জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 40540
ডাউনলোড: 4225

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 40540 / ডাউনলোড: 4225
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

ত্রিত্ববাদী ধারণা

অপরিহার্য সত্তা সম্পর্কে অংশীবাদীদের আরেকটি ধারণা হচ্ছে পিতা , পুত্র ও আত্মা সংক্রান্ত ধারণা। বিচারবুদ্ধির বিচারে এ ধারণাটি সর্বাধিক দুর্বল। কারণ , কখনো বলা হয় যে , পবিত্র পিতা , পবিত্র পুত্র ও পবিত্র আত্মা স্বতন্ত্র , আবার কখনো বলা হয় অভিন্ন। কখনো তিনকে সমপর্যায়ভুক্ত গণ্য করা হয় , কখনোবা অপর দু জনকে পবিত্র পিতার সৃষ্টিরূপে গণ্য করা হয়।

বস্তুতঃ এ মতটি একটি গোলকধাঁধা সৃষ্টিকারী কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তিশীল , কোনোরূপ প্রকৃত দার্শনিকতার ওপর ভিত্তিশীল নয়। কারণ , অপরিহার্য সত্তাকে অনিবার্যভাবেই সত্তা ও গুণের দিক থেকে অভিন্ন ও অবিভাজ্য হতে হবে। অন্যথায় সে হবে অসম্পূর্ণ ও নির্ভরশীল সত্তা। এমনকি তাকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে চিন্তা করলে সে ক্ষেত্রে সে তার অংশসমূহের ওপর এবং তার অংশসমূহ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হবে। এরূপ নির্ভরশীল সত্তা অপরিহার্য সত্তা হতে পারে না। অতএব , তিনে এক এবং এক তিন হতে পারে না। আর পবিত্র পুত্র ও পবিত্র আত্মা যদি পবিত্র পিতার সৃষ্টি হয়ে থাকে তো সে ক্ষেত্রে এতদুভয় হবে সম্ভব সত্তা। আর সম্ভব সত্তা অপরিহার্য সত্তা নয়।

অপরিহার্য সত্তা সকল প্রকার অপূর্ণতা ও অভাব-অভিযোগ থেকে মুক্ত। অতএব , তিনি সন্তান , স্ত্রী ও পরিবারের প্রয়োজনীয়তা থেকে মুক্ত। বিশেষ করে কোনো সম্ভব সত্তাকে তাঁর পক্ষে পুত্র হিসেবে পরিগ্রহণ করা সম্ভব নয়।

মানুষের মধ্যে যে সন্তান লাভের সহজাত আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান তার জন্য দায়ী তার বিভিন্ন ধরনের অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা। সন্তানের মাধ্যমে তার এ অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা আংশিক হলেও পূরণ হয় এবং এ কারণেই সে সন্তানের প্রয়োজন অনুভব করে। যেহেতু পরম প্রমুক্ত ও সকল পূর্ণতার পূর্ণ মাত্রায় অধিকারী অপরিহার্য সত্তার কোনোরূপ অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা নেই সেহেতু তিনি সন্তান জন্মদানের বা পরিগ্রহণের প্রবণতা থেকে মুক্ত হতে বাধ্য।

অন্যদিকে যে কোনো প্রজাতির সন্তান সমপ্রজাতির হয়ে থাকে। সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যকার ব্যবধান দুই প্রজাতির মধ্যকার ব্যবধানের তুলনায় কোটি কোটি গুণ বেশী। কোনো মানুষ যদি একটি প্রস্তরকণা বা একটি মৃত পোকাকে হাতে তুলে নেয় এবং বলে যে , আমি এটাকে পুত্ররূপে পরিগ্রহণ করলাম , তাহলে তা যতোখানি পাগলামি হবে , অপরিহার্য সত্তা সর্বস্রষ্টা কর্তৃক কোনো সৃষ্টিকে - তা সে সৃষ্টি যতো উন্নত মানের ও যতখানি পূর্ণতার অধিকারীই হোক না কেন - পুত্ররূপে পরিগ্রহণের ধারণা পোষণ মানে তাঁর ওপর এর চেয়ে কোটি কোটি গুণে বেশী মাত্রার পাগলামি আরোপ বৈ নয়।

