জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 40467
ডাউনলোড: 4219

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 40467 / ডাউনলোড: 4219
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

পরকালীন জীবন সম্ভব কি ?

আমাদের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে , মানবপ্রকৃতির জোরালো দাবী হচ্ছে , মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন থাকা উচিত যেখানে পার্থিব জীবনের ভালো-মন্দের প্রতিদান দেয়া হবে এবং পার্থিব জীবনে প্রাপ্ত অসম্পূর্ণ প্রতিদানকে সম্পূর্ণ করা হবে। সর্বোপরি , মানুষ তার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা কামনা করে , সে তার বিলুপ্তিকে মোটেই পসন্দ করে না। অতএব , মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন থাকা অপরিহার্য।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , এ ধরনের জীবন সম্ভব কি ? এ ব্যাপারে বিচারবুদ্ধির রায় হচ্ছে , তা অবশ্যই সম্ভব। কারণ , প্রথম বার সৃষ্টির তুলনায় ধ্বংসপ্রাপ্ত সৃষ্টিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা বা নতুন করে সৃষ্টি করা অপেক্ষাকৃত সহজতর। অতএব , যে পরম ক্ষমতাবান সৃষ্টিকর্তা সব কিছুকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষে সৃষ্টিপ্রকৃতিতে তাঁরই দেয়া দাবী পূরণ করা তথা মানুষকে মৃত্যুর পরে নতুন করে জীবনদান খুবই সহজসাধ্য।

এ প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে , মানুষ হচ্ছে শরীর ও ব্যক্তিসত্তা (নাফ্স্)-এর সমন্বিত রূপ। বিচারবুদ্ধির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে এই যে , মানুষের ব্যক্তিসত্তা শরীরকে আশ্রয় করে অবস্থান করলেও সে শরীর নয় , স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র হবার কারণেই ব্যক্তিসত্তা শরীরের বা তার ইন্দ্রিয়-নিচয়ের মুখাপেক্ষী না হয়েও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

মানুষ পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়াই চিন্তা ও কল্পনা করে থাকে। এছাড়া প্রায় মৃত্যুর অভিজ্ঞতা (এনডিই)-এর অনেক বর্ণনা থেকেও মানুষের ব্যক্তিসত্তার শরীরনিরপেক্ষ ক্ষমতার ধারণা পাওয়া যায়। প্রায় মৃত্যুর অভিজ্ঞতা বর্ণনাকারীরা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকাকালে অপার্থিব জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে বলে দাবী করে সে অভিজ্ঞতার যে সব বর্ণনা উপস্থাপন করেছে তাতে অতিরঞ্জন থাকার সম্ভাবনা স্বীকার করে নিলেও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাদের ওপর পরিচালিত অস্ত্রোপচার সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী সম্পর্কে কোনো কোনো রোগী সংজ্ঞাপ্রাপ্তির পরে যেভাবে বিস্তারিত ও নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে তা অবিশ্বাস্যভাবে বিস্ময়কর হলেও প্রত্যখ্যান করার উপায় নেই। এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে , মানুষের ব্যক্তিসত্তা শরীরের পুরোপুরি অকেজো অবস্থায়ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , মানুষের যখন মৃত্যু হয় তখন তার শরীরই অকেজো হয়ে পড়ে , তার ব্যক্তিসত্তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। অর্থাৎ তার ব্যক্তিসত্তার মৃত্যু নেই। এমতাবস্থায় মৃত্যুপরবর্তীকালে ব্যক্তিকে পুনর্জীবন দানের বিষয়টি খুবই সহজবোধগম্য হয়ে যায়। তাই মানুষের সৃষ্টিপ্রকৃতির দাবী হওয়া সত্ত্বেও সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না - এটা হতেই পারে না।

মৃতদের শরীর সাধারণতঃ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অধিকাংশ মানুষের শরীরই পচে-গলে মাটিতে মিশে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে অনেকের শরীর পানিতে গলে যায় বা মাছের পেটে যায় , বা হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠতে পারে যে , বিক্ষিপ্ত শরীরকে কীভাবে পুনঃসংযোজিত করে জীবিত করা হবে ? নাকি তাকে নতুন শরীর দেয়া হবে ? নতুন শরীর দেয়া হলে তখন কি তাকে অভিন্ন ব্যক্তি বলা যাবে ? যদি অভিন্ন ব্যক্তি না হয় তাহলে তার জন্য পার্থিব জীবনের কর্মের বিনিময়ে শাস্তি বা পুরষ্কার দেয়া কি ঠিক হবে ?

