57. আল্লাহর আদল্ বা ন্যায়পরায়নতা :
কারণেই আমরা মহান আল্লাহর আদল বা ন্যায়পরায়নতার ব্যাপারে পূর্ণবিশ্বাসী এবং একথা বলে থাকি যে : মহান আল্লাহর পক্ষে অসম্ভব যে , তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি জুলুম বা অবিচার করবেন। বিনা কারণে কাউকে শাস্তি দিবেন অথবা বিনা কারণে কাউকে ক্ষমা করে দিবেন। তাঁর পক্ষে অসম্ভব যে , তিনি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা রক্ষা করবেন না। তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় যে , অসৎ ও পাপীদেরকে নিজের পক্ষ থেকে নবুয়্যত ও রিসালতের পদে মনোনয়ন দিবেন ও মু 'জিযাহ্ বা আলৌকিক ঘটনা তাঁর অধিকারে দিয়ে দিবেন।
আর এটাও তাঁর পক্ষে সম্ভব ব্যাপার নয় যে , তাঁর বান্দাদেরকে যেখানে পরম কল্যাণ , সফলতা ও পূর্ণাঙ্গতার শীর্ষে পৌঁছার জন্যে সৃষ্টি করেছেন সেখানে তাদেরকে পথ প্রদর্শক ও নেতাহীন ছেড়ে দিবেন! কেননা , এ কাজ তাঁর পক্ষে বেমানান ও বিশ্রী। আর কদর্য ও বিশ্রী কাজ আল্লাহর জন্যে কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়।
58. মানুষের স্বাধীনতা :
ঠিক একই কারণে আমরা বিশ্বাস করি যে , মহান আল্লাহ্ মানুষকে স্বাধীনতার অধিকার দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কাজ-কর্ম ও ভূমিকা তার ইচ্ছা ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে উৎসারিত হয়। কেননা , যদি এরূপ না হয় অর্থাৎ আমরা যদি মানুষের কাজ-কর্মের বা আমলের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তির নীতিতে বিশ্বাসী হই তাহলে অসৎকর্মশীল লোকদেরকে শাস্তি প্রদান প্রকাশ্য ও স্পষ্ট অবিচার এবং সৎকর্মশীল লোকদের প্রতি পুরস্কার প্রদান অহেতুক ও নিরর্থক হয়ে দেখা দিবে। আর এ জাতীয় কাজ আল্লাহর পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার ভিন্ন কিছুই নয়।
সার কথা হচ্ছে যে , বিবেক-বুদ্ধি বৃত্তিক সৌন্দর্য ও কদর্যতার বিষয়টি মেনে নেয়া এবং অনেক সত্য ও বাস্তবতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা ও বিচক্ষণতার বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া দিন ও ইসলামী শারীয়াতের মূল ভিত্তিসমূহ , নবী-রাসূলগণের নবুয়্যাত , রেসালত ও আসমানী কিতাবসমূহকে গ্রহণ করে নেয়ারই নামান্তর। কিন্তু আগেও যেমন বলা হয়েছে যে , মানুষের অবগতি ও উপলব্দি ক্ষমতা সীমিত। এ কারণে , শুধুমাত্র এর দ্বারাই মানুষের মূল লক্ষ্য- কল্যাণ ও পূর্ণাঙ্গতার সাথে সম্পর্ক যুক্ত সমস্ত বাস্তবতা ও সত্যকে উপলব্দি করতে পারেনা। আর এ কারণেই আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী-রাসূল প্রেরণ ও আসমানী কিতাব অবশ্য প্রয়োজনীয়।
59. ফীকাহ্গত মাসায়েল নির্ধারণের একটি উৎস হল , আক্বল :
