পর্দার বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে বোরকার গুরুত্বের কারণ
1 -পবিত্র কোরআন :
)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا(
হে নবী , তোমার স্ত্রী ও কন্যাগণ এবং মু ’ মিনদের স্ত্রীগণকে বল যে , তারা যেন নিজেদেরকে জালবাব (বড় ওড়না , চাদর) দিয়ে আবৃত করে রাখে যাতে করে সহজেই তাদের (সম্মানিত নারী হিসেবে) চেনা যায় এবং এতে তাদের উত্যক্ত করা হবে না । আল্লাহ তা ’ য়ালা হচ্ছেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।
উল্লিখিত আয়াতে জালবাব সম্পর্কে মুফাসসের ও আভিধানিকগণ বিভিন্ন অর্থ করেছেন যা নিম্নরূপ :
1- সেলাইকৃত মস্তকাবরণ (বোরকার অংশ বিশেষ) ।
2- এমন পোশাক যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে দেয় ।
3- এমন পোশাক যা নারীরা তাদের অন্য পোশাকের উপর পরে থাকে ।
4- আবা ’ র (ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত বিস্তৃত ঢিলা পোশাক) অনুরূপ পোশাক বিশেষ ।
5- মিলহাফাহ্ (চাদর) ।
6- এমন পোশাক যা ওড়নার থেকে বড় এবং বহিরাবরণের (রিদা) থেকে ছোট ।
7- বড় ওড়না যা বাড়ী থেকে বাইরে যাওয়ার সময় মাথা ও মুখ মণ্ডল ঢেকে রাখার জন্য পরা হয়।
জালবাবের জন্য যে অর্থ গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটির পার্থক্য রয়েছে । কিন্তু অর্থ গুলোর মধ্যে যে বিষয়টি অভিন্ন তা হচ্ছে এটি এমন পোশাক যা ওড়নার থেকে বড় এবং আবা ’ র থেকে ছোট ।
যদিও অর্থ গুলোর মধ্যে বোরকা শব্দটি উল্লিখিত হয় নি (কিন্তু কোন কোন আভিধানিক তা বোরকা অর্থও করেছেন) । কিন্তু তার নিকটবর্তী অর্থের কথা চিন্তা করে অনেকেই বোরকার প্রতি ইশারা করেছেন ।
আমাদের আলোচনা শব্দ নিয়ে নয় বরং তার অর্থ নিয়ে । আর চাদরের অর্থ বা তার অনুরূপ অর্থ জালবাব শব্দের অর্থ থেকে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
)
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ(
বৃদ্ধা মহিলারা যাদের বিয়ে হওয়ার আর কোন আশা নেই তারা এমন পোশাক (সেলাইকৃত মস্তকাবরণ , জালবাব ও চাদরের ন্যায়) যা দ্বারা মুসলমান নারীরা সাধারণত নিজেদেরকে ঢেকে রাখে , নাও পরতে পারে কিন্তু শর্ত হচ্ছে যে , তারা যেন সাজ-সজ্জা করে বাইরে না আসে । তবে ঐ বয়সেও যদি তারা ইচ্ছা করে যে , নিজেদেরকে আবৃত রাখবে তবে তা অতি উত্তম । আল্লাহ তা ’ য়ালা সব কিছুই শোনেন এবং জানেন ।
ক)- উপরোক্ত আয়াতটি যে অতিরিক্ত আবরণ ত্যাগ করাকেই বস্ত্র পরিহার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে , আর এই খুলে রাখার অনুমতিটি অন্যান্য পোশাকের থেকে বোরকার সাথেই মানানসই।
খ)- যেখানে পবিত্র কোরআন বৃদ্ধ নারীদেরকেও (যাদের বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা নেই) সাজ-সজ্জা না করার জন্য উপদেশ দিচ্ছে এবং তাদেরকেও এক্ষেত্রে সচেতন থাকার প্রতি উৎসাহিত করছে । সেক্ষেত্রে তরুণী ও যুবতী নারীদেরকে হরেক রংয়ের পোশাক পরে (যদিও তা তাদের শরীরকে সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে) বের হওয়ার অনুমতি কি ইসলাম দিয়েছে ?
