জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা0%

জীবন জিজ্ঞাসা লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 40547
ডাউনলোড: 4225

পাঠকের মতামত:

জীবন জিজ্ঞাসা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 58 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 40547 / ডাউনলোড: 4225
সাইজ সাইজ সাইজ
জীবন জিজ্ঞাসা

জীবন জিজ্ঞাসা

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

পরকালীন জীবন

স্টিফেন হকিং অতি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরকালীন জীবনের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। এটাই স্বাভাবিক। কারণ , স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করার পর পরকালীন জীবনের অস্তিত্ব স্বীকার করার মানেই হয় না। তবে স্রষ্টার অস্তিত্বের অস্বীকৃতি যে এ বিষয়ে অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত তা আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি। অতঃপর পরকালীন জীবন সম্পর্কে কেবল এতোটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট বলে গণ্য হওয়া উচিত যে , যে পরম জ্ঞানী স্রষ্টা প্রথম বার সৃষ্টি করতে পেরেছেন তাঁর পক্ষে পুনরায় সৃষ্টি করা খুবই সহজ।

স্টিফেন হকিং পরকাল অস্বীকার করতে গিয়ে তাঁর মস্তিষ্ককে একটি কম্পিউটারের সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন যে , এটি অচল হয়ে গেলে আর কাজ করবে না। তিনি এ যুগের সবচেয়ে নামকরা বস্তুবিজ্ঞানী হয়ে এমন কথা কীভাবে বললেন ভেবে বিস্মিত হতে হয়। কারণ , স্বয়ং বস্তুবিজ্ঞানই নষ্ট হয়ে যাওয়া সব কিছু পুনর্গঠনের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করছে।

বিজ্ঞান সাময়িকী নিউ সায়েন্টিস্ট্ -এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা মৃতকে জীবিত করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এ রিপোর্ট অনুযায়ী , মৃত্যুর কয়েকদিন পর মৃত ব্যক্তির দেহের কোষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দিয়ে বিজ্ঞানীরা তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবেন। মানুষ বিজ্ঞানীদের পক্ষে যদি এটা সম্ভব হয় তাহলে পরম জ্ঞানী স্রষ্টার পক্ষে পুনর্জীবন দান অসম্ভব মনে করার মতো অযৌক্তিক দাবী আর কী হতে পারে ?

অবশ্য শরীর পচে-গলে মাটিতে মিশে যাবার যুক্তি তোলা হতে পারে - যা অবশ্য সকল যুগের (এমনকি চৌদ্দশ বছর আগেও) পরকাল অস্বীকারকারীরা তুলতো।

এমনকি প্রথম সৃষ্টিকারীর পক্ষে পুনঃসৃষ্টি সম্ভব - এ অকাট্য যুক্তি ছাড়াও জেনেটিক বিজ্ঞান ও পদার্থ বিজ্ঞানের আলোকেও পুনঃসৃষ্টি অকাট্যভাবে সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়। কারণ , একজন মানুষের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেললে তার ব্যক্তিসত্তার পরিবর্তন হয় না।

শুধু তা-ই কেন , কয়েক বছরের ব্যবধানে একজন মানুষের গোটা শরীরের সকল কোষই পরিবর্তিত হয়ে যায় , কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ব্যক্তিসত্তা পরিবর্তিত হয় না , বরং পুরনো কোষের সংস্পর্শে আসা নতুন কোষে পুরনো কোষের সকল বৈশিষ্ট্যই কপি হয়ে যায়। আর একটি মানুষ বা প্রাণীর শরীরের প্রতিটি ডিএন্এ-র মধ্যে সংশ্লিষ্ট মানুষ বা প্রাণীর সকল বৈশিষ্ট্য ও তার সারা জীবনের (দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত সময়ের) ইতিহাস কোড আকারে লিপিবদ্ধ থাকে। অতএব , একজন মানুষ বা প্রাণীকে পুনরায় সৃষ্টির জন্য তার একটি ডিএন্এ-ই যথেষ্ট। তবে একজন মানুষের বা একটি প্রাণীর বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া সকল ডিএন্এ-ও খুঁজে বের করা ও একত্র করা সম্ভব , কারণ , প্রতিটি প্রাণীর ডিএন্এ-র মধ্যে এমন কিছু স্বাতন্ত্র্য আছে যে , কোনো অবস্থায়ই তা অন্যের কোনো ডিএন্এ-র সাথে অভিন্ন বলে ভুল হবে না।

