আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 28912
ডাউনলোড: 5752

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 28912 / ডাউনলোড: 5752
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

প্রথম অধ্যায়

আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ

হযরত শেইখের আধ্যাত্মিক মাক্বাম ও নৈতিক গুণাবলী তাদের সবার কাছেই সুস্পষ্ট ছিলো যারা তার বৈঠকগুলোতে উপস্থিত থেকে তার কথা শুনতেন ও তাকে ঘনিষ্ঠভাবে জানতেন।

প্রশ্ন হলো এ বিশাল আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কী করে এত উঁচু মর্যাদা পেলেন। কীভাবে একজন সাধারণ মানুষ যিনি আনুষ্ঠানিক বিদ্যাবহির্ভূত ছিলেন এবং হাওযার (ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র) কোন অভিজ্ঞতা তার ছিলো না , অথচ তিনি এত উঁচু মাক্বাম অর্জন করলেন যে শুধু সাধারণ জনগণই নয় এমনকি হাওযা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞ ব্যক্তিরাও তার পথ প্রদর্শন উপভোগ করেছে ? কী সেই গোপন রহস্য যা হযরত শেইখকে এক লাফে দীর্ঘপথ এগিয়ে দিয়েছিলো ? এবং সবশেষে : কে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং কে ছিলো তার আধ্যাত্মিক শিক্ষক ?

শেইখের উস্তাদগণ

যদিও হযরত শেইখের আনুষ্ঠানিক কোন জ্ঞান ছিলো না যা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাওযাগুলোতে অর্জন করা যায় , তবুও তিনি কিছু বিশিষ্টজনের সাহচর্য পেয়েছেন , যারা জ্ঞানে ও আধ্যাত্মিকতায় ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তি , যেমন , আয়াতুল্লাহ মুহাম্মদ আলী শাহ আবাদী। যিনি ইমাম খোমেনী (রঃ) এর শিক্ষক ছিলেন34 , এবং মরহুম আয়াতুল্লাহ মির্যা মুহাম্মদ তাক্বী বাফক্বী এবং মরহুম আয়াতুল্লাহ মির্যা জামাল ইসফাহানী।

তিনি আরো দু জন বিজ্ঞ লোকের কাছে শিক্ষা লাভ করেন। তারা হলেন আগা সাইয়্যেদ আলী মুফাস্সির এবং সাইয়্যেদ আলী গারাভী যিনি ছিলেন কোরআন ব্যাখ্যাকারী এবং তেহরানের উপকন্ঠে মসজিদে সাল সাবিলের ইমাম।

এ অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ফলে তিনি পবিত্র কোরআন ও হাদীসের সাথে ভালোভাবেই পরিচিত হন এবং পবিত্র কোরআন হাদীস এবং দোয়াসমূহ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করতেন। অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে তা উপস্থাপন করতেন ও যথাযথ মন্তব্য করতেন যে বিষয়ে অন্যরা ছিলেন কম সচেতন। এভাবে হযরত শেইখের ইসলামী জ্ঞান লাভ ছিলো বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভের ফলাফল। কিন্তু তার এক লাফে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যাওয়া ও আধ্যাত্মিক উন্নতির কারণ অন্য জায়গায়। তার জীবনের মোড় যেখানে ঘুরে যায় তা হলো যখন হযরত শেইখ বলেছেন : আমার কোন শিক্ষক ছিলেন না , তখন তিনি এ কথাটিই ইঙ্গিত করেছেন।

তার ভক্তদের একজন বলেছেন যে হযরত শেইখ বলেছেনঃ

আমার কোন শিক্ষক ছিলো না। আমি শেইখ মোহাম্মদ তাক্বী বাফক্বীর35 আলোচনায় উপস্থিত থাকতাম যা হযরত আব্দুল আযীম (আঃ) এর পবিত্র মাজারের উঠানে সন্ধ্যা রাতে অনুষ্ঠিত হতো। তিনি ছিলেন এক আধ্যাত্মিক লোক। একদিন তিনি শ্রোতাদের মধ্যে আমাকে সম্বোধন করে বললেন : আপনি একটি (উচ্চ) মাক্বাম অর্জন করবেন।