গ)- যেহেতু বৃদ্ধ নারীদেরকেও বলা হয়েছে যে , বড় ওড়না , চাদর পরা হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম তাহলে তরুণী ও যুবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হবে অতি উত্তম ।
2- পবিত্র কোরআন ও রেওয়ায়েত থেকে মৌলিক এবং সার্বিক বিধান :
ক)- মহান আল্লাহ্ নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন :
)
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ(
হে নবী (সা.)-এর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্যদের মত সাধারণ নারী নও । যদি তাকওয়া অর্জন করতে চাও তবে এমন ভঙ্গিমায় কথা বল না যাতে করে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমাদের প্রতি কুবাসনা না করে । আর তোমরা উত্তম কথা বলবে । তোমরা তোমাদের গৃহের মধ্যেই থাকবে এবং জাহেলী যুগের মত (যখন নারীরা তাদের দৈহিক সৌন্দর্য্য এবং সাজ-সজ্জাকে অন্যদের সামনে প্রকাশ করত) মানুষের মাঝে উপস্থিত হয়ো না । আর নামায আদায় ও যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলবে ।
)
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ(
(হে আমার রাসূল! নারীদেরকে বলে দাও) তারা যেন মাটির উপর এমন ভাবে না চলে যাতে করে তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশিত (এবং তাদের পায়ের নুপুরের শব্দ (অন্যের) কানে পৌঁছায়।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :
নারীরা যেন রাস্তার মধ্য দিয়ে পারাপার না হয় বরং দেয়ালের পাশ দিয়ে অথবা ফুটপাত দিয়ে যাওয়া-আসা করে ।
হযরত আলী (আ.) শিশুদের মাথার অধিকাংশ চুল ফেলে কোন এক অংশে রেখে দিতে নিষেধ করেছেন । তিনি বলেছেন যে , নারীরা যেন তাদের চুল অতিরিক্ত পরিমানে ফুলিয়ে না রাখে , কখনই যেন তারা কপালের উপর কিছু চুল বের করে না রাখে এবং হাতে ও হাতের তালুতে এমন ভাবে যেন রং না করে যাতে করে নামাহরামদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় ।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :
মহান আল্লাহ তাঁর একজন নবীকে ওহী পাঠালেন এই মর্মে যে , মু ’ মিনদেরকে বলে দাও : পোশাক পরার ক্ষেত্রে আল্লাহর শত্রুদের অনুসৃত রীতি ও প্রথাকে যেন তারা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ না করে । যদি তেমন করে তাহলে তারাও তাদের মত আল্লাহর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে ।
রাসূল (সা.) হাউলা নামের এক নারীকে বলেন :
হে হাউলা এটা জায়েয নয় যে , কোন নারী তার হাতের কব্জি এবং পায়ের গোড়ালী স্বামী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সামনে উম্মুক্ত করবে । আর যদি তা করে তবে সব সময়ের জন্য আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের ক্রোধ ও অভিশাপের উপযুক্ত হয়ে যায় এবং তার জন্য কঠিন আজাবের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
রাসূলে খোদা (সা.) হাউলার উদ্দেশ্যে আরো বলেন :
হে হাউলা এটা জায়েয নয় যে , নারী কোন নামাহরাম তরুণ বা বাচ্চা ছেলে যে বালেগ হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে তাকে ঘরের ভিতরে আসার অনুমতি দিবে । (আর যদি ঘরে প্রবেশ করে) তবে নিজের দৃষ্টির প্রতি সাবধান থাকে যেন তার প্রতি কোন খারাপ দৃষ্টিতে না তাকায় , তদ্রূপ ঐ তরুণ ছেলেও যেন নারীর প্রতি অবৈধ দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে । নারীর জন্য এটা জায়েয নয় যে , তার সাথে খাদ্য গ্রহণ বা কোন কিছু পান করবে শুধুমাত্র মাহরাম ব্যতীত (আর মাহরামের সাথে এই খাওয়া বা পান করার সময় যেন তার স্বামী পাশে থাকে) ।
