মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার

 মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার0%

 মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার লেখক:
: এ.কে.এম. রশিদুজ্জামান
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

 মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার

লেখক: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
: এ.কে.এম. রশিদুজ্জামান
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 9753
ডাউনলোড: 3166

পাঠকের মতামত:

মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 29 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 9753 / ডাউনলোড: 3166
সাইজ সাইজ সাইজ
 মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার

মহানবী (সা.)-এর বন্দী পরিবার

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

নবী পরিবারের নির্যাতিত ও শোকার্ত সদস্যদের সিরিয়া থেকে কারবালা হয়ে মদীনায় গমন

মালহুফ ’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে , বর্ণনাকারী বলেছে যে , যখন ইমাম হোসেইন ( আ .) - এর পরিবার সিরিয়া ত্যাগ করলেন এবং ইরাকে পৌঁছলেন , তারা তাদের পথপ্রদর্শককে বললেন , আমাদেরকে কারবালার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাও। এরপর যখন তারা শাহাদাতের স্থানটিতে পৌঁছলেন , তারা দেখলেন জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনসারি ( আ .) ও সাথে বনি হাশিমের একটি দল এবং রাসূলুল্লাহ ( সা .)- এর আত্মীয়রা ইমাম হোসেইন ( আ .)- এর কবর যিয়ারাতে এসেছেন। তারা পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করলেন প্রচণ্ড দুঃখ নিয়ে এবং বিলাপ করে এবং নিজেদের চেহারায় আঘাত করতে করতে। এরপর এক হৃদয় বিদারক শোকানুষ্ঠান শুরু হলো এবং আশেপাশের শহরগুলো থেকে নারীরাও তাদের সাথে যোগ দিলেন এবং তারা সবাই সেখানে কয়েক দিনের জন্য শোক পালন করলেন। শেইখ ইবনে নিমাও তার শাহাদাতের বইতে একই রকম বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , বর্ণনাকারী বলেছে যে , এরপর তারা কারবালা থেকে মদীনার দিকে রওয়ানা হলেন। বাশীর বিন জাযলাম বলে যে , যখন আমরা মদীনার কাছে পৌঁছলাম ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) সেখানে নেমে পড়লেন এবং তাঁবু গাড়লেন এবং নারীদেরও বললেন নেমে আসতে। এরপর বললেন , হে বাশীর , আল্লাহ যেন তোমার পিতার ওপর রহম করেন , তিনি ছিলেন একজন কবি। তাহলে তুমিও কি শোকগাঁথা আবৃত্তি করো ? আমি বললাম , জ্বী , হে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তান , আমিও একজন কবি। ইমাম (আ.) বললেন , তাহলে মদীনায় যাও এবং আবু আব্দুল্লাহ (আ.)-এর শাহাদাতের খবর ঘোষণা করো। আমি ঘোড়ায় চড়লাম এবং দ্রুত ঘোড়া ছোটালাম যতক্ষণ না মদীনায় পৌঁছলাম। যখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মসজিদে পৌঁছলাম , আমি কাঁদতে শুরু করলাম এবং উচ্চকণ্ঠে বললাম , হে ইয়াসরিবের জনগণ , এখানে তোমাদের থাকার কোন জায়গা নেই , হোসেইনকে হত্যা করা হয়েছে , তার কারণে আমার অশ্রু বইছে , তার দেহ পড়ে আছে কারবালায় ধুলো ও রক্তে মাখামাখি হয়ে এবং তার মাথা বর্শার আগায় রেখে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় রাস্তায় রাস্তায় প্রদর্শন করা হয়েছে।

