কোরআন অবিনশ্বর মু
‘
জিযাহ্
যে কেউ ইসলামের ইতিহাস ও কোরআন মজীদের সাথে পরিচিত , সে-ই সন্দেহাতীতভাবে জানে এবং প্রত্যয় পোষণ করে যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) বিশ্বের সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে ইসলামের প্রতি দাও‘
আত দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কোরআন মজীদকে উপস্থাপন করে তাদের ওপর হুজ্জাত্ পরিপূর্ণ করেন , কোরআনের মু‘
জিযাহর মাধ্যমে সংগ্রামের ময়দানে পদার্পণ ও পদচারণা করেন এবং (আল্লাহ্ তা‘
আলার নির্দেশে) সুউচ্চ ও সুস্পষ্ট কণ্ঠে সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে ঘোষণা করেন যে , সবাই যেন পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই কোরআন মজীদের অনুরূপ কোনো গ্রন্থ রচনা করে নিয়ে আসে ; তাহলে তিনি তাঁর নবুওয়াতের দাবী থেকে বিরত থাকবেন। কিছুদিন পরে তিনি তাঁর এ চ্যালেঞ্জের মাত্রা বহু নীচে নামিয়ে আনেন এবং কোরআন মজীদের সূরাহ্ সমূহের অনুরূপ কয়েকটি সূরাহ্ উপস্থাপনের আহবান জানান। এরপর এ চ্যালেঞ্জকে আরো সহজতর করে শুধু একটি সূরাহ্ উপস্থাপনের আহবান জানান। আর এভাবেই চ্যালেঞ্জ সহকারে তিনি তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন ; এ চ্যালেঞ্জ ও এ সংগ্রাম অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে এবং ক্বিয়ামত্ দিবস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
যেহেতু তৎকালীন আরবরা প্রকাশভঙ্গির বলিষ্ঠতা , প্রাঞ্জলতা , বাগ্মিতা , সাহিত্যময়তা ও কাব্যের দিক থেকে বিশেষজ্ঞত্বের অধিকারী ছিলো , বরং এক ধরনের অসাধারণত্বের অধিকারী ছিলো , সেহেতু কোরআনের বিরুদ্ধে লড়াই-এর ক্ষেত্রে তাদের জন্য সহজতম ও সর্বোত্তম পন্থা ছিলো কোরআন মজীদের ক্ষুদ্রতম সূরাহ্ সমূহের সাথে তুলনীয় একটি সূরাহ্ রচনা করা এবং হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর চ্যালেঞ্জ তথা কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। এভাবে , তারা তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও পূর্ণতাপ্রাপ্ত শিল্প এবং যে বিষয়ে তারা সন্দেহাতীতরূপে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলো , তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জপ্রদানকারীকে পরাভূত করতে পারতো।
এ কাজের মাধ্যমে তারা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর ওপর বিজয়ী হতে , ইতিহাসে নিজেদের নামকে চিরজীবী করে ও স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারতো। সর্বোপরি , এ সহজ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা রক্তক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল যুদ্ধসমূহ এড়িয়ে যেতে এবং প্রাণহানি থেকে নিশ্চিন্ত হতে পারতো। তেমনি কষ্ট ও কাঠিন্য স্বীকার এবং নিজেদের বাড়ীঘর ও দেশ ত্যাগের দুর্ভোগ থেকেও মুক্ত হতে পারতো।
কিন্তু তৎকালের আরবের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের প্রতিভাসমূহ যখন কোরআনের মুখোমুখী হলেন এবং কোরআন মজীদের আয়াতের ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাত্ লক্ষ্য করলেন ও এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলেন , তখন খুব সহজেই কোরআন মজীদের মু‘
