বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এই বইয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
এক
: আমরা এ যুগে বিরাট একটি বিল্পব প্রত্যক্ষ করলাম যা খোদায়ী দ্বীনসমূহের অন্যতম দ্বীন ইসলামের বিল্পব।
ইসলাম আমাদের যুগে এসে আরেকবার নব-জীবন লাভ করল। বিশ্ব মুসলিম নিদ্রা থেকে জেগে উঠল এবং নিজেদের আসল জায়গায় ফিরে এল। আর নিজেদের যে সব সমস্যাবলীর সমাধান কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না তা ইসলামের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মৌলিক শাখা-প্রশাখাগত বিধি-বিধানগুলোর মাঝে সন্ধান করতে লাগল।
এ বিল্পব সফল হওয়ার কারণ কী ? সে বিষয়ে আলোচনা একটি স্বতন্ত্র ব্যাপার। সব চেয়ে বড় কথা হল , আমাদের জানি এ মহান বিল্পবের প্রভাব সমস্ত ইসলামী দেশসমূহে এমনকি ইসলামী বিশ্বের বাইরের দেশগুলোতেও সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাইতো দুনিয়ার অনেক মানুষ আজ ইসলামকে জানতে চায়। অবগত হতে চায় বিশ্ব মানবতার জন্যে ইসলামের নতুন আহ্বান সম্পর্কে।
এমন একটি স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কর্তব্য হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত যে পরিচয় রয়েছে তা কোন প্রকার অঙ্গসজ্জা ব্যতিরেকে এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মানুষের সামনে তাদের বোধগম্য করে তুলে ধরা। আর মানুষের মধ্যে ইসলাম ও ইসলামী মাযহাবসমূহ সম্পর্কে জানার জন্য যে আগ্রহ ও পিপাসা রয়েছে যথাযথ বর্ণনার মাধ্যমে তা নিবারণ করা। আর আমাদের স্থলে অন্যদেরকে ইসলাম সম্পর্কে কথা বলার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ না দেয়া।
দুই :
অস্বীকার করার জো নেই যে , অন্যান্য মতবাদের ন্যায় ইসলামেও বিভিন্ন মাযহাব ও ফিরকামত বিদ্যমান , যার প্রত্যেকটিরই আকীদা-বিশ্বাস ও আমল-অনুশীলনের ক্ষেত্রে নিজস্ব আলাদা-আলাদা বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। কিন্তু এ ভিন্নতা ও পার্থক্য কখনই এমন পর্যায়ের নয় যে , একই ইসলাম বিশ্বাসীদের মধ্যে পরস্পরের সহযোগিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বরং তারা নিজেরা পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সৃষ্ট যে কোন ঝড়- তুফানের মুকাবিলায় নিজেদেরকে রক্ষা করতে এবং নিজেদের অভিন্ন শত্রুদেরকে তাদের নীল- নকশা বাস্তবায়নের পথে বাধা দিতে সক্ষম ।
নিঃসন্দেহে পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি ও তা দৃঢ় ও গভীর করার জন্যে কিছু মূলনীতি ও নীতিমালা মেনে চলা প্রয়োজন। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ইসলামী ফিরকা-মতসমূহ পরস্পরকে ভালভাবে জানতে হবে। এক ফিরকার নীতি ও বৈশিষ্ট্যাবলী অন্য ফিরকার লোকদের সামনে স্পষ্ট ও পরিস্কার থাকতে হবে। কেননা পরস্পরের চেনা-জানাই হচ্ছে একমাত্র হাতিয়ার যা ভুল বুঝা-বুঝি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে ও পরস্পরের সহযোগিতার পথ সহজ করে দিতে পারে।
পরস্পরকে চেনা-জানার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে প্রত্যেক মাযহাবের আকীদা-বিশ্বাসের বিষয়গুলো এবং তাদের মৌলিক ও শাখা-প্রশাখাগত ব্যাপারগুলো সে মাযহাবেরই বড় বড় বিজ্ঞ- পন্ডিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অবগত হওয়া। কেননা , যদি অজানা-অজ্ঞদের কাছ থেকে জানতে চাই অথবা কোন মাযহাবের আকীদা-বিশ্বাসের বিষয়গুলো তাদের শত্রুদের কাছ থেকে শুনতে চাই তাহলে ভালবাসা ও বিদ্বেষ আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পৌঁছার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং আমাদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তখন সহযোগিতার বিষয়টি নিরাশার রূপ পরিগ্রহ করবে।