ইতিপূর্বে যা বলা হলো তার আলোকে আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে যে , ইসলামী জীবন বিধানের আইন-কানুন নির্ধারণের জন্যে যে মৌলিক উৎসগুলো রয়েছে তার মধ্যে একটি হল আকল (তথা জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেক)। অর্থাৎ আক্বল , মাসয়ালা-মাসায়েল নির্ণয়ের আরেকটি দলীল। এখানে আক্বল এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে , আকল যখন কোন বিষয়কে নিশ্চিত ও দৃঢ়ভাবে অনুধাবণ করতে পারে তখন সে বিষয়ে বিচার-ফয়সালাও দিতে পারে ; যেমন : যদি ধরে নেয়া যায় যে , জুলুম- অত্যাচার , আমানতের খিয়ানত , মিথ্যা কথা বলা , আত্ম হত্যা করা , ধন-সম্পদ চুরি করা , মানুষের হক-অধিকার নস্যাত করা ইত্যাদি হারাম হওয়ার বিষয়টির দলীল কোরআন , হাদীস ও আলেম-ওলামাদের ঐক্যমতের কথা কোথাও খুঁজে না পেতাম ; তখন আমরা“
আক্বল”
এর দলীল দ্বারা ঐ বিষয়গুলোকে হারাম বলে ঘোষনা করতাম ; আর দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করতাম যে , মহা জ্ঞানী আল্লাহ্ এ বিষয়গুলোকে আমাদের জন্যে হারাম হিসাবে গণনা করেছেন এবং এ সমস্ত কাজ আঞ্জাম দিবার ক্ষেত্রে তিনি কখনো রাজি ও সম্মত নন। আর এ (আক্বল দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ) আমাদের জন্যে একটি দলীল বা হুজ্জাত।
আল-কোরআনে অসংখ্য আয়াত আছে যার ব্যখ্যা-বিশ্লেষণে“
আকল”
এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আর এ আয়াতসমূহ বর্ণনা করছে যে , আকল একটি দলীল।
একত্ববাদের রাস্তা সন্ধানের জন্যে আল-কোরআন আকল ও বিচক্ষণতাকে আহ্বান জানাচ্ছে যেনো আসমান ও যমীনের সৃষ্টি নিপুনতায় আল্লাহর নিদর্শণাবলীর উপর গবেষণা করে। আল্লাহ্ বলেন :‘
নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির (নিপুনতার) মধ্যে বিবেকবান লোকদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শনাবলী বিদ্যমান’
(সূরা : আলে ইমরান-190)।
অপর পক্ষে আল্লাহর এ নিদর্শনাদি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও হৃদয়ঙ্গম শক্তিকে বৃদ্ধি করা। যেমন : মহান আল্লাহ্ বলেন :‘
লক্ষ্য করে দেখো ; আমরা আমাদের নিদর্শনাবলীকে কিরূপে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছি- যাতে করে তারা অনুধারন করতে পারে’
(সূরা : আনআম 65)।
আরেক পক্ষে সমস্ত মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে যেন মন্দ ও কদর্য থেকে ভাল ও সুন্দরকে পৃথক এবং এ পথে চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগায়। যেমন , আল্লাহ্ বলেন :
‘
তুমি বল! চক্ষুষ্মান ও দৃষ্টি শক্তিহীন (জ্ঞানী-বিজ্ঞ ও অজ্ঞ-জাহেল) লোকেরা কি এক সমান ? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা কর না ? (আল-আনআম : 50)।
অবশেষে সমস্ত সৃষ্টিকুলের মধ্যে নিকৃষ্টতম প্রাণী হিসাবে সে সমস্ত লোকদের গণনা করা হয়েছে -যারা নিজেদের চোখ , কান , জিহ্বা ইত্যাদিকে কাজে লাগায় না এবং বিবেক ও বিচক্ষণতা শক্তি ব্যবহার করে না। যেমন , আল্লাহ্ বলেন :
‘
নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম প্রাণী আল্লাহর নিকট সে সমস্ত মুক ও বধির লোকেরা-যারা আক্বল বা বিবেক-বুদ্ধি খরচ করে বুঝার চেষ্টা করে না’
(সূরা : আল-আনফাল , আয়াত নং 22)।
এভাবে আক্বল , বিবেক-বুদ্ধি ও বিচক্ষণতাকে চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে কাজে লাগানোর ব্যাপারে আল-কোরআনে আরো অসংখ্য-অগণিত আয়াত রয়েছে। এমতাবস্থায় কি করে সম্ভব হতে পারে যে , বিবেক-বুদ্ধি , আক্বল , বিচক্ষণতা ও চিন্তা শক্তিকে ইসলামের মৌলিক ও শাখা- প্রশাখার ক্ষেত্রে অলক্ষে বাদ দেয়া যায় ?
