আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত0%

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক: মুহাম্মাদ রেইশাহরি
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 28925
ডাউনলোড: 5752

পাঠকের মতামত:

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 28925 / ডাউনলোড: 5752
সাইজ সাইজ সাইজ
আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

আধ্যাত্মিক বিস্ময় : শেইখ রজব আলী খাইয়্যাত

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

দ্বিতীয় অধ্যায়

আত্মগঠনের ভিত্তি

নাজাত হলো প্রকৃতপক্ষে মানবিক গুণাবলী ও পূর্ণতার সার সংক্ষেপ এবং তা অর্জনের পথ হলো , কোরআনের দৃষ্টিতে আত্মগঠন ও আত্মা পবিত্রকরণের মাধ্যমে। বেশ কয়েকটি শপথের পর আল্লাহ বলছেন :

) قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا(

প্রকৃত পক্ষে সে সফলতা লাভ করে (নাজাত পায়) যে তা পবিত্র করে। (সূরাশামসঃ09)

যা কিছু ঐশী দূতগণ সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে এনেছেন তা হলো নাজাত ও মানুষের সম্ভাব্যতার বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ। মানব জাতির জন্য আত্মাপরিশুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কীভাবে আত্মগঠন শুরু করা যায় এবং এর ভিত্তির শুরু কোথায় ঐশী দূতদের মত অনুযায়ী। আত্মগঠনের ভিত্তি ও আত্মাপরিশুদ্ধকরণের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে একত্ববাদ । তাই প্রত্যেক ঐশী দূতের প্রথম সংবাদ ছিলো - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ - কোন ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া।

) مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ(

কোন রাসূলকে পাঠাই নি তোমার আগে এ অহী তার কাছে পাঠানো ছাড়া যেঃ কোন ইলাহ নেই আমি ছাড়া , অতএব আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া : 25)

হে জনতা! বলো কোন ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া যেন তোমরা নাজাত পাও। 88

শুধু মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা যথেষ্ট নয়। আত্মগঠনের ভিত্তি যা নাজাত ও মানবিক পূর্ণতা লাভের দিকে নিয়ে যায় তা হলো একত্ববাদের সত্যতা এবং প্রকৃত একত্ববাদের অনুসারী হওয়া।

মানুষ যদি প্রকৃত একত্ববাদে পৌঁছে যায় তার ইঙ্গিত হবে এ যে সে ফেরেশতাদের মত ঐশী সত্তার মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর একত্বকে প্রত্যক্ষ করতে পারেঃ

) شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ(

কোন ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া : সেটি আল্লাহর , তাঁর ফেরেশতাদের এবং যারা জ্ঞানের অধিকারী তাদের সাক্ষ্য ---। (আল ইমরান : 18)

তার আরেক শিষ্য বলেনঃ

হযরত শেইখ এ বিষয়ে ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন তা অন্যকে পৌঁছে দেয়ার জন্য যা তিনি নিজে অর্জন করেছিলেন এবং তার শিষ্যদের অতিন্দ্রীয় একত্ববাদে উন্নীত করার জন্য।

হযরত শেইখ বলেছেন :

একত্ববাদ হচ্ছে আত্মগঠনের ভিত্তি। যদি কেউ চায় একটি বিল্ডিং তৈরী করতে তাকে অবশ্যই একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় বিল্ডিংটির গোড়া মজবুত হবে না। আধ্যাত্মিক পথচারীকে অবশ্যই শুরু করতে হবে একত্ববাদ দিয়ে। যে রকম ছিলো প্রত্যেক নবীর (আঃ) প্রথম কথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ । মানুষ মানবিক পূর্ণতা লাভে ব্যর্থ হবে যদি সে একত্ববাদের সত্যকে বুঝতে অক্ষম হয়। এবং বিশ্বাস না করে যে অস্তিত্বে কিছুই নেই একমাত্র আল্লাহর পবিত্র সত্তা ছাড়া। একত্ববাদের মর্মার্থ বুঝতে পারার পর মানুষ পুরোপুরি সৃষ্টিকর্তার দিকে মনোযোগ দিতে পারে।

তিনি আরো বলেন :

যদি চাও যে আল্লাহ তোমাকে ডাক89 দিক , (চেষ্টা করো) একটু ঐশী জ্ঞান লাভ করতে এবং তাঁর সাথে চুক্তি করো।