সেই সাথে বস্তুর ওপর মানসিক শক্তির প্রভাব সংক্রান্ত সর্বশেষ আবিষ্কার-উদ্ভাবনকেও বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে সর্বাধিক বিস্ময়কর হলো ব্রেন্ ওয়েভের ক্ষমতা আবিষ্কার - যা বস্তুর ওপরে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে থাকে। আগামী দিনে ব্রেন ওয়েভ্ তথা ইচ্ছাশক্তির দ্বারা কম্পিউটার ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিমান চালানো আগামী কালের সূর্যোদয়ের মতোই সত্য।

এমতাবস্থায় সীমাহীন শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী পরম জ্ঞানময় মহান স্রষ্টা ইচ্ছা করার সাথে সাথেই প্রতিটি প্রাণীদেহই নিজ নিজ মৃত্যুকালীন শরীরের সবগুলো বা কতক ডিএনএ ও প্রাকৃতিক জগৎ থেকে আরো প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে পুনরায় আবির্ভূত হবে - এটা সুস্থ বিচারবুদ্ধির অধিকারী কোনো মানুষের পক্ষেই অস্বীকার করা মোটেই সম্ভব নয়।

প্রথম প্রকাশ: দৈনিক দিনকাল , ঢাকা: 11ই জুন 2011।

পরিমার্জন: 7ই ডিসেম্বর 2013।

তথ্যসূত্র :

1 বিষয়টি যুক্তিবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোন্ ধরনের তার ওপর নির্ভর করে। কারণ ,যুক্তিবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্য পাঁচ ধরনের মধ্য থেকে যে কোনো একধরনের হতে পারে , তা হচ্ছে : অকাট্য প্রমাণিত বক্তব্য (برهان ) , বিতর্কে প্রতিষ্ঠিত বা আপাতঃ প্রমাণিত বিষয় (جدال ) , আবেগময় ভাষণ (خطاب ) ,কবিতা (شعر ) ও ভ্রমাত্মক যুক্তি বা অপযুক্তি (مغالطة ) । এর মধ্যে প্র মধরনের বক্তব্য সুস্থ বিচারবুদ্ধির নিকট অবশ্য গ্রহণযোগ্য । দ্বিতীয় ধরনের বক্তব্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে , পরস্পরবিরোধী বক্তব্যসমূহের মধ্য থেকে একটিও অকাট্যভাবে প্রমাণিত না হলেও যেটি বাদে বাকীগুলোর ভ্রান্তি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়ে যায় আপাততঃ সেটিকে গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই , যদিও ভবিষ্যতে নতুন কোনো তথ্য হাযির হয়ে সেটিকে বাতিল করে দেয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। বাকী তিন ধরনের বক্তব্য দ্বারা কোনো কিছু প্রমাণিত হয় না। অন্যদিকে বিষয়বস্তুর বিভক্তির ওপরও কোনো বক্তব্যের প্রামাণ্যতা নির্ভর করে। অর্থাৎ কোনো বিষয়কে তৃতীয়ভাগের সম্ভাবনা বিহীনভাবে পরস্পর বিরোধী দুই ভাগে বিভক্ত করা হলে অনিবার্যভাবে সত্য তার একদিকে থাকবে , কিন্তু যেখানে উপস্থাপিত দুইভাগের বাইরে তৃতীয় ভাগের সম্ভাবনা থাকে সেখানে উপস্থাপিত পরস্পর বিরোধী উভয় দাবীই ভ্রান্ত হতে পারে এবং প্রকৃত অবস্থা অজানা বাঅনুপস্থাপিত থেকে যেতে পারে। যেমন : একটি বস্তু রং বিশিষ্ট বা রংহীন-এর মধ্য হতে যে কোনো একটি হতে বাধ্য , কিন্তু তা সাদা বা কালোর মধ্যে যেকোনো একটি হতে বাধ্য নয় , কারণ তা সাদা-কালোর মাঝামাঝি বা তৃতীয় কোনো রং বিশিষ্ট হতে পারে।