আর পুত্রকে যদি সৃষ্টিসত্তা গণ্য না করে অপরিহার্য সত্তারূপে গণ্য করা হয় সে ক্ষেত্রে তা এক অপ্রকৃত ও অসম্ভব দাবী বৈ নয়। কারণ , অপরিহার্য সত্তা সকল প্রকার পূর্ণতাবাচক গুণের পূর্ণতম মাত্রার অধিকারী হতে বাধ্য। অতএব , এরূপ সত্তা একাধিক হতে পারে না। এমনকি তর্কের খাতিরে যদি একাধিক হওয়াকে সম্ভবও গণ্য করা হয় , তো সে ক্ষেত্রে সমমর্যাদাসম্পন্ন দুই অপরিহার্য সত্তার একজনকে পিতা ও অপর জনকে পুত্র গণ্য করা যেতে পারে না। কারণ , একজনকে পিতা ও অপর জনকে পুত্র গণ্য করার পর আর তাদের সমমর্যাদা থাকে না। এমতাবস্থায় যার মর্যাদা হ্রাস পায় (পুত্র) তাকে অপরিহার্য সত্তারূপে গণ্য করা চলে না।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে , কোনো সৃষ্টির ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টি ও গুণবৈশিষ্ট্যের কারণেও তাকে অপরিহার্য সত্তার সন্তান রূপে গণ্য করা যেতে পারে না। বস্তুতঃ মানুষের কাছে যা বিস্ময়কর ও ব্যতিক্রমধর্মী , সর্বশক্তিমান অপরিহার্য সত্তার কাছে তা একটি অতি সাধারণ ব্যাপার মাত্র। অবশ্য তিনি কোনো নিয়মকে সৃষ্টিলোকে কতটা কার্যকর রাখবেন তা তাঁর ইচ্ছার ব্যাপার। যদি বিস্ময়কর কিছু থেকে থাকে তো সে বিস্ময় শুধু পিতা বা মাতা বিহনে কোনো মানুষকে সৃষ্টি করা নয় , বরং পিতা-মাতা উভয় বিহনে প্রথম মানুষের সৃষ্টি। বরং এর চেয়েও বিস্ময়কর হচ্ছে শূন্য থেকে এ সৃষ্টিকর্মের সূচনাকরণ বা সৃষ্টিলোকের আদি উপকরণাদির সৃষ্টিকরণ।

বর্তমানে বস্তুবিজ্ঞানীরা যে স্টিফেন হকিং - এর মত গ্রহণ করে নিয়ে বলছেন যে , একটি আদি কণিকা ( primary particle)থেকে গোটা বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে , যদি সে ধারণাই সঠিক হয়ে থাকে তো বিবর্তনপ্রক্রিয়ায় সমগ্র বস্তুজগত এবং বিবর্তন ও বৈপ্লবিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে প্রাণীজগতের সৃষ্টির চেয়েও কোটি কোটি গুণে বিস্ময়কর হচ্ছে শূন্য থেকে সেই আদি কণিকার সৃষ্টি। অতএব , কোনো মানুষের জন্ম বিস্ময়কর হলেই তাকে ঈশ্বরের পুত্র মনে করার যৌক্তিকতা নেই।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করতে হয় যে , সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত ক্লোনিং পদ্ধতি পিতা ছাড়া শুধু মাতা থেকে সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা প্রমাণিত করেছে। এমতাবস্থায় পিতা ছাড়া শুধু মাতা থেকে জন্মগ্রহণের সাথে ঐশ্বরিকতার অধিকারী হওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই।

কোরআন মজীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মুসলমানদের কাছে হযরত ঈসা (আঃ)-এর পিতাবিহীন জন্ম ও তাঁর মাতার চারিত্রিক পবিত্রতা একটি বিতর্কাতীত বিষয়। কোরআন মজীদের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা এসে হযরত মারইয়াম (আঃ)কে তাঁর গর্ভে একজন নেককার সন্তান জন্মগ্রহণের ঐশী সিদ্ধান্তের সুসংবাদ প্রদান করেন।

সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ক্লোনিং বা ফেরেশতার মুখাপেক্ষী নন। তিনি যা চান তা-ই করতে পারেন এবং যেভাবে চান সেভাবেই করতে পারেন। তাই মুসলমানদের কাছে এই প্রক্রিয়াগত বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়া বা না হওয়ায় কিছু আসে যায় না। সর্বাবস্থায়ই তাদের কাছে হযরত ঈসা (আঃ)-এর পিতা ব্যতীতই নিষ্পাপ মাতার গর্ভে জন্মগ্রহণের বিষয়টি অকাট্য সত্য। কিন্তু এ ধরনের ব্যতিক্রমী জন্মের কারণে তাঁকে খোদার পুত্র গণ্য করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ , একই সূত্র (কোরআন মজীদ) তাঁকে মানুষ , আল্লাহর বান্দাহ্ (দাস) ও আল্লাহর নবী বলে জানিয়েছে।

অবশ্য কোরআন মজীদের ভাষ্য অনুযায়ী তৎকালীন বনি ইসরাঈলের নিকটও প্রকৃত সত্য অজানা ছিলো না। কারণ , হযরত ঈসা (আঃ) জন্মের পর মাতৃক্রোড়ে থেকেই কথা বলেন এবং নিজেকে আল্লাহর নবী বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোরআন মজীদ ছাড়া আর কোনো প্রমাণ্য দলীল নেই। ইয়াহূদীরা জেনেশুনে স্বেচ্ছায় সত্য গোপন করেছে এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এ অপবাদ খণ্ডনের ক্ষেত্রে ইনজীলের বর্তমান সংস্করণসমূহ থেকে কোনোভাবে উপকৃত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ , বর্তমানে ইনজীল নামে যা চালু আছে তা হচ্ছে প্রকৃত ইনজীলের (আংশিক) বাণী , হযরত ঈসা (আঃ)-এর কথা ও জীবনকাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট লেখকদের বক্তব্যের সংমিশ্রণ। কেউ যদি রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন এবং তাতে তাঁর কিছু কথা (হাদীছে ক্বাওলী) ও কোরআন মজীদের কতক আয়াত উদ্ধৃত করেন , যেমন: যদি বলেন যে , এ ঘটনা প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হলো যে , ... , তাহলে কেবল ঐ গ্রন্থের সাথেই বর্তমানে প্রচলিত ইনজীলের বাকবিন্যাসের বা রচনারীতির তুলনা করা চলে। তদুপরি ইনজীলের রয়েছে ডজন ডজন সংস্করণ যা প্রমাণ করে যে , এ গ্রন্থ তার মূল রূপে বিদ্যমান নেই , বরং বিকৃত হয়ে গেছে।

এতদসত্ত্বেও প্রচলিত ইনজীলকে তর্কের খাতিরে প্রামাণ্য বলে ধরে নিলেও তা ইয়াহূদীদের দেয়া অপবাদ খণ্ডনের ক্ষেত্রে তা কাজে আসবে না। কারণ , প্রথমে প্রমাণ করতে হবে যে , হযরত ঈসা (আঃ) নবী ছিলেন। কেবল এর পরই তাঁর ওপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাব ইনজীল (যদি প্রমাণ করা যায় যে , তা অবিকৃতভাবে বর্তমান আছে) দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। যে ব্যক্তিকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর নবুওয়াত (খৃস্টানদের দাবী অনুযায়ী খোদার পুত্র হওয়ার বিষয়টি) মেনে নেয়ার জন্য দাও আত দেয়া হবে তার কাছে পূর্ব থেকেই ইনজীলের কোনো মূল্য থাকতে পারে না। তার কাছে ইনজীলের মূল্য হবে হযরত ঈসা (আঃ)কে নবী হিসেবে গণ্য করার পর।

