কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 46672
ডাউনলোড: 4354

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 46672 / ডাউনলোড: 4354
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ কী ?

কোরআন মজীদের অলৌকিকতার বিভিন্ন দিক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার বিশ্বজনীন চিরন্তন পথনির্দেশযোগ্যতা , সীমাহীন জ্ঞানগর্ভতা , ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি। কিন্তু এর অলৌকিকতার সর্বপ্রধান দিক হচ্ছে এ মহাগ্রন্থের সাহিত্যসৌন্দর্য তথা ভাষার প্রাঞ্জলতা , ওজস্বিতা , সৌন্দর্য ও মাধুর্য , সংক্ষিপ্ততা এবং ব্যাপকতম ও সূক্ষ্মতম ভাব প্রকাশে সক্ষমতা। এ বিষয়টিকে আরবী ভাষায় ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাত্ বলা হয়। কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সংক্রান্ত আলোচনায় প্রায় অভিন্নার্থক এ পরিভাষা দু টি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

কোরআনের মু জিযাহ্ বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতে

নিরক্ষর হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) কর্তৃক বিশ্ববাসীর সামনে পেশকৃত কোরআন মজীদের তত্ত্বজ্ঞান তথা জীবন ও জগতের অন্তরালে নিহিত মহাসত্যের যুক্তিবিজ্ঞানভিত্তিক ও দর্শনসম্মত উপস্থাপনা , বিশ্বজনীন চিরন্তন পথনির্দেশনা , কালোত্তীর্ণ আইন-বিধান , সীমাহীন জ্ঞানগর্ভতা , বস্তুজাগতিক ও মহাজাগতিক রহস্যাবলী উন্মোচন , বস্তুবিজ্ঞানের এমন বহু সত্যের ওপর থেকে পর্দা উন্মোচন যা তৎকালের শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানীদেরও অজানা ছিলো এবং এর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন এ মহাগ্রন্থের এমন সব অলৌকিক দিক কালের প্রবাহে ধীরে ধীরে যার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে , হচ্ছে এবং ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত হতে থাকবে। এ পর্যন্ত কোরআন মজীদের এ সব দিক যতোখানি প্রকাশ পেয়েছে তা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী-গুণী , দার্শনিক , মনীষী ও বিজ্ঞানীদেরকে বিস্ময়ে হতবাক করেছে এবং করে চলেছে। কোরআন মজীদের এ সব বৈশিষ্ট্য অকাট্যভাবে এ মহাগ্রন্থের অলৌকিকতা ও ঐশিতা প্রমাণ করে।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় এই যে , সকল যুগেই কোরআনের মু জিযাহ্ সম্পর্কে আলোচনাকারী মনীষীগণ এ মহাগ্রন্থের এ সব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে এ মহাগ্রন্থের মু জিযাহর অপ্রধান বা আনুষঙ্গিক দিক হিসেবে গণ্য করেছেন , প্রধান দিক হিসেবে নয়। ভেবে দেখার বিষয় , এর কারণ কী ?

এর কারণ এই যে , অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণেই কোরআন মজীদ নাযিলের যুগে কোরআনের এ দিকগুলো তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম পণ্ডিতগণের নিকটও খুব অল্প পরিমাণে প্রকাশ পাওয়া সম্ভব ছিলো ; বরং এ সব দিক ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবার জন্য ধৈর্য সহকারে সুদীর্ঘ কাল অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিলো। অন্য কথায় , কোরআন মজীদের এ সব বিষয় আজকের দিনে এর মু জিযাহ্ তথা এর ঐশী কিতাব্ হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণ করলেও তৎকালে তা সম্ভব ছিলো না। এ কারণে কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ প্রমাণের জন্য তার এমন একটি বৈশিষ্ট্যকে তার প্রধান দিক বা একমাত্র দিক হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিলো যা সর্বকালে ও সর্বস্থানে সমানভাবে দেদীপ্যমান থাকবে। আর সে দিকটি হওয়া সম্ভব ছিলো এ মহাগ্রন্থের একমাত্র ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাতের দিক।

কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে , ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাতকে কোরআন মজীদের মু জিযাহর মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করা হলে অন্ততঃ সে যুগে তা কেবল আরবদের পক্ষেই পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব ছিলো ; অনারবদের পক্ষে নয়। কিন্তু কেউ এ ধারণা করলে অবশ্যই ভুল করবে। কারণ , সকল যুগেই প্রতিটি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যেই অন্য ভাষায় বিশেষজ্ঞ কিছু সংখ্যক ব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব ছিলো। বিশেষ করে বিশ্বের জীবন্ত ও ক্লাসিক ভাষা সমূহের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলোর সাথে সব ভাষার মনীষী ও কবি-সাহিত্যিকগণ কমবেশী পরিচিত থাকতেন এবং এ সবের তুলনামূলক পর্যালোচনাও সব যুগেই প্রচলিত ছিলো।

একই কারণে কোরআন মজীদ যখন তার রচনাশৈলীর মানদণ্ডে নিজেকে ঐশী কিতাব্ তথা মু জিযাহ্ বলে দাবী করে তখন খুব সহজেই সে তথ্য অন্য ভাষাভাষীদের মধ্যে , বিশেষ করে আরবী ভাষার সমগোত্রীয় সেমিটিক ভাষাভাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সমমানসম্পন্ন কিতাব্ বা তার কোনো অধ্যায়ের (সূরাহর) সমমানসম্পন্ন রচনা আনয়নের চ্যালেঞ্জ ছিলো একটি অনন্য ও অভূতপূর্ব বিষয়। এ অভূতপূর্বতা ও অনন্যতাও সর্বত্র এ চ্যালেঞ্জের খবর ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিলো। এছাড়া আরবের মোশরেক , ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের মাধ্যমে তাদের অনারব স্বধর্মীয়দের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাব , নবুওয়াত দাবী ও চ্যালেঞ্জের খবর সহজেই পৌঁছে যায় ; ইতিহাস থেকেও এটা প্রমাণিত হয়। এমতাবস্থায় আরবী-জানা অনারব মনীষী ও কবি-সাহিত্যিকগণ তাঁদের পক্ষে সম্ভব মনে করলে অবশ্যই এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসতেন। তবে তাঁরা নিঃসন্দেহে তাঁদের নিজেদের ভাষার তুলনায় আরবী ভাষার প্রকাশ-ক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে অবগত ছিলেন এবং এ অবস্থায় আরবী ভাষার ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাতের শ্রেষ্ঠতম নায়কগণ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা ধরে নেন যে , তাঁদের পক্ষে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা আদৌ সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে , কোরআন মজীদ নাযিলের যুগে জাহেলীয়াতের তিমিরে নিমজ্জিত অজ্ঞমূর্খ অশিক্ষিত আরবদের নিকট এ মহাগ্রন্থের বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি ও দার্শনিকতা তেমনভাবে প্রকাশ পাওয়া সম্ভব ছিলো না ; তাদের কাছে এ সব দিকের আদৌ গুরুত্ব ছিলো না। আর এ গ্রন্থের নৈতিক-চারিত্রিক শিক্ষা তো ছিলো তাদের সবচেয়ে অপসন্দের বিষয়। অন্যদিকে তাদের কাছে একটিমাত্র বিষয়ের গুরুত্ব ছিলো , তা হচ্ছে , তারা বিশ্বের সকল ভাষার ওপরে তাদের ভাষার প্রকাশক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গৌরব করতো এবং এ ভাষার প্রকাশক্ষমতাকে যারা (কবি ও সুবক্তা) যতো বেশী মাত্রায় ব্যবহার করতে সক্ষম হতেন তাঁদেরকে ততো বেশী গুরুত্ব দিতো এবং বলা যেতে পারে যে , তাঁদেরকে তারা আরবদের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে মাথায় তুলে রাখতো। তার প্রমাণ এই যে , আরবী ভাষার শ্রেষ্ঠতম সাতটি কবিতাকে তারা স্বর্ণের কালিতে লিখে কা বাহ্ ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিলো।

