জ্ঞানী-বিজ্ঞানী-মনীষী জন্মদানে কোরআনের অবদান
কোরআন মজীদের এ মানুষ গড়ার দৃষ্টান্ত কেবল নিষ্ঠাবান মানুষ গড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় , বরং কোরআনের ছায়াতলে অনেক অবিস্মরণীয় জ্ঞানী-গুণী , বিজ্ঞানী , মনীষী ও দার্শনিক গড়ে ওঠেন - মানবজাতির ইতিহাসে অন্য কোনো নবীর ও ধর্মগ্রন্থের বা অন্য কোনো আদর্শের প্রভাবে যে ধরনের নযীর নেই। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যক্তিত্ব ছিলেন হযরত আলী (‘
আঃ) - স্বয়ং নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং তাঁর পুরো নবুওয়াতী যিন্দেগীর সাহচর্যে থেকে যিনি গড়ে ওঠেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হযরত আলী (‘
আঃ) ছিলেন এমন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব যার শ্রেষ্ঠত্বের কথা কেবল মুসলমানরাই নয় , অমুসলিমরাও স্বীকার করে থাকে। তৎকালীন আরবে যখন না জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো প্রতিষ্ঠানিক চর্চা ছিলো , না কোনো বড় মনীষী , দার্শনিক বা বস্তুবিজ্ঞানী ছিলেন যার কাছে তিনি জ্ঞানচর্চা করতে পারতেন , না তিনি আরবের বাইরে কোথাও গিয়ে জ্ঞানার্জন করেছিলেন।
এহেন পরিস্থিতিতে তাঁর মতো এতো বড় জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের গড়ে ওঠা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠা কীভাবে সম্ভব হলো তার কোনো জবাব অমুসলিম পণ্ডিত-গবেষক ও ইতিহাসবিদগণ দিতে পারেন নি। প্রকৃত ব্যাপার হলো কোরআন মজীদ ও রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর প্রত্যক্ষ সাহচর্যের কারণেই তাঁর মতো জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠা সম্ভবপর হয়েছিলো।
হযরত আলী (‘
আঃ) নিজেও স্বীকার করেছেন যে , তাঁর যে জ্ঞান তা তিনি কোরআন মজীদ ও রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নিকট থেকে লাভ করেছেন এবং তিনি খোদায়ী ওয়াহী হিসেবে কোরআন মজীদের সামনে মাথা অবনত করে দিয়েছেন।
এখানে হযরত আলী (‘
আঃ)-এর জ্ঞান-মনীষা সম্পর্কে কিছুটা আভাস দেয়া অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
হযরত আলী (‘
আঃ) আরবী ভাষার বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকে বিস্ময়কর ও মৌলিক অবদান রেখে গেছেন - বিশ্বের অসংখ্য বড় বড় জ্ঞানী-গুণী , বিজ্ঞানী , দার্শনিক ও কবি-সাহিত্যিক যাতে অবগাহন করে ধন্য হয়েছেন। বিশেষতঃ তাঁর বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ এবং ব্যাপক তাৎপর্যবহ বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে গিয়ে বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের বিশেষজ্ঞগণ বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছেন।
হযরত আলী (‘
আঃ) তাঁর বক্তৃতা-ভাষণে যখনই যে বিষয়ে কথা বলেছেন , সে বিষয়ে শেষ কথাটি বলেছেন। তাঁর কথা নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পরে তাঁর বক্তব্যের অন্যথা কেউ নির্দেশ করতে পারেন নি। প্রশ্ন হচ্ছে , এ জ্ঞানের উৎস কী ? সন্দেহ নেই যে , কোরআনী আদর্শ ও কোরআনী উৎস এবং কোরআনের উৎসস্থলই তাঁর এ জ্ঞান ও বৈশিষ্ট্যের উৎস। তাই তিনি তাঁর এতো সব বৈশিষ্ট্য সত্ত্বেও কোরআন মজীদের সামনে খোদায়ী ওয়াহীর স্বীকৃতি সহকারে মাথা নত করে দিয়েছেন।
হযরত আলী (‘