জিযাহ্ হওয়া সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত প্রত্যয়ে উপনীত হলেন এবং এ সত্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারলেন যে , কোরআনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে নিশ্চিত পরাজয় ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ কারণেই তাঁদের মধ্যে অনেকে কোরআন মজীদের ওয়াহী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন এবং হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা ঘোষণা করে কোরআন মজীদের সামনে আত্মসমর্পণের শির অবনত করে দেন , আর ইসলাম গ্রহণ করে অবিনশ্বর কল্যাণ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হন। কিন্তু তাদের মধ্যকার অপর এক দল কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জের সামনে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও একগুঁয়েমি ও অন্ধত্বের বশবর্তী হয়ে অসির চ্যালেঞ্জের পথ বেছে নয় এবং সাহিত্যযুদ্ধের পরিবর্তে বর্শা ও তলোয়ারের লড়াইকে অগ্রাধিকার প্রদান করে।
কোরআন মজীদের মোকাবিলায় তৎকালীন আরবদের এ অক্ষমতা ও পরাজয়ই কোরআনে করীমের ওয়াহী হওয়ার সপক্ষে সবচেয়ে বড় দলীল এবং সুস্পষ্টতম প্রমাণ। এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে , কোরআন মজীদের বিকল্প আনয়ন মানুষের শক্তি-ক্ষমতা ও প্রতিভার আওতা বহির্ভূত।
একটি প্রতিবাদ ও তিনটি জবাব
কোনো কোনো অজ্ঞ লোক দাবী করেছে যে , তৎকালীন আরবরা কোরআনের অনুরূপ বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলো এবং এভাবে কোরআনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলো , কিন্তু কালের প্রবাহে কোরআনের মোকাবিলাকারী সে বক্তব্য হারিয়ে গেছে এবং এ কারণে তা আমাদের কাছ থেকে গোপন রয়ে গেছে।
এ দাবী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের বিচারে ভিত্তিহীন ও হাস্যষ্কর দাবী বৈ নয়। কারণ ,
(1) যদি সত্যি সত্যিই এরূপ ঘটনা ঘটতো অর্থাৎ কেউ কোরআন মজীদের বিকল্প উপস্থাপনে সক্ষম হতো এবং কোরআন প্রদত্ত চ্যালঞ্জে বিজয়ী হতো , তাহলে আরবরা অবশ্যই তাদের বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতো। শুধু তা-ই নয় , বিষয়টি তারা সমস্ত অলিতে-গলিতে প্রচার করতো এবং মেলায় , বাজারে ও হজ্বের অনুষ্ঠানে ঘোষণা করতো।
বস্তুতঃ এরূপ একটি ঘটনা ঘটলে ইসলামের দুশমনরা তা প্রচারের সামান্যতম সুযোগও হাতছাড়া করতো না , বরং তাদের লক্ষ্য হাসিলের জন্য একে পুরোপুরি ব্যবহার করতো। কোরআন মজীদের বিরুদ্ধে এ বিজয়কে তারা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো এবং সযত্নে এর হেফাযত করতো ও তাদের দুশমন মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতো। শুধু তা-ই নয় , তারা এ বিষয়টিকে পুরুষানুক্রমে তাদের ইতিহাসগ্রন্থ সমূহে উদ্ধৃত করতো। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে , কোনো ইতিহাস বা সাহিত্য গ্রন্থেই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও তাতে বিজয়ের কথা উল্লেখ করা হয় নি।
এ প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি কথা উল্লেখ করা যেতে পারে :
(ক) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাব ও ইসলামের অভ্যুদয় মানবেতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনা , যে কারণে এর বিস্তারিত ইতিহাস শুধু মুসলিম ইতিহাসবিদগণই নন , অমুসলিম ইতিহাসবিদগণও লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রাচীন অমুসলিম ইতিহাসবিদগণ ইসলামী সূত্রের ওপর নির্ভর করেন নি , বরং নিজস্ব সূত্র ব্যবহার করেছেন। সূতরাং কেউ কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার বিকল্প উপস্থাপনে সক্ষম হলে তা নিয়ে কাফেররা এতোই হৈচৈ করতো যে , তৎকালীন ও পরবর্তীকালীন অমুসলিম ইতিহাসবিদগণের ইতিহাস থেকে তা কিছুতেই বাদ পড়তো না , বরং কথিত বিকল্প গ্রন্থ বা সূরাহ্ও তাতে উদ্ধৃত হতো।