জীবন সন্ধিক্ষণ

আমাদের মতে হযরত শেইখের একবারে দীর্ঘপথ অতিক্রম করা , উন্নতির শুরু এবং জীবনের বাঁক একটি ঘটনার মাঝে নিহিত যা খুবই প্রভাব বিস্তারকারী ও শিক্ষণীয়।

যুবক বয়সের প্রথম দিকে হযরত শেইখের জীবনে কিছু ঘটেছিলো যা অনেকটা ইউসূফ (আঃ) এর ঘটনার মত। এ ঘটনা এবং যা পরবর্তীতে ঘটেছিলো তা হলো হযরত শেইখের বাস্তব তাওহীদের পথ অনুশীলন। কোরআনে হযরত ইউসূফের (আঃ) ঘটনার শেষ দিকে এসে এই আয়াতে বলা হয়েছে :

) إِنَّهُ مَن يَتَّقِ وَيَصْبِرْ‌ فَإِنَّ اللَّـهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ‌ الْمُحْسِنِينَ(

নিশ্চয় যে সৎকর্মশীল ও ধৈর্যশীল , আল্লাহ তার সৎকর্মের পুরস্কারকে কখনোই হারিয়ে যেতে দেবেন না। (সূরাইউসূফঃ90)

এটি একটি সাধারণ নিয়ম যা শুধু নবী ইউসূফ (আঃ) এর জন্যই নয়।

নবী মূসা (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কোরআন বলছেঃ

) وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَىٰ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ(

যখন সে পূর্ণ বয়স্ক হলো এবং দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো , (জীবনে) আমরা তাকে দিলাম ক্ষমতা ও জ্ঞান ; এভাবে আমরা তাদের পুরস্কার দেই যারা সৎকাজ করে। 36 (আল কাসাসঃ14)

এটিও এক সাধারণ নিয়ম। কোরআন অনুযায়ী সব সৎকর্মশীল ও পরোপকারী ব্যক্তিগণ প্রজ্ঞার আলো ও সুনির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধি লাভ করে থাকেন।

নবী ইউসুফ (আঃ) এর মত একটি ঘটনা

হযরত শেইখ কদাচিৎ এ ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণ দিতেন। যাহোক কিছু কিছু সময় তিনি সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত দিয়েছেনঃ

আমার কোন উস্তাদ ছিলো না , কিন্তু আমি বলেছিলামঃ

হে আল্লাহ! আমি এ থেকে নিবৃত্ত রইলাম আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং আমি নিজেকে নিবৃত্ত করলাম এ আশায় যে আপনি আমাকে প্রশিক্ষণ দেবেন শুধু আপনার জন্য।

এ ঘটনাটির উল্লেখ করে সুবিখ্যাত ফক্বিহ আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাদি মিলানী (রঃ) বলেছেন : শেইখকে নেয়ামত দেয়া হয়েছে আর তা হচ্ছে এ কারণে যে তিনি যুবক বয়সে আত্মনিয়ন্ত্রণ করেছেন।

হযরত শেইখ নিজেই এ ঘটনাটি বলেছেন মর্যাদাবান ফক্বিহ আয়াতুল্লাহ মিলানীর কাছে। সেই বৈঠকে আয়াতুল্লাহ মিলানী (রঃ) ছেলে হাজ্ব , সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ আলী মিলানীও উপস্থিত ছিলেন , যিনি বলেছেন যে হযরত শেইখ এ ঘটনাটি এ ভাবে বলেছেন :37

আমার যুবক বয়সে আমার এক আত্মীয়ের এক সুন্দরী কন্যা আমার প্রেমে পড়েছিলো এবং আমাকে এক নির্জন জায়গায় একা পেয়েছিলো। আমি নিজেকে বললামঃ রজব আলী! আল্লাহ তোমাকে অনেকবার পরীক্ষা করতে পারেন ; কেন তুমি একবার আল্লাহকে পরীক্ষা করো না। ? নিবৃত্ত থাকো এক অবৈধ আনন্দের কাজ থেকে আল্লাহরই জন্য!

এরপর আমি আল্লাহকে বললাম :

হে খোদা! আমি এ গুনাহ থেকে নিবৃত্ত রইলাম এবং এর বদলে তুমি আমাকে তোমার জন্য প্রশিক্ষণ দাও!

