একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন11%

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন লেখক:
: মীর আশরাফ-উল-আলম
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বিভাগ: নারী বিষয়ক

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 87 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 44397 / ডাউনলোড: 5201
সাইজ সাইজ সাইজ
একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

একজন মুসলিম নারীর অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন

লেখক:
প্রকাশক: আল মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কোম-ইরান
বাংলা

নারীদের কর্মের গোপন ও প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশিত হবে

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : আমি ও ফাতিমা রাসূল (সা.)-এর নিকট পৌঁছে দেখলাম তিনি খুব কান্নাকাটি করছেন । জিজ্ঞাসা করলাম : আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক , ইয়া রাসূলুল্লাহ! এমন কি বিষয় যা আপনাকে কাঁদতে (আ.) বাধ্য করেছে ? তিনি বললেন : হে আলী ! মি ’ রাজের রাতে যখন আমি আসমানে গিয়েছিলাম তখন সেখানে আমার উম্মতের নারীদেরকে দেখলাম যে , তারা কঠিন আযাবের মধ্যে রয়েছে এবং তাদেরকে চিনতেও পারলাম । তাদের সেই কঠিন আযাবের কথা স্মরণ করে কাঁদছি । তারপর তিনি বললেন :

১- এক নারীকে দেখলাম যে , তাকে তার চুল দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটছিল ।

২- এক নারীকে দেখলাম যে , তাকে তার জিহ্বার মাধ্যমে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তার গলার ভিতর দিয়ে গরম পানি ঢালা হচ্ছে ।

৩- এক নারীকে দেখলাম যে , তাকে তার স্তনদ্বয়ের মাধ্যমে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ।

৪- এক নারীকে দেখলাম যে , তার দু ’ পা দু ’ হাতের সাথে বাধা এবং বিষাক্ত সাপ ও বিছা তাকে ছোবল মারছে ও কামড়াচ্ছে ।

৫- এক নারীকে দেখলাম যে , সে তার নিজের শরীরের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল এবং শরীরের যেখান থেকেই মাংস ছিড়ছিল সেখান থেকেই আগুনের ফুলকি বের হচ্ছিলো ।

৬- এক নারীকে দেখলাম যে , সে ছিল বধির , বোবা ও অন্ধ , এমতাবস্থায় কুণ্ডলীর মত আগুনের তীব্রতায় তার মগজ গলে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছিল এবং তার দেহও ছিল কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ।

৭- এক নারীকে দেখলাম যে , উত্তপ্ত তন্দুরের মধ্যে তার দু ’ পা উপরের দিকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ।

৮- এক নারীকে দেখলাম যে , তার শরীরটিকে অগ্রভাগ ও পশ্চাৎভাগ থেকে আগুনের কাঁচি দিয়ে আলাদা করা হচ্ছে ।

৯- এক নারীকে দেখলাম যে , তার মুখমণ্ডল ও দু ’ হাতে আগুন লেগে গেছে । আর তখন সে নিজেই তার অন্ত্র (নাড়ীভুঁড়ি) খাচ্ছিল ।

১০- এক নারীকে দেখলাম যে , তার মাথা শুকরের মাথার ন্যায় , তার শরীরটি গাধার শরীরের ন্যায় ছিল এবং তাকে হাজার প্রকৃতির শাস্তি দেয়া হচ্ছে ।

১১- এক নারীকে দেখলাম যে , সে কুকুরের ন্যায় ছিল এবং তার পিছন থেকে আগুন নির্গত হচ্ছিল । আর ফেরেশ্তারা আগুনে উত্তপ্ত লোহার মোটা রড দিয়ে তার মাথা ও শরীরে আঘাত করছিল ।

এরপর ফাতিমা (সা.আ.) পিতাকে লক্ষ্য করে বললেন , হে আমার প্রিয় পিতা! হে আমার চোখের জ্যোতি! আপনি আমাকে বলুন , ঐ নারীদের আমল ও কর্ম পদ্ধতি কেমন ছিল যে কারণে আল্লাহ সুবহানাহু তা ’ য়ালা তাদের জন্য এরূপ শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন ? রাসূল বললেন :

১- যে নারীকে তার চুলের সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তা এ জন্য যে , সে তার মাথার চুল না-মাহরাম (যাদের সামনে পর্দা করা ওয়াজিব ও যাদের সাথে বিবাহ বৈধ) লোকদের থেকে আড়াল করে রাখতো না ।

২-যে নারীকে তার জিহ্বার সাথে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তা এ জন্য যে , সে তার স্বামীকে জিহ্বার (কথার) মাধ্যমে কষ্ট দিতো ।

৩-.যে নারীকে তার স্তনের সাথে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তা এ জন্য যে , সে তার স্বামীর সাথে মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকতো ।

৪- যে নারীকে তার হাতের সাথে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং বিষাক্ত সাপ ও বিছা তাকে দংশন করছিল তা এ জন্য যে , অপবিত্রতা শরীরে থাকা অবস্থায় ওযু করতো , নাজিস (অপবিত্র) পোশাক পরে থাকতো এবং জুনুব ও ঋতুচক্র হওয়ার পরও সে গোসল করতো না । আর নামায পড়তেও অবহেলা করতো ।

৫- যে নারী তার নিজের শরীরের মাংস ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছিল তা এ জন্য যে , সে তার না-মাহরাম লোকদের জন্য নিজেকে সজ্জিত করতো ।

৬- যে নারী বধির , বোবা ও অন্ধ ছিল তা এ জন্য যে , যেনার মাধ্যমে গর্ভবতী হত এবং তা তার স্বামীর উপর দিয়ে চালিয়ে দিত ।

৭- যে নারীর দু ’ পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তা এ জন্য যে , সে তার স্বামীর বিনা অনুমতিতে বাড়ীর বাইরে যেত ।

৮- যে নারীর শরীরের অগ্রভাগ ও পশ্চাৎভাগ আগুনের কাঁচি দিয়ে আলাদা করা হচ্ছিল তা এ জন্য যে , সে নিজের শরীরকে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করতো ।

৯- যে নারীর মুখ মণ্ডল ও দু ’ হাত আগুনে পুড়ছিল এবং সে নিজেই তার অন্ত্র খাচ্ছিল তা এ কারণে যে , সে সতীত্বের পরিপন্থী কাজের মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করতো ।

১০- যে নারীর মাথা শুকরের মাথার ন্যায় এবং শরীরটি গাধার শরীরের ন্যায় ছিল তা এ জন্য যে , সে গুজব রটনা করতো এবং মিথ্যা কথা বলতো ।

১১- যে নারী ছিল কুকুরের মত তা এ জন্য যে , সে গান গাইতো এবং হিংসুক ছিল ।

এরপর রাসূল (সা.) বললেন , ঐ নারীর কপালে অনেক দুঃখ রয়েছে যে নারী তার স্বামীকে রাগান্বিত করে আর ঐ নারীই হচ্ছে সৌভাগ্যবতী যে নারীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকে ।

