আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 28926
ডাউনলোড: 5752

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 28926 / ডাউনলোড: 5752
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

তৃতীয় অধ্যায়

আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা

নফলে নৈকট্যের হাদীস নামে (হাদীস-ই-ক্বুরবী নাওয়াফিল) একটি হাদীস রয়েছে। শিয়া ও সুন্নী উভয়ের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ এই হাদীসটি সামান্য পার্থক্যসহ বর্ণনা করেছেন যে নবী (সঃ) বলেছেন:51

কোন দাস আমার নিকটবর্তী হতে পারে না। আমার পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক কাজগুলোর চেয়েও অধিক পছন্দনীয় কাজগুলো ব্যতীত। নিশ্চয়ই সে নফলের মাধ্যমে এতটা নিকটবর্তী হয় যে , আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি। তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে। তার জিহবা হয়ে যাই যা দিয়ে সে কথা বলে এবং তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে আঘাত করে। সে যদি আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই এবং যদি সে আমার কাছে চায় আমি তাকে তা দান করি। 52

হাদীস-ই-ক্বুরবী নাওয়াফিলে যে নফলের কথা বলা হয়েছে তা বাধ্যতামূলক নামাযের পরে আসে যা ভালো ও সৎকাজকেও অন্তর্ভূক্ত করে। এটি মানুষের পরম পূর্ণতা এবং মানবতার ঐশী গন্তব্যের দিকে মানুষের ভ্রমণকে ত্বরান্নিত করে।

এভাবে , ব্যক্তি আল্লাহর জন্য সৎকাজের মাধ্যমে পরম পূর্ণতা ও দাসত্বের উচ্চতম স্থানের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। তার চোখ আল্লাহর জন্য ছাড়া দেখবে না , তার কান শুনবে না একমাত্র আল্লাহর জন্য ছাড়া , তার জিহবা কথা বলবে না একমাত্র আল্লাহর জন্য ছাড়া এবং তার অন্তর চাইবে না শুধু আল্লাহর জন্য ছাড়া।

অন্যভাবে বলা যায় , এ হচ্ছে আপনার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছায় ডুবিয়ে দেয়া। যেভাবে হাদীস-ই-ক্বুরবী নাওয়াফিলে বর্ণিত হয়েছে - আল্লাহ হয়ে যাবেন আপনার চোখ , কান , জিহবা ও অন্তর ; এবং আপনি শেষ পর্যন্ত অর্জন করবেন দাসত্বের ঐশী সত্তা।

হযরত শেইখ এর কথা অনুযায়ী :

যদি চোখ আল্লাহর জন্য কাজ করে তা আল্লাহর চোখ হয়ে যায়। যদি কান আল্লাহর জন্য কাজ করে তা হয়ে যায় আল্লাহর কান। যদি হাত আল্লাহর জন্য কাজ করে তা হয়ে যায় আল্লাহর হাত এবং তা মানুষের অন্তর পর্যন্ত যা আল্লাহর স্থান: যেমন বর্ণিত :

বিশ্বাসীর অন্তর সর্বদয়ালু আল্লাহর আরশ। 53

আর ইমাম হোসাইন (আঃ) বলেনঃ

ইয়া রব! আপনি আপনার প্রেমিকের অন্তরকে বানিয়েছেন আপনার ইচ্ছা ও দূরদর্শিতার অবস্থান কেন্দ্র। 54

নিরপেক্ষভাবে বিচার করলে বোঝা যায় যে হযরত শেইখ শরীরী কামনার আহবানকে প্রত্যাখ্যান করায় তিনি যে দীর্ঘ দূরত্ব একবারে অতিক্রম করেছিলেন এবং যে ঐশী প্রশিক্ষণ তিনি অদৃশ্য জগত থেকে পেয়েছিলেন তা তাকে অনেক উঁচু আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত করেছিলো ।

হয়তোবা এটিই ছিলো সে রহস্য তার এ কবিতায় যা তিনি প্রায়ই আবৃত্তি করতেন :

অমরত্বের বিদ্যালয়ে তোমার সৌন্দর্য আমাকে পথ দেখিয়েছে , তোমার অনুগ্রহ আমাকে তোমার (ঐশী) ফাঁদে আটকে যেতে সাহায্য করেছে।

আমার নোংরা সত্তা যে মিথ্যাকেই চাইতো , তোমার অনুগ্রহের প্রবাহ আমাকে তা থেকে মুক্ত করেছে।

তাওহীদের ভেতর নিমজ্জিত

হযরত শেইখের ঘনিষ্ট শিষ্যদের একজন55 যিনি তার সাথে ত্রিশ বছর ছিলেন তিনি বলেন :

হযরত শেইখের পরামর্শে আমি আয়াতুল্লাহ কুহিস্তানির সাথে দেখা করতে গেলাম। মরহুম কুহিস্তানি একবার হযরত শেইখ সম্পর্কে বলেন : মরহুম শেইখ রজব আলীকে যা দেয়া হয়েছিলো তা ছিলো তার দৃঢ় তাওহীদের জন্য ; তিনি তাওহীদে ডুবে ছিলেন।

ফানাহর (বিলীন হয়ে যাওয়ার) মাক্বাম

ডঃ হামিদ ফারযাম যিনি হযরত শেইখের বৈঠকগুলোতে উপস্থিত থাকতেন তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন : হযরত শেইখ রজব আলী নিকুগুইয়ান (রঃ) ছিলেন একজন দুনিয়া বিমূখ সাধক যিনি আল্লাহর সাথে মিশে যাওয়া অর্জন করেছিলেন। নফসের পবিত্রতা ও অভ্যন্তরীণ পবিত্রতার কারণে যিনি ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়া) এবং বাক্বাবিল্লাহ (আল্লাহর মাঝে চিরস্থায়ী বসবাস) অর্জন করেছিলেন শরীয়ত অনুযায়ী আমল করে এবং আধ্যাত্মিক মাক্বাম ও অবস্থার হাল শৃংখলা মেনে চলে। তিনি প্রকৃত সত্যের সাথে মিলিত হয়েছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ অনুগ্রহে।

আল্লাহ প্রেমিক

হযরত শেইখ সম্পর্কে আরেকজন বর্ণনা করেন : হযরত শেইখ তাদের একজন যাদের সত্তা আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত ছিলো। তিনি বাস্তবেই আল্লাহ ছাড়া কিছু দেখতে সক্ষম ছিলেন না। যা তিনি দেখতেন তা হলো আল্লাহ। তিনি যা বলতেন তা ছিলো আল্লাহ সম্পর্কে। তার প্রথম এবং শেষ কথা ছিলো আল্লাহ , কারণ তিনি আল্লাহর প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি প্রেমে পড়েছিলেন আল্লাহর ও আহলে বায়েতের (আঃ)। তিনি যা বলতেন তা ছিলো তাদের সম্পর্কে। পবিত্র হওয়া আর প্রেমিক হওয়া আলাদা কথা। শেইখ রজব আলী ছিলেন এক প্রেমিক। তার শিক্ষাশৈলী ছিলো আল্লাহর প্রেম ও আল্লাহর জন্য কাজ। যারা ঐশী প্রেমে নিমজ্জিত তাদের চোখ তা প্রদর্শন করে। তার চোখ সাধারণ ছিলো না। মনে হতো তিনি আল্লাহ ছাড়া কিছুই দেখতেন না।