এরপর বললাম , এ হলো আলী বিন হোসেইন (আ.) , যিনি তোমাদের শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছেছেন। তার সাথে আছে তার ফুফুরা এবং বোনেরা। তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন যেন আমি তার অবতরণের স্থানটির ঘোষণা দেই , এ কথা শুনে বোরখায় ঢাকা সব নারীরা দৌড়ে বেরিয়ে এলো কাঁদতে কাঁদতে। আর আমি জীবনে কখনো এরকম কান্না দেখি নি , না আমি এমন কিছু জানি যা ছিলো মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে কষ্টকর। আমি একটি বালিকাকে কাঁদতে শুনলাম একথা বলে , তুমি আমার অভিভাবকের শাহাদাতের সংবাদ এনেছো এবং আমাকে শোকাহত করেছো এবং আমার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছো , আর এ সংবাদ আমার হৃদয়কে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে , তাই হে আমার চোখ দুটো , প্রচুর অশ্রু ঝরাও অনবরত তার ওপরে যার দুঃখের কারণে আল্লাহর আসমান ভেঙ্গে পড়েছে , তার শাহাদাত উচ্চ মর্যাদাকে , ধর্ম ও উষ্ণ আবেগকে ফুটো করে দিয়েছে , তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) ও আলীর সন্তানের জন্য কাঁদো , যদিও তার কবর অনেক অনেক দূরে।

এরপর বালিকাটি আমার দিকে ফিরে বললো , হে মৃত্যুর সংবাদবাহক , আবু আবদুল্লাহর জন্য তুমি আমাদের দুঃখকে নতুন করে আরম্ভ করেছো এবং তুমি আমাদের ভেতরের ক্ষতকে ঘষে দিয়েছো যা তখনও শুকায় নি। তোমার রব তোমার ওপর রহমত করুন , তুমি কে ? আমি বললাম , আমি বাশীর বিন জাযলাম এবং আমার অভিভাবক ইমাম আলী বিন হোসেইন (আ.) আমাকে পাঠিয়েছেন , আর তিনি নিজে এবং সাথে আবু আব্দুল্লাহ আল হোসেইন (আ.)-এর পরিবার অমুক জায়গায় তাঁবু ফেলেছেন। তখন লোকজন আমাকে ছেড়ে ঐ জায়গার দিকে দৌড়াতে শুরু করলো। এরপর আমি আমার ঘোড়ায় চড়লাম এবং ফেরত এলাম এবং দেখলাম জনগণ সব বড় রাস্তা ও গলি দখল করে ফেলেছে। আমি আমার ঘোড়া থেকে নামলাম এবং মানুষের ঘাড়ের ওপর দিয়ে পা ফেলে ফেলে তাঁবু পর্যন্ত পৌঁছলাম। ইমাম আলী বিন হোসেইন (আ.) ভেতরে ছিলেন এবং তিনি বাইওে বেরিয়ে এলেন একটি রুমাল দিয়ে অশ্রু মুছতে মুছতে। একজন খাদেম তার পেছন পেছন এলো একটি চেয়ার নিয়ে এবং তা মাটিকে রাখলো এবং ইমাম (আ.) এতে বসলেন। তার অশ্রু অনবরত ঝরছিলো এবং পুরুষদের কান্নার কণ্ঠ উঁচু হলো এবং নারীরা বিলাপ করতে লাগলো। এরপর জনগণ চতুর্দিক থেকে তাকে সমবেদনা জানাতে লাগলো এবং ঐ জায়গায় এক ভয়ানক শোরগোল শুরু হলো।

মদীনার উপকণ্ঠে ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর খোতবা

ইমাম (আ.) উপস্থিত জনতাকে ইশারা করলেন চুপ করার জন্য এবং কান্নার আওয়াজ বন্ধ হলো। তিনি (আ.) বললেন , আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন , বিচার দিনের বাদশাহ , সব সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা। সেই রবের শপথ যিনি অনুভবের আয়ত্তে আসার বাইরে এবং তিনি এত কাছে যে তিনি [তার বান্দাহদের] গোপন কথাগুলো শোনেন। আমি তার প্রশংসা করি এ মারাত্মক ঘটনা এবং যুগের বিপর্যয়গুলোর বিষয়ে এবং দুঃখের কঠিন মাত্রা এবং গভীর দুঃখজনক ঘটনাগুলোর তিক্ত স্বাদের সময়ে এবং বিরাট দুঃখ ও মহাশোকে , হৃদয় বিদারক এবং বিপর্যস্তকারী দুঃখ-কষ্টের ভেতরে।