তিন :
উপরোল্লেখিত দু’
টি দৃষ্টি-ভঙ্গির প্রেক্ষিতে শিয়া ইমামিয়া মাযহাবের মৌলিক বিশ্বাস ও শাখা-প্রশাখাগত বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরাই হচ্ছে এ ছোট্ট পুস্তকটি রচনার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য , যা নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যাবলী সমৃদ্ধ :
1. প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয়গুলোর সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তাতে পাঠকবৃন্দ বহু সংখ্যক বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা থেকে নিস্কৃতি লাভ করবে।
2. আলোচনা স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক মুক্ত। এমনকি সে সব পরিভাষাগুলোকেও পরিহার করা হয়েছে , যেগুলো শুধু দ্বীনি মাদ্রাসার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে পাঠক মহলের গভীর ও সুক্ষ্ম অধ্যায়নের অন্তরায় নয়।
3. যদিও আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু আকীদা-বিশ্বাসের বিষয় নিয়ে , এবং তার দলীল- প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয় ; তবে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে মনের তাগিদে সাড়া দিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যে যতটুকু সম্ভব কোরআন , হাদীস ও বিবেক ভিত্তিক দলীল সমৃদ্ধ আলোচনা করেছি।
4. সব ধরনের গোপনীয়তা , প্রতারণা ও অযৌক্তিক পূর্ব ধারণার নীতি পরিহার করা হয়েছে , যাতে করে বিষয়গুলো বাস্তবে যা আছে তারই রূপায়ণ ঘটে।
5. অন্যান্য মাযহাবসমূহের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়েছে।
এ ছোট্ট পুস্তিকাটি পূর্বোল্লেখিত 3 টি বিষয়কে সামনে রেখে বাইতুল্লাহ্ শরীফের হজ্বব্রত পালনের সফরকালে , যখন অন্তরাত্মা অধিক স্বচ্ছতা সমৃদ্ধ থাকে , তখন রচনা করা হয়েছে। পরবর্তীতে কয়েকটি বৈঠকে একদল বিজ্ঞ আলেমের উপস্থিতিতে বিষয়টির উপর আলোচনা- পর্যালোচনার পর সমাপ্তির পর্যায়ে উপনিত করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস যে , আমরা আমাদের উদ্দেশ্যের পর্যায়ে সফলতার স্তরে পৌঁছতে পেরেছি , যে উদ্দেশ্যের কথা ইতিমধ্যেই আমরা প্রকাশ করেছি। আর এর প্রতিদান শেষ বিচার দিনের জন্য জমা করে রাখার আবেদন মহান আল্লাহর দরবারে রাখলাম। আরএ জগতে আমাদের প্রার্থনা হচ্ছে :
)
رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ(
“
হে আমাদের প্রভূ! আমরা একজন আহ্বানকারীর (রাসূলুল্লাহ্ সঃ) এর (আহ্বান) শুনেছি ,তিনি আমাদেরকে ঈমান আনয়নের জন্যে আহ্বান জানাচ্ছেন যে , তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন ; তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! অতএব , আমাদের পাপ ও অন্যায়গুলোকে ক্ষমা এবং আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো আমাদের থেকে মোচন করে দাও। আর আমাদের মৃত্যু নেক্কার লোকদের সাথে কর”
(সূরাঃ আলে ইমরান , আয়াত নং 193)।
নাছের মাকারিম শিরাযী
মাদ্রাসাতুল ইমাম আমীরুল মু 'মিনীন (আঃ) , কোম , ইরান
মুহাররামুল হারাম 1417 হিঃ