অতএব , হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রতি কাউকে দাও আত দিতে হলে তা দিতে হবে বিচারবুদ্ধির ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি দাও আত দেয়ার জন্য কোরআন মজীদই হচ্ছে একমাত্র দলীল। কিন্তু যারা কোরআন মজীদকে ঐশী কিতাব হিসেবে জানে না তাদের পক্ষে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে কোরআন মজীদের দলীল থেকে সাহায্য গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যারা কোরআন মজীদের ঐশিতা সম্বন্ধে নিশ্চিত নয় তাদের কাছে হযরত ঈসা (আঃ)-এর খোদার পুত্র অথবা নবী বলে পরিগণিত হওয়া তো দূরের কথা , তাঁর জন্মের বিষয়টিই সংশয়াচ্ছন্নরূপে গণ্য হতে বাধ্য। এমতাবস্থায় এহেন ব্যক্তিকে খোদার পুত্র বলে দাবী করা কেবল বিচারবুদ্ধি বর্জনকারী কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ দাবীদারদের পক্ষেই সম্ভব।

দেবদেবীদের ঈশ্বরের কর্মগত অংশীদার হওয়ার ধারণা

অংশীবাদী ধ্যানধারণাসমূহের মধ্যে সব শেষে যেটির ওপর আলোকপাত করতে হয় তা হচ্ছে , দেব-দেবীরা সত্তাগতভাবে ঈশ্বরের অংশীদার নয় , বরং কর্মগত দিক থেকে তাঁর অংশীদার ; তারা ঈশ্বরের বিশেষ ধরনের উন্নততম সৃষ্টি এবং স্বয়ং ঈশ্বরের পক্ষ থেকে তাদের ওপর সৃষ্টিকর্ম ও সৃষ্টিলোকের পরিচালনার বিভিন্ন দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যে , অপরিহার্য সত্তা যদি একটি বিশেষ ধরনের বা প্রজাতির সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেন এবং তাদের মাধ্যমে অন্যান্য সৃষ্টিকে সৃষ্টি করতে ও সৃষ্টিজগতের পরিচালনা ব্যবস্থা চালাতে চান , তাতে আপত্তির কিছু নেই ; এটা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কথিত সৃষ্টি সর্বশক্তিমান অপরিহার্য সত্তার ইচ্ছার বাইরে চলার স্বাধীনতা পাবে - এটা সম্ভব নয়। এরূপ সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার পূর্ণ অনুগত ও সুশৃঙ্খল হতে বাধ্য। এমতাবস্থায় তারা স্বাধীন এক্তিয়ার সম্পন্ন মানুষের চেয়ে উন্নততর হতে পারে না। অতএব , মানুষ তাদের কাছে নত হতে বা তাদের উপাসনা করতে পারে না।

আমরা যদি মেনে নেই যে , সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে সৃষ্টিলোকের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এ ধরনের কোনো বিশেষ সৃষ্টির ওপরে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তাহলেও , এমনকি অপরিহার্য সত্তার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও মানুষের জন্য তাদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করা অপরিহার্য নয়। কারণ , অপরিহার্য সত্তা অনিবার্যভাবেই সকল স্থান ও কালকে আয়ত্ত করে আছেন। অতএব , তিনি সর্বত্র ও সর্বদা বিরাজমান এবং প্রতিটি সৃষ্টিরই নিকটতম অবস্থানে অবস্থান করছেন। কোনো সময় ও কোনো স্থানই তাঁর অস্তিত্ব থেকে শূন্য নয়। অন্য কথায় বলা যেতে পারে যে , গোটা সৃষ্টিলোক তাঁর ইচ্ছাশক্তিতেই অবস্থান করছে , কারণ , ইতিপূর্বেই আমরা প্রমাণ করেছি যে , সৃষ্টিকুল কেবল তাদের অস্তিত্বলাভের জন্যই অপরিহার্য সত্তার ওপর নির্ভরশীল নয় , বরং তাদের স্থিতি বা টিকে থাকার জন্যও প্রতি মুহূর্তেই তাঁর ওপর নির্ভরশীল। অতএব , তাঁর ও সৃষ্টির মধ্যে কোনোরূপ স্থানিক ও কালিক দূরত্ব নেই। সৃতরাং মানুষের আবেদন-নিবেদন তাঁর কাছে পেশ করা অন্য যে কারো কাছে পেশ করার চেয়ে সহজতর। এমতাবস্থায় , সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য অন্য কোনো সৃষ্টির নিকট (এবং সম্ভবতঃ তার নিজের চেয়ে নিমড়বতর সৃষ্টির নিকট) মাথা নত করা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক বৈ নয়।