হে জনতা , নিশ্চয়ই আল্লাহ , যিনি প্রশংসার যোগ্য , আমাদেরকে পরীক্ষা করেছেন বিরাট দুঃখসমূহের মাধ্যমে যখন ইসলামের ভেতরে এক গভীর ফাটল প্রকাশিত হয়েছে। আবু আব্দুল্লাহ আল হোসেইন (আ.) এবং তার পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে , আর তার নারী-স্বজনদের এবং অপরিণত বয়সের সন্তানদের বন্দী অবস্থায় তাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। তার মাথাকে বর্শার আগায় রেখে শহরগুলোর রাস্তাগুলিতে প্রদর্শন করা হয়েছে , আর এ মহাবিপর্যয়ের কোন তুলনা নেই।

হে জনতা , তোমাদের মধ্যে কারা তার মৃত্যুর পর আনন্দিত হবে এবং তোমাদের মধ্যে কাদের হৃদয় তার জন্য ছারখার হবে না ? তোমাদের মধ্যে কার চোখ এর জন্য অশ্রু ফেলবে না এবং তোমাদের মধ্যে কে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে নিজের চেহারায় চাপড় না দিয়ে ? সাতটি উচ্চ আকাশ তার শাহাদাতে কেঁদেছে এবং নদীগুলো তাদের ঢেউসহ , আকাশগুলো তাদের স্তম্ভগুলোসহ , পৃথিবী তার চারধারসহ , এবং গাছগুলো তাদের শাখাগুলোসহ , সমুদ্র ও এর গভীরের মাছেরা , [আল্লাহর] নিকটবর্তী ফেরেশতারা এবং আকাশের বাসিন্দারাও তার জন্য কান্নায় তাদের কণ্ঠ মিলিয়েছে।

হে জনতা , কোন হৃদয় কি আছে যা তার শাহাদাতের কারণে ছিঁড়ে যাবে না ? এবং কোন বিবেক কি আছে যা এর কারণে পুড়ে যাবে না ? এবং কোন কান কি আছে যা বধির হয়ে যাবে না যখন তারা দেখে ইসলামের ভেতর এ ফাটল দেখা দিয়েছে ?

হে জনতা , আমাদেরকে তাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে এবং রাস্তায় প্রদর্শন করা হয়েছে শহরগুলোর দূরবর্তী ও নিকটবর্তী জায়গাগুলোতে যেন আমরা ছিলাম তুর্কী অথবা কাবুলি লোকদের সন্তান , কোন অপরাধ করা ছাড়াই অথবা কোন খারাপ কাজ করা ছাড়াই , আর না আমরা তারা যারা ইসলামে ফাটল সৃষ্টি করেছি। কখনোই আমরা তা আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনি নি , এটি নুতন জিনিস ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর শপথ , যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিষয়ে সদুপদেশ না দিয়ে তাদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিতেন তাহলেও তারা আমাদের এর চেয়ে বেশী ক্ষতি করতো না , যা তারা ইতোমধ্যেই করেছে।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন , কী কঠিন বেদনাদায়ক , মারাত্মক , দুঃখপূর্ণ , হৃদয়বিদারক এবং তিক্ত দুর্যোগ ছিলো যা আমরা দেখেছি এবং সহ্য করেছি। আমরা আল্লাহর কাছে এর বিচারের ভার দিলাম , তিনি মহা ক্ষমতাবান , প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

