ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস0%

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস লেখক:
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক: আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাযী
: মাওঃ মোঃ আবু সাঈদ
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বিভাগ:

ভিজিট: 17663
ডাউনলোড: 4041

পাঠকের মতামত:

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 17663 / ডাউনলোড: 4041
সাইজ সাইজ সাইজ
ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

ইমামিয়্যাহ শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস

লেখক:
প্রকাশক: দাওয়াতী মিশন
বাংলা

3. আল্লাহর সত্তা অনন্ত-অসীম :

আমরা বিশ্বাস করি : মহান আল্লাহ্ এমন এক সত্তা যিনি সর্ব পর্যায় ও ক্ষেত্রেই অনন্ত- অসীম। বিজ্ঞতায় , শক্তি-ক্ষমতায় , অনাদিকাল থেকে অনন্ত কাল পর্যন্ত চিরজীবী থাকা ইত্যাদি সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর জন্যে কোন প্রান্ত-সীমা নির্ধারণ করা যায় না। এ কারণেই স্থান-কাল-পাত্র কোন কিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। কেননা , স্থান-কাল-পাত্র এ সব কিছুরই একটা সীমা ও প্রান্ত আছে। কিন্তু মহান আল্লাহ্ সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান। কারণ , তিনি স্থান-কাল-পাত্র ইত্যাদির উর্ধে। মহান আল্লাহ্ বলেন :.

) وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَـٰهٌ وَفِي الْأَرْ‌ضِ إِلَـٰهٌ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ(

তিনি সেই মহান সত্তা যিনি আকাশ-মন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে ইবাদতের যোগ্য। আর তিনিই অতি প্রজ্ঞাময় ও মহাজ্ঞানী (আয যুখরোফ : 84)।

আল্লাহ্ আরো বলেন :.

) وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ وَاللَّـهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ(

তিনি তোমাদের সাথেই আছেন যেখানেই থাকনা কেন। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম-কান্ড সব প্রত্যক্ষ করছেন (সূরা : আল-হাদীদ , আয়াত নং 4)।

এটা স্পষ্ট যে ; তিনি আমাদের অন্তরের থেকেও আমাদের নিকটতম। তিনি আমাদের অন্তরাত্মায় বিরাজমান এবং সর্বত্রই তিনি বিদ্যমান। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর কোন নিদির্ষ্ট স্থান নেই। আল্লাহ্ বলেন :.

) وَنَحْنُ أَقْرَ‌بُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِ‌يدِ(

আর আমরা তার প্রধান শিরা (রগ) অপেক্ষাও নিকটতম (ক্বাফ : 16)। মহান আল্লাহ্ আরো বলেন :

) هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ‌ وَالظَّاهِرُ‌ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ(

তিনি অনাদিকাল থেকে আছেন এবং অনন্ত ও চিরঞ্জীব। তিনি প্রকাশ্য ও গোপন। আর তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত (আল-হাদীদ : 3)।

এ কারণে আমরা কোরআনের অন্য একটি আয়াতে দেখতে পাই :ذو العرش المجید অর্থাৎ তিনি মহান আরশের অধিকারী (অধিপতি) এবং শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আরশ এর অর্থ এখানে কোন রাজ সিংহাসন নয়) অনুরূপ আরেকটি আয়াতেও দেখতে পাই : দয়াময় মহান আল্লাহ্ আরশের উপর সমাসীন। কোরআনের কোন কোন আয়াতের মাধ্যমে বুঝা যায় যে , মহান আল্লাহর সিংহাসন সমগ্র আসমান ও জমিন ব্যাপী। যেমন :

) وسع كرسيه السموات و الارض(

তাঁর সিংহাসন সমগ্র আসমান ও জমিন ব্যাপী বিস্তৃত । এর অর্থ কখনোই এটা নয় যে , মহান আল্লাহ্ বিশেষ কোন স্থানে অবস্থান করছেন। বরং সমগ্র সৃষ্টি জগৎ ও প্রাকৃতিক পরিমন্ডলে তাঁর সার্বিক সার্বভৌম কর্তৃত্বের কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। কেননা , যদি তাঁর জন্যে কোন স্থান নিদির্ষ্ট করি তাহলে তাঁকে সীমিত করে ফেললাম। আর সৃষ্টির গুণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে প্রমাণ করতঃ তাঁকে অন্যান্য বস্তুর মতই মনে করলাম। বস্তুতঃপক্ষে তিনি :অর্থাৎ কোন কিছুই তাঁর মত নয় (সূরা : আশ শুরা , আয়াত নং 11)। অর্থাৎ তাঁর সমতুল্য আর কেউ নেই (সূরা : তাওহীদ , আয়াত নং 4)।

