মু‘
জিযাহর যথোপযুক্ততা
ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , এমন কাজকে মু‘
জিযাহ্ বলা হয় যার মাধ্যমে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিধান লঙ্ঘন করা হয় এবং অন্যান্য মানুষ অনুরূপ কাজ সম্পাদনে অক্ষম থাকে। কিন্তু মু‘
জিযাহকে মু‘
জিযাহরূপে চিনতে পারা সকলের জন্য সহজ হয় না। বরং কেবল সেই লোকদের পক্ষেই মু‘
জিযাহ্ ও একই বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি কর্মকুশলতার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভবপর যারা নিজেরা অনুরূপ বিষয়ের বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও শিল্পকলায় সুদক্ষ ও বিশেষজ্ঞ। কারণ , যে কোনো বিজ্ঞান , প্রযুক্তি বা শিল্পের বিশেষজ্ঞগণ সংশ্লিষ্ট বিদ্যার বৈশিষ্ট্যাবলী ও সূক্ষ্ম তত্ত্ব সম্পর্কে অন্য লোকদের তুলনায় অধিকতর অবগত থাকেন। ফলে তাঁদের পক্ষেই নির্ণয় করা সম্ভব যে , সংশ্লিষ্ট কাজটি অন্যদের পক্ষে অর্থাৎ মানবিক যোগ্যতা-প্রতিভার দ্বারা সম্ভব অথবা সম্ভব নয়।
এ কারণেই দেখা যায় , জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিত-বিজ্ঞানী লোকেরা অন্যদের তুলনায় অগ্রবর্তী হয়ে মু‘
জিযাহর সত্যতা স্বীকার করেন। অন্যদিকে অজ্ঞমূর্খ লোকেরা এবং সংশ্লিষ্ট মু‘
জিযাহ্ যে বিষয়ের সে বিষয়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষতাবিহীন লোকেরা এ সম্পর্কে যে কোনো ধরনের সন্দেহ পোষণ করতে পারে। এ ধরনের লোকেরা সন্দেহ করে যে , নবুওয়াতের দাবীদার ব্যক্তি হয়তো এক ধরনের বৈজ্ঞানিক , কারিগরি বা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে এ কাজ সম্পাদন করেছেন যার রহস্য তারা না জানলেও সংশ্লিষ্ট শিল্পের বিশেষজ্ঞদের পক্ষে তা উদ্ঘাটন করা সম্ভবপর। তাই তারা মু‘
জিযাহকে স্বীকার করা থেকে বিরত থাকে বা এর ওপরে দেরীতে আস্থা স্থাপন করে অথবা সন্দেহের দোদুল দোলায় দুলতে থাকে।
এ কারণে , আল্লাহ্ তা‘
আলার মহাজ্ঞানময়তার দাবী হচ্ছে , নবী যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগমন করবেন সে জনগোষ্ঠীর মধ্যে তৎকালে প্রচলিত শিল্প বা বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যশীল মু‘
জিযাহ্ই তাঁকে দেয়া হবে। শুধু তা-ই নয় , সংশ্লিষ্ট স্থান ও কালে যে বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত লোকের সংখ্যা বেশী বা যে বিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রভাব বেশী তাঁকে অন্ততঃ প্রধান মু‘
জিযাহটি সে বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত বিষয় থেকেই দেয়া হবে , যাতে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞরা মু‘
জিযাহটি প্রত্যক্ষ করে এবং তার সত্যতা অনুধাবন করে বুঝতে পারে যে , কোনো মানুষের পক্ষে এ কাজ সম্পাদন করা অসম্ভব ; অতঃপর তারা এ মু‘
জিযাহর সামনে মাথা নত করে। আর এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ লোকের সংখ্যা বেশী হওয়ায় মু‘
জিযাহ্ হুজ্জাত্ হিসেবে দৃঢ়তর ও সুস্পষ্টতর হয়। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা কম হলে মু‘
জিযাহর সামনে তাদের নতি স্বীকার সত্ত্বেও লোকেরা সন্দেহ করতে পারে যে , হয়তো নবুওয়াতের দাবীদার ও উক্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কোনো গোপন যোগসাজস থেকে থাকবে। কিন্তু তাদের সংখ্যা বেশী হলে ও সকলেই মু‘
জিযাহর মোকাবিলায় অক্ষম প্রমাণিত হলে এ ধরনের সন্দেহের অবকাশ থাকে না। ফলে তা সাধারণ জনগণের জন্য হুজ্জাতে পরিণত হয়। এরপর তা প্রত্যাখ্যানের সপক্ষে তাদের ছাফাই গাওয়ার জন্য আর কিছু থাকে না।
এ সাধারণ নিয়ম ও স্বীয় মহাজ্ঞানময়তার কারণেই আল্লাহ্ তা‘
আলা হযরত মূসা (‘
আঃ)কে লাঠি ও আলোকোজ্জ্বল হাত মু‘
জিযাহ্ হিসেবে দিয়েছিলেন। কারণ , ঐ সময়কার মিসরে জাদুবিদ্যার ব্যাপক প্রচলন ছিলো। ফলে এ বিদ্যার বিশেষজ্ঞগণ অন্য সমস্ত মানুষের আগে হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহকে মু‘
জিযাহ্ রূপে স্বীকার করে ও তাঁর ওপর ঈমান আনে। কারণ , তারা যখন দেখতে পেলো যে , হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর লাঠি অজগরে পরিণত হলো এবং তারা যে সব জাদু তৈরী করেছিলো তার সবগুলোকেই খেয়ে ফেললো , অতঃপর পুনরায় লাঠিতে পরিণত হলো , তখন তারা বুঝতে পারলো যে , এ কাজ জাদু ক্ষমতার আওতাবহির্ভূত , বরং কোনো অদৃশ্য ও ঐশী মহাশক্তিবলে এ কাজ সম্পাদিত হয়েছে। এ কারণেই তারা এ ঘটনার মু‘