আঃ)কে শুধু জ্ঞানী-গুণীরূপে নয় , বরং অন্য দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা যেতে পারে। তা হচ্ছে , যে কেউ তাঁর জীবনেতিহাসের দিকে তাকাবে এবং তাঁর জীবনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে মাত্র একটি বৈশিষ্ট্যের প্রতি মনোযোগ দেবে সে-ই মনে করতে বাধ্য যে , তিনি বুঝিবা তাঁর সারাটি জীবন শুধু এ বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা ও চর্চা করে কাটিয়ে দিয়েছেন এবং বিষয়টিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন , আর এমতাবস্থায় নিশ্চয়ই তিনি শুধু ঐ একটি বিষয়েই বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আর যে ব্যক্তি তাঁর জীবনের অপর একটি বৈশিষ্ট্য বা তাঁর জ্ঞানের অপর একটি দিক সম্পর্কে চিন্তা করবে সে তাঁর জ্ঞানের এ দিকটির ভিত্তিতে তাঁর সম্পর্কে অনুরূপ ধারণা পোষণ করবে - এতে সন্দেহ নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে , এর রহস্য কী ? এর রহস্য হচ্ছে , তিনি কোরআনী তথা আসমানী উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করেছিলেন। কারণ , যে কেউ তৎকালীন আরবের ইতিহাসের সাথে পরিচিত , বিশেষ করে ইসলাম-পূর্ব হেজায্ ভূখণ্ড সম্পর্কে অবগত , তিনিই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে , হযরত আলী (‘
আঃ)-এর চিঠিপত্র , বাণী ও বক্তৃতা-ভাষণ (যা নাহ্জুল্ বালাাগ্বাহ্ নামে সংকলিত হয়েছে) এবং এতে প্রতিফলিত জ্ঞান-বিজ্ঞান ঐশী ওয়াহীর সাথে সম্পর্ক ব্যতিরেকে অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত হওয়া সম্ভব নয় (এবং সে যুগের আরব উপদ্বীপে এ ধরনের জ্ঞান আহরণের কোনো উৎসও ছিলো না) ।
কতোই না চমৎকার অথচ যথার্থ কথা বলেছেন তিনি যিনি নাহ্জুল্ বালাাগ্বাহর ভাষা সম্পর্কে বলেছেন :“
এটা স্রষ্টার কালামের তুলনায় নিম্নতর ও সৃষ্টির কালামের তুলনায় উর্ধে”
! বস্তুতঃ কেবল অবিনশ্বর খোদায়ী মু‘
জিযাহ্ কোরআন মজীদের সাথে সর্বাধিক সম্পৃক্ততার কারণেই তাঁর বক্তব্য মানের দিক থেকে এমন এক সমুন্নত পর্যায়ে উন্নীত হওয়া সম্ভবপর হয়েছিলো। আর তিনি নিজেই তা অকপটে স্বীকার করেছেন।
তাছাড়া হযরত আলী (‘
আঃ)-এর জীবনেতিহাসের সাথে যারা পরিচিত , ইসলামের বন্ধু-দুশমন নির্বিশেষে তাঁদের সকলেই স্বীকার করেন যে , তিনি ছিলেন নীতিনিষ্ঠ - তাক্ব্ওয়া-পরহেযগারীর চরম-পরম দৃষ্টান্ত। শুধু তা-ই নয় , তিনি স্বীয় অনুভূতি , চিন্তা-চেতনা ও মতামতের ব্যাপারে ছিলেন আপোসহীন। এছাড়া দুনিয়া এবং দুনিয়ার ক্ষমতা , শক্তি ও সম্পদের ব্যাপারে তিনি একেবারেই নিস্পৃহ ছিলেন। এহেন ব্যক্তির পক্ষে অন্য কোনো উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে কোরআন মজীদ ও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) থেকে তা আহরণের কথা বলা বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে একেবারেই অসম্ভব।
হযরত আলী (‘
আঃ)-এর জ্ঞান-মনীষার আওতা সম্পর্কে যাদের খুব বেশী ধারণা নেই তাঁদের জানার সুবিধার্থে এখানে কিছুটা সংক্ষিপ্ত আভাস দেয়া যেতে পারে।
নিঃসন্দেহে হযরত আলী (‘
আঃ) ছিলেন কোরআন মজীদের শ্রেষ্টতম ফসল। এ কারণেই হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) এরশাদ করেন :انا مدينة العلم و علي بابها
-“
আমি জ্ঞানের নগরী , আর আলী তার দরযাহ্।”
হযরত আলী (‘
আঃ) জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় সর্বোচ্চ দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে সব শাখা-প্রশাখায় দক্ষতার অধিকারী ছিলেন তার সবগুলোর নামও কোনো একজন মনীষীর আয়ত্ত নেই। জ্ঞানের নগরীর দরযাহ্ হযরত আলী (‘
আঃ) তাঁর নিজের জ্ঞানের আওতা সম্পর্কে বলেছেন :“
রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ) আমাকে জ্ঞানের এক হাজার শাখা (বা অধ্যায়) শিক্ষা দিয়েছেন এবং আমি তার প্রতিটি থেকে এক হাজার করে উপশাখা (বা উপ-অধ্যায়) উদ্ভাবন করেছি।”
এ থেকেই তাঁর জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে।
বর্তমান যুগে দ্বীনী ও মানবিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে সব শাখা-প্রশাখা রয়েছে ও তদ্সংশ্লিষ্ট যে সব আনুষঙ্গিক শাস্ত্র রয়েছে সে সবের নাম মোটামুটি অনেকেরই জানা আছে। এর মধ্যে রয়েছে আরবী ব্যাকরণ , জাহেলী যুগের আরবী সাহিত্য , বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ , ভাষাতত্ত্ব , তাৎপর্য বিজ্ঞান , যুক্তিবিজ্ঞান , দর্শন , ইতিহাস ,‘
