আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 28928
ডাউনলোড: 5752

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 28928 / ডাউনলোড: 5752
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

ষষ্ঠ অধ্যায়

আল্লাহর বন্ধুদের দোয়া

হযরত শেইখের অন্যতম নির্দেশনা ছিলো যে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর কাছে নির্জনে মোনাজাত ও দোয়ার জন্য নির্ধারিত করা , যাকে তিনি অভিহিত করতেন আল্লাহর দরজার চৌকাঠে ভিক্ষা চাওয়া এবং বলতেন :

দোয়া আবৃত্তি করো প্রতি রাতে এক ঘন্টার জন্য , এমনও যদি হয় যে তোমার মন এর জন্য প্রস্তুত নয় , আল্লাহর সাথে নির্জনে সময় কাটানো পরিত্যাগ করো না।

তিনি আরো বলেছেন :

বিস্ময়কর নেয়ামত রয়েছে সকালে ঘুম থেকে উঠেই এবং রাতের শেষ এক তৃতীয়াংশে। তুমি যা কিছু চাও তা পেতে পারো আল্লাহর কাছ থেকে সকালে ভিক্ষা চাওয়ার মাধ্যমে। সকালে ভিক্ষা চাওয়ায় অবহেলা করো না। যা কিছু নেয়ামত তোমরা অর্জন করতে চাও তা তার মাধ্যমে সম্ভব। একজন খুব কমই ঘুমায় এবং মাশুকের সাথে মিলন ছাড়া আর কিছু চায় না। সকাল হচ্ছে তাঁর সাথে সাক্ষাত ও মিলনের সময়।

যা কিছু সুখের ভান্ডার হাফিযকে খোদা দিয়েছেন তা হচ্ছে রাতের দোয়া ও সকালের বিলাপ।

হযরত শেইখের দোয়া

হযরত শেইখ নীচের দোয়াগুলো সব সময় পড়তেন এবং তার শিষ্যদের সেগুলো পড়ার জন্য উপদেশ দিতেন :

দোয়ায়ে ইয়াসতাশির , আদিলা , তাওয়াসসূল এবং আমিরুল মুমিনিন (আঃ)-এর মসজিদে কুফার মোনাজাত যার শুরু হচ্ছে এমন :

ও আল্লাহ , আমি আপনাকে অনুরোধ করি আমাকে নিরাপত্তা দিতে যেদিন না সম্পদ না সন্তান কোন উপকারে আসবে।

এ ছাড়া ইমাম যয়নুল আবেদীন (আঃ) এর পনেরোটি মোনাজাত। এ পনেরোটি দোয়ার মধ্যে বিশেষ করে মোনাজাত-আল-মুফ-তাক্বিরীন (চরম দরিদ্রের দোয়া) এবং মোনাজাতে আল মুরিদীন (নিবেদিত প্রাণদের দোয়া)।

তিনি বলতেন :

পনেরোটি মোনাজাতের প্রত্যেকটিরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য (নেয়ামত) আছে।

তার প্রতিদিনের দোয়া

ডঃ ফারযাম বলেছেন যে হযরত শেইখের প্রতিদিনের দোয়ার একটি ছিলো :

হে আল্লাহ! শিক্ষা দিন , পূর্ণতা দিন এবং আপনার জন্য প্রশিক্ষণ দিন! হে রব! হে রিয্ক দাতা! আমাদেরকে আপনার সাথে মোলাকাতের জন্য প্রস্তুত করুন।

বৃহস্পতিবার রাতগুলোতে নামাযের পর হযরত শেইখ দোয়ায়ে কুমাইল অথবা পনেরোটি মোনাজাতের একটি পড়তেন এবং এর উপর বক্তব্য রাখতেন।

দোয়ায়ে ইয়াসতাশির পড়ো

আয়াতুল্লাহ ফাহরী হযরত শেইখ সম্পর্কে বলেন যে তিনি বলেছেন :

আমি আল্লাহকে বললাম : হে আল্লাহ! প্রত্যেকেই তার মাশুকের সাথে নীচু স্বরে প্রেমপূর্ণ কথা বলে ; আমি নিজে এ নেয়ামত চাই। আমি কি দোয়া পড়বো ? আমাকে আধ্যাত্মিক অবস্থায় বলা হলো , দোয়ায়ে ইয়াসতাশির পড়ো।

