আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 28915
ডাউনলোড: 5752

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 28915 / ডাউনলোড: 5752
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

অষ্টম অধ্যায়

আল্লাহর বন্ধুদের দোয়া

হযরত শেইখের বিদ্যালয়ে যারা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাদের একটি সুপরিচিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের নামাযের মাঝে মনোযোগ। আর তা সম্ভব হয়েছে শুধু এজন্য যে হযরত শেইখ আত্মা-বিহীন লোক দেখানো নামাযের কোন মূল্য দেন নি এবং চেষ্টা করেছেন তার শিষ্যরা যেন সত্যিকারভাবে নিবেদিত হয়ে নামায পড়ে।

নামাযের বিষয়ে হযরত শেইখের দিক নির্দেশনায় আছে চারটি নীতি যা পবিত্র কোরআন ও হাদীস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে :

1. প্রেম

হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন একজন প্রেমিক তার মাশুকের সাথে কথা বলা উপভোগ করে। একজন নামাযীরও উচিত রবের সাথে নীচু কন্ঠে প্রেমপূর্ণ কথা বলায় আনন্দ লাভ করা। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এরকমই ছিলেন যেমন আল্লাহর বন্ধুরা হন। নবী (সাঃ) বলেছেন :

আল্লাহ , যিনি মহান , তাঁর প্রশংসাকে আমার চোখের আনন্দ করেছেন নামাযে , নামাযকে করেছেন আমার কাছে প্রিয় যেভাবে তিনি খাবারকে করেছেন ক্ষুধার্তের কাছে প্রিয় এবং পানিকে তৃষ্ণার্তের কাছে প্রিয় ; (পার্থক্য এই) যখন ক্ষুধার্ত খাবে সে তৃপ্ত হবে এবং তৃষ্ণার্ত পান করবে তার তৃষ্ণা মিটে যাবে , কিন্তু আমি কখনও তৃপ্ত হই না (অথবা তৃষ্ণা মেটেনা) নামায পড়া থেকে। 155

হযরত শেইখের এক শিষ্য যে তার জীবনের ত্রিশ বছর কাটিয়েছেন তার সাথে , তিনি বলেন :

আল্লাহ জানেন যে আমি তাকে দেখেছি এমনভাবে নামাযে দাঁড়াতে যেমন প্রেমিক তার মাশুকের সামনে দাঁড়ায়। তার সৌন্দর্যে নিমন্ন হয়ে। আমি আমার সারা জীবনে তিনটি লোককে দেখেছি নামাযে অসাধারণ : মরহুম শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত , আয়াতুল্লাহ কুহিস্তানি এবং মাশহাদে শেইখ হাবিবুল্লাহ গুলপায়গানী ।

তারা নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন বিস্ময়কর । আমি অতিন্দ্রীয়ভাবে দেখলাম যে তাদের চারদিকে পরিবেশ ছিলো ভিন্ন পৃথিবীর ; তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন দিকে মনোযোগ দিতেন না।

2. সৌজন্য

আল্লাহর উপস্থিতিতে নামাযীর সৌজন্য বজায় রাখার উপরে ইসলামে বিরাট জোর দিয়েছে। ইমাম সাদিক (আঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন :

নামাযের অধিকার হলো এটি জানা যে নামায হলো সর্বোচ্চ আল্লাহর উপস্থিতিতে প্রবেশ করা এবং যখন দাঁড়াও তখন তুমি মহিমান্বিত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছো। তাই এটি জেনে , তোমার নামাযে দাঁড়ানো উচিত মর্যাদাহীন এবং বিনয়ী দাস হিসেবে। আন্তরিকভাবে নিবেদিত হয়ে , আশার সাথে ভীত হয়ে , অসহায়ভাবে কান্না কাটি করে ; এবং নামাযে এগিয়ে যাও শান্ত ভাবে এবং সৌন্দর্যের সাথে , যাঁর সামনে দাঁড়াচ্ছো তাকে বিরাট সম্মান দেখিয়ে এবং তা আন্তরিকভাবে সম্পাদন করো , এর সব নিয়ম কানুন পুরোপুরি মেনে। 156