হযরত শেইখ মনে করতেন আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুতে আনন্দিত হওয়া ছিলো গুনাহের কাজ। একবার হযরত শেইখ খুব গরম গ্রীষ্মের দিনে হাত পাখা ব্যবহার করলেন (তার চেহারায় বাতাস দিলেন)। যখনই তিনি একটু ঠান্ডা অনুভব করলেন তিনি একবার বললেন :

(হে আল্লাহ) , ক্ষমা চাই তোমার কাছে তোমার স্মরণবিহীন প্রত্যেক আনন্দের জন্য। প্রত্যেক আরামের জন্য যা তোমার নৈকট্যবিহীন। প্রত্যেক সুখের জন্য যা তোমার নৈকট্যবিহীন এবং প্রত্যেক পেশার জন্য যা তোমার অনুগত্যবিহীন। 56

তার আরেকজন শিষ্য হযরত শেইখের আল্লাহ প্রেম সম্পর্কে বলেন :

হযরত শেইখ এতই আল্লাহর প্রেমমুগ্ধ ছিলেন যে তার উপস্থিতিতে মাশুকের কথা ছাড়া কোন কথা উঠার অনুমতি দিতেন না কেবল অতিজরুরী কিছু দৈনিক বিষয়ে ছাড়া। কোন কোন সময় তিনি লাইলী মজনুর কথা বলতেন যেখানে মজনু লাইলীর কথা ছাড়া আর কিছু শুনতে চাইতো না। বলা হয় যে কেউ জিজ্ঞেস করেছিলো , আলী সঠিক না উমর ?

যার উত্তরে সে বলেছিলো : লাইলী সঠিক!

হযরত শেইখ বলতেনঃ

যদি ঘটনাটি সত্য নাও হয় তবুও এর ভিতরে (সুপ্ত) বাস্তবতাকে অন্তরে পৌঁছে দেয়ার জন্য তা উপযুক্ত।

সর্বোচ্চ মাক্বাম

যুবক দর্জি তার তীব্র খোদা প্রেম ও নিখুঁত আন্তরিকতার জন্য সর্বোচ্চ মাক্বাম ও ঐশী গন্তব্য লাভ করেছিলেন।

আহলুল বায়েত (আঃ) যেভাবে বলেছেন তিনি সেভাবে অর্জন করেছিলেন নৈতিকতা এবং মারেফাতের মাক্বাম , এমন এক পথে যা সাধারণ নয়। ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন :

প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা তারা যারা তাদের চিন্তাকে কাজে লাগায় , যার মাধ্যমে তারা আল্লাহ প্রেম লাভ করে। যখন তারা এ স্থানে পৌঁছায় পবিত্র ইমাম (আঃ) বলেন - তারা তাদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রেমকে আল্লাহর দিকে স্থাপন করে এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের রবকে অন্তরে খুঁজে পায় কিন্তু প্রজ্ঞা অর্জন করে সাধকরা যে রাস্তা পেয়েছে সে রাস্তায় নয় , কিংবা বিজ্ঞ গবেষকরা যে রাস্তা পেয়েছে সে রাস্তায় নয় , এবং সিদ্ক্ব (আন্তরিকতা) অর্জন করে ধার্মিকরা যে রাস্তা পেয়েছে সে রাস্তায়ও নয়। সাধকরা প্রজ্ঞা লাভ করেছে নিরবতার মাধ্যমে। বিজ্ঞ গবেষকরা জ্ঞান লাভ করেছে সন্ধানের মাধ্যমে এবং ধার্মিকরা ধার্মিকতা ও আন্তরিকতা পেয়েছে বিনয় ও দীর্ঘদিন ইবাদতের মাধ্যমে। 57

সবগুলো জগতে প্রবেশের অনুমতি

হযরত শেইখের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট এক ভক্ত হযরত শেইখের আধ্যাত্মিক অর্জন সম্পর্কে লিখেছেন : সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও আহলুল বায়েত (আঃ) এর জন্য তার গভীর ভালোবাসার কারণে তার ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা ছিলো না। সবগুলো জগতে তার প্রবেশাধিকার ছিলো। তিনি শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত বারযাখে সকল সত্তার সাথে কথা বলতে পারতেন। তিনি নিজ ইচ্ছায় দেখতে পারতেন যে কোন মানুষ তার জীবনে কী করেছে এবং তিনি নিদর্শনগুলো58 বলতেন এবং সেসব প্রকাশ করতেন যা তার ইচ্ছা হতো এবং যার অনুমতি তাকে দেয়া হতো।

আলামে মালাকুত বা ফেরেশতাদের জগতে যাওয়া

নিশ্চিত জ্ঞানের অতিন্দ্রীয় মাক্বাম-এর পূর্ব শর্ত হলো আকাশ ও পৃথিবীর মালাকুতি জগতে অন্তরের চোখ দিয়ে প্রবেশ করা ।

) وَكَذَٰلِكَ نُرِ‌ي إِبْرَ‌اهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْ‌ضِ وَلِيَكُونَ مِنَ الْمُوقِنِينَ(

এভাবে আমরা ইবরাহিমকে দেখালাম আকাশগুলো ও পৃথিবীর মালাকূত যেন সে নিশ্চিতদের অন্তর্ভূক্ত হয়। (সূরা আল আনয়াম : 75)

নবী (সঃ) বলেছেনঃ

যদি শয়তানরা মানুষের অন্তরের উপর আধিপত্য না রাখতো , তবে তারা মালাকূত দেখতে পেতো। 59

যারাই নফস ও শয়তানের ফাঁদ থেকে নাজাত পেয়েছে তাদের অন্তরের পর্দা ছিঁড়ে তারা আকাশগুলো ও পৃথিবীর মালাকূত দেখতে সক্ষম এবং আল্লাহর সত্তার একত্বের সাক্ষী দিতে সক্ষম :

) شَهِدَ اللَّـهُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ(

কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া : এটি সাক্ষ্য আল্লাহর , তার ফেরেশতাদের এবং তাদের যারা জ্ঞান প্রাপ্ত...) (সূরা আল ইমরানঃ 18)

হযরত শেইখের এক শিষ্য বর্ণনা করেছেনঃ

আমি মরহুম হাজ্ব মুক্বাদ্দাসকে60 জিজ্ঞেস করেছিলাম যে নবী (সঃ) এর নামে এ হাদীসটি সত্য কিনা :

যদি শয়তানরা মানুষের অন্তরের উপর আধিপত্য না রাখতো , তবে তারা মালাকূত দেখতে পেতো।

তিনি বললেন : হ্যা , (সঠিক)।

আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কী আকাশগুলো ও পৃথিবীর মালাকূত দেখতে পান ?