তাই তিনি দোয়ায়ে ইয়াসতাশির উদ্বীপ্ত হয়ে পড়তেন।

তাঁকে খোঁজার বাহানা বের করো

হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন যদি কারো আল্লাহর জন্য সত্যিকার আকাঙ্ক্ষা থাকে এবং সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুতে সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ শেষ পর্যন্ত তার বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিবেন এবং তাকে পথ দেখাবেন (ঐশী) গন্তব্যের। এ বিষয়ে তিনি নীচের এ আনন্দদায়ক উদাহরণটি দিতেন :

কোন বাচ্চার কান্নাকাটি এবং তার প্রত্যেক খেলনা ও চকলেট ছুঁড়ে ফেলা এবং কান্না ও অভিযোগ না থামার পর যখন তার বাবা তাকে কোলে নেয় এবং আদর করে তখন সে থামে ও শান্ত হয়। এভাবে তুমি যদি এ পৃথিবীর বিলাসকে গ্রাহ্য না করো , অভিযোগ করো এবং (এভাবে) তাঁকে পাওয়ার জন্য বাহানা ধরো সর্বশক্তিমান আল্লাহ শেষ পর্যন্ত তোমার বিষয়গুলোর দায়িত্ব নিবেন এবং তোমাকে উঁচুতে উঠিয়ে দিবেন। তখনই তুমি সত্যিকার আনন্দে পৌঁছুবে।

কান্না ও নীচুস্বরে মোনাজাতের মূল্য

হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন যে একজন মানুষ নীচুস্বরে মোনাজাত ও আল্লাহর সাথে কথা থেকে তখনই লাভবান হবে যখন সে আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর ভালোবাসা অন্তর থেকে দূর করে দিবে। যদি ব্যক্তির শরীরী আকাঙ্ক্ষা তার ইলাহ হয়ে থাকে সে সত্যবাদীতার সাথে বলতে পারবে না যে হে আল্লাহ! তিনি এ সম্পর্কে বলেন :

কান্না ও নীচুস্বরে দোয়া তখনই লাভবান হবে যখন মানুষের

অন্তরে আল্লাহ প্রেম ছাড়া আর কোন কিছুর প্রেম থাকবে না ।

হযরত শেইখের একটি শিক্ষামূলক অতিন্দ্রীয় জ্ঞান উপরোক্ত কথাকে সমর্থন করে।

ইয়া আল্লাহ কথার জবাবে একটি পয়সা

আয়াতুল্লাহ ফাহরী বলেন যে হযরত শেইখ বলেছেন :

আমি বাজারের মাঝ দিয়ে হাঁটার সময় এক ভিক্ষুক আমাকে বললো তাকে কিছু পয়সা দেয়ার জন্য। আমি পকেটে হাত দিলাম তাকে কিছু পয়সা দেয়ার জন্য। আমার হাতে দুই রিয়ালের একটি কয়েন অনুভূত হলো। আমি তা সরিয়ে দিলাম এবং এর পরিবর্তে একটি দশ শাহীর145 কয়েন নিলাম তাকে দেয়ার জন্য। দুপুরে আমি মসজিদে গেলাম নামায পড়তে। নামায পড়ার পর আমি হাত তুললাম আল্লাহর কাছে এ বলে ও আল্লাহ! আমি একথা বলার পর আমাকে অতিন্দ্রীয়ভাবে ঐ দুই রিয়ালের কয়েনটি দেখানো হলো যা আমি আমার পকেটে রেখে দিয়েছিলাম (ভিক্ষুককে দেই নি)।

এ অতিন্দ্রীয় দৃশ্যে ভাবনার কিছু বিষয় আছে :

1। শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে ইলাহ হিসেবে নেয়ার উপমা। কোরআনের আয়াত :

) أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ(

তুমি কি তাকে দেখেছো যে তার শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে ? (সূরা জাসিয়া-23)