60. আবারও আল্লাহর আদ্ল :
আগেও যেমন ইংগিত করেছি যে , আমরা আদ্ল বা ন্যায়পরায়নতায় বিশ্বাসী এবং দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করি যে , আল্লাহ্ তাঁর কোন বান্দার প্রতি বিন্দুমাত্র অন্যায় ও জুলুম করা বৈধ মনে করেন না। কেননা , জুলুম কদর্য ও অপছন্দনীয় কাজ। আর আল্লাহর মহান সত্তা এ জাতীয় কাজ- কর্ম থেকে পাক-পবিত্র।
আর আল্লাহ্ বলেন :
‘
তোমার প্রভু কারো প্রতি জুলুম করেন না’
(সূরা : কাহাফ আয়াত নং 49)।
দুনিয়া বা আখেরাতে কেউ যদি কোন শাস্তির মধ্যে লিপ্ত হয় তাহলে তার কারণ সে নিজেই। যেমন আল্লাহ্ বলেন :
‘
আল্লাহ্ (পূর্বের জাতী সমূহের যারা-আল্লাহর শাস্তিতে নিপতিত হয়েছিল) তাদের প্রতি কোন অবিচার করেননি বরং তারা নিজেরাই নিজেদের আত্মার প্রতি জুলুম করেছিল’
(সূরা : তাওবাহ , আয়াত নং 70)।
শুধুমাত্র মানুষই নয় বরং কোন সৃষ্টিই এ পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবিচারের শিকারে পরিণত হবে না। আল্লাহ্ বলেন :
‘
আল্লাহ্ কখনো বিশ্ববাসীর কারো উপর কোন প্রকার জুলুম করতে চান না’
(সূরা : আলে ইমরান 108)।
অবশ্য এ সমস্ত আয়াতসমূহ আকলের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ ও দিক নির্দেশনা করছে।
অসাধ্য কাজকর্ম বর্জনীয় :
এ কারণেই আমরা বিশ্বাস করি : যে কাজ সম্পাদন করা মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার তা করা বাঞ্ছনীয় নয়। এ পর্যায়ে আল্লাহ্ বলেন :
‘
আল্লাহ্ কারো উপর কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেননা কিন্তু যা সে করতে সক্ষম’
(সূরা : আল- বাকারাহ , আয়াতনং 285)।
61. বিপদজনক ঘটনাবলীর দর্শন :
একই কারণে আমরা আরো বিশ্বাস করি : এ জগতে যে সমস্ত বিপদজনক ঘটনা সংঘটিত হয় ; যেমন ভূমিকম্প ও নানা প্রকার বালা-মুসিবত , সে গুলো কখনো কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি হিসাবে আসে। এভাবে যে , যেমন হযরত লূত (আঃ) এর জাতি সম্পর্কে কোরআনে এসেছে :‘
যখন আমাদের নির্দেশ এসে পৌঁছালো , আমরা তাদের শহরগুলোকে (আবাদি গুলোকে) উলোটপালোট করে দিলাম এবং তাদের উপর মুষলধারে ঝামা পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগলাম’
(সূরা : হুদ আয়াত নং 82)।
অকৃতজ্ঞ বিদ্রোহী লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন :
‘
তারা (আল্লাহর আনুগত্যতার ব্যাপারে) অবাধ্যতা করলো , সুতরাং আমরা তাদের প্রতি ধংসকারী প্লাবন পাঠালাম’
(সূরা : আস সাবা , আয়াত নং 16)।
এভাবে দূর্যোগপূর্ণ ঘটনাবলীর আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে জাগ্রত করা-যাতে করে তারা সঠিক পথে ফিরে আসে। আল্লাহ্ বলেন :