তিনি উত্তর দিলেনঃ না , কিন্তু শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত দেখতে পান।

হযরত শেইখ ষাট বছরে

মরহুম শেইখ আব্দুল কারীম হামিদ বলেছেন যে শেইখ রজব আলী ষাট বছর বয়সে এমন মনের অধিকারী হন যে তিনি যখনই কোন জিনিস বুঝতে চাইতেন তিনি বুঝতে পারতেন তার ইচ্ছা অনুযায়ী।61

যে বিরাট পার্থক্য আমাদের জ্ঞান এবং তার জ্ঞানের মাঝে

ডঃ হামিদ ফারযাম বলেছেনঃ আমি হযরত শেইখের সাথে দেখা করতাম সাধারণত: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার জনসাধারণের জন্য নামায ও দোয়ার বৈঠকগুলোতে । একবার যখন আমি অনুভব করলাম যে আমার কিছু প্রশ্ন আছে যা তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন , তখন মনে হলো আমি তার সাথে সপ্তাহের মাঝখানে সাক্ষাত করবো।

এক সোমবার দুপুরের পর আমি তাকে কিছু প্রশ্ন করতে গেলাম। তা ছিলো একটি সুন্দর দিন। যেহেতু হাজ্ব ডঃ মুহাম্মাদ মুহাক্কিকি , যিনি ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং আয়াতুল্লাহ বুরুজারদির একজন প্রতিনিধিও , এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন এক মেধাবী ব্যক্তিত্ব যার সাথে তখন পর্যন্ত আমার সাক্ষাত হয় নি। যাহোক , আমি অনুমতি চাইলাম , বললাম এবং বেশ উপভোগ করলাম ঐ দুই মর্যাদাবান ব্যক্তির বিজ্ঞ আলোচনা।

সন্ধ্যার প্রথম লগেড়বই বৈঠকের শেষে ডঃ মুহাক্কিকি খোদা হাফেজ বললেন এবং চলে গেলেন এবং আমিও বিদায় জানাতে বাড়ির বাইরে গেলাম। গলির ভেতরে আমি তাকে বললাম যে আমি তার সাথে আরো পরিচিত হতে চাই। তিনি বললেন : আমি মুহাক্কিকি এবং আমি একজন শিক্ষক। আমি বললাম , আমি হযরত শেইখের সাক্ষাতে এসেছিলাম তার উপস্থিতি থেকে লাভবান হওয়ার জন্য এবং আমি দেখলাম আপনি অত্যন্ত জ্ঞানী , আলহামদুলিল্লাহ্.....। দেখতে চাইলাম তিনি কি বলেন। তিনি বললেনঃ

না জনাব , আমার জ্ঞান হচ্ছে কিতাবী জ্ঞান এবং সব মূখস্থ। আপনার নিজে দেখা উচিত কী উচ্চ মাক্বামইনা শেইখ অর্জন করেছেন। তিনি এমন অনেক জিনিস দেখেন ও জানেন যা আমার জ্ঞানের সাথে তুলনাহীন।

আমি বললাম : কী ভাবে ? তিনি বললেন : আমি প্রথম যখন তার সাথে সাক্ষাত করি , শুভেচ্ছার পর তিনি প্রথম যে জিনিস জিজ্ঞেস করলেন তা হলো আমার পেশা সম্পর্কে । আমি বললাম : আমি একজন শিক্ষক। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : শিক্ষকতা ছাড়া ? আমি বললাম : আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং শিক্ষা দেই। তিনি বললেন : না , আমি দেখছি আপনি একটি গোলাকার জিনিসের ব্যাবসা করেন। আমি তা শুনে থ হয়ে গেলাম ও উত্তরে বললাম : জ্বী , আমি ভৌগোলিক গ্লোব বানাই জীবিকার জন্য এবং সে বিষয়ে কেউ জানে না।

ডঃ মোহাক্কিকির অভিমত সমর্থন করে ডঃ ফারযাম হযরত শেইখ সম্বন্ধে তার স্মৃতিচারণ করে বলেন : অনেক জিনিস বলার আছে , যদি তা গুণি তা হবে অনেকগুলো খণ্ড। হযরত শেইখ তার পবিত্র সত্তা ও অভ্যন্তরীণ আন্তরিকতার কারণে তিনি বিভিন্ন জিনিস দেখতেন এবং সরলভাবে তা উল্লেখ করতেন কোন কিছুর প্রয়োজন অনুভব না করেই। যেভাবে সূফীরা বলে --- প্রকাশের সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া। এভাবে তিনি তার শিষ্যদের উপস্থিতিতে প্রায়ই পরিস্কার ভাবে বলতেন : বন্ধুরা! আল্লাহ আমাকে নেয়ামত দিয়েছেন লোকজনের বারযাখীয় দেহ প্রত্যক্ষ করার। এ ধরনের আরো কিছু স্মৃতি আমার আছে যা বলার মতো :

(ক) কঠোর পরিশ্রমী মজুরকে সাহায্য করা

আযারবাইযান থেকে আগত এক পরিশ্রমী এবং সৎ কর্মজীবী যার নাম ছিলো আলী ক্বুদাতী। সে প্রতিবেশীদের জন্য কাজ করতো এবং কোন কোন সময় আমাদের বাড়িতেও কাজ করতো এবং এর জন্য মজুরী পেতো। গ্রীষ্মে ও শীতে উভয় সময়ই সে একটি লম্বা মিলিটারী কোট পড়তো , তাকে কখনো না দেখেই শেইখ আমাকে হঠাৎ করে বললেন :

ঐ লম্বা লোকটি যে মিলিটারী কোট পড়ে এবং সাহায্য করার জন্য তোমার বাড়িতে মাঝে মাঝে আসে সে দরিদ্র ও তার পরিবার বড় ; তাকে তোমার আরো সাহায্য করা উচিত।

(খ) তুমি মেজাজ হারাও খুব দ্রুত!