(খ) মক্কাহর মুসলমানদের অংশবিশেষ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলে কাফেরদের প্রতিনিধিদল তাঁদেরকে ধাওয়া করে আবিসিনিয়ায় পৌঁছে এবং তাঁদেরকে তাদের হাতে সমর্পণের জন্য সে দেশের বাদশাহ্ নাজ্জাশীর নিকট আবেদন জানায়। হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) তাঁর নিকট যা নাযিল হয়েছে বলে দাবী করছিলেন নাজ্জাশী তা থেকে কিছুটা তেলাওয়াত করে শুনাতে বললে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর একজন ছ্বাহাবী সূরাহ্ মারইয়াম্ তেলাওয়াত করে শোনান। এ তেলাওয়াত শুনে নাজ্জাশী ও তাঁর পারিষদবর্গ অভিভূত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় কাফেরদের হাতে কোরআন মজীদের বা তার কোনো সূরাহর বিকল্প থাকলে অবশ্যই তারা বলতো যে , কোরআন কোনো ঐশী কালাম্ নয় , বরং এ হচ্ছে মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর রচিত অতি উন্নত মানের সাহিত্যসমৃদ্ধ রচনা , আর অত্যন্ত সুন্দরভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশক্ষম প্রাঞ্জল ভাষায় (আরবীতে) এ ধরনের উন্নত মানের রচনা তৈরী করা সম্ভব এবং তারা এর বিকল্প রচনা করেছে। অতঃপর তারা তা পড়ে শুনাতো। কিন্তু তারা এরূপ দাবী করে নি ; করলে অবশ্যই তা ইতিহাসে লেখা থাকতো।
এছাড়া হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) যখন রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের নিকট পত্র পাঠান তখন রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) ও তাঁর দ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য হেরাক্লিয়াস কয়েক জন আরব বণিকের সাহায্য নেন যারা ছিলো কাফেরদের দলভুক্ত। কোরআন মজীদের বা তার কোনো সূরাহর বিকল্প রচিত হয়ে থাকলে তারাও হেরাক্লিয়াসের সামনে তা পেশ করার সুযোগ হাতছাড়া করতো না। কিন্তু তারা কোনো বিকল্প তৈরীর দাবী করে নি এবং এরূপ কিছু পেশ করে নি।
(গ) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর যুগে আরব উপদ্বীপের জনগণের মধ্যে মদীনার ইয়াহূদী ও নাজরানের খৃস্টানরা ছিলো অপেক্ষাকৃত সুশিক্ষিত ও সুসভ্য। তারা ছিলো আসমানী গ্রন্থের অধিকারী। বিশষ করে ইয়াহূদীদের মধ্যে জ্ঞানচর্চা বেশী ছিলো এবং খৃস্টানদের আরব উপদ্বীপের বাইরের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিলো। এমতাবস্থায় কোরআন মজীদের বিকল্প রচিত হলে তারা তার সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসার করে ইসলামের মোকাবিলা করতো। বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে তাদের যখন দেশত্যাগ করে বাইরে চলে যেতে হয় , তখন তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ভালোভাবেই এ অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারতো এবং কিছুতেই তারা এ সুযোগ হাতছাড়া করতো না। কিন্তু এরূপ কোনো বিকল্পের প্রচার তো দূরের কথা , এরূপ বিকল্প রচিত হয়েছে বলেও তারা দাবী করে নি।
(ঘ) জাহেলী যুগের আরবদের বহু সাহিত্যকর্ম , বিশেষ করে তাদের শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকর্মসমূহ এখনো টিকে আছে। সে ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের বিকল্প রচিত হলে তার টিকে থাকার সম্ভাবনা ঐ সব সাহিত্যের তুলনায় অনেক বেশী ছিলো।
(2) কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ শুধু মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক বা শুধু আরবদের প্রতিই ছিলো না , বরং কোরআন মজীদ তার বিকল্প উপস্থাপনের জন্য সর্ব কালের , সর্ব যুগের সর্ব স্থানের সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :
)
قل لئن اجتمعت الانس و الجن علی ان يأتوا بمثل هذا القرآن لا يأتوا بمثله و لو کان لبعضهم لبعض ظاهراً(
“
(হে রাসূল! তাদেরকে) বলে দিন , এ কোরআনের বিকল্প আনয়নের জন্য যদি সমগ্র মানব প্রজাতি ও সমগ্র জ্বিন প্রজাতি একত্রিত হয় তথাপি এর বিকল্প আনয়নে সক্ষম হবে না , এমনকি তারা যদি এ কাজে এক দল অপর দলকে সাহায্য করে তবুও সক্ষম হবে না।”
(সূরাহ্ বানী ইসরাাঈল্ : 88)
আর ইসলামের পুরো ইতিহাসে খৃস্টান জগত ও ইসলামের দুশমন অন্যান্য জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় ইসলাম ও মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা হ্রাসকরণ এবং হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) ও কোরআন মজীদকে হেয় করার লক্ষ্যে প্রচুর সময় , শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এ সংগ্রাম অত্যন্ত পরিকল্পিত , সুসংগঠিত ও সুবিস্তৃতভাবে অব্যাহত ছিলো এবং এখনো রয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের পক্ষে যদি কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী কোনো বিকল্প - এমনকি মাত্র একটি সূরাহ্ আনয়ন করে হলেও - উপস্থাপন করা সম্ভব হতো , তাহলে অবশ্যই তারা সে সুযোগ গ্রহণ করতো। সে ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের ক্ষুদ্রতম সূরাহ্ সমূহের কোনোটির অনুরূপ একটি সূরাহ্ রচনা করে অত্যন্ত সহজ অথচ সর্বোত্তম পন্থায় তারা স্বীয় লক্ষ্যে উপনীত হতো এবং প্রচুর সময় , শ্রম ও অর্থ ব্যয়ের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতো। কিন্তু
)
يريدون ليطفيوا نور الله بافواههم و الله متم نوره و لو کره الکافرون(
“
তারা ফুঁ দিয়ে আল্লাহর জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে চায় , কিন্তু আল্লাহ্ (স্বয়ং) তাঁর জ্যোতির পরিপূর্ণতা দানকারী , যদিও কাফেররা তা অপসন্দ করে।”
(সূরাহ্ আছ্ব্-ছ্বাফ্ : 8)
(3) উন্নত সাহিত্যপ্রতিভার অধিকারী কোনো ব্যক্তি যদি বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের বিচারে উন্নততম কালাম্ (কথা , বাণী , ভাষণ ও বক্তব্য) নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে চর্চা করে এবং তার সৌন্দর্য , প্রকাশসৌকর্য ও সাহিত্যক ঔৎকর্ষ ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে , অতঃপর সে তদনুরূপ বা অন্ততঃ তার কাছাকাছি মানের কালাম্ রচনা করতে সক্ষম হয়। এ হচ্ছে সর্ব শাস্ত্রে বা সর্ব বিষয়ে প্রযোজ্য একটি সাধারণ ও সুনিশ্চিত বিধি।
কিন্তু কোরআন মজীদ এ সাধারণ বিধির ব্যতিক্রম। কারণ , মানুষ কোরআন মজীদের সাথে যতো বেশীই পরিচিত হোক না কেন , যতো বেশী মনোযোগ সহকারে কোরআনে করীম অধ্যয়ন , পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করুক না কেন এবং কোরআন মজীদ নিয়ে যতোই চর্চা করুক না কেন , যতোই না এর আয়াত সমূহ মুখস্ত করে নিক ও মনমগযে গেঁথে নিক , তথাপি সে কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের সাথে মিল বিশিষ্ট প্রকাশভঙ্গির অধিকারী কালাম্ রচনা করতে সক্ষম হবে না।
এ সত্য এটাই প্রমাণ করে যে , কোরআন মজীদ এমন এক বিশিষ্ট প্রকাশভঙ্গির অধিকারী যা মানুষকে শিক্ষাদানের সম্ভাবনা ও মানুষের শিক্ষাগ্রহণ ক্ষমতার উর্ধে। অতএব , কারো পক্ষে তা শিক্ষা করা বা অন্যকে শিক্ষাদান এবং তার ভিত্তিতে অনুরূপ প্রকাশভঙ্গি সম্বলিত বক্তব্য রচনা করা সম্ভব নয়।