এরপর , নবী ইউসূফ (আঃ) এর মত তিনি সাহসিকতার সাথে গুনাহপূর্ণ এ লোভ থেকে নিজেকে বিরত রাখলেন , আহবানকে এড়িয়ে গেলেন এবং দ্রুত সরে গেলেন সেই বিপজ্জনক ফাঁদ থেকে।

এ আত্ম -নিয়ন্ত্রণ ও গুনাহ এড়িয়ে যাওয়া তাকে দিয়েছিলো অন্তর্দৃষ্টি ও অতিন্দ্রীয় অনুভূতি। তার অন্য জগতের দৃষ্টি খুলে গেল। তিনি এমন কিছু দেখতেন ও শুনতেন যা অন্যরা দেখতে পেতো না বা শুনতেও পেতো না। তিনি এমন পরিষ্কার অর্ন্তদৃষ্টি পেলেন যে যখনই তিনি তার বাড়ি থেকে বেরোতেন তিনি কিছু লোককে তাদের প্রকৃত চেহারায় দেখতেন এবং কিছু রহস্যকে তার কাছে খুলে ধরা হয়েছিলো38 । হযরত শেইখ বলেছেনঃ

একদিন আমি মৌলভী চৌরাস্তা থেকে সিরাস এভিনিউর ভেতর দিয়ে গালুবান্দাক (তেহরানের এক অঞ্চল) পর্যন্ত গেলাম এবং (একই পথ দিয়ে) ফিরলাম এবং দেখলাম শুধু একটি মাত্র মানুষের মুখ!

কীভাবে তিনি আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন

ফাঁদে পড়া এক নব্য যুবকের দোয়াঃ হে আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য প্রশিক্ষণ দিন! কবুল হয়েছিলো সেই স্পর্শকাতর মুহূর্তে এবং আধ্যাত্মিক জীবনে এক লাফে এত সামনে এগিয়ে গেলেন যে অগভীর লোকেরা তা ধারণাই করতে পারে না। এই এক লাফে শেইখ রজব আলী এক রাতে একশত বছর দূরত্ব অতিক্রম করলেন এবং পরিচিত হয়ে গেলেন শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত হিসেবে।

তার আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপে তার চোখ , কান ও অন্তর খুলে গেলো। এতে তিনি বস্তু জগতের বাইরের এবং উচুঁ আকাশগুলো ভেদ করে দেখতে পেতেন , যা অন্যরা দেখতে পেত না ও শুনতে পেত না। এ রহস্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা শেইখের কাছে বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে ইখলাস (আন্তরিকতা) অন্তরের চোখ ও কানকে খুলে দেয়। তিনি দৃঢ়ভাবে তার শিষ্যদের বলতেনঃ

যদি কেউ আল্লাহর জন্য কাজ করে তাদের অন্তরের চোখ ও কান খুলে যাবে।

অন্তরের চোখ ও কান

কেউ হয়তো অবাক হতে পারেন অন্তরের আবার চোখ ও কান থাকতে পারে কিনা। কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে : মানুষ কি শারীরিক কান ও চোখ ছাড়া দেখতে ও শুনতে সক্ষম ?

উত্তর হচ্ছে , হ্যাঁ , এটি সত্য। শিয়া ও সুন্নী উভয়ের হাদীসের মাধ্যমে বর্ণীত হয়েছে যে এর উত্তর ইতিবাচক। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো।39

নবী (সাঃ) বলেছেন :

কোন দাস নেই যে তার চেহারায় দু টো চোখ নেই যা দিয়ে সে পৃথিবীর জিনিস দেখে এবং আরও দু টো চোখ তাদের অন্তরে রয়েছে পরকালের বিষয়গুলো দেখার জন্য। যখন আল্লাহ তাঁর কোন দাসের কল্যাণ চান তিনি তাদের অন্তরের দু টো চোখ খুলে দেন যা দিয়ে তারা তার প্রতিশ্রুত নেয়ামতগুলো দেখতে পায় এবং তারা অদৃশ্যকে বিশ্বাস করে তাদের অদৃশ্য চোখ দিয়ে। 40

অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেনঃ

যদি তোমাদের অন্তর বিভক্ত না হতো এবং তোমরা এতো বাচাল না হতে তাহলে তোমরা সন্দেহাতীতভাবে তাই শুনতে যা আমি শুনি। 41

ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেনঃ

নিশ্চয়ই অন্তরের আছে দুটো কান : ঈমানের রুহ এর একটিতে কল্যাণের কথা বলে এবং অন্যটায় শয়তান অনিষ্টের কথা ফিসফিস করে। এভাবে যেটি অন্যটির উপর বিজয়ী হবে তার উপর অধিপত্য করবে। 42

দ্বিতীয় অধ্যায়

অদৃশ্য জগত থেকে সাহায্য

আমরা নাহজুল বালাগাতে পড়ি ইমাম আলী (আঃ) জোর দিয়ে বলেন যে , সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিছু মেধাবী দাস আছেন যাদের সাথে তিনি কথা বলেন তাদের মন ও বুদ্ধির মাধ্যমে। ইমাম আলী (আঃ) এর কথাগুলো এরকমঃ

সব যুগে ও সব কালেই বিশেষ করে (দুই নবীর আগমনের মধ্যবর্তী সময়ে) এমন কিছু ব্যক্তি ছিলেন যাদের সাথে নেয়ামত দানকারী মহান আল্লাহ একান্তে (উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে) কথা বলেন তাদের মন ও বুদ্ধির সাথে এবং আলোকিত করেন তাদের অন্তরের চোখ ও কানকে চেতনার আলো দিয়ে। 43

আল্লাহর এ যোগ্য দাসেরা হলো তারা যাদের এভাবে বর্ণনা এসেছে মুনাজাতে শাবানিয়ায়ঃ

হে আল্লাহ ! আমাকে শামিল করুন তাদের সাথে যারা আপনার ডাকে সাড়া দেবে , আপনার নূর দেখে চেতনা হারাবে যখন আপনি তাদের দিকে তাকাবেন , আপনি তাদের সাথে নীচু স্বরে কথা বলেন , এবং তারা আপনার জন্যে প্রকাশ্যে কাজ করে।

নফসে আম্মারার (অন্যায়ের দিকে উদ্বুদ্ধকারী) ফাঁদ থেকে ও শয়তানের উস্কানী থেকে মুক্ত হবার পর এবং অন্তরের চোখ ও কান খুলে যাবার পর এ ধরণের যোগ্য দাসদের মাঝে যুবক দর্জিকে মর্যাদা দেওয়া হলো। তখন থেকে তিনি মাঝে মাঝেই ঐশী অদৃশ্য জগত থেকে উৎসাহ লাভ করতেন যার কিছু ছিল স্বপ্নে এবং কিছু জাগ্রত অবস্থায়। এভাবে বিশেষভাবে পথ প্রদর্শিত হচ্ছিলেন যা নিবেদিত এবং মুখলেস মুজাহিদদের জন্যে দেয়া হয়।44

এ ধরনের হেদায়াত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

যখন আল্লাহ কোন ব্যক্তির জন্য ভালো চান তিনি তাদের দ্বীনি আইন সম্পর্কে দক্ষ বানান এবং সঠিক পথে ঐশী উৎসাহ (এলহাম) দেন। 45

অনুচিত চিন্তার শাস্তি

আল্লাহর প্রশিক্ষণের অধীনে ঐশী পথ প্রদর্শনের একটি নেয়ামত হচ্ছে নিজের ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া। পবিত্র নবী (সঃ) বলেনঃ

যখনই আল্লাহ কোন ব্যক্তির কল্যাণ চান তিনি তাদেরকে করেন ধর্মীয় আইনে বিশেষজ্ঞ , পৃথিবীর প্রতি উদাসীন এবং তার নিজের দোষত্রুটি সম্পর্কে সচেতন। 46

ঐশী হেদায়েতের পথে যুবক রজব আলী অনেক ঐশী উৎসাহ লাভ করেন।

আয়াতুল্লাহ ফাহরি47 বলেন হযরত শেইখ তাকে বলেছেন :