হযরত শেইখ উপস্থিত থাকার সৌজন্য সম্পর্কে বলেন :

শয়তান সব সময় মানুষকে অমনোযোগী করে দেয়। মনে রাখবে আল্লাহর প্রতি মনোযোগ না ভাঙ্গতে , নামাযে সৌজন্য বজায় রাখো ঠিক যে ভাবে দাঁড়াও কোন সম্মানিত ব্যক্তির সামনে ; যদি তোমার শরীরকে সুঁই দিয়ে খোঁচা দেয়া হয় তোমার শরীর নড়বে না।

উপরের কথাগুলো হযরত শেইখ তার ছেলেকে বলেছিলেন যে তাকে বলেছিলো আপনি নামাযে মাঝে মাঝে মুচকি হাসেন।

তার ছেলে বলেন :

আমার মনে হয় শয়তানের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন যে তাকে কিছু করতে পারে না।

যা হোক হযরত শেইখ বিশ্বাস করতেন যে আল্লাহর সামনে শরীর নাড়ানো অভদ্রতা যা শয়তানের উস্কানিতে হয়। তিনি বলেছেন :

আমি দেখেছি শয়তান শরীরের সে অংশে চুমু দিচ্ছে যে অংশটি এক ব্যক্তি চুলকালো নামাযের ভিতরে।

3. অন্তরের উপস্থিতি

নামাযের মর্যাদা হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা এবং মহিমান্বিত আল্লাহর সান্নিধ্যে নামাযীর অন্তরের উপস্থিতি ।

আল্লাহ কোন ব্যক্তির নামায কবুল করবেন না যার অন্তর তার দেহের সাথে উপস্থিত নয়। 157

জামায়াতে নামায পড়ার আগে হযরত শেইখ চেষ্টা করতেন যারা নামাযের জন্য উপস্থিত আছে তারা অন্তরের উপস্থিতি লাভ করুক। তার নামায ছিলো অন্তর উপস্থিত থাকার আদর্শ নমুনা।

ডঃ ফারযাম বলেন : তার নামায ছিলো খুবই গম্ভীর ও সুন্দর আচরণের।158 মাঝে মাঝে আমি জামায়াতে নামাযে দেরীতে আসতাম এবং (পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়) নামাযে তার দেহ সৌন্দর্য দেখতাম। দেখলে মনে হতো তার সারা শরীর কাঁপছে ; উজ্জ্বল চেহারায় তিনি যা পড়তেন তাতে নিমজ্জিত থাকতেন। তার মনোযোগ পুরোপুরি নামাযের দিকে থাকতো এবং মাথা সব সময় নীচু থাকতো। আমি যা বোঝাতে চাচ্ছি তা হলো হযরত শেইখ কখনোই তার অন্তরে সামান্য সন্দেহ পোষণ করতেন না ।

হযরত শেইখের আরেকজন শিষ্য বলেন : তিনি আমাকে মাঝে মাঝে বলতেন :

হে অমুক! তুমি কি জানো তুমি রুকুতে ও সিজদাতে কী বলো ? যখন তুমি তাশাহুদ বলো : আমি সাক্ষ্য দেই যে কোন ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া , যিনি অদ্বিতীয় ও কোন অংশীদারবিহীন ; তুমি কি সত্য বলছো ? তুমি কি তোমার শরীরী আকাঙ্ক্ষার ভেতর জড়িয়ে নেই ? তুমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যের দিকে মনোযোগী নও ? তুমি কি অনেক ইলাহ নিয়ে কারবার করছো না যারা নিজেদের মধ্যে বিভেদ করছে।