একদিন আমি মুখ ভার করে বাসা থেকে বের হলাম। সন্ধ্যায় আমি হযরত শেইখের বাড়ি গেলাম রাতের নামাজের জন্য। সব বন্ধুরা একত্র হয়ে আজানের অপেক্ষা করছে এবং হযরত শেইখ এক কোণে বসে আছেন। যখনই তিনি আমাকে দেখলেন , আমার দিকে মুখ করে বললেন : তুমি খুব দ্রুত মেজাজ হারাও! এরপর অসন্তুষ্টি ও বিস্ময়ে তিনি মাথা দোলালেন এবং হাফিজের এ কবিতা আবৃত্তি করলেনঃ

তাঁর দুঃখের তরবারীর নীচে তোমার উচিত নাচতে নাচতে যাওয়া (হাসি মুখে) ! কারণ যে তাঁর দ্বারা নিহত হবে তাকে দেয়া হবে সুন্দর শেষ

আর আমি সাথে সাথেই নিজের ত্রুটি ধরতে পারলাম।

(গ) আমি দেখছি তার মাথার ও চেহারার চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে!

প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমার হৃদপিন্ডে কিছু সমস্যা হলো এবং আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ডঃ গুইয়াকে বললাম যে আমার হৃদপিন্ড খুব ভালো অবস্থায় নেই হয়তো ----।

মনে হয় তিনি হযরত শেইখকে আমার হৃদপিন্ডের অবস্থা সম্পর্কে বলেছিলেন এবং তিনি মন্তব্য করেছিলেন :

তার দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই , আমি দেখছি তার মাথার ও চেহারার চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে।

এবং তিনি আরো বলেছেনঃ

সে সত্তর বছরের বেশী বাঁচবে।

এখন শোকর আল্লাহর আমার বয়স সত্তরের উপরে। এ ধরণের ঘটনা অনেক রয়েছে যা এখানে বলা সম্ভব নয়। আমি আরো কিছু ঘটনা এখানে বর্ণনা করবো যা অতিন্দ্রীয় দৃষ্টির চাইতেও বেশী কিছু।

ঘ) ডঃ ফারযাম এর মরহুম পিতামাতার সাথে যোগাযোগ

1958 সনের দিকে হযরত শেইখের শেষ বয়সের দিকের ঘটনা। আমাকে পাকিস্তানের লাহোরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়তে ফারসী ভাষা ও সাহিত্য শেখাবার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো । এক অপরাহেৃ আমি তার সাথে পরামর্শের জন্য গেলাম। আমি বললাম : হযরত , আপনার সাথে পরামর্শের জন্য এসেছি পাকিস্তানে যাবো কিনা সেই অনুরোধ করতে , যদি সম্ভব হয় এ বিষয়ে আমার মা-বাবার সাথে পরামর্শের জন্যেও।

হযরত শেইখ বললেনঃ

তিনটি সালাওয়াত পাঠাও

এর পর তিনি তাদের সাথে কথা বলা শুরু করলেন এবং শেষে কেঁদে ফেললেন। আমি দুঃখিত হয়ে বললাম : আমি যদি জানতাম আপনি বিপর্যস্ত হবেন ও কাঁদবেন তাহলে আমার মা-বাবার সাথে যোগাযোগ করতে আমি আপনাকে বলতাম না ।

তিনি বললেন :

না জনাব! আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম ইমাম মাহদী (আঃ) এর পূনরাগমন সম্পর্কে এবং আমার কান্না ছিলো সে সম্পর্কিত।

তখন তিনি আমাকে আমার বাবার চেহারার কিছু প্রমাণ দিয়ে বললেনঃ

তোমার মা একটি চাদর পড়েছিলেন এবং কথা বলছিলেন কেরমানের উচ্চারণে যার কিছু অংশ আমি বুঝি নি।

আমি নিশ্চিত করলাম : তা সঠিক হযরত! তারা যদি কেরমানি উচ্চারণে বলে তাদের কিছু শব্দ আপনি বুঝতে পারবেন না।

হযরত শেইখ বললেনঃ

তারা যা বললেন , তাদের শেষ কথা হলো - তোমার পাকিস্তান যাওয়া ঠিক হবে না এবং কেনইবা তুমি যাবে ?!

অবশ্য শেষ পর্যন্ত আমি যাই নি ; তাদের কথা ও হযরত শেইখের কথা শেষ পর্যন্ত সত্য হলো।

কীভাবে ডঃ শেইখ ও হযরত শেইখ রজব আলীর মধ্যে সম্পর্ক হলো

হযরত শেইখের সন্তান , ডঃ আবুল হাসান শেইখ62 ও হযরত শেইখ রজব আলীর সাথে প্রথম সাক্ষাত সম্পর্কে বলেনঃ

হযরত শেইখ রজব আলীর সাথে আমার পরিচিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার স্ত্রী দু মাসের জন্য হারিয়ে যাবার কারণে। আমরা যতই তাকে খুঁজছিলাম ততই তার চিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা কিছু আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সাথেও সাক্ষাত করলাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না। আমাদের চরম হতাশার মধ্যে কেউ একজন হযরত শেইখের বাড়ির ঠিকানা দিলো এবং সেটিই তার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত। তিনি যখন আমাকে দেখলেন তিনি কয়েক মুহূর্ত গভীর ভাবে ভাবলেন এবং এরপর বললেনঃ

আপনার স্ত্রী আমেরিকায় আছে এবং তিনি দু সপ্তাহের মধ্যে ফিরবেন। কোন দুশ্চিন্তা করবেন না।

তিনি সঠিক বলেছিলেন। আমার স্ত্রী ছিলো আমেরিকাতে এবং ফিরলেন সঠিক সময়ে ।

এই ঘটনার পর ইউনিভার্সিটির কাজের পর আমি হযরত শেইখের সাথে সাক্ষাত করতাম এবং এরপর বাড়ি যেতাম।

ডঃ শেইখ এ বইটির সংকলনের কাজ চলাকালীন 1996 সনের 2রা আগষ্ট এক সাক্ষাতকারে বলেছেনঃ

একবার আমরা তার সাথে পাস ক্বালাতে গেলাম। আমরা তার জন্য একটা গাধা ভাড়া করেছিলাম চড়ে যাবার জন্য এবং আমি সামনে গাধার দড়ি নিয়ে এগোচ্ছিলাম। আমি ভাবছিলাম কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিত্ব চাই ? আমি যদি পুরো প্রফেসর হতেই চাই তাহলে যা প্রয়োজন তা হলো তার ছায়ায় হাঁটা এবং তার মতো হয়ে যাওয়া। আমরা যখন তার সাথে কারবালায় গেলাম আমরা তার সাথে এক হামামখানায় গেলাম এবং তার পিঠ ডলে দিলাম একটি তুর্কী দস্তানা দিয়ে। কত সুখকরই না ছিলো তার সাথে থাকা!