এ প্রশ্নের সর্বপ্রথম নীতিগত জবাব হচ্ছে , সর্বশক্তিমান স্রষ্টার পক্ষে একটি শরীরের বিক্ষিপ্ত উপাদানগুলোকে একত্রিত করা মোটেই কঠিন নয়। তবে ব্যক্তিকে যদি নতুন শরীর দেয়া হয় তাহলেও ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা অভিন্নই থেকে যায়।

আধুনিক শরীর বিজ্ঞানের সাক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিটি প্রাণশীল সৃষ্টির শরীর অহরহ পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। প্রতিনিয়তই একজন মানুষের শরীরের বহু কোষ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এবং তদস্থলে নতুন নতুন কোষ তৈরী হচ্ছে। এভাবে কয়েক বছরের ব্যবধানে তার গোটা শরীরের সকল কোষই পরিবর্তিত হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও আমরা তাকে অভিন্ন ব্যক্তি বলে দাবী করি এবং সে নিজেও তা-ই মেনে নেয়। যে ব্যক্তি বিশ বছর পূর্বে কোনো অপরাধ করেছে বিশ বছর পর ধরা পড়লে সে বলে না , আমি বিশ বছর আগে অপরাধ সংগঠনকারী সেই ব্যক্তি নই ; সে ব্যক্তির মাংসপেশীর একটি কোষও আমার শরীরে নেই ; সম্পূর্ণ নতুন কোষে গড়া শরীরের কারণে আমি সম্পূর্ণ নতুন মানুষ। যেহেতু শরীর নয় , ব্যক্তিসত্তাই আসল ব্যক্তি এবং শরীর হচ্ছে ঐ ব্যক্তির শরীর , এমতাবস্থায় সৃষ্টিকর্তা যদি লোকদেরকে নতুন শরীর দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করেন তাহলেও তা অন্যায় হওয়া তো দূরের কথা , অযৌক্তিকও হবে না।

তবে সীমাহীন জ্ঞান ও শক্তি-ক্ষমতার অধিকারী সৃষ্টিকর্তা কোনো ব্যক্তির মৃত্যুকালীন সর্বশেষ শরীরের সকল বিক্ষিপ্ত অণু-পরমাণুকে একত্রিত করতে চাইলে তা-ও মোটেই কঠিন হতে পারে না। কারণ , আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে , একজন মানুষের (বা একটি প্রাণীর) শরীরের সকল কোষের জেনেটিক কোড অভিন্ন এবং প্রতিটি প্রাণীর জেনেটিক কোড স্বতন্ত্র। এমতাবস্থায় যতো দূরে ও যেভাবেই বিক্ষিপ্ত থাকুক না কেন , অভিন্ন জেনেটিক কোডের উপাদানগুলোকে একত্রিত করা মহাবিজ্ঞানময় সৃষ্টিকর্তার পক্ষে মোটেই কঠিন নয়।

দু টি সংশয়ের নিরসন

এ প্রসঙ্গে দু টি সন্দেহ উদ্রেককারী প্রশ্নের জবাব দেয়া প্রয়োজন মনে করি। প্রথম প্রশ্ন এই যে , বিভিন্ন কারণে কিছু সংখ্যক মানুষের মৃতদেহ বা তার কোষসমূহ বা কোষসমূহের অংশবিশেষ আপাততঃ অক্ষত থাকলেও তা অনাগত হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ বছরে পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি তা যদি না-ও হয় তথাপি বেশীর ভাগ মানুষের শরীরের কোষসমূহ যে বিক্ষিপ্ত হয়ে মাটি ও পানিতে মিশে যাবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। অর্থাৎ সেগুলো আর কোষ আকারে থাকছে না , বরং বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তা প্রকৃতিতে বিরাজমান অনুরূপ উপাদানসমূহের সাথে একাকার হয়ে যাবে। তাহলে কী করে ব্যক্তির দেহের উপাদানগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করে একত্র করা সম্ভব হবে ?

এ প্রশ্ন যারা তুলছে তাদের জেনেটিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে ধারণা স্বচ্ছ নয়। কারণ , মানুষের জীবন ও পূর্বপুরুষের ইতিহাস যে ক্ষুদ্র এককে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা কোষ নয় , বরং কোষের মধ্যকার ক্ষুদ্রতর একক। এ একক কী ?