4. নামায যথাসময়ে পড়াতে অধ্যাবসায়

ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন :

ওয়াক্তের শুরুতে নামাযের মর্যাদা ওয়াক্তের শেষে পড়ার চাইতে ততটুকু মর্যাদাবান যেমন আখেরাতের মর্যাদা দুনিয়ার উপরে। 159

হযরত শেইখ যথাসময়ে পাঁচবার নামায পড়াতে খুবই তৎপর ছিলেন এবং অন্যদেরও তা করতে বলতেন।

ইমাম হোসেইন (আঃ) এর একজন দাস তার নামায এত দেরীতে পড়ার জন্য রেখে দেবে না

যোগ্য ধর্মপ্রচারক , হজ্ব আগা সাইয়্যেদ কাসিম শোজাই হযরত শেইখ সম্পর্কে এক আনন্দদায়ক স্মৃতি বর্ণনা করেন :

আমি খুতবা দিতাম আমার স্কুল জীবন থেকে এবং আমি ছিলাম সুন্দর বক্তব্যের ধর্মপ্রচারক। আমাকে অনেক বৈঠকে দাওয়াত দেয়া হতো মাসায়েব (কারবালার মুসিবত) বলার জন্য , এমনকি হযরত শেইখ রজব আলী খাইয়্যাতের বাড়িতে পর্যন্ত প্রত্যেক চাঁদের মাসের সাত তারিখে। উপরের তলায় ডান দিকে একটি কক্ষ ছিলো এবং মহিলারা সেখানে জড়ো হতো এবং মাসায়েব বলতাম প্রতি মাসে একবার। হযরত শেইখের কক্ষ ছিলো নীচের তলায়। আমার বয়স তখন তের বছর এবং তখনও বালেগ হই নি।

একদিন খোতবা শেষ হওয়ার পর আমি নীচের তলায় আসলাম এবং হযরত শেইখের মুখোমুখি হলাম প্রথম বারের মত। তিনি তার হাতে একটি টুপি ধরে ছিলেন , মনে হলো বাইরে যাচ্ছেন। আমি বললাম সালাম । তিনি আমার মুখের দিকে তাকালেন এবং বললেন :

নবী (সাঃ)-এর সন্তান এবং ইমাম হোসেইন (আঃ)-এর দাস তার নামাযকে এখন পর্যন্ত দেরী করবে না!!

আমি (মনে মনে) বললাম : আমার চোখের কসম! সূর্য ডোবার তখনও দু ঘন্টা বাকী এবং আমি সেদিন এক জায়গায় মেহমান ছিলাম এবং নামায পড়ি নি ; হযরত শেইখ আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই তা বুঝতে পেরেছিলেন এবং তা আমার কাছে উল্লেখ করলেন। আমার বালেগ হওয়া থেকে এবং তারপর থেকে যখনই আমি তার বৈঠকে যোগদান করেছি , যেগুলো আগা হাকিমি আহনান ফুরুশের বাড়িতে হতো ,

আমি অনুভব করতাম এ লোকের কথা ছিলো ঐশী প্রেরণার মাধ্যমে। তার কোন আনুষ্ঠানিক জ্ঞান ছিলো না কিন্তু তিনি যখন কথা বলতেন শ্রোতারা তাতে আন্তরিকভাবে নিমন্ন হতো। আমি এখনও মনে করতে পারি তার কিছু কথা :

“‘ আমরা শব্দটি পেছনে ফেলে আসো ; যেখানেই আমরা আমি শব্দ রাজত্ব করে সেখানে বাস করে শিরক। শুধু একটি সর্বনামই রাজত্ব করছে তা হলো তিনি । এবং যদি তুমি এ সর্বনামকে পাশে সরিয়ে রাখো অন্য সর্বনামগুলো শেরেকী।

এ ধরণের কথা তিনি যখনই বলতেন সেগুলো মানুষের অন্তর ও মনে জ্বল জ্বল করতো।

রাগ নামাযের জন্য ধ্বংস

হযরত শেইখ বলেন :