2 এ এক ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা যে , উপযুক্ত পরিভাষা খুঁজে না পাওয়ার কারণে বাংলা ভাষায় ঈমান ’ (ايمان )-এর অনুবাদ করা হয়েছে বিশ্বাস ’ । অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলোايمان -এর আভিধানিক অর্থ নিরাপদকরণ ’ । কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :و آمنهم من خوف - আর যিনি তাদেরকে ভীতি থেকে নিরাপদ করেছেন। ” (সূরা আল্-ক্বুরাইশ্ : 4) শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হলো আল্লাহ্ , পরকালীন জীবন এবং আল্লাহর বাণী ও বাণীবাহক (নবী) কে আশ্রয় করে নিজেকে প্রকৃত ক্ষতি অর্থাৎ পরকালীন অনন্ত জীবনের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিতকরণ। আর বিশ্বাস ’ -এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছেظن (বিশ্বাস বা ধারণা) ।ظن (বিশ্বাস) ওشک (সন্দেহ) - উভয়ই ধারণা ’ মাত্র ; কোনোটিই অকাট্য সত্য হওয়ার নিশ্চয়তার অধিকারী নয়। এ দু ’ টি পরিভাষার মধ্যে পার্থক্য কেবল এখানে যে ,ظن (বিশ্বাস) পোষণকারী ব্যক্তি একটি ধারণাকে সত্য বলে মনে করে এবংشک (সন্দেহ) পোষণকারী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট একটি ধারণাকে অসত্য বলে মনে করে। কিন্তু প্রকৃত সত্য উভয়ের ধারণারই বিপরীত বা তা থেকে ভিন্ন কিছু হতে পারে।

যেমন : একটি দরযা বন্ধ ঘরের সামনে এসে কোনো ব্যক্তি মনে করতে পারে যে , ঘরের ভিতরে কোনো মানুষ আছে এবং অপর একজন মনে করতে পারে যে , ঘরের মধ্যে কেউ নেই। অতঃপর উভয়ে ঘরটিতে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের ওপর একটি বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আল্লাহ্ তা ‘ আলা এরশাদ করেন :

( ان الظن ل يغنی من الحق شيئا ) - নিঃসন্দেহে বিশ্বাস (বা ধারণা) সত্য থেকে মোটেই বেনিয়ায করে না ” (সূরা ইউনুস : 34)

3 জীবন ও জগতের পশ্চাতে নিহিত মহাসত্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে অত্র গ্রন্থে বিচারবুদ্ধিভিত্তিক যে আলোচনা করা হয়েছে আমাদেরকে তা কেবল পরম জ্ঞানময় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও গুণাবলীতেই উপনীত করে না , বরং আমরা যে তাঁর কাছ থেকে পথনির্দেশের মুখাপেক্ষী এ সত্যেও উপনীত করে - যে উপসংহার অত্র আলোচনার ধারাবাহিকতায় আরো কিছু পরেই আসছে। এ মুখাপেক্ষিতার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান চালিয়ে বিচারবুদ্ধি আমাদেরকে সে পথনির্দেশে উপনীত করে। সে পথনির্দেশের (কোরআন মজীদ) আলোকে পর্যালোচনা করে বিচারবুদ্ধি আমাদেরকে তাক্বদীর সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধানে উপনীত করে। অত্র গ্রন্থকার প্রণীত অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে।

4 এখানে আরবী শব্দتوجه অপেক্ষাকৃত বেশী উপযোগী - যার ব্যবহারিক তাৎপর্য ইচ্ছাকরণ -এর প্রায় সমার্থক , কিন্তু বাংলা ভাষায় অধিকতর উপযোগী পরিভাষা না পাওয়ায় বিষয়টি সহজ করে বুঝাবার জন্য মনোযোগ কথাটি ব্যবহার করতে হলো যদিও প্রকৃত অর্থে পরম প্রমুক্ত অপরিহার্য সত্তা সম্বন্ধে মনোযোগ না দেয়া বা না থাকা পরিভাষা প্রযোজ্য নয়।

5 আমরা এখানে প্রথম বার কথাটি কালের গর্ভে সৃষ্ট সৃষ্টিসত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি। নয়তো যিনি কালোর্ধ সত্তা তথা আমাদের কালগত অবস্থানের দৃষ্টিতে অনাদি ও অনন্ত সত্তা , তাঁর জন্য প্রথম বার কথাটি প্রযোজ্য নয়। কারণ , তিনি অনাদি কাল থেকে অনবরত এই সৃষ্টিজগতের (আমরা যার অন্তর্ভুক্ত) ন্যায় অসংখ্য নব নব সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার সূচনা করে আসছেন এবং এভাবে অনন্ত কাল পর্যন্ত নব নব সৃষ্টিসূচনা অব্যাহত রাখবেন।

