পঞ্চম অধ্যায়
আল্লাহর বন্ধুদের যিকর
হযরত শেইখের কিছু মূলনীতি ছিলো , তিনি বিভিন্ন সময় তার উপর জোর দিতেন। যদিও সেসব নীতিমালা হাদীস থেকে নেয়া। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হযরত শেইখের সে বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
এ ঐশী ব্যক্তিত্ব ও সৎকর্মশীল লোকের গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে যে তার কথাগুলো ছিলো নিজস্ব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।
নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি
হযরত শেইখ তার শিষ্যদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন যেন তারা নিজেদেরকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে সর্বাবস্থায় উপস্থিত আছে বলে মনে করে। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন :
“
আল্লাহকে স্মরণ করো খামিল যিকর-এর মাধ্যমে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো :‘
খামিল যিকর কী ?’
তিনি বললেন :‘
নিঃশব্দে ও গোপনে যিকর ।”
অন্য এক হাদীসে মহানবী (সঃ) বলেছেন :
“
গোপন যিকর যা ফেরেশতারা শুনতে পায় না , তা তারা যে যিকর শোনে তার চেয়ে সত্তরগুণ উত্তম।”
গোপন যিকর এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ্য যিকর এর উপরে এ জন্য যে তা মানুষের আত্মিক উন্নতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলে। জিহবায় স্মরণ করা সহজ , কিন্তু অন্তরের মাধ্যমে স্মরণ বিশেষ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে তা করা বেশ কঠিন। ইমাম বাক্বির (আঃ) একে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি বলে মনে করেন :
“
তিনটি কাজ মানুষের জন্য কঠিন :‘
বিশ্বাসীদের ইনসাফ , কোন ব্যক্তির আর্থিক সাহায্য তার ভাইয়ের জন্য এবং আল্লাহকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করা। যেমনঃ মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করবে গুনাহর (উস্কানী) সম্মুখীন হলে এবং তা করার সিদ্ধান্ত নিলে। তখন এ স্মরণ তাকে গুনাহতে বাধা দেয়। তা আল্লাহর কথা অনুযায়ী :
)
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ(
“
নিশ্চয় যারা ধার্মিক যখন শয়তানের কাছ থেকে কোন খারাপ চিন্তা তাদেরকে স্পর্শ করে তারা আল্লাহর স্মরণ করে এবং (এরপর) পরিস্কার দেখতে পায়।”
(সূরা আল আরাফ-201)
অন্য এক হাদীসে ইনসাফ , দান-খয়রাত এবং নিরবচ্ছিন্ন যিকরকে ঐশী বাধ্যবাধকতার মধ্যে সবচে’
কঠিন বলে পাওয়া যায়। ইমাম সাদিক (আঃ) ব্যাখ্যা করেছেন‘
সর্বাবস্থায় স্মরণ বলতে তিনি যা বুঝিয়েছেন তা শুধু জিহবার মাধ্যমে স্মরণ নয় , যদিও তা যিকর এর অন্তর্ভুক্ত।
“
আল্লাহর স্মরণ বলতে আমি বুঝাইনা যে ,“
সুবহানাল্লাহ , ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার”
বলা। যদিও এগুলোকেও যিকর বিবেচনা করা হয় , কিন্তু যা বোঝানো হয়েছে তা হলো আনুগত্য ও অবাধ্যতার সম্মুখীন হলে আল্লাহকে স্মরণ করা।”
এটি মানুষের জন্য খুবই কঠিন যে সে নিজেকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত দেখবে। যদি মানুষ এ চেতনা লাভ করে তাহলে তাকে শরীরী আকাঙ্ক্ষা ও শয়তানের পরাজিত করা ও তার রবের অবাধ্য হতে বাধ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কীভাবে শরীরী নফস ও শয়তান থেকে মুক্ত হওয়া যায়
হযরত শেইখ বলেন :
“
শরীরী নফসের খারাপ থেকে মুক্ত হওয়ার কোন পথ নেই একমাত্র আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেয়া ছাড়া এবং তাঁর কাছে নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে উপস্থিত রাখা ছাড়া। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তাঁর উপস্থিতিতে আছো এবং আল্লাহর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নও , শরীরী নফস তোমাকে ধোঁকা দিতে পারবে না।”
নীচের আয়াতটি উল্লেখ করে :
)
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ(
“
যদি কেউ দয়ালু আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় , আমরা তার জন্য একটি শয়তান নিয়োগ দেই তার ঘনিষ্ট সাথী হওয়ার জন্য।”
(সূরা যুখরুফ-36)
হযরত শেইখ অনেক সময় বলতেন :
“
যখনই মানুষের মনোযোগ আল্লাহর কাছ থেকে সরে যায় , শরীরী নফস এবং শয়তান যারা ওঁত পেতে থাকে তারা তার অন্তরকে দখল করবে এবং তারা সেখান থেকে তাদের কাজ শুরু করে।”
আমার উপর থেকে হাত সরিয়ে নাও
হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেন যে তিনি বলেছেন :
“
আমি আমার শরীরী নফসকে দেখলাম আমার আধ্যাত্মিক অবস্থায় ; আমি একে বললাম আমার উপর থেকে তার হাত সরিয়ে নিতে! তা উত্তর দিলো : তুমি কি জানো না যে আমি তোমার উপর থেকে আমার হাত সরিয়ে নিবো না যতক্ষণ না আমি তোমাকে ধ্বংস করি!”