শাহাদাতের কিছু কিছু বইতে বর্ণিত হয়েছে যে , যখন সাইয়েদা উম্মে কুলসুম (আ.) মদীনায় পৌঁছলেন , তিনি কাঁদলেন এবং বললেন , হে আমাদের নানার শহর [মদীনা] , আমাদেরকে গ্রহণ করো না , আমরা ফিরেছি দুঃখ ও হতাশা সাথে নিয়ে ; সাবধান , যাও এবং রাসূলের কাছে বলো যে আমাদেরকে কঠিন কষ্ট দেওয়া হয়েছে আমাদের পিতার [প্রতি শত্রুতার] কারণে ; আমরা যখন তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলাম , আমাদের সাথে সবাই ছিলো , কিন্তু এখন আমরা ফিরছি আমাদের পুরুষদের ও পুত্র-সন্তানদের ছাড়া ; আমরা যখন এখান থেকে গিয়েছিলাম তখন আমরা সবাই একত্রে ছিলাম ; এখন আমরা ফিরছি ক্ষতি নিয়ে ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র লুট হয়ে যাওয়া অবস্থায় ; আমরা আল্লাহর নিরাপত্তায় ছিলাম এবং এখন আমরা ফিরছি আমাদের স্বজনদের বিচ্ছেদ নিয়ে এবং ভয় নিয়ে ; আমাদের মাওলা হোসেইন ছিলেন আমাদের নিরাপত্তা দানকারী ও সাহায্যকারী , আর আমরা ফিরেছি তাকে ধুলো মাখা অবস্থায় ফেলে রেখে ; আমাদেরকে লুট করা হয়েছে এবং ধ্বংস করা হয়েছে এবং কোন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দানকারী ও সাহায্যকারী ছিলো না , আমরা আমাদের ভাইয়ের জন্য কাঁদছি ; হে নানা , শত্রুরা হোসেইনকে হত্যা করেছে এবং তারা আল্লাহর কাছে আমাদেরকে বিবেচনা করে নি। হে প্রিয় নানা , আমাদের শত্রুরা তাদের আশাগুলো পূরণ করেছে এবং তারা আমাদের মর্যাদা লঙ্ঘন করে স্বস্তি পেয়েছে , তারা আহলে বাইত (আ.)-দের বোরখাবিহীন করেছিল এবং বল প্রয়োগে তাদেরকে গদীবিহীন উটের ওপর বসিয়েছিল।

বর্ণনাকারী বলে যে , সাইয়েদা যায়নাব (আ.) মসজিদের এক জোড়া দরজা আঁকড়ে ধরলেন এবং উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন , হে নানা , আমি আপনার কাছে আমার ভাই হোসেইনের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছি। এ কথা বলাতে তার অশ্রু অবিরত ঝরতে লাগলো এবং তিনি বিলাপ ও কান্না থামাতে পারলেন না এবং যতবার তার দৃষ্টি পড়তো ইমাম আলী বিন হোসেইন (আ.)-এর ওপর তার শোক নতুন করে শুরু হতো এবং হৃদয়ের বেদনা বৃদ্ধি পেতো।

আলী বিন হোসেইন (আ.)-এর আহাজারি

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেছেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) চল্লিশ বছর কেঁদেছিলেন তার পিতার জন্য। তিনি সব সময় দিনে রোযা রাখতেন এবং পুরো রাত জেগে থাকতেন। আর যখন ইফতার করার সময় হতো তার খাদেম তার সামনে খাবার রাখতো ইফতারের জন্য এবং বলতো , হে আমার মালিক , আপনি ইফতার করুন। ইমাম (আ.) বলতেন , রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়। এরপর তিনি তা বার বার বলতেই থাকতেন এবং অনেক কাঁদতেন তার অশ্রুতে খাবার ভিজে যাওয়া পর্যন্ত এবং পানিও , এবং তা চলতেই থাকলো তার জীবনের শেষ পর্যন্ত। তার একজন দাস বলেছে যে , একদিন আমার মালিক ঘরের বাইরে গেলেন , আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। আমি দেখলাম তিনি তার কপাল একটি অমসৃণ পাথরের ওপর রাখলেন এবং আমি তার কান্না ও আহাজারি শুনতে পেলাম এবং তার তেলাওয়াতের কণ্ঠও শুনতে পেলাম এক হাজার বার , আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে , আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই পূর্ণ আত্মনিয়োগ ও বিনয়ের মাধ্যমে , আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই বিশ্বাসে ও সত্যে।