6 যদিও বিচারবুদ্ধিভিত্তিক আমাদের এ আলোচনার জন্য প্রাসঙ্গিক নয় , তবু উল্লেখ করা যেতে পারে যে , অধিকাংশ মানুষের ধারণার বিপরীতে , হযরত আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী হযরত হাওয়া (আঃ)-কে যে জান্নাতে রাখা হয়েছিলো তা পরকালে পুরষ্কার হিসেবে দেয় অনন্তকালীন অবিনশ্বর জান্নাত (বেহেশত) নয় , বরং এ পৃথিবীরই একটি বাগান (জান্নাত) ছিলো। তবে যেহেতু আল্লাহ্ তা আলা সেটিকে বিশেষভাবে তৈরী করেছিলেন তাই তা পার্থিব বাগানের সকল ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত থাকা তথা পরকালীন জান্নাতের একটি নমুনা হওয়াই স্বাভাবিক। এটি যে অবিনশ্বর জান্নাত ছিলো না এরূপ ধারণা করার পিছনে বিচারবুদ্ধিজাত কয়েকটি কারণ পাওয়া যায়। প্রথমতঃ হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টিই করা হয়েছিলো পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং কোরআন মজীদের কোনো কোনো আয়াত থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে , তাঁকে পৃথিবীর উপাদান দিয়েই তৈরী করা হয়েছিলো। তাই পৃথিবীর প্রতিনিধিকে অবিনশ্বর জান্নাতে রাখার কথা অকল্পনীয়। দ্বিতীয়তঃ অবিনশ্বর জান্নাতে শয়তানের প্রবেশের কোনো সুযোগ থাকতে পারে না ; যাকে স্রষ্টার সন্নিধান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে তাকে বেহেশতে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আর বেহেশতে যে ঐশী সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে তাতে শয়তানের পক্ষে সেখানে প্রবেশ করতে পারার প্রশ্নই ওঠে না। তৃতীয়তঃ অবিনশ্বর বেহেশতে কেউ একবার প্রবেশ করলে সে সেখানকার অবিনশ্বর অধিবাসী হয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া অকল্পনীয়। কারণ , এরূপ কাজ বেহেশতের অবিনশ্বরতার বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিক।

7 এ বিষয়ে অত্র গ্রন্থকারের নবী-রাসূলগণের (আঃ) পাপমুক্ততা শীর্ষক একটি পাণ্ডুলিপি আছে। আল্লাহ্ তা আলা তাওফীক দিলে ভবিষ্যতে তাকে যথাসাধ্য পরিপূর্ণতা প্রদান ও প্রকাশ করা হবে।

8 এ বিষয়ে পরে অত্র প্রবন্ধের শেষ দিকে অপেক্ষাকৃত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

9 খৃস্টানদের বিশ্বাস যে , তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কোরআন মজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে , তাঁকে হত্যা করা হয় নি , বরং আল্লাহ্ তা আলা তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন , আর এ ব্যাপারে তারা (তৎকালীন ইয়াহূদী , রোমান ও খৃস্টানরা) চরম বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলো। এ আয়াত ও কতক হাদীছের ভিত্তিতে মুসলমানরা মনে করেন যে , আল্লাহ্ তা আলা তাঁকে চতুর্থ আসমানে রেখেছেন এবং কিয়ামতের পূর্বে , হযরত ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আবির্ভাব-যুগে তিনি আসমান থেকে নেমে আসবেন ও হযরত ইমাম (আঃ) কে সহযোগিতা করবেন। কোরআন মজীদে উল্লিখিত তাদের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়া সম্বন্ধে মুসলিম পণ্ডিতগণের ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে , হযরত ঈসা (আঃ)-এর যে বিশ্বাসঘাতক শিষ্য তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিলো তার চেহারা ঈসা (আঃ)-এর মতো হয়ে গিয়েছিলো এবং ফেরেশতারা ঈসা (আঃ)-কে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ঘরের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে একা পেয়ে রোমান শাসকের পুলিশরা তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকেই শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়। অনেকে মনে করেন যে , ঐ ব্যক্তির চেহারা পরিবর্তিত হয় নি , বরং রোমানরা ঈসা (আঃ)-কে চিনতো না বিধায় ফেরেশতারা তাঁকে নিয়ে যাওয়ার পর ঐ ঘরের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে একা পেয়ে তাকেই ঈসা (আঃ) মনে করে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