এ থেকে এটাও বোঝা যায় যে , কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিজের রচিত কালাম্ হলে , তাঁর যে সব বক্তৃতা-ভাষণ ও কথাবার্তা অকাট্য ও অবিকৃতভাবে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে তাতে বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের দিক থেকে কোরআন মজীদের সাথে এক ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যেতো এবং কোরআন মজীদের প্রকাশভঙ্গি ও তাঁর কথাবার্তার প্রকাশভঙ্গিতে বিশেষ ধরনের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেতো। অন্ততঃ তাঁর বক্তব্যের মাঝে ফাঁকে ফাঁকে , আঙ্গিকতা , প্রকাশভঙ্গি ও মানের দিক থেকে কোরআন মজীদের সমপর্যায়ের কথা পাওয়া যেতো। আর তাহলে অবশ্যই এ সব অত্যুন্নত মানের বাক্য বিভিন্ন গ্রন্থে উদ্ধৃত হতো। বিশেষ করে কোরআনের দুশমনরা - যারা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বকে ম্লান করার জন্য সদা সচেষ্ট - এ ধরনের বাক্যাবলী সংরক্ষণ করে রাখতো এবং তার ভিত্তিতে কোরআন মজীদকে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিজের রচিত গ্রন্থ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করতো।
এখানে আরো একটি কথা মনে রাখা দরকার। তা হচ্ছে , মানবসমাজে বালাগ্বাত্ (ভাষাগত প্রকাশ সৌকর্য) যেভাবে বিদ্যমান দেখতে পাওয়া যায় তাতে অনেক সময় কোনো জনসমষ্টির মধ্যে বালাগ্বাত্-এর অধিকারী কোনো কোনো লোককে পাওয়া যায় , কিন্তু সাধারণতঃ এ ধরনের একজন লোক সংশ্লিষ্ট ভাষার বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের একটি কি দু’
টি দিকে দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ , কেউ হয়তো গদ্যে বালাগ্বাত্-এর অধিকারী , কিন্তু কবিতা রচনায় অক্ষম। অপর একজন হয়তো বীরত্বগাথা কবিতায় বালাগ্বাতের অধিকারী , কিন্তু প্রশংসামূলক কবিতায় নন। অথবা একজন শোকগাথা রচনায় বালাগ্বাত্-এর অধিকারী এবং এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক কবিতা রচনায় সক্ষম , কিন্তু তিনি প্রেমবিষয়ক কবিতা রচনা করলে তা হয় খুবই নিম্ন মানের।
কিন্তু কোরআন মজীদ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছে এবং এ ক্ষেত্রে বাচনশিল্পের বিভিন্ন আঙ্গিকতা ব্যবহার করেছে। আর এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোরআন মজীদ মু‘
জিযাহর স্তরে অবস্থিত এবং এর প্রকাশসৌন্দর্য ও বাণীনৈপুণ্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরমতম পর্যায়ে উপনীত ও পূর্ণতার শেষ সীমায় অবস্থিত , যার ফলে অন্যরা অনুরূপ কালাম্ রচনায় অক্ষম হয়ে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ , এহেন চরমতম ও পূর্ণতম বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো কেবল মানুষের ও তার ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ্ তা‘
আলার পক্ষেই সম্ভব এবং এ কারণেই তাঁর কালামে অর্থাৎ কোরআন মজীদে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাই মানুষের পক্ষে কখনোই এর সাথে তুলনীয় বক্তব্য উপস্থাপন করা সম্ভব হতে পারে না।
চিরকালীন দ্বীনের অবিনশ্বর মু‘
জিযাহ্
এ পর্যন্তকার আলোচনা থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে , নবী-রাসূলগণকে (‘
আঃ) চেনার একমাত্র পথ হচ্ছে মু‘
জিযাহ্। আর যেহেতু পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের (‘
আঃ) নবুওয়াত বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট যুগের জন্য নির্ধারিত ছিলো , সেহেতু অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাঁদেরকে প্রদত্ত মু‘
জিযাহ্ সমূহের মেয়াদও ছিলো সীমাবদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত। আর এ সব মু‘