2। মানুষ যতটুকু তার শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে মেনে চলবে আল্লাহ থেকে সে ততটুকু দূরে থাকবে। বরং সে যা চায় তার দাস হয়ে যায়। যেভাবে দুই রিয়াল কয়েন অতিন্দ্রীয় জগতে ইলাহ হয়ে দাঁড়ালো।

3। আপনি যা সবচে ভালোবাসেন তা দান করা উত্তম। একজন বিশ্বাসী তার মাশুকের পথে দান করে দিবে যা সে পছন্দ করে , তা দান করবে না যে বিষয়ে তার আগ্রহ নেইঃ

) لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ(

কোন ভাবেই তোমরা সৎকর্মশীল হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা দান করবে (উম্মুক্তভাবে) তা থেকে যা তোমরা ভালোবাসো। (সূরা আলে ইমরান-92)

আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ

হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন যে আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর পথ হচ্ছে অন্য লোকের কল্যাণ করা। যদি কোন মানুষ নামাযের জন্য যথাযথ মানসিক অবস্থা চায় ও যিকর ও আল্লাহর কাছে মোনাজাত উপভোগ করতে চায় তাকে অবশ্যই আল্লাহর জন্য আল্লাহর সৃষ্টির সেবায় থাকতে হবে। তিনি বলেছেন :

যদি তুমি পেতে চাও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনুগ্রহ এবং তার কাছে নীচুস্বরে মোনাজাতের আনন্দ , তাহলে আল্লাহর সৃষ্টির সেবা অনুশীলন করো আহলুল বায়েত (আঃ)-এর কাছ থেকে শিখে।

) وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا(

এবং তারা খাওয়ায় আল্লাহর জন্য দরিদ্র , ইয়াতিম এবং বন্দীদের , (এই বলে) আমরা তোমাদের খাওয়াই শুধু আল্লাহর জন্য! তোমাদের কাছ থেকে আমরা চাই না কোন পুরস্কার , আর না কোন ধন্যবাদ। (সূরা আল-ইনসান-89)

তিনি আরো বলেছেন :

যা মানুষের মাঝে আল্লাহর দাসত্বের আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে তা হলো বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালনের পর অন্য লোকের কল্যাণ করা।

আমরা আল্লাহর কাছ থেকে কী চাইবো ?

দোয়াতে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো দোয়াকারীর এটি জানা উচিত আল্লাহর কাছে মোনাজাতে সে কী বলবে এবং তাঁর কাছ থেকে কী চাইবে। দোয়ার উপরে তার ব্যাখ্যায় হযরত শেইখ জোর দেন কিছু শব্দগুচ্ছের উপর। যেমন :

হে আরেফদের আশার লক্ষ্য , হে আশাকারীর আশার পরম লক্ষ্য , হে আমার প্রশান্তি , হে আমার জান্নাত , হে আমার দুনিয়া , হে আমার আখেরাত।

এরপর তিনি বলতেন :

বন্ধুরা! প্রজ্ঞা শিক্ষা নাও তোমাদের ইমাম (আঃ) থেকে। দেখো ইমাম কীভাবে আল্লাহকে নীচুস্বরে বলেন : আমি আশ্রয় খুঁজছি আপনার মাঝে , আমি এসেছি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে। আমি আপনাকে চাই [আমি আপনার মাঝে আনন্দ করি]।

হযরত শেইখ তার দোয়া ও মোনাজাতে নিজে বলতেন :

হে আল্লাহ , গ্রহণ করুন এগুলো (দোয়াগুলো) প্রাথমিক (উপায়) হিসেবে আপনার সাথে মিলনের জন্য!

একজন আশেক (প্রেমিক) তার মাশুকের কাছ থেকে কী চায়

হযরত শেইখের উপরোক্ত শিক্ষাগুলো উল্লেখ করে ডঃ হামিদ ফারযাম বলেন : কোন কোন সময় হযরত শেইখ খুব সহজ সরল উপমা দিতেন চরম আধ্যাত্মিক কোন বিষয় বোঝাতে , যেমন :

একজন প্রেমিক তার মাশুকের বাড়ির দরজায় টোকা দিলো। মাশুক জিজ্ঞেস করলো : আপনি কি রুটি চান ?