হ্যাঁ , এই দুনিয়াতে আমাদের সকল ভাল ও মন্দ আমলই নিবন্ধিত ও রেকর্ড করে রাখা হবে এবং অন্য দুনিয়ায় (আখিরাতে) সেগুলোর ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ করা হবে । যদিও জুলুম ও পাপের কারণে অনেক সময় মানুষ এই দুনিয়াতেও দুর্দশা ভোগ করে থাকে । তাই আল্লাহ রাব্বুল আ ’ লামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন :

) إِنَّا كُنَّا نَسْتَنسِخُ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ(

নিশ্চয়ই তোমরা যা করতে আমরা তাই অনুলিখন করতাম ।৭৩

) يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ‌ مُّحْضَرً‌ا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا(

সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি যা ভাল কাজ করেছে তা দেখতে পাবে আর যা মন্দ কাজ করেছে তাও দেখতে পাবে । সে কামনা করবে যদি তার ও এসবকমে র্ র মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকত ।৭৪

) وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَ‌ى الْمُجْرِ‌مِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَـٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ‌ صَغِيرَ‌ةً وَلَا كَبِيرَ‌ةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرً‌ا وَلَا يَظْلِمُ رَ‌بُّكَ أَحَدًا(

(কিয়ামতের দিনে) আমল নামা উপস্থাপন করা হবে । পাপীদেরকে তুমি দেখবে তাদের আমল নামাতে যা কিছু আছে সে ব্যাপারে তারা খুবই ভীত সন্ত্রস্তএবং বলবে যে , হায়! এটা কেমন গ্রন্থ (আমল নামা) যার মধ্যে ছোট ও বড় এমন কোন আমলই নেই যার হিসাব রাখা হয় নি । সকলেই তাদের আমল দেখতে পাবে এবং তোমার পালনকর্তা কারো প্রতিই কোন প্রকার জুলুম করবেন না ।৭৫

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : কিয়ামতের দিনে মানুষের আমল নামাকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে । তারপর তা পড়তে বলা হবে । (আ.) বর্ণনাকারী ইমামকে প্রশ্ন করে বলল : যা কিছু ঐ আমলনামাতে থাকবে তার সবগুলোই কি স্মরণে আনতে পারবে ? ইমাম বললেন : এক নিমেষেই সব কিছুই স্মরণে আনতে পারবে । কোথায় কি বলেছে , কোথায় কি করেছে , কোথায় গিয়েছে এবং যা কিছু ঘটেছে । তারা এমন ভাবে সে সব স্মরণে আনবে যে , মনে হবে তখনই তা আঞ্জাম দিচ্ছে । আর সে কারণেই তারা বিকট ধ্বনিতে চিৎকার দিয়ে বলবে যে , হায়! এটা কেমন আমলনামা যার মধ্যে ছোট ও বড় এমন কোন আমল নেই যার হিসাব রাখা হয় নি ।

কিয়ামতের দিনে মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে

এই পৃথিবীর কোন কিছুই হিসাব-নিকাশ বিহীন নয় । আমাদের সব কিছুই অর্থাৎ সব আমলই আল্লাহ রাব্বুল আ লামিনের নির্দেশে ফেরেশতাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন হয়ে থাকে এবং কিয়ামতের দিনে সেগুলো আমাদেরকে দেখানো হবে , তাই পালিয়ে যাওয়ার কোন রাস্তাই আমাদের জন্য খোলা থাকবে না বা কোন অজুহাত উত্থাপনের সুযোগ থাকবে না । আল্লাহ্ রাব্বুল আ লামিন বলেছেন :

) وَيَوْمَ يُحْشَرُ‌ أَعْدَاءُ اللَّـهِ إِلَى النَّارِ‌ فَهُمْ يُوزَعُونَ ﴿١٩﴾ حَتَّىٰ إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُ‌هُمْ وَجُلُودُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿٢٠﴾ وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدتُّمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنطَقَنَا اللَّـهُ الَّذِي أَنطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّ‌ةٍ وَإِلَيْهِ تُرْ‌جَعُونَ ﴿٢١﴾ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَتِرُ‌ونَ أَن يَشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَا أَبْصَارُ‌كُمْ وَلَا جُلُودُكُمْ وَلَـٰكِن ظَنَنتُمْ أَنَّ اللَّـهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيرً‌ا مِّمَّا تَعْمَلُونَ ﴿٢٢﴾ وَذَٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِي ظَنَنتُم بِرَ‌بِّكُمْ أَرْ‌دَاكُمْ فَأَصْبَحْتُم مِّنَ الْخَاسِرِ‌ينَ(

কিয়ামতের দিন , আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানে তাদেরকে একত্রিত করা হবে ।

পাপীরা যখন জাহান্নামের আগুনের নিকটবর্তী হবে তখন তাদের কর্ণ , চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম (গুনাহ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে ।

পাপীরা তাদের ত্বককে (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ) বলবে : কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছ ? তারা বলবে : সেই আল্লাহ তা ’ য়ালা আমাদেরকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন যিনি সকল কিছুকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন , তিনি তোমাদেরকে প্রথমবারের মত সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা পুনরায় তাঁর দিকে ফিরে এসেছো । কর্ণ , চক্ষু ও শরীরের ত্বক যে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এই ভয়ে কি তোমরা তোমাদের পাপকাজগুলোকে গোপন রাখতে ? না তা নয় বরং তোমরা মনে করতে যে , তোমাদের বহু কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তা ’ য়ালা জানেন না ।৭৬

তোমাদের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের সেই ভ্রান্তধারণার কারণেই তোমরা ধ্বংস হয়েছো তাই তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছো ।

মানুষেরশরীরের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গগুলো আল্লাহ তা য়ালার পক্ষ থেকে আমানত স্বরূপ

আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সব কিছুই আল্লাহ তা ’ য়ালার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আমানত স্বরূপ দেয়া হয়েছে । আর তাই আমাদের উচিৎ যে , তাঁর প্রদত্ত এই আমানতসমূহ তাঁর নির্দেশিত পথেই ব্যবহার করা । আমাদের কোন অধিকার নেই যে , এগুলোকে তাঁর অমনোনীত পথে ব্যবহার করবো । এগুলোর উপর আমাদের কোন কর্তৃত্ব নেই এবং কারো এমন অধিকারও নেই যে , সেগুলোর কোন (বস্তুগত বা অবস্তুগত) ক্ষতিসাধন করবে । তাই কোন নারীই হারাম পথে তার শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে ব্যবহার করতে পারে না । এমন কি সেগুলোকে পর্দার মধ্যে না রেখে উম্মুক্তও করতে পারে না ।

প্রকৃতপক্ষে এই দুনিয়া তার বাহ্যিকতাসহ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে । শুধুমাত্র আমাদের নেক আমল সমূহই অবশিষ্ট থাকবে এবং আমাদের উপকারে আসবে । সুতরাং আমাদের উচিত আমাদের মৃত্যুর পূর্বেই পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয় সংগ্রহ করা ।

যদিও আমাদের সমাজে এমন কিছু বেপর্দা নারী রয়েছে যারা ইসলাম প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে চলে না । ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণেই তারা এটা করে থাকে । কেননা , তারা তো সহজাত ভাবেই কুরআন ও নবীর (সা.) আহলে বাইত (আ.) -এর প্রতি ভালবাসা রাখে । আশা করি জ্ঞান অন্বেষণের মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে এই সমস্যা দূর হবে ।