বনী হাশিমের কয়েকজন ইমাম রেযা (আ.) -কে মেহমান হিসেবে দাওয়াত করল , সে পরিবারে ছোট একটি মেয়ে ছিল ; মুসলমানরা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ঐ মেয়েটিকে নিজেদের কাছে নিয়ে আদর করতে লাগল (তারা তাদের কোলের (আ.) উপর বসিয়ে তাকে চুমু দিচ্ছিল) । এরপর মেয়েটি ইমাম রেযা -এর কাছে আসলে ইমাম জানতে চাইলেন যে , তার বয়স কত ? বলা হলো যে : তার বয়স হচ্ছে পাঁচ বছর । তারপর (ইমামের নির্দেশে) ইমামের সামনে থেকে তাকে সরিয়ে নেয়া হলো ।
ফলাফল :
উল্লিখিত আয়াত ও রেওয়ায়েত যা পবিত্র কোরআন ও হাদীস গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ আছে সেগুলো থেকে সর্বজনীন কিছু মৌলনীতি হস্তগত হয় । যেমন :
প্রতিটি নারীই বিশেষ করে যুবতী মেয়েরা যেন শরীয়ত নির্ধারিত প্রয়োজন ব্যতীত নামাহরামের সাথে সম্পর্ক না রাখে এবং যত সম্ভব তাদের সাথে কম কথা বলে ও তাদের দৃষ্টির আওতা থেকে দূরে থাকে এটি তার নিজের জন্য এবং সমাজের জন্য হচ্ছে অতি উত্তম । আর এটাও হচ্ছে ওয়াজিব যে , তারা যেন সতীত্ব , লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখে এবং এমন পোশাক যেন না পরে যে , যা পরলে নামাহরামদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় ।
যৌন চাহিদা এমন কোন বিষয় নয় যাকে কোরআন ও হাদীসসমূহের বিরোধিতা করে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দলিলের অনুসরণে দমন করতে হবে , বরং বৈধ ও প্রবণতা ইসলামের অতিসুন্দর নির্দেশের অনুসরণে অর্থাৎ মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের নির্দেশিত পথে নৈতিক বল ও আধ্যাত্মিকতা অর্জনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । আমরা যেন প্রবৃত্তি পূজারী কিছু ব্যক্তির অনুসরণে এই আয়াত ও রেওয়ায়েতকে যেন ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা না করি বরং অবশ্যই এক্ষেত্রে মানুষকে মহান ইসলামের সঙ্গে পরিচিত করাব । কেননা ইসলাম মানুষের আমলসমূহের জন্য উত্তম মানদন্ড । অন্য ভাবে বললে বলতে হয় যে , মানুষকে অবশ্যই সত্যের মাপ-কাঠিতে পরিমাপ করা উচিত , সত্যকে মানুষের মাপ-কাঠিতে নয় । তাহলে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে । আর মুসলমান নারিগণ সাবধান থাকবেন তারা যেন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির প্রভাবিত না হন ।
প্রশ্ন : কোন পোশাকটি পর্দার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ?
উত্তর :
বোরকা একমাত্র পোশাক যা পূর্বোক্ত মৌলনীতির সকল বৈশিষ্ট্য যুক্ত । কেননা ,
প্রথমতঃ বোরকার কারণেই শরীরের আকৃতি সঠিকভাবে বোঝা যায় না । আর এটাই নারীর সতীত্ব , তাকওয়া ও আত্মসম্মানবোধের পরিচায়ক ।
দ্বিতীয়তঃ বোরকা পরার কারণেই নারীদের উপর নামাহরামের দৃষ্টি পড়ে না এবং দুঃশ্চরিত্র ও লম্পট ব্যক্তিদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার পথে বোরকা বাধা হয়ে থাকে ।
তৃতীয়তঃ বোরকা পরিহিতা নারী ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতিতে রক্ষা করে থাকে এবং এই পন্থায় অনৈসলামী ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আঘাত হানে ।
চতুর্থতঃ প্রবল বাতাস বা ঝড় বা দুর্ঘটনার সময় বোরকা পরিহিতা নারী উত্তম রূপে নিজেকে আবৃত করতে পারে । কিন্তু অন্যান্য পোশাকের মধ্যে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য সমূহ পাওয়া যায় না ।