10 .অবশ্য এর পরে ছ্বাহাবী ও ইমামগণ থেকে বর্ণিত হাদীছ ও রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।

11 অত্র উপশিরোনামে আমরা বিচারবুদ্ধির আলোকে যে মতামত ব্যক্ত করেছি কোরআন মজীদ ও সুন্নাতে রাসূলে (ছ্বাঃ) ও তার সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু আলোচনার বিচারবুদ্ধি ভিত্তিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে আমরা তার উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম। তবে এগুলো এতোই সুস্পষ্ট যে , কোরআন ও হাদীছ অধ্যয়নে অভ্যস্ত পাঠক-পাঠিকাগণ খুব সহজেই এগুলো পেয়ে যাবেন।

12 যদিও আমাদের এ আলোচনা বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে , তবে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে , রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর পরে তাঁর উম্মাতের মধ্যে সর্বাধিক ইলমী যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে মুতাওয়াততীর হাদীছে এবং পাপমুক্ত ব্যক্তিবর্গ সম্বন্ধে কোরআন মজীদের সূরা আল্-আযহাবের আয়াতে তাত্ব্হীরে উল্লিখিত হয়েছে।

13 আর ইসলামের ইতিহাস সাক্ষী যে , কোরআন ও সুন্নাহর জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রগণ্য ব্যক্তিকে ইমাম ও শাসকের পদে অধিষ্ঠিত না করার পরিণাম উম্মাহর জন্য ভয়াবহ হয়েছিলো - যার যের আজো শেষ হয় নি। অর্থাৎ উম্মাহর মধ্যে রক্তক্ষয়ী মতপার্থক্য ও বিভক্তিই প্রমাণ করে যে , রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের পরে উম্মাহর নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য অনুসৃত পদ্ধতি সঠিক ছিলো না।

14 আহলে সুন্নাত্ ” , খুলাফায়ে রাশেদীন্ ” , ছ্বিহাহ্ সিত্তাহ্ ” ইত্যাদি পরিভাষা কোরআন মজীদ বা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হাদীছে রাসূল (ছ্বাঃ) থেকে প্রাপ্ত কোনো পরিভাষা নয় , বরং অনেক পরে বিশেষ উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরী করা হয়। আহলে সুন্নাত্ ” পরিভাষা তৈরীর উদ্দেশ্য ছিলো এটাই বুঝানো যে , এর বহির্ভূত যে সব ইসলামী গোষ্ঠী ছিলো (বা রয়েছে) , বিশেষ করে শিয়া মায্হাবের অনুসারীরা , তারা রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসারী নয় , বরং বিদ্ ‘ আতী গোষ্ঠী। তেমনি ছ্বিহাহ্ সিত্তাহ্ ” পরিভাষা তৈরীর উদ্দেশ্য ছিলো এটাই বুঝানো যে , এর বহির্ভূত হাদীছ-সংকলনগুলো (শিয়া ধারার সংকলনগুলো এবং মুওয়াত্বত্বা ’ , মুসনাদে আহমাদ ইব্নে হাম্বাল্ , মুস্তাদরাকে হাকেম্ ইত্যাদি সুন্নী ধারার সংকলন) ছ্বাহীহ্ নয়। সুন্নী ” র ন্যায় আজকের পারিভাষিক অর্থে তথা মায্হাব্ হিসেবে শিয়া ” পরিভাষাও পরবর্তীকালের। অবশ্য শিয়া ” শব্দের ব্যবহার (আভিধানিক অর্থে ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ’ ) পূর্বেও ছিলো ; রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর জীবদ্দশায় হযরত আলী (আঃ)- এর ঘনিষ্ঠ ভক্ত-অনুরক্তদেরকে“‘ আলীর শিয়া ” বলা হতো। কিন্তু তখন বিভিন্ন মায্হাবের অস্তিত্ব ছিলো না। পরবর্তীকালে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর আহলে বাইতের ইমামগণের অনুসারীদের বাইরে বিভিন্ন ফিক্ব্হী গোষ্ঠী তৈরী হলে এবং সেগুলোকে মালেকী ” , হানাফী ” ইত্যাদি ও সামগ্রিকভাবে সুন্নী ” নামকরণ করা হলে আহলে বাইতের ইমামগণের অনুসারীগণ শিয়া ” ও তাঁদের ফিক্বাহ্ শিয়া মায্হাব্ ” হিসেবে পরিচিত হয় , যদিও তাঁরা কোনো মায্হাব্ সৃষ্টি করেন নি। যা-ই হোক , আমরা এখানে আহলে সুন্নাত্ ” কথাটি প্রচলিত পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করেছি , এর আভিধানিক অর্থে নয়।