এক সন্ধ্যায় আমি তেহরানে সিরুস এভিনিউর মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। মসজিদে প্রবেশ করলাম নামায যথাসময়ে পড়ার ইচ্ছায় এবং শাবিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমি দেখলাম কেউ একজন নামায পড়ছে এবং তার মাথার চারদিকে নূরের একটি বৃত্ত। আমি মনে মনে ভাবলাম আমি তার সাথে পরিচিত হবো দেখার জন্য কী গুণাবলী তার আছে যা তাকে নামাযে এমন আধ্যাত্মিক অবস্থা দিয়েছে। জামায়াতের নামাযের শেষে আমি তার সাথে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলাম। গেটে এসে মসজিদের খাদেমের সাথে তার তর্ক হয়ে গেলো। এমনকি লোকটি তার প্রতি রাগ হয়ে চীৎকার করলো এবং তার রাস্তায় চলে গেলো। রাগের পর , আমি দেখলাম তার মাথার চারদিকে যে নূরের বৃত্ত ছিলো তা হারিয়ে গেলো!

নবম অধ্যায়

আল্লাহর বন্ধুদের হজ্ব

হযরত শেইখ অর্থনৈতিক কারণে কখনো বাধ্যতামূলক হজ্বে যেতে পারেন নি। তারপরও কিছু হজ্ব যাত্রীর প্রতি তার দিক নির্দেশনা ইঙ্গিত দেয় যে তিনি আল্লাহর বন্ধুদের হজ্বের রহস্য সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন তখনই প্রকৃতপক্ষে হজ্ব সংগঠিত হবে যখন হাজ্বী কাবার প্রভুর সাথে প্রেমে থাকবে যেন সে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতাগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কেও বুঝতে পারে। তাই একজন তার সাথে একত্রে হজ্বে যেতে চায় শুনে তিনি বলেন :

প্রথমে জানো কীভাবে একজন প্রেমিক হতে হয়। এরপর মক্কায় একত্রে যাওয়ার জন্য আসো ।

হজ্ব যাত্রীদের প্রতি হযরত শেইখের উপদেশ

1. হযরত ওয়ালী আল আসর (আঃ) সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা

হযরত শেইখের এক পুরানো শিষ্য বলেন : প্রথম বার যখন আমি হজ্বের জন্য মক্কা যাচ্ছিলাম আমি তার কাছে গেলাম দিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য :

তোমার রওয়ানা দেয়ার সময় থেকে চল্লিশ দিন এ আয়াতে কারিমা পড়ো :

) رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا(

হে আমার রব আমাকে প্রবেশ করান সত্য ও সম্মানের দরজা দিয়ে এবং একইভাবে বের করে আনুন সত্য ও সম্মানের দরজা দিয়ে এবং আমাকে দান করুন আপনার কাছ থেকে অনুমোদন ও সাহায্য। (সূরা বনি ইসরাইল : 80)

হয়তোবা তুমি হযরত মাহদী (আঃ) এর সাক্ষাত পাবে। তিনি আরো বলেন : এটি কীভাবে সম্ভব যে একজনকে কারো বাসায় দাওয়াত করা হবে আর সে বাড়ির মালিককে দেখবে না! ? পূর্ণ সতর্ক হও যেন সেই মহিমান্নিত ইমাম (আঃ)-কে দেখতে পাও হজ্বের কোন একটি আনুষ্ঠানিকতার সময় , ইনশাআল্লাহ।

2. ইহরাম অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া আর কোন কিছুর ভালোবাসা হারাম করে নাও