জিযাহ্ হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয়ে উপনীত হতে সক্ষম হয় এবং ফির্‘
আউনের প্রলোভন ও ভীতির সামনে আত্মবিক্রয়ের পরিবর্তে তারা হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর ওপর ঈমান আনে ও তাঁর নবুওয়াতের সত্যতা ঘোষণা করে।
অন্যদিকে হযরত‘
ঈসা (‘
আঃ)-এর যুগে গ্রীক চিকিৎসাবিজ্ঞান গৌরবের শীর্ষে আরোহণ করেছিলো এবং তৎকালীন চিকিৎসকগণ বিস্ময়কর ধরনের চিকিৎসাকর্ম সম্পাদন করতেন। বিশেষ করে তৎকালীন গ্রীসের উপনিবেশ সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিলো এবং উন্নতির শীর্ষে উপনীত হয়েছিলো। সেহেতু পরম জ্ঞানময় আল্লাহ্ তা‘
আলার জ্ঞানময়তার দাবী ছিলো এই যে , তাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে এবং সেখানকার জ্ঞানী-পণ্ডিতদের কাজের সাথে মিল রয়েছে এমন ধরনের মু‘
জিযাহ্ প্রদান করতে হবে।
এ কারণেই চিরজ্ঞানময় সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা‘
আলা হযরত‘
ঈসা (‘
আঃ)কে মৃতদের জীবন দান , চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষমতার আওতা বহির্ভূত রোগীদেরকে নিরাময় দান ও জন্মান্ধকে দৃষ্টিদান-কে মু‘
জিযাহ্ হিসেবে দান করেন যাতে সংশ্লিষ্ট যুগের জনগণ জানতে পারে যে. এ কাজগুলো মানবীয় ক্ষমতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষমতাবহির্ভূত এবং প্রচলিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে এ সব কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয় , বরং এ সব কাজ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিধির বহির্ভূত এবং তিনি কোনো অদৃশ্য সূত্র থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেই এ কাজগুলো করতে সক্ষম হয়েছেন।
আর তৎকালীন বিশ্বে প্রচলিত বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞান , শিল্প ও কারিগরী বিদ্যার মধ্যে জাহেলী যুগের আরবদের মাঝে প্রচলিত একমাত্র শিল্প ছিলো বাগ্মিতা ও সাহিত্যসমৃদ্ধ বাচন শিল্প। ভাষার বলিষ্ঠতা , প্রাঞ্জলতা , ঝঙ্কার , গভীরতা ও সূক্ষ্মতা - আরবী ভাষায় যাকে এক কথায়“
বালাগ্বাত্”
ও“
ফাছ্বাহাত্”
বলা হয় - এ সব দিকের বিচারে সে যুগে আরব জাতি ও আরবী ভাষা বিকাশের সর্বোচ্চ চূড়ায় উপনীত হয়েছিলো এবং তৎকালীন বিশ্বের সমস্ত জাতি ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাগ্মিতা ও কথাশিল্পের বিচারে তারা ব্যতিক্রমধর্মী স্থানের অধিকারী ছিলো ও এ জন্য সর্বত্র বিশেষভাবে খ্যাত ছিলো।
অন্যদিকে এ শিল্পে অগ্রবর্তিতা তাদের মধ্যে অত্যন্ত গৌরবের বিষয় বলে পরিগণিত হতো। এ কারণে তারা কবিতা ও বাগ্মিতার প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ মজলিসের আয়োজন করতো। এমনকি এ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে তারা মেলারও আয়োজন করতো। এ সব প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক গোত্রের শ্রেষ্ঠতম কবি ও বাগ্মীগণ তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতা ও ভাষণ পেশ করতেন। আর উপযুক্ত বিচারকমণ্ডলী শ্রেষ্ঠতম কবি ও কথাশিল্পীদের বাছাই করতেন এবং সকলে তাঁদের প্রশংসা করতো।
আরবদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কবি ও বাক্যবাগীশদের মর্যাদা ও প্রশংসা এবং উৎসাহ দানের প্রথা এমনই তুঙ্গে পৌঁছেছিলো যে , তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কবিতা সমূহের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠতম সাতটি কবিতা বাছাই করা হয় এবং সোনার কালি দ্বারা লিখে তা কা‘
বাহ্ ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ কারণে এ সাতটি কবিতা“
ঝুলন্ত সাত”
(معلقة سبع
) নামে খ্যাত হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই আরবী ভাষায় যে কোনো সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ কবিতাকে‘
ঝুলিয়ে রাখা সাত কবিতার সাথে’
তুলনাকরণ ও‘
সোনালী কবিতা’
নামে অভিহিতকরণের প্রথা প্রচলিত হয়। (العمدة ١/ ٧٨
.)