সম্ভবত : এ অতিন্দ্রীয় জ্ঞানের কারণে হযরত শেইখ এ কবিতায় উৎসাহী ছিলেন :“
চিরজীবনের বিদ্যালয়ে তোমার সৌন্দর্য আমাকে পথ দেখিয়েছে , তোমার উদার অনুগ্রহ আমাকে সাহায্য করেছে তোমার দাসত্বে বন্দী হতে , আমার ইতর শরীরী নফস সব অহংকারকে প্রশ্রয় দিয়েছে , তোমার রহমতের প্রবাহ আমাকে এর থাবা থেকে মুক্ত করেছে।”
ঐশী অনুগ্রহ মানুষের অন্তরে অবতীর্ণ হয় তাঁর নিরবচ্ছিন্ন স্মরণের মাধ্যমে। যখন আল্লাহর স্মরণ অন্তরে প্রবেশ করে তখন প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তা অন্তরকে পবিত্র করবে শয়তানী উস্কানী ও শরীরী অহংকার থেকে এবং একে প্রস্তুত করবে পরম দানশীলের কাছ থেকে ঐশী অনুগ্রহ লাভের জন্য ।
এ বিষয়ে আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) বলেন :
‘
অন্তরের সুস্থতার মূল নির্ভর করে এর আল্লাহর স্মরণে নিমজ্জিত থাকায়।’
নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর সামনে উপস্থিত থাকার অনুভূতি মানুষকে শরীরী নফস ও শয়তানের হাতে বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করে এবং পরিণতিতে অন্তরের বিভিন্ন রোগ দূর করে। ইমাম আলী (আঃ) বলেন :
“
আল্লাহর স্মরণ শয়তানকে বিতাড়িত করে।”
“
আল্লাহর স্মরণ নফসের রোগের ওষুধ।”
“
হে যাঁর নাম হচ্ছে ওষুধ ,যাঁর স্মরণ হচ্ছে আরোগ্য।”
আল্লাহকে নিরবচ্ছিন্নভাবে স্মরণের মাধ্যমে ঐশী অনুগ্রহ অন্তরকে মানব জীবন দেয় এবং একে জ্যোতির্ময় করে , নফসকে শক্তিশালী করে , মানুষের অন্তরকে আল্লাহর ঘনিষ্ট করে , ধীরে ধীরে মানুষকে দেয় প্রেমের উজ্জীবনী শরবত ও ভালোবাসা।
ইমাম আলী (আঃ) যিনি আল্লাহকে খুব ভালো জানতেন এবং যিনি মানুষের নফসের রোগ সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন তিনি বলেন :
“
যে আল্লাহকে স্মরণ করে , আল্লাহ তার অন্তরকে জীবিত করবেন এবং তার মন ও বুদ্ধিকে আলোকিত করবেন।”
“
আল্লাহর নিরবচ্ছিন্ন স্মরণ নফসকে রসদ জোগায়।”
“
আল্লাহর নিরবচ্ছিন্ন স্মরণ তাঁর নৈকট্য লাভের চাবি।”
“
যে আল্লাহকে প্রচুর স্মরণ করে , আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।”
এখানে সংক্ষেপে যা তুলে আনা হলো তা হলো আল্লাহকে স্মরণ রাখা নেয়ামতের এক ক্ষুদ্র অংশ এবং এর মাঝেই রয়েছে মানব সত্ত্বাটির উন্নতি ও সমৃদ্ধি।
উপরের কথাগুলো সামান্য ভাবলেই পরিস্কার হয়ে যাবে যে কত মূল্যবান সে মুহূর্তগুলো যখন আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি এবং কত ক্ষতিকর সে নিশ্বাসগুলো যা আমরা গ্রহণ করি আল্লাহকে স্মরণ না করে।
ঘুমের মধ্যে আল্লাহকে স্মরণ করা
ডঃ সুবাতি বলেন :
‘
একবার আমরা নিমন্ত্রিত হলাম দুপুরের খাবারের জন্য বৈঠকের এক সদস্যের বাসায়। দুপুরের খাবারের পর সবাই বিশ্রাম নিতে অগ্রসর হলো। আমি শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করছিলাম এবং এ সম্পর্কে ভাবছিলাম চোখ বন্ধ করে। এ সময় হযরত শেইখ যিনি আমার সামনে বসে ছিলেন এবং আমাকে খেয়াল করছিলেন , বন্ধুদের পরামর্শ দিলেন :