জিযাহ্ কেবল সংশ্লিষ্ট যুগের লোকদের জন্যই নির্ধারিত ছিলো। কারণ , সংশ্লিষ্ট যুগের কিছু লোক ঐ সব সীমাবদ্ধ ও সাময়িক মু‘
জিযাহ্ দর্শন করায় তাদের ওপর আল্লাহ্ তা‘
আলার হুজ্জাত্ পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো এবং অন্যরাও পরম্পরা ভিত্তিতে ও মুতাওয়াতির্ পর্যায়ে এ সব মু‘
জিযাহর খবর জানতে পারায় তাদের জন্যও তা দৃঢ় প্রত্যয়ের পর্যায়ে উপনীত হয়েছিলো , যার ফলে তাদের ওপরও আল্লাহর হুজ্জাত্ পরিপূর্ণ হয়েছিলো।
কিন্তু একটি অবিনশ্বর শরী‘
আত ও নবুওয়াতের জন্য একটি অবিনশ্বর ও পরবর্তী সর্বকালীনন মু‘
জিযাহ্ থাকা অপরিহার্য। কারণ , মু‘
জিযাহ্ কোনো একটি বিশেষ যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে পরবর্তী বিভিন্ন যুগের লোকদের পক্ষে তা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়।
এমনকি এক সময়ের মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের বর্ণনাও কালের প্রবাহে হারিয়ে যেতে পারে ; অন্ততঃ বিভিন্ন কার্যকারণের প্রভাবে তার ওপরে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে পরবর্তী যুগসমূহের লোকেরা - যারা মু‘
জিযাহ্ প্রত্যক্ষ করতে পারলো না - তাদের ওপর হুজ্জাত্ পূর্ণ হবে না এবং তাদের অন্তরে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি হবে না। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা‘
আলা যদি এহেন লোকদের জন্য আল্লাহর নবীর নবুওয়াতের সত্যতা স্বীকার ও তাঁর শরী‘
আত্ অনুসরণ বাধ্যতামূলক করেন , তাহলে কার্যতঃ তাদেরকে অসম্ভব দায়িত্ব প্রদান করা হবে। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘
আলার পক্ষ থেকে কারো ওপরে অসম্ভব দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এ কারণেই আমরা বলেছি , অবিনশ্বর নবুওয়াতের জন্য অবিনশ্বর মু‘
জিযাহ্ প্রয়োজন যা সব সময়ই সংশ্লিষ্ট নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করবে। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘
আলা সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের জন্য অবিনশ্বর ও কালোত্তীর্ণ মু‘
জিযাহ্ স্বরূপ কোরআন মজীদ প্রদান করেছেন যাতে তা অতীত কালের লোকদের জন্য যেভাবে হুজ্জাত্ ছিলো ঠিক সেভাবেই পরবর্তী কালের লোকদের জন্যও হুজ্জাত্ হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা সংক্ষেপে নিম্নোক্ত উপসংহারে উপনীত হতে পারি :
(1) কোরআন মজীদ অতীতের সমস্ত নবী-রাসূলকে (‘
আঃ) প্রদত্ত মু‘
জিযাহ্ সমূহ ও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে প্রদত্ত অন্যান্য মু‘
জিযাহর ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। কারণ , কোরআন মজীদ হচ্ছে অবিনশ্বর মু‘
জিযাহ্ - যার মু‘
জিযাহ্ হওয়ার বৈশিষ্ট্য এখন থেকে অতীতে যেমন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্য হুজ্জাত্ ছিলো , তেমনি ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য হুজ্জাত্ হয়ে থাকবে।
(2) অতীতের নবী-রাসূলগণের (‘
আঃ) আনীত শরী‘
আত্ ও বিধিবিধানের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কারণ , সংশ্লিষ্ট শরী‘
আত্ সমূহের সত্যতা প্রমাণকারী মু‘
জিযাহ্ সমূহ অতীত হয়ে গেছে এবং সে সবের আধিপত্যও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জনৈক ইয়াহূদী পণ্ডিতের সাথে‘
আল্লামাহ্ খূয়ীর যে কথোপকথন হয় তা এখানে উদ্ধৃত করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। উক্ত ইয়াহূদী পণ্ডিতের সাথে‘