উল্লিখিত আলোচনার আলোকে আমরা বলব : পড়াশুনা করছি , কাজ করছি এরূপ বিভিন্ন রকম অজুহাত দেখিয়ে যেন এই সত্যকে উপেক্ষা বা ভিন্ন রূপে ব্যাখ্যা না করা হয় । আর যেন তরুণ - তরুণীর অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে না দেয়া হয় । আর যদি এরূপ করা হয় তবে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটা উচিৎ ছিল না তাই ঘটবে । এর ফলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা করুণা ও রহমত বন্ধ হয়ে যাবে । এটা কি হতে পারে যে , নামাহরাম নারী পুরুষ কোন বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত একে অপরের সাথে কথা বলবে , বিশেষ করে যে ব্যক্তিরা ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল তাদের সাথে মেলামেশাতে কি অঘটন ঘটবে না ।
3- মহানবী (সা.) ও আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) বাস্তব কর্ম জীবন :
উসূলে ফিকাহ ’ য় একটি আলোচনা রয়েছে তাতে বিশিষ্ট ফকীহ্গণ শরীয়তি উৎস থেকে বিধান বের করার ক্ষেত্রে এ দলিল নিয়ে আসেন যে , আহলে বাইতের ( আ .) নিষ্পাপ ব্যক্তিবর্গের উক্তি , কাজ এবং আচরণ এ তিনটিই হচ্ছে হুজ্জাত ( দলিল ) । তাই মুসলমানগণ সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমল করতে পারেন ।
হযরত ফাতিমা ( আ .) বোরকা পরে মসজিদে এসেছিলেন তাঁর মুখমণ্ডলও ঢাকা ছিল এবং তিনি এক গভীর অর্থ সম্পন্ন খুৎবা দিয়েছি লেন যার মধ্যে দ্বীনের সার্বিক দিক সম্পর্কে কথা ছিল । তাঁর এরূপে মসজিদে আসাটা কি আমাদের কাছে দলিল নয় যে , বোরকা হচ্ছে পর্দার উত্তম পন্থা এবং মুসলমান নারীদের কি উচিৎ নয় তাঁর হিজাবকে সব থেকে উত্তম হিজাব হিসেবে মনে করা ? এবং পুরুষদের কি উচিৎ নয় যে , নারীদেরকে বিশেষভাবে তাঁর হিজাবের প্রতি উৎসাহী করে তোলা ?
তিনি এমনই এক অসাধারণ রমনী ছিলেন যার ব্যাপারে ওস্তাদ শহীদ মোতাহহারী ( রহ .) বলেন : নবী ( সা .) আলী ( আ .) ব্যতীত অন্য কোন পুরুষই হযরত ফাতিমা ( আ .)- এর সমমর্যাদায় পৌঁছাবে না । তিনি তাঁর সন্তানগণ যারা হচ্ছেন ইমাম এবং অন্যান্য সকল নবিগণের থেকেও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ।
হযরত ফাতিমা ( আ .) নবী ( সা .)- এর স্ত্রীগণ এবং মুসলমান নারীদের অনুসৃত পথ , কোরআনের আয়াত ও ইমামদের হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত সমূহ হতে যদি চাদর পরিধান ফরজ তা প্রমাণ নাও করা যায় তবে অন্ততপক্ষে তা যে পর্দার ক্ষেত্রে অন্য পোশাকের উপর প্রাধান্য পায় ও সেটি পরিধান করা যে মুসতাহাবে মুয়াক্কাদ ( যে মুস্তাহাব পালনের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে ) তা প্রমাণ করা সম্ভব ।
হে মুসলমান বোনেরা ! আপনাদের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব জুড়ে যেহেতু হযরত ফাতিমা ( আ .) ও তাঁর পিতা নবী ( সা .) এবং তাঁর প্রিয় স্বামী হযরত আলী ( আ .) ও তাঁর সন্তানগণের ( আ .) প্রতি ভালবাসা রয়েছে এবং তাদের নির্দেশিত ও অনুসৃত পথ হচ্ছে ইসলামেরই পথ , সে পথে চলার জন্যে সব কিছু পরিত্যাগ করতে আপনারা প্রস্তুত ; যা আপনারা অতীতেও প্রমাণ করেছেন তাই বোরকাকে উত্তম আবরণ হিসেবে গ্রহণ করুন । আর এই কাজের মাধ্যমে হযরত ফাতিমা ( আ .) - এর অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিন এবং শত্রুদেরকে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা থেকে নিরাশ করুন । আমাদের সমাজে অবশ্যই বোরকা মূল্যবোধের প্রতীক হওয়া উচিৎ । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নারীদের জন্য চাদরকে আদর্শ পোশাক হিসেবে নির্বাচন করা উচিত এবং কর্মস্থলগুলোতে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বোরকা পরিহিতা নারী কর্মচারীদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা অতি প্রয়োজন । আর যারা ভুল ক্রমে অজ্ঞতাবশত শত্রুদের অনুসরণে চলতে শুরু করছে তাদেরকে হয় বুঝাতে হবে নয়তো তিরস্কার করতে হবে । যাতে করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় ।