তৎকালীন আরব জনগণ কবিতা ও বাগ্মিতাকে যোগ্যতার মানদণ্ডরূপে গণ্য করতো। তারা ছিলো কবিতা ও বাগ্মিতার প্রেমিক। তাই প্রতিযোগিতার সময় শ্রেষ্ঠতম কবিতা ও ভাষণ নির্ণয়ের ভার দেয়া হতো“
নাাবিগ্বাহ্ যুবিয়াানী”
র ওপর। [نابغة ذبيانی
- যুবিয়াানী একটি গোত্রের নাম। অসাধারণ প্রতিভার কারণে তিনিنابغة ذبيانی
(যুবিয়াানী গোত্রের অসাধারণ প্রতিভা) নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।]
নাবিগ্বাহ্ যুবিয়ানী হজ্বের মওসূমে“
ওক্বায্”
মেলায় উপস্থিত হতেন এবং তাঁর জন্য লাল রঙের বিশেষ তাঁবু স্থাপন করা হতো। আরব উপদ্বীপের সর্বত্র থেকে কবি ও বাক্যবাগীশগণ এসে সেখানে সমবেত হতেন এবং নিজেদের সাহিত্যকর্ম তাঁর সামনে পেশ করতেন। আর তিনি স্বীয় মতামত প্রকাশ করতেন এবং শ্রেষ্ঠতম কবিতা ও ভাষণ বাছাই করে সংশ্লিষ্ট কবি ও বক্তার বুকে গৌরব-পদক পরিয়ে দিতেন। (شعراء النصر الله ٢/٦٤٠، طبع بيروت
.)
যেহেতু তৎকালীন আরবদের পরিবেশ-পরিস্থিতি এ ধরনের ছিলো , সেহেতু খোদায়ী পরম জ্ঞানের দাবী ছিলো এই যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে অসাধারণ প্রকাশভঙ্গি সমৃদ্ধ কোরআন মজীদের মু‘
জিযাহ্ দেয়া হবে যাতে সর্বোত্তম প্রকাশভঙ্গির অধিকারী যে কোনো আরবই কোরআন মজীদের অনুপম বাচনভঙ্গি , প্রাঞ্জলতা , মাধুর্য ও সাহিত্যনৈপুণ্যের কাছে অক্ষমতায় নতজানু হতে বাধ্য হয় এবং যে কোনো বাগ্মী ও বাক্যবাগীশ কবিও কোরআনের ভাষাগত উৎকর্ষ ও মাধুর্যের সামনে অক্ষমতায় নীরব হয়ে যেতে বাধ্য হন , আর যে কোনো মুক্তবিবেক ও ন্যায়বান ব্যক্তি নিজের অজ্ঞাতসারেই কোরআনের সামনে মাথা নত করে দেন এবং এর খোদায়ী ওয়াহী বা খোদায়ী কালাম্ হবার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে নেন।
এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে , অনেক ইসলামী মনীষীই আরবদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কাব্য ও বাগ্মিতার অপরিসীম মর্যাদাকে কোরআন মজীদের আরবী ভাষার শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যমানের গ্রন্থ হবার কারণ হিসেবে গণ্য করেছেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো , অত্র গ্রন্থের‘
কোরআন কেন আরবী ভাষায় নাযিল হলো’
প্রবন্ধের‘
আরবী ভাষার বিকাশে খোদায়ী হস্তক্ষেপ’
উপশিরোনামে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , মহান আল্লাহ্ তা‘
আলা শেষ নবীর (ছ্বাঃ) যুগ থেকে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সমস্ত মানুষের পথনির্দেশ সম্বলিত যে মহাগ্রন্থ পাঠাবেন তার জন্য সংক্ষিপ্ততম আয়তনে বিশালতম ভাব প্রকাশের উপযোগী ভাষা অপরিহার্য ছিলো এবং এ কারণে আল্লাহ্ তা‘
আলা তাঁর সৃষ্টিপরিকল্পনার মধ্যেই এহেন একটি ভাষার উদ্ভব ঘটানো এবং হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাবের যুগে তাকে উন্নতির চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ও এ ভাষার সর্বোত্তম কবিতা ও ভাষণের উদ্ভব নিশ্চিতকরণ নিহিত রেখেছিলেন। এ ব্যাপারে আমরা যে উপসংহারে উপনীত হয়েছি তা হচ্ছে বিচারবুদ্ধির অকাট্য রায়।
এখানে ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে কোরআন মজীদ ছাড়াও আরো অনেক মু‘