এরপর তিনি সিজদা থেকে তার মাথা তুললেন এবং তার দাড়ি ও চেহারা তার চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছিল। এ দেখে আমি বললাম , হে আমার মালিক , আপনার দুঃখ শেষ হয় নি এবং আপনার আহাজারি থামে নি ? তিনি উত্তর দিলেন , তোমার জন্য আক্ষেপ , ইয়াক্বুব (আ.) একজন নবী ছিলেন এবং তার বারো জন সন্তান ছিলো। আল্লাহ তার এক সন্তানকে [ইউসূফ-আ.] তার চোখের আড়ালে রেখেছিলেন এবং তার মাথার চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল অত্যধিক দুঃখে এবং তার পিঠ বাঁকা হয়ে গিয়েছিল দুঃশ্চিন্তায় এবং তার চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত কান্নাকাটিতে ; আর এ সবকিছু হয়েছে যদিও তার সন্তান জীবিত ছিলো এ পৃথিবীতে। আর আমি আমার পিতা , ভাই এবং পরিবারের আঠারো জন সদস্যকে মাটিতে পড়ে যেতে এবং শহীদ হতে দেখেছি ― তাই কিভাবে আমার দুঃখ এবং অশ্রু থামতে পারে ?

ইমাম হোসেইন (আ.)-এর জন্য শোক প্রকাশ

শেইখ আবু জাফর তূসি তার ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খালিদ বিন সাঈদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে , সে বলেছে যে , আমি ইমাম জাফর আস- সাদিক্ব (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম , কোন ব্যক্তি কি তার পিতা , ভাই অথবা আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুর কারণে নিজের জামার কলার ছিঁড়তে পারে ? ইমাম (আ.) বললেন , এতে কোন সমস্যা নেই। নবী মূসা (আ.) নিজের জামার কলার ছিঁড়েছিলেন তার ভাই হারুন (আ.)-এর মৃত্যুতে। একজন পিতা তার সন্তানের মৃত্যুতে এবং একজন স্বামী তার স্ত্রীর মৃত্যুতে জামার কলার নাও ছিঁড়তে পারেন , কিন্তু একজন স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুতে পারেন। এরপর আরও বললেন , ফাতেমা (আ.)-এর পরিবার হোসেইন (আ.)-এর জন্য জামার কলার ছিঁড়েছিলেন এবং চেহারায় হাত দিয়ে চাপড় মেরেছিলেন এবং তিনি এতই মূল্যবান ছিলেন যে তার মৃত্যুতে কলার ছেঁড়া এবং চেহারায় হাত দিয়ে চাপড় মারা উচিত ছিলো।

বারক্বী বর্ণনা করেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.)-কে হত্যা করা হলো , বনি হাশিমের নারীরা কালো কাপড় ও শোকের পোশাক পরেছিলেন এবং উত্তাপ বা ঠাণ্ডার বিষয়ে কোন অভিযোগ করেন নি এবং ইমাম আলী বিন হোসেইন (আ.) তাদের শোকের অনুষ্ঠানের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন।

আবু রায়হান [আল বিরুনী] তার আসারুল বাক্বিয়াহ ’ গ্রন্থে বলেছেন যে , দশ মুহাররাম আরবদের কাছে পবিত্র বিবেচিত ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত না ঐ দিনে ইমাম হোসেইন (আ.)-কে হত্যা করা হলো। এরপর তারা তার ও তার সাথীদের সাথে এমন ব্যবহার করলো যে , কোন জাতিই তাদের নিকৃষ্ট লোকদের সাথে এ আচরণ করে নি যা তারা তাদের সাথে করলো ক্ষুধা ও পিপাসায় , তরবারি , [তাঁবুতে] আগুন , বর্শার আগায় মাথাগুলো তোলা এবং তাদের দেহগুলোর ওপর ঘোড়া ছোটানোর বিষয়ে ; তাই তারা [শিয়ারা] এ দিনটিকে অকল্যাণের দিন বিবেচনা করতো , কিন্তু বনি উমাইয়া সেদিন আনন্দ উৎসব করতো এবং নুতন পোশাক পরতো এবং ভোজসভা ও আনন্দ উৎসবের আয়োজন করতো। তারা মিষ্টি প্রস্তুত করতো এবং সুগন্ধি বিতরণ করতো। যতদিন বনি উমাইয়ার রাজত্ব ছিলো এ সংস্কৃতি আম্মাহর [ ইয়াজিদি মুসলমানদের] মধ্যে চলতে থাকলো। তাদের রাজত্বের সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও আম্মাহ ’ -এর মধ্যে এ সংস্কৃতি চলতে থাকলো। আর শিয়ারা , ইমাম হোসেইন (আ.)-এর শাহাদাতের শোকে শোকগাঁথা আবৃত্তি করে এবং আহাজারি করে। আর এ সংস্কৃতি শান্তির শহর ’ বাগদাদে এবং অন্যান্য শহরেও বজায় আছে এবং এ দিনে তারা কারবালার প্রশান্তিপূর্ণ কবরগুলোতে যিয়ারাতে যায়। অন্যদিকে আম্মাহ [ ইয়াজিদি মুসলমান] এ দিনে নুতন ঘটি বাটি এবং আসবাপত্র কেনা কল্যাণকর মনে করে।

শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মি যুহরি থেকে বর্ণনা করেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.)-কে হত্যা করা হয়েছিল , তখন বাইতুল মুকাদ্দাসে এমন কোন নুড়িপাথর ছিলো না যার নিচে তাজা রক্ত পাওয়া যায় নি।

হুরেইম আ ওয়ার বর্ণনা করেছে যে , ইমাম আলী (আ.) বলেছেন , আমার পিতা-মাতা হোসেইন (আ.)-এর জন্য কোরবান হোক , যাকে হত্যা করা হবে কুফার পেছনে। আল্লাহর শপথ , আমি যেন দেখতে পাচ্ছি পশুদের বিভিন্ন জাতি তার কবরে গলা লম্বা করে দিচ্ছে এবং কাঁদছে ও তার জন্য আহাজারি করছে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। তাই যখন তা ঘটবে তখন প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত অত্যাচার ও অকৃতজ্ঞতা থেকে দূরে থাকা।

যুরারাহ বর্ণনা করেছে ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে যে তিনি বলেছেন , হে যুরারাহ , নিশ্চয়ই আকাশগুলো চল্লিশ সকাল রক্ত অশ্রু ফেলেছে ইমাম হোসেইন (আ.)-এর জন্য। পৃথিবী চল্লিশ সকাল অন্ধকারে পরিণত হয়েছিল এবং সূর্যগ্রহণ হয়েছিল ও চল্লিশ সকাল পর্যন্ত লাল হয়ে গিয়েছিল , আর পর্বতগুলো ভেঙ্গে পড়েছিল এবং গুড়ো হয়ে গিয়েছিল এবং সমুদ্র বিস্ফোরিত হয়েছিল। ফেরেশতারা চল্লিশ সকাল ধরে কেঁদেছিল ইমাম হোসেইন (আ.)-এর জন্য এবং যতদিন মাথাটি আমাদের কাছে পৌঁছায় নি , আমাদের নারী-স্বজনরা তাদের চুলে কলপ বা তেল দেয় নি , না তারা কাজল ব্যবহার করেছে অথবা চুলে চিরুনী চালিয়েছে। তার পরে আমরা সব সময় শোকাবিভূত ছিলাম। আর আমার পিতামহ [ইমাম যায়নুল আবেদীন-আ.] কাঁদতেন যখনই তিনি তার কথা মনে করতেন , যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অশ্রুতে তার দাড়ি ভিজে যেতো। যে-ই তাকে দেখতো দুঃখবোধ করতো এবং কাঁদতো। তার কবরের মাথার কাছে ফেরেশতারাও কাঁদে এবং তারাও যারা সে পরিবেশে উপস্থিত থাকে এবং আকাশগুলোও তাদের কান্নার কারণে কাঁদে।