4- কালের প্রেক্ষাপট :
বর্তমানে ইসলামের শত্রুরা বিভিন্ন ভাবে হারাম বিষয়ের নিকৃষ্টতার ধারণা , লজ্জা এবং সতীত্বের মর্যাদা ও বোরকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে চায় । তাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুবকদের বুঝাতে চায় যে , পাশ্চাত্যের পোশাকের মধ্যেই সভ্যতা , ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ নিহিত রয়েছে । এরূপ পরিস্থিতিতে অবশ্যই মুসলমান নারী ও তরুণীরা হুসিয়ার থাকবেন এবং বোরকার মাধ্যমে তাদেরকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবেন এবং অন্যদেরকেও বোরকা পরার জন্য উৎসাহ প্রদান করবেন ।
হয়তো কারো কারো ধারণায় এটা আসতে পারে যে , বর্তমান সময়ের দাবী হচ্ছে এমন যে , যতটুকু পর্যন্ত হিজাব করা ওয়াজিব ততটুকু পরিমান করলেই যথেষ্ট হবে । আর এ ব্যাপারে বেশী কঠোরতা করা ঠিক হবে না ।
এরূপ ভাবাটা ঠিক নয় । কেন সব সময় বিষয়ের নেতিবাচক দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় এবং ইতিবাচক দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না , যখন কিনা শত্রু পক্ষ এই ইতিবাচক দিকটা ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে । আমরা অব্যশই সেটাই করব যা শত্রুকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয় । আর বোরকা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে একটি । ইসলামী বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে কঠোরতা করা ঠিক হবে না জাতীয় কথা বলে শতকরা কতজন নারী নিজে থেকেই পরিশুদ্ধ হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমানেই কেবল বর্তমানে (ইরানের অনেক শহরে) অবশিষ্ট রয়েছে ? শুধু তাই নয় , ঐ কথার কারণে তাদের সুযোগের অসদ্ব্যবহারের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে । আর দিনের পর দিন তাদের ঔদ্ধত্য ও নোংরা কাজের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের অপকর্ম শহীদ ও বিপ্লবীদের অন্তরে ক্ষত সৃষ্টি করছে । অন্যদিকে সঠিক জ্ঞানের অভাব , অসচেতনতা এবং ঐ কথাগুলোর কারণেই অনেকের মধ্যে ঈমানের দুর্বলতা এসেছে এবং অজ্ঞ মেয়েদের তিরস্কারের ভয়ে অনেক বোরকা পরিহিতা এখন বেপর্দা হয়ে গেছে । এমনও দেখা যায় যে , তাদের মা চাদর পরেছে এবং ধার্মিক কিন্তু মেয়ে এরূপ নয় । আর এমন কাজ শত্রুদের পথকে পরিষ্কার করে থাকে এবং আমাদেরকে আমাদের সৎ উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় । অথচ আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানো । ইসলামের শত্রুরা ফিতনা-ফ্যাসাদ , নোংরামো , নৈতিকতা বিরোধী অসামাজিক এবং পাপ কাজের প্রচলনের মাধ্যমে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে চায় । তাই চাদর , বড় ওড়না ও বোরকার আবরণ পরিত্যাগ করানোটাই হচ্ছে তাদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটানো যায় । তাই ফারানতিস ফানুন আলজিরিয়ার ব্যাপারে বলেছে :
“ যে বোরকাটাই দূরে ছুড়ে ফেলা হবে , তার মাধ্যমে এমন এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে যা ছিল এতদিন নিষিদ্ধ ” ।