প্রেমিক বললো - না

আপনি কি পানি চান ?

না

তাহলে আপনি কী চান ?

আমি আপনাকে চাই! উত্তর দিলো মাশুক।

বন্ধুরা! বাড়ির মালিককে ভালোবাসতে হবে। তার ভোজ ও খাবারকে নয়। যেভাবে সাদী বলেছেন:

যদি বন্ধুর কাছ থেকে উপকার আশা করো

তাহলে তুমি নিজের ভিতর বন্দী আছো , বন্ধুর প্রেমে নয়।

তিনি এ কবিতা আবৃত্তি করতেন :

তোমাকে অবশ্যই শুধু আল্লাহর প্রেমে থাকতে হবে এবং যা-ই তুমি কর তা শুধু তাঁর জন্য করবে। তাঁর প্রেমে থাকো , এমনকি কোন ইবাদাত করো না কোন পুরস্কারের জন্য।

তিনি কোন কোন সময় সুন্দর কন্ঠে আমাকে বলতেন :

কিছু করো যেন তোমার ফাঁদের জালে কিছু জড়িয়ে যায় [অর্থাৎ চিরস্থায়ী মাশুকের প্রেমে পড়]!

তিনি যথোপযুক্ত কবিতা যুক্ত করতেন , বিশেষ করে হাফিযের কবিতা। এতে তার নির্দেশনা হতো খুবই কার্যকরী। যেমন :

যদি তুমি চাও মাশুক মিলন ভঙ্গ না করে

ধরে থাকো সংযোগকে (প্রেম) যেন তিনিও তা ধরে রাখেন।

পরিত্যাক্ত হয়ে থাকার অভিযোগ

হযরত শেইখ বলতেন :

যখনই তোমরা রাতে ভিক্ষা চাওয়াতে (আল্লাহর কাছে) নিয়োজিত হও অভিযোগ কর পরিত্যাক্ত হয়ে থাকার এবং অনুরোধ করো : হে আল্লাহ! আমার কোন শক্তি নেই শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে মোকাবেলা করি ; তা আমাকে পঙ্গু করে ফেলেছে , আমার সাহায্যে আসুন এবং এর থাবা থেকে আমাকে মুক্ত করুন! এবং আহলুল বায়েতের (আঃ) কাছে আবেদন জানাও সুপারিশ করার জন্য। এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করতেন :

) إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي(

(মানুষের) নফস খারাপমুখী , যদি না আমার রব রহমত করেন। (সূরা ইউসূফ-53)

আহলুল বায়েত (আঃ)-এর কাছে আবেদনের প্রকৃত কারণ

হযরত শেইখ বলতেন :

বেশীর ভাগ লোক জানে না আহলুল বায়েত (আঃ)-এর কাছে আবেদন কিসের জন্য। তারা আহলুল বায়েত (আঃ) এর কাছে আবেদন করে সমস্যা ও জীবনের কঠিন বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য।146 অথচ আমাদের উচিত তাদের দোরগোড়ায় যাওয়া একত্ববাদ ও আল্লাহর মারেফাত অর্জনের পথে চলার জন্য। এ রাস্তা খুব কঠিন এবং অসম্ভব , একজন মানুষের জন্য একটি আলো ও একজন পথ প্রদর্শক ছাড়া।

যিয়ারাতে আশুরা

হযরত শেইখ আহলুল বায়েত (আঃ) কাছে আবেদনে জোর দিয়েছিলেন। আর তা যিয়ারাতে আশুরা পড়ার জন্যে। তিনি বলেছেন : এক আধ্যাত্মিক মুহূর্তে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যিয়ারাতে আশুরা পড়ার জন্য।

তিনি আরো বলেছেন : যত দিন বেঁচে থাকো যিয়ারাতে আশুরা পড়তে ভুলো না।

দোয়া কবুল হওয়ার শর্ত

দোয়া কবুল হওয়ার একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে ব্যক্তির খাবার হালাল হওয়া। একজন লোক নবী (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন :

আমি চাই আমার দোয়া কবুল হোক। তিনি বললেন :