যখন আমরা বলি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আমাদের সত্য কথা বলা উচিত। যতক্ষণ না মানুষ মিথ্যা ইলাহদের পরিত্যাগ করে ততক্ষণ সে পারে না একত্ববাদী হতে এবং সত্যবাদী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করতে। যা মানুষের অন্তরকে মোহিত করে রাখে তাই তার ইলাহ।90 আমরা যখন বলি (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তার প্রতি আমাদের বিমোহিত থাকা উচিত।

সমস্ত কোরআন এ কথা বলে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ । মানুষের এমন অবস্থায় পৌঁছানো উচিত যে অন্তরে আর কিছু খোদাই করা থাকে না এ কথাটি ছাড়া এবং তিনি (আল্লাহ) ছাড়া সব কিছু তার অন্তর ত্যাগ করে।

) قُلِ اللَّهُ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ(

বলো : আল্লাহ তা নাযিল করেছেনঃ (এর পর তাদের ত্যাগ করো। ) (সূরা আনয়ামঃ19)

মানুষ একত্ববাদের গাছ। যার ফল হচ্ছে তার মাঝে ঐশী গুণাবলীর আত্মপ্রকাশ ; এ গাছটি পূর্ণতা লাভ করবে না যতক্ষণ না সে এ ধরনের ফল দেয়। মানুষের পূর্ণতার সর্বোচ্চ শিখর হচ্ছে আল্লাহতে (কাছে) পৌঁছা , আর তা হলো আল্লাহর গুণাবলীর প্রকাশ (মাধ্যম) হওয়া। চেষ্টা করো ঐশী গুণাবলী নিজের ভিতর আনতে। তিনি অনুগ্রহশীল। তুমিও অনুগ্রহশীল হও। তিনি ক্ষমাশীল তুমিও ক্ষমাশীল হও। তিনি (দোষ ত্রু টি) গোপনকারী , তুমিও গোপনকারী হও।

মানুষের জন্য যা উপকারী তা হলো ঐশী গুণাবলী। আর কিছু এত প্রভাবশালী নয় মানুষের উপর। এমন কি আল্লাহর ইসমে আযমও নয়!

যদি তুমি একত্ববাদে নিমজ্জিত হও , তুমি উপভোগ করবে মহিমান্বিত আল্লাহর নিয়ামতগুলো সবসময় যা এর আগে কখনো কর নি। আল্লাহর নিয়ামতগুলো ও রহমতসমূহ যে কোন সময়ই অভিনব।

শিরক মুছে দেয়া

সত্তা ও অন্তর থেকে শিরক মুছে ফেলা হলো একত্ববাদের সত্যে পৌঁছা। তাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এক ও প্রকৃত ইলাহ প্রমাণের আগে মিথ্যা ইলাহদের অস্বীকার করা।

এখন জানা দরকার শিরক কী ? কে মুশরিক ? শিরক কী শুধু বিভিন্ন জিনিসের খোদায়ীত্বে বিশ্বাস করা ? একমাত্র মূর্তিপূজকরাই কি নিস্প্রাণ মূর্তিতে বিশ্বাসী ? নাকি বিষয়টি আরো কিছু ?

শিরক বা বহুত্ববাদ এর বিপরীতে একত্ববাদ হচ্ছে অলীক শক্তিসমূহ এবং জীব জগতের উপর তাদের প্রভাব এবং তাদের ইবাদাত-এর বিপরীতে প্রকৃত সর্বসক্ষম একমাত্র প্রতিপালনকারী।

একত্ববাদীরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে পৃথিবীতে ক্রি য়াশীল দেখে না এবং কারো ইবাদতও করে না । না নিস্প্রাণ মূর্তির , না জীবিত মূর্তির , আল্লাহ ছাড়া।

মুশরিক তারা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে প্রভাব সৃষ্টিকারী মনে করে এবং তাঁকে ছাড়া অন্যকে মানে ; কোন কোন সময় তারা ইবাদত করে জিনিসের , কোন কোন সময় শক্তিশালীকে মেনে চলে , কোন কোন সময় তারা তাদের নিজের শরীরী আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছার দাস হয় এবং কোন কোন সময় তিনটিরই দাসত্ব করে।91

ইসলামের দৃষ্টিতে এ তিন ধরণের শিরকের সবক টিই অপরাধমূলক এবং একত্ববাদের বাস্তবতা অর্জনে এ শিরকসমূহকে অবশ্যই মুছে ফেলতে হবে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো , সবচেয়ে বিপজ্জনক শিরক হচ্ছে শেষেরটি , যা হলো শরীরী আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ। এ ধরণের শিরক বুদ্ধিবৃত্তিক ও অনুভূতিমূলক বোধ এর পথে বাধা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ধরণের শিরকের ভিত্তি।

) أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ(

তুমি কি তাহলে তাকে দেখেছো যে নিজের ইচ্ছাকে ইলাহ হিসেবে নিয়েছে। আল্লাহ (তাকে এমন) জেনেই তাকে পথভ্রষ্টতায় ফেলে রেখেছেন এবং মোহর মেরে দিয়েছেন তার শ্রবন শক্তিতে এবং তার অন্তরে এবং তার দৃষ্টি শক্তির উপর পর্দা দিয়ে দিয়েছেন। কে তাহলে তাকে পথ দেখাবে আল্লাহর পর ? তোমরা কি তাহলে সতর্কবাণী গ্রহণ করবে না। (সূরা জাসিয়াঃ 23)

এ কারণে হযরত শেইখ নফসের মূর্তিকে একত্ববাদের জন্য সবচাইতে ক্ষতিকর হিসেবে দেখতেন এবং বলতেন : সমস্ত সমস্যা ঐ বড় মূর্তির কারণে যা তোমার ভিতরেই আছে। 92

বড় সাধক ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ ইমাম খোমেইনীও (রহঃ) বলেছেন : সকল মূর্তির মা হচ্ছে তোমার নিজের নফসের মূর্তি ; যতক্ষণ না এই বড় মূর্তি ও শক্তিশালী শয়তান চূর্ণ বিচূর্ণ হয় তাঁর দিকে কোন পথ পাওয়া যাবে না। মনে রেখো এ মূর্তিকে চূর্ণ বিচূর্ণ করা ও এ শয়তানকে বশে আনা কঠিন কাজ!! 93

যদি মানুষ এ বড় মূর্তির উপর বিজয়ী হয় সে সর্বোচ্চ বিজয় লাভ করেছে।

তোমার নফসের সাথে কুস্তি করো

হযরত শেইখের সময়ের এক বিখ্যাত কুস্তিগীর আসগার আগা পাহলোয়ান বর্ণনা করেছেন : একবার আমাকে হযরত শেইখের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি আমার বাহুতে হালকা থাপ্পর দিয়ে বললেন : যদি তুমি সত্যিই চ্যম্পিয়ন হয়ে থাকো নিজের নফসের সাথে কুস্তি লড়ো!

প্রকৃতপক্ষে নফসের মূর্তি ধ্বংসই শিরক মোছার এবং একত্ববাদের বাস্ত-বতা লাভ করার জন্যপ্রথম ও শেষ পদক্ষেপ ।

নিজের নফসকে পায়ের তলে ফেলো এবং মাশুককে জড়িয়ে ধরো

তাঁর সাথে মিলনের কাবা পর্যন্ত , যা থেকে তুমি এক পা দূরে। যদি তুমি নিজের নফস থেকে মুক্ত হতে পারো তবে তুমি মাশুকের সাথে মিলিত হবে ; নয়তো চির জীবন জ্বলবে , কেননা তোমার অবস্থা অপরিপক্ক।

আর হয়তো আল্লাহকে পাওয়ার এ পথকে নিকটতম বলা হয়েছে এ জন্য যা আবু হামযা সুমালী বলেন ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) বলেছেন :

যে তোমার (আল্লাহর) পথে এগোচ্ছে ,সে দূরত্ব অল্প 94

এবং হাফেয শিরাযী বলেছেন : যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি দেখো পান্ডিত্য ও জ্ঞান , তুমি ঐশী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। আমি তোমাকে একটি কথা বলছি , নিজেকে খেয়াল করো এবং তুমি মুক্ত হয়ে যাবে।

একটি কথা বলার জন্য ভ্রমণ

মনে হয় হযরত শেইখকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো কেরমানশাহতে যাওয়ার জন্য এবং এক বিরাট ব্যক্তিত্ব সরদার কাবুলীকে উপরের কথাটি বলার জন্য।