বিজ্ঞান উদ্ঘাটন করেছে , প্রতিটি মানবকোষে রয়েছে 46টি ক্রোমোজম ; এর মধ্যে 23টিতে মাতা ও তার পূর্বপুরুষদের এবং 23টিতে পিতা ও তার পূর্বপুরুষদের , আর সবগুলোতেই তার নিজের জীবনেতিহাস জিনের সাহায্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রতিটি কোষে জিনের মোট সংখ্যা এক লাখ - যা ডিএনএ সমূহের মধ্যে বিন্যস্ত রয়েছে এবং ডিএনএ সমূহ ক্রোমোজমের মধ্যে বিন্যস্ত রয়েছে। দু জন মানুষের কোষই শুধু বিভিন্ন নয় , বরং ক্রোমোজম , ডিএনএ ও জিন পর্যন্ত বিভিন্ন। এমনকি দুই যমজের ক্রোমোজমে সর্বাধিক মিল থাকলেও ভ্রুণ অবস্থা থেকেই কিছু না কিছু পার্থক্য থাকেই , অতঃপর , বিশেষ করে ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে এ পার্থক্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতএব , কোষ বিক্ষিপ্ত হয়ে দু জন মানুষের জিন পরস্পর মিশ্রিত হয়ে গেলেও তা অভিন্ন হয়ে যায় না , বরং পার্থক্য থেকেই যায়।

এ হচ্ছে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য। কিন্তু অসম্ভব নয় যে , এর চেয়েও ক্ষুদ্রতর অংশে , এমনকি প্রতিটি পরমাণুতে এবং তার উপাদান ইলেকট্রন , প্রোটোন ও পজিট্রনে পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত রয়েছে যা বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারে নি ; হয়তো ভবিষ্যতে আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে। অতএব , অসীম ক্ষমতাবান স্রষ্টার পক্ষে অভিন্ন কোড (বৈশিষ্ট্য)-এর কারণে শুধু কমান্ডের সাহায্যে এক ব্যক্তির শরীরের বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া পরমাণুগুলোকে পুনঃসংযোজিত করা মোটেই কঠিন হতে পারে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে , কোনো মানুষকে বাঘে বা কুমীরে খেয়ে ফেললে তার শরীর বাঘ বা কুমীরের শরীরে পরিণত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় একই সাথে তার শরীরের উপাদানগুলো বাঘ বা কুমীর এবং মানুষের শরীর হিসেবে পুনর্গঠিত হবে কীভাবে ? শুধু তা-ই নয় , বাঘ বা কুমীরে না খেলেও মানুষের শরীর যখন মাটি হয়ে যায় তখন তার উপাদানসমূহ উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত হয়। অতঃপর উদ্ভিদ বা তার ফল , ফুল ও পাতা মানুষ ও পশুপাখী কর্তৃক ভক্ষিত হয় এবং এরপর পুনরায় মানুষ পশুপাখীকেও ভক্ষণ করে। ফলে এক মানুষের শরীরের উপাদানসমূহ অন্য মানুষদের শরীরের উপাদানে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় ঐ উপাদানগুলোকে কার শরীরের উপাদানরূপে পুনঃসংযোজিত করা হবে ?

এ প্রশ্নটিরও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। কারণ , মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী যখন খাদ্য গ্রহণ করে তখন ঐ খাদ্যবস্তুর পুরোটাই তার শরীরে পরিণত হয় না। বরং এ থেকে সে বিভিন্ন ধরনের এসিড ও আমিষ জাতীয় উপাদান গ্রহণ করে। মানবদেহের একটি কোষে এক লাখ জিন থাকে এবং জৈব রাসায়নিক উপাদান থাকে তিনশ কোটি। এমতাবস্থায় বাঘ মানুষকে খেয়ে ফেললে মানুষের জিনগুলো তার শরীরে থেকে যায় না বা উদ্ভিদ যখন মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে তখন প্রাণীদেহের জিনগুলো তাতে আত্মস্থ হয়ে যায় না। কারণ , তাহলে সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের জিন-কোড এলোমেলো হয়ে যেতো। বরং মানুষ , অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ যখন খাদ্য গ্রহণ করে তখন প্রকৃত পক্ষে তা থেকে কেবল বিভিন্ন ধরনের এসিড ও আমিষ জাতীয় উপাদান আত্মস্থ করে স্বীয় শরীরের কোষসমূহকে শক্তিশালী করে , যার ফলে বিভাজনের মাধ্যমে নতুন নতুন কোষের সৃষ্টি হয় এবং সেগুলো প্রতিনিয়ত বিনষ্ট হয়ে যাওয়া কোষগুলোর স্থান পূরণ করে ; খাদ্যের কোষগুলো খাদ্যগ্রহীতার শরীরের কোষে পরিণত হয় না । অর্থাৎ খাদ্যের ভিতরকার জিনগুলো মাটিতেই থেকে যায় বা ফিরে যায়।