জিযাহ্ দেয়া হয়েছিলো। যেমন : চন্দ্র দ্বিখণ্ডিতকরণ এবং তাঁর নির্দেশে গোসাপের কথা বলা ও নুড়ি পাথরের তাসবীহ্ পাঠ ইত্যাদি। কিন্তু তাঁর আনীত সমস্ত মু‘
জিযাহর মধ্যে কোরআন মজীদ হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ , সর্বাধিক দৃঢ়তর ও সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর। কারণ -
(1) তৎকালীন আরব জাতির লোকেরা ছিলো নিরক্ষর এবং সৃষ্টিরহস্য ও বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা-বিধি সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে , হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াত-প্রাপ্তি কালে আরবের হেজায্ অঞ্চলে - মক্কাহ্ নগরী যার অন্তর্ভুক্ত - অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন লোকের সংখ্যা ছিলো হাতে গণার পর্যায়ে। তাই সার্বিকভাবে তৎকালীন আরব জনগণকে নিরক্ষর বলাটা অতিশয়োক্তি নয়। ফলে তাদের পক্ষে কোরআন মজীদ বাদে অন্যান্য মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করার এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব সহকারে এ সব মু‘
জিযাহ্ পর্যবেক্ষণ করার খুবই সম্ভাবনা ছিলো। ফলে তারা এ সবকে , তারা জানে না এমন কতোগুলো প্রাকৃতিক কার্যকারণের ওপর ভিত্তিশীল বা এমন কোনো শিল্পকৌশল যে সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই - বলে মনে করতে পারতো। আর যেহেতু জাদুবিদ্যার মাধ্যমে এক ধরনের অস্বাভাবিক কাজ দেখানো সম্ভব সেহেতু তারা এ সব মু‘
জিযাহকে জাদু বলে মনে করতে পারতো। কিন্তু কোরআন মজীদের অসাধারণ প্রকাশভঙ্গি ও সাহিত্যনৈপুণ্যের কারণে এর মু‘
জিযাহ্ হওয়া সম্পর্কে তাদের মধ্যে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি হয় নি। কারণ , তারা নিজেরা আরবী ভাষার প্রকাশভঙ্গি , সাহিত্যিনৈপুণ্য ও বর্ণনামাধুর্য সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই অবগত ছিলো এবং এ ভাষার রহস্যাবলী তাদের কাছে উন্মোচিত ছিলো।
(2) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর অন্যান্য মু‘
জিযাহ্ ছিলো সাময়িক। তাই তা মু‘
জিযাহ্ হিসেবে সর্বকালীনভাবে উপস্থাপনযোগ্য ছিলো না। প্রদর্শনের পর কিছুদিনের মধ্যেই তা ইতিহাসের ঘটনায় পরিণত হয় যা পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদের নিকট বর্ণনা করতেন। পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলের (‘
আঃ) প্রদর্শিত সকল মু‘
জিযাহ্ই এ পর্যায়ের এবং সেগুলোর কোনোটিই বর্তমানে নেই ; কোনোটিই জীবন্ত মু‘
জিযাহ্ নয়। কিন্তু কোরআন মজীদ ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত থাকবে এবং এর অলৌকিকত্বও অবিনশ্বর।
এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করতে চাই যে , আজকালকার অনেক লেখক হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর প্রদর্শিত অন্যান্য মু‘
জিযাহর প্রতি সন্দেহ ও অস্বীকৃতির দৃষ্টিতে তাকান। তাই তাঁকে কোরআন মজীদ ছাড়াও আরো যে বহু মু‘
জিযাহ্ দেয়া হয়েছিলো - এ সত্যটি পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে অকাট্যভাবে প্রমাণ করা হয়েছে।