‘
স্থলভাগ ও জলভাগে যে সমস্ত ধবংসলীলা ও দূর্যোগ ছড়িয়ে পড়ছে তা এ কারণে যে তারা নিজেরা নিজেদের কৃতকর্ম দ্বারা অর্জন করেছে। আর আল্লাহ্ চাচ্ছেন যে , তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কিয়দাংশের স্বাদ আস্বাদন করাবেন ; তাতে হয়তো তারা (মন্দ থেকে) ফিরে আসবে’
(সূরা : আর রোম , আয়াত নং 41)।
বিপদজনক ঘটনাবলীর আরেকটি দিক হচ্ছে এমন সব বালা-মুছিবত-যা মানুষ নিজের হাতে নিজেই যোগান দেয়। অন্য কথায় , এ সব বালা-মুছিবত তাদের নিজেদেরই কৌশলহীন ও অযৌক্তিক কৃতকর্মের পরিণতি। আল্লাহ্ বলেন :
‘
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন আনয়ন করে’
(আর রাদ : 11)। আল্লাহ্ বলেন :
‘
তোমাদের প্রতি যে কল্যাণ ও সফলতা এসে উপস্থিত হয় তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে , আর অমঙ্গল ও বিপদাপদ যা কিছু আসে সেগুলো তোমাদের নিজেদেরই (মন্দ কর্মের) পরিণতি’
(সূরা : আন-নিসা , আয়াত নং 79)।
62. বিশ্ব-জাহান সুবিন্যস্ত :
আমরা বিশ্বাস করি : সমস্ত সৃষ্টি জগতই সুবিন্যস্ত ভাবে সাজানো এক অনুপম পরিবেশ। সব কিছু প্রয়োজন মোতাবেক সুশৃংখলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কোথাও কোন বিষয়ই ন্যায়-নিষ্ঠা , ইনসাফ ও কল্যাণ বিরোধী দেখা যায় না। আর মানব সমাজে যদি কোন প্রকার অকল্যাণকর ও মন্দ পরিবেশ দেখা যায় তাহলে তা মানুষদের নিজেদেরই সৃষ্টি।
আবারও বলছি , আমরা বিশ্বাস করি : আল্লাহর আদ্ল বা ন্যায় পরায়নতা আমাদের আকীদা-বিশ্বাসের অন্যতম একটি স্তম্ভ ও ভিত্তি। এটা ব্যতীত একত্ববাদ , নবুয়্যত ও পরকালের বিষয়টিও হুমকীর সন্মুখীন। এ পর্যায়ে ইমাম জা 'ফর ছাদিক (আঃ) বলেন :“
একত্ববাদ ও আল্লাহর আদ্ল হচ্ছে দ্বীনের মৌলিক ভিত্তি’
। এরপর তিনি আরো বললেন :‘
তাওহীদ বা একত্ববাদ হচ্ছে , যে সব জিনিষ (অন্যায় কাজ) তোমার জন্যে করা সম্ভব (অর্থাৎ তোমার মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্যাবলী পাওয়া যায়) সেগুলো তোমার প্রভুর মধ্যে পাবে না। (তিনি সে সব থেকে পাক ও পবিত্র) কিন্তু আল্লাহর আদ্ল হচ্ছে এমন কোন কাজ খোদার প্রতি সম্পর্কযুক্ত ও আরোপ করনা-যা তুমি নিজে যদি আঞ্জাম দাও তাহলে তোমাকে সে কাজের জন্যে তিরস্কার করা হবে’
(বিহারুল আনোয়ার , খঃ-5ম , পৃঃ-17 , হাদীস নং 23)।
63. ফীকাহ্গত মাসায়েল নির্ধারনের চারটি উৎস :
আমাদের ফীকাহ্গত মাসয়ালা-মাসায়েল নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আগেও যেমন ইশারা করেছি যে , এ পর্যায়ে আমাদের চারটি উৎস স্থল রয়েছে :
প্রথম :“
কিতাবুল্লাহ্”
বা আল্লাহর কিতাব আল-কোরআন-যা ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দীক্ষা এবং হুকুম-আহ্কাম নির্ণয়ের মূল উৎস।