কোরআন মজীদ এ ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাতের মানদণ্ডে তার বা তার অংশবিশেষের (কোনো সূরাহর) বিকল্প উপস্থপনের জন্য চ্যালেঞ্জ প্রদান করলে আরবের শ্রেষ্ঠ কবি ও বাগ্মীরা এ চ্যালেঞ্জে গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন এবং অক্ষম হয়ে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ঈমান এনেছিলেন এবং যারা ঈমান আনতে প্রস্তুত হয় নি তারা কোরআন মজীদকে জাদু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো।

কোরআন মজীদের ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাত্ সম্বন্ধে তৎকালীন মক্কাহর মোশরেকদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যপ্রতিভা ওয়ালীদ ইবনে মুগ্বীরাহর উক্তি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।

কোরআন মজীদ সম্পর্কে আবূ জেহেলের এক প্রশ্নের জবাবে ওয়ালীদ বলেছিলো : আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে আরবী ভাষার কবিতা ও ক্বাছীদাহর সাথে আমার মতো এতোখানি পরিচিত। আরবী ভাষার ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাত্ এবং কবিতা ও গৌরবগাথার সূক্ষ্ম রহস্য সম্পর্কে জ্ঞানের ক্ষেত্রে কেউ আমার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারে নি। আমি যে কোনো ধরনের কবিতা , এমনকি জ্বিনদের কবিতা সম্পর্কেও অন্যদের তুলনায় বেশী ওয়াকেফহাল। কিন্তু আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদ যে সব কথা বলে তা এ সবের কোনো একটির সাথেও মিলে না। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের বক্তব্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাতের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ যে কোনো বক্তব্যকেই হার মানিয়ে দেয় এবং সমস্ত বক্তব্যের ওপরে তা শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী - যার ওপরে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী বক্তব্য কল্পনাও করা যায় না। (تفسير طبری- ٢٩/٩٨ .)

অন্যদিকে তৎকালীন আরবদের মধ্যকার আরেক জন সেরা বাগ্মী ওয়ালীদ বিন্ উক্ববাহ্ (কোনো কোনো সূত্রের বর্ণনা অনুযায়ী ওয়ালীদ ইবনে মুগ্বীরাহ্) কোরআন মজীদ সম্পর্কে বলেছিলো :

) و ان له لحلاوة و ان عليه لطلاوة و ان اعلاه لمثمر و ان اسفله لمغدق و انه ليعلوا و لا يعلی عليه و ما يقول هذا البشر(

নিঃসন্দেহে এর (কোরআনের) রয়েছে সুমিষ্টতা , নিঃসন্দেহে এর রয়েছে অসাধারণ সৌন্দর্য , অবশ্যই এর রয়েছে সমুন্নত তাৎপর্য , অবশ্যই এর গভীরতা সীমাহীন , নিঃসন্দেহে এ অত্যন্ত উঁচু মানের (কথা) এবং এর চেয়ে উন্নততর ও উচ্চতর মানের (কথা) সম্ভব নয়। আর (প্রকৃত সত্য হলো) এ কথা কোনো মানুষ বলে নি। (تفسير طبری- ١٩/٧٢ .) [এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য , হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর মনীষী আবদুল ক্বাহের জুরজানী তাঁর লিখিতالرسالة الشافية فی الاعجاز গ্রন্থে এই দ্বিতীয়োক্ত ওয়ালীদকে ওয়ালীদ বিন্ উক্ববাহ্ বলে উল্লেখ করেছেন।]

যেহেতু এহেন কোরআন মজীদের সাথে মোকাবিলা করা কোনো কবি ও বাগ্মীর পক্ষেই সম্ভব ছিলো না সেহেতু ওয়ালীদ বিন্ মুগ্বীরাহ্ কোরআন থেকে লোকদেরকে ফেরাবার জন্য একে জাদু বলে অভিহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। (تفسير طبری- ١٩/٧٢ .)