“
তোমাদের উচিত আল্লাহকে স্মরণ করা যখন তোমরা ঘুমাচ্ছো।”
ঐ একবারই আমি তাকে ঘুমের মধ্যে আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য বলতে শুনেছি আর কোন সময় উল্লেখ করেছেন কিনা মনে করতে পারি না।”
বারযাখ থেকে এক সংবাদ
হযরত শেইখের এক বন্ধু বর্ণনা করেন : আমি হযরত শেইখের কাছে গেলাম , তিনি বললেন :
“
আমি এক কম বয়সী ছেলেকে বারযাখে দেখলাম যে বলছে :‘
তুমি জানো না এখানে কী ঘটছে! যখন তুমি এখানে আসবে তুমি জানতে পারবে ; একটি নিশ্বাসও যা তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারণে নিয়েছো তা তোমার ক্ষতিতে পরিণত হয়েছে।”
যিকর এর গুণাবলী
আমরা যখন যিকর এর গুণাবলী (উপকার) সম্পর্কে কথা বলি আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে হযরত শেইখের বিদ্যালয় প্রেমের বিদ্যালয় , ফলাফলের নয়। তিনি আল্লাহ ছাড়া আর কিছু চান না। যে নিজের সম্পূর্ণতাও চায় না সেই ফল লাভ করবে। একইভাবে আল্লাহকে স্মরণ রাখার ফলাফল যা-ই হোক , লক্ষ্য যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু না হয়।
দু’
টি যিকরকে গুরুত্ব দেয়া
হযরত শেইখের এক ভক্ত বলেন :
‘
হযরত শেইখ‘
ইসতিগফার’
(ক্ষমা চাওয়া) ও‘
সালাওয়াতকে’
(দরুদ) খুব বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন , এবং জানতে পেরেছেন যে এ দুটি যিকর আল্লাহর দিকে সফরকারীর দু’
টো পাখার মত।
হযরত শেইখ বলতেন :‘
যদি তোমরা জীবনে প্রচুর দরুদ পাঠাও , আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তোমার মৃত্যুর সময় তোমার ঠোঁটে চুমু দিবেন।’
শরীরী আকাঙ্ক্ষার উপর বিজয় লাভ করা
1. অধ্যাবসায়ের সাথে এ যিকর-“
লা হাওলা ওয়ালা ক্বুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম”
-‘
কোন নিরাপত্তা নেই ও কোন শক্তি নেই শুধু মাত্র আল্লাহর মাধ্যম ছাড়া’
2‘
ইয়া দায়েমু ইয়া ক্বায়েমু’
-‘
হে চিরস্থায়ী! হে চির উপস্থিত’
3. শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে দমন করার জন্য , নিচের যিকরটি পড়ুন তের বার অথবা একশত বার করে সকালে ও সন্ধ্যায় :
‘
আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু ওয়া ইলাইকাল মুশতাকা ওয়া আনতাল মুসতায়ান।’
‘
হে আল্লাহ , আপনারই সব প্রশংসা , আপনার কাছেই সব অভিযোগ করা হয় এবং আপনারই সাহায্য চাওয়া হয়।’
4. নীচের যিকরটি প্রতি রাতে একশত বার যিকর করুন :“
ইয়া যাকিয়্যু ত্বহিরু মিন কুল্লি আফাতিন বিক্বুদসিহী।”
হে পবিত্র ও পরিস্কার সমস্ত অপবিত্র তা থেকে , আপনার পরম পবিত্রতার মাধ্যমে।
হযরত শেইখ উপরোক্ত যিকরটি শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে দমন করার জন্য বলেছেন :“