বলা হয়েছে যে , কোন অশ্রু অথবা চোখ নেই যা আল্লাহর কাছে এত প্রিয় এ চোখগুলোর চাইতে যেগুলো তার জন্য অশ্রু ফেলে। এরপর যে ব্যক্তি তার জন্য কাঁদে , ফাতেমা (আ.) এ বিষয়ে সংবাদ লাভ করেন , আর এটি তার প্রশান্তি লাভের কারণ হয়। আর এ খবর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছেও পৌঁছায় এবং তা যেন এমন যে সে আমাদের অধিকার পূর্ণ করেছে। কোন মানুষ নেই যে কিয়ামতের দিন কাঁদতে কাঁদতে উঠবে না , শুধু তারা ছাড়া যারা আমার প্রপিতামহের জন্য কাঁদে , আর তারা জাগ্রত হবে আলোকিত আত্মা ও আলোকিত চোখ এবং আনন্দিত চেহারা নিয়ে। লোকজন ভীতির ভেতওে থাকবে , আর এরা থাকবে শান্তিতে। অন্যরা হিসাব দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে , কিন্তু তারা থাকবে হোসেইন (আ.)-এর সাথে , তার সঙ্গীদের সাথে , আরশের নিচে এর ছায়াতে। আর তারা হিসাব দেয়ার অনিষ্টের ভয়ে থাকবে না। তাদেরকে বলা হবে , বেহেশতের দিকে যাও। তারা কোন কথায় কান দিবে না এবং তাদের হৃদয় ইমাম হোসেইন (আ.)-এর সাহচর্য থেকে এবং তার সাথে কথা বলা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। হুরীরা তাদের কাছে আমন্ত্রণ পাঠাবে যে , তারা এবং তাদের সাথে অপরিবর্তনীয় বয়সের ’ গোলামরা তাদেরকে একনজর দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে , কিন্তু তারা মাথা তুলেও তাকাবে না এবং তারা ইমাম হোসেইন (আ.)-এর সাহচর্যের আনন্দ ও রহমতে ডুবে থাকবে। এসময় তার কিছু শত্রুকে তাদের এলামেলো চুল ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে , এবং কিছু চিৎকার করে বলবে যে তাদের কোন সুপারিশকারী ও কোন বন্ধু নেই তাদের প্রয়োজনে। তাদের বন্ধুরা বেহেশতে তাদের [উচ্চ] মর্যাদা দেখতে পাবে , কিন্তু তারা তাদের কাছে যেতে পারবে না এবং তাদেরকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারবে না। বেহেশতের ফেরেশতারা তাদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে তাদের সঙ্গীদের [হুর] কাছ থেকে এবং তাদের ধনসম্পদের রক্ষকদের কাছ থেকে যে তাদের জন্য কী আনন্দজনক বিষয়সমূহ অপেক্ষা করছে। তারা উত্তর দিবে যে , ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের কাছে আসবো। ফেরেশতারা হুরীদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দিবে , যাদের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে জেনে যা তারা ইমাম হোসেইন (আ.)-এর নৈকট্য পাওয়ার কারণে লাভ করেছে। তখন তারা বলবে , আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহ আমাদেরকে বিরাট বিপর্যয় থেকে এবং কিয়ামতের ভয়ানক মরুভূমি থেকে রক্ষা করেছেন এবং রক্ষা করেছেন আমাদেরকে তা থেকে যার ভয় আমরা করতাম। এরপর তাদের বাহন আনা হবে এবং তারা এগুলোর ওপর বসবে এবং আল্লাহর , যিনি প্রশংসাযোগ্য , প্রশংসা করতে থাকবে এবং দরুদ পড়বে মুহাম্মাদ ও তার বংশধরের ওপরে এবং তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

বিশ্বাসীদের আমির আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি রাহবাহতে ছিলেন এবং এ আয়াতটি আবৃত্তি করলেন: তাই তাদের জন্য আকাশগুলো ও পৃথিবী কাঁদলো না , না তাদের সময় দেওয়া হলো। ’ সাথে সাথে ইমাম হোসেইন (আ.) তার কাছে এলেন মসজিদের একটি দরজা দিয়ে। তাকে দেখে ইমাম আলী (আ.) বললেন , এ সেই ব্যক্তি , যাকে হত্যা করা হবে এবং আকাশগুলো ও পৃথিবী তার জন্য কাঁদবে।

ইমাম জাফর আস-সাদিক্ব (আ.) বলেন যে , আকাশগুলো ও পৃথিবী ইমাম হোসেইন (আ.)-এর জন্য কেঁদেছিল ও লালবর্ণ ধারণ করেছিল। তারা কারো জন্যে কাঁদে নি একমাত্র নবী ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া (আ.) এবং হোসেইন (আ.) ছাড়া। অন্য এক স্থানে তার কাছ থেকেই উদ্ধৃত করা হয়েছে যে , ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া (আ.)-এর হত্যাকারী ছিলো এক জারজ সন্তান , এবং ইমাম হোসেইন (আ.)-এর হত্যাকারীও। আকাশগুলো ও পৃথিবী কারো জন্যে কাঁদে নি এ দুজনের জন্য ছাড়া। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলো , আকাশগুলোর কান্না বলতে কী বোঝায় ? ইমাম বললেন , সূর্য উদয় হলো লাল রঙ নিয়ে এবং অস্ত গেলো একইভাবে।