হাদীসেরদৃষ্টিতে বে - পর্দা ও সঠিকভাবে পর্দা না করার অনিষ্টতা ও ক্ষতিকর দিকসমূহ

১- সঠিকভাবে পর্দা মেনে না চলা নারীরাই শয়তানের উপযুক্ত হাতিয়ার :

রাসূল ( সা .) বলেছেন :

ﺍﻭﺛﻖ ﺳﻼﺡ ﺍﺑﻠﻴﺲ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ

(মন্দ) নারীরাই হচ্ছে শয়তানের সব থেকে নিশ্চিন্ত হাতিয়ার ।৭৭

মানব জাতিকে ধ্বংস করার জন্য শয়তানের কাছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র রয়েছে । যেরূপ যুদ্ধের সময় মানুষ তার শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করার নিমিত্তে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে । সেরূপ শয়তানের অস্ত্রগুলোর মধ্যেও প্রকারভেদ রয়েছে । কিন্তু যে অস্ত্রটি শয়তানের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং তাকে মানব জাতির সাথে যুদ্ধে একশত ভাগ সফল করে তা হচ্ছে নারী ।

এই হাদীস থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে , (যেভাবে ইতিহাস বর্ণনা দিয়েছে) শয়তান যখনই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মানব জাতিকে ধ্বংস করতে গিয়ে নিরাশ হয়ে যায় তখনই দ্বীন-ধর্মহীন নারী এবং যে সকল নারী শুধুমাত্র প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা ব্যতীত অন্য কিছুই চিন্তা করে না সে সকল নারীকে তার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করে থাকে । আর তারা হচ্ছে সেই সব নারী যারা জালেম ও অত্যাচারী শাসকদের হাতের পুতুল ছিল ।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীর দিকেও যদি আমরা সূক্ষদৃষ্টিতে তাকাই দেখি যে , বিশ্বে বিশেষত ইসলামী বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও লুটপাট প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে চরিত্রহীন নারীরা ।

তাই আল্লাহ তা য়ালা বলেছেন :

) زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ‌ الْمُقَنطَرَ‌ةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْ‌ثِ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّـهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ(

মানবকুলকে মোহগ্রস্ত করেছে রমনী , সন্তান-সন্ততি , পুঞ্জীভূত স্বর্ণ ও রৌপ্য , চিহ্নিত অশ্ব ও গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র এই সব কিছুই পার্থিব জীবনের ব্যবহারিক বস্তু । আর উত্তম জীবন তো আল্লাহরই নিকট রয়েছে ।৭৮

এই পবিত্র আয়াতে প্রথম যে বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে তা হচ্ছে নারী । এ কারণেই মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন : যৌন প্রবণতা হচ্ছে মানুষের অন্য সব প্রবণতা থেকে শক্তিশালী একটি প্রবণতা । সামাজিক অনেক ঘটনাই এই প্রবণতা ও তাড়না থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

এটা বলার প্রয়োজন রয়েছে যে , উক্ত আয়াতটি এবং অনুরূপ আয়াতসমূহ স্ত্রী , সন্তান ও সম্পদের প্রতি ভালবাসাকে নিন্দা বা তিরস্কার করে না (কেননা আত্মিক বিষয়ের উন্নতি কখনোই দুনিয়াবী বিষয়ের মাধ্যম ব্যতীত সম্ভব নয়) বরং এ সকল আয়াতে এসবের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসাকে তিরস্কার করা হয়েছে ।

শয়তান সম্পর্কে কিছু আলোচনা

ক)- শয়তান ’ শব্দটি শাতানা ’ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে । আর তার কর্তাবাচক বিশেষ্য হচ্ছে শাতেন ’ অর্থাৎ দুষ্ট , অপবিত্র , নোংরা ও ইতর প্রকৃতির ।

খ)- শয়তান ’ শব্দটি দ্বারা এমন এক সত্তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয় যে , সে হচ্ছে অবাধ্য , বিদ্রোহী এবং মানুষ ছাড়াও অন্যান্য সব কিছুর সাথে সংযুক্ত করা যায় । শয়তান ’ হচ্ছে একটি সাধারণ নাম এবং ইবলিস ’ হচ্ছে একটি বিশেষ নাম

) وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ‌ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِ‌ينَ(

স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম আদমের উদ্দেশ্যে সিজদাহ্ দিতে তখন তারা সকলেই সিজদাহ্ করেছিল ; শুধুমাত্র ইবলিস এই নির্দেশ উপেক্ষা করেছিল এবং অহমিকা প্রদর্শন করেছিল । আর(এই নির্দেশের অবাধ্যতা করার কারণে) সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল ।৭৯

) إِنَّمَا يُرِ‌يدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ‌ وَالْمَيْسِرِ‌ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ‌ اللَّـهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ(

শয়তান চায় শরাব (মদ) ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির করা ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে । (তোমরা কি) এসব ফ্যাসাদ ও ক্ষতিকর কর্ম থেকে ক্ষান্ত হবে ?৮০

) وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُ‌فَ الْقَوْلِ غُرُ‌ورً‌ا وَلَوْ شَاءَ رَ‌بُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْ‌هُمْ وَمَا يَفْتَرُ‌ونَ(

আর এরূপভাবে আমরা প্রতিটি নবীর শত্রু হিসেবে বহু শয়তান সৃষ্টি করেছি তাদের কতক হচ্ছে মানুষ আর কতক হচ্ছে জ্বিন । যাদের কতিপয় অপর কতিপয়কে ভিত্তিহীন মনভুলানো বাক্যের মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে কুমন্ত্রণা দিত । আর যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন তবে ঐরূপ করতে পারতো না । সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা রটনা নিয়েই থাকতে দিন !৮১

গ)- শয়তানকে দেখা যায় না ,

) إِنَّهُ يَرَ‌اكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَ‌وْنَهُمْ(

নিশ্চয়ই শয়তান ও তার দোসররা সেইস্থান থেকে তোমাদেরকে দেখতে পায় , যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না ।৮২

ঘ)- শয়তান বিভিন্ন পথে গোমরাহ্ করার জন্য এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করবে :

) قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿١٦﴾ ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ(

শয়তান আল্লাহ তা ’ য়ালাকে বলল : যেহেতু আপনি আমাকে গোমরাহ্ করেছেন সেহেতু অবশ্যই আমি তাদের (বিভ্রান্ত করার) জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকবো । তারপর সামনে থেকে , পিছন থেকে , ডান ও বাম পাশ থেকে তাদের কাছে যাবো এবং তাদের অধিকাংশকেই আপনি কৃতজ্ঞ হিসেবে পাবেন না । (সূরা আরাফ :১৬-১৭)