এক নযরে আরবী বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্

এ প্রসঙ্গে বিশেষ করে ভাষা-সাহিত্যের অলঙ্কারশাস্ত্রের সাথে যারা পরিচিত নন তাঁদের কাছে এর গুরুত্বকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার লক্ষ্যে আরবী ভাষার বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ এবং কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের মান সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছুটা ধারণা দেয়া এবং সেই সাথে ওয়ালীদ বিন্ মুগ্বীরাহ্ কর্তৃক কোরআন মজীদকে জাদু হিসেবে অভিহিত করার কারণ কী সে সম্পর্কেও কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করছি।

আরবী অভিধানেبَلَغَفَصَحَ উভয় কথারই মানে হলো : সে প্রাঞ্জলভাষী হলো। আর এ ক্রিয়াদ্বয়ের উৎস অর্থাৎ ক্রিয়াবিশেষ্য (مصدر ) হলো যথাক্রমেبَلاغَة (বালাগ্বাহ্) ওفَصاحَة (ফাছ্বাহাহ্) ; উভয়েরই অর্থ প্রাঞ্জলতা প্রাঞ্জলভাষী হওয়া । আর প্রাঞ্জলভাষী (লেখক ও বক্তা)কে বলা হয়بَليغ (বালীগ্ব) বাفَصيح (ফাছ্বীহ্)। প্রচলিত অর্থে এতদসংক্রান্ত বিদ্যাকেعِلمُ البَلاغَة ( ইলমুল্ বালাগ্বাহ্) বলা হয়। (বাংলা ভাষায় একে ইলমে বালাগ্বাত্ বা শুধু বালাগ্বাত্ বলা হয়।)

আমরা এখানে পরিভাষা দু টির সহজ অনুবাদ করতে গিয়ে প্রাঞ্জল , প্রাঞ্জলতা ইত্যাদি লিখেছি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এতে ভাষার গতিশীলতা , বলিষ্ঠতা , ওজস্বিতা , সুমিষ্টতা , সহজবোধ্যতা , ভাবের গভীরতা , তাৎপর্যের সূক্ষ্মতা , শ্রুতিমাধুর্য , ঝঙ্কার , উপমা-উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার ইত্যাদি অনেক বৈশিষ্ট্য শামিল রয়েছে। নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর মনীষী আবূল্ হাসান্ বিন্ ঈসা আর-রুম্মানী (ওফাত 386 হিজরী) বালাগ্বাতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন , বালাগ্বাতে দশটি বিষয় শামিল রয়েছে , তা হচ্ছে :

(1) ايجاز، (٢) تشبية، (٣) استعارة، (٤) تلاؤم، (٥) فَواصِل، (٦) تَجانُس، (٧) تَصريف، (٨) تَضمين، (٩) مُبالَغَة و (١٠) حُسن بَيان

এখানে আমরা রুম্মানীর আলোচনা অবলম্বনে এ দশটি বিষয় সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। [নীচের যে সব নামে যবর্-এর পরে আলিফ্ আছে সে সব নামের কোনো কোনোটিতে শুধু উচ্চারণ নির্দেশের ক্ষেত্রে এবং কোনো কোনোটিতে পরবর্তী উল্লেখের ক্ষেত্রেও ডবল আ-কার ব্যবহার করা হলো।]

(1)ايجاز (ঈজাায্)। ঈজায্ মানে তাৎপর্য ও সৌন্দর্য হ্রাসকরণ ব্যতিরেকেই বক্তব্য সংক্ষেপণ। রুম্মানী বলেন , যে বক্তা দীর্ঘ ও বিস্তারিত বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীয় উদ্দেশ্য শ্রোতাকে বুঝাতে সক্ষম তিনি বালীগ্ব্ নন , বরং বালীগ্ব্ হচ্ছেন তিনি যিনি একই বিষয় অপেক্ষাকৃত কম কথায় ও কম শব্দে বুঝাতে সক্ষম।

ايجاز দুই ধরনের :حَذف (হায্ফ্ - বিলোপ) ওقَصر (ক্বাছ্বর্ - সংক্ষেপণ)। দ্বিতীয়োক্ত ধরনের ঈজায্ অধিকতর দুরূহ। কারণ ,حَذف -এর ক্ষেত্রে বক্তব্যের পূর্বাপর থেকে বোঝা যায় যে , কোন্ শব্দটি বিলোপ করে বক্তব্য সংক্ষেপণ করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে (قَصر ) শব্দ ব্যবহারে লেখক বা বক্তার দক্ষতাই হচ্ছে সংক্ষেপণের ভিত্তি।