কোনো মহাবিজ্ঞানী ও মহাশক্তিধর সম্রাটের কোনো প্রজা যদি তাঁর দরবারে গিয়ে তাঁর সামনে হাযির থেকে তাঁকে কুর্নিশ করা ও তাঁর কাছে আবেদন পেশের পরিবর্তে তাঁর দিকে পিঠ দিয়ে , সেখানে ঘুরে বেড়ানো কোনো কম্পিউটার-চালিত রোবটকে কুর্নিশ করে তার প্রশংসাগীতি গাইতে শুরু করে , সে ক্ষেত্রে তাকে ঐ রোবট তো কোনো উপকার করতে পারবেই না , বরং এতে সম্রাটের ক্রোধের উদ্রেক হওয়া এবং লোকটিকে দরবার থেকে বের করে দেয়ার জন্য রোবটদের প্রতি নির্দেশদানের সম্ভাবনা প্রায় সুনিশ্চিত। একজন বিজ্ঞানী-সম্রাটের সাথে আচরণের ব্যাপারটা যদি এ ধরনের হয় , তো সে ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান অপরিহার্য সত্তার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের নির্বুদ্ধিতার পরিণাম অধিকতর মারাত্মক হতে বাধ্য। অতএব , দেখা যাচ্ছে , বিচারবুদ্ধি অপরিহার্য সত্তার সাথে কোনো ধরনের অংশীবাদিতাকেই সম্ভব ও সঠিক বলে গণ্য করে না। কেবল অজ্ঞতা , অন্ধত্ব ও অসচেতনতাই অপরিহার্য সত্তার নিরঙ্কুশ একত্ব প্রত্যাখ্যান ও অংশীবাদকে গ্রহণ করতে পারে।

বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া

মানবমনে চিরন্তন প্রশ্ন: সকল অস্তিত্বের উৎস মহান সৃষ্টিকর্তা পরম জ্ঞানময় অপরিহার্য সত্তা কেন সৃষ্টিকর্মের সূচনা করলেন এবং তা কীভাবে করলেন ? কীভাবে তিনি এতো সব অকল্পনীয় সূক্ষ্মতম সৃষ্টি থেকে শুরু করে অকল্পনীয় বিশাল সৃষ্টিনিচয়কে অস্তিত্ব দান করলেন এবং কীভাবে এর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করছেন ? বিষয়টি কি এরূপ যে , তিনি সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার সূচনা করে দিয়েছেন , অতঃপর সব কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে এবং তাঁর আর কিছুই করার নেই ? নাকি এরূপ কোনো স্বয়ংক্রিয়তার স্থান নেই , বরং প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি সৃষ্টিই তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকার দ্বারা অস্তিত্ব লাভ করছে ও সামনে এগিয়ে চলছে ? বিচারবুদ্ধি এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে কী বলে ?

সৃষ্টিকর্ম স্রষ্টাগুণের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ

প্রথমেই প্রশ্ন জাগে , তিনি কেন সৃষ্টিকর্মের সূচনা করলেন ? পরম প্রমুক্ত অপরিহার্য সত্তা তো সকল অপূর্ণতা ও সকল প্রয়োজন থেকে মুক্ত , তাহলে তিনি সৃষ্টির সূচনা করলেন কেন ?