আল্লামাহ্ খূয়ীর আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো :“
ইয়াহূদী ধর্মের যুগ তার মু‘
জিযাহ্ সমূহ হারিয়ে যাওয়ার কারণে বিলুপ্ত হয়েছে।”
‘
আল্লামাহ্ খূয়ী তাঁকে বললেন :“
হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর শরী‘
আত্ কি শুধু ইয়াহূদীদের জন্য ছিলো , নাকি সমস্ত জাতি ও জনগোষ্ঠীর জন্য সাধারণ ও সর্বজনীন শরী‘
আত্ ছিলো ? তা যদি শুধু ইয়াহূদীদের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য জাতি ও জনগোষ্ঠীর জন্য অন্য নবী-রাসূল প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে আপনাদের দৃষ্টিতে উক্ত পয়গাম্বর রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) ছাড়া আর কে হতে পারেন ? আর হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর শরী‘
আত্ যদি সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন হয়ে থাকে এবং সমগ্র মানব প্রজাতির জন্য তা সাধারণ শরী‘
আত্ হয়ে থাকে তাহলে তার সপক্ষে অকাট্য ও জীবন্ত দলীল থাকা অপরিহার্য। অথচ কার্যতঃ এখন এ জাতীয় দলীল-প্রমাণ মওজূদ নেই। কারণ , হযরত মূসার (‘
আঃ) মু‘
জিযাহ্ সমূহ শুধু তাঁর নিজের যুগের জন্যই বিশেষভাবে নির্ধারিত ছিলো। তাই তাঁর পরে আর সে সব মু‘
জিযাহর কোনো চিহ্ন বর্তমান নেই যা সর্ব যুগে অকাট্য ও প্রত্যয় সৃষ্টিকারী রূপে গণ্য হতে পারে এবং ইয়াহূদী ধর্মের স্থায়িত্ব ও প্রবাহমানতা প্রমাণ করতে পারে।
“
আপনি যদি বলেন যে , এ সব মু‘
জিযাহ্ বর্তমানে বিদ্যমান না থাকলেও মুতাওয়াতির্ বর্ণনার কারণে এ সব মু‘
জিযাহ্ সংঘটিত হবার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় , তাহলে জবাবে বলবো , প্রথমতঃ মু‘
জিযাহ্ কেবল তখনই প্রত্যয় উৎপাদক হতে পারে যখন তা তাওয়াতোর্ পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক যুগে ও প্রত্যেক পুরুষে প্রত্যেক জাতির মধ্যেই এতো বেশী সংখ্যক লোক কর্তৃক বর্ণিত হয় যে , তা প্রত্যয় উৎপাদনকারী হতে পারে। কিন্তু আপনারা প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতি ও জনগোষ্ঠীর প্রতিটি প্রজন্মের মধ্যে হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে এ ধরনের তাওয়াতোর্ প্রমাণ করতে পারবেন না।
“
দ্বিতীয়তঃ যদি মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে বর্ণনাপ্রাপ্তিই তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট বলে গণ্য হয় , তাহলে তা শুধু হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় , বরং আপনারা যেভাবে হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ বর্ণনা করেছেন তেমনি খৃস্টানরা হযরত‘
ঈসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ বর্ণনা করছে এবং একইভাবে মুসলমানরাও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ বর্ণনা করছে। এমতাবস্থায় এ সব বর্ণনার মধ্যে এমন কী পার্থক্য রয়েছে যে , হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে আপনাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে , অথচ অন্যদের বর্ণনা তাদের পয়গাম্বরদের সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য হবে না ? আর তাদের পয়গাম্বরের মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে তাদের বর্ণনা যদি সংশ্লিষ্ট মু‘
জিযাহ্ সমূহ সংঘটিত হওয়ার সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট হয় , তাহলে তাদের নবীদের মু‘
জিযাহ্ এভাবে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও কেন আপনারা তাঁদের নবুওয়াতের সত্যতা স্বীকার করছেন না ?”