15 , অবশ্য পরবর্তীকালে ইমাম মালেক তাঁর নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং আব্বাসী সরকারের সাথে সহযোগিতা করেন ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মালেকী মায্হাব্ প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ সরকারের সাথে অসহযোগিতা করলেও এবং কোনো মায্হাব্ তৈরী না করলেও তাঁর শিষ্য আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ্ বিন্ হাসান শয়বানী সরকারের সাথে সহযোগিতা করেন এবং ইমাম আবূ হানীফার সুনাম কাজে লাগিয়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় হানাফী মাযহাব তৈরী করেন।

16 কারো কাছে একটি বিষয় এমনভাবে সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়া যে , তার মধ্যে এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ-সংশয় না থাকে। অতঃপর সে যদি বিষয়টি গ্রহণ না করে তাহলে তা নেফাক্বের পরিচায়ক হবে , নচেৎ নয়। এ কারণেই , কোনো নবীকে নবী হিসেবে মেনে নেয়ার বিষয়টিও ইত্মামে হুজ্জাত্-এর ওপর নির্ভরশীল ; কারো জন্য ইতমামে হুজ্জাত্ না হলে নবীকে নবী হিসেবে স্বীকার না করার কারণে শেষ বিচারে কাউকে পাকড়াও করা হবে না। তবে আল্লাহরমনোনীত নবী বা ইমামের প্রশ্ন বাদেও মানুষ তার এখ্তিয়ারাধীন বিষয়েও জ্ঞাতসারে সর্বোত্তমকে বেছে না নিলে , তা যদি অসদুদ্দেশ্যে হয় তো তাকে শেষ বিচারে জবাবদিহি করতে হবে এবং যদি অসাবধানতার কারণে হয় তবু তার নিজের বা অন্যদের ওপর এর ইহকালীন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া বর্তাবেই।

17 এ ধরনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নবী-রাসূলগণের (আঃ) পাপমুক্ততা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে , কোরআন মজীদের কোনো আয়াতের হুকুম মানসূখ্ হতে পারে না এবং হুকুম বজায় রেখে কোনো আয়াতের তেলাওয়াত মানসূখ্ হতে পারে না ; শেষোক্ত ধরনের হুকুম থাকলে তা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) থেকে বলে গণ্য করতে হবে - যা আল্লাহ্ প্রদত্ত এখ্তিয়ার বলে তিনি প্রদান করেন। (মূলতঃ কোরআন মজীদের আয়াতে মানসূখ্ কথাটি পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে।)

18 ইজতিহাদ সম্পর্কিত আরো কিছু বিষয় নিয়ে পরে আলোচনা করা হয়েছে।

19 কতক হাদীছের বর্ণনার ভিত্তিতে অনেকে মনে করেন যে , ব্যাপারে কোরআন মজীদে আয়াত নাযিল হয়েছিলো , কিন্তু সংশ্লিষ্ট আয়াতের পাঠ ( text)পরবর্তী সময়ে রহিত (মানসূখ্ )হয়ে যায় , তবে তারহুকুম বহাল থেকে যায়। কিন্তু ইতিপূর্বে যেমন আমরা উল্লেখ করেছি , প্রকৃত পক্ষেকোরআন মজীদের কোনো আয়াতের পাঠ বা কোনো আয়াতের হুকমু রহিত হয় নি। কোরআন মজীদে যে আয়াতে আয়াত রহিতকরণ বা ভুলিয়ে দেয়া কথা বলা হয়েছে তাতে কোরআন মজীদের আয়াত রহিতকরণের কথা বলা হয় নি , বরং পূর্ববর্তীআসমানী কিতাব সমূহের আয়াত রহিতকরণের কথা বলা হয়েছে। বিষয়ে আমরা কোরআনের পরিচয় গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।