কোরআন মজীদের ঈজায্ প্রসঙ্গে রুম্মানী অনেক উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন :

) و لکم فی القصاص حياة يا اولی الالباب(

হে জ্ঞানবান লোকেরা! ক্বিছ্বাছ্বে ¡ (হত্যার বদলে হত্যাকারীকে হত্যায়) তোমাদের জন্য জীবন নিহিত রয়েছে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 179)

এ আয়াতেরالقصاص حياة কথাটি জাহেলী যুগে প্রচলিত বিখ্যাত আরবী প্রবাদالقتل انفی للقتل (হত্যা হত্যা প্রতিরোধ করে)-এর বিকল্প। কিন্তু প্রবাদ বাক্যটিতে যেখানে 14টি বর্ণ রয়েছে (এবং একটি বর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে ; সেটি হিসাবে ধরলে 15টি) , সেখানেالقصاص حياة -এ মাত্র দশটি বর্ণ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে , আরবী ভাষায় প্রবাদ বাক্য সমূহ বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের উন্নততম নিদর্শন হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ কোরআন মজীদের উপরোক্ত কথাটিতে শব্দের পুনরাবৃত্তি নেই , কিন্তু প্রবাদ বাক্যেالقتل শব্দটির পুনরাবৃত্তি হয়েছে। বলা বাহুল্য যে , পুনরাবৃত্তি কথার সৌন্দর্য ও ঝঙ্কারের জন্য অপরিহার্য না হলে তা ত্রুটিরূপে পরিগণিত হয়।

তৃতীয়তঃ উপরোদ্ধৃত আয়াতাংশে বিপরীতার্থক শব্দের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। কারণ ,قصاص (হত্যার বদলে হত্যাকারীকে হত্যা) শব্দটিحياة (জীবন) শব্দের বিপরীত , তা সত্ত্বেও এ আয়াতে বিস্ময়করভাবেقصاص -কেحياة -এর পৃষ্ঠপোষকে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু প্রবাদ বাক্যটিতে এ ধরনের শিল্পকুশলতা নেই।

চতুর্থতঃ আয়াতটিতে ইতিবাচক লক্ষ্য (জীবনের হেফাযত) তুলে ধরা হয়েছে , কিন্তু প্রবাদ বাক্যটিতে নেতিবাচক লক্ষ্য (হত্যার প্রতিরোধ) তুলে ধরা হয়েছে ; এখানে হত্যার প্রতিরোধের লক্ষ্য কী (জীবনের হেফাযত) তা উল্লেখ করা হয় নি - যা আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে ।

পঞ্চমতঃ প্রবাদ বাক্যে এ কথা পরিস্ফূট নয় যে , হত্যা প্রতিরোধের জন্য হত্যাকারীকেই হত্যা করতে হবে। এ কারণে আরবদের মধ্যে হত্যাকারীর গোত্রের যে কোনো লোককে হত্যা করার যে রীতি প্রচলিত ছিলো তার পথে উক্ত প্রবাদ বাক্য প্রতিবন্ধক হতে পারে নি। কিন্তুقصاص -এ হত্যাকারীকে হত্যার তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।

[প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য , ইসলামী বিধানে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদেরকে হত্যাকারীকে ক্ষমা করার বা তার কাছ থেকে নিহত ব্যক্তির রক্তমূল্য গ্রহণ করে তাকে রেহাই দেয়ার অধিকারও দেয়া হয়েছে। অবশ্য বিষয়টির সাথে যদি রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক স্বার্থ জড়িত থাকে এবং ইসলামী সরকার ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে অপরিহার্য গণ্য করে সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীরা ঘাতককে ক্ষমা করার অধিকার পাবে না , তবে তারা যদি রক্তমূল্য চায় তাহলে সরকার তাদেরকে রক্তমূল্য প্রদান করবে।]

(2)تشبية (তাশ্বীয়্যাহ্) । তাশ্বীয়্যাহ্ মানে উপমা বা তুলনা। এ ক্ষেত্রে যাকে ও যার সাথে তুলনা করা হয় - উভয়কেই উল্লেখ করা হয়। কোরআন মজীদে অনেক তাশ্বীয়্যাহ্ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে :

) و الذين کفروا اعمالهم کسراب بقيعة يحسبه الظمآن ماء(

আর যারা কাফের হয়েছে তাদের কর্মসমূহ মরুভূমির মরীচিকাতুল্য পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি বলে মনে করে। (সূরাহ্ আন্-নূর : 39)

এ আয়াতে কাফেরদের কাজকে মরীচিকার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

(3)استعارة (ইস্তি আারাহ্)। ইস্তি আারাহ্ মানেও উপমা। কিন্তু ইস্তি আারাহ্ ও তাশবীয়্যাহর মধ্যে পার্থক্য এখানে যে , তাশবীয়্যায় যাকে ও যার সাথে তুলনা করা হয় - উভয়কেই উল্লেখ করা হয় , কিন্তু ইস্তি আারায় যাকে তুলনা করা হয় তাকে উল্লেখ করা হয় না ; কেবল যার সাথে তুলনা করা হয় তাকেই উল্লেখ করা হয়। তবে এমনভাবে উল্লেখ করা হয় যে , শ্রোতা বা পাঠক-পাঠিকা সহজেই বুঝতে পারে যে , কা কে তুলনা করা হয়েছে। কোরআন মজীদে এ ধরনের উপমাও অনেক রয়েছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে :

) انک لا تسمع الموتی ولا تسمع الصم الدعاء اذا ولوا مدبرين. و ما انت بهادی العمی عن ضلالتهم(

(হে রাসূল!) নিঃসন্দেহে আপনি না মৃতকে আপনার আহবান শুনাতে পারবেন , না বধিরকে শুনাতে পারবেন যখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যায়। আর আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথে আনয়নকারী নন। (সূরাহ্ আন্-নামল : 80 - 81)

বলা বাহুল্য যে , উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে কাফেরদেরকে মৃত ব্যক্তি , বধির ও অন্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে , যদিও এতে কাফের শব্দের উল্লেখ নেই।

(4)تلاؤم (তালাাউম্)। তালাউম্-কে বাংলা ভাষায় ভাষার বলিষ্ঠতা , ওজস্বিতা ও বীর্যবত্তা বলা যেতে পারে। এর তিনটি স্তর আছে ; প্রথম স্তরকেتنافر (তানাাফুর্) বাتفاخر (তাফাাখুর্) বলা হয়। এ দু টি পরিভাষার অর্থ যথাক্রমে পরস্পরকে নিন্দা করা পরস্পরের মোকাবিলায় আত্মগৌরব করা । জাহেলীয়াত্ যুগের কবি ও বক্তাগণ প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করতেন যার মাধ্যমে তাঁরা প্রকারান্তরে অন্যদেরকে বা প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করতেন। এ কারণেই এ পর্যায়ের বলিষ্ঠ ভাষাকুশলতার এরূপ নামকরণ করা হয়।

তালাউম্-এর দ্বিতীয় স্তর হচ্ছেتلاؤم واسطی (তালাউমে ওয়াাসেত্বী) অর্থাৎ মধ্যম স্তরের তালাউম্। আর সর্বোচ্চ স্তরের তালাউম্ হচ্ছেتلاؤم عليا (তালাউমে উল্ইয়া) বা সমুন্নততম তালাউম্।

তালাউম্ -এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসকে ঠিকঠাক করা । আর বালাগ্বাতেتلاؤم মানেتعديل الحروف فی التأليف (রচনায় বর্ণসমূহের ভারসাম্য সৃষ্টি করা)।

তালাউমে উল্ইয়ার বৈশিষ্ট্য তানাফুর্ তাফাখুর্ -এর বিপরীত। কারণ , এর বলিষ্ঠতা অপর পক্ষের প্রতি অন্ধ বিরোধিতার দোষ থেকে মুক্ত। আর কোরআন মজীদের কালাম্ হচ্ছে তালাউমে উল্ইয়া পর্যায়ের - যা শ্রোতার বা পাঠক-পাঠিকার অন্তরে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে। এ ধরনের তালাউম্ কেবল কোরআন মজীদেই রয়েছে: মানুষের কথায় এ ধরনের তালাউম্ আদৌ সম্ভব নয়।