জবাবে উক্ত ইয়াহূদী পণ্ডিত বলেন :“
ইয়াহূদীরা হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর যে সব মু‘
জিযাহ্ বর্ণনা করে থাকে খৃস্টান ও মুসলমানরাও তার সত্যতা স্বীকার করে , কিন্তু তাদের পয়গাম্বরদের মু‘
জিযাহ্ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় (অর্থাৎ ইয়াহূদীরা বিশ্বাস করে না)। এ কারণে তা প্রমাণের জন্য অন্যবিধ দলীল-প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে।”
জবাবে‘
আল্লামাহ্ খূয়ী বলেন :“
হ্যা , সন্দেহ নেই , খৃস্টান ও মুসলমানরা হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ সমূহ বিশ্বাস করে। কিন্তু তা ইয়াহূদীদের মুতাওয়াতির্ ও প্রত্যয় উৎপাদক বর্ণনার ভিত্তিতে নয় , বরং এর কারণ এই যে , তাদের পয়গাম্বরগণ (‘
আঃ) তাদেরকে এ সব মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে অবগত করেছেন। খৃস্টান ও মুসলমানরা তাদের পয়গাম্বরদের (‘
আঃ) মাধ্যমেই হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রত্যয় হাছ্বিল করেছে। এমতাবস্থায় তারা যদি তাঁদের নবুওয়াত স্বীকার না করে তাহলে তাদের পক্ষে হযরত মূসা (‘
আঃ)-এর মু‘
জিযাহ্ সমূহের সত্যতা স্বীকারের কোনো পথই থাকে না।
“
এ দুর্বলতা শুধু ইয়াহূদী ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় , বরং অতীতের প্রতিটি ধর্মেই এ দুর্বলতা রয়েছে। কেবল ইসলামের মু‘
জিযাহ্ই অবিনশ্বর - যা সকল যুগেই জীবন্ত এবং সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর মধ্যেই প্রবহমান রয়েছে। এ মু‘
জিযাহ্ ক্বিয়ামত্ দিবস পর্যন্ত বিশ্ববাসীর সামনে বাঙ্ময় হয়ে থাকবে এবং তাদেরকে নিজের দিকে আহবান জানাতে থাকবে। আমরা এ প্রবহমান ও অবিনশ্বর মু‘
জিযাহ্ অর্থাৎ কোরআন মজীদের মাধ্যমে ইসলামকে জানি এবং এ দ্বীনের সত্যতা স্বীকার করি। আর যেহেতু আমরা ইসলামকে জেনেছি ও এর সত্যতা স্বীকার স্বীকার করেছি , সেহেতু অতীতের সমস্ত নবী-রাসূলকে (‘
আঃ) স্বীকার করতে বাধ্য। কারণ , ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) তাঁদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ও তাঁদের নবুওয়াতের সত্যতা প্রতিপাদন করেছেন।
“
মোট কথা , কোরআন মজীদ হচ্ছে অবিনশ্বর মু‘
জিযাহ্ - যা অতীতের সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতা প্রতিপাদন করেছে এবং অতীতের সমস্ত নবী-রাসূলের (‘
আঃ) নবুওয়াতের সত্যতা ও তাঁদের নিষ্কলুষতা-পবিত্রতার সাক্ষ্য প্রদান করেছে , আর তাঁদেরকে তাঁদের যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।”