আমি নিজে তা ব্যবহার করেছি এবং তা আবৃত্তি করার মাধ্যমে শুরু করেছি আধ্যাত্মিকতার সন্ধান। একদিন আমি যিকরটি এতবার করলাম যে আমার শরীরী নফসের মৃত্যু ঘটলো। তাই আমি নিজেকে বললাম : আমি তা চালিয়ে যাবো যতক্ষণ না আমার (দুনিয়াবী) অস্তিত্ব অনস্তিত্বে পরিণত হয়। কিন্তু যখন কিছু সময়ের জন্য পড়তে অবহেলা করলাম যা মানুষের প্রকৃতির জন্য স্বাভাবিক , আমি দেখলাম আমার শরীরী নফস জীবিত হয়ে উঠেছে। কোন মানুষ যদি তার মনোযোগকে পৃথিবীর দিকে পরিচালিত করে তার শরীরী নফস শক্তিশালী হয়ে উঠবে ; এ যিকরটি শরীরী নফসকে পরাজিত করায় খুবই কার্যকর।”
রক্তের সম্পর্কের ছাড়া অন্য নারীর সাক্ষাতে আকর্ষণ দমন করা
ডঃ ফারযাম বলেন :
“
হযরত শেইখ রজব আলী এই যিকিরটি করতেন :‘
ইয়া খাইরা হাবিবীন ওয়া মাহবুবিন সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলীহি।’
‘
হে শ্রেষ্ঠ প্রেমিক ও প্রিয়তম , শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের উপর।’
রক্তের সম্পর্কের বাইরে অন্য নারীর দিকে প্রথম দৃষ্টিপাতের পরেই এটি খুবই কার্যকর বলে বলেছেন । তিনি আমাকে বেশী বেশী তা আবৃত্তি করতে বলেছেন শয়তানের উস্কানী থেকে বাঁচার জন্য!
“
যখন তুমি তোমার রক্তের সম্পর্ক ছাড়া অন্য নারীর দিকে তাকাও যদি তুমি উপভোগ না করো তাহলে তুমি অসুস্থ। কিন্তু যদি তুমি উপভোগ করো তাহলে অবশ্যই তোমাকে তার থেকে চোখ সরিয়ে নিতে হবে এবং বলবে :
‘
ইয়া খাইরা হাবিবীন------।
যার অর্থ :
‘
হে আমার রব! আমি তোমাকে ভালোবাসি। এরা পছন্দনীয় না ; যা কিছু মরণশীল তা পছন্দনীয় নয়----- ।’
আল্লাহর ভালোবাসায়
এক হাজার বার সালাওয়াত (দরুদ প্রতি রাত্রে) চল্লিশ রাতের জন্য।
বাতেন (অভ্যন্তর) কে পবিত্র করা
হযরত শেইখ মনে করতেন সূরা সাফ্ফাত প্রত্যক সকালে এবং সূরা হাশর প্রতি রাত্রে তেলাওয়াত করা বাতেনকে পবিত্র করার জন্য কার্যকারী।
হযরত শেইখের এক ভক্ত বলেন তিনি তাকে প্রতি রাত্রে সূরা হাশর পড়তে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন এ সূরার শেষ দিকে আল্লাহর ইসমে আযম রয়েছে।
ইমাম মাহদী (আঃ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য
সূরা বনী ইসরাইলের 80 নং আয়াতের এ অংশ একশত বার করে চল্লিশ রাত পড়লে ইমাম মাহদী (আঃ)- এর সাক্ষাত পাওয়া যাবে।
)
رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا(
“
হে আমার রব! আমার প্রবেশ হোক সত্য ও সম্মানের দরজা দিয়ে এবং একইভাবে আমার প্রস্থান হোক সত্য ও সম্মানের দরজা দিয়ে এবং আমাকে দান করুন আপনার কাছ থেকে অনুমোদন (আমাকে) সাহায্য করার জন্য।”
(সূরা বাণী ইসরাইলঃ 80)
বর্ণনায় এসেছে হযরত শেইখের অনেক ছাত্র ইমাম মাহদী (আঃ)-এর সাক্ষাত পেয়েছে এ যিক্রের মাধ্যমে ; যদিও সাক্ষাতের সময় তারা ইমাম (আঃ) কে চিনতে পারে নি।
দুটি ঘটনা নীচে দেয়া হলো :
1। কিভাবে আয়াতুল্লাহ যিয়ারাতি এ সম্মান লাভ করেন
হযরত শেইখ আয়াতুল্লাহ যিয়ারাতিকে মাহদী শাহরে এ যিকরের মাধ্যমে ইমামের সাক্ষাত লাভের জন্য বলেছিলেন। তার আদেশ পালনের পর তিনি হযরত শেইখের কাছে গেলেন এবং বললেন যে এতে কোন ফল পান নি।