উসমান বিন আবি শাইবাহ বর্ণনা করেছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর আকাশ এমন হয়ে গেলো যে সাত দিন ধরে দেয়ালগুলো গাঢ় লাল রঙের লিনেন কাপড়ের মতো দেখালো এবং মনে হচ্ছিলো নক্ষত্রগুলো পরস্পরের সাধে ধাক্কা খাচ্ছে।

ইবনে জাওযী বর্ণনা করেছেন ইবনে সিরীন থেকে যে , বিশ্বজগত অন্ধকার হয়ে গেলো তিন দিনের জন্য এবং আকাশে লাল রঙ দেখা গেলো।

আবু সাঈদ বলেছে যে , পৃথিবীতে এমন কোন পাথর ওল্টানো হয় নি যার নিচে তাজা রক্ত দেখা যায় নি। আকাশগুলো থেকে রক্তবৃষ্টি ঝরেছে এবং এর দাগ দীর্ঘ দিন পোশাকে ছিলো।

এটিও বর্ণিত হয়েছে যে , খোরাসান , সিরিয়া ও কুফার দেয়ালগুলো ও বাড়িগুলোর ওপরে রক্ত বৃষ্টি হয়েছিল। আর যখন ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মাথা ইবনে যিয়াদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তার দেয়াল থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।

সিবতে ইবনে জাওযির তাযকিরাহ ’ গ্রন্থে হিলাল বিন যাকওয়ান থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.)-কে হত্যা করা হলো , আমরা দেয়ালগুলোকে দেখলাম যেন রক্তে মেখে দেওয়া হয়েছে প্রায় দু অথবা তিন মাস ধরে ― ফজরের নামাযের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আমরা এক সফরে বের হয়েছিলাম এবং হঠাৎ করে বৃষ্টি হলো , যার দাগ রক্তের মতো আমাদের পোশাকে লেগে রইলো।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: নিশ্চয়ই প্রত্যেক মু ’ মিনের হৃদয়ে হোসেইনের শাহাদাতের ব্যাপারে এমন ভালোবাসা আছে যে , তার উত্তাপ কখনো প্রশমিত হয় না। [মুস্তাদরাক আল-ওয়াসাইল , খণ্ড-10 , পৃষ্ঠা-318]

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন: সমস্ত চোখ কিয়ামতের দিন কাঁদতে থাকবে , নিশ্চয়ই কেবল সেই চোখ ছাড়া যা হোসেইনের বিয়োগান্ত ঘটনায় কাঁদবে ; ঐ চোখ সেদিন হাসতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ ও বিপুল নেয়ামত প্রদান করা হবে। [বিহারুল আনওয়ার , খণ্ড-44 , পৃষ্ঠা-193]

গ্রন্থপঞ্জি:

1. শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস [নাফাসুল মাহমুম] , মুহাদ্দিস শেইখ আব্বাস কুম্মী , ঢাকা , 2010।

2. মীযান আল-হিকমাহ , আল্লামা মুহাম্মদ মুহাম্মাদি রেইশাহরি , দার আল-হাদীস ইনস্টিটিউট , কোম , ইরান , 2009।

3. জামে আত-তিরমিযী , আবু ঈসা আত-তিরমিযী , ঢাকা , 1998।

4. The Story of Karbala, Ali Nazari Munfarid, Ahl al-Bayt Islamic Cultural Services (AICS), Qum, Iran, 1997

5 . The Event ofTaff : The Earliest Historical Account of the Tragedy of Karbala, Abu Makhnaf Lut Bin Yahya Al-Azdi Al-Ghamidi, Ahl al-Bayt (a.)World Assembly (ABWA), Qum, Iran, 2012.