4. আল্লাহ্ নিরাকার ও কখনই দেখা যাবে না :

আমরা বিশ্বাস করি : বাহ্যিক চক্ষু দিয়ে কখনো আল্লাহকে দেখা যাবে না। কেননা চক্ষু দিয়ে আল্লাহকে দেখার অর্থ হচ্ছে-তাঁর দেহ ও আকৃতি নির্দিষ্ঠ স্থান ও জায়গা , রং ও শরীর থাকা এবং তিনি কোন দিক বা কোন মুখী থাকা । আর এগুলো সবই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ্ এসব কিছুর উর্দ্ধে।

অতএব আল্লাহকে দেখতে পাওয়ার বিশ্বাস এক প্রকারের শিরক। আল্লাহ্ বলেন :

) لَّا تُدْرِ‌كُهُ الْأَبْصَارُ‌ وَهُوَ يُدْرِ‌كُ الْأَبْصَارَ‌ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ‌(

চক্ষুগুলো তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পারেনা কিন্তু তিনি সকল চক্ষুকে প্রত্যক্ষ করে থাকেন। আর তিনি অতীব দয়ালু ও সর্বজ্ঞ (আনআম : 103)।

এ কারণেই বনী ইসরাঈলের বাহানা-অজুহাত সন্ধানী লোকেরা হযরত মুসার (আঃ) নিকট আল্লাহকে দেখার দাবী উত্থাপন করলে তিনি বলেন :

) لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَ‌ى اللَّـهَ جَهْرَ‌ةً(

আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার প্রতি ঈমান আনবনা যতক্ষণ না আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে পাব (সূরা : আল-বাকারাহ-55)।

অতঃপর মুসা (আঃ) তাদেরকে তুর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন এবং তাদের দাবীর কথা আরেকবার আল্লাহর কাছে পেশ করলেন। তখন মহান আল্লার পক্ষ থেকে এই জবাব এলো :

) وَلَمَّا جَاءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَ‌بُّهُ قَالَ رَ‌بِّ أَرِ‌نِي أَنظُرْ‌ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَ‌انِي وَلَـٰكِنِ انظُرْ‌ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ‌ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَ‌انِي فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَ‌بُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ‌ مُوسَىٰ صَعِقًا فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ(

অর্থাৎ আমাকে কক্ষনো দেখতে পাবে না , কিন্তু ঐ পাহাড়ের প্রতি তাকাও , যদি তা স্বস্থানে স্থীর থাকে তাহলে আমাকে দেখতে পাবে। অতঃপর তার প্রভূ যখন পাহাড়ের উপর স্বীয় জ্যোতি বিকাশ করলেন তখন তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। আর মুসা (আঃ) সংজ্ঞাহীন হয়ে ভূমিতে পড়ে গেলেন। অতঃপর আবার যখন জ্ঞান ফিরে আসলো তখন নিবেদন করলেন পরওয়ারদিগার! তুমি পাক-পবিত্র। সেই মহাসত্তা যাকে চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না। আমি তোমার প্রতি প্রত্তাবর্তন করলাম। আর আমি প্রথম মু মিন। (সূরা আল আরাফ 143)।

উল্লেখিত ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে , বাহ্যিক দৃষ্টির মাধ্যমে কখনো আল্লাহকে দেখা যাবে না।

আমরা বিশ্বাস করি : যদি কোন আয়াত অথবা কোন হাদীস আল্লাহকে দেখা যায় সম্পর্কে পরিলক্ষিত হয় তাহলে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্তর চক্ষু ও অন্তর জ্ঞান দ্বারা আল্লাহকে দেখা। কেননা , সব সময়ই কোরআনের আয়াতসমূহ পরস্পরের ব্যাখ্যা করে থাকে।