যে ব্যক্তি মিক্বাতে ইহরাম পড়বে তার জানা উচিত যে , সে এখানে এসেছে নিজেকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু থেকে বিরত রাখতে এবং যে মুহূর্ত থেকে সে বলে লাব্বায়েক সে আল্লাহর দাওয়াত গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুকে নিজের জন্য হারাম করেছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোন বিষয়ে আগ্রহ হারাম এবং তার জীবনের শেষ পর্যন্ত তার উচিত নয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুতে মনোযোগ দেয়া।

3. আল্লাহকে প্রাথমিকভাবে জানা সম্পূর্ণ করে নেয়া কাবা প্রদক্ষিণ করার সময়

কাবাকে প্রদক্ষিণ করা মানে বাইরের দিক থেকে ঘরের চারদিকে ঘোরা , কিন্তু তোমাদের জানা উচিত যে এই প্রদক্ষিণের অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে একজন মানুষের জীবনের অক্ষরেখা বানিয়ে নেয়া এবং তাঁর মাঝে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাওয়া। চেষ্টা করো একটি আধ্যাত্মিক অবস্থা পেতে যেন তোমরা তাঁকে প্রদক্ষিণ করো এবং তাঁর জন্য উৎসর্গ হয়ে যাও। 160

4. কাবার ছাদের পানি পড়ার নলের নীচে দোয়া

হিজরে ইসমাইল এবং কাবার ছাদের পানি পড়ার সোনালী রঙের নলের নীচে যেখানে হাজীরা আল্লাহর কাছে অনুনয় করে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তুমি সেখানে বলো : হে আল্লাহ , আমাকে প্রশিক্ষণ দিন আপনার দাসত্ব করার জন্য এবং আপনার ওয়ালী হুজ্জাত ইবনুল হাসান (আঃ) কে সাহায্য করার জন্য।

5. মিনাতে শরীরী নফসকে হত্যা করা

তোমরা যখন মিনাতে যাও , কোরবানীর জায়গায় তোমরা কী কর ? তোমরা কী জানো কোরবানীর দর্শন কী ? তোমাদের উদ্বুদ্ধকারী শরীরী নফসকে উৎসর্গ করো!

) فَتُوبُوا إِلَى بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ(

তাই ফেরো (অনুতপ্ত হয়ে) তোমার সৃষ্টিকর্তার দিকে এবং নিজেদের হত্যা করো (জালেমদের)।

(সূরা আল বাকারা -54)

তোমার শরীরী নফসের মাথা আলাদা করে দাও এবং ফিরে আসো। তোমার শরীরী নফসকে বিদায় করে দাও , বরং তা না হলে ফিরে আসার পর তা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

একমাত্র জায়গা যেখানে তারা ভালোবাসা প্রদর্শন করলো

(হজ্ব থেকে) ফিরে এসে আমি হযরত শেইখের সাক্ষাতে গেলাম এবং বললাম :

আমি জানতে চাই এর ফলাফল কী

তিনি বললেন :

তোমার মাথা নীচু করো ও আল-হামদ তেলাওয়াত করো!

তখন তিনি এক মুহূর্ত ভাবলেন এবং বললেন , আমি মসজিদুল হারামের কোন জায়গা দিয়ে অতিক্রম করেছি এবং আমার অবস্থান সম্পর্কেও এমনভাবে যে তিনি বললেন :

একমাত্র জায়গা যেখানে তারা তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছে তা হচ্ছে বাক্বী কবরস্থানে যেখানে তুমি এমন অবস্থায় ছিলে এবং এগুলো দাবী করেছিলে।

আমি সেখানে আল্লাহকে যা অনুরোধ করেছি তা তার কাছে প্রকাশ করা হয়েছে।

হজ্ব থেকে ফেরার পর ভোজ

হজ্ব থেকে ফেরার পর আমি হযরত শেইখকে ও অন্যান্য কয়েকজনকে আমার বাড়িতে হজ্ব ফেরত ভোজে দাওয়াত করলাম। আমরা ভোজের জন্য চেলো কাবাব তৈরী করেছিলাম। আমরা বারান্দায় একটি আলাদা দস্তরখান দিলাম হযরত শেইখের জন্য ও কিছু ব্যক্তিগত মেহমানের জন্য। তা লক্ষ্য করে শেইখ আমাকে ডাকলেন এবং বললেন :