অতএব , সন্দেহ নেই যে , মৃত ব্যক্তির জিনগুলো বা অন্ততঃ তার অংশবিশেষ স্বতন্ত্রভাবে প্রকৃতিতে থেকে যাবেই।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে , কোনো ব্যক্তির শরীর পুনর্গঠনের জন্য তার শরীরের উপাদানসমূহের অংশবিশেষই যথেষ্ট। কারণ , কোনো প্রাণীর শরীরেই সব সময় মোট বস্তুর পরিমাণ সমান থাকে না। অসুস্থতা ও সুস্থতার অবস্থায় শরীরে মোট বস্তুর পরিমাণে বিরাট পার্থক্য ঘটে। প্রাণীদেহের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে , শরীরে বাইরের যে সব উপাদান শোষিত হয় তা বিদ্যমান কোষের পুষ্টিসাধন করে এবং বিভাজন প্রক্রিয়ায় নতুন কোষের সৃষ্টি করে। আর রেকর্ড থেকে রেকর্ডে কপি করার ন্যায় নতুন কোষে পুরনো কোষের সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তায় কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে না। (আর মৃত্যুর আগে প্রাণীর শরীর থেকে যে সব কোষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার জিনে তার ঐ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ থাকে , যদিও ব্যক্তির মৃত্যুর সময়কার কোষের জিনগুলোই গুরুত্বপূর্ণ , কারণ তাতে তার পুরো ইতিহাস লিপিবদ্ধ থাকে।)

এ থেকে সুস্পষ্ট যে , কোনো মানুষের শরীরের পুনঃসৃষ্টির জন্য তার একটিমাত্র কোষের উপাদানসমূহ সংগ্রহ করাই যথেষ্ট। কারণ , একটি কোষে পুষ্টি সংযোজন করে নতুন নতুন কোষ সৃষ্টি করে পুরো শরীরটাই গঠন করা যেতে পারে এবং তা করা ও চোখের পলকের মধ্যে সম্পাদন করা সর্বশক্তিমান স্রষ্টার পক্ষে খুবই সহজ। তবে সর্বময় ক্ষমতাবান সৃষ্টিকর্তা চাইলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুকালীন শরীরের সকল উপাদান একত্রিতকরণও তাঁর জন্য মোটেই কঠিন কাজ নয়।

শাস্তি ও পুরষ্কারঃ শারীরিক, না মানসিক ?

আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, মানবপ্রকৃতি স্বীয় ভালো কাজের উত্তম প্রতিদান ও যালেমের যুলুমের শাস্তি শারীরিকভাবেই দাবী করে- যা একই সাথে মানসিকও বটে, শুধু শারীরিকভাবে নয়।

এছাড়াও আরো দু টি কারণ রয়েছে যা শারীরিক পুনরুজ্জীবন দাবী করে। প্রথমতঃ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোক আছে যাদের সকলের মানসিক গঠন এক প্রকৃতির নয়। যদিও এমন কতক লোকও আছেন যাদের নিকট শারীরিক শাস্তি ও পুরষ্কারের তেমন গুরুত্ব নেই, মানসিক শাস্তি ও পুরষ্কারই মুখ্য। এর বিপরীতে এমন কতক লোক আছে যাদের কাছে শারীরিক শাস্তি ও পুরষ্কারই মুখ্য, মানসিক শাস্তি ও পুরষ্কারের কোনো মূল্য নেই। আর অবশিষ্ট বেশীর ভাগ মানুষের নিকটই শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের শাস্তি ও পুরষ্কারই গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায় সকল মানুষের প্রকৃতির দাবী পূরণের জন্য শারীরিকভাবে পুনরুত্থান অপরিহার্য।