আমাদের অবশ্যই এটা জানা থাকা দরকার যে , শত্রুরা কোন প্রকার আবরণই - চাই তা বোরকা , মানতু বা অন্য কিছু - পছন্দ করে না । যা কিছু তারা পছন্দ করে তা হচ্ছে উলঙ্গপনা , বেহায়াপনা এবং সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া , আর এর মাধ্যমে ঐ দেশের উপর আধিপত্য কায়েম করা । তাই বোরকা পরিত্যাগ করানোর মাধ্যমে তাদের অপচেষ্টা শুরু করেছে এবং এর মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় ।
ঐ সব ব্যক্তি যাদের সংখ্যা অত্যন্তকম তারা পরিপূর্ণ আবরণের বিপক্ষে বিভিন্ন রকম অপযুক্তি দিয়ে থাকে । আমাদেও বুঝতে হবে তখনই তারা আমাদের উপর সন্তুষ্ট‘
হবে যখন তাগুত সরকারের সময়কার পরিবেশের অনুরূপ বা তার থেকেও জঘন্যতম পরিবেশ সৃষ্টি হবে । কেননা যখন অন্তর কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন যে ইসলামী আহ্কামের সম্পূর্ণটাই হচ্ছে নূরানী তা তাদের অন্তরে আর প্রবেশ করে না । তাই ইমাম আলী (আ.) ঐ সংখ্যালঘুদেরকে ছেড়ে দিয়ে সর্বসাধারণকে নৈতিকতা শিক্ষা দানে রত হয়েছেন । আর সে কারণেই আমাদেরও উচিৎ হচ্ছে অবশ্যই ঐ মহান ব্যক্তির পদ্ধতিকে অনুসরণ করা । অন্যথায় ঐ প্রবৃত্তিপূজারী অমানুষরা ঐ বৃহৎ জনসমষ্টির উপরও প্রভাব বিস্তার করবে এবং আস্তে আস্তে এমন এক সময় আসবে যে , আমরা দুই পক্ষকেই হাত ছাড়া করব ।
মহান আল্লাহ্ নবী (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন :
)
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى(
কখনোই ইয়াহুদ ও নাছারা তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্তনা (তাদের অসৎ চাওয়া-পাওয়ার কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করছো এবং তাদের দীনের (ভ্রান্ত দীনের) অনুসরণ করছো । (হে আমার নবী!) বলে দাও যে , মহান আল্লাহর পথই হচ্ছে একমাত্র সঠিক পথ ।
প্রশ্ন : কর্মস্থলে বোরকা কি দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে নারীদেরকে বাধার সম্মুখীন করে ?
উত্তর: প্রথমত যে কোন জিনিসই মানুষ ব্যবহার করে থাকে তা কোন কষ্ট ব্যতীত সম্ভব নয় । যেমন ধরুন খাদ্য গ্রহণ ও পানি পান করা । কিন্তু খাদ্য গ্রহণ ও পানি পান করার কারণে যে বড় উপকার আমাদের হয় সেজন্য ঐ কষ্ট , কষ্ট বলে মনে হয় না । উপরোল্লিখিত আলোচনাতে আমরা বোরকার ব্যাপারে যে সকল দলিল পেশ করেছি তাতে প্রমাণ করেছি যে , বোরকা পরাতে তেমন কোন কষ্ট হওয়ার কথা নয় ; কারণ তাতে রয়েছে কষ্টের তুলনায় অধিক উপকার ।
দ্বিতীয়ত এমন অনেক বোরকা আছে যা পরা অনেক সহজ এবং হাতও স্বাধীন থাকে যার মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজ করতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয় । নারী কর্মস্থলে কাজের সময় এই ধরনের বোরকা ব্যবহার করতে পারেন ।
তৃতীয়ত বিশ্বে এমন অনেক নারী আছেন যারা এই বোরকা পরেই কাজ করে যাচ্ছেন এমন কি সাংবাদিকতা , টেলিভিশনের উপস্থাপনা ও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ । তাদের তো বোরকা পরেও কাজ করতে কোন অসুবিধা হয় না ।
যা কিছু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে , বোরকা ও চাদর হচ্ছে হিজাব করার সব থেকে উত্তম উপায় । আর যাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান ও ঈমান আছে তারা বোরকা ও চাদরের উপকার সম্পর্কে জানেন তাই একেই পর্দা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন এবং অন্যদের অহেতুক ও ভিত্তিহীন কথায় কান দেন না । তাই বোরকা সম্পর্কে ভিত্তিহীন কথা বলাটা হচ্ছে এক ধরনের বাহানা । প্রকৃতপক্ষে কথা হচ্ছে যখন ঈমান ও ধর্মীয় বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায় তখনই মানুষ বাহানা করে থাকে যাতে করে আল্লাহ্ তা ’ য়ালার আদেশ-নিষেধ মানা থেকে দূরে সরে যেতে পারে ।