আয়াতুল্লাহ ফাহরী মরহুম কুদসীর উদ্ধিৃতি দেন যে তিনি বলেছেনঃ এক বছর হযরত শেইখ কেরমানশাহ এলেন। তিনি একদিন আমাকে বললেন তার সাথে সরদার কাবুলীর বাড়িতে যেতে। আমরা গেলাম। আমি হযরত শেইখকে মরহুম সরদার কাবুলীর সাথে পরিচয় করে দিলাম। কিছু সময় নিঃশব্দে পার হয়ে গেলো এর পর সরদার কাবুলী বললেনঃ হযরত শেইখ! কিছু বলেন যেন আমরা উপকৃত হই। হযরত শেইখ বললেনঃ আমি তাকে কী বলবো যে তার নিজের শিক্ষা ও অর্জিত জ্ঞানের উপর বেশী ভরসা করে আল্লাহর অনুগ্রহের চাইতে।

মরহুম কাবুলী চুপচপ বসে ছিলেন , কয়েক মুহূর্ত পর তিনি তার পাগড়ী খুলে নিলেন এবং তা মাটিতে রেখে দিলেন এবং তার মাথা দেয়ালে ঠুকতে লাগলেন এত জোরে যে আমি তার জন্য করুণা বোধ করলাম এবং এগিয়েছিলাম তাকে থামানোর জন্য , কিন্তু হযরত শেইখ আমাকে তা করতে দিলেন না।

তিনি বলেনঃ আমি তার কাছে এসেছিলাম শুধু এ কথাটি তাকে বলে ফিরে যাওয়ার জন্য

আল্লাহর কাছে হাজার বার ক্ষমা চাও

হযরত শেইখের এক সন্তান বলেছেন :

এক ভারতীয় ব্যক্তি যার নাম ছিলো হাজ্ব মোহাম্মদ। তিনি ইরানে আসতেন প্রতি বছর এক মাস থাকার জন্য। একবার তিনি মাশহাদে যেতে ট্রেন থেকে নামলেন নামায পড়ার জন্য। যখন ট্রেন প্রায় ছেড়ে দেয়ার সময় হলো তার বন্ধুরা তাকে ডাকলো উঠবার জন্য নয়তো তাকে পিছনে ফেলে ট্রেন চলে যাবে। হাজ্ব মোহাম্মাদ তার বন্ধুদের ডাকে কোন সাড়া দিলেন না এবং তার মানসিক শক্তি দ্বারা ট্রেন আধা ঘন্টা আটকে রাখলেন। যখন তিনি মাশহাদে ফিরলেন হযরত শেইখের সাথে সাক্ষাত করলেন এবং শেইখ বললেন :

আল্লাহর কাছে এক হাজার বার ক্ষমা চাও!

কেন ? -হাজ্ব মোহাম্মদ বললেন।

শেইখ উত্তর দিলেন :

তুমি একটি অন্যায় কাজ করেছো

হাজ্ব আবার জিজ্ঞেস করলেন :

কী অন্যায় ? আমি ইমাম রেজা (আঃ) এর মাযার যিয়ারত করেছি এবং আপনার জন্যও দোয়া করেছি।

হযরত শেইখ বললেন : তুমি সেখানে ট্রেনকে আটকে রেখেছিলে , এ ইচ্ছা দেখাবার জন্য যে তুমি এমন ব্যক্তি যার জন্য ---- । দেখ শয়তান তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে , তোমার এ কাজের কোন অধিকার ছিলো না।

ব্যক্তিত্ব ভক্তি ও শিরক

একত্ববাদ ও বহুত্ববাদ (শিরক) এর মাঝে সীমারেখাটি খুব চিকন ও সুক্ষ্ম এবং প্রায় দেখাই যায় না। নবী (সঃ) বলেছেন : নিশ্চয়ই , শিরক অন্ধকার রাতে কালো পাথরের উপরে একটি পিপড়ার চলার চাইতে বেশী অ-অনুভবযোগ্য। 95

একমাত্র সমূন্নত এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা লুকোনো শিরকের সীমারেখা দেখতে সক্ষম ও সে বিষয়ে সতর্ক করতে সক্ষম।

ব্যক্তিত্ব ভক্তি এক ধরণের লুকোনো ও সুক্ষ্ম শিরক যাতে অনেক লোকই জড়িয়ে পরে। যদি ব্যক্তিত্বের প্রতি মনোযোগ ও আনুগত্য আল্লাহর জন্য না হয় তাহলে ব্যক্তিত্ব যত বড়ই হোক তা শিরক হিসাবে বিবেচিত হবে। এ কারণে হযরত শেইখ বলতেনঃ

যদি তোমরা আমার কারণে আমার কাছে এসে থাকো তা হলে তোমাদের অনেক ক্ষতি হবে।

তোমার বাবা যেন কোন মূর্তিতে পরিণত না হয়

বিখ্যাত ফকিহ ও মারজা মরহুম আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ হাদী মিলানী (রঃ) এর ছেলে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ আলী মিলানী তার বাবার সাথে হযরত শেইখের সাক্ষাতের ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেন :

মরহুম রজব আলী খাইয়্যাত , যাকে আল্লাহ অন্তর্দৃষ্টি দান করেছিলেন তার আত্মসংযম ও গুনাহ পরিত্যাগ করার কারণে , কিছু কিছু লোককে আন্তরিকতা ও খোদা প্রেম প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তিনি আমার বাবার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। আমি তার সাথে সাক্ষাত করতাম প্রায়ই আমাদের পুরোনো বন্ধুত্বের জন্য এবং কিছু কিছু সময় তার বৈঠক খুব উপভোগও করতাম , যেখানে তিনি সত্য সন্ধানকারীদের ধর্মপোদেশ দিতেন কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে এবং পবিত্র আহলুল বায়েত (আঃ) দের হাদীস থেকে।

এক বছর তিনি মাশহাদে এলেন ইমাম রেজা (আঃ) এর মাযার যিয়ারতে এবং মাযারের কাছেই এক হোটেলে উঠলেন। আমার মরহুম বাবা তাকে দাওয়াত করলেন দুপুরের খাবারের জন্য । হযরত শেইখ আমাদের বাসায় এলেন এবং আমার বাবা তার সাথে সাক্ষাত পেয়ে খুবই খুশী হলেন এবং তারা পরস্পরের সাথে কথা বললেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। সেই সাক্ষাতেই হযরত শেইখ আমার দিকে ফিরে বললেনঃ সতর্ক হও যেন তোমার বাবা মূর্তি না হয়ে দাঁড়ায়।

এবং আমার বাবাকে বললেন :

আপনার সন্তানের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন যেন সে আপনাকে সমস্যায় ফেলে না দেয়।

আমার মনের মধ্যে উঁকি দিলো যে কোন ব্যক্তি পৃথিবী ও আখেরাত দু টোই পেতে পারে কি না। হযরত শেইখ হঠাৎ আমার দিকে ফিরে বললেন : এ দোয়াটি বেশী বেশী পাঠ করো-

) رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ(

হে আমাদের রব! আমাদের লাভ দিন এ দুনিয়াতে ও লাভ দিন আখেরাতে।

আমি তার সাথে হোটেল পর্যন্ত গেলাম , সেখানে হায়দার আগা মুজিযা (কবি) হযরত শেইখের কাছে এলেন এবং তাকে পরদিন দুপুরে খাবারের জন্য দাওয়াত দিলেন। হযরত শেইখ তার দাওয়াত প্রথমে গ্রহণ করলেন না কিন্তু সে বারংবার বলতে থাকায় শেষ পর্যন্ত রাজী হলেন। এরপর হায়দার আগা আমার বাবার কাছে গেলেন এবং তাকেও দাওয়াত দিলেন। শেষে আমার বাবার সাথে আমি সে বাড়িতে গেলাম এবং দেখলাম হযরত শেইখ এবং তার সাথের আরো দু ইজন ভ্রমণকারী সেখানে ইতোমধ্যেই উপস্থিত হয়েছেন। সেদিন আমাদের বৈঠক চললো সন্ধ্যা পর্যন্ত।

কীভাবে একত্ববাদের বাস্তবতায় পৌঁছানো যায়

এখন প্রাথমিক প্রশ্ন হচ্ছে :

কীভাবে একজন নিজেকে শিরক থেকে মুক্ত করবে এবং নফসের মূর্তিকে ধ্বংস করবে , লুকানো ও প্রকাশ্য শিরককে উপড়ে ফেলে একত্ববাদের ভিত্তি অর্জন করবে ?

হযরত শেইখ উত্তর দিয়েছেন এইভাবে :

আমার মতে যদি কেউ মুক্তির রাস্তা খোঁজে এবং চায় প্রকৃত পূর্ণতা এবং উপভোগ করতে চায় একত্ববাদের অর্থ তাদের চারটি জিনিস করা উচিতঃ

প্রথমত , নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি , (যিকর)

দ্বিতীয়ত , আহলুল বায়েত (আঃ) এর উপর নির্ভরতা ,

তৃতীয়ত , রাত্রে অনুনয় করা (দোয়া ও নামায) এবং

চতুর্থত , অন্যের উপকার করা।

হযরত শেইখের ওপরের মতামতের ব্যাখ্যা পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আসছে।