গাড়ি ঠিকই আছে , চালাও

ডঃ সুবাতি বলেনঃ একদিন হযরত শেইখ , মির্জা সাইয়্যেদ আলী ও আগা আকরামি একত্রে এক বাস ষ্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন বিবি শহরবানু পাহাড়ে63 যাওয়ার জন্য। সেখানে অনেক যাত্রী অপেক্ষা করছিলো। প্রথম বাসটি এলো এবং হযরত শেইখ বললেনঃ

এতে চড়া আমাদের ভাগ্যে নেই

বাস ভরে গেলো এবং চলে গেলো। দ্বিতীয় বাসটি এলো এবং হযরত শেইখ আবার একই কথা বললেন। যাত্রীরা দ্রুত এগোলো বাসের দিকে এবং চড়লো কিন্তু হযরত শেইখ এবং তার বন্ধুরা পেছনে পড়ে রইলেন। তৃতীয় বাসটি এলো কিন্তু এবারও যাত্রীরা ভীড়ে হুড়োহুড়ি করলো এবং হযরত শেইখ ও তার সাথীরা উঠতে পারলো না। বাস ড্রাইভার চাইলো বাস চালু করতে , কিন্তু তার কোন চেষ্টাতেই বাস চালু হলো না। শেষে ড্রাইভার যাত্রীদের বললো নেমে যেতে যেহেতু বাস নষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা তাই করলো।

হযরত শেইখ তার সাথীদের বললেনঃ

এখন বাসে উঠো। তারা বাসে উঠে পড়লো। ড্রাইভার বললোঃ বাস বন্ধ হয়ে গেছে আর তা চালু হচ্ছে না জনাব!

হযরত শেইখ বললেনঃ

আর কোন সমস্যা নেই , যাত্রা করো!

ড্রাইভার চালকের আসনে বসলো , অন্য যাত্রীরা উঠে বসলো এবং আমরা যাত্রা করলাম। পথে বাসের কন্ডাক্টর ভাড়া সংগ্রহ করতে লাগলো এবং আমাদের কাছে পৌঁছলো। কিন্তু সে আমাদের তিন জনের ভাড়া নিতে অস্বীকার করলো , কিন্তু আমরা একমত হলাম না। শেষ পর্যন্ত কন্ডাক্টর হযরত শেইখকে দেখিয়ে বললো : আমি উনার কাছ থেকে কোন ভাড়া নিবো না।

আপনার অনুরোধ রক্ষা করা হয়েছে

আগা হাজ্ব সাইয়্যেদ ইবরাহিম মূসাভী যানজানি64 বলেছেনঃ 1956 সনের ফেব্রুয়ারীতে আমি বাগদাদে গেলাম আমার পরিবার নিয়ে ইরানী পাসপোর্ট অফিসের ডেপুটি হিসাবে। ইরাকে অভ্যুথানের ঠিক দু দিন আগে আমার পরিবার ও আমি ইরানে ফিরে আসলাম , কিন্তু আমার মা এবং ছেলে কাযেমাইনে রয়ে গেলেন। দু দিন পর চারদিকে ইরাকে অভ্যুথানের সংবাদ ছড়িয়ে গেলো এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হলো। আমি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম , কারণ আমার মা এবং ছেলে ইরাকে রয়ে গিয়েছিলো। আমি সর্বশেষ সংবাদ নিতে বার বার ইরাকি দূতাবাসে গেলাম এবং ইরাকে পূনরায় যাওয়ার জন্য ভিসা চাইলাম। আমার মতো অনেকেই এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছিলো এবং তারা দূতাবাসে আসছিলো কিন্তু কোন লাভ হচ্ছিল না।

(ইরাকের ভিতরের) সংবাদ শুনে আমি আরো দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লাম। ঐ দিনগুলো ছিলো মুহাররম মাসে। তাই আমি হযরত মাসুমা (আঃ) এর মাযারে যিয়ারাত করতে গেলাম। আমি যখন পৌঁছলাম তখন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সরাসরি জারিহ্-র মাথার দিকে গিয়ে গভীরভাবে কান্নাকাটি করতে লাগলাম ও ইমাম মুসা বিন জাফর (আঃ)-এর বিশেষ সালাওয়াত পড়তে পড়তে কাকুতি মিনতি করতে লাগলাম। ইমাম (আঃ)-এর নিকট ভিসা পাইয়ে দেয়ার অনুরোধ জানালাম।

আমি দু দিন পর তেহরানে ফিরে এলাম। আমার এক সহকর্মী মরহুম আহমদ ফায়েদ মাহদাভী তার এক চাচাতো ভাই মরহুম হাজ্ব আগা জিয়াউদ্দিন ফায়েদ মাহদাভীকে হযরত শেইখ এর সাথে সাক্ষাত করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তার সাথে (আগা জিয়াউদ্দিন) আমরা হযরত শেইখের বাড়ি গেলাম। যখন আমরা গেলাম আমাদের পথ দেখিয়ে নেয়া হলো এমন একটি কক্ষে যার অর্ধেকে কার্পেট ছিলো এবং সাধারণ আসবাবে সজ্জিত ছিলো। হযরত শেইখ আমাদের সূরা তাওহীদ সাতবার পড়তে বললেন। তিনি সাত সংখ্যাটিতে খুব বিশ্বাস রাখতেন। এর পর তিনি কথা বলতে শুরু করলেন ; এবং দিক নির্দেশনা ও উপদেশ দেয়ার ব্যস্ততার মাঝে হঠাৎ করে তিনি আমার দিকে ফিরলেন এবং বললেন :

আপনার খুব ভালো একটি যিয়ারত ছিলো এবং আপনার অনুরোধ রক্ষা করা হয়েছে ; এর প্রতি ক্রি য়া সুস্পষ্ট। আমার জন্যও দোয়া করুন!

আমি হযরত শেইখকে জিজ্ঞাস করলাম কোন যিয়ারতের কথা তিনি বলছেন। তিনি বললেনঃ ক্বোমে যিয়ারত এবং এরপর তিনি তার উপদেশ দেয়ায় ফিরে গেলেন।

অভিশাপ দেয়া (অন্তরে) অন্ধকার সৃষ্টি করে

এরই মধ্যে তিনি মরহুম আগা জিয়াউদ্দিন মাহদাভীকে বললেন :

এত অভিশাপ দিও না ! অভিশাপ অনেক অন্ধকার সৃষ্টি করে ; এর বদলে দোয়া করো!!

আগা জিয়াউদ্দিন বললেনঃ মেনে নিলাম!

এ সতর্কবাণী চলমান আলোচনার সাথে সম্পর্কহীন হওয়ায় আমার কাছে অস্পষ্ট থাকলো। পরদিন আমি আমার সহকর্মী আগা আহমেদ ফায়েদ মাহদাভীর কাছে বিষয়টি তুললাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ আগা জিয়াউদ্দিনের অভিশাপ দেয়ার ঘটনাটি কী ?