দ্বিতীয়তঃ পার্থিব জীবনে কোনো মানুষই শারীরিক দিক থেকে পরিপূর্ণ পূর্ণতার অধিকারী ছিলো না বা নয়। এ পূর্ণতার তিনটি দিক রয়েছে : বস্তুগত বা কাঠামোগত দিক, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গুণ- বৈশিষ্ট্যগত দিক এবং স্থায়িত্ব। মানুষ মাত্রই এ তিন দিক থেকেই শারীরিক পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষী । এ পূর্ণতার অভাবে সে পার্থিব জীবনে প্রাপ্ত ভোগোপকরণও যথাযথ ও পরিপূর্ণরূপে ভোগ করতে পারে না। এ কারণে সে অতৃপ্ত থাকে ও মনঃকষ্টের শিকার হয়। সে চায়, তার এ অপূর্ণতা না থাকুক, যাতে সে ভোগের সব উপকরণকে স্থায়ীভাবে ও পূর্ণ মাত্রায় ভোগ করতে পারে। তাই সে নিখুঁত অক্ষয় শরীর সহ অনন্ত জীবনের দাবীদার এবং সৃষ্টিকর্তার পক্ষে তার এ দাবী পূরণ করা খুবই সহজসাধ্য।

তবে বলা বাহুল্য যে, যারা দুনিয়ার জীবনে অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হয়েছে, যুলুম-অত্যাচার করেছে, নিজেদের মানবিক ব্যক্তিসত্তাকে কলঙ্কিত ও বিকৃত করেছে, তাদেরকে অবশ্যই এ সব কারণে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এমতাবস্থায় তাদের পক্ষে কাঠামোগত এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গুণ-বৈশিষ্ট্যগত শারীরিক পূর্ণতা সহ স্বীয় অপূর্ণ আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের সুযোগ পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, শারীরিক-মানসিক পূর্ণতা ও শারীরিক-মানসিক ভোগোপকরণের পরিপূর্ণ তৃপ্তি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত পুরষ্কার ও অনুগ্রহ- যা শাস্তির বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। তবে অপরাধীদের জন্যে একটি পূর্ণতার অধিকারী হওয়া স্বাভাবিক, বরং অপরিহার্য। তা হচ্ছে, তাদেরকে অনন্ত শাস্তি ভোগ করানোর লক্ষ্যে অনন্ত জীবনের ও স্থায়ী দেহের অধিকারী করা হবে।

যাদের অপরাধ এমনই যে, কোনোভাবেই তাদেরকে একটি মেয়াদের জন্য শাস্তিদানের পর মুক্তি দেয়া সঙ্গত নয় তাদের জন্য অনন্ত শাস্তির ব্যবস্থা থাকাই বিচারবুদ্ধির দাবী। আর অনন্ত শাস্তির জন্য প্রয়োজন অনন্ত জীবন ও শরীরের স্থায়িত্ব। অবশ্য যাদের অপরাধ অপেক্ষাকৃত কম এবং একই সাথে তাদের ভালো কাজও রয়েছে এমন লোকদের জন্য মেয়াদী শাস্তি শেষে কোনো না কোনো স্তরের ভোগোপকরণসহ অনন্ত জীবন হওয়াই স্বাভাবিক।

অপরাধীদের শাস্তির বিষয়টিকে লোহার তৈরী উপকরণাদির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যে সব লৌহজাত উপকরণে খুবই সামান্য মরিচা পড়ে তা শিরীষ কাগজ বা রেত্ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার ও ঝকঝকে তকতকে করা যায়। কিন্তু যে সব উপকরণে বেশী মরিচা পড়ে তা আগুনে পোড়াতে হয় ও এরপর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কার্যোপযোগী করতে হয়। কিন্তু যে উপকরণের পুরোটাই মরিচায় পরিণত হয় তা আগুনে পোড়ানোর পর আর সেখান থেকে কিছুই ফেরত আসে না, বরং তার পুরোটাই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আগুনের ভিতরই পড়ে থাকে।

পরকালীন হিসাব-নিকাশ

যিনি প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষে পুনর্বার সৃষ্টি করা যে খুবই সহজ- এ সহজ বিষয়টি বুঝতে না পারা কোনো সুস্থ বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন লোকের পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু পরকালীন হিসাব-নিকাশ অর্থাৎ বিচারের বিষয়টি সম্পর্কে অনেকের মনেই প্রশ্ন সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