দ্বিতীয় :“
সুন্নাতে রাসূল”
ও“
আহলে বাইতের মা‘
সুম ইমামগণের সুন্নাত”
।
তৃতীয় :“
ইজমা ও ইত্তেফাকে ওলামা ও ফোকাহা”
যা মা‘
সুমগণের দৃষ্টিভঙ্গিকেই উম্মোচন ও প্রকাশ করে।
চতুর্থ :“
দলীলে আক্বল”
। দলীলে আক্বলের দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আকল যখন কোন বিষয় পরিপূর্ণ রূপে অনুধাবন করতে পারে এবং নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তার সাথে ফয়সালা দিতে পারে তখন আকল আমাদের জন্যে দলীল ও হুজ্জাত। কিন্তু আক্বলের দলীল যদি ধারণা প্রসূত হয় যেমন“
কিয়াস”
ও“
ইসতেহ্সান”
তাহলে আমাদের ফীকাহ্গত মাসয়ালা-মাসায়েলের কোন একটির ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। এ কারণে যে , কোন ফকীহ যখন নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করে কোন বিষয়কে কল্যাণকর হিসাবে দেখে অথচ কোরআন ও হাদীসে যে ব্যাপারে কোন নির্দেশ আসেনি , তাহলে এ ধরণের দলীলে আক্বলীকে আল্লাহর হুকুম হিসাবে বলতে পারেন না। অনুরূপভাবে ধারণা প্রসূত কিয়াসের আশ্রয় নেয়া শারীয়াতের হুকুম- আহ্কাম নির্ণয়ের জন্যে আমাদের নিকট বৈধ নয়। কিন্তু মানুষ যেসব ক্ষেত্রে দৃঢ়তা অর্জন করবে , যেমন জুলুম করা , মিথ্যা কথা বলা , চুরি করা , খিয়ানত করা ইত্যাদি পর্যায়ে আক্বলের দলীল নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর তা এ দাবীর ভিত্তিতে : আক্বল যা হুকুম করে শারীয়াতের নির্দেশ ও তাই তথা আক্বল শারীয়াতের হুকুমেরই বর্ণনাকারী।
প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে , আমরা হুকুম-আহ্কাম ও বিধি-বিধান সম্পর্কে“
মুকাল্লাফদের”
(যাদের উপর শারীয়াতের হুকুম পালন অপরিহার্য কর্তব্য) প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তাদের ইবাদতগত , রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সমাজনৈতিক বিষয়াবলীর পর্যায়ে রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও মা‘
সুম ইমামগণের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমান হাদীস ও বর্ণনা আমাদের হাতে রয়েছে। কাজেই এ জাতীয় ধারণা জনিত দলীল-প্রমাণের আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা দেখতে পাই না। এমনকি আমরা বিশ্বাস করি যে , কালের আবর্তনের কারণে নব উদ্ভাবিত বিষয়াবলীর হুকুম-আহ্কাম বের করার জন্য কোরআন ও রাসূল (সাঃ) এবং মা‘
সুমগণের হাদীস ও বর্ণনাগুলোতে মূলনীতি ও সামগ্রিক দিকগুলো বর্তমান রয়েছে-যা আমাদেরকে ধারনা জনিত দলীল-প্রমাণ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেয়।