বিচারবুদ্ধি এ ক্ষেত্রে সহজেই যে উপসংহারে উপনীত হয় তা হচ্ছে , অনস্তিত্ব যেমন নেতিবাচক , তেমনি অস্তিত্ব হচ্ছে ইতিবাচক। পরম প্রমুক্ত অপরিহার্য সত্তা সতত বিদ্যমান ও চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী। অতএব , তিনি ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতার মধ্যবর্তী নিরপেক্ষতা -রূপ কোনো কাল্পনিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নন। বরং তিনি ইতিবাচক , আর সৃষ্টিকর্ম সম্পাদনও একটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য। আর যেহেতু তিনি সকল প্রকার ইতিবাচক গুণবৈশিষ্ট্যের পূর্ণতম মাত্রার অধিকারী , সেহেতু তিনি সৃষ্টিক্ষমতারও অধিকারী। অতএব , তাঁর এ সৃষ্টিক্ষমতার ইতিবাচক বহিঃপ্রকাশ ঘটবে - এটাই তো স্বাভাবিক। তাই সৃষ্টিকর্ম তাঁর জন্য কোনো প্রয়োজন নয় , বরং তাঁর সৃষ্টিক্ষমতার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ।

স্বতঃস্ফূর্ততা মানে স্বয়ংক্রিয়তা নয়

অপরিহার্য সত্তার সৃষ্টিকর্ম তাঁর স্রষ্টাক্ষমতার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ , কিন্তু এই স্বতঃস্ফূর্ততা মানে স্বয়ংক্রিয়তা হতে পারে না। কারণ , সৃষ্টিলোকের অস্তিত্বলাভ ও তা অব্যাহত থাকা এবং তার এগিয়ে চলাকে স্বয়ংক্রিয় গণ্য করার মানে হচ্ছে বিষয়টি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার তথা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা। এরূপ ধারণা মানে কার্যতঃ তাঁর প্রতি যান্ত্রিকতা তথা প্রকারান্তরে এক ধরনের অক্ষমতা আরোপ বৈ নয়। কিন্তু তিনি যে কোনো ধরনের অক্ষমতা থেকে প্রমুক্ত। তাই বিচারবুদ্ধির রায় হচ্ছে এই যে , সৃষ্টিলোক সর্বাবস্থায়ই তাঁর ইচ্ছাশক্তির আওতাধীন।

তিনি প্রাকৃতিক বিধানের স্রষ্টা

অনেকের ধারণা হচ্ছে এই যে , পরম প্রমুক্ত সৃষ্টিকর্তা ছোট-বড় প্রতিটি সম্ভব-অস্তিত্বের সৃষ্টি , স্থিতি ও সামনে এগিয়ে চলা সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এরূপ ধারণা তাঁর মহাবিজ্ঞানময়তার বৈশিষ্ট্যের সাথে মোটেই সামঞ্জস্যশীল নয়। কারণ , বিচারবুদ্ধি লক্ষ্য করে যে , অধিকতর মর্যাদাবান কর্তা সব কাজ নিজে করতে সক্ষম হলেও সব কিছু নিজেই করেন না। উদাহরণস্বরূপ , এক ব্যক্তি তার শারীরিক শক্তি দ্বারা কোনো কাজ সম্পাদন করে এবং অপর এক ব্যক্তি একটি যন্ত্র তৈরী করে ও তা চালানোর জন্য চালক নিয়োগ করে একই কাজ সেই যন্ত্রের সাহায্যে সম্পাদন করে। এ ক্ষেত্রে আমরা দ্বিতীয়োক্ত ব্যক্তিকে অধিকতর মর্যাদাবান কর্তা হিসেবে গণ্য করে থাকি।

সুতরাং মহাজ্ঞানময় অপরিহার্য সত্তার জন্য সামঞ্জস্যশীল হচ্ছে এটাই যে , তিনি সৃষ্টিকরণ এবং সৃষ্টির স্থিতি ও এগিয়ে চলার জন্য নিয়মাবলী বেঁধে দেবেন , আর সব কিছু তদনুযায়ী চলতে থাকবে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় এ ধরনের নিয়মাবলী প্রত্যক্ষ করি যেগুলোকে আমরা প্রাকৃতিক বিধান বলে থাকি।

