একজন নারীর ব্যক্তিগত ,নৈতিক ,
সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব
১- চোখের নিয়ন্ত্রণ :
পবিত্র কোরআন মু’
মিন নারী এবং পুরুষদের চক্ষুকে অবনত রাখার
নির্দেশ দিচ্ছে :
)
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (৩০) وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ(
ঈমানদার পুরুষদেরকে বলে দাও : তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচের দিকে রাখে এবং সচ্চরিত্রতা অবলম্বন করে । আর এটা তাদের জন্য হচ্ছে পবিত্রতম বিষয় । কেননা আল্লাহ যা কিছু করেন তা জানেন । আর ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও : তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং সচ্চরিত্রতা অবলম্বন করে ।
দৃষ্টিকে অবনত রাখার অর্থ এই নয় যে , তা বন্ধ করে রাখবে বরং অসৎ উদ্দেশ্যে তাকানোর থেকে দূরে থাকার কথা বলা হচ্ছে ।
অন্যভাবে উক্ত দুই আয়াতে নিষেধ করা হয় নি বা বলা হয় নি যে , (ﻻ ﺗﻨﻈﺮﻭﺍ
) দেখো না বরং বলা হয়েছে যে , তোমাদের দৃষ্টিকে নত রাখ ।
আবু সাঈদ খুদরী নবী (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে ,“
রাসূল (সা.) বলেছেন : রাস্তার পাশে ঘরের দরজায় বসা থেকে বিরত থাকো । বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা.) উপায় নেই কি করবো বসতে হয় । তখন তিনি বললেন : যখন এমনই তাহলে রাস্তার হকটি আদায় করবে । জিজ্ঞেস করল : সেটা কি ? তিনি বললেন : চোখ নিচের দিকে রাখা , কষ্ট না দেয়া , সালামের উত্তর দেয়া , সৎ কাজে উপদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা ।
এরূপ আরো অনেক হাদীসে দেখা যায় যেমন : ইবনে আব্বাস বলেন : নবী (সা.) আব্বাসের ছেলে ফাযলকে কোরবানীর ঈদের দিন নিজের ঘোড়ার পিছনে উঠিয়ে ছিলেন । ফাযল দেখতে খুব সুদর্শন ছিল । রাসূল (সা.) মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন ।
সে সময় খাছআ ’ ম গোত্রের এক সুন্দরী নারী নবীর কাছে প্রশ্ন করার জন্য আসল । ফাযল ঐ নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল এবং ঐ নারীকে তার পছন্দ হয়েছিল ।
রাসূল (সা.) যখন এই ঘটনাটি দেখলেন তখন ফাযলের মুখটি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন ।
২- নারীর কথা বলার ধরন কেমন হবে :
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন :
)
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (৩২) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى(
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য সাধারণ নারীদের মত নও , যদি তাকওয়া অবলম্বন কর । তাহলে আকষর্ণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না যাতে করে অসুস্থ অন্তরসমূহ তোমাদেরকে পাওয়ার আশা করে , বরং উপযুক্ত ভাবে কথা বল এবং তোমাদের ঘরে থাক ও প্রাথমিক জাহেলিয়াতের যুগের মত মানুষের মাঝে বের হয়ো না ।
নারী নামাহরামদের সামনে অবশ্যই অতি সাধারণ ,অনাকর্ষণীয় ভঙ্গীতে এবং দৃঢ় ভাবে কথা বলবে ।
কথা বলার সময় নারী তার কণ্ঠকে কোমল ও আকর্ষণীয় করবে না আবার তার কথার বিষয়বস্তুও যেন উত্তম হয় । তার মধ্যে কোন অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কথা যেন না থাকে । তাতে যেন কোন অসত্য ও পাপের ছোয়া না থাকে ।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে , নারীরা শিক্ষা-দীক্ষা , রসম-রেওয়াজ (সামাজিক প্রথা ও আদব কায়দা) , শিল্প-সংস্কৃতি , সংসার-ধর্ম এবং যে বিষয়গুলো শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য উত্তম সে সকল বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার পরিবর্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতিবেশীর সাথে দুনিয়ার অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করে । এমনকি পরচর্চার মত গুনাহর কাজও করে থাকে । এই নারীদেরকে বলা উচিত যে , যে বিষয়গুলোর সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের আজাব ও অপমান জড়িত রয়েছে সে সব বিষয়ে সময় নষ্ট না করে নিজের জীবনটা আত্মপ্রশিক্ষণ ও নিজ সন্তানদেরকে গড়ে তোলার কাজে ব্যয় করাটা উত্তম নয় কি । যেমন : কোরআন , ইসলামী বিধি-বিধান , ফুল তৈরী , দর্জির কাজ প্রভৃতি শিক্ষা করা এবং শিশুদেরকে আঁকা-আঁকি , উত্তম চরিত্র ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া ।