ইলমে‘
আক্বাাএদ , তাফ্সীর , হাদীছ , ফিক্বাহ্ , চরিত্রবিজ্ঞান , রাষ্ট্রবিজ্ঞান , অর্থনীতি , সমাজতত্ত্ব , মনোবিজ্ঞান , আইন ও দণ্ডবিধি ইত্যাদি অনেক কিছু। বর্তমান যুগে এবং পূর্ববর্তী যুগেও এ সব শাস্ত্রের যে কোনো একটিতে অত্যন্ত উঁচু স্তরের দক্ষতার অধিকারী ব্যক্তি বিশ্ববিখ্যাত মনীষী হিসেবে পরিগণিত ; কদাচিৎ দেখা যায় যে , একই ব্যক্তি এ সব বিষয়ের মধ্য থেকে একাধিক বিষয়ে উঁচু স্তরের দক্ষতার অধিকারী। কিন্তু হযরত আলী (‘
আঃ) এ সব জ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায়ই সুউচ্চ দক্ষতার অধিকারী ছিলেন এবং তিনি এ সব বিষয়ে যে সব কথা বলেছেন পরবর্তী কালে কোনো মনীষীই তার মধ্য থেকে কোনো কথাই ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রমাণ করতে পারেন নি।
কিন্তু হযরত আলী (‘
আঃ)-এর জ্ঞান কেবল দ্বীনী ও মানবিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখা ও তদ্সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক শাস্ত্রসমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। বরং তিনি প্রাকৃতিক ও বস্তুবিজ্ঞান সমূহেও সমান দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। নক্ষত্রবিজ্ঞান , ভূবিজ্ঞান , পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন শাস্ত্র , প্রাণিবিজ্ঞান , উদ্ভিদবিজ্ঞান , শরীর বিজ্ঞান , চিকিৎসা শাস্ত্র তথা কোনো কিছুই তাঁর আওতার বাইরে ছিলো না।
বস্তুবিজ্ঞান সমূহের মধ্যে রসায়নশাস্ত্রে তাঁর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কোনো কোনো সূত্রের বর্ণনা অনুযায়ী , তিনি রাসায়নিক পদ্ধতিতে স্বর্ণ তৈরী করতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু তাঁর এ দক্ষতা ছিলো তাঁর যুগের চাইতে অনেক বেশী অগ্রগামী। ফলে তাঁর রসায়নশাস্ত্রের শিষ্যগণ এ ফর্মুলা সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে ও কাজে লাগাতে পারেন নি।
অতএব , যে মহাগ্রন্থ এহেন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম - ঐশী গ্রন্থ হবার দাবীদার অন্য কোনো গ্রন্থই যা পারে নি , সে গ্রন্থের ঐশী গ্রন্থ হবার ব্যাপারে কোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষেও অবিশ্বাস পোষণ করা আদৌ সম্ভব নয়।
তবে হযরত আলী (‘
আঃ) কোরআন মজীদের শ্রেষ্ঠতম ফসল হলেও জ্ঞানী-মনীষী সৃষ্টির ব্যাপারে কোরআন মজীদ কেবল একজন“
আলী”
তৈরী করে নি , বরং বিগত চৌদ্দশ’
বছরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় অসংখ্য উঁচু স্তরের মনীষী তৈরী করে মানব প্রজাতিকে উপহার দিয়ে ধন্য করেছে। আর তাঁরা কেবল বু আলী সীনা , আল্-বিরুনী , ফারাবী , রাযী , খাওয়ারিযমী , জাবের ইবনে হাইয়ান , জাবের ইবনে হাইছাম , প্রমুখ কয়েক জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন , বরং বিভিন্ন শাখার এ সব জ্ঞানী-মনীষীদের তালিকা এতোই দীর্ঘ যে , শুধু কোন্ বিষয়ের মনীষী তার উল্লেখ সহ তাঁদের নামের তালিকা তৈরী করতে হলেও বহু খণ্ড বিশিষ্ট বিশালায়তন গ্রন্থ তৈরী করতে হবে।
এটা অনস্বীকার্য যে , আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখাই মুসলমানরা উদ্ঘাটন করেছেন। আর মুসলমানরা কোরআন চর্চা করতে গিয়েই জ্ঞান-বিজ্ঞানের এ সব শাখা আবিষ্কার করেছেন এবং এক বিরাট বিশ্বসভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