তিনি স্বাধীন সৃষ্টির কাজে হস্তক্ষেপ করেন

আমরা লক্ষ্য করছি যে মহাজ্ঞানময় সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিকুলের জন্য অনতিক্রম্য প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর আওতায় তাঁর কতক সৃষ্টিকে কতক ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন। অর্থাৎ সৃষ্টি ও তার এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে তিনি নিজে যেমন স্বয়ংক্রিয়তার উর্ধে তেমনি তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিকে সকল ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিধানের শৃঙ্খলে বেঁধে স্বয়ংক্রিয়তার অধীন করে দেন নি। সেহেতু যে সব সৃষ্টিকে তিনি কতক ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন তারা কীভাবে এ স্বাধীনতাকে কাজে লাগায় সে ব্যাপারে তিনি দৃষ্টি রাখবেন এবং যেখানেই সৃষ্টির ব্যক্তিক বা সামষ্টিক স্বার্থে বা গোটা সৃষ্টিলোকের সৃষ্টি-উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নের স্বার্থে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে সেখানে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন - এটাই স্বাভাবিক।

আর এটা সুস্পষ্ট যে , সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি রাখা ও প্রয়োজনবোধে হস্তক্ষেপ তাঁর নিজের প্রয়োজনে নয় , বরং সৃষ্টিরই প্রয়োজনে। যেহেতু তিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্বদান করেছেন সেহেতু সৃষ্টির প্রয়োজনে ইতিবাচক হস্তক্ষেপ করবেন - এটাই তাঁর সৃষ্টিক্ষমতার দাবী এবং এ দাবী পূরণে কার্পণ্য করার মতো দুর্বলতা থেকে তিনি প্রমুক্ত।

অনবরত নব নব সৃষ্টি

যেহেতু অপরিহার্য সত্তার সৃষ্টিক্ষমতা অসীম , সেহেতু কতক সৃষ্টিকে (তার সংখ্যা যত ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়নই হোক না কেন) অস্তিত্বদান বা অস্তিত্বে আনয়নের প্রক্রিয়ার সূচনা করে দেয়ার পর তিনি আরো নতুন নতুন ধরনের সৃষ্টিকে অস্তিত্বদানের প্রক্রিয়ার সূচনা করা থেকে বিরত থাকতে পারেন না। কারণ , সে ক্ষেত্রে তা হবে তাঁর স্রষ্টাক্ষমতা কার্যতঃ স্থগিত হয়ে যাওয়ার সমতুল্য। বরং তিনি সদাসর্বদাই নতুন নতুন ধরনের সৃষ্টিকে অস্তিত্বদান ও নতুন নতুন ধরনের সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার সূচনা করবেন এটাই তাঁর অসীম সৃষ্টিক্ষমতার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশের দাবী। তবে বলা বাহুল্য যে , এটা তাঁর জন্য অনিবার্য বা অপরিহার্য হতে পারে না। বরং এটা সম্পূর্ণরূপেই তাঁর ইচ্ছাশক্তির অধীন , আর তাঁর ইচ্ছাশক্তি তাঁর ইতিবাচক গুণাবলীরই অন্যতম।

তাহলে বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে আমরা অপরিহার্য সত্তা কর্তৃক সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কয়েকটি সত্যে উপনীত হতে পারি। এ সত্যগুলো হচ্ছে:

তিনি অসীম সৃষ্টিক্ষমতার অধিকারী এবং অনবরত সৃষ্টি করে চলেছেন।

সৃষ্টিকর্ম তাঁর সৃষ্টিক্ষমতার স্বতঃস্ফূর্ত ইতিবাচক বহিঃপ্রকাশ , কিন্তু এ স্বতঃস্ফূর্ততা মানে স্বয়ংক্রিয়তা নয় এবং তিনি এরূপ সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদনে বাধ্য নন।

তিনি সৃষ্টিসমূহের সূচনা করেছেন এবং তার স্থিতি ও অগ্রগতির জন্য নিয়মাবলী (প্রাকৃতিক বিধিবিধান) বেঁধে দিয়েছেন। সব কিছু এ নিয়মের আওতায় চলছে।

তাঁরই নির্ধারিত প্রাকৃতিক বিধিবিধানের আওতায় তিনি কতক সৃষ্টিকে কিছুটা স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং তাদের কর্মের প্রতি সর্বদা দৃষ্টি রাখেন ও তাদেরই প্রয়োজনে অনেক সময় তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেন।

