির) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এ গুলোর শীর্ষে রয়েছে চিরন্তন মু জিযাহ পবিত্র কোরান,যার আলোচনা পরবর্তীতে আসবে।

৪। চতুর্থ ভ্রান্ত ধারণা : মু জিযাহ যে দৃষ্টিকোণ থেকে প্রভুর বিশেষ অনুমতির সাথে সম্পর্কিত সে দৃষ্টিকোণ থেকে তা মহান আল্লাহর সাথে মু জিযাহ প্রদর্শনকারীর বিশেষ সম্পর্কের নিদর্শনরূপে গণনা করা যেতে পারে। আর তা এ যুক্তিতে যে,তাকে বিশেষ অনুমতি দেয়া হয়েছে। অন্যকথায় : মহান আল্লাহ স্বীয় কীর্তিকে তারই (মু জিযাহ প্রদর্শনকারী) ইরাদার প্রবাহ ধারায়,তার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু এ ধরনের শর্তের বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল এটা নয় যে,ওহীর প্রেরণ ও গ্রহণের মত অপর একটি সম্পর্ক মহান আল্লাহ ও মু জিযাহ প্রদর্শনকারীর মধ্যে বিদ্যমান। অতএব মু জিযাহকে নবুয়্যতের দাবির সত্যতার জন্যে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলরূপে গণ্য করা যায় না এবং সর্বোচ্চ হলেও একে সম্ভাব্য ও ইক্বনায়ী (اقناعی ) (পরিতৃপ্তকারী) দলিল হিসেবে গণনা করা যেতে পারে।

জবাব : অলৌকিক কর্মকাণ্ডগুলো (ঐশ্বরিক অলৌকিক বিষয় হলেও) স্বয়ংক্রিয় পন্থায় ওহীর সম্পর্কের জন্যে কোন দলিল নয়। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আল্লাহর ওলীগণের কেরামতকেও তাদের নবুয়্যতের দলিলরূপে গণ্য করা যায় না। কিন্তু বিবেচনার বিষয় হল তার ক্ষেত্রেই যিনি নবূয়্যতের দাবি করেছেন এবং এর প্রমাণ স্বরূপ মু জিযাহ প্রদর্শন করেছেন। মনে করুন,যদি এ ধরনের কেউ মিথ্যার বশবর্তী হয়ে নবূয়্যত দাবী করত (অর্থাৎ সে বিভৎস ও কদর্যপূর্ণ গুনাহে লিপ্ত হল,যা ইহ ও পরকালে কুৎসিততম অনাচার বলে পরিচিত)২২ তবে কখনোই সে মহান আল্লাহর সাথে এ ধরনের সম্পর্কের। যোগ্যতাসম্পন্ন হত না এবং প্রভুর প্রজ্ঞা কখনোই মু জিযাহ প্রদর্শনের ক্ষমতা তাকে প্রদান সঙ্গত মনে করত না,যার মাধ্যমে সে মানুষকে বিপথগামী করত।

সিদ্ধান্ত : বুদ্ধিবৃত্তি স্পষ্টতঃই অনুধাবন করতে পারে যে,যদি কেউ মহান আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্কের ও মু জিযাহ প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে তবে কখনোই স্বীয় প্রভুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না অথবা তার বান্দাদের বিপথগামিতা ও অনন্ত দুর্দশার কারণ হতে পারে না।

অতএব মু জিযাহ প্রদর্শন হল নবূয়্যতের দাবির সত্যতার জন্যে চূড়ান্ত বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল।


6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18