তিনি ব্যাখ্যা করলেনঃ আমার চাচাত ভাই , হাজ্ব আগা জিয়াউদ্দিন এর একটি ছেলে আছে যে ধর্মীয় ব্যাপারে খারাপ চিন্তাভাবনা করে , এবং তিনি প্রত্যেক নামাযের পর তাকে (তার ছেলেকে) অভিশাপ দেন!

এদিকে আমার অনুরোধ রক্ষা করা হয়েছে এরকমটি হযরত শেইখ উল্লেখ করায় দু দিন পর আমি ইরাকী দূতাবাসে গেলাম। এ সম্পর্কিত কর্মকর্তা আমাকে দেখেই বললেনঃ আপনার পাসর্পোটটি আমাকে দিন ভিসার মোহর মারার জন্য। এরপর তিনি আমার পাসপোর্টটিতে পুরাতন রাজকীয় লোগো লাগানো সীল দিয়ে সীল মারলেন। এরপর মালিক (রাজকীয়) কথাটি কেটে দিয়ে জমহুরি (প্রজাতন্ত্র) লিখে দিলেন। যারা ভিসার জন্য দরখাস্ত করেছিলো তাদের কাছে এটি খুবই বিস্ময়কর মনে হলো ।

ভিসা পেয়ে আমি বাগদাদে চলে গেলাম। পরে জানা গেলো আমার আগে শুধু একজন আমেরিকান সাংবাদিককে বাগদাদে যাবার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো।

আল্লাহর জন্য লোকের প্রতি বিনয়ের ফলাফল

হযরত শেইখের এক শিষ্য [তার এক বন্ধু থেকে] বর্ণনা করেছেনঃ মরহুম আগা মুরতাদা জাহিদকে কবরের মাঝে শোয়ানো হচ্ছিলো , হযরত শেইখ বললেনঃ

নাকিরাইনকে (মুনকার ও নাকির) সর্বশক্তিমান আল্লাহ সাথে সাথে বলেছেনঃ আমার দাসকে আমার কাছে ছেড়ে দাও ; তাকে বিরক্ত করো না---- সে তার সারা জীবন মানুষের সাথে আমার কারণে বিনয়ী ছিলো। সে কোন অহংকার বোধ করে নি।

গাছের সাথে কথা বলা

হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেন যে হযরত শেইখ বলেছেনঃ

গাছেরাও জীবিত এবং তারা কথা বলে। আমি তাদের সাথে কথা বলি এবং তারা আমাকে তাদের গুণাগুণ সম্পর্কে বলে।

ইলেকট্রিক ফ্যানের আবিষ্কারকের পুরস্কার

হযরত শেইখের এক শিষ্য বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ

একবার একটি ছোট্ট ইলেকট্রিক ফ্যান উপহার হিসাবে আমার কাছে আনা হলো ; আমি (অতিন্দ্রীয়ভাবে) দেখলাম এর আবিষ্কারকের সামনে একটি ফ্যান রাখা হয়েছে দোযখে (তিনি বুঝিয়েছেন) কবরে।

এটি নিশ্চিত করা যায় একটি হাদিস দিয়ে যাতে বলা হয়েছে যদিও অবিশ্বাসীরা বেহেস্তে যাবে না , কিন্তু যদি তারা কোন ভালো কাজ করে থাকে তাহলে তার পুরস্কার পাবে। নবী (সঃ) বলেছেনঃ

যে ভালো কাজ করে , হোক সে মুসলমান অথবা অবিশ্বাসী , আল্লাহ তাকে পুরস্কার দেবেন। তাকে (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ অবিশ্বাসীকে দেয়ার অর্থ কি ? নবী (সাঃ) উত্তর দিলেন : যদি তারা আত্মীয়তার সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করে অথবা দান করে থাকে অথবা কোন ভালো কাজ করে থাকে আল্লাহ তাদেরকে তাদের ভালো কাজের পুরস্কার হিসাবে দেবেন সম্পদ , সন্তান এবং স্বাস্থ্য।65 তাকে আরো জিজ্ঞেস করা হলো , কীভাবে তাদের পরকালে পুরস্কার দেয়া হবে ? নবী (সঃ) বললেনঃ তারা কম শাস্তি পাবে । এর পর তিনি কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেনঃ

ফেরাউনের লোকদের কঠিনতম আগুনে নিক্ষেপ করো! (সূরা নূর : 46)

দোয়া শর্তযুক্তভাবে কবুল হওয়া

হযরত শেইখের এক বন্ধু বলেছেন : হযরত শেইখের এক শিষ্যের সন্তান হচ্ছিলো না। তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হলো। শেষ পর্যন্ত একদিন সে হযরত শেইখকে এর সমাধান জিজ্ঞেস করলো যেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তিনি প্রশ্ন রাখলেনঃ আমি একটি সন্তান চাই যে আমার মৃত্যুর পর আমার উত্তরাধিকারী হবে।

হযরত শেইখ বললেন :

আমি তোমাকে পরে উত্তর দেবো।

কিছু সময় পার হয়ে গেলো এবং আমাকে জানানো হয় নি কী উত্তর হযরত শেইখ তাকে দিয়েছিলেন। একদিন সে আমাকে এক ভোজের নিমন্ত্রণ জানায়। আমি তাকে ভোজের কারণ জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো তাকে একটি কন্যা সন্তান দেয়া হয়েছে। আমি হযরত শেইখের সাথে সেই বৈঠকের কথা স্মরণ করে তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ হযরত শেইখের দোয়া কি কবুল হয়েছিলো ? সে বললো : কিছু শর্তে অবশ্যই , আমি জিজ্ঞেস করলাম : সেটি কি রকম ? সে বললো : (হযরত শেইখ) তিনি আমাকে অঙ্গীকার করতে বলেছেন যে আমি একটি বাছুর ইমাম যাদেহ হাসান এর গ্রামে যা রেই শহরের কাছে ছিলো- নিয়ে যেতে এবং আমার কন্যার জন্ম দিনে তা (কোরবানী হিসাবে) জবাই করে সেখানকার লোকদের মাঝে বন্টন করে দিতে। আর এখন হচ্ছে সেই মানতের প্রথম বর্ষ।

এটি সাত বছর পর্যন্ত চললো। অষ্টম বছরে পিতা বিদেশে থাকায় তার অঙ্গীকার পূরণ করতে পারেন নি। সে বছরই শিশুটি মারা গেলো।

এ ঘটনার পর সে খুব হতাশ হয়ে গেলো। আমি হযরত শেইখের বাসায় যেতে চাইলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম সেও সেখানে যেতে চায় কিনা। সে একমত হলো এবং আমি একটু আগে চলে গেলাম এবং হযরত শেইখকে বললাম যে অমুক ব্যক্তি তার কন্যা ইন্তেকাল করায় খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হযরত শেইখ বললেন :