القرآن یفسر بعضه بعضا

অর্থাৎ কোরআনের আয়াতসমূহ পরস্পরের ব্যাখ্যা করে। বিখ্যাত এ হাদীসটি জনাব ইবনে আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। কিন্তু এ হাদীসটি নাহজুল বালাগাতে অন্যভাবে এসেছে : আয়াতসমূহ পরস্পরের সাক্ষ্য দেয় , (খোৎবা নং 103)।

এ ছাড়া এক ব্যক্তি হযরত আলীকে (আঃ) জিজ্ঞাসা করলো :

হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি কি কখনো আপনার প্রভূকে দেখতে পেরেছেন ? তিনি বললেন: আমি কি এমন খোদার ইবাদত করি যাকে দেখতে পাইনা ? অতঃপর আরো বলেন : বাহ্যিক চক্ষুগুলো কখনো প্রকাশ্যে তাঁকে দেখতে পায় না কিন্তু , অন্তরাত্মা ও ঈমানী শক্তি তাঁকে প্রত্যক্ষ্য করে , (নাহজুল বালাগাহ খোৎবা নং 179)।

আমরা বিশ্বাস করি : সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যাবলী আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট করা , যেমন : আল্লাহ্ সমাসীন আছেন , আল্লাহ্ কোন প্রান্তমুখী আছেন , আল্লাহর দেহাবয়ব আছে , আল্লাহকে দেখা যায় এ জাতীয় আকীদা-বিশ্বাস আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ারই নামান্তর এবং শিরকে লিপ্ত হওয়া ছাড়া কিছু নয়। হ্যাঁ ; মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টি ও সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যাবলী থেকে উর্দ্ধে এবং তাঁর সমতুল্য কোন বস্তুই হতে পারে না।

5. একত্ববাদ সমস্ত ইসলামী শিক্ষার প্রাণ :

আমরা বিশ্বাস করি : মহান আল্লাহকে চেনা ও জানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ ও তৌওহীদের বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া , বস্তুতঃপক্ষে তৌওহীদ কেবলমাত্র একটা উছূলে দ্বীন বা দ্বীনের একটি মৌলিক বিষয় নয় বরং ইসলামী আকীদা- বিশ্বাসের মূল ও কেন্দ্রীয় বিষয়।

এ কথা সুস্পষ্ট ভাবে বলা যায় : ইসলামের মৌলিক ও শাখা-প্রশাখাগত সমস্ত বিধি- বিধান তৌওহীদ বা একত্ববাদের ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে। সত্তাগত একত্ববাদ , বৈশিষ্টগত একত্ববাদ ও ক্রিয়াগত একত্ববাদ অর্থাৎ সর্ব ক্ষেত্রেই একত্ববাদের রূপরেখা থাকতে হবে। অন্য এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের একত্ববাদ , আল্লাহর দ্বীন ও বিধি-বিধানের একত্ববাদ , কিবলা ও আসমানী কিতাবের একত্ববাদ , সমগ্র মানব জাতি সম্পর্কীত খোদায়ী আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের একত্ববাদ , মুসলমানদের দলমতগুলোর একত্ববাদ ও বিচার দিনের একত্ববাদ।

এ কারণেই কোরআন মজীদ আল্লাহর একত্ববাদের বিচ্যুতি ও শিরক প্রবণতাকে ক্ষমাহীন অপরাধ (গুনাহ্) বলে ঘোষণা করছে। আল্লাহ্ বলেন :

) إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ‌ أَن يُشْرَ‌كَ بِهِ وَيَغْفِرُ‌ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ وَمَن يُشْرِ‌كْ بِاللَّـهِ فَقَدِ افْتَرَ‌ىٰ إِثْمًا عَظِيمًا(

আল্লাহ্ কখনো শিরক জনিত অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এ ছাড়া (এর চেয়ে নিম্নের) অন্যান্য সব অপরাধ , যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কাউকে আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করল সে তো মহা পাপে পাপী হল। ( সূরা : আন নিসা ,আয়াত নং 48।)

আল্লাহ্ আরো বলেন :

) وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَ‌كْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِ‌ينَ(

তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের প্রতি প্রত্যাদেশ (অহী) পাঠানো হয়েছিল যে , যদি শিরক জনিত অপরাধ কর তাহলে তোমার সমস্ত আমল-অনুশীলনই বিনষ্ট ও বরবাদ হয়ে যাবে। আর তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত বলে পরিগণিত হবে। (সূরা : যুমার , আয়াত নং 65)

