সপ্তম অধ্যায়
কবিতা
হযরত শেইখ আধ্যাত্মিক ও নৈতিক কবিতাসমূহে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তার বক্তব্যে বেশীর ভাগ সময়ে শিক্ষণীয় কবিতা থাকতো। তিনি বিশেষভাবে মূল্য দিতেন কবি হাফিজের গজল ও তাক্বদীসের মাসনভীকে। তিনি তাদের কবিতা শুনে কাঁদতেন।
তিনি তাক্বদীসের মসনভীর খুব ভক্ত ছিলেন এবং বলতেন :
“
যদি তাক্বদীসের একটি বই এ বাজারে থাকতো তাহলে আমি সব দিয়ে দিতাম ঐ একটি কিতাব কেনার জন্য।”
হযরত শেইখের বহু দিনের ঘনিষ্ট ড: আব্দুল হাসান শেইখ বলেন :‘
হযরত শেইখ ছিলেন হাফিজের কবিতার এক দক্ষ বোদ্ধা এবং তার কবিতাকে তিনি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতেন।’
হযরত শেইখের কবিতা ও কবিতা সম্বন্ধে তার অভিমত , বিশেষ করে কবি হাফিজ সম্বন্ধে তার মনোভাব সর্ম্পকে ড: হামিদ ফারযাম বলেনঃ ড: গুইয়ার মাধ্যমে 1954 সন থেকে হযরত শেইখের বন্ধুত্ব লাভের পর থেকে এমন কোন বৈঠক ছিলো না যেখানে আমি তার মুখ থেকে সঠিক সময়ে সে সম্পর্কে সুন্দর কবিতা শুনি নি। তিনি হাফিজের কবিতায় মুগ্ধ ছিলেন। আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম কেন তিনি এত হাফিজের কবিতায় মুগ্ধ। তিনি বললেন :
“
আধ্যাত্মিকতা ও রহস্যময়তাকে হাফিজ সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করেছেন এবং তার কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে সব আত্মিক সত্য এবং রহস্যময় অনুভব।”
হযরত শেইখ ছিলেন অন্য কবিদের চেয়ে বেশী হাফিজ অনুরক্ত এবং সবসময় তার কবিতা আবৃত্তি করতেন ; এমনকি যদি তিনি কাউকে সর্তক করতে বা তিরস্কার করতেও চাইতেন
তাহলে তিনি তার কবিতা আবৃত্তি করতেন।
তিনি সবসময় এ পৃথিবীকে‘
ডাইনী বুড়ি’
বলতেন। কোন কোন সময় তিনি কোন শিষ্যকে লক্ষ্য করে বলতেন :
“
আমি দেখছি তুমি আবার এ ডাইনী বুড়ির ফাঁদে পড়েছো !”
এবং তখন তিনি হাফিজের কবিতা আবৃত্তি করতেনঃ
“
এমন কেউ নেই যে তার এই জালে পেঁচিয়ে যায়নি , কে আছে যার পথে এরকম পরীক্ষার ফাঁদ বিছানো নেই ?”
তিনি উপহাস করে বলতেন :
“
বেশীর ভাগ লোকই এতে পেঁচিয়ে যায় এবং খুব কম লোকই আছে যারা এ থেকে মুক্ত।”
তিনি আত্ম -অহংকারকে তিরষ্কার করে নিচের এ লাইন দু’
টো আবৃত্তি করতেনঃ
“
দরবেশ হওয়ার পথে কুফুরী হলো আত্ম -অহংকার ও নিজ সম্পর্কে ভালো ধারনা ;
আদেশ হলো যা তুমি (আল্লাহ) নির্ধারণ করো
অভিমত হলো যা তুমি (আল্লাহ) ভাবো”
সুন্দর কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি
ডঃ ফারযাম এ সম্পর্কে বলেনঃ
‘
মরহুম শেইখ খুব মনোরম সুরে কবিতা আবৃত্তি করতেন। ফায়েদ-ই কাশানীর বিশেষ কিছু কবিতা আবৃত্তি করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। যেমন , নিচের লাইন দুটোঃ
“
আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই যা (আমি করেছি) মাশুক ছাড়া অন্যের জন্য , আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আমার এ কাল্পনিক অস্তিত্বের জন্য , যদি কোন মুহূর্ত চলে যায় তার (সুন্দর) চেহারা স্মরণ না করে , আমি অসংখ্যবার ক্ষমা চাই সে মুহূর্তটির জন্য।”
আমরা এক অপরাহ্নে হযরত শেইখের সাথে তার এক শিষ্যের বাড়িতে ছিলাম। তার ছিলো বিরাট এক মেহমান কক্ষ যার দরজার কাছে হযরত শেইখ বসে হাফিজের এই কবিতাটি পড়ছিলেন :
“
কে আছে যে প্রেম ও দয়ায় আমার প্রতি আন্তরিক হবে ? (এবং) কল্যাণ করবে অন্যায়ের বদলে , আমার মত অন্যায়কারীর প্রতি ?”