তোমার খাবারকে পবিত্র করো এবং হারামকে তোমার পেটে প্রবেশ করতে দিও না। 147

প্রথমে লবণের দাম পরিশোধ করো

হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেছেন : হযরত শেইখের সাথে আমাদের একদল একত্রে বিবি শাহারবানু (পর্বতে) দোয়া ও মোনাজাতের জন্য রওনা দিলাম। আমরা কিছু রুটি ও শশা কিনলাম। এর মধ্যে আমরা কিছু লবণ তুলে নিলাম শশা বি ক্রে তার ঠেলা গাড়ি থেকে এবং এরপর আমরা পর্বতের দিকে রওনা দিলাম। আমরা যখন সেখানে পৌঁছালাম হযরত শেইখ বললেন :

চলো নিচে চলে যাই , আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তারা বলছে : প্রথমে লবণের মূল্য পরিশোধ কর এরপর আসো নামায ও দোয়ার জন্য।

ইবাদাতকারীর ক্ষমতা

একটি সুক্ষ্ণ বিষয় ইবাদাতকারীকে বিবেচনায় রাখতে হবে যে , যা সে আল্লাহর কাছে দাবী করছে তা তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা অনুযায়ী হতে হবে , যদি সে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা না রাখে তাহলে সে নিজেকে সমস্যায় ফেলবে দোয়া করে।

হযরত শেইখের এক বন্ধু বলেন : একবার ব্যবসা খুব ধীরগতি হয়ে গেলো এবং আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। একদিন হযরত শেইখ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কেন বিপর্যস্ত আছি। আমি তাকে ঘটনা বললাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি নামাযের পর তাক্বীবাত (নফল দোয়া) পড়ছি কিনা , আমি ওনাকে বললাম আমি আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ)- এর দোয়া আস সাবাহ পড়ছি। তিনি বললেন :

দোয়া সাবাহর বদলে সূরা হাশর পড়ো এবং দোয়ায়ে আদিলা পড়ো তোমার তা ক্বীবাতে যেন তোমার সমস্যা দূর হয়ে যায়।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন আমি দোয়ায়ে সাবাহ পড়বো না। তিনি বললেন :

এ দোয়াতে এমন সব (ভারী) কথা ও শব্দগুচ্ছ আছে যে একজন মানুষের সেই ক্ষমতা থাকতে হবে তা বহন করার। ইমাম আলী (আঃ) আল্লাহকে এ দোয়ায় অনুরোধ করছেন :

হে আল্লাহ আমাকে একটি ব্যাথা দিন যে মুহূর্তগুলোতে আমি আপনাকে ভুলবো না। তাই এ দোয়া দাবী করে প্রয়োজনীয় ক্ষমতার। এবং তুমি তা পড়েছো প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ছাড়াই যা তোমার সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তাই সাবাহর বদলে সূরা হাশর ও দোয়ায়ে আদিলা পড়ো। আল্লাহর ইচ্ছায় তা তোমার সমস্যা দূর করে দিবে।

সূরা হাশর ও দোয়ায়ে আদিলা পড়া শুরু করার পর আমার এক বন্ধু দশ হাজার তোমান ধার দিলো ; আমি সে টাকা দিয়ে কাজ করলাম। একটি বাড়ি কিনলাম এবং ধীরে ধীরে আমার ব্যাবসা উন্নতি লাভ করলো।

ইবাদাতকারীর সৌজন্য

ডঃ ফারযাম আরো বলেন : হযরত শেইখ একটি বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন , তাহলো ইবাদাতকারীর সৌজন্য। এ বিষয়ে হযরত শেইখ বলেছেনঃ

দোয়া করার সময় ব্যক্তি থাকবে বিনয়ী ও ভীত এবং হাঁটু ভাজ করে বসবে কিবলামুখী হয়ে।

একবার আমার পায়ে অসুবিধা হতে লাগলো আমি মনে করলাম আমার পা দু টো একটু লম্বা করি। হযরত শেইখ যিনি আমার পিছনে ছিলেন কক্ষের পিছন দিকে বলে উঠলেন :

দোয়ার সময় সোজা হয়ে বসে থাকো হাঁটু ভাজ করে , এবং সৌজন্য বজায় রাখো।