6. একত্ববাদের শাখাসমূহ :

আমরা বিশ্বাস করি : একত্ববাদের অনেক শাখা রয়েছে তন্মধ্যে নিম্ন বর্ণিত চারটি শাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ

(ক) সত্তাগত বা সহজাত একত্ববাদ : অর্থাৎ মহান আল্লাহর সত্তা এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর সমতুল্য , সমকক্ষ ও সদৃশ কোন কিছুই নেই।

(খ) বৈশিষ্ট্যগত একত্ববাদ : অর্থাৎ আল্লাহর বিজ্ঞতা , শক্তি-ক্ষমতা , তাঁর অনাদিকাল থেকে অনন্ত-অসীম কাল পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকা ইত্যাদি সব গুণ-বৈশিষ্ট্যাবলীই তাঁর সহজাত বৈশিষ্ট্য। আর তাঁর সত্তা এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহর গুণ-বৈশিষ্ট্যাবলী সৃষ্টির বস্তুর গুণ-বৈশিষ্ট্যের মত নয়। সৃষ্টির বস্তুর বৈশিষ্ট্যাবলী পরস্পর থেকে পৃথক ও বিচ্ছিন্ন এবং তাদের সত্তা একে অপর থেকে আলাদা। অবশ্য আল্লাহর অবিকল সত্তার সাথে তাঁর গুন-বৈশিষ্ট্যাবলী সহজাত হওয়ার বিষয়টি গভীর মনোযোগ সহকারে সুদর্শনের প্রয়োজন।

(গ)-ক্রিয়াগত একত্ববাদ : অর্থাৎ প্রত্যেকটি কাজ-কর্ম , ভূমিকা ও নির্দশন যা কিছু এ পৃথিবীতে দেখা যায় , সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা-আকাংখা থেকেই গোড়া পত্তন লাভ করেছে।

মহান আল্লাহ বলেন :

) اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ(

মহান আল্লাহই সব কিছূর সৃষ্টি কর্তা এবং তিনিই এ গুলোর সংরক্ষণকার , (সূরা : যুমার আয়াত নং 62)।

আল্লাহ আরো বলেন :

) لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ(

সমগ্র আকাশ-মণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের চাবিকাঠি তাঁরই নিয়ন্ত্রনাধীন , (সূরা : আশশূরা আয়াত নং 12)।

জী হ্যাঁ! অস্তিত্বের জগতে আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভাবশালীর অস্তিত্ব নেই।

কিন্তু এ কথার অর্থ এ নয় যে , আমরা আমাদের কাজকর্মের ক্ষেত্রে নিজেরা কোন অধিকার রাখি না। বরং এর বিপরীতে আমরা আমাদের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন।

আল্লাহ বলেন :

) إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا(

অর্থাৎ আমরাই তাকে (মানূষকে) পথ দেখিয়েছি (তার পথ তার জন্যে সুগম করে দিয়েছি) চাই সে কৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন করুক অথবা বিদ্রোহ করে অকৃতজ্ঞতার রাস্তা বেছে নিক , (সূরা ইনসান আয়াত নং 3)।

আল্লাহ্ আরো বলেন :

) وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى(

অর্থাৎ আর মানুষ তার চেষ্টা-সাধনা দ্বারা অর্জিত ছাড়া আর কোন কল্যাণ লাভ করবে না , (সূরা আন নাজম আয়াত নং 39)।

আল কোরআনের এ আয়াতসমূহ স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে , মানুষ তার কাজ-কর্ম ও ইচ্ছার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহ্ আমাদের কাজ-কর্ম , চিন্তা-চেতনা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দান করেছেন সেহেতু আমাদের কৃতকর্মের পরিণাম এরই উপর ভিত্তি করে হবে। এ পর্যায়ে আমাদের কাজ-কর্মের মোকাবিলায় আমাদের দ্বায়িত্ব-কর্তব্য মোটেও কমানো হবে না। ব্যাপারটি খুবই প্রণিধান যোগ্য।