তিনি কয়েকটি লাইন কাঁদতে কাঁদতে গাইলেন খুব সুন্দর ও মনোরম সুর দিয়ে এবং অন্যদেরও আবেগাপ্লুত করে ফেললেন। তা এত অসাধারণ ছিলো যে আমি ডাঃ গুইয়াকে বললামঃ
“
হযরত শেইখ- এর এত সুন্দর কন্ঠ ও মিষ্টি সূর আছে!”
তিনি বললেন :
“
এটি একটি দুঃখ যে তুমি এত দেরীতে তার সাথে পরিচিত হয়েছো। তিনি আধ্যাত্মিক অবস্থায় এত সুন্দর গাইতেন যে দরজা ও দেয়ালগুলো সত্যিকারভাবেই কাঁপতো।”
হযরত শেইখের একটি কবিতা ও একটি স্মৃতি
হযরত শেইখ নিজেও মাঝে মাঝে কবিতা লিখতেন। সমসাময়িক মারজা বিখ্যাত ফকীহ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আয়াতুল্লাহ কাযীর (আল্লামা তাবাতাবাইর শিক্ষক) ছাত্র আমার অনুসন্ধানের উত্তরে হযরত শেইখ রজব আলী সম্পর্কে বললেনঃ
“
আমি তার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম নাজাফে হযরত আয়াতুল্লাহ কাযীর এক বৈঠকে। সে বৈঠকে তিনি আমির আল মুমিনীন (আঃ) সম্পর্কে প্রশংসাসূচক কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন যার প্রতিটি পংক্তি আবজাদ
এর অক্ষর দিয়ে শুরু। এরপর তিনি তার একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন যা এরকমঃ
“
আপনি যে নেয়ামত দান করেছেন মহাজগতকে , তার সব দিয়েছেন আমাকে , প্রচুর ও বিভিন্ন ;
আমি ভাবছিলাম যে এটি হবে সবচেয়ে উঁচু ব্যাখ্যা খোদায়ী নেয়ামত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতার , যতক্ষণ না আমি সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার এই বাক্যটির সাক্ষাত পেলাম”
“
আমি আপনার সব নেয়ামতের জন্য শোকর জ্ঞাপন করছি।”
এক আশ্চর্য ও শিক্ষণীয় কারামাহ
সাপ্তাহিক বৈঠকের‘
নৈতিকতা’
সম্পর্কিত আলোচনার শেষে একজন যুবক এগিয়ে আসলো সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার 35 নং দোয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করতে : আমি ইয়াযদ থেকে এসেছি। এ বিষয়টি একটি বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিলো এবং উপস্থিত কেউ কেউ হাসাহাসি করেছিলো। বলা হয়েছিলো এর কারণ হলো শেইখের মূর্খতা। কারণ তিনি জানতেন না সাহিফায়ে সাজ্জাদিয়াতে এটি আছে কিনা। সে রাতেই আমি দেখলাম তিনি বলছেনঃ
“
আমার উদ্ধৃতি দিয়ে যা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। আমি যা বলেছি তা এরকমঃ‘
আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা , আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে বরং সেসবের জন্য বেশী যা আমাকে দেন নি।’
এ কথাটি সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় 35 নং দোয়াতে আছে।”
কোন সন্দেহ নেই যে এটি একটি সত্য স্বপ্ন ছিলো। সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া থেকে কোন কিছু স্বপ্নে পাওয়া গায়েবের সাথে সম্পর্কহীন অবস্থায় একেবারেই অসম্ভব।