(5)فَواصِل (ফাওয়াাছ্বিল্)।فَواصِل শব্দটি হচ্ছেفاصلة (ফাাছ্বিলাহ্) শব্দের বহু বচন - যার আভিধানিক অর্থ ব্যবধান । কিন্তু বালাগ্বাতে ফাছ্বিলাহ্ কে মিল , তাল , লয় ও ঝঙ্কার বলা হয়। এর জন্য জাহেলীয়াতের যুগেسجع (সাজ্ ) পরিভাষা ব্যবহৃত হতো।سجع তিন প্রকারের :متوازن (মুতাওয়াাযিন্) ,متوازی (মুতাওয়াাযী) ওمطرف (মুত্বাররাফ্)।

মুতাওয়াযিন্ সাজ্ -এর ক্ষেত্রে দুই পঙ্ক্তির বা দুই বাক্যের শেষের শব্দ সমমাত্রা ও সমস্বর হয়ে থাকে অর্থাৎ হরফের সংখ্যা ও স্বরধ্বনিসমূহ (وزن - ওয়ায্ন্) অভিন্ন হয়ে থাকে (শেষ হরফ অভিন্ন হওয়া যরূরী নয়)। যেমন :مواج (মাওয়াাজ্) ওنقاد (নাক্ব্ক্বাাদ্)।

মুতাওয়াযী সাজ্ -এর ক্ষেত্রে দুই পঙ্ক্তির বা দুই বাক্যের শেষ শব্দের শেষ হরফ সমধ্বনি বিশিষ্ট হয়ে থাকে , যেমন :رزم (রায্ম্) ওبزم (বায্ম্)।

আর সাজ্ এ মুত্বাররাফ্-এর ক্ষেত্রে দুই পঙ্ক্তির বা দুই বাক্যের শেষ শব্দের শেষ হরফ পরস্পর সঙ্গতিশীল অর্থ বিশিষ্ট হয়ে থাকে। যেমন :مال (মাাল্ - ধনসম্পদ) ওآمال (আামাাল্ - আশা-আকাঙ্ক্ষা)।

কোরআন মজীদেরسجع -কেفَواصِل বলা হয় এ কারণে যে , সাজ্ -এ অর্থ হচ্ছে শব্দের অধীন। অর্থাৎ শব্দগত মিল , তাল ও ঝঙ্কার ঠিক রাখতে গিয়ে অনেক সময় অর্থকে উৎসর্গ করতে হয়। অর্থাৎ যা যতোখানি বুঝাতে চাওয়া হয় তার চেয়ে কম প্রকাশ করেই ক্ষান্ত থাকা হয়। কিন্তু ফাওয়াছ্বিল্ এ ধরনের ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত এবং কোরআন মজীদ যেহেতু জ্ঞান ও উপদেশে পরিপূর্ণ গ্রন্থ সেহেতু তা এ ধরনের ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

(6)تَجانُس (তাজাানুস্)। তাজানুস্ মানে অভিন্ন উৎস থেকে নিষ্পন্ন শব্দাবলী পাশাপাশি ব্যবহার করে কথার শক্তি , সৌন্দর্য ও ঝঙ্কার বৃদ্ধিকরণ। যেমন , কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :فمن اعتدی عليکم فاعتدوا عليه مثل ما اعتدی عليکم (যে তোমাদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে তোমরাও তার বিরুদ্ধে চড়াও হও ঠিক যেভাবে সে তোমাদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে)। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 194।) তেমনি এরশাদ হয়েছে :ان المنافقين يخادعون الله و هو خادعهم (নিঃসন্দেহে মুনাফিক্বরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে ; আর এ কারণে তিনি তাদেরকে ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন)। (সূরাহ্ আন্-নিসাা : 142।)