একদিন আমি বাজারে গেলাম কিছু কাজে , একটি অনুচিত চিন্তায় আমার মন ঘুরে গেলো। কিন্তু আমি সাথে সাথেই তওবা করলাম। পথে আমি দেখলাম এক সারি উট শহরের বাইরে থেকে লাকড়ী বহন করে আনছে। হঠাৎ করে একটি উট আমাকে লাথি দিলো। আমি যদি সঠিক সময়ে নিজেকে সরিয়ে না নিতাম তাহলে তা আমাকে মারাত্মক ব্যাথা দিতো। আমি এ প্রশ্ন মনে নিয়ে মসজিদে গেলাম যাতে জানতে পারি ঘটনাটি কোথা থেকে শুরু হলো । আমি দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আল্লাহ এটি কি ছিলো ?!

আমাকে অতিন্দ্রীয়ভাবে বলা হলোঃ

সেটি ছিলো তোমার চিন্তার ফল। আমি বললাম , আমিতো কোন গুনাহ করি নি। আমাকে উত্তর দেয়া হলোঃ উটের লাথিওতো আসলে তোমাকে আঘাত করে নি। 48

বালাম-ই-বাউরের পরিণতি হবার হুমকি

হযরত শেইখের বিশ্বস্ত শিষ্যদের মধ্যে আয়াতুল্লাহ আগা মির্যা মাহমুদও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন যিনি যানজান-এর জুময়ার ইমাম ও মির্যা নাঈনির একজন বিজ্ঞ ছাত্র। এ ধরনের জ্ঞানী ব্যক্তিও মুগ্ধ হয়েছিলেন আনুষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন দুনিয়া বিমূখ হযরত শেইখের আন্তরিকতা ও মেধা দেখে।

হযরত শেইখ একবার বলেনঃ

যানজান এর জুময়ার ইমাম তেহরানের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এলেন। তিনি তাদেরকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এ সাক্ষাতের কারণে (আত্মগর্বের ফলে) আমি ভাবলাম আমি একটা উঁচু মর্যাদা লাভ করেছি যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমার সাথে সাক্ষাত করতে আসে...

ঐ (দিন) রাতে আমার মনে এক অদ্ভুত অবস্থার সৃষ্টি হলো। খুব হতাশ অনুভব করছিলাম। আল্লাহর কাছে দোয়া ও অনুনয়ের পর আমার পবিত্রতা পূনরায় ফেরত দেয়া হলো। আমি সতর্ক হলাম যে যদি এ ধরনের মনোভাব দীর্ঘস্থায়ী হতো তাহলে আমি কি করতাম।

এরকম অবস্থা কীভাবে হলো। আমি এরকম চিন্তায় নিমজ্জিত অবস্থায় আমাকে বালাম-ই-বাউর49 -কে দেখানো হলো এবং বলা হলো।:

যদি এ ধরনের মনোভাব চলতে থাকে তাহলে তুমি তার পরিণতি ভোগ করবে। তোমার সমস্ত সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার পরিণতি হবে যে তুমি বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে মেলামেশা করবে , এ পৃথিবীকে উপভোগ করবে এবং পরকাল থেকে বঞ্চিত হবে। এ ঘটনা শেষ হয়ে গেলো। আমরা শুক্রবারগুলোতে নিয়মিতভাবে বসতে লাগলাম। একবার এ বৈঠক সাধারণের চাইতে দীর্ঘ হলো এবং তা দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হলো। বাড়ির মালিক ও অন্যান্য বন্ধুরা সেখানেই দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তাব করলো এবং আমি একমত হলাম। পরবর্তী সপ্তাহে বৈঠক দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হলো এবং আবারো দস্তরখানা বিছানো হলো। স্বাভাবিক ভাবেই এবার আরো বেশী প্রকারের খাবারসহ। তা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চললো। এক ভোজে বিভিন্ন খাবারের সাথে ছিলো সবচেয়ে ভালো মানের মাখন যা দস্তরখানার মাঝখানে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমার মনের ভেতর দিয়ে ঘুরে গেলো যে , এ ভোজ আমার জন্য হচ্ছে , এ বৈঠক আমার জন্য হচ্ছে এবং অন্যান্য বন্ধুদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিলো আমার কারণেই। তাই মাখন নেয়ার অগ্রাধিকার আমারই।

এ ধারণা নিয়ে আমি সামান্য রুটির টুকরা নিলাম এবং যখনই আমি মাখন নিতে গেলাম আমি দেখলাম বালাম-ই-বাউর ঘরের এক কোণে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে! তখন আমি আমার হাত ফিরিয়ে নিলাম।

তুমি পরিতৃপ্ত অথচ তোমার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত ?!