হযরত শেইখ কিছুক্ষণ ভেবে বললেন :
“
আপনি যখন মসজিদে নামায পড়ছিলেন একজন সাইয়্যেদ আপনাকে বলেছিলেন :
‘
বাম হাতে আংটি পড়া মাকরুহ (অপছন্দের)। আর আপনি বলেছিলেন :
‘
সব মাকরুহ অনুমোদিত।’
সেই পবিত্র মানুষটি ছিলেন ইমাম মাহদী (আঃ)।”
2। এক দোকানদার এ সম্মান পেয়েছিলো
দুই দোকানদার দায়িত্ব নিয়েছিলো এক সাইয়্যেদ পরিবারের দেখাশোনা করবে। তাদের একজন হযরত শেইখের এ যিকর শুরু করে ইমাম (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য। চল্লিশতম রাতের আগে সাইয়্যেদ পরিবারের একটি শিশু তার দোকানে গেল এবং তার কাছে একটি সাবান চাইলো। দোকানদার একটু অভিযোগ করলো কেন তার মা তাকে আরেক জনের কাছে পাঠায় নি- অন্য দোকানদারের কথা বুঝিয়ে -তারা যা চায় তার জন্য।
এ লোকটি বললো :
“
সেই রাতে আমি যখন ঘুমাতে গেলাম , আমি শুনলাম কেউ আমাকে ডাকছে। আমি বাইরে দেখতে গেলাম এবং কাউকে দেখতে পেলাম না। আমি আবার বিছানায় গেলাম। আমি শুনলাম আমার নাম ধরে কন্ঠস্বরটি ডাকছে----। তৃতীয় বার আমি আবার বাইরে গেলাম দেখতে। যখন আমি ঘরের দরজা খুললাম , আমি দেখলাম একজন সাইয়্যেদ তার চেহারা ঢেকে আছেন , বললেন :
“
আমরা আমাদের সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে পারি কিন্তু আমরা চাই তুমি উঁচু মাক্বাম (স্থান) অর্জন করো।”
সমস্যা সমাধান ও অসুস্থতা দূর করার জন্য
ডঃ ফারযাম বলেছেন : হযরত শেইখ কোরআনের আয়াত , দোয়া ও সাথে সালাওয়াত পড়তে বলতেন যিকর হিসেবে সমস্যা সমাধান ও অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভের জন্য।
‘
হে আমার রব! আমি পরাজিত , আমাকে সাহায্য করুন আপনি শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।’
একবার আমার একটি সমস্যা হলো , হযরত শেইখ বললেন এ আয়াত যিকির করতে :
‘
হে আমার রব , আমি দুর্দশাগ্রস্ত এবং আপনি সবচে করুণাময়’
তিনি বলতেন :
“
এগুলো হলো যিকর , এগুলো দরুদের সাথে বলো।”
অথবা যখন আমাদের বাচ্চারা অসুস্থ হতো তিনি আমাদের বলতে বলতেনঃ
‘
হে তিনি যার নাম হলো ওষুধ , যার স্মরণ হচ্ছে আরোগ্য ; মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।’
গরম ও ঠান্ডা এড়িয়ে যাবার জন্য
হযরত শেইখের একজন শিষ্য বলেন : হজ্বে আমার প্রথম যাত্রায় আমি হযরত শেইখকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কী করতে পারি চরম তাপ এড়াবার জন্য। তিনি বললেন এ আয়াতগুলো যিকর করতে ঠান্ডা ও গরম থেকে বাঁচার জন্য :
)
سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ (109) كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ(
“
শান্তি ইবরাহিমের উপর , এভাবে আমরা পুরস্কার দেই যারা সৎকর্মশীল।”
(সূরা সাফফাত-109-110)
)
يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ(
‘
হে আগুন! তুমি ঠান্ডা হও এবং হও নিরাপত্তা ইবরাহিমের জন্য’
(সূরা আম্বিয়া- 69)