জী হ্যাঁ! মহান আল্লাহ্ চান যে , আমরা আমাদের কাজ-কর্মগুলো স্বাধীনতার সাথে আঞ্জাম দেই , যাতে করে এ পথে তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন এবং আমাদেরকে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কেননা , একমাত্র স্বাধীন ইচ্ছার মাধ্যমেই এবং স্বাধীকারভাবে আল্লাহর আনুগত্যের পথ অতিক্রম করার মাধ্যেমেই মানুষ পরিপূর্ণতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে। এ কারণে যে , স্বাধীনতাহীন ও জোরপূর্বকভাবে আদায়কৃত আমল দ্বারা কারো ভালো-মন্দের বিচার করা যায় না।

নীতিগতভাবে আমরা যদি আমল করার ক্ষেত্রে বাধ্য বাধকতার শিকার হতাম তাহলে নবী- রাসূলগণের প্রেরণ ও আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করার কোনই অর্থ থাকতো না। অনুরূপভাবে , দ্বীনি দায়িত্ব-কর্তব্য , শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও শাস্তি ইত্যাদিও অর্থহীন ও অন্তসারশূণ্য থেকে যেত।

এ বিষয়টি আমরা রাসূলের আহলে বাইতের ইমামগণের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছি। তাঁরা আমাদেরকে বলেছেন : জাবর তথা বলপূর্বকনীতি সঠিক নয় আবার তফভীয তথা নিজের অধিকারকে অপরের হাতে অর্পণ করার নীতিও সঠিক নয়। বরং প্রকৃত ও আসল নীতি হচ্ছে এ দু 'য়ের মাঝামাঝি নীতি ,(উছূলে কাফি , প্রথম খঃ পৃঃ 160)।

(ঘ) ইবাদাতগত একত্ববাদ : অর্থাৎ ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যেই নির্দিষ্ট। তিনি ছাড়া আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নেই। একত্ববাদের এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে পরিগণিত। আল্লাহর নবী-রাসূলগণ অধিকাংশ সময় এরই অবলম্বী ছিলেন।

আল্লাহ্ বলেন :

) وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ(

তাঁদেরকে (নবীগণকে) এ ছাড়া আর কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে , তাঁরা কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত-উপাসনা করবেন। আর নিজেদের দ্বীন-ধর্মকে তাঁর (আল্লাহর) জন্যে নির্ভেজাল করবে এবং শিরক্ থেকে একত্ববাদে প্রত্যাবর্তন করবে। আর এটাই হল আল্লাহর স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় দ্বীন , (সূরা : বাইয়্যেনাহ্ আয়াত নং 5)।

চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার পর্যায় অতিক্রম করার জন্যে একত্ববাদের ইবাদত আরো গভীর ভূমিকা রাখবে , যে কারণে মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহর সাথে নিজের অন্তরকে সম্পর্কযুক্ত দেখবে। সব জায়গাতে তাঁকেই স্মরণ করবে আর তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের চিন্তা-ভাবনার জগতে স্থান দিবে না। আর কোন কিছুই তাকে আল্লাহর চিন্তা-স্মরণ থেকে সরিয়ে অন্য চিন্তায় লিপ্ত করবে না।

অর্থাৎ যা কিছুই তোমাকে তার ব্যাপারে চিন্তা করায় বাধ্য করে এবং আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় , সেটাই তোমার উপাস্য বলে গণ্য হবে।

আমাদের বিশ্বাস : একত্ববাদের শাখাসমূহ কেবল এ চারটি শাখাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মালিকানার একত্ববাদ অর্থাৎ সব কিছুর আধিপত্য ও অধিকার একমাত্র আল্লাহর।

আল্লাহ্ বলেন :

) لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ(

অর্থাৎ আসমান ও জমিন যা কিছু আছে সব কিছুর উপর আল্লাহরই আধিপত্য ও সত্তাধিকার রয়েছে। (সূরা : বাকারা , আয়াত নং 284।)

সার্বভৌমত্তের একত্ববাদ : অর্থাৎ কেবলমাত্র আল্লাহরই আইন-বিধি পরিচালিত হবে। আল্লাহ্ বলেন :

) وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ(

আর যারা আল্লাহর প্রেরিত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না , এমন সব লোকেরা হচ্ছে কাফের (আল-মায়েদা : 44)।