অবশ্য এ ব্যাপারে কারো মনেই বিন্দুমাত্র সংশয় থাকার কারণ নেই যে, সকল কাল-কে আয়ত্তকারী কালোর্ধ অপরিহার্য সত্তা অবশ্যই সব কিছু দেখেন, শোনেন ও জানেন। অতএব, কোনো অপরাধীর অপরাধ সম্বন্ধে তাঁর নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে এবং পরিপূর্ণরূপে জানা থাকার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। সুতরাং তিনি যে যথার্থভাবেই অপরাধী ও অপরাধ চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি দিতে সক্ষম তা অকাট্য সত্য। কিন্তু আমরা পার্থিব জগতের আদালতে দেখতে পাই যে, সাধারণতঃ অপরাধী তার অপরাধ স্বীকার করে না, বরং নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবী করে। তাই অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্য অকাট্য দলীল ও সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রয়োজন হয়। এমনকি এর পরেও অপরাধী দাবী করে যে, তার বিরুদ্ধে যে সব দলীলপ্রমাণ হাযির করা হয়েছে তা মিথ্যা ও জাল এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ানো হয়েছে । আর অপরাধী শুধু অভিযোগকারী, তাকে সহায়তা-দানকারী আইনজীবী ও সাক্ষীদেরকেই ষড়যন্ত্রের জন্যে দোষারোপ করে না, ক্ষেত্রবিশেষে বিচারককে, এমনকি তার নিজের আইনজীবীকেও দোষারোপ করে। (আর দুনিয়ার বিচারব্যবস্থায় বাস্তবেও অনেক সময় এমনটি ঘটে থাকে।) এমতাবস্থায় অপরাধী পরকালীন আদালতেও যে একইভাবে নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবী করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?

এ কারণে পরকালীন আদালতে অপরাধীর অপরাধ এমনভাবে প্রমাণিত হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে সে তা অস্বীকার করতে না পারে। ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্র বা ভিডিও আবিষ্কারের পর এ প্রশ্নের মোটামুটি উত্তর পাওয়া যায়। কারণ, সবাই জানে যে, ফটো ও প্রামাণ্য ভিডিও চলচ্চিত্র মিথ্যা বলে না। মানুষ যখন ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্র আবিষ্কার করতে পেরেছে তখন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার পক্ষে মানুষের সমস্ত কাজকর্ম কোনো এক ধরনের, হয়তো ভিন্ন মাত্রার, ফটো ও চলচ্চিত্র আকারে ধরে রাখা ও শেষ বিচারের সময় তা প্রদর্শন করা খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার। (অবশ্য বর্তমানে ফটো ও চলচ্চিত্রে পরিবর্তন সাধন অর্থাৎ সংশোধন ও পুনঃসংযোজন করা সম্ভবপর হচ্ছে, তবে এরূপ কাজ করা হলে তা সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, বিশেষতঃ উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রের সাহায্যে চিহ্নিত করা সম্ভব।)

কিন্তু জেনেটিক বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার-উদ্ভাবন এমনই বিস্ময়কর যে, তার তুলনায় ফটোগ্রাফি ও চলচ্চিত্র খুবই তুচ্ছ ব্যাপার। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে উদ্ঘাটন করেছেন যে, মানুষের (এবং অন্যান্য প্রাণীরও) শরীরের মাংসপেশীর প্রতিটি কোষের জিন্ -এর মধ্যে তার নিজের ও তার পূর্বপুরুষদের সারা জীবনের পুরো ইতিহাস সঙ্কেত আকারে লিপিবদ্ধ রয়েছে। অর্থাৎ কোষটিকে যখন শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় (বা ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে) তার পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিটির জীবনের পুরো ইতিহাস, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার মায়ের জীবনের ও মাতৃগর্ভে পিতার প্রাণবীজ প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত পিতার জীবনের ইতিহাস এবং এভাবে দাদা-দাদী ও নানা-নানীর, তাদের দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জীবনেতিহাস, এভাবে অতীতে যেতে যেতে প্রথম মানুষ পর্যন্ত পূর্ববর্তীদের ইতিহাস জেনেটিক কোড আকারে লিপিবদ্ধ আছে। অবশ্য বিজ্ঞানীরা বর্তমানে জেনেটিক পরীক্ষা (ডিএনএ-টেস্ট) করে মানুষের জীবনেতিহাসের কেবল বড় বড় বৈশিষ্ট্যগুলো বের করতে সক্ষম হচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষা করে বলে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হত্যা করেছে কিনা, ব্যভিচার করেছে কিনা, ধর্ষণ করেছে কিনা, কখনো মদ খেয়েছে কিনা ইত্যাদি।