৩- বাড়ির বাইরে নারীর পোশাক কেমন হবে :
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :
যখন নারী বাড়ী থেকে বের হবে তখন তার জন্য এটা ঠিক নয় যে , সে তার পোশাক সুগন্ধিযুক্ত করবে ।
হযরত আলী (আ.) বলেছেন :
অন্ধকারাচ্ছন্ন বৃষ্টির দিনে রাসূল (সা.)-এর সাথে জান্নাতুল বাকিতে বসে ছিলাম , এমন সময় এক নারী গাধার পিঠে চড়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল । পশুর পা গর্তে পড়ে যাওয়ায় তার পিঠে বসে থাকা নারীও মাটিতে পড়ে গেল । তা দেখে রাসূল (সা.) তাঁর চেহারা মুবারক ঘুরিয়ে নিলেন । বলা হলো : ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ নারী পায়জামা পরে আছে । নবী পাক (সা.) তিনবার বললেন : হে আল্লাহ্! যে নারীরা পায়জামা পরে তাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখ । হে মানব সকল! তোমরা পায়জামা ব্যবহার কর , কেননা পায়জামা হচ্ছে তোমাদের পোশাকের মধ্যে সব থেকে বেশী আবৃতকারী পোশাক । আর তোমাদের নারীরা যখন বাড়ী থেকে বের হয় তখন তা তাদেরকে রক্ষা করবে ।
৪- নারীর জুতা কেমন হবে :
আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন :
)
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ(
রাস্তায় হাঁটার সময় নারীরা যেন মাটিতে সজোরে আঘাত না করে (এবং তাদের নুপুরের শব্দ যেন অন্যের কানে না যায়)যাতে করে তাদের গোপন সৌন্দর্য্য অন্যরা জানতে পারে ।
এই আয়াতটি আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে , ইসলাম সামাজিক পবিত্রতার বিষয়ে কতটা কঠোরতা অবলম্বন করেছে এবং সূক্ষ দৃষ্টি দিয়েছে । একারণেই বলা হয়েছে যে , নারীরা যেন তাদের জুতা দিয়ে মাটিতে এমন ভাবে আঘাত না করে যাতে করে সেই আঘাতের শব্দে বোঝা যায় একজন নারী হেঁটে যাচ্ছে ।
৫- রাস্তায় এবং গলিতে নারীর চলা-ফেরা কেমন হবে :
ইমাম সাদিক (আ.) নবী (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন :
নারীরা যেন রাস্তার মধ্য দিয়ে চলা-ফেরা না করে বরং তারা যেন ফুটপাত দিয়ে অথবা দেয়ালের পাশ দিয়ে চলা-ফেরা করে ।
ঈমানদার নারী অবশ্যই যান-জটপূর্ণ এলাকা যেখানে মানুষের আসা-যাওয়া বেশী এবং যেখানে অনেক নামাহরামের চোখ তার দিকে চেয়ে থাকবে সেখান থেকে চলা-ফেরা না করে । আর চেষ্টা করবে যে , যে সময়গুলো সাধারণত রাস্তা-ঘাট একটু খালি থাকে তখন তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নেয়ার এবং চলা-ফেরা করার সময় রাস্তার কিনার দিয়ে অথবা ফুটপাত দিয়ে যাওয়া-আসা করবে যাতে করে কম লোকের দৃষ্টিতে পড়ে ।
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা ’ য়ালা বলেছেন :
)
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ(
হে রাসূল! ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চোখকে নিচের দিকে রাখে (এবং নামাহরামদের দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকে) ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে ।
৬- মুসলমান নারীর অলংকার :
রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন :
সচ্চরিত্রতা বা সতীত্ব হচ্ছে নারীর অলংকার ।
রাসূল (সা.) বলেছেন :
সর্বোত্তম যে জিনিসটি দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা ’ য়ালা তাঁর বান্দাদেরকে অলংকৃত করিয়েছেন তা হচ্ছে ধর্ম ও সতীত্বের ক্ষেত্রে সচ্চরিত্র থাকা ।
৭- নির্জনতা পরিহার করা :
আর যে বিষয়ে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তা হচ্ছে যে , নারী ও নামাহরাম পুরুষ নির্জনে থাকাকে অর্থাৎ এমন স্থানে অবস্থান করা যেখানে তারা ব্যতীত অন্য আর কেউ নেই এবং মানুষের যাওয়া-আসার ব্যবস্থাও সেখানে নেই ।
অনেক রেওয়ায়েতে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে যেমন :
ইবনে আব্বাস রাসুল (সা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : কোন পুরুষ যেন নারীর সাথে নির্জনে না থাকে যদি তার মাহরাম উপস্থিত না থাকে ।