আমি কী করবো ? অঙ্গীকার রক্ষা করা কি মুসলমান হওয়ার প্রথম শর্ত নয়। সে তার অঙ্গীকার রক্ষা করে নি।

এরপর আমাদের বন্ধু এলেন এবং হযরত শেইখ একটু কৌতুক করে বললেন :

দুঃখ করোনা! আল্লাহ তোমাকে এর পরিবর্তে বেহেশতে বেশ কয়েকটি প্রাসাদ দিয়েছেন ; সাবধান হও যেন সেগুলো ধ্বংস করে না ফেলো।

যে সম্পদ হারিয়েছে তাকে সাহায্য করা

হযরত শেইখের মৃত্যুর পর এক ব্যক্তি তার ছেলেদের কাছে বলেছেন : আমি আমার বাড়িটি বি ক্রি করেছিলাম এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করলাম কিন্তু তা বন্ধ ছিলো। তাই আমি বাসায় নিয়ে গেলাম এবং রাতে তা চুরি হয়ে গেলো। আমি গোয়েন্দা বিভাগের কাছে গেলাম কিন্তু তারা আমাকে সেখানে সাহায্য করতে পারলো না। ইমাম আল আসর (আঃ) এর কাছে অনুরোধ করলাম। আমার অনুরোধের চল্লিশতম রাতে আমাকে হযরত শেইখের বাড়ির ঠিকানা দেয়া হলো। আমি খুব সকালে হযরত শেইখের বাড়ি গেলাম এবং তাকে আমার সমস্যার কথা বললাম। তিনি বললেনঃ

আমি কোন ভবিষ্যত বক্তা নই ; তোমাকে ভুল জানানো হয়েছে!

আমি বললাম : আমি আমার পূর্ব পুরুষ (কোন একজন ইমাম) এর কসম দিচ্ছি যে আমি আপনাকে ছাড়ছি না। হযরত শেইখ কয়েক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন এবং আমাকে তার বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। এরপর বললেনঃ

ভারামিন শহরে (তেহরানের কাছে) যাও। অমুক গ্রামে অমুক বাড়িতে-যার দুটো কক্ষ আছে । তোমার টাকা একটি লাল সিল্কের রুমালে বাধা অবস্থায় চুলার পাশেই আছে। অর্থগুলো নেবে এবং বাড়ি ছেড়ে চলে আসবে। তারা তোমাকে চা সাধবে কিন্তু তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

আমি সে ঠিকানায় গেলাম- যা আমার বাড়ির চাকরের বাড়ি ছিলো। বাড়ির মালিক ভাবলো আমার সাথে গোয়েন্দা বিভাগের কোন লোক গিয়েছে। আমি কক্ষে ঢুকে পড়লাম এবং টাকা নিলাম সেখান থেকে যার কথা হযরত শেইখ হুবুহু বর্ণনা করেছিলেন। আমি যখন চলে আসছিলাম বাড়ির মালিক আমাকে চা সাধলেন কিন্তু আমি তার ওপর চিৎকার করে বাড়ি ত্যাগ করলাম।

টাকার পরিমান ছিলো মোট একশ তোমান। আমি অর্ধেক টাকা হযরত শেইখের কাছে নিলাম এবং কৃতজ্ঞতার সাথে তার সামনে উপস্থিত করলাম অনেক অনুনয় করলাম তা উপহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য , কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করলেন না। আমার বারংবার অনুরোধে আমাকে অনেক আনন্দ দিয়ে তিনি একমত হলেন বিশ তোমান নিতে , কিন্তু নিজের জন্য নয় , বরং তা আমাকেই ফেরত দিয়ে বললেন :

আমি তোমাকে দরিদ্র একটি পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যার কন্যাদের বিয়ের যৌতুক দরকার। তুমি কারো ওপরে তা ছেড়ে দেবে না , নিজেই করবে। যাও যা তাদের দরকার তা কেনো এবং তাদের বাড়িতে পৌঁছে দাও।

তিনি নিজের জন্য কিছুই নিলেন না!

লাল আপেলের সুবাস

হযরত শেইখের এক বন্ধু নীচের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেনঃ

আমরা হযরত শেইখের সাথে কাশান গেলাম। হযরত শেইখের অভ্যাস ছিলো যেখানেই তিনি ভ্রমণে যাবেন সেখানকার কবরস্থানে তিনি যিয়ারতে যাবেন। আমরা যখন কাশানের কবরস্থানে প্রবেশ করলাম , তিনি বললেনঃ

আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা আবদিল্লাহ (সালাম আপনার উপর হে ইমাম হোসাইন)

আমরা কয়েক পা আরো এগিয়ে গেলাম এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি কোন কিছুর গন্ধ পাচ্ছো না ?

না , কিসের গন্ধ ? আমরা জিজ্ঞেস করলাম।

এরপর তিনি বললেন :

লাল আপেলের সুগন্ধ ?

আমাদের উত্তর ছিলো আবারো না । আমরা আবার এগিয়ে গেলাম এবং কবরস্থানের খাদেমের সাক্ষাত পেলাম। হযরত শেইখ তাকে জিজ্ঞেস করলেন : কাউকে কি আজ এখানে কবর দেয়া হয়েছে ?

লোকটি উত্তরে বললো : আপনাদের আসার আগেই একজনকে দাফন করা হয়েছে। এরপর তিনি আমাদের নতুন করে ঢাকা এক কবরের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানেই আমরা সকলে লাল আপেলের সুবাস পেলাম। আমরা হযরত শেইখকে সুবাসের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন:

যখন এ লোককে এখানে কবর দেয়া হয়েছিলো , হযরত সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হোসেইন (আঃ) এখানে এসেছিলেন এবং এ লোকের উসিলায় এ কবরস্থানে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের সবার শাস্তি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।

হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার পুরস্কার

আরেকজন শিষ্য বলেছেন : আমি সীপাহ স্কয়ার (নতুন নাম) ধরে ট্যাক্সি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এসময় দেখলাম চাদরে ঢাকা লম্বা সুন্দর একজন মহিলা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গাড়ি থামালাম এবং তাকে উঠতে দিলাম। আমার চোখ তার দিক থেকে সরিয়ে রেখে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিলাম।

পরদিন যখন আমি হযরত শেইখের সাথে সাক্ষাত করলাম তিনি এমনভাবে বললেন- যেন তিনি দৃশ্যটি দেখেছেন :

কে ছিলো সেই লম্বা মহিলা যার দিকে তুমি তাকিয়েছিলে এবং দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিলে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলে ? সর্বশক্তিমান ও মহিমান্নিত আল্লাহ তোমার জন্য বেহেশতে একটি প্রাসাদ প্রস্তুত রেখেছেন এবং একজন হুরী যে দেখতে ঐ-----