এই যে শয়তান বলছে যে , সে চার পাশ থেকে আসবে ; এটা হয়তো এমন হতে পারে যে , সে মানব জাতিকে অবরোধ করবে এবং যে কোন প্রক্রিয়াতেই হোক না কেন সে তাদেরকে গোমরাহ্ করার চেষ্টা করবে । এমন ধরনের কথা তো সাধারণ মানুষও বলে থাকে যেমন , অমুক চার দিক থেকেই আটকে গেছে অথবা শত্রুর খপ্পরে পড়েছে ।

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : সামনের দিক থেকে মানুষের কাছে শয়তান আসার অর্থ হচ্ছে , তাদের সামনে যে আখেরাত রয়েছে তাদের দৃষ্টিতে সামান্য ও হালকা হিসেবে তুলে ধরা । মানুষ এই আখেরাতকে মূল্যহীন ও অতি সাধারণ মনে করার কারণেই গোনাহ্তে লিপ্ত হয় । আর পিছন দিক থেকে মানুষের নিকট আসার অর্থ হচ্ছে , সম্পদ পুঞ্জীভূত করার জন্য এবং তাদের সন্তান ও উত্তরসূরীদের উছিলা দিয়ে অন্যের অধিকার না দেয়ার জন্য আহ্বান জানাবে । ডান দিক থেকে মানুষের নিকট আসার অর্থ হচ্ছে , নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করবে এবং বাম দিক থেকে আসার অর্থ হচ্ছে , দুনিয়াবী আকাঙ্ক্ষা এবং কামভাবকে তাদের সামনে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তুলবে ।৮৩

ঙ)- উদ্ধত ও সীমালংঘনকারী মানুষ , ক্ষতিকারক প্রাণী , বিভেদ সৃষ্টিকারী সত্তা , জীবাণু , পাপাচারী নারী , মুনাফিক ও মিথ্যাবাদী ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে শয়তান শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে । মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামদের থেকে এরূপ অর্থে প্রচুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে । যেমন ,

রাসূল (সা.) বলেছেন :

ﻻ ﺗﻮﻭﺍ ﻣﻨﺪﻳﻞ ﺍﻟﻠﺤﻢ ﰱ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻓﺎﻧﻪ ﻣﺮﺑﺾ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ

মাংসের ব্যাগ বাড়িতে রেখোনা , কেননা তা হচ্ছে শয়তানের বসবাসের স্থান অর্থাৎ তাতে জীবাণু জন্মায় ।৮৪

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

ﻻ ﺗﺪﻋﻮﺍ ﺁﻧﻴﺘﻜﻢ ﺑﻐﲑ ﻏﻄﺎﺀ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺍﺫﺍ ﱂ ﺗﻐﻂ ﻟﻶﻧﻴﺔ ﺑﺰﻕ ﻭﺍﺧﺬ ﻣﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﺷﺎﺀ

তোমাদের পাত্রগুলোকে খোলা রেখো না , যদি তা না ঢাক তবে তাতে শয়তান তার মুখের লালা লাগিয়ে দেয় (তাতে রোগ জীবাণু জন্মায় এবং তা ব্যবহারও করে) ।৮৫

ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :

ﺍﳕﺎ ﻗﺼﺼﺖ ﺍﻻﻇﻔﺎﺭلأنها ﻣﻘﻴﻞ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ

তোমাদের আঙ্গুলের নখগুলোকে ছোট করে রাখ ; কেননা যদি তা বড় থাকে তবে তা হচ্ছে শয়তানের বসবাসের (ও রোগ জীবানুর জন্মানোর) স্থান ।৮৬

রাসূল ( সা .) বলেছেন :

ﻻ ﺗﺒﻴﺘﻮﺍ ﺍﻟﻘﻤﺎﻣﺔ ﰱ ﺑﻴﻮﺗﻜﻢ ﻓﺎﺧﺮﺟﻮﻫﺎ نهاراﹰ ﻣﻘﻌﺪ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ

রাতে আবর্জনা তোমাদের ঘরে রেখোনা এবং তা দিনেই বাইরে ফেলে দিবে । কেননা তা শয়তানের বসার (রোগজীবাণু জন্মানোর) স্থান ।৮৭

রাসূল (সা.) বলেছেন :

ﻻ ﻳﻄﻮﻟﻨﺎ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﺷﺎﺭﺑﻪ، ﻓﺎﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻳﺘﺨﺬﻩ ﳐﺒﺌﺎ ﻳﺴﺘﺘﺮﺑﻪ

তোমাদের গোঁফ বড় করোনা , কেননা সেখানে শয়তান (জীবাণু) নিজের বসবাসের স্থান করে নেয় এবং সেখানে লুকিয়ে থাকে ।৮৮

রাসূল (সা.) বলেছেন :

ﺍﻥ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﺍﳊﺎﺭ ﺟﺪﺍ ﳏﻮﻕ ﺍﻟﱪﻛﺔ ﻭ ﻟﻠﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﻴﻪ ﺷﺮﻛﺔ

গরম খাবার সত্যই বরকত নষ্ট করে দেয় , কেননা শয়তান তাতে অংশগ্রহণ করে ।৮৯

রাসূল (সা.) বলেছেন :

ﻻ ﻳﺒﻴﱳ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﻭﻳﺪﻩ ﻏﻤﺮﺓ ﻓﺎﻥ ﻓﻌﻞ ﻓﺎﺻﺎﺑﻪﳌﻢ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﻼ ﻳﻠﻮﻣﻦ ﺍﻻ ﻧﻔﺴﻪ

তৈলাক্ত হাতে রাত্রি যাপন করো না । সেক্ষেত্রে যদি শয়তান তোমাদের কোন ক্ষতি করে তবে নিজেদের ব্যতীত অন্য কাউকে তিরস্কার করো না ।৯০

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

ﺍﻟﻘﻬﻘﻬﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ

অট্টহাসি হচ্ছে শয়তানের একটি বৈশিষ্ট্য ।৯১

ﻋﻦ ﺍﰉ ﻋﺒﺪ ﺍﷲ (ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ) : ﺍﻟﻨﻈﺮ ﺳﻬﻢ ﻣﻦ ﺳﻬﺎﻡ ﺍﺑﻠﻴﺲ ﻣﺴﻤﻮﻡ ﻭ ﻛﻢ ﻣﻦ ﻧﻈﺮﺓ ﺍﻭﺭﺛﺖ ﺣﺴﺮﺓ ﻃﻮﻳﻠﺔ

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : দৃষ্টি হচ্ছে শয়তানের নিক্ষিপ্ত তীরসমূহের মধ্যে একটি বিষাক্ত তীর এবং এমন অনেক দৃষ্টি রয়েছে যার পরিণতি হলো দীর্ঘ পরিতাপ ।৯২

ﺍﻟﻨﻈﺮ ﺍﱃ ﳏﺎﺳﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺳﻬﻢ ﻣﻦ ﺳﻬﺎﻡ ﺍﺑﻠﻴﺲ ﻓﻤﻦ ﺗﺮﻛﻪ ﺍﺫﺍﻗﻪ ﺍﷲ ﻃﻌﻢ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺗﺴﺮﻩ

রাসূল (সা.) বলেছেন : না-মাহরাম (যে মহিলা বা পুরুষের সাথে বিবাহ করা যায়) মহিলার চুলের দিকে তাকানোটা হচ্ছে এমন এক দৃষ্টি যা শয়তানের কাছ থেকে আসা বিষাক্ত তীরের মত । যারা তাকাবে না বা দেখবে না তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবাদতে আধ্যাত্মিক স্বাদ দেয়া হবে যা তাদেরকে আনন্দিত করবে ।৯৩

হযরত আলী (আ.) বলেছেন :

ﺍﳌﻜﻮﺭ ﺷﻴﻄﺎﻥ ﰱ ﺻﻮﺭﺓ ﺍﻧﺴﺎﻥ

যে বেশী চালাকী করে , সে হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান ।৯৪

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :

ﻟﻴﺲ ﻻﺑﻠﻴﺲ ﺟﻨﺪ ﺍﺷﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻭ ﺍﻟﻐﻀﺐ

নারী ক্রোধ এই দুটির মত উত্তম সৈনিক শয়তানের আর নেই ।৯৫

রাসূল (সা.) বলেছেন :

ﺍﻭﺛﻖ ﺳﻼﺡ ﺍﺑﻠﻴﺲ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ

শয়তানের উত্তম অস্ত্র হচ্ছে নারী ।৯৬

ফলাফল :

উপরোল্লিখিত পবিত্র আয়াতসমূহ ও আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) রেওয়ায়েত থেকে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে তা নিম্নরূপ :

ক)- শয়তান এমন এক সত্তা যা দেখা যায় না কিন্তু তার নমুনা অনেক কিছুর মধ্যে পাওয়া যায় , যেমন , মিথ্যাবাদী ও মতানৈক্য সৃষ্টিকারী মানুষ , নারী , জীবাণু ইত্যাদি । মূল কথা হচ্ছে যে অপবিত্র ও দুষ্ট সত্তা মানুষকে সত্য পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং তার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে সেই সত্তাকেই শয়তান বলা হয় । যদি কোন কোন নারীকে শয়তান অথবা শয়তানের বন্ধু বা সহায়তাকারী বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় তবে তা এ কারণেই করা হয়ে থাকে যে , তাকওয়াহীন , বেপর্দা অথবা সঠিকভাবে পর্দা না করা নারী তার কথা ও আচার-আচরণের মাধ্যমে যেহেতু মানুষকে সত্য পথ থেকে দূরে সরিয়ে ফিতনা-ফ্যাসাদের দিকে নিয়ে যায় । আর যেহেতু শয়তানের উদ্দেশ্যও এর বাইরে কিছু নয় , সেহেতু এমন প্রকৃতির নারীরাই শয়তান নামক ঐ অপবিত্র ও দুষ্ট সত্তাকে তার প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে থাকে ।

খ)-যে সকল রেওয়ায়েত আবর্জনা এবং তা রাখার স্থান এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছে এবং যেসকল রেওয়ায়েত চর্বি ও জীবাণু সংক্রান্ত আলোচনা করেছে তা থেকে আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে , ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কত গুরুত্ব দিয়েছে । যদি মুসলমানগণ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের সঠিক ব্যবহার ও নিয়ম- কানুন জানতো তবে বর্তমানে আমাদের দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে , রাস্তা- ঘাটে , অলিতে-গলিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যে অভাব রয়েছে তা থাকতো না । আল্লাহ্ তা ’ য়ালা সবাইকে নবী মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)-এর দ্বীনের বিধি- বিধান সম্পর্কে সঠিকভাবে জানার তৌফিক দান করুন ।

1- পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

) إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّـهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّـهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا(

নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী , ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী , অনুগত পুরুষ ও নারী , ইবাদতকারী পুরুষ ও নারী , সত্যবাদী পুরুষ ও নারী , ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও নারী , খোদাভীরুপুরুষ ও নারী , ছদকা দানকারী পুরুষ ও নারী , রোযাদার পুরুষ ও নারিগণ এবং যে সকল পুরুষ ও নারী তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং যে সকল পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে , তাদের সকলের জন্যেই আল্লাহ তা য়ালার কাছে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার3

এই পবিত্র আয়াতে , পুরুষ ও নারীকে পাশা-পাশি উল্লেখ করা হয়েছে । আল্লাহ্ তা য়ালা পুরস্কার দান ও ক্ষমা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি ।

) يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ(

হে মানব সকল! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি এ কারণে যে , তোমরা যেন একে অপরকে চিনতে পার (এবং বুঝতে পার বংশ ও গোত্র কোন গর্বের বিষয় নয়) । তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম যে অন্যের থেকে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন । নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং মানুষের ভাল ও মন্দ কাজের বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন ।4

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা ’ য়ালা পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাঁর ও একক , পবিত্র সত্তাকে উত্তমরূপে জানা বলে উল্লেখ করেছেন । আর বংশ , ক্ষমতা , ধন-দৌলত , জ্ঞান , রং , ভাষা ও ভৌগলিকতার (আমেরিকা , ইউরোপ , এশিয়া ইত্যাদি) ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষের মর্যাদাকে নির্ধারণ করেন নি বরং আল্লাহর কাছে উত্তম বস্তু হচ্ছে তাকওয়া , আর তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে মেনে চলা ।

) مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ(

পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনবে এবং উত্তম কাজ আঞ্জাম দিবে , তাদেরকে আমরা পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদের কাজের তুলনায় উত্তম পুরস্কার দান করব5

এই আয়াতেও আল্লাহ্ তা য়ালা উত্তম কাজের বিনিময় স্বরূপ পুরস্কার ও সওয়াব দানের অঙ্গীকার করেছেন , আর সৎকর্ম সম্পাদনকারী পুরুষই হোক অথবা নারী হোক কোন পার্থক্য করেন নি বরং যে কোন বান্দাই এই ভাল কাজ আঞ্জাম দিবে আল্লাহ তা য়ালা তাকেই এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন ।

) وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ(

আল্লাহ্ তা য়ালার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে যে , তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সহধর্মিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদের সান্নিধ্যে প্রশান্তি অনুভব করতে পার , আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও রহমতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । এ সব কিছুই হচ্ছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে । 6

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা য়ালা নারী সৃষ্টিকে তাঁর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পেশ করেছেন । তিনি উল্লেখ করেছেন যে , নারীরা হচ্ছে ভালবাসা , রহমত ও প্রশান্তির কারণ । বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবাই (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন , পুরুষ ও নারী এমনই এক সৃষ্টি একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে যারা উভয়ই পূর্ণতা অর্জন করে এবং এ দু য়ের মিলনের মাধ্যমে মানব জাতির বংশ বিস্তার ঘটে থাকে , আর তারা একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ ।

আল্লাহ্ তা য়ালা এই আয়াতের শেষে বলছেন : এই বিষয়টি তাদের জন্য নিদর্শন যারা চিন্তা করে বা যারা বিবেক সম্পন্ন । তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে , পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক । আর নারীই একটি পরিবারকে সতেজ ও উদ্যমী করে রাখে এবং এর সদস্যদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে । যে কারণে পুরুষ ও নারী শুভ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত ভালবাসা ও রহমত । শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই তারা এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না ।