হযরত শেইখ এর এক শিষ্য বলেন যে হযরত শেইখকে তিনি বলতে শুনেছেনঃ

এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি দোষী সাব্যস্ত হয়েছি এবং কিছু প্রহরী এসেছে আমাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পর দিন সকালে আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম এই ভেবে এ স্বপ্নের কী কারণ ছিলো ? আল্লাহর অনুগ্রহের ফলে আমি জানতে পারলাম যে তা কোনভাবে আমার প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কিত। আমি আমার পরিবারকে বললাম বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে এবং আমাকে জানাতে। আমার প্রতিবেশী ছিলো একজন রাজমিস্ত্রী। জানা গেলো যে সে বেশ কয়েক দিন ধরে বেকার এবং এর আগের রাতে তার এবং তার স্ত্রীর জন্য কোন খাবার ছিলো না এবং ঐ রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছে। আমাকে (অতিন্দ্রীয়ভাবে) জানানো হলোঃ দূর্ভোগ তোমার প্রতি! তুমি পেটভরা অবস্থায় ঘুমাও অথচ তোমার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত ? সে সময় আমার কাছে জমা ছিলো তিন আব্বাসী! কোন দেরি না করে আরেকটি আব্বাসী প্রতিবেশী এক মুদির দোকান থেকে ধার করলাম এবং আমার জমানো অর্থের সাথে একত্র করে প্রতিবেশীকে দিলাম আর অনুরোধ করলাম যে যখনই সে বেকার ও কপর্দকহীন হয়ে পড়ে তখনই যেন সে আমাকে জানায়।

আল্লাহর জন্য সন্তানদের ভালোবাসো!

একবার হযরত শেইখ বললেনঃ

একরাতে আমি নিজেকে (অন্তরকে) পর্দায়50 ঢাকা দেখলাম এবং কোন ভাবে মাশুকের দিকে পথ পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করলাম এ পর্দার উৎস কোথায়। দীর্ঘ সময় অনুনয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমি বুঝতে পারলাম যে তা ছিলো আগের সন্ধ্যায় আমার এক সন্তানের চেহারার দিকে তাকিয়ে তার প্রতি স্নেহ অনুভব করার ফল। আমাকে (অতিন্দ্রীয় ভাবে) বলা হলো যে , আমি যেন আল্লাহর কারণে আমার সন্তানকে ভালোবাসি! (তাই) আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম ব্যক্তিগত কারণে স্নেহ করার কারণে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য।

প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পর্দা

হযরত শেইখের এক ভক্ত তার সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে একবার হযরত শেইখ তার এক বন্ধুর বাড়িতে এক বৈঠকে ছিলেন। কথা শুরু করার আগে তিনি ক্ষুধার কারণে কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করলেন এবং সামান্য রুটি চাইলেন। বাড়ির মালিক তাকে একটি বড় রুটির অর্ধেকটা এনে দিলেন খাওয়ার জন্য। এর পর তিনি আবার অধিবেশন শুরু করলেন। পরের দিন রাতে তিনি বললেন :

গত রাতে আমি ইমামদের (আঃ) সালাম পেশ করলাম কিন্তু তাদের দেখলাম না। এর কারণ খুঁজতে আমি অনুনয় করলাম । আমাকে অতিন্দ্রীয়ভাবে বলা হলো : তুমি অর্ধেক খাবার খেয়েছিলে এবং ক্ষুধা মিটে গিয়েছিলো। তাহলে কেন তুমি বাকী অর্ধেকও খেলে ?! শরীরের প্রয়োজনে কিছু খাবার খাওয়া যথেষ্ট কিন্তু তার চেয়ে বেশী পর্দা ও অন্ধকার সৃষ্টি করবে।