সৃষ্টির কাজে স্রষ্টার হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা

এখানে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী সৃষ্টির কাজে তাদেরই প্রয়োজনে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপকরণ সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে মনে হয়। কারণ , প্রশ্ন উঠতে পারে যে , পরম জ্ঞানময় সৃষ্টিকর্তা তো সৃষ্টিকর্ম সম্পাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকালেই তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির অনাগত ভবিষ্যৎ প্রয়োজন সম্পর্কে জানেন এবং সে প্রয়োজন পূরণের উপযোগী করে প্রাকৃতিক বিধিবিধান প্রণয়ন করেই সৃষ্টির সূচনা করেন। এমতাবস্থায় কী করে নতুন প্রয়োজন দেখা দিতে পারে - যা পূরণের লক্ষ্যে তাঁকে সৃষ্টির কাজে হস্তক্ষেপ করতে হবে ?

বিচারবুদ্ধির সামান্য প্রয়োগ করলেই আমরা এ প্রশ্নের জবাব পেতে পারি। আমরা বিচারবুদ্ধির দ্বারা বুঝতে পারি যে , এ সৃষ্টিলোকের সৃষ্টিনিচয় গুণগতভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত। আমাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার আওতাধীন সৃষ্টিনিচয়ের মধ্যে কোনো কোনো সৃষ্টি প্রাকৃতিক নিয়মের কঠিন নিগড়ে বাঁধা বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় - যা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলেছে এবং যার কোনোরূপ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তি নেই। কিন্তু অপর কতক সৃষ্টি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী। এ সব সৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতার মাত্রা ও পর্যায়ের ক্ষেত্রে পারস্পরিক পার্থক্য রয়েছে।

স্রষ্টার পক্ষ থেকে তাদেরকে ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা প্রদানের মানেই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা তাদের ভবিষ্যতকে , সরাসরিই হোক বা প্রাকৃতিক বিধিবিধানের দ্বারাই হোক , শতকরা একশ ভাগ অপরিবর্তনীয় করে বেঁধে দেন নি এবং স্রষ্টা তাদের জন্য যা করা ও যেমনটি হওয়া পসন্দ করেন তেমনটি হওয়া ও তা করার জন্য তাদেরকে বাধ্য করেন না। তিনি তাদেরকে কতক প্রাকৃতিক বিধিবিধানের বিরুদ্ধে (যেমন: সহজাত প্রবণতার বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ করার ক্ষমতা ও সুযোগ দিয়েছেন। এমনকি তারা চাইলে স্রষ্টার পসন্দ-অপসন্দের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারবে ; তিনি তাদেরকে সে সুযোগও দিয়েছেন , যদিও বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে এটা সুনিশ্চিত যে , তিনি পসন্দ করেন না যে , তারা এমনটি করুক। অর্থাৎ কতক সৃষ্টিকে তিনি যে ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন তার দাবী মিটাতে গিয়ে তিনি তাদেরকে তাঁর পসন্দনীয় কাজ সম্পাদনে ও তাঁর অপসন্দনীয় কাজ সম্পাদন থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করেন না।

বলা বাহুল্য যে , ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতার অধিকারী এই সৃষ্টিনিচয় প্রকৃতিক বিধিবিধানে পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম না হলেও প্রাকৃতিক বিধিবিধানের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ করতে পারে - যার পরিণতিতে সৃষ্টিলোকের গতিধারায় কমবেশী নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার লাভ করে। ক্ষেত্রবিশেষে এ নেতিবাচক প্রভাব এতোখানি হতে পারে যে , তা সৃষ্টিলোকের শৃঙ্খলা ও লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে পারে বা অন্য সৃষ্টির স্বাভাবিক দাবীকে নস্যাৎ করতে পারে। এমতাবস্থায় সামগ্রিকভাবে সৃষ্টিলোকের বা তার অংশবিশেষের দাবী মিটাতে গিয়ে বা সৃষ্টিলোককে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বার্থে তিনি ঐ সব সৃষ্টির কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক হস্তক্ষেপ করবেন এটাই বিচারবুদ্ধির দাবী।