যখন আমেরিকা আবিষ্কৃত হয় নি এবং ইউরোপ ছিলো অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন মুসলমানরা শুধু ধর্মশাস্ত্র , দর্শন , ইতিহাস , রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদিতেই উন্নতি করে নি , বরং পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান সহ সকল প্রকার বস্তুবিজ্ঞানেও উন্নতির সুউচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিলো। অতঃপর ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা মুসলমানদের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তাদেরই কাছ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদ থেকে পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং স্বীয় ধর্মীয় (খৃস্টবাদের) নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণায় হাত দেয় - যার ফসল হচ্ছে বিশ্বের বর্তমান বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে , মুসলমান ও খৃস্টান সম্প্রদায় যখন নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থকে আঁকড়ে ধরেছিলো তখন মুসলমানরা সারা বিশ্বকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানে ধন্য করেছে এবং ইতিহাসবিশ্রুত শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানীদেরকে উপহার দিয়েছে , আর তখন খৃস্টানরা অজ্ঞতার তিমিরে নিমজ্জিত ছিলো। অন্যদিকে খৃস্টানরা যখন তাদের ধর্মগ্রন্থের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলো এবং বাইবেল ও তার ধারক-বাহকদের আধিপত্যকে গীর্জার চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে ফেললো এবং মুসলমানদের কাছ থেকে তাদের কোরআনকে গ্রহণ না করলেও কোরআনের ফসল জ্ঞান-বিজ্ঞানসমূহকে গ্রহণ করলো ও তার ভিত্তিতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ঝাঁপিয়ে পড়লো , তখন তারা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর জন্য পতাকাবাহী হয়ে দাঁড়ালো। আর রাজ্যহারা লুণ্ঠিতসর্বস্ব মুসলমানদের কাছ থেকে উপনিবেশবাদী দখলদাররা তাদের ধনসম্পদ কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত থাকে নি , তাদের কোরআন-কেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও বন্ধ করে দিয়ে সচ্ছল শিক্ষিত মুসলিম জাতিকে দরিদ্র অশিক্ষিতে পরিণত করলো এবং তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পুঁজির অভাবে কোরআন-চর্চার ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে প্রায় সম্পর্কহীন হয়ে পড়লো। ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গের ষড়যন্ত্রের ফলে কোরআনের সাথে তাদের সম্পর্ক শিথিল হয়ে পড়লো এবং এক সময় তারা দখলদার শত্রুদেরকে উন্নততর সভ্যতার অধিকারী গণ্য করে তাদের মানসিক গোলামে পরিণত হয়ে গেলো।
কিন্তু খৃস্টান পাশ্চাত্য জগত কোরআনের ফসল জ্ঞান-বিজ্ঞানকে গ্রহণ করে তার চর্চা করে অনেক দূর এগিয়ে নিলেও তারা কোরআনের আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষাকে গ্রহণ করে নি। ফলে পাশ্চাত্য জনগণের মধ্যে পার্থিব ও নৈতিক-আধ্যাত্মিক দিকের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে তা তাদেরকে চরম ভোগবাদে নিমজ্জিত করেছে। এর ফলে তারা নিজেদের ধ্বংস ও বিলুপ্তির জন্য প্রহর গুণছে যা সেখানকার রাষ্ট্রনেতা , রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদেরকে শঙ্কিত করে তুলেছে এবং তাঁরা তাঁদের জনগণকে এ থেকে ফেরাবার জন্য যতোই চেষ্টা করছেন ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা কোনোই সুফল দিচ্ছে না।
এ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করছে যে , কোরআন মজীদ হচ্ছে মানব প্রজাতির জন্য সার্বিক উন্নতি-অগ্রগতির উৎস ; কোরআন-চর্চা ও তার ফসলকে গ্রহণের মধ্যেই উন্নতি এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্নকরণের মধ্যেই পশ্চাদপদতা ও ধ্বংস নিহিত। এ হচ্ছে কোরআন মজীদের অবিনশ্বর মু‘
জিযাহরই অন্যতম দিক।