কিন্তু পুরুষ ও নারীর বন্ধনের মধ্যে দু টি দিক বিদ্যমান । তার একটি হচ্ছে ঐশী ও ভালবাসার দিক অপরটি হচ্ছে পাশবিক দিক । তবে মানুষ তার ঐ ঐশী ও ভালবাসার বোধের মাধ্যমেই পূর্ণতায় পৌঁছে থাকে ।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছি তা হচ্ছে , অনেক মুফাসসির উল্লিখিত আয়াত ও এ ধরনের আরো কিছু আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে , নারী পুরুষের শরীরের অংশ । কেননা তাদেরকে পুরুষের শরীরের অংশ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । আর এই ধরনের তফসিরের ফলে অনেক সুবিধাবাদী পুরুষ , নারীদেরকে তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করে থাকেন যা নারীর জন্যে একটি অপমান জনক বিষয় । এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আয়াতসমূহকে তারা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন :

) يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً(

হে মানব সকল ! তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর । যিনি তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন । আর তা থেকে তার সহধর্মিণীকেও এবং ঐ দু জন থেকে অনেক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন ।7

) هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا(

তিনিই তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রী ।8

) خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا(

তোমাদেরকে এক সত্তা থেকে সৃি ষ্ট করেছেন এবং তা থেকে তার স্ত্রীকেও ।9

) وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا(

আর এটা তাঁর নিদর্শনমূহের নমুনা স্বরূপ যে , তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন ।10

) وَاللَّـهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً(

আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রী নির্দিষ্ট করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে সন্তান ও পৌত্রদের সৃষ্টি করেছেন ।11

) جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا(

তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন ।12

বাহ্যিকভাবে দেখা যায় যে , প্রথম তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ একটি নফস (সত্তা) থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের স্ত্রীগণও ঐ নফস থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ।

কিন্তু পরের তিনটি আয়াতে উক্ত বিষয়টিকে সমস্তপুরুষের প্রতি ইশারা করে বলা হচ্ছে যে , তোমাদের স্ত্রীগণকে তোমাদের থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে । যদি আমরা একটুখানি এই বিষয়ের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেই তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে , এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তা য়ালা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে , তাদের স্ত্রীগণ উৎসের দৃষ্টিতে তাদেরই প্রকৃতির , অন্য প্রকৃতির নয় । এটা নিশ্চয় বুঝাতে চাননি যে , স্ত্রীগণ তাদের দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলতে হয় যে , প্রতিটি স্ত্রীই তার স্বামীর দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে । পরবর্তী তিনটি আয়াত প্রথম তিনটি আয়াতকে ব্যাখ্যা করেছে , যাতে করে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় ।

আল্লামা তাবাতাবাই এই আয়াতের তফসিরে বলেছেন : ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে যে , স্ত্রীদের পুরুষের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের উভয়েরই সৃষ্টির উৎস হচ্ছে এক ।

এই আয়াতে মিন শব্দটি উৎস বর্ণনা অর্থে এসেছে অর্থাৎ এখানে মিন কোন কিছু সৃষ্টির উৎসকে বর্ণনা করছে । এই আয়াতটি অন্যান্য আয়াতের মতই পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির উৎস বর্ণনা করেছে , যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে ।

অতএব , এটা আমাদের কাছে পরিস্কার এবং বিভিন্ন তফসির গ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী যে বলা হয়ে থাকে আল্লাহ তা য়ালা নারীকে পুরুষের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলিলহীন উক্তি । 13

উপরোল্লিখিত ভ্রান্ত ধারণাটির পক্ষে রয়েছেন আহলে সুন্নাতের মুফাসসিরগণ যেমন : ওয়াহ্বাহ্ যুহাইলী এবং ফাখরুদ্দীন রাযি তারা তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন ও গ্রহণ করেছেন ।

সুতরাং কোরআনের আয়াত থেকে আমাদের কাছে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে , পবিত্র কোরআন পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উৎসগত আলোচনা করেছে এবং তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যকে তুলে ধরেছে । এর পক্ষে আমাদের আরো জোরাল যুক্তি রয়েছে যা নিম্নরূপ :

ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে , একদল লোক বলে হযরত হাওয়াকে হযরত আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ’ এ ব্যাপারে আপনার মত কি ?

তিনি বললেন : আল্লাহ তা য়ালা এমন ধরনের কাজ করা থেকে পবিত্র । এরপর তিনি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন : আল্লাহর কি ক্ষমতা ছিল না যে , হযরত আদমের জন্য স্ত্রী সৃষ্টি করবেন যে তার পাজরের হাড় থেকে হবে না ? যাতে করে পরবর্তীতে কেউ বলতে না পারে যে , হযরত আদম নিজেই নিজের সাথে বিয়ে করেছেন । আল্লাহ তাদের ও আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে ফায়সালা করুন । 14

(অর্থাৎ এখানে ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে , আল্লাহ যখন হযরত আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তবে তার সৃষ্টির জন্য , তার পাজরের হাড় থেকে করতে হবে কেন ? যেহেতু আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । তাই এ কথা বললে তাঁর অক্ষমতাকেই তুলে ধরা হয় , নয় কি ? -নাউযুবিল্লাহ । )

অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে যে , আল্লাহ তা ’ য়ালা হযরত আদম সৃষ্টির পরে অবশিষ্ট কাদা-মাটি থেকে হযরত হাওয়াকে (হযরত আদমের মতই) স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন ।15

) وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ(

আমরা মুসার মায়ের প্রতি এরূপ এলহাম করেছিলাম যে , তাকে দুধ দাও এবং যখনই তার ব্যাপারে ভয় পাবে তখনই তাকে ( নীল নদের ) পানিতে নিক্ষেপ কর , তুমি ভয় করো না ও দুঃখিত হয়োনা আমরা তাকে পুনরায় তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্যে স্থান দিব16

এই আয়াতে এ বিষয়টি পরিস্কার যে , আল্লাহ তা য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর মায়ের প্রতি এলহাম করেছেন , আল্লাহ একজন নারীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন এটা হচ্ছে নারীদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয় ।

) إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّـهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ(

(ঐ সময়কার কথাকে স্মরণে আন ) যখন ফেরেশতাগণ বলেছিলেন : হে মারিয়াম ! আল্লাহ তা য়ালা তোমাকে তার পক্ষ থেকে এক বাণীর সুসংবাদ দান করছেন যে , তার নাম হচ্ছে মাসিহ্ ঈসা ইবনে মারিয়াম , সে এই দুনিয়া ও আখেরাতেও একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হবে । 17

তাহলে আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে , একজন নারীর পক্ষে এটা সম্ভব যে , সে পরিপূর্ণতার এমন পর্যায়ে পৌছাবে , যার কারণে আল্লাহ তা য়ালা আসমানী কিতাবে তাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলবেন । আর আল্লাহর ফেরেশ্তাগণ ও স্বয়ং জিব্রাঈল (আ.) তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কথা বলবেন । আর এমন নজির পুরুষদের মধ্যেও কম দেখা যায় ।