কেন তুমি লোক দেখাও ? নিজের বিষয়ে বেশী গর্ব করো না। লোকদের মাঝে পার্থক্য করো না ; তাদের সাথে সমানভাবে আচরণ করো। কেন তুমি কিছু লোককে বেশী মূল্য দিবে ? না , আমি অন্যদের সাথে মিশে যাবো। আলাদা করা যাবে না।

হজ্বের রহস্যাবলী ইমাম খোমেইনী (রঃ)-এর বক্তব্যে

এটি জানা যথাপোযুক্ত হবে যে হযরত শেইখ হজ্বের যে দর্শন উল্লেখ করেছেন নিজের অতিন্দ্রীয় জ্ঞানের মাধ্যমে তা ইমাম খোমেইনী (রঃ) হজ্বের রহস্য উল্লেখ করে যা বলেছেন তার খুবই কাছাকাছি। এখানে তা উল্লেখ করা হলো :

বার বার লাব্বায়েক বলার রহস্য

বার বার লাব্বায়েক বলা তাদের জন্য সত্য যারা আল্লাহর ডাক শুনেছে তাদের কান দিয়ে ও তাদের সত্তা দিয়ে এবং তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিচ্ছে তার সব নামের সার সংক্ষেপ নাম নিয়ে। বিষয়টি হচ্ছে পরম উপস্থিতির সামনে উপস্থিত হওয়া এবং মাশুকের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করা। যদিও যিকরকারী এ মুহূর্তে নিজের ভেতর হারিয়ে গেছে এবং বার বার ডাকে সাড়া দিচ্ছে এবং এর পর পরই অস্বীকার করছে সম্পর্ক (আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাথে) এর পরম অর্থে (এবং) শুধু খোদার সাথে সম্পর্ক স্বীকার করা নয় যা আল্লাহর জন্য উৎসর্গিতরা জানে। সম্পর্ক ছেদ করা সব ধাপকে অন্তর্ভুক্ত করে এ পৃথিবী বিলীন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে এবং অন্তর্ভুক্ত করে সব সতর্কতামূলক ও পছন্দনীয় বিষয়সমূহ। উদাহরণ স্বরূপ : আল হামদ লাকা ওয়াল নি মাতা লাকা----- উৎসর্গ করে প্রশংসাকে ও নেয়ামতকে পরম সত্তাকে এবং শিরক অস্বীকার করে। এটি জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে পরম একত্ববাদ , অর্থাৎ কোন প্রশংসা ও নেয়ামত যা ঘটে (আল্লাহ ছাড়া অন্যের)। এ উচ্চ উদ্দেশ্য বিজয়ী থাকে প্রত্যেক মওক্বীফ (অবস্থায়) এবং মাশআর (ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের স্থান) , প্রত্যেক থামা ও প্রত্যেক চলায় এবং প্রত্যেক বিশ্রাম এ প্রত্যেক কাজে। এর বিরোধিতা করা মানে সাধারণভাবে শরীক করা। যা হোক আমরা অন্ধ হৃদয়ের যারা , তারা সবাই ভুগছি।161

তওয়াফের রহস্য

আল্লাহর ঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করার অর্থ হচ্ছে তুমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে প্রদক্ষিণ করবে না।162

আল্লাহর পবিত্র ঘরকে প্রদক্ষিণ করার সময়- যা আল্লাহকে ভালোবাসার নিদর্শন , অন্যদেরকে তোমার হৃদয় থেকে বের করে দাও এবং সমস্ত ভয়কে বিতাড়িত করো তোমার সত্তা থেকে আল্লাহর ভয় ছাড়া এবং আল্লাহর প্রেমের সাথে সংগতি রেখে অস্বীকার করো বড় ও ছোট মূর্তিদের , তাগুত ও তার সাথীদের , যেগুলি অস্বীকার করেছে আল্লাহ ও তার বন্ধুরা এবং পৃথিবীর সকল মুক্তিপ্রাপ্তরা এ থেকে মুক্ত। 163