মানবদেহের কোষে যখন কোড্ আকারে বড় বড় ঘটনাগুলো লিখিত পাওয়া যাচ্ছে তখন এতে সন্দেহ নেই যে, তাতে ছোট-বড় সমস্ত ঘটনাই লিপিবদ্ধ আছে। তার জীবনের ও তার পূর্ববর্তীদের (পিতামাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী দের) জীবনের ছোটবড় সমস্ত ঘটনাই তাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। হয়তো বিজ্ঞানের উন্নতির ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে এমন সব যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হবে যা দ্বারা খুটিনাটি সমস্ত ঘটনাই কথা সহ সচিত্রভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে। কারণ, ছবি ও কথাকে কোড্ আকারে রেকর্ড করা ও পুনরায় কোড্ থেকে ছবি ও কথা আকারে প্রস্ফুটন অসম্ভব কিছু নয়। তার প্রমাণ, এক সময় চলচ্চিত্র রেকর্ডিং দীর্ঘ সেলুলয়েড্ ফিতার ওপরে ধারাবাহিকভাবে অসংখ্য ছোট ছোট ফটো তুলে করা হলেও বর্তমানে মেমোরি বিশিষ্ট ডিজিট্যাল ফটোগ্রাফিক ও ভিডিও ক্যামেরায় চিত্র তুলতে কোনো ফিল্ম বা সেলুলয়েড্ ফিতা ব্যবহার করতে হয় না। বরং লেখা, ছবি ও কথা সবই কোড আকারে লিপিবদ্ধ হয় এবং প্রয়োজন হলেই পুনরায় যে কোনো সময়ে তাকে লেখা, ছবি ও কথা আকারে প্রস্ফুটন করা হয়।

জেনেটিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার থেকে এটাই সুস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, বিজ্ঞানীদের দ্বারা স্টিল্-ফটোগ্রাফিক, ভিডিও ও ডিজিট্যাল ক্যামেরা আবিষ্কার এবং তা দিয়ে ছবি ও শব্দ রেকর্ডিং-এর প্রচলন করার কোটি কোটি বছর পূর্বেই সৃষ্টিকর্তা জীব সৃষ্টির সূচনাতেই প্রতিটি জীবের প্রতিটি কোষের মধ্যে উন্নততর গুপ্ত ডিজিট্যাল রেকর্ডিং-এর ব্যবস্থা করে রেখেছেন যাতে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ডিজিট্যাল ভিডিও ক্যামেরার মতো কেবল কথা ও বাহ্যিক চিত্রই রেকর্ড হচ্ছে না, বরং অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ চৈন্তিক ও চারিত্রিক অবস্থাও রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, প্রাণীর মৃত্যু ঘটলেও তার জিনের মধ্যে রেকর্ডকৃত তথ্য মুছে যায় না। এমনকি যে ব্যক্তি হাজার হাজার বছর আগে মারা গেছে তার চুল বা নখের একটি ক্ষুদ্র কণা পেলে তা পরীক্ষা করেও বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারেন যে, ঐ ব্যক্তি কেমন ছিলো- চুরি করেছিলো কিনা, খুন করেছিলো কিনা, ব্যভিচার করেছিলো কিনা; আমিষভোজী ছিলো, নাকি নিরামিষ-ভোজী ছিলো; সে কি বিবাহিত পিতামাতার সন্তান ছিলো, নাকি ব্যভিচারের ফসল ছিলো ইত্যাদি।

অতএব, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, প্রাণীর জীবকোষ পচে-গলে বা পুড়ে দৃশ্যতঃ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও, তার দেহের বিক্ষিপ্ত ও বিশ্লিষ্ট উপাদানগুলো যেখানে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, তাতে তার পূর্ববর্তীদের জীবনেতিহাস সহ তার নিজের পুরো জীবনেতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, বরং সর্বশেষ আবিষ্কার-উদ্ভাবন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যেখানেই যে ঘটনা সংঘটিত হয় তার পারিপার্শ্বিকতায় অবস্থিত সকল বস্তুতে, এমনকি পারিপার্শ্বিক ধুলিকণায়ও তা লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং কোনো অপরাধীর পক্ষেই যে পরকালীন আদালতে স্বীয় অপরাধ অস্বীকার করা সম্ভব হবে না