হারাম সম্পদের ভিতরে আগুন

এ বৈঠকে এক লোক ডাইনী বিদ্যা অনুশীলন করছিলো এবং হযরত শেইখের এক ছেলেও সেখানে উপস্থিত ছিলো। তিনি বলেন :

আমি তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলাম। তাই সে যা-ই চেষ্টা করলো তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। শেষে সে বুঝতে পারলো আমি তার ব্যবসাতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলাম এবং আমাকে অনুরোধ করলো যাতে আমি তার জীবিকার পথ বন্ধ না করে দেই। এরপর সে আমাকে একটি দামী কার্পেট উপহার দিলো। আমি কার্পেটটি বাসায় নিয়ে গেলাম। আমার বাবা তা দেখেই বললেন :

কে তোমাকে এই কার্পেটটি দিয়েছে ? [আমি দেখতে পাচ্ছি] আগুন ও ধোঁয়া এ থেকে উঠে আসছে! এখনই এটি এর মালিকের কাছে ফেরত দিয়ে এসো।

কীভাবে গ্রামোফোন অকেজো হয়ে গেলো

হযরত শেইখের এক সন্তান বলেন : আমার বাবা ও আমি আমাদের এক আত্মিয়ের বিয়েতে গেলাম। যখন মেযবান হযরত শেইখকে আসতে দেখলো তিনি আশেপাশের যুবকদের বললেন গ্রামোফোন বন্ধ করে দিতে। আমরা যখন প্রবেশ করলাম যুবকরা দেখতে এলো কে আসছে যার জন্য তারা গান শুনতে পারবে না। যখন হযরত শেইখকে দেখানো হলো তারা বললো : আরে! এর জন্য আমরা গ্রামোফোন বন্ধ করে দেবো ?! তারা ফিরে এসে তা আবার চালু করে দিলো।

আমি অর্ধেক মাত্র আইস ক্রী ম খেয়েছি এমন সময় আমার বাবা আমার বাহুতে হাত দিয়ে হালকা আঘাত করলেন বিদায় নেয়ার জন্য। কি ঘটেছে তা না জেনে আমি বললাম : আমি আমার আইস ক্রী ম এখনও শেষ করিনি । তিনি বললেন : তা হোক , চলো যাই!

আমি (পরে) জেনেছিলাম আমরা বিদায় নেয়ার সাথে সাথেই গ্রামোফোন অকেজো হয়ে গিয়েছিলো। তাদের আরো একটি আনতে হলো এবং সেটিও পুড়ে গেলো। এ ঘটনা ঐ অনুষ্ঠানের মেযবানকে আমার বাবার ভক্ত বানিয়ে ফেলে।

প্রেমে পড়া যুবকের অনুরোধ

হযরত শেইখের এক বন্ধু বলেন : আমি হযরত শেইখের সাথে মাশহাদে গেলাম। ইমাম রেযা (আঃ)-এর পবিত্র মাযারে গিয়ে আমরা দেখলাম এক যুবক সাহন-ই-ইনক্বিলাব এর ইস্পাতের জানালা ধরে খুব কান্নাকাটি করছে এবং ইমাম (আঃ) এর কসম দিচ্ছে তার মায়ের কাছে। হযরত শেইখ আমাকে বললেনঃ

তার কাছে গিয়ে বলো তার কথা তারা শুনেছে এবং তাকে যেতে বলো।

আমি এগিয়ে গেলাম এবং যুবকটিকে তা বললাম। সে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো। আমি বিষয়টি জানতে চাইলে হযরত শেইখ বলেনঃ

এ যুবকটি এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে এবং তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু (মেয়ের মা-বাবা) একমত হচ্ছে না। সে এখানে এসেছে ইমাম রেযা (আঃ) এর কাছে অনুরোধ করতে তাকে সাহায্য করার জন্য। ইমাম (আঃ) বলেছেন : তা গৃহীত হয়েছে। সে যেতে পারে।

ক্রো ধান্বিত হয়ো না!

হযরত শেইখের এক ছাত্র বলেছেন : একদিন আমি বাজারে এক ব্যক্তির সাথে ধর্মীয় আলোচনা করছিলাম । সে আমার উপস্থিতিতে কোন প্রমাণই গ্রহণ করবে না। আমি একটু রাগ হয়ে গেলাম। এক ঘন্টা পর , আমি হযরত শেইখের সাথে দেখা করতে গেলাম। তিনি আমাকে দেখার সাথে সাথেই বলে উঠলেন :

তুমি কি কারো সাথে ঝগড়া করেছো ?

আমি যা ঘটেছে তা তাকে বললাম। তিনি বললেন :

এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাগ করবে না , পবিত্র আহলুল বায়েত (আঃ) দের পথ অনুসরণ করো। যদি দেখো তারা গ্রহণ করছে না , তাহলে তর্ক বন্ধ করে দাও।

তার দাড়ি তোমার চিন্তার বিষয় নয়

হযরত শেইখের এক শিষ্য বলেছেন যে : এক সন্ধ্যা রাতে আমি দেরীতে বৈঠকে এলাম যখন হযরত শেইখ ইতোমধ্যেই মোনাজাত করছিলেন।

আমি যখন শ্রোতাদের দিকে তাকালাম আমি একজনকে দাড়ি মুণ্ডনকৃত অবস্থায় দেখলাম। আমি হৃদয়ে খুব দুঃখ পেলাম এবং ঐ লোকটির জন্যও দুঃখ হলো। হযরত শেইখ তখন আমার পিছনে কেবলা মুখি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার দোয়া হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে বললেন :

তার দাড়ি তোমার কোন চিন্তার বিষয় নয়। দেখো তার কাজ কি রকম ; তার ভেতরে কিছু ভালো থাকতে পারে যা তোমার মাঝে নেই।

শয়তানের উস্কানীতে সাড়া দেয়া

হযরত শেইখের সন্তান বলেছেন : একবার আমি আমার বাবার সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম , আমি দেখলাম দুই মহিলা সেজে গুজে পর্দা ছাড়া আমার বাবার দু দিকে হাঁটছে। তাদের প্রত্যেকেই একটি লাটিম ঘোরাচ্ছিলো। তারা আমার বাবাকে বললো : এই যে দেখোতো! আমাদের কোনটি বেশী সুন্দর করে ঘুরছে ?

আমি খুব ছোট ছিলাম। দেখলাম আমার বাবা তাদের উপেক্ষা করছেন এবং মাথা নিচু করে মুচ্কি হাসছেন। তারা আমাদের সাথে কয়েক পা এলো এরপর উধাও হয়ে গেলো! আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম তারা কারা ? তিনি বললেন :

তারা দু টোই ছিলো শয়তান।