) وَضَرَبَ اللَّـهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ(

আল্লাহ্ তা য়ালা মু মিনদের জন্য ফিরআউনের স্ত্রীকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন , যখন সে বলেছিল যে , হে আল্লাহ ! বেহেশ্তে তোমার কাছে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং আমাকে ফিরআউনের কু -কর্ম ও তার অত্যাচারী দলবল থেকে রক্ষা কর18

1-আল্লাহ তা য়ালা এই আয়াতে সকল পুরুষ ও নারীর সামনে একজন নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ।

2-আছিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী) সকল নারীকে এটাই শিক্ষা দিলেন যে , আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা কোন বাদশাহর প্রাসাদে জীবন-যাপন করার (সেখানে সব ধরনের সুব্যবস্থা থাকা সত্বেও) থেকেও উত্তম । তিনি আরো প্রমাণ করলেন যে , কোন নারীরই উচিৎ নয় এই দুনিয়ার বাহ্যিক রূপের মোহে ভুল করা । কেননা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে । আর শুধুমাত্র আল্লাহ্ই থাকবেন ।

3-তিন আরো শিক্ষা দিলেন যে , নারীদের স্বাধীনতা থাকবে (যতটুকু আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন) এবং তারা জুলুম ও জালিমের প্রতি ঘৃণা রাখবে ; যদিও ঐ জালিম তার স্বামীও হয়ে থাকে ।

) إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ﴿١﴾ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿٢﴾ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

হে রাসূল ! আমরা তোমাকে অফুরন্ত নেয়ামত - নবুওয়াত , শাফা ’ য়াতের ন্যায় উচ্চ মর্যাদাসহ কাউসার ( ফাতিমাকে ) - দান করেছি । সুতরাং তুমি এই নে ’ য়ামতসমূহের শুকরিয়া স্বরূপ নামায আদায় এবং কুরবানী কর । আর প্রকৃতপক্ষে তোমার শত্রুরাই হচ্ছে নির্বংশ । ”19

সূরা কাউছারের তিনটি আয়াতের তিনটি অলৌকিকত্ব

প্রথম অলৌকিকত্ব

যেহেতু রাসূল (সা.) -এর সব পুত্র সন্তান মারা গিয়েছিল তাই শত্রুরা মনে করেছিল যে , তাঁর ইন্তেকালের পর তারা জুলুম ও অত্যাচারের ব্যাপারে স্বাধীন । কিন্তু আল্লাহ্ তা ’ য়ালা হযরত যাহরা (আ.) -কে দান করলেন , যাতে তাঁর সন্তানগণ বিশ্ব জুড়ে ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করতে পারেন এবং আবু সুফিয়ান বংশের আর কেউ ইসলামের সাথে শত্রুতা করে সফল হতে না পারে ।

দ্বিতীয় অলৌকিকত্ব

যদিও রাসূলে খোদা (সা.) তাঁর রিসালাতের প্রথম দিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তা ’ য়ালা তাকে এত পরিমানে ধন-সম্পদ দান করেছিলেন যে , তিনি হজ্জ মৌসুমে একটি উট অথবা তারও বেশী পরিমান কুরবানী করতেন ।

তৃতীয় অলৌকিকত্ব

রাসূল (সা.) -এর শত্রুরা বিশাল সৈন্য বাহিনী ও সামরিক শক্তির অধিকারী হওয়া সত্বেও কিছু দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাদের কোন অস্তিত্বই আর অবশিষ্ট ছিল না । এতে করে শত্রুদের বংশই ধ্বংস হয়েছিল , রাসূলে খোদার (সা.) নয় । এরপর দিনের পর দিন হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর মাধ্যমে রাসূলে খোদা (সা.) -এর বংশের বিস্তৃতি হতে থাকলো ।

সাধারণ মানুষেরা হযরত ফাতিমা (আ.)-এর উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে কিছু বলতে অক্ষম । কেননা তিনি হলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ (ইনসানে কামেল) ও চরম আধ্যাত্মিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব । আর সাধারণ মানুষ হচ্ছে অপূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত । সে কারণেই তাদের পক্ষে হযরত ফাতিমা (সা.আ.) এর মত একজন পরিপূর্ণ মানুষকে বুঝে উঠার ক্ষমতা নেই । তাই তাঁর ব্যাপারে অবশ্যই আশরাফুল মাখলুকাত খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর উত্তরসূরী মা ’ সুম ইমামগণ (আ.)-এর মুখ থেকেই শুনতে হবে:

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ). :ﺍﻥ ﺍﷲ ﺗﻌﺎﱃ ﻟﻴﻐﻀﺐ ﻟﻐﻀﺐ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭ ﻳﺮﺿﻰ ﻟﺮﺿﺎﻫﺎ

রাসূল (সা.) বলেছেন : আল্লাহ্ তা য়ালা ফাতিমা ( আ .)- এর ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তার সন্তুষ্টিতে তিনি সন্তুষ্ট হন ।20

: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): ﺍﻭﻝ ﺷﺨﺺ ﺗﺪﺧﻞ ﺍلجنّة ﻓﺎﻃﻤﺔ

রাসূল (সা.) বলেছেন : সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি বেহেশ্তে প্রবেশ করবে সে হচ্ছে ফাতিমা (সা.আ.) ।21

ﻗﺎﻝ الحسن (ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ) ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ: ما ﻛﺎﻥ ﰱ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻋﺒﺪ ﻣﻦ ﻓﺎﻃﻤﺔ علیها السلام ﻛﺎﻧﺖ ﺗﻘﻮﻡ ﺣﱴ ﺗﺘﻮﺭﻡ ﻗﺪﻣﺎﻫﺎ

ইমাম হাসান (আ.) বলেছেন : ফাতিমা (আ.)-এর মত ইবাদতকারী পৃথিবীতে আর কেউ ছিল না , কেননা তিনি এত বেশী ইবাদত করতেন যার কারণে তার পদযুগল ফুলে যেত ।22

ইমাম হাসান (আ.) বলেছেন : আমার মা ফাতিমা (আ.) প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভোর পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতেন । তাকে মু মিন বান্দাদের জন্য প্রচুর দোয়া করতে শুনতাম কিন্তু নিজের জন্য দোয়া করতেন না । মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে , হে জননী ! অন্যদের জন্য এত দোয়া করেন , কেন আপনার নিজের জন্য দোয়া করেন না ? তিনি বললেন :

یا بنی الجار ثم الدار

হে আমার সন্তান! প্রথমে প্রতিবেশী তারপর নিজের বাড়ি ও নিজে ।23

রাসূল (সা.) বলেছেন : ফাতিমা (আ.) পৃথিবীর সকল (প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত) নারীদের নেত্রী এবং সে যখন মেহরাবে ইবাদতে দণ্ডায়মান হয় তখন 70 হাজার ফেরেশ্তা তাকে সালাম করতে থাকে ও তাকে বলে : হে ফাতিমা! আল্লাহ তা য়ালা তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করেছেন , আর তোমাকে পৃথিবীর সমস্ত নারীদের উপরে স্থান দিয়েছেন । 24

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর ব্যাপারে ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর উক্তি

হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর মধ্যে একটি মানুষের জন্য পূর্ণতার যত দিক চিন্তা করা যায় তার সবগুলোই পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিল । কেননা তিনি একজন সাধারণ নারী ছিলেন না । তিনি একজন মালাকুতি ও রূহানী (অলৌকিক ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ের) নারী ছিলেন । একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন । তিনি একজন মালাকুতি (বস্তুজগতের উর্ধ্বের অদৃশ্য জগতের) অস্তিত্ব যিনি মানুষ রূপে এ ধরাধামে এসেছিলেন । তিনি এলাহী ও জাবারুতী (ফেরেশতাদেরও উর্ধ্বের ঐশী জগতের) এক অস্তিত্ব যিনি নারী রূপে প্রকাশিত হয়েছেন । তাঁর সমগ্র অস্তিত্বে নবীদের বৈশিষ্ট্যসমুহ পরিলক্ষিত হয় । তিনি এমন এক নারী , যদি তিনি পুরুষ হতেন তবে হয়তো নবী হতেন । তাঁর মধ্যে এলাহী , মালাকুতি , জাবারুতী , মুলকী ও নাসুতি (উর্ধ্ব ও বস্তুজগতের সকল উচ্চতর) বৈশিষ্ট্যসমূহ একত্রে একত্রিত হয়েছে ।25

তিনি এমন এক নারী যিনি হযরত যয়নাব (আ.)-এর মত প্রশিক্ষিত এক সন্তান মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন । পরবর্তীতে সেই যয়নাবই তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে নির্ভয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছিলেন , ইয়াযিদকে দোষী প্রমাণ করেন । তিনি ইয়াযিদকে বলেন : তুই মানুষ না , মানুষ হওয়ার যোগ্যতাও তোর নেই ।26

তিনি এমন এক নারী , যার গুণাবলী মহানবীর (সা.) গুণাবলীর অনুরূপ অসীম এবং তিনি হচ্ছেন পবিত্র ও নিষ্পাপ নবী পরিবারের সদস্য । তিনি এমন নারী , যার মর্যাদার ব্যাপারে সবাই তার নিজের বোঝার ক্ষমতানুযায়ী কথা বলে থাকে । এখনো পর্যন্ত কেউই তাঁর যথার্থ প্রশংসা করতে সক্ষম হয় নি । তাঁর ব্যাপারে তাঁর পরিবারের মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে ততটুকু বর্ণিত হয়েছে যতটুকু শ্রোতাদের ধারণক্ষমতা ছিল ও তাদের জন্য বোধগম্য হতো । সাগরকে কখনো কলসীতে আবদ্ধ করা যায় না । তাই তাঁর সম্পর্কে ইমামরা শ্রোতাদের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কথা বলেছেন । এক্ষেত্রে আমাদের জন্য উত্তম হলো এ সীমাহীন রহস্যময় প্রান্তরকে আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে আবদ্ধ করার চেষ্টা না করা ।27

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর ব্যাপারে শহীদ মুর্তযা মুতাহ্হারীর উক্তি

তিনি বলেছেন : ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মহিলা অনেক রয়েছে । খুব কম পুরুষই আছে যে হযরত খাদিজার সমান যোগ্যতা রাখে । আর নবী (সা.) ও আলী (আ.) ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ নেই যাদেরকে হযরত ফাতিমা (আ.) -এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে । তিনি তাঁর সন্তানগণের (যারা সকলেই হচ্ছেন ইমাম) উপর এবং শেষ নবী (সা.) ব্যতীত অন্য সকল নবীর উপরে অবস্থান করছেন ।28

এই বর্ণনায় এটা পরিস্কার হয়েছে যে , হযরত ফাতিমা (আ.) -এর মর্যাদা কোন সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারবে না । আর তিনি শুধুমাত্র পৃথিবীর নারীদের উপরেই নয় বরং বেহেশ্তী নারীদের উপরেও শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন । আল্লাহ তা ’ য়ালা আমাদেরকে তাঁর শাফা ’ য়াত থেকে বঞ্চিত না করুন ইনশাআল্লাহ । আর আল্লাহ তা ’ য়ালা আমাদের নারীদেরকে হযরত ফাতিমাকে অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন ।

2 - হাদীসের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

নবী (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিস :-

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): خیر ﺍﻭﻻﺩﻛﻢ ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ

রাসূল (সা.) বলেছেন : কন্যারাই হচ্ছে তোমাদের উত্তম সন্তান ।29

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): خیرﻛﻢ خیرﻛﻢ ﻟﻨﺴﺎﺋﻪ ﻭ ﻟﺒﻨﺎﺗﻪ

রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের নারী ও কন্যাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে ।30

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ):. خیرﻛﻢ خیر ﻛﻢ ﻻﻫﻠﻪ ﻭ ﺍﻧﺎ خیرﻛﻢ ﻻﻫﻠﻰ ﻣﺎ ﺍﻛﺮﻡ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺍﻻ ﻛﺮﱘ ﻭ ﻻ ﺍﻻ ﻟﺌﻴﻢ

রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার পরিবারের সাথে উত্তম ব্যবহার করে থাকে । আমি আমার পরিবারের সাথে তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যবহারকারী । কেবল মহান ব্যক্তিরাই নারীগণকে সম্মান দিয়ে থাকেন এবং নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তিরাই কেবল নারীদেরকে অপমান ও অপদস্থ করে থাকে ।31

রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তির তিনটি (সচ্চরিত্র) কন্যা সন্তান থাকবে অথবা তিনটি (পবিত্র) বোনের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে , তার জন্য বেহেশ্ত ওয়াজিব হবে ।

রাসূল (সা.) -এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে , ইয়া রাসূলুল্লাহ্! দু টি (সচ্চরিত্র) কন্যা সন্তান অথবা দু টি (পবিত্র) বোনের ভরণ-পোষণকারীও কি এই ছওয়াব পাবে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ , তাকেও এই পুরস্কার দেয়া হবে ।

আবারও প্রশ্ন করা হল যে , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! একটি ( পবিত্র ) কন্যা সন্তান অথবা একটি ( পবিত্র ) বোনের ভরণ - পোষণকারীও কি এই সওয়াব পাবে ? তিনি বললেন : হ্যাঁ , তাকেও এই একই পুরস্কার দেয়া হবে ।32

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺼﺎﺩﻕ (ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ): .. ﺍﺫﺍ ﺁﺫﺍﻫﺎ ﱂ ﻳﻘﺒﻞ ﺍﷲ ﺻﻼﺗﻪ ﻭ ﻻ ﺣﺴﻨﺔ ﻣﻦ ﻋﻤﻠﻪ ﻭ ﻛﺎﻥ ﺍﻭﻝ ﻣﻦ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﻨﺎﺭ

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি তার ¯ স্ত্রীকে কষ্ট দেয় , তাহলে আল্লাহ্ তার নামাযকে কবুল করবেন না এবং তার ভাল ও উত্তম কাজ সমূহকে তার আমলনামায় লেখা হবে না । আর তার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ার কারণে সে প্রথম ব্যক্তি যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে ।33


3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18