(7)تَصريف (তাছ্বরীফ্)। আভিধানিক অর্থে তাছ্বরীফ্ মানে কোনো কিছু গড়িয়ে নেয়া বা গড়িয়ে দেয়া। কিন্তু আরবী ব্যাকরণে তাছ্বরীফ্ মানে শব্দ প্রকরণ বা শব্দের রূপান্তর এ এতদ্বিষয়ক বিদ্যা। কোরআন মজীদে অত্যন্ত চমৎকারভাবে শব্দাবলীর রূপান্তর ঘটিয়ে তা যথাস্থানে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

(8)تَضمين (তায্মীন্)। তায্মীন্-এর আভিধানিক অর্থ নিশ্চয়তা বিধান বা গ্যারান্টি প্রদান । কিন্তু বালাগ্বাতে তায্মীন্ মানে নিজের বক্তব্যের মধ্যে অন্যের বক্তব্য উদ্ধৃত করা এবং এমনভাবে উদ্ধৃত করা যে , তা যেন স্বীয় বক্তব্যের বাচনভঙ্গির সাথে খাপ খায় অথচ বোঝা যায় যে , অন্যের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে তার নাম-পরিচয় উল্লেখ না করা সত্ত্বেও যদি শ্রোতার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় যে , কা র বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে তাহলে তার নাম-পরিচয় উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই , অন্যথায় উল্লেখ করা অপরিহার্য। বলা বাহুল্য যে , কোরআন মজীদে এ ধরনের বহু উদ্ধৃতি রয়েছে।

(9)مُبالَغَة (মুবাালাগ্বাহ্)। মুবালাগ্বাহ্ মানে কোনো কিছুর চরম রূপ বা পুনরাবৃত্তিবাচক বা সীমাহীনতা বাচক রূপ। এ জন্য আরবী ভাষায় বিশেষ শব্দ-প্যাটার্ন (وزن - ওয়ায্ন্) রয়েছে যার ভিত্তিতে তৈরী বহু শব্দ কোরআন মজীদে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন :رحمان (রাহমাান্- পরম দয়াবান) ,غفار (গ্বাফ্ফাার্ - পুনঃ পুনঃ ক্ষমাকারী) ,تواب (তাওয়াাব্ - বান্দাহদের প্রতি পুনঃ পুনঃ সুদৃষ্টিকারী) ,علام ( আল্লাাম্ - মহাজ্ঞানী) ,غفور (গ্বাফূর্- সদাক্ষমাশীল) ,شکور (শাকূর্ - অনবরত বান্দাহর ভালো কাজের শুভ প্রতিদান প্রদানকারী) ,ودود (ওয়াদূদ্ - বান্দাহর জন্য মহাপ্রেমময়) ,قدير (ক্বাদীর্ - চিরক্ষমতাশালী) ,رحيم (রাহীম্ - বিশেষ দয়াবান) ,عليم ( আলীম্ - সদাজ্ঞানী) ইত্যাদি। এছাড়া মুবালাগ্বাহ্ বাচক শব্দ ব্যবহার ছাড়াও কেবল বাক্যের সাহায্যেও কোরআন মজীদে মুবালাগ্বাহ্ প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন :لا اله الا هو خالق کل شیء (তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই ; তিনি সকল জিনিসের স্রষ্টা)। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : 102।)

(10)حُسن بَيان (হুসনে বায়াান্)। সূক্ষ্ম ও গভীরে নিহিত বিষয়কে প্রকাশ করাই হচ্ছে হুসনে বায়ান্ বা কথার সৌন্দর্য। রুম্মানীর মতে , এর চারটি ভাগ রয়েছে :کلام (কালাাম্ - কথা/ বক্তব্য) ,حال (হাাল্ - অবস্থা/ পরিস্থিতি/ পরিবেশ/ প্রেক্ষাপট) ,اشارة (ইশাারাহ্ - ইঙ্গিত) ওعلامة ( আলাামাহ্ - নিদর্শন)। বাকসৌন্দর্যের এ সবগুলো দিকই কোরআন মজীদে সর্বোত্তমরূপে প্রতিফলিত হয়েছে।

সব কিছু মিলিয়ে বালাগ্বাতের তিনটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে কোরআন মজীদের একান্ত নিজস্ব স্তর ; কোনো মানুষের কথাই এ স্তরে উপনীত হতে সক্ষম নয়।