আল্লাহর কাছে বায়াত (অনুগত্যের শপথ)

হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শপথ করো যে তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের এবং ধার্মিক ও মুক্তিপ্রাপ্তদের শত্রুদের শত্রু হবে এবং তাদের মানবে না ও তাদের দাসত্ব করবে না , তারা যে-ই হোক এবং যেখানেই হোক ; এবং অন্তর থেকে আল্লাহর শত্রুদের ভয় দূর করো , যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বড় শয়তান (যুক্তরাষ্ট্র) এমনও যদি হয় তারা খুন খারাবী , অত্যাচার ও অপরাধী কাজে অধিকতর শক্তিশালী। 164

সা-ই (প্রচেষ্টা) মাশুককে পাওয়ার জন্য

সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা-ই করার সময় চেষ্টা করো আন্তরিকভাবে ও সত্যবাদীদের সাথে মাশুককে খুঁজে পেতে ; যখন তুমি তাঁকে পাবে তখন সব দুনিয়াবী গিঁট খুলে যাবে , সব সন্দেহ দূরীভূত হবে , সব পাশবিক ভয় ও আশা মুছে যাবে এবং শয়তান ও মূর্তির বাঁধন যা আল্লাহর দাসদের বন্দি করে রাখে এবং মানতে বাধ্য করে , তা ছিঁড়ে যাবে। 165

মনোযোগ ও ইরফান (আধ্যাত্মিকতা) মাশ আরে ও আরাফাতে

মাশ আর আল-হারাম ও আরাফাতে যাও মনোযোগ ও আধ্যাত্মিক অবস্থাসহ এবং যে কোন অবস্থানেই (মওক্বীফ) নিজেকে আরো নিশ্চিত করো আল্লাহর অঙ্গীকার সম্মন্ধে এবং নির্যাতিতদের রাজত্বে। নিরবতা ও গাম্ভীর্যের সাথে সত্যের নিদর্শনগুলোর উপর ভাবো এবং চিন্তা করো পৃথিবীর দাম্ভিক শক্তির হাত থেকে দরিদ্র ও নির্যাতিতদের মুক্ত করার জন্য এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে অনুরোধ করো ঐ পবিত্র স্থান গুলোতে তোমার মুক্তির পথ দেখাতে। 166

মীনাতে কোরবানী করার রহস্য

এর পর মীনাতে যাও এবং সত্যিকার আকাঙ্ক্ষা খুঁজে নাও। যা হচ্ছে তোমার সবচে ভালোবাসার জিনিসকে পরম মাশুকের পথে কোরবানী করার স্থান। আর জেনে রাখো তুমি পরম মাশুকের কাছে পৌঁছুবে না যতক্ষণ না তুমি ভালোবাসায় এসব জিনিসকে পরিত্যাগ করতে না পারো। যার উপরে রয়েছে আত্মপ্রেম ও এ পৃথিবীর (বস্তুর) প্রতি ভালোবাসা। 167

রজম-ই-আক্বাবাত (শয়তানের প্রতি পাথর ছোঁড়া)

তোমরা যাও ঐশী ভ্রমণে শয়তানকে পাথর ছুঁড়তে। যদি তুমি , খোদা না করুক , শয়তানদের বাহিনীর একজন হও তুমি পাথর নিজের দিকেই ছুঁড়বে। তোমার ঐশী ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া উচিত যেন তোমার পাথর মারা , দয়ালু খোদার বাহিনীর কর্তৃক শয়তানকে